.
মিনিট দশেকের মধ্যেই শকুন্তলা এসে ঘরে প্রবেশ করল।
মিঃ রায় আপনি কতক্ষণ?
এই কিছুক্ষণ। আচ্ছা শকুন্তলা দেবী, কাল রাত্রে আপনি যখন আমাকে ফোন করেন তখন ফোনটা কোথায় ছিল নিশ্চয় আপনার মনে আছে—ঘরে না বারান্দায়?
মনে আছে বৈকি, বারান্দাতেই স্ট্যাণ্ডের ওপর ফোনটা ছিল। কেন এ কথা জিজ্ঞাসা করছেন?
আচ্ছা আপনার কাকাকে যখন ফোনে ডাকছে বলে রঞ্জনবাবু সংবাদ দেন তখন ফোনটা কোথায় ছিল জানেন কিছু?
না। তবে—
তবে?
আমার যতদূর মনে পড়ছে কাল দুপুর থেকে ফোনটা বোধ হয় কাকার ঘরেই ছিল।
বলতে পারেন ফোনটা কে তাহলে বাইরের বারান্দায় নিয়ে এল? কিরীটী প্রশ্ন করে।
না তো!
কেউ নিশ্চয়ই নিয়ে এসেছে, কিন্তু কে? বিড়বিড় করে কথাটা যেন আপন মনেই কিরীটী বলে, কে নিয়ে এল?
কে—কিছু বললেন?
না, কিছু না। আচ্ছা শকুন্তলা দেবী, কাল রাত সোয়া সাতটা থেকে পৌনে নটা পর্যন্ত আপনি ঠিক কোথায় ছিলেন, কি করছিলেন—মনে করে আমাকে বলতে পারেন?
যতদূর মনে পড়ছে আমি ঐ সময়টা দোতলাতেই আমার ঘরে বোধ হয় ছিলাম।
আর রঞ্জনবাবু?
সে তো ছাদেই ছিল বেশীর ভাগ সময়, তবে—
বলুন?
একবার যেন মনে পড়ছে কাকাকে ফোনের সংবাদটা দেবার পর কাকার পিছনে পিছনে গিয়েছিল। হা মনে পড়েছে, একবার তাকে যেন আমি তার ঘর থেকে বের হয়ে আসতে দেখেছি।
রাত তখন কটা বাজে, মনে করতে পারেন কি?
না। তবে কত আর হবে—বোধ করি সাড়ে আটটা কি আটটা চল্লিশা তাই হবে, তার কারণ একটু আগেই দুষ্মন্ত এসেছে—তাকে আমি বলছিলাম, এতক্ষণে তোমার সময় হল, কটা বাজে দেখেছ! মনে আছে তো ডিনার নয়, টি-র নিমন্ত্রণ ছিল!
তারপর? কিরীটী শুধায়, কোথায় দেখা হয়েছিল আপনাদের?
দোতলার বারান্দায়। এবং দুষ্মন্ত তাতে জবাব দিয়েছিল, এই তো সবে আটটা বেজে দশ মিনিট।
আটটা দশ নিশ্চয়ই সন্ধ্যা নয়!
একটা জরুরী ব্যাপারে আটকে গেলাম। তা কোথায় তিনি, তাকে একটা প্রণাম করে নিই দীর্ঘায়ু কামনা করে!
.
শকুন্তলা বলতে লাগল, তারপরে রঞ্জনকে যখন তার ঘর থেকে বের হয়ে আসতে দেখি—রাত তখন ঐ সাড়ে আটটার মতন হবে মনে হয়।
হুঁ এবং পৌনে নটা নাগাদ বিমলবাবুর মৃত্যুর ব্যাপারটা আবিষ্কৃত হয়!
হঠাৎ যেন কিরীটীর শেষের কথায় শকুন্তলা চমকে ওঠে এবং চাপা উত্তেজিত কণ্ঠে বলে, হোয়াট—হোয়াট আর ইউ ড্রাইভিং অ্যাট মি রায়? কি কি আপনি বলতে চান?
কিরীটী যেন শকুন্তলার কথাগুলো শুনতেই পায় নি এমন ভাবে বলে, তা হলে হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না মাত্র পনেরটা মিনিটেরজাস্ট ফিফটিন মিনিটস্!
কিরীটীবাবু? শকুন্তলা উদ্বেগাকুল কণ্ঠে পুনরায় ডাকে।
আচ্ছা শকুন্তলা দেবী, ঐ সময়টা সরমা দেবীকে আশেপাশে কোথাও দেখেছিলেন?
