যে প্রশ্নের জবাব আমি দিইনি, সেগুলোর জবাব দেওয়া সত্যিই আমার পক্ষে সম্ভব নয় মিঃ হালদার। তাছাড়া আমার ধারণামত আপনাদের ঐ প্রশ্নগুলোর বর্তমানের এই মামলার সঙ্গে কোনো সংস্পর্শ আছে বলেই আমি মনে করি না। প্রশ্নগুলো সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার বলেই মনে করি।
.
সেই দিন রাত্রে আবার কিরীটী ও সুব্রত মিলিত হয়ে মামলাটা সম্পর্কে আলোচনা করছিল।
কিরীটীর হাতে একখানা নোটবুক। পর পর কতকগুলো পয়েন্ট কিরীটী সেই নোটবুকের মধ্যে লিখেছে। সেই পয়েন্টগুলো নিয়েই দুজনে পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করছিল।
১নং : ৩১শে মে ডাঃ সুধীন চৌধুরী যখন সুহাসকে ট্রেনে তুলে দিতে যায়, তার হাতে একটা মরক্কো-বাঁধাই ছোট কেস ছিল, এবং যার অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রথম দিন সে অস্বীকার করে। কিন্তু পরে জেরার মুখে আবার স্বীকার করে নেয়।
২নং : ডাঃ জগবন্ধু মিত্রের সুধীনের সঙ্গে কোনো পরিচয় ছিল সে কথাটা অস্বীকার করা।
৩নং: সুধীনের ব্যাঙ্ক-ব্যালেন্স দশ হাজার টাকার কোনো সন্তোষজনক কৈফিয়ত পাওয়া যায়নি।
৪নং : ডাঃ সুধীন চৌধুরী ও সুহাস মল্লিকের সঙ্গে পরস্পর পত্র-বিনিময় চলত।
৫নং : কি করে সুধীন শেষবার অসুস্থ অবস্থায় যেদিন সুহাস কলকাতায় চিকিৎসার জন্য আসে ঐদিনই তার আসবার সংবাদ পায়।
৬নং : ঐ ধরনের কতকগুলো প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দেওয়ায় সুধীনের ইচ্ছাকৃত অস্বীকার।
৭নং : নৃসিংহগ্রাম মহালে শ্রীকণ্ঠ মল্লিক মহাশয়ের অদৃশ্য আততায়ীর হাতে নিষ্ঠুর হত্যা। ৮নং : ঐ একই জায়গায় সুধীনের পিতার হত্যা।
৯নং : নায়েবজীর মৃত্যুশয্যায় কোনো একটি উইল সম্পর্কে তার পুত্রবধূ কাত্যায়নী দেবীকে ইঙ্গিত।
১০নং : রায়বাহাদুর রসময় মল্লিক, শ্ৰীকণ্ঠ মল্লিকের দত্তকপুত্র।
১১নং : কাত্যায়নী দেবীর পুত্রবধূ সুধীনের মা সুহাসিনী দেবীর মুখে শোনা রায়পুরের পুরাতন কাহিনী।
১২নং : ৩১শেমে শিয়ালদহস্টেশনেছাতাধারী একটি কালোলোকের আকস্মিক আবিভাব।
১৩নং : কালোলোকটির সেই ছাতাটি।
১.০৮ আরও সূত্র
সুব্রত সে দিনও জাস্টিস মৈত্রের বাড়িতে মামলার প্রসিডিংস পড়ছিল।
রায়বাহাদুর অনিমেষ হালদার ডাঃ মুখার্জীকে প্রশ্ন করছিলেন, ডাঃ মুখার্জী, আপনি তাহলে আগাগোড়া কোনো সময়েই সন্দেহ করেননি যে, সুহাস মল্লিকের প্লেগ হতে পারে?
না।
ডাঃ সেনগুপ্ত যখন সে বিষয়ে আপনাকে ইঙ্গিত করেন, তখনও নয়?
না।
কিন্তু কর্ণেল স্মিথের রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে, সুহাস মল্লিকের প্লেগই হয়েছিল, এ কথাটা নিশ্চয়ই এখন আপনি অস্বীকার করছেন না?
স্বীকারও করছি না।
তার মানে?
তার মানে, যে ব্লাড-কালচারের রিপোর্টের ওপরে ভিত্তি করে কর্ণেল স্মিথ রিপোর্ট দিয়েছেন, সেটা যে মৃত সুহাসমল্লিকেরইব্লাড-কালচার রিপোর্ট, সেটা প্রমাণিত হত যদি তখনই মৃতদেহের ময়না তদন্ত করা হত! ব্যাপারটা যে আগাগোড়াই সাজানো নয় বা কোনো ভুলভ্রান্তি হয়নি, তারও তো কোনো প্রমাণ নেই।
না, তা নেই বটে, কিন্তু কর্ণেল স্মিথ এর উত্তরে কি বলেন?
এবারে অ্যাডভোকেট হালদার কর্ণেল স্মিথকে প্রশ্ন করছেন।
আমি oath নিয়ে বলতে পারি, যে ব্লাড-কালচার রিপোর্ট আমরা দিয়েছি সেটা মৃত মিঃ সুহাস মল্লিকেরই রক্তের কালচার রিপোর্ট। সে প্রমাণও আমরা দিতে পারি। কর্ণেল স্মিথ জবাব দেন।
মিঃ লর্ড, আমি একটা প্রশ্ন কর্ণেল স্মিথকে করতে পারি কি? ডাঃ মুখার্জী বললেন।
ইয়েস, করুন।
কর্ণেল স্মিথ, একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি-বললেন ডাঃ মুখার্জী, যদি সত্যিই সুহাস মল্লিকের শরীরের রক্ত কালচার করে প্লেগই প্রমাণিত হয়ে থাকে ধরে নেওয়া যায়, তবে প্লেগের বীজাণু কি করে এবং কোথা থেকে সুহাসের শরীরে এল, এর জবাব আপনি দিতে পারেন কি?
কি করে এল এবং আসতে পারে কিনা, সেটা আমার বিবেচ্য নয়। আদালতই সেটা দেখবেন।
মিঃ হালদার : এমন কি হতে পারে না কর্ণেল স্মিথ যে, প্লেগ বীজাণু সুহাসের শরীরে inject করা হয়েছিল?
কর্ণেল স্মিথ : আমার মনে হয় সুহাসের শরীরে প্লেগ জার্ম ইনজেকশন করাই হয়ত হয়েছিল, সেটাই স্বাভাবিক এক্ষেত্রে।
ডাঃ মুখার্জী: ব্যাপারটা অনেকটা একটা রূপকথার মত শোনাচ্ছে না কি? আজ প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ বৎসরের মধ্যে বাংলাদেশের কোথাও কোনো প্লেগ কেস হয়েছে বলে শোনা যায়নি, এক্ষেত্রে প্লেগ জার্ম সংগ্রহ করে কারও শরীরে সেটা ইনজেকশন করা, ব্যাপারটা শুধু অসম্ভবই নয়, হাস্যকর নয় কি?
কর্ণেল স্মিথ : আমার সহকর্মী মাননীয় ডাঃ মুখার্জী বলবেন কি তাঁর সহকারী রিসার্চ স্টুডেন্ট ডাঃ অমর ঘোষ হঠাৎ এক মাসের ছুটি নিয়ে বম্বেতে গিয়েছিলেন কিনা এবং কেনই বা গিয়েছিলেন?
হ্যাঁ, গিয়েছিলেন।
তিনি কি কারণে বম্বেতে গিয়েছিলেন?
তা আমি কি করে বলব? তিনি ছুটি নিয়ে কোথায় যান না যান, সেটা দেখবার আমার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।
আচ্ছা এ কথা কি সত্যি যে বম্বে রিসার্চ ইন্সটিটিউটে ডাঃ অমর ঘোষ ডাঃ মুখার্জীরই একটি পরিচয়পত্র নিয়ে কাজ করতে গিয়েছিলেন কর্ণেল কৃষ্ণমেননের কাছে?
কোথায় কথাটা শুনলেন জানি না এবং ডাঃ ঘোষকে আমি কোনো পরিচয়পত্র দিইনি।
কর্ণেল কৃষ্ণমেনন, ডাইরেক্টর অফ বম্বে প্লেগ ইনস্টিটিউট আপনার পরিচিত বন্ধু, কথাটা কি সত্যি?