বোধ হয় ভোলা।
ভোলা বুঝি চাকরটার নাম?
হ্যাঁ।
কতদিন কাজ করছে এ বাড়িতে ভোলা?
নতুন এসেছে ও, এক মাসও হবে না, বোধ করি দিন-কুড়ি।
আর চাকর নেই?
আছে, রামচরণ—অনেকদিন সে এ বাড়িতে আছে কিন্তু বুড়ো হয়ে গিয়েছে—তাছাড়া হাঁপানির টান, কাজকর্মের বড় অসুবিধা হয় বলে ঐ ভোলাকে রাখা হয়েছিল। অবিশ্যি আরো একজন ঝি আছে—বুনী!
আচ্ছা মিস্ চৌধুরী, আপনাদের ফ্যামিলি-ফিজিসিয়ান ডাঃ ঘোষ বলছিলেন, কিছুদিন থেকে ইদানীং নাকি বিমলবাবুর মনটা বিক্ষিপ্ত ছিল, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিল—আপনি জানেন কিছু সে সম্পর্কে?
হ্যাঁ, কাকাকে যেন কিছুদিন ধরে বড্ড বেশী চিন্তিত মনে হতো। ফলে মাথার যন্ত্রণাও হচ্ছিল—আর তাই ডাঃ ঘোষকে তিনি কয়েক দিন আগে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তাও জানি।
কারণ কিছু জানেন না?
না।
আচ্ছা, ব্যাপারটা রঞ্জনবাবু সম্পর্কে কোন কিছু বলে আপনার মনে হয় নি?
না, তবে—
তবে?
ইদানীং কিছুদিন ধরে একটা ব্যাপার আমার চোখে পড়ছে–
না।
কি? রাঘব সরকার প্রায়ই কাকার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন।
রাঘব সুরকার!
হ্যাঁ এবং প্রতি রাত্রেই তিনি এলে, কাকার শোবার ঘরের দরজা বন্ধ করে দুজনের মধ্যে কি সব কথাবার্তা হতো ঘণ্টাখানেক ঘণ্টাদেড়েক ধরে।
কি ব্যাপারে আলোচনা হতো আপনি জানেন না কিছু?
না।
আর একটা কথা মিস্ চৌধুরী—
বলুন?
আপনার যখন ধারণা ব্যাপারটা স্বাভাবিক নয়, কাউকে আপনি কোন রকম সন্দেহ করেন?
সন্দেহ।
হ্যাঁ।
না, সন্দেহ কাকেই বা সন্দেহ করব!
কাকে করবেন তা জিজ্ঞাসা করি নি, জিজ্ঞাসা করছি কাউকে করেন কিনা?
না।
আচ্ছা আপনি যেতে পারেন—বিনয়েন্দ্রবাবুকে পাঠিয়ে দিন—শিবেন সোম বললেন।
শকুন্তলা ঘর থেকে চলে যাবার জন্য পা বাড়িয়েছিল, হঠাৎ ঐ সময় কিরীটী আবার বাধা দিল, ওয়ান মিনিট মিস চৌধুরী—আর একটা কথা!
শকুন্তলা ঘুরে তাকাল কিরীটীর মুখের দিকে।
আপনার কাকার কোন উইল ছিল, আপনি জানেন?
না।
আচ্ছা আপনি যান।
শকুন্তলা ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
.
বিনয়েন্দ্র সেন।
বিমল চৌধুরীর দীর্ঘদিনের বন্ধু। বেশ হৃষ্টপুষ্ট গোলগাল চেহারা। মাথার কাঁচা-পাকা চুল পরিপাটি করে আঁচড়ানো। দুচোখে বুদ্ধির দীপ্তি। দাড়ি-গোঁফ নিখুঁতভাবে কামানো। পরিধানে দামী অ্যাশকালারের ট্রপিক্যাল সুট।
নমস্কার মিঃ সেন, বসুন।
বিনয়েন্দ্র সেন শিবেন সোমের নির্দেশে ওঁর মুখোমুখি চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসলেন।
শুনছিলাম বিমলবাবুর সঙ্গে আপনার দীর্ঘদিনের পরিচয় মিঃ সেন! শিবেন সোম প্রশ্ন শুরু করেন।
হ্যাঁ, হিন্দু স্কুলে একসঙ্গে আমরা চার বছর পড়েছি, তারপর বিদ্যাসাগর কলেজেও চার বছর একসঙ্গে পড়েছি। সেন বললেন।
কি করেন আপনি?
