মোটামুটি তাহলে আপনাকে রায়পুরের সমগ্র হত্যা-মামলাটির একটা মীমাংসা করে দিলাম। এবং এখন বোধ হয় আপনার আর বুঝতে কষ্ট হবে না, হতভাগ্য রায়পুরের ছোট কুমার সুহাস মল্লিকের হত্যার পরিকল্পনাকারী স্বয়ং রাজাবাহাদুর—নিহত সুহাসের বৈমাত্রেয় জ্যেষ্ঠভ্রাতা সুবিনয় মল্লিক।
পরিকল্পনাকারী ডাঃ কালীপদ মুখার্জী ও হত্যার যন্ত্রের উদ্ভাবনকারী সতীনাথ লাহিড়ী। আসলে উপরিউক্ত তিনজনকেই সুহাসের হত্যাকারী বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। এবং এক্ষেত্রে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল অর্থলাভ। অর্থ অনর্থম। নিশানাথ ও সতীনাথের হত্যাকারী স্বয়ং সুবিনয় মল্লিক। উদ্দেশ্য তাদের মধ্যে নিশানাথ ছিলেন সতীনাথের হত্যার সাক্ষী এবং সতীনাথ ছিল সুহাসের হত্যার সঙ্গী ও পরিকল্পনাকারী। এই হত্যামামলা-সংক্রান্ত সব কিছুই আপনার গোচরীভুক্ত করলাম, সেই সঙ্গে এদের জবানবন্দি, যা আমি সংগ্রহ করেছি ও অন্যান্য evidenceগুলোও আপনার কাছে পাঠালাম। ধর্মাধিকরণের হাতে সব কিছু তুলে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত হয়ে কলকাতা হতে কিছুদিনের জন্য চলে যাচ্ছি, অদূরভবিষ্যতে এই মামলার ফলাফল দূর হতে দেখবার বুকভরা আশা নিয়ে। আশা করি নিরাশ হব না। নমস্কার।
ভবদীয়
কিরীটী রায়
২.১৯ শেষ কথা
শেষ কথা
মানুষের চিন্তার বাইরেও যে কত বিস্ময় থাকে দিন-দুই পরে জাস্টিস মৈত্র একখানা খোলা চিঠি হাতে করে সেই কথাই ভাবছিলেন। কিরীটীর দীর্ঘ চিঠিটা পাওয়ার পর হতেই এ দুটো দিন কেবল তিনি ভেবেছেন, কোন্ পথে এবার তিনি তাঁর কাজ শুরু করবেন।
যে সত্য আজ কঠোর উলঙ্গভাবে তাঁর চোখের সামনে এসে প্রকট হয়েছে, তাকে কেমন করে তিনি গ্রহণ করবেন।
কিন্তু তাঁর সকল চিন্তা ও ভাবনার মীমাংসা যে এইভাবে এসে তাঁকে মুক্তি দেবে চিঠিখানা খুলে পড়বার আগের মুহূর্তেও তিনি ভাবতে পারেননি। এমনই হয়। নিয়তি!
শ্রদ্ধাস্পদেষু,
নির্ভাবনায় আমার এই চিঠিখানা আপনি পড়তে পারেন। এই চিঠি যখন আপনার হাতে গিয়ে পৌঁছবে তখন আমি এতটুকুও অনুতপ্ত নই। সুহাসকে আমিই হত্যা করিয়েছি। হাত, হত্যা করিয়েছি এইজন্যে যে এই পৃথিবীতে আমার তার মত শক্র আর ছিল না। শুধু এ জন্মেই নয়, আগের জন্মেও তাকে আমি হত্যা করেছি এবং পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে, তাহলে পরজন্মেও তাকে আমি হত্যা করব। এই আমার দৃঢ় সংকল্প। আমার কাকা নিশানাথ, তাঁকে আমি হয়তো হত্যা করতাম না, কিন্তু তাঁর অহেতুক কৌতূহল ও বাচালতাই তাঁকে হত্যা করতে আমায় বাধ্য করিয়েছিল। সতীনাথ—তাকেও আমি হত্যা করেছি, কারণ তার অর্থলিপ্সা। আমার চাইতেও সে বেশী অর্থলোভী ছিল। আর একটা কথা, যে উইল নিয়ে এত কাণ্ড, সে উইলটা আমি পেয়েছি খুঁজে এতদিনে, সুধীনের পিতা সেই উইল অনুসারে রায়পুর স্টেটের এক-তৃতীয়াংশের অধিকারী।উইলটা আমিই সঙ্গে নিয়ে গেলাম। কারণ আমার সকল প্রচেষ্টাই যখন ব্যর্থ হল এবং আমার ভোগে যখন সম্পত্তি এলই না, তখন যাতে সেটা নিয়ে আর কোন উপদ্রব না ঘটে সেইজন্যই উইলটা সঙ্গে নিয়ে গেলাম। Adieu!
বিনীত
সুবিনয় মল্লিক