সবাই অবাক। রাষ্ট্রপতি বস্তা বোঝাই পেঁয়াজ নিয়ে যাচ্ছেন! মুখে কেউ কিছু না বললেও লজ্জায় ঘেন্নায় সবাই মুখ নীচু করলেন।
ইতিমধ্যে স্বয়ং রাষ্ট্রপতি সদলবলে হাজির। একবার আড়চোখে বস্তামুক্ত পেঁয়াজগুলোর গড়াগড়ি দেখে বিমানকর্মী ও অন্যান্যদের সঙ্গে করমর্দন করে বিমানে উঠলেন কিন্তু পেঁয়াজগুলো আবার সংগ্রহ করে বস্তাবন্দী হয়ে বিমানে তোলার পরই ভারতের রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিশেষ বিমান আকাশে উড়ল।
আমাদের সৌভাগ্য আমরা এমন মহামান্য রাষ্ট্রপতিও পেয়েছি যার সুযোগ্যা সহধর্মিণী চোর।
রাষ্ট্রীয় সফরে রাষ্ট্রপতি গিয়েছেন এক প্রতিবেশী রাষ্ট্রে। সঙ্গে তাঁর সহধর্মিণী। মাননীয়া ফার্স্ট লেডি অব ইণ্ডিয়া। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও তাঁর স্ত্রীর জন্য সম্মানে অতিথিসেবক রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রীয় ভোজেরে আয়োজন করেছেন এক বিখ্যাত হোটেলে। রূপার কাটলারী দেখে মাননীয়া রাষ্ট্রপতির পত্নী আর লোভ সামলাতে পারলেন না। ভোজনসভা শেষে ঘরে ফেরার সময় তিনি কয়েকটা ছুরি-কাঁটা চামচ ইত্যাদি শাড়ির মধ্যে লুকিয়ে নিয়ে চলে এলেন।
এই রাষ্ট্রপতি ও তাঁর সহধমির্ণী গিয়েছেন দূর প্রাচ্যের একটি দেশে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও দলের সদস্যদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে এক বিখ্যাত হোটেলে। রাষ্ট্রপতির ঘরের মধ্যে ও বাইরে অমূল্য শিল্প সামগ্রী দিয়ে সাজান হয়েছে সরকারী উদ্যোগে। তার কয়েকটি বড় পছন্দ হল মাননীয় রাষ্ট্রপতি-পত্নীর। যথারীতি তিনি দুচারটে তুলে নিজের ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখলেন দেশে নিয়ে যাবার জন্য।
সুখের কথা কোন দেশের কোন চুরি করা জিনিষই আমাদের রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত পৌঁছায়নি। রাষ্ট্রপতি-পত্নীর স্বভাবের কথা আমাদের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তরের ভালভাবেই জানা ছিল। তাই তো এই রাষ্ট্রপতি কোন দেশে রাষ্ট্রীয় সফরে গেলেই নিরাপত্তা কর্মীরা ছাড়াও দুচারজন ঝানু গোয়েন্দা পাঠানো হত। এইসব ঝানু গোয়েন্দারা চুরি করা জিনিষপত্র আবার চুরি করে যথাস্থানে রেখে দিতেন।
আরেক রাষ্ট্রপতির কাহিনী প্রায় অমৃত সমান।
ভারতীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদল চলেছে অস্ট্রেলিয়া। প্রতিনিধি দলে দুএকজন মহিলা সদস্যও আছেন। বিমানে এক মহিলা সদস্যর পাশেই বসেছেন পরবর্তী কালের এক রাষ্ট্রপতি।
দিল্লী থেকে পার্থ। পার্থ থেকে ক্যানবেরা। এক মহাদেশের দুটি প্রান্ত। দীর্ঘ পথ। সারারাত ধরে বিমান চড়ার পরই ক্যানবেরা পৌঁছানো যাবে। নৈশভোজন শেষ। প্লেনের উজ্জ্বল আলোগুলো আর জ্বলছে না। সারা প্লেনে আবছা আলো। প্রায় সব যাত্রীই সীট ঠিক করে কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমোচ্ছন। কয়েকজন যাত্রী মাথার উপরের আলো জ্বেলে বইপত্র পড়ছেন।
ভারতীয় সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সবাই ঘুমুচ্ছেন। ভাবী রাষ্ট্রপতির পাশের মহিলা সদস্যাও ঘুমুচ্ছেন। উনি ঘুমের মধ্যেই অনুভব করলেন শাড়ির মধ্যে দিয়ে কি যেন একটা কিছু আস্তে আস্তে তাঁর শরীরের উপর দিকে এগুচ্ছে। হঠাৎ খুব বেশী অস্বস্তি বোধ করতেই উনি খপ করে চেপে ধরলেন।….
