বৈষ্ণব বন্দনায় যাহা লিখিত আছে তাহাও কম প্রমাণ নহে।
“সঙ্গীত কারক বন্দো বলরাম দাস।
নিত্যনন্দ চন্দ্রে যার অত্যন্ত বিশ্বাস॥”
বলরাম দাস তাঁহার রচিত নিত্যানন্দচন্দ্র সম্বন্ধীয় পদেও উহা সপ্রমাণ করিয়াছেন। পদগুলি এখানে আর উদ্ধত করিলাম না।
তিন প্রভুর অন্তর্দ্ধানের পরে খেতরীতে নরোত্তম ঠাকুব মহাশয়ের বিগ্রহ স্থাপনোৎসব হয়। এই উৎসবে তৎকালীন অনেক পার্শদ ভক্ত উপস্থিত হইয়াছিলেন। ভক্তি-রত্নাকরের ঈশম তরঙ্গে, জাদুবী দেবীর সহিত যে যে ভক্ত খেতরী গমন করেন, তাহাতে নিত্যানন্দ শাখাভুক্ত ভক্তগণের নামের সহিত বলরাম দাসের নামও পাওয়া যায়।
“মুরারী চৈতন্য জ্ঞানদাস মহীধর।
পরমেশ্বরী দাস, বলরাম বিজ্ঞবর।”
প্রেম বিলালেও (১৯ বি) খেতরীর উৎসব বর্ণিত হইয়াছে। গ্রন্থকার (বলরাম দাস) জাহ্নবী দেবীসহ ঐ উৎসবে উপস্থিত ছিলেন, এই জন্যই অপরাপর ভক্তগণের নামের সহিত তিনি নিজ নাম লেখেন নাই; তবে উপস্থিত ছিলেন স্বীকার করিয়াছেন।
বলরাম যে একজন শিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন তাহার কোন সন্দেহ নাই। সেই জন্যই তাঁহাকে “বিজ্ঞবর” সম্বোধন করা হইয়াছে। প্রেম বিলাস গ্রন্থ তাহার বিরচিত। প্রেম বিলাসে সকল মহাজনেরই জীবন চরিত লিখিত হইয়াছে। সমুদায় মহাজনের জীবন চরিত অবগত হইয়া লিপিবদ্ধ করা হার কম পাণ্ডিত্যের পরিচায়ক নহে। উক্ত গ্রন্থ ব্যতীত বীরচন্দ্র চরিত নামক আর এক খানি গ্রন্থ বলরাম দাসের রচিত ইহা প্রেম বিলালে লিখিত আছে কিন্তু ঐ গ্রন্থ কোথাও আছে কি না জানা যায় না।
বলরাম কম বেশী ২৫০ পদ রচনা করিয়া গিয়াছেন ইহা অনুমান করা যায়। পদগুলি পাণ্ডিত্যে ও মধুরতায় পরি পূর্ণ। ইচ্ছা হয় সমুদায় পদ এখানে উদ্ধৃত করি। একটি মাত্র পদ এখানে না উল্লেখ করিয়া থাকিতে পারিলাম না।
“তুমি মোর নিধি রাই তুমি মোর নিধি।”
১৯৭ পৃষ্ঠা।
বলরাম দাস শুধু যে ভক্ত গ্রন্থ কর্তা ও কবি ছিলেন তাহা নহে তাহার সঙ্গীত বিষয়ে বিশেষ অনুরাগ ছিল। বৈষ্ণব বন্দনায় আছে–
“সঙ্গীত কারক বন্দো বলরাম দাস”
–রমণীমোহন মল্লিক।