আমার ছবির ডিস্ট্রিবিউসন অফিস আছে বেন্টিঙ্ক স্ট্রীটে—স্বাগতা পিকৰ্চাস অ্যাণ্ড ডিস্ট্রিবিউটার্স।
কলকাতায় কোথায় আপনি থাকেন?
শ্যামবাজারে।
কাছেই থাকেন তাহলে বলুন?
হ্যাঁ।
প্রায়ই তাহলে আপনাদের উভয়ের মধ্যে দেখাসাক্ষাৎ হতো নিশ্চয়ই?
না, প্রায়ই হতো না, তবে মাসে এক-আধবার হতো।
এবারে কিরীটী প্রশ্ন করল, আজকের আগে শেষ আপনার ওঁর সঙ্গে কবে সাক্ষাৎ হয়েছিল মনে আছে?
বোধ করি দিন দশেক আগে। এই পথ দিয়েই এবোডড্রাম থেকে ফিরছিলাম, দেখা করে গিয়েছিলাম ফিরতি পথে। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক এখানে ছিলাম সেদিন।
কি ধরনের কথাবার্তা সেদিন আপনাদের মধ্যে হয়েছিল?
বিশেষ সেদিন কোন কথাবার্তা হয় নি, বিমল তার ডাইরী থেকে আমাকে পড়ে শোনাচ্ছিল অতীতের সব কথা।
ডাইরী রাখতেন নাকি তিনি?
রাখতে যে সেদিনই প্রথম জানতে পারি, আগে কখনো শুনি নি।
তা হঠাৎ সেদিন ডাইরী পড়ে শোনালেন কেন?
বলছিল হিসেব-নিকেশের সময় ঘনিয়ে এসেছে, তাই একটা জমাখরচের খসড়া নাকি সে তৈরী করেছে।
মিঃ সেন?
বলুন।
সেদিন আপনার সেই বন্ধুর ডাইরী পাঠ থেকে তার জীবনের এমন কোন বিশেষ গোপন কথা কিছু কি জানতে পেরেছিলেন যা পূর্বে কখনো আপনি শোনেন নি তার মুখ থেকে?
তা কিছু জেনেছিলাম।
কি? যদি আপত্তি না থাকে আপনার–
ক্ষমা করবেন, তার জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত কথা সে-সব। ইউ মে বী রেস্ট অ্যাসিওরড় কিরীটীবাবু, আজকের দুর্ঘটনার সঙ্গে সে-সবের কোন সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয় না। তাছাড়া আমার পক্ষে সে-সব কথা বলা সম্ভবও নয়।
বেশ, বলতে আপনার অনিচ্ছা থাকে আপনাকে আমি পীড়াপীড়ি করব না সে সম্পর্কে। কিন্তু একটা কথা, সেদিন আপনার বন্ধুর কথাবার্তায় বা হাবভাবে এমন কিছু কি আপনি লক্ষ্য করেছিলেন যাতে মনে হয় তিনি বিচলিত বা চিন্তিত?
হ্যাঁ, তাকে যেন একটু বিচলিতই মনে হয়েছিল সেদিন।
আর একটা কথা, আপনার বন্ধুর আর্থিক অবস্থা কেমন ছিল জানেন কিছু?
ভালই। ব্যাঙ্কে তার বেশ কিছু নগদ টাকা ফিকস ডিপোজিটে এবং কিছু ক্যাশ সার্টিফিকেটে আছে আমি জানি।
তার পরিমাণ আন্দাজ কত হবে বলে আপনার ধারণা?
তা হাজার পঞ্চাশেক হবে। তাছাড়া—
বলুন? হাজার পঁচিশেক টাকার জীবন-বীমাও তার আছে।
হুঁ। আচ্ছা বলতে পারেন—তার কোন উইল বা ঐ টাকাকড়ি সম্পর্কে কোন ফিউচার প্ল্যান ছিল কিনা?
উইল ছিল কিনা জানি না তবে ইদানীং কিছুদিন ধরে একটা বাড়ি করবে বলে জায়গা দেখছিল বিমল আমি জানি।
আচ্ছা, থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ—আপনি যেতে পারেন।
শিবেন সোম বললেন, অধ্যাপক চক্রবর্তীকে দয়া করে একবার পাঠিয়ে দেবেন এ-ঘরে মিঃ সেন।