হ্যাঁ। শুধু মাত্র নয় জীবনের সব চাইতে প্রিয় ছাত্র বলতে পারেন। হি ইজ সো মাচ প্রাউড অফ হিম! কিন্তু দুষ্মন্ত বিয়ের প্রপোজালটা তাকে দেবার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি না করে দিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে বলে দিয়েছেন তা সম্ভব নয়।
দুষ্মন্ত জিজ্ঞাসা করেননি কেন সম্ভব নয়? আবার কিরীটী প্রশ্ন করে।
যখন তিনি কোন ব্যাপারে একবার না বলেন, তারপর তো কারো কোন কথাতেই আর কান দেন না এবং বলতে গেলে বলেন, ও-কথা শেষ হয়ে গিয়েছে, অন্য কথা বল। তাই সে আর অনুরোধ করেনি।
তা আপনি বলেননি কেন কাকাকে আপনার কথাটা? আপনাকে তো তিনি অত্যন্ত ভালবাসেন, একটু আগে বললেন!
হ্যাঁ, জানি ভালবাসেন এবং আমি বলেছিলামও—
বলেছিলেন!
হ্যাঁ—
কি বললেন আপনাকে তিনি জবাবে?
বললেন, না, তোমার বিয়ে আমি ঠিক করেছি রাঘব সরকারের সঙ্গে। এতদিন বিয়েটা তোমাদের হয়েও যেত। কিন্তু আমার ইচ্ছা, তুমি বি.এ.টা পাস কর, তার পর বিয়ে হবে, সেই কারণেই দেরি।
হঠাৎ যেন শকুন্তলার কথায় কিরীটী চমকে ওঠে, বলে, কী—কী নাম বললেন?
রাঘব সরকার।
মিস্ চৌধুরী, আচ্ছা রাঘব সরকার কি–
কি?
ইকনমিক জুয়েলার্সের মালিক?
তা ঠিক জানি না।
জানেন না?
না।
ও! হ্যাঁ, কি যেন আপনি বলছিলেন, এই বছরেই বুঝি আপনি তাহলে বি. এ. পরীক্ষা দিচ্ছেন?
এইবার পাস করলাম।
রাঘব সরকারের সঙ্গে আপনার কাকার সম্পর্ক কি? বলছিলাম কি সূত্রে পরিচয়, আর কতদিনের এবং কি রকম পরিচয়?
আশ্চর্য তো আমার সেইখানেই লাগে মিঃ রায়—
আশ্চর্য! কেন?
কারণ পরিচয় ওঁদের পাঁচ-সাত বছর হবে, ঘনিষ্ঠতাও খুব, কিন্তু—
কি?
রাঘব সরকারকে কাকা যে রকম ঘৃণা করেন—
ঘৃণা?
হ্যাঁ, মুখে যদিও সেটা তিনি প্রকাশ করেন না কখনো কিন্তু আমি তা জানি। আশ্চর্য তো হয়েছি আমি তাইতেই, সেই লোকের সঙ্গেই কাকা আমার বিয়ে দিতে কেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
রাঘব সরকারকে ঘৃণা করেন আপনি ঠিক জানেন?
জানি বৈকি।
কি করে জানলেন?
কেউ কাউকে সত্যিকারের ঘৃণা করলে সেটা বুঝতে কি খুব কষ্ট হয় মিঃ রায়?
কিন্তু—
না, সেরকম কখনো কিছু আমার চোখে পড়েনি বটে তবে বুঝতে পেরেছি আমি।
আর একটা কথা মিস্ চৌধুরী—
বলুন।
খুব ঘন ঘন যাতায়াত আছে বুঝি রাঘব সরকারের আপনাদের বাড়িতে?
না, এক মাস দেড় মাস অন্তর হয়ত একবার সে আসে।
এক্সকিউজ মি মিস চৌধুরী, লোকটার মানে ঐ রাঘব সরকারের বয়স কত?
পঁয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে বলেই মনে হয়—
হুঁ, চেহারা?
মিথ্যা বলব না—হি ইজ রিয়ালী হ্যাণ্ডসাম! একটু যেন কেমন ইতস্ততঃ করেই কথাটা বলে শকুন্তলা।
সত্যি?
হ্যাঁ—কিন্তু তাতে আমার কি? আই হেট হিম! গলায় অনাবশ্যক জোর দিয়েই যেন কথাটা বললে শকুন্তলা।
আর একটা কথা—
বলুন।
দুষ্মন্তবাবু দেখতে কেমন?
