৮-৫০ কি ৫২ মিঃ—কুমারসাহেবের সঙ্গে সিঁড়িতে ম্যানেজারবাবুর দেখা হয়। ম্যানেজারবাবুই একথা বলেছেন আমাদের।
৮-৫০ মিঃ—৯-২৫ মিঃ—ম্যানেজারবাবু একাই ওপরের সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়েছিলেন, ম্যানেজারবাবুর স্বীকারোক্তি থেকে জানতে পারা যায়!
৮-৫৫ মিঃ-৯-৫৫ মিঃ মিত্র খাবার ঘরে থেকে বের হয়ে আসেন। সাক্ষী—বাবুর্চি ও প্রফেসার শর্মা।
৮-৫৫ মিঃ—৯-৩০ মিঃ—প্রফেসর শর্মা খাবার ঘরে উপস্থিত ছিলেন; সাক্ষীপ্রফেসর শর্মা নিজে। তাছাড়া একজন বয়ও সে কথা বলেছে।
৯-১৫ মিঃ সময়ে নাকি এক কাপ কফি বয় নিজে গিয়ে প্রফেসর শর্মাকে দিয়ে আসে। ৯-১৮ মিঃ রাত্রি-কুমারসাহেব নিজে আমাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষী—আমরা সকলে।
৯-৩০ মিঃ রাত্ৰি—মিঃ মিত্ৰ কুমারসাহেবের প্রাইভেট রুমে ঢোকেন আমাদের সকলেরই চোখের সামনে দিয়ে।
৯-৩০ মিঃ রাত্রি-প্রফেসর শর্মা হরিচরণের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এবং প্রফেসর শর্মা যখন হরিচরণকে সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করেন, হরিচরণ জবাব দেয় এবং তারই কিছু আগে সে ঐখানে আমার আগেকার নির্দেশমত পাহারা দিতে উপস্থিত হয়। সাক্ষী-হরিচরণ ও ম্যানেজারবাবু, কেননা উনি ঐ সময় সিঁড়ির ওপরেই দাঁড়িয়েছিলেন!
৯-৩০—৯-৩৬ মিঃ রাত্রি-প্রফেসর শর্মার সঙ্গে প্রাইভেট রুমের দরজার সামনে হরিচরণের দেখা ও কথাবার্তা হয়।
৯-৩৭ মিঃ রাত্রি-প্রফেসার শর্মা ড্রয়িংরুমে আমাদের সঙ্গে এসে আলাপ করেন। খুনের ব্যাপারটা বেয়ারার চিৎকার শুনে এ ঘরের সবাই আমরা জানতে পারি।
মতামত বা টীকা ১নং -এমন কোন লোকই পাওয়া যাচ্ছে না। যিনি অন্ততঃ স্মরণ করে বলতে পারেন যে, ঐ উপরিউক্ত ভদ্রলোকের মধ্যে কাউকেও ৮-২০ মিঃ থেকে ৯-৩০ মিনিটের মধ্যে অর্থাৎ এই এক ঘণ্টারও বেশী সময়ের মধ্যে ওপরের হলঘরে দেখেছেন। কিনা। আশ্চর্য!
২নং-এ বাড়িতে উপস্থিত যাঁরা আছেন তাদের কেউ বলেত পারছেন না যে, তারা কেউ মিঃ শুভঙ্কর মিত্ৰকে রাত্রি ৮-৫৫ মিঃ (যখন তিনি খাবার ঘর থেকে প্রফেসর শর্মার কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসেন তখন কিংবা ৯-৩০ মিনিটের মধ্যে প্রাইভেট রুমে ঢুকতে দেখেছেন কিনা। এটাও আশ্চর্য!