সরমা! কই না—মনে পড়ছে না তো!
ট্রাই টু রিমেম্বার! খুব ভাল করে চিন্তা করে বলুন!
না, মনে পড়ছে না!
আর ইউ সিয়োর?
হ্যাঁ, মানে—
মিস চৌধুরী, আবার ভাবুন। ভাবলেই বলতে পারবেন। সব মনে পড়বে, কারণ সে সময়টা আপনি অকুস্থানের—প্লেস অফ অকারেন্স-এর আশপাশেই ছিলেন।
না, আমার মনে পড়ছে না।
কিন্তু মিস চৌধুরী, আমি যদি বলি—স্থির দৃষ্টিতে তাকাল কিরীটী শকুন্তলার চোখের দিকে, আপনি—হ্যাঁ আপনি দেখেছেন সে-সময় আরো একজনকে সেখানে–
কে–কাকে?
সরমা দেবীকে!
না না—আমি দেখি নি, আপনি বিশ্বাস করুন মিঃ রায়। আর দেখেই যদি থাকি তা বলব কেন?
যাক শকুন্তলা দেবী, আপনি কি জানেন, অকস্মাৎ কিরীটী তার প্রসঙ্গের মোড় ঘুরিয়ে দিল, কাল রাত্রে এখান থেকে যাবার আগে শিবেনবাবু আপনার কাকার ঘরে যে তালাটা দিয়ে গিয়েছিলেন সে তালাটা কেউ ভেঙে ফেলেছে
সে কি! কে বললে?
শিবেনবাবু আজ বেলা বারোটা নাগাদ এখানে একবার এসেছিলেন। আপনি তো জানেন তখনই তিনি তালাটা ভাঙা দেখে গিয়েছেন–
শিবেনবাবু, সত্যি? শিবেন সোমের মুখের দিকে তাকিয়ে শকুন্তলা উৎকণ্ঠার সঙ্গে প্রশ্নটা করল।
হ্যাঁ, মিস চৌধুরী। তালাটা এখনো ভাঙাই আছে।
আশ্চর্য! কে আবার তালাটা ভাঙল?
.
১৪.
মিস চৌধুরী, রঞ্জনবাবু তো বাড়িতেই আছেন, তাকে একটু ডেকে দেবেন?
হ্যাঁ, দিচ্ছি–কথাটা বলে শকুন্তলা ঘর থেকে বের হয়ে গেল। এবং শকুন্তলা ঘর থেকে বের হয়ে যেতেই কিরীটী শিবেন সোমের দিকে তাকিয়ে বললে, একটা কাজ আপনাকে করতে হবে শিবেনবাবু!
কি বলুন?
সাতজনের ফটো আমাকে যোগাড় করে দিতে হবে—
সাতজনের ফটো!
হ্যাঁ।
কার কার?
সাতজনের–দুটি নারীর ও পাঁচটি পুরুষের। ফটোতে শুধু সমস্ত মুখখানা বুক পর্যন্ত।
কিন্তু কার কার?
রাঘব সরকার, দুষ্মন্ত রায়, রঞ্জন বোস, অধ্যাপক বিমল চৌধুরী, বিনায়ক সেন, সরমা ও শকুন্তলার।
বেশ তো। কালই তোলাবার ব্যবস্থা করছি—পরশুই পাবেন।
হ্যাঁ, তা হলেই হবে। আর একটা কথা কিন্তু কিরীটীর কথা শেষ হল না, রঞ্জন এসে ঘরে ঢুকল।
আসুন, আসুন মিঃ বোস! কিরীটী রঞ্জনকে আহ্বান জানায়।
রঞ্জন কিন্তু কিরীটীর কথার কোন জবাব না দিয়ে সোজা একেবারে শিবেন সোমের দিকে তাকিয়ে বললে, এই যে শিবেনবাবু, আমি আপনাকে ফোন করব ভাবছিলাম, তা আপনি এসে পড়েছেন ভালই হয়েছে কাল সকালের দিকে ডেড বডি আমরা পাব তো?
নিশ্চয়ই। ইচ্ছা করলে আজ রাত্রেই নিতে পারেন, সে ব্যবস্থাও হতে পারে।
দরকার নেই। কাল খুব সকাল সকাল যাতে পাই সেই ব্যবস্থাই করবেন।