আপনাকে তো আগেই বলেছি মিঃ ঘোষাল, আপনার ও প্রশ্নের জবাব দিতে আমি ইচ্ছুক নই।
এবারে আবার রায়বাহাদুর প্রশ্ন করলেন, ডাঃ চৌধুরী, ২১শে এপ্রিল বোস অ্যাণ্ড চৌধুরীর লেজার বুকে আপনার নামের against-এ যে পাঁচ হাজার টাকা credit দেখানো হচ্ছে আপনার ব্যবসার কোনো একটা বড় order supply-র ব্যাপারে লভ্যাংশ হিসাবে, সে টাকাটা আপনি কি করেছিলেন? আপনি যে একটু আগে বলছিলেন দুবার মাত্র কোম্পানী থেকে আপনি লভ্যাংশ পেয়েছেন—এই পাঁচ হাজার টাকাটা কি তারই মধ্যে একবার?
আমার ঠিক মনে নেই।
বেশ, তবেসেদিন আপনি আমার মাননীয় বন্ধু মিঃঘোষালের প্রশ্নের জবাবেকেন বলেছিলেন একমাত্র ব্র্যাকটিস ও ডিসপেসারী ছাড়া আপনার অন্য কোনো savings বা income ছিল না? মিথ্যে কথা বলেছিলেন—না ইচ্ছে করেই কথাটা গোপন করেছিলেন, বলবেন কি?
কোনো একটা বিশেষ কারণেই কথাটা আমায় সেদিন গোপন করতে হয়েছিল।
বেশ, তবে আবার স্বীকার করলেন কেন? মিঃ ঘোষাল প্রশ্ন করলেন।
যে কারণে সেদিন আমায় কথাটা গোপন করতে হয়েছিল, আজ আর সেই কারণ নেই, তাই স্বীকার করেছি।
কারণটা কি আদালতকে জানাবেন? প্রশ্ন করলেন মিঃ ঘোষাল।
না, সেটা প্রকাশ করতে আমি বাধ্য নই। আসামী সুধীন চৌধুরী জবাব দেয়।
সুব্রত মনে মনে ভাবে, আশ্চর্য! সুধীন চৌধুরী যেন কতকটা ইচ্ছে করেই নিজের প্রশ্নের জালে নিজে জড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু কেন? নিজের ভাল-মন্দটাও কি সে নিজে বোঝে না?
সুব্রত আবার পাতা উল্টিয়ে যায়।
আবার এক জায়গায় সন্তোষ ঘোষাল প্রশ্ন করছেন আসামী সুধীন চৌধুরীকে, ডাঃ চৌধুরী, আপনি কবে জানতে পারেন যে সুহাস মল্লিক অসুস্থ?
সুহাস এবারে অসুস্থ হয়ে কলকাতায় আসবার আগেই তার এক পত্রে তার অসুস্থতার সংবাদ জানতে পারি।
ছোট কুমার মানে সুহাসবাবু আপনাকে সেই চিঠিতে কি লিখেছিলেন?
লিখেছেন ট্রেন থেকেই সে অসুস্থ হয় এবং অসুখ ক্রমেই বেড়ে চলেছে, ডাঃ কালীপদ মুখার্জী সে সংবাদ পেয়ে রায়পুর গেছেন।
আপনি তার কি জবাব দেন?
তাকে যত শীঘ্র সম্ভব কলকাতায় চলে আসবার জন্য লিখেছিলাম।
এই সময় ডাঃ সুধীন চৌধুরীর পক্ষের উকিল রায়বাহাদুর প্রশ্ন করলেন, হঠাৎ আপনি তাকে কলকাতায় আসতে লিখলেন কেন? যতদূর আমরা জানি ডাঃ মুখার্জী তো একজন বেশ নামকরা ডাক্তার।
আমি তা জানি।
তবে?
আপনারা হয়তো জানেন না, এবারে অসুস্থ হওয়ার কিছুদিন আগে একবার সুহাসের টিটেনাস হয়েছিল। সে-সময়ও ডাঃ মুখাজীই তাকে দেখেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সুবিধা হয়নি, পরে সে সংবাদ পেয়ে আমিই তাকে কলকাতায় আনিয়ে ডাঃ সেনগুপ্তকে দিয়ে চিকিৎসা করবার ব্যবস্থা করেছিলাম।
আপনি কি তাহলে বলতে চান, ডাঃ মুখার্জীর মত প্রথিতযশা একজন ডাক্তার সামান্য টিটেনাস রোগটাও ধরতে পারেননি?
না, এমন কথা তো আমি বলিনি!
তবে?
বড় ডাক্তার যে সব সময়ই ঠিক ঠিক রোগ নির্ণয় করবেন তার কী মানে আছে, ভুলও তত হতে পারে! খুব অস্বাভাবিক তো নয়!
শুধু কি এটাই একমাত্র কারণ সুহাসবাবুকে কলকাতায় আসবার জন্য আপনার চিঠি লেখবার?
ডাঃ সুধীন চৌধুরী এবারে যেন বেশ একটু ইতস্ততই করতে থাকে।
জবাব দিন?
