.
২৫.
একটানা অনেকক্ষণ ধরে কথা বলে কিরীটী থামল।
ধীরে ধীরে পকেট থেকে টোবাকো পাউচ ও পাইপটা বের করে পাইপে তামাক ভরে তাতে অগ্নিসংযোগ করল কিরীটী।
এবং কয়েক সেকেণ্ড ধূমপান করে বলল, শুধু মাত্র শকুন্তলাকে তার জন্মবৃত্তান্তের লজ্জা থেকে বাঁচাবার জন্যই সেদিন আমি সরে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম শিবেনবাবু। কিন্তু নিয়তি বুঝি কেউ এড়াতে পারে না। নচেৎ এমনি করে শকুন্তলার কাছে শেষ পর্যন্ত সব প্রকাশ হয়ে পড়বেই বা কেন ঘটনাচক্রে!
শিবেন নাম বললেন, সত্যি মেয়েটার জন্য দুঃখ হয়—
হ্যাঁ, দুঃখ হয় বৈকি। আর হয়তো বাকী জীবনটা দুষ্মন্তর স্মৃতি বয়েই বেড়াতে হবে বেচারীকে অতঃপর!
কেন—এ কথা বলছেন কেন?
বলছি ঐ শকুন্তলার আঙুলের অভিজ্ঞানটির জন্য।
অভিজ্ঞান?
মনে পড়ছে না শকুন্তলার হাতের আংটিটা!
সেটা তো রাঘব সরকারের দেওয়া?
না। স্থিরকণ্ঠে কিরীটী বললে।
না মানে? প্রশ্ন করলাম এবারে আমিই, তবে কার দেওয়া আংটি?
দুষ্মন্তর।
দুষ্মন্তর? কি করে জানলে?
সরমা বলেছিল।
তবে–
কি তবে? আংটিই তো কাল হয়েছিল শেষ পর্যন্ত শকুন্তলার পক্ষে, কারণ সেই কথাটা– মানে বিনায়ক সেন আংটির ব্যাপারটা জানতে পারার দরুনই সে আরো হেস্টি স্টেপস্ নিয়েছিল। তাই বলছিলাম ঐ অভিজ্ঞানটিই হয়তো বাকী জীবনটা শকুন্তলার কাছে দুষ্মন্তর স্মৃতি হয়ে থাকবে।
কিন্তু তা নাও তো পারে! দুষ্মন্ত তাকে বিয়েও তো করতে পারে! বললাম আমি।
না বন্ধু না, শকুন্তলার জন্মবৃত্তান্ত শোনার পরই দুষ্মন্তর প্রেম দেখো ঠিক শুকিয়ে যাবে। আর শুধু দুষ্মন্তর কথাই বা বলছি কেন, সামান্য কদিনের পরিচয়ে শকুন্তলাকে যতটুকু চিনেছি—শকুন্তলাই হয়তো দুষ্মন্তর জীবন থেকে সরে দাঁড়াবে।
শেষের দিকে কিরীটীর কণ্ঠস্বরটা যেন কেমন ব্যথায় বিষণ্ণ ও স্রিয়মাণ মনে হল। কিরীটী অন্যদিকে মুখ ফেরাল।
স্তব্ধ কক্ষের মধ্যে যেন একটা নিঃশব্দ ব্যথার সুর করুণ কান্নার মতই গুমরে গুমরে ফিরতে লাগল।