রাঘব সরকারের সঙ্গে তুলনায় কিছুই নয়—কিন্তু তাকে আমি—
জানি ভালবাসেন। কিরীটীই কথাটা শেষ করল, সে তো বুঝতেই পেরেছি।
মুহূর্তকাল তারপর যেন কিরীটী চুপ করে থাকে। মনে হয় কি যেন সে ভাবছে। মুখ থেকে পাইপটা হাতে নেয়।
এবং তার পরই হঠাৎ শকুন্তলার দিকে তাকিয়ে বলে, আপনার ঐ আংটিটা নতুন বলে মনে হচ্ছে মিস্ চৌধুরী।
হ্যাঁ।
আপনি নিজেই আংটিটা শখ করে তৈরী করেছেন, না কেউ দিয়েছে আংটিটা আপনাকে?
রাঘব সরকার দিয়েছেন।
কি বললেন! একটু যেন কৌতূহল কিরীটীর কণ্ঠে প্রকাশ পায়, রাঘব সরকার দিয়েছেন আংটিটা আপনাকে?
হ্যাঁ, কাকার হাত দিয়ে আর কাকার আদেশেই আমাকে আংটিটা আঙুলে পড়তে হয়েছে।
দুষ্মন্তবাবু জানেন নিশ্চয়ই ব্যাপারটা?
জানে।
কিছু বলেননি তিনি?
কি বলবে? কাকাকে সে কি জানে না!
হুঁ। কিন্তু মিস্ চৌধুরী—
বলুন।
এ-ব্যাপারে যা বুঝতে পেরেছি, মীমাংসা করতে পারেন আপনারাই–শান্তকণ্ঠে বলে কিরীটী।
আমরাই!
হ্যাঁ, আপনি আর দুষ্মন্তবাবু।
কিন্তু–
একটু চিন্তা করে দেখুন, তাই নয় কি? আপনিও সাবালিকা এবং দুষ্মন্তবাবুও ছেলেমানুষ নন। আপনারা পরস্পরকে যখন ভালবাসেন এবং পরস্পরকে যখন বিয়ে করতে চান তখন কোন বাধা যদি কোথাও থাকে সে বাধাকে উত্তীর্ণ হতে হবে আপনাদেরই। হ্যাঁ—আপনাদেরই চেষ্টা করতে হবে।
কিন্তু আপনি ঠিক বুঝতে পারছেন না মিঃ রায়—
পারছি! আর সেইজন্যেই তো বলছি—দায়িত্ব যখন আপনাদের, মীমাংসাটাও আপনাদেরই করে নিতে হবে।
মিঃ রায়—
তাছাড়া সত্যিই বলুন তো, কি ভাবে আপনাকে আমি সাহায্য করতে পারি!
আমি ভেবেছিলাম—
কি ভেবেছিলেন?
কত জটিল ব্যাপারেরই তো মীমাংসা আপনি করেছেন—আমাদের এ ব্যাপারেও—
সেরকম সত্যিই কিছু জটিল হলে সাহায্য নিশ্চয়ই আপনাকে আমি করতাম।
আমি-আমি তাহলে কোন পরামর্শই আপনার কাছে পাব না মিঃ রায়?
একটা যেন রীতিমত হতাশার সুর ধ্বনিত হয় শকুন্তলার কণ্ঠে। চোখের দৃষ্টিতেও একটা নিরাশার বেদনা ফুটে ওঠে যেন।
আচ্ছা, তাহলে উঠি। নমস্কার—বলতে বলতে শকুন্তলা উঠে দাঁড়ায় এবং যাবার জন্য পা বাড়ায়।
দরজা বরাবর গিয়েছে শকুন্তলা, সহসা ঐ সময় কিরীটী ডাকল, শুনুন মিস চৌধুরী—
শকুন্তলা কিরীটীর ডাকে ফিরে দাঁড়াল।
একটা কাজ করতে পারবেন?
কি?
কাল দুপুরের পরে মানে এই সন্ধ্যার দিকে আপনার ঐ দুষ্মন্তবাবুকে নিয়ে আমার এখানে একবার আসতে পারবেন আপনারা?
কেন পারব না, নিশ্চয়ই পারব।
বেশ, তবে তাই আসবেন।
কিন্তু–হঠাৎ যেন কি মনে হওয়ায় শকুন্তলা বলে ওঠে, কাল তো আসতে পারব না মিঃ রায়, কাল আমাদের বাড়িতে একটা উৎসব আছে—