শাড়ির মধ্যে কোন পোকা-মাকড় ঢোকেনি। ভাবী রাষ্ট্রপতি হাতই শাড়ির তলা দিয়ে…
এই মহিলা সদস্যটির সৎ সাহসের খ্যাতি ছিল এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় ইনি পার্লামেন্টের সেন্ট্রাল হলে প্রকাশ্যে বলতেন, দোহাই, এই চরিত্রহীন লোকটিকে ভোট দেবেন না।
এসব কথা লিখতেও ঘেন্না হয় কিন্তু তবু না লিখে পারি না। সাধারণ রক্ত-মাংসের মানুষের মধ্যে নানা রকমের দুর্বলতা থাকবেই কিন্তু যারা সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্ণধার হবেন, তাদের মধ্যে দৈন্য, মালিন্য ও চারিত্রিক দুর্বলতা থাকলে সমাজ বা রাষ্ট্র কিভাবে চলবে? ষাট কোটি মানুষের মধ্যে কী এমন একজনকে পাওয়া যায় না যার বিদ্যা বুদ্ধিমনীষা ত্যাগ-তিতিক্ষা ও চরিত্র আমাদের অনুপ্রাণিত করবে?
আজকাল রাজনৈতিক জগতের আরশোলা-টিকটিকিদের ঔদ্ধত্য দেখলেই মনে পড়ে যায় আমাদের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডক্টর রাজেন্দ্রপ্রসাদের কথা। একবার কলকাতা থেকে প্রকাশিত পদ্মপুরাণের কয়েকটি খণ্ড ওঁকে উপহার দিতে গেছি। এডিসি আমাকে রাষ্ট্রপতির স্ট্যাডিতে ঢুকিয়েই চলে গেলেন।
বিরাট স্ট্যাডির এক কোণায় বসেছিলেন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ। আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালেন। আমি ওঁর কাছে যেতেই উনি আমার পায় হাত দিয়ে প্রণাম করতে উদ্যত হলেন। আমি ছিটকে দূরে সরে গেলাম কিন্তু উনি বার বার আমাকে প্রণাম করার চেষ্টা করলেন।
তুমি ব্রাহ্মণ। তোমাকে প্রণাম করব না?
আমি সবিনয়ে নিবেদন করলাম, আপনি আমার পিতৃতুল্য। তাছাড়া অন্যান্য সবদিক দিয়েই আপনি আমার শ্রদ্ধেয়। তাই আমিই আপনাকে প্রণাম করব।
উনি তবুও নাছোড়বান্দা। শেষ পর্যন্ত উনি হাত জোড় করে নমস্কার করে আমাকে আগে বসিয়ে তারপর নিজে বসলেন।
শুধু ব্রাহ্মণকেই উনি প্রণাম করতেন না। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে গুণীজ্ঞানী বা প্রবীণদেরও উনি প্রণাম করতেন। সংস্কৃত ও উর্দু ভাষার বিশিষ্ট পণ্ডিতদের রাষ্ট্রীয় সম্মানে সম্মানিত করা শুরু হয় ওঁরই উদ্যোগে।
এই