সুদর্শন সংক্ষেপে ব্যাপারটা বলে গেল কিরীটীকে। সব শোনার পর কিরীটী বললে, তাহলে তোমার ধারণা—ব্যাপারটার মধ্যে কোন ফাউল প্লে আছে।
হ্যাঁ—আমার মনে হচ্ছে, ওটা আদৌ সুইসাইড নয়—
হোমিসাইড!
হ্যাঁ—আমার মনে হয়, রজতবাবুকে ঐ কালো কর্ডের ফাঁস গলায় দিয়ে হত্যা করে ব্যালকনি থেকে নীচে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
হুঁ। তা তোমাদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট কি বলছে? মৃত্যুর কারণ কি বলছে রিপোর্টে?
গোলমালটা তো দাদা সেখানেই।
কি রকম!
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলছে—ফ্রাকচার অফ দি বেস-স্কালই নাকি মৃত্যুর কারণ—কজ অব ডেথ।
আর ঐ গলার ফাঁসটা?
বলছে তাদের মতে, ঐ সরু কৰ্ডটা গলায় চেপে বসলেও সেটা নাকি মৃত্যুর কারণ নয়–কারণ–
কি?
কোন অ্যাসফেসিয়ার চিহ্ন নাকি পাওয়া যায়নি মৃতদেহে।
কিরীটী বললে, তা কেসটা যে একটা মার্ডার—গলার ঐ কালো কর্ডের ফসটি ছাড়া আর কোন যুক্তি তোমার আছে কি?
উপর থেকে নীচে ঝাঁপিয়ে পড়লে দেহের ইনজুরি আরও বেশী থাকত অর্থাৎ যে রকম পাওয়া যেত তাও পাওয়া যায়নি। আর চারপাশে রক্তও বেশী থাকত।
হুঁ। আর কিছু—
তারপর ধরুন দাদা, মৃত্যু ঘটেছে, রিপোর্ট বলছে, রাত সাড়ে দশটা থেকে রাত সাড়ে এগারোটার মধ্যে কোন এক সময়ে। এবং তাই যদি হয় তো ঐ সময় ঐ অত বড় ফ্ল্যাটবাড়িটার মধ্যে কেউ কি এমন জেগে ছিল না যারা একটা মানুষের দেহ অত উঁচু থেকে নীচে পড়লে যে শব্দটা হওয়া স্বাভাবিক সেই রকম একটা শব্দ শুনতে পেত না! অথচ আমি ঐ ফ্ল্যাটবাড়ির প্রত্যেককে জিজ্ঞাসা করে দেখেছি, সেরকম কোন শব্দ কেউ শুনতে পায়নি। ব্যাপারটা কি বেশ একটু সন্দেহজনক নয়?
তা তো ঠিকই।
ধরেই নিলাম না হয়, আবার সুদর্শন বলতে লাগল, ব্যাপারটা একটা সুইসাইড—কিন্তু লোকটা হঠাৎ দুতিন দিনের ছুটি নিয়ে এসে নীলাকাশের চারতলার ফ্ল্যাট থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সুইসাইড করতে গেল কেন? সরিবাবু ও তার বোন বকুল দেবীর স্টেটমেন্ট থেকে জানা যায়, বিবাহের দিন ঠিক করবার জন্যই সে আম্বালা থেকে এসেছিল—সেক্ষেত্রে বকুল দেবীর সঙ্গে দেখা হবার আগেই এমন কি ঘটে গেল যাতে করে তাকে ঐভাবে আত্মহত্যা করতে হল শেষ পর্যন্ত!
সুদর্শন থামে না। বলে চলে, অনন্য বক্সী ও তার স্ত্রী বিপাশা দেবীর কথাটা তো ভুললে চলবে না—রজতবাবুর সঙ্গে একসময় বিপাশার ঘনিষ্ঠতা ছিল—এক পাড়ায় পাশাপাশিই বলতে গেলে বাড়িতে ওরা থাকত। আচমকা অনন্য বক্সী ওদের মাঝখানে এসে পড়ায় সব ওলটপালট হয়ে গেল—অনন্য বক্সীর সঙ্গেই শেষ পর্যন্ত বিপাশার বিয়ে হয়ে গেল।
তুমি বলতে চাও, সেখানেও কোন গোলমাল থাকতে পারে—
পারে না কি! আপনিই বলুন!
খবর নিয়েছিলে এবারে কলকাতায় আসার পর বিপাশা ও রজতবাবুর মধ্যে দেখাসাক্ষাৎ হয়েছিল কিনা? কিরীটী বললে।
না—এখনও খবর নিইনি।
কেন নিলে না?
আমি এখনও অনুসন্ধান চালাবার মত কোন একটা নির্দিষ্ট পথ খুঁজে পাইনি। আর সেই কারণেই আপনার কাছে ছুটে এসেছি–
কিরীটী একটু চুপ করে থেকে বললে, সুদর্শন, তোমার মুখ থেকে কেসটা সম্পর্কে যতটুকু শুনলাম তাতে আমার মনে হচ্ছে সমস্ত ব্যাপারটার মধ্যে একটা ফাউল প্লে থাকা হয়ত বিচিত্র নয়। তুমি আপাতত এক কাজ কর।
বলুন দাদা–সাগ্রহে কিরীটীর মুখের দিকে তাকাল সুদর্শন।
তোমরা জানতে পেরেছ শনিবার সকালে রজতবাবু কলকাতায় এসেছিলেন এবং এসে উঠেছিলেন তাঁর বন্ধু সরিৎবাবুর নীলাকাশের চারতলায় ১৪নং খালি ফ্ল্যাটে এবং আরও জানা গেছে একমাত্র সরিৎবাবুর ভৃত্য পঞ্চানন—ঐ পঞ্চাননের কাছ থেকে এবং তার সঙ্গেই কেবল রজতবাবুর দেখা হয়েছিল—খোঁজ করে দেখ—আর কারও সঙ্গে তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অর্থাৎ ঐ দিন সকাল থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত ঐ ১৩১৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে দেখাসাক্ষাৎ : হয়েছিল কিনা, অবশ্যই তার পরিচিতদের মধ্যে কারও। আচ্ছা পঞ্চানন তো সন্ধ্যার কিছু আগে ছুটি নিয়ে যায় রাত্রের মত—তাই না?
হ্যাঁ-রজতবাবু তাকে রাত্রের মত ছুটি দিয়ে দিয়েছিলেন।
এমনও তো হতে পারে সুদর্শন, সে ছুটি হয়তো রজতবাবু ইচ্ছা করেই দিয়েছিলেন পঞ্চাননকে–মানে কোন বিশেষ কারণে পঞ্চাননের ঐ সময়টা ফ্ল্যাটে উপস্থিতি চান নি বলেই সন্ধ্যা থেকে রাত দশটা সাড়ে দশটা পর্যন্ত। আরও একটা খবর তোমায় জানতে হবে, নীলাকাশে আসার পর রজতবাবু বের হয়েছিলেন কিনা আর বের হলে কতক্ষণের জন্য বের হয়েছিলেন—পঞ্চাননকে কি বলে গেছেন কোথায় যাচ্ছেন বা কিছু। এবং ঐ সময়ের মধ্যে অর্থাৎ যতক্ষণ ফ্ল্যাটে ছিলেন এবং পঞ্চাননও ছিল—কেউ রজতবাবুর সঙ্গে ফ্ল্যাটে দেখা করতে এসেছিল কিনা। কথাটা তো তুমি পঞ্চাননকে প্রশ্ন করেও জানতে পার।
তা পারি।
হ্যাঁ মনে রেখো পঞ্চানন is a very important clue এই রহস্যের ব্যাপারে। তাকে sidetrack করে যেয়ো না। কারণ একমাত্র ঐ পঞ্চাননই তোমাকে বলতে পারবে—ঐদিন সকাল থেকে ঐ ফ্ল্যাটে আসার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্থাৎ যতক্ষণ পঞ্চানন ফ্ল্যাটে ছিল—ঐ সময়ে রজতবাবুর detail movements ও activities সম্পর্কে। ওটা জানা তোমার একান্তভাবেই দরকার। সেই সঙ্গে আরও একটা কাজ তোমাকে করতে হবে–
কি দাদা–বলুন?
অনন্য বক্সী ও তার স্ত্রী বিপাশা দেবীর সঙ্গে দেখা করে তারা ওর এবার কলকাতায় আসা সম্পর্কে কিছু জানেন কিনা সেটাও তোমার জানা দরকার।