৩নং —এটা হয়তো খুবই সম্ভব যে, এ বাড়ির পিছন দিকে অর্থাৎ ট্রাম-রাস্তার দিকে এ বাড়িতে প্রবেশের কোন গুপ্তপথ আছে, এবং সেই প্রবেশপথের কথা আমার নিযুক্ত লোক খুনের আগে পর্যন্ত অবগত না হওয়ার জন্য পাহারা দিতে পারেনি সেখানে।
কিরীটী হাসতে হাসতে নোট-খাতাটা ডাঃ চট্টরাজের দিকে এগিয়ে দিয়ে মৃদুস্বরে বললে, এবারে বের করুন ডাক্তার, হত্যাকারী কে? যা কিছু জানিবার বা বোঝাবার সব এর মধ্যেই আছে।
এমন সময় একজন পুলিস এসে জানাল, পুলিস সার্জেন্ট এসেছেন। আমরা সকলে হলঘরের দিকে অগ্রসর হলাম।
০৮. হলঘরে ঢুকেই আমরা থমকে দাঁড়ালাম
হলঘরে ঢুকেই আমরা থমকে দাঁড়ালাম।
সমগ্র হলঘরটি তখন আমন্ত্রিত অভ্যাগতের কলগুঞ্জনে মুখরিত। কিরীটী একজন পুলিস অফিসারকে ডেকে তখনি আদেশ দিল, এদের সকলকে এবার ছেড়ে দিন।
আদেশ উচ্চারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্ৰ জনতা যেন বাঁধভাঙা জলস্রোতের মত উন্মুক্ত দ্বারপথের দিকে হুড়মুড় করে অগ্রসর হল। পনেরো মিনিটের মধ্যেই জনস্রোত মিলিয়ে গেল।
সিঁড়ির মুখে প্রকাণ্ড ওয়াল ক্লাকটা ঢং ঢেং করে রাত্ৰি বারোটা ঘোষণা করল। এখন হলঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে আমি, কিরীটী, ডাক্তার চট্টরাজ, থানার পুলিস অফিসাররা, কুমারসাহেব, পুলিস সার্জেণ্ট, খানসামা ও বেয়ারা-বাবুর্চির দল।
পুলিস সার্জেণ্টই প্রথম ঘরের স্তব্ধতা ভঙ্গ করলেন, বললেন, চলুন মিঃ রায়, মৃতদেহটা আগে দেখে আসি।
সকলে আবার এসে কুমারসাহেবের প্রাইভেট রুমে প্রবেশ করলাম। জমাট বাঁধা রক্তস্রোতের মধ্যে একই ভাবে বীভৎস মুণ্ডহীন মৃতদেহটা তখনও পড়ে আছে। এবং পাশেই মুণ্ডুটা।।
পুলিস সার্জেণ্ট মোটামুটি সব শুনে ও মৃতদেহ পরীক্ষা করে সঙ্গে একজন কর্মচারীকে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাবার আদেশ দিলেন।
পুলিস সার্জেণ্ট বললেন, এবার মিঃ রায়, আমাকে ব্যাপারটা একটু বলুন তো?
কিরীটী তখন পুলিস সার্জেণ্টকে মোটামুটি সব ব্যাপারটাই সংক্ষেপে আবার বললে তীর জ্ঞাতার্থে।
তারপর আমার দিকে ফিরে বললে, সুব্রত, তুমি তেতলায় গিয়ে ঠিক এই ঘরের ওপরের ঘরটা একবার ভাল করে দেখে এস তো দেখি। আর হরিচরণ, তুমি এর নীচের ঘরটা পরীক্ষা করে এস। হ্যাঁ, দেখ সুব্রত, তুমি এই ঘরের ঠিক ওপরের তলার ঘরে গিয়ে ঘরের মেঝেতে কোন কিছু দিয়ে ঠুকে শব্দ করবে, তা হলেই এই ঘরে দাঁড়িয়ে সে শব্দ আমরা শুনতে পাব। আর তুমি নিজেও ঘরের মেঝেতে কান পেতে শুনতে চেষ্টা করবে। আমাদের কথাবার্তা শুনতে পাও কিনা। ঘরের দেওয়ালে ঘা দিয়ে দেখবে কোথাও ফাঁপা-টাপা কিছু টের পাও কিনা। হরিচরণ, তুমিও ঐ একই ভাবে নীচের ঘরটা পরীক্ষা করে দেখবে! আমি ততক্ষণ এই ঘরটা আবার একবার ভাল করে পরীক্ষা করে দেখে সন্দেহ ভেঙে দিই। সবার। যিনি যাই বলুন, আমার নিশ্চিত ধারণা, ওঘরের মধ্যে কোথাও কোন গুপ্তদ্বার নেই। শুধুই নিম্ফল, চেষ্টা এ, তবু আর একবার দেখব। প্রত্যেকটি ঘটনা যদি ভাল করে বিচার করা যায়। তবে স্পষ্টই বোঝা যায় যে, কোন বিকৃতমস্তিষ্ক ব্যক্তির দ্বারা এভাবে খুন করা সম্ভবপর নয়।
ধীরে ধীরে দোতলার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলাম।