সরিৎ সুদর্শন ও সুধাকান্তর আগমনে একটু বিস্মিতই হয়। কিন্তু তা হলেও আহ্বান জানায়, আসুন মিঃ মল্লিক–
একটু বিরক্ত করতে এলাম সরিৎবাবু–সুদর্শন বললে।
কি ব্যাপার বলুন তো মিঃ মল্লিক।
দেখুন রজতশুভ্রবাবুর ব্যাপারটা আমাদের ধারণা সুইসাইড নয়—a clean case of murder!
হত্যা?
হ্যাঁ—
কে হত্যা করবে তাকে? আর কেনই বা করবে? সরিৎ বললে।
কেন করবে বা কেন করেছে, সেটা অবিশ্যি আরও তদন্তসাপেক্ষ, তবে কেউ যে হত্যা করেছে সে রাত্রে সেটা ঠিকই। আপনার চাকর পঞ্চানন আছে?
আছে।
একবার ডাকবেন তাকে?
নিশ্চয়ই সরিৎ পঞ্চাননকে ডাকল, সে কিচেন থেকে বের হয়ে ওদের সামনে এসে দাঁড়াল। পঞ্চানন—
আজ্ঞে–
এঁরা লালবাজার থেকে আসছেন—পুলিস অফিসার—এঁরা কিছু জিজ্ঞাসা করতে চান তোমাকে।
পঞ্চানন কেমন যেন ভীত ও বিহুল দৃষ্টিতে প্রথমে সুদর্শন তারপরে তার পাশে উপবিষ্ট সুধাকান্তর মুখের দিকে তাকাল!
পঞ্চানন! সুদর্শন ডাকল।
আজ্ঞে—
সেদিন—মানে যেদিন তোমার বাবুর বন্ধু রজতবাবু এখানে এসেছিলেন, কখন এসেছিলেন?
সকাল তখন সোয়া সাতটা হবে।
তুমি তো বিকেলে ছুটি নিয়ে যাও!
আজ্ঞে।
কখন কটার সময় গেছলে?
সাড়ে পাঁচটার পর–
তাহলে ঐ সোয়া সাতটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত তুমি ছিলে?
আজ্ঞে—
রজতবাবুও কি ছিলেন?
আজ্ঞে না। দশটা নাগাদ বের হয়ে যান—
ফিরলেন কখন?
বেলা পৌনে একটা তখন হবে।
তারপর আর বের হননি?
না।
কেউ ঐ সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল—কোন ভদ্রলোক বা ভদ্রমহিলা?
না তো।
ঠিক মনে আছে?
আছে বই কি—কেউ আসেনি।
রজতবাবু ঐ সময়টা কি করছিলেন?
মধ্যে ফোনে কার সঙ্গে যেন কথা বলছিলেন—অনেকক্ষণ ধরে—আর একবার দেখেছিলাম অস্থিরভাবে ঘরের মধ্যে কেবল পায়চারি করছেন আর করছেন।
সেটা কখন?
বাইরে থেকে ফিরে আসবার পর–
তুমি একবার সন্ধ্যায় বাইরে থেকে ঘুরে আসবার কথা বলতেই তিনি বুঝি তোমাকে সে রাত্রের মত ছুটি দিয়ে দিলেন। সুদর্শন পুনরায় প্রশ্ন করে।
আজ্ঞে। বললেন—রাতের মত তোমাকে ছুটি দিচ্ছি আমি বললাম রাত নটা-দশটার মধ্যে ফিরে আসব তখন বললেন, না, না তুমি সকালেই ফিরে এস। তাতে আমি বললাম, আপনার রাত্রের খাবারের কি হবে? উনি বললেন, বাইরের হোটেলেই খেয়ে নেবেন বাবু। সত্যি বলছি, উনি যে অমন একটা কাণ্ড করবেন আমি ভাবতেই পারিনি।
ঠিক আছে পঞ্চানন, তুমি যাও—
পঞ্চানন চলে গেল।
সরিৎ ও বকুলকে সুদর্শন গোটাকতক প্রশ্ন করল, তারপর একসময় বললে, বকুল দেবী, আপনি করে পাটনায় ফিরছেন?
কাল রাত্রের ট্রেনে।
আপনি আর কয়েকদিন থেকে যান। সুদর্শন বললে।
কেন?
আমাদের আরও কিছু অনুসন্ধান বাকি আছে, সেটা শেষ হলে যাবেন।
বকুল বললে, কিন্তু আমাকে আপনাদের প্রয়োজন কিসের। ঐ ব্যাপারের তো কিছুই আমি জানি না–আমি এখানে ছিলামও না।
না ছিলেন না কিন্তু তা হলেও আপনার সঙ্গে রজতবাবুর বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল—
সরিৎ বললে, তাতে কি হয়েছে। ওকে আটকাচ্ছেন কেন। বেচারা একেই সমস্ত ব্যাপারটার আকস্মিকতায় রীতিমত শক্ড্ হয়েছে—আদৌ থাকতে চাইছিল না—আমিই কয়েকটা দিন ওকে, ধরে রেখেছিলাম—
আমার কিন্তু মনে হয় সরিৎবাবু, ওঁর এখানে আরও কয়েকটা দিন থেকে যাওয়াই ভাল।
বকুল বলে ওঠে, ঠিক আছে দাদা–উনি যখন বলছেন আমি আরও দুচার দিন পরেই না হয় যাব।
ধন্যবাদ জানিয়ে তখনকার মত সুদর্শন ওঁদের কাছ থেকে বিদায় নিল।
সেখান থেকে ওরা এল অনন্য বক্সীর গৃহে।
ছুটির দিন হলেও অনন্য বক্সী ছিল না—ছিল বিপাশা। পরেশের মুখে লালবাজার থেকে আসছেন শুনে বিপাশা ওদের দোতলায় বসবার ঘরে ডেকে পাঠাল।
দুচারটে মামুলী কথাবার্তার পর সুদর্শন বললে, আপনি তো রজতবাবুকে বেশ ভালভাবেই চিনতেন!
হ্যাঁ—অনেকদিনের পরিচয় আমাদের।
রজতবাবু আপনাকে চিঠিপত্র লিখতেন?
না।
কখনও আসতেন?
না।
এ বাড়িতে কখনও আসেন নি?
এসেছিল।
কবে?
যেদিন দুর্ঘটনাটা ঘটে সেইদিনই সকালে।
সুদর্শন কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সোজা হয়ে বসল। বললে, তাহলে সেই শনিবার তিনি সকালে এখানেই এসেছিলেন?
হ্যাঁ—কিন্তু আপনি কথাটা কার কাছে শুনলেন?
যেমন করে তোক শুনেছি। তা কতক্ষণ ছিলেন এখানে?
ঘণ্টাখানেক হবে।
কি কথাবার্তা হয়েছিল আপনাদের?
বিপাশা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর সেদিনকার সমস্ত ঘটনাটা বলে গেল।
আপনি গিয়েছিলেন নীলাকাশে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে।
গিয়েছিলাম।
কখন?
রাত তখন পৌনে আটটার মত হবে।
দেখা হয়েছিল নিশ্চয়ই আপনার রজতবাবুর সঙ্গে?
হয়েছিল।
কি কথা হয়েছিল আপনাদের মধ্যে যদি বলেন বিপাশা দেবী!
ক্ষমা করবেন অফিসার। সেটা একান্তভাবেই আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
হুঁ। আপনার স্বামী জানেন ব্যাপারটা—মানে রজতবাবু তো এখানে এসেছিলেন—আপনি পরে নীলাকাশে গিয়েছিলেন!
না।
বলেননি তাঁকে কোন কথা?
না।
হঠাৎ ঘরের জানালার ওপাশ থেকে ঐসময় একটা মুখ চকিতে সরে যেতে দেখে সুদর্শন দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, কে-কে ওখানে?
বিপাশা বললে, কোথায় কে?
একটু আগে ঐ জানালা থেকে উঁকি দিচ্ছিল—মনে হচ্ছে আপনাদের সেই চাকরটা!
পরেশ?
হবে। ডাকুন তো একবার তাকে!
বিপাশা পরেশকে ডাকতেই সে ঘরে ঢুকল।
তোমার নাম পরেশ?
আজ্ঞে—
একটু আগে ঐ জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছিলে কেন?
আজ্ঞে আমি-কই না তো!
পরেশ—আমার চোখকে তুমি ফাঁকি দিতে পারনি। বল, কেন উঁকি দিচ্ছিলে? যদি সত্য কথা বল তো—আমি তোমাকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাব থানায়—বল কেন উঁকি দিচ্ছিলে— আড়ি পেতে আমাদের কথা শুনছিলে, তাই না?