বেশ, তা না হয় হল, কিন্তু বছর দুই প্র্যাকটিস্ করে ব্যাঙ্কে দশ হাজার টাকা জমল কি করে? মাসে আপনি average কত টাকা রোজগার করতেন এর জবাবটা দেবেন কি, না এও ব্যক্তিগত বলে এড়িয়ে যেতে চান?
তা প্রায় দুশো হতে তিনশো হবে বৈকি আমার গড়পড়তা মাসিক আয়!
নিশ্চয়ই শুরু হতেই আপনি অত টাকা রোজগার করেননি, কি বলেন?
না।
দুতিন শত টাকা মাসিক আয় হতে ঠিক কত দিন লেগেছিল বলে আপনার অনুমান হয়, ডাঃ চৌধুরী?
বলতে পারব না ঠিক, তবে আট-দশ মাস লেগেছিল।
বলেন কি! আপনাকে তো তাহলে খুব ভাগ্যবানই বলতে হবে। তা থাক সে কথা, তাই যদি হয়, বারো কি চোদ্দ মাসে আপনি দশ হাজার টাকা ব্যাঙ্কে জমালেন কি করে? আর কোনো উপায়ে আপনি অথোপার্জন করতেন নাকি?
আপনার এ প্রশ্নেরও জবাব দিতে আমি রাজী নই।
ওঃ—তা বেশ! কিন্তু ডাঃ চৌধুরী, আপনি বুঝতে পারছেন কি আপনার এ ধরনের statement-গুলো আপনার বিরুদ্ধেই যাবে?
আমি তো আপনাকে বলেছিই, জবাব আমি দেব না।
তাহলে আপনার statement-এর দ্বারা আদালত এটাই ধরে নেবে যে, আপনার ব্যাঙ্কে যে দশ হাজার টাকা আছে তার সবটুকুই আপনার প্র্যাকটিস্ বা ডিসপেনসারীর আয় থেকে সঞ্চিত নয়, কি বলেন?
আপনার যেমন অভিরুচি।
অন্য এক জায়গায় দেখা যাচ্ছে, রায়পুর স্টেটের সেক্রেটারী বা ম্যানেজার সতীনাথবাবু তাঁর জবানবন্দিতে বলেছেন, সুধীনের ডাক্তারীর অ্যাটাচি কেসটা যদিও সে গাড়ির মধ্যে রেখে স্টেশনে নেমেছিল, তার হাতে ছোট একটি কালো রংয়ের মরোক্কো লেদারের কেস ছিল আগাগোড়া। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। এমন কি সুহাসকে ট্রেনে তুলে দেবার পরেও সতীনাথবাবু সুধীনের বাঁ হাতে সেই বাক্সটি নাকি দেখেছিলেন।
সেই সম্পর্কেই সন্তোষ ঘোষাল আবার সুধীনকে জেরা করছেন।
সতীনাথবাবু ৩১শে মে স্টেশনে আপনার বাঁ হাতে যে কালো রংয়ের একটা মরোক্কো লেদারের কেসের কথা বলছেন, সেটা সম্পর্কে আপনার কিছু বলবার আছে কি ডাঃ চৌধুরী?
হ্যাঁ, আমার হাতে একটা কালো রংয়ের মরোক্কো লেদারের কেস ছিল।
কিন্তু পরশুর জবানবন্দির সময় আমার প্রশ্নের উত্তরে আপনি বলেছিলেন, ঐ সময় আপনার হাতে কিছুই ছিল না, অপনার হাত একেবারে খালি ছিল।
সে-সময় আমার ও কথাটা মনে ছিল না।
কিন্তু কেসটা কিসের? তার মধ্যে কি ছিল?
কেসটার মধ্যে হিমোসাইটোমিটার (রক্তপরীক্ষার যন্ত্র) ছিল একটা।
বাক্সটা আপনি হাতে করে রেখেছিলেন কেন?
হাতে করে রাখিনি, ভুল করে পকেটেই রেখেছিলাম, স্টেশনে ভিড়ের মধ্যে কেউ পকেট থেকে চুরি করে নেয় ভয়ে, পকেট থেকে বের করে হাতে রেখেছিলাম। কারণ জিনিসটা আমার নিজস্ব নয়, ঐদিনই সকালবেলা একজন রোগীর রক্ত নেওয়ার জন্য চেয়ে নিয়েছিলাম আমার এক ডাক্তার বন্ধুর কাছ থেকে।
সেটা আবার বন্ধুকে ফেরত দিয়েছিলেন?
হ্যাঁ, সেই দিনই রাত্রে ফিরবার পথে ফেরত দিয়ে যাই।
বন্ধুটি কোথায় থাকেন, কি নাম জানতে পারি কি?
ডাঃ জগবন্ধু মিত্র, ৩/২ নেবুবাগানে থাকেন।
দিন দুই বাদে আবার সেই জবানবন্দির জের চলেছে।
সন্তোষ ঘোষাল আসামী ডাঃ চৌধুরীকে প্রশ্ন করেছেন, ডাঃ চৌধুরী, আপনার নির্দেশমত নেবুবাগানের ডাঃ জগবন্ধু মিত্রের খোঁজ নিয়েছিলাম; কিন্তু আশ্চর্য, ঐ বাড়িতে ডাঃ জগবন্ধু মিত্র বলে একজন ডাক্তার থাকেন বটে কিন্তু তিনি তো আপনার সঙ্গে কস্মিনকালেও কোন পরিচয় ছিল বলে অস্বীকার করেছেন, তা যন্ত্রটা দেওয়া তো দূরের কথা! এ সম্পর্কে কি বলেন আপনি?
কিছুই বলবার নেই। কারণ আমি যা বলেছি তার একবর্ণও মিথ্যা নয়। দৃঢ়কণ্ঠে সুধীন জবাব দেয়।
ডাঃ জগবন্ধু মিত্র এখানেই উপস্থিত আছেন, এ বিষয়ে আপনি কোনো প্রশ্ন করতে চান তাঁকে?
ডাঃ জগবন্ধু মিত্র সে এখানে উপস্থিত আছেন, সে তত আমি দেখতেই পাচ্ছি, আমি তো আর অন্ধ নই!
এমন সময় রায়বাহাদুর অনিমেষ হালদার প্রশ্ন করলেন জজকে সম্বোধন করে, মি লর্ড, আমি ডাঃ মিত্রকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে পারি?
জজ : নিশ্চয়ই–করুন।
ডাঃ মিত্রকে লক্ষ্য করে : আপনারই নাম ডাঃ জগবন্ধু মিত্র?
ডাঃ মিত্র : হ্যাঁ।
আপনি ৩/২ নেবুবাগানের বাড়িতে থাকেন?
হ্যাঁ।
কতদিন সেখানে আছেন আপনি?
বছর চার হবে।
আপনি কোন্ কলেজ হতে এম.বি. পাস করেছেন এবং কোন্ সালে পাস করেছেন?
কলকাতা মেডিকেল কলেজ হতে পাস করেছি। …সালে।
ডাঃ চৌধুরী, আপনিও শুনেছি কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এম.বি. পাস করেন, কোন্ সালে পাস করেছেন?
ডাঃ মিত্র যে বছর পাস করেন সেই বছরই।
বেশ। আচ্ছা ডাঃ মিত্র, আপনার এম.বি. পাস করতে কবছর লেগেছিল?
আমি একেবারেই পাস করি, ছয় বছরই লেগেছিল।
ডাঃ চৌধুরী, আপনার?
আমিও ছবছরেই পাস করেছি।
এইবার রায়বাহাদুর হালদার সন্তোষবাবুর দিকে ফিরে বললেন, আমার মাননীয় কৌনসিল বন্ধু, এর পরও আমাকে বলবেন আপনাদের ডাঃ মিত্র যা বলছেন আপনার কাছে আসামীর সঙ্গে পরিচয় সম্পর্কে তার সব কথাগুলিই একেবারে খাঁটি সত্য?
সন্তোষ ঘোষাল বলেন, কেন নয়, জানতে পারি কি?
Question of commonsense only, মিঃ ঘোষাল! যারা একসঙ্গে একাদিক্রমে দীর্ঘ ছবছর একই কলেজে পড়ল, এবং একই হাসপাতালে কাজ করল, তারা পরস্পর পরস্পরকে চেনে না—শুধু অসম্ভবই নয়, একেবারে অবিশ্বাস্য!
চিনতে হয়ত পারেন, কিন্তু আলাপ যে থাকবেই তার কি কোনো মানে আছে?