ছোটলোক?
নয়? ছোটলোক না হলে কেউ অপরের বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে তার স্ত্রীর হাত ধরে টানাটানি করে—অসম্মান করে। ঘৃণায় আক্রোশে অনন্যর স্বরটা যেন রুক্ষ হয়ে ওঠে।
আপনি তাহলে মিঃ বক্সী শুনেছেন, রজতবাবু আপনার স্ত্রীকে নিয়ে যেতে এসেছিলেন!
লোকটাকে হাতের কাছে পেলে আমি চাবকে তার পিঠের ছাল তুলে দিতাম–ভাগ্য ভাল তার যে সে সময় আমি অফিসে ছিলাম। এখানে উপস্থিত ছিলাম না!
মিঃ বক্সী—তাহলে পরেশের মুখে সংবাদটা শোনার পরও আপনি নীলাকাশে যান নি?
না।
আচ্ছা মিঃ বক্সী—আপনাদের বিরক্ত করবার জন্য আমি দুঃখিত—আজ তাহলে উঠি–সুদর্শন সুধাকান্তকে নিয়ে নমস্কার জানিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
১১. লালবাজারে ফিরে এসে
লালবাজারে ফিরে এসে সুদর্শন দেখে সরিৎ তার জন্য অপেক্ষা করছে।
সরিৎবাবু–কি ব্যাপার—
দেখুন মিঃ মল্লিক, একটা কথা আপনাকে বলা হয়নি—অবশ্যই আমার বলা উচিত ছিল—
কি কথা?
সরিৎ পকেট থেকে কাগজ-মোড়া একটা ছোট রুমাল, দুটো টুকরো পোড়া সিগারেটের শেষাংশ ও লাল প্লাস্টিকের চুড়ির ভাঙা টুকরো বের করে সুদর্শনের সামনে টেবিলের ওপরে রাখল।
এ তো দেখছি দুটুকরো ভাঙা প্ল্যাস্টিকের চুড়ির অংশ, একটা লেডিজ রুমাল, আর দুটো পোড়া সিগারেটের অংশ! এসব কোথায় পেলেন সরিৎবাবু?
পরশু সকালে আমার বসবার ঘরে—পঞ্চানন ঝট দিতে গিয়ে কুড়িয়ে পেয়েছে।
আপনার বসবার ঘরে?
হ্যাঁ।
সুদর্শন প্রথমেই রুমালটা তুলে নিল, রুমালে তখনও রয়েছে মিষ্টি একটা সেন্টের গন্ধ এবং আরও একটা গন্ধ-গন্ধটাকে ঠিক কিসের গন্ধ সুদর্শন বুঝে উঠতে পারে না। প্ল্যাস্টিকের চুড়ির ভাঙা টুকরো দুটো পরীক্ষা করল—শেষে সিগারেটের শেষাংশ দুটো—দামী বিলাতী সিগারেট–ক্যারাভান এ মার্কাটা তখনও পড়া যায়।
এগুলো মনে হল, সরিৎ বললে, আমার ঘরে পাওয়া গিয়েছে আপনাকে জানানো দরকার বলেই নিয়ে এলাম।
জিনিসগুলো আবার কাগজে মুড়ে সুদর্শন ড্রয়ার খুলে তার মধ্যে রেখে দিয়ে বললে, ধন্যবাদ সরিৎবাবু।
সরিৎ বললে, আমি কিন্তু সিগারেট খাই না, মিঃ মল্লিক!
আপনার বন্ধু রজতবাবু স্মোক করতেন না?
না।
কখনও সখ করেও না।
না, আগে তো কখনও দেখিনি—তবে ইতিমধ্যে যদি সে সিগারেট ধরে থাকে বলতে পারি।
কতদিন তার সঙ্গে আপনার দেখা হয়নি?
তা ধরুন প্রায় বৎসরখানেক—
তিনি কতদিন আম্বালায় ছিলেন?
মাস চারেক আগে সে আম্বালায় পোস্টে হয়ে এসেছিল—
ঠিক আছে—আপনি এখন আসুন।
সরিৎ বিদায় নিল।
সুদর্শনও বসল না। কিরীটীর সঙ্গে একবার দেখা করা প্রয়োজন–উঠে পড়ল সুদর্শন। কিরীটীর ওখানে গিয়ে দেখল কিরীটী কোথায় বের হয়েছে–কৃষ্ণা বললে, সুব্রতকে নিয়ে বের হয়েছে ঘণ্টা দুই আগে—ফেরার সময় হয়েছে, তুমি বোস না।
ঠিক আছে বৌদি-আমি বসছি।
কিরীটী আর সুব্রত ফিরে এল আরও আধঘণ্টা পরে, ঘরে ঢুকে সুদর্শনকে দেখে বললে, সুদর্শন কতক্ষণ?
তা প্রায় আধ ঘণ্টা–
কিরীটী বসতে বসতে বললে, তোমার কেসটায় শেষ পর্যন্ত আমাকেও জড়িয়ে পড়তে হল ভায়া–
তাই নাকি।
হ্যাঁ-এরিয়া কমান্ড অফিস থেকে ব্রিগেডিয়ার শর্মা ডেকে পাঠিয়েছিলেন। সেখানেই গিয়েছিলাম, শর্মার সঙ্গে আমার অনেক কালের পরিচয়—ভারি চমৎকার লোক।
তা হঠাৎ সেখানে—তার আবার আপনাকে কি প্রয়োজন পড়ল!
ক্যাঃ চৌধুরীর ব্যাপারটা নিয়েই—
ক্যাঃ চৌধুরী।
হ্যাঁ—তোমাদের রজতশুভ্র। হেড কোয়ার্টার থেকে জরুরী নির্দেশ এসেছে, রজতশুভ্রর মৃত্যুর ব্যাপারটা ভাল করে অনুসন্ধান করে দেখবার জন্য।
তাই বুঝি ব্রিগেডিয়ার শর্মা–
হ্যাঁ, আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। ফোনে অবিশ্যি ব্যাপারটা বলেননি—কেবল। বলেছিলেন, বেচারী ভীষণ বিপদে পড়েছেন—আমি যদি তাকে একটু সাহায্য করি।
এ তো ভালই হল দাদা। কিন্তু তারাও কি ব্যাপারটা একটা হোমিসাইড বলে ধরেছে!
পুলিশের বড়কর্তা আই. জি. মিঃ গুপ্ত নাকি তাই বলেছেন শর্মাকে। শর্মা মিঃ গুপ্তকে অনুরোধ করেছেন আমাকে যথাসম্ভব মদৎ দেবার জন্য। মিঃ গুপ্তও সেখানে ছিলেন।
তাহলে রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে বলুন দাদা!
তা কতকটা চিন্তিতই বলে যেন মনে হল এখানকার কমান্ড হেডকোয়ার্টারকে। তারপর তোমার কথা বল।
আমার কথা—
কতদূর এগুলে বল না, যেখানে ছিলে এখনও সেখানেই আছ?
সুদর্শন একে একে ঐদিনের ঘটনা সব বলে গেল এবং সবশেষে কাগজের মোড়কটা পকেট থেকে বের করে কিরীটীর হাতে দিয়ে বলল, এগুলো দেখুন দাদা। কিরীটী চুড়ির টুকরো, সিগারেটের টুকরো পরীক্ষা করে রুমালটা নাকের সামনে তুলে ধরে শুঁকতে শুঁকতেই একসময় সুদর্শনের মুখের দিকে তাকাল।
সুদর্শন!
বলুন দাদা—
রুমালে মাখা সেন্টের গন্ধ ছাপিয়ে যে একটা পরিচিত গন্ধ নাকে আসছে!
কিসের গন্ধ দাদা?
মনে হচ্ছে ক্লোরোফর্মের গন্ধ।
ক্লোরোফর্মের গন্ধ?
হ্যাঁ–ইয়েস—আবার একবার ভাল করে রুমালটার ঘ্রাণ নিয়ে কিরীটী বললে, হ্যাঁ ভায়া— it is chloroform! এই রুমালে যে ক্লোরোফর্ম মাখানো হয়েছিল, সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে এই ফেইন্ট গন্ধ থেকে। রুমালটা নীলাকাশে সরিৎবাবুর ফ্ল্যাটের ঘরের মেঝেতে পাওয়া গিয়েছে যখন—কিরীটী আর কিছু বলল না। তবে সুদর্শনের মনে হল কিরীটী যেন কি ভাবছে।
সুদর্শন—
বলুন দাদা–
আমি এখন একেবারে নিশ্চিন্ত একটা ব্যাপারে। ক্যাঃ চৌধুরীকে সেরাত্রে হত্যাই করা হয়েছিল।
গলায় ফাঁস দিয়ে?
হয়ত ক্লোরোফর্ম আর ফাঁস দুটো একসঙ্গেই কাজ করেছে।