হ্যাঁ। তাছাড়া আর কিছু না হোক, কলকাতায় এলে প্রয়োজনমত আরও দু-চারজন বড় ডাক্তারকে কনসাল্ট তো করা যেতে পারে, তাই।
আচ্ছা, সুহাস মল্লিকের সঙ্গে কি আপনার নিয়মিত পত্রবিনিময় চলত ডাঃ চৌধুরী?
হ্যাঁ।
আপনার চিঠি পাওয়ার কতদিন পরে সুহাসবাবু কলকাতায় আসেন?
দিন পাঁচ-ছয় পরে বোধ হয়।
আপনার চিঠির জবাবে সুহাস মল্লিক আপনাকে কোনো পত্র দিয়েছিলেন?
না।
এমন সময় আবার ঘোষাল প্রশ্ন শুরু করলেন, আপনি জানতেন না সুহাস মল্লিকরা কবে এখানে আসছেন?
না।
আমি শুনেছি, যেদিন সুহাসবাবুরা কলকাতায় এসে পৌঁছন, সেই দিনই দ্বিপ্রহরের দিকে—আপনি ভবানীপুরে মল্লিক লজে সুহাসবাবুকে দেখতে যান, কথাটা কি ঠিক?
ঠিক।
আপনি থাকেন শ্যামবাজারে, আপনার বাড়িতে সে-সময় ফোনটা খারাপ ছিল, চিঠিও আপনি পাননি, তাছাড়া সংবাদ নিয়েছিকেউ আপনাকে সুহাসবাবুর আসবার সংবাদও দেননি, তবে কি করে আপনি জানলেন যে ঐদিনই সকালের ট্রেনে সুহাস কলকাতায় এসেছেন? সন্তোষ ঘোষাল প্রশ্ন করলেন।
যে ভাবেই হোক আমি সুহাসদের কলকাতায় পৌঁছবার বণ্টাখানেকের মধ্যেই খবরটা জানতে পারি।
ও, আপনার জবাব শুনে মনে হচ্ছে এখুনি যদি আমরা প্রশ্ন করি যে কি ভাবে সংবাদটা আপনি জানলেন, আগের মতই হয়তো বলে বসবেন, আমি জবাব দিতে প্রস্তুত নই, কেমন কিনা? Am I right?
ডাঃ সুধীন চৌধুরী সে প্রশ্নের কোনো জবাব দেয় না–চুপ করে থাকে। এবারে রায়বাহাদুর বলতে শুরু করেন, মিঃ লর্ড, যদি আমার মাননীয় বন্ধু মিঃ ঘোষারের প্রশ্ন শেষ হয়ে থাকে, তাহলে আমি ডাঃ চৌধুরীকে কতকগুলো প্রশ্ন করতে চাই।
জাস্টিস্ মৈত্র : প্রসিড!
ডাঃ চৌধুরী, রায়বাহাদুর হালদার প্রশ্ন শুরু করলেন, মামলা শুরু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমার মাননীয় বন্ধু মিঃ ঘোষালের কতকগুলো গুরুতর প্রশ্নের জবাবে আপনি ইচ্ছাকৃত মৌনবৃত্তি অবলম্বন করেছেন। প্রশ্নগুলো—১নং, আপনার ব্যাঙ্ক-ব্যালেন্স দশ হাজার টাকা কোথা থেকে এল অর্থাৎ ঐ দশ হাজার টাকা আপনি কি ভাবে উপায় করেছেন, তার কোনো সদুত্তর দিতে আপনার অনিচ্ছা প্রকাশ : ২নং, আপনার একমাত্র ডাক্তারী প্র্যাকটিস্ ছাড়া আরও যে অর্থাগমের পথ ছিল সেকথা দ্বিতীয় দিন স্বীকার করবার পর আপনি বলেন কোনো একটা বিশেষ কারণেই নাকি কথাটা আগের দিন আপনি গোপন করেছিলেন; দ্বিতীয় দিন সব কথা স্বীকার করবার পর আবার বলেন, যদিও আপনাকে কথা অস্বীকার করতে হয়েছিল, পরে আর তার গোপন করবার নাকি কোনো প্রয়োজন ছিল না। অথচ কারণ যে কি তা আপনি জানাতে রাজী নন। ৩নং, শেষবার অসুস্থ অবস্থায় সুহাস মল্লিকের কলকাতায়। আসবার সংবাদ আপনি যে কি করে, কোন্ সূত্রে পেয়েছেন, তাও আপনি প্রকাশ করতে রাজী নন। একটা কথা নিশ্চয়ই আপনি ভুলে যাচ্ছেন না যে, অত্যন্ত রহস্যময় অথচ নিষ্ঠুর এক হত্যা-মামলার সঙ্গে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক, আপনি সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। অনুসন্ধানের ফলে যতটুকু জানা যায় তাতে অকুস্থানে আপনিও ছিলেন। এক্ষেত্রে আপনার সপক্ষে কিংবা বিপক্ষে অনেক প্রকার প্রশ্নই উঠতে পারে। কিন্তু বিশেষ বিশেষ প্রশ্নের যদি আপনি খেয়ালখুশিমত জবাব দেন, তাহলে স্বভাবতই আইন আপনাকে দোষী বলে মেনে নিতে বাধ্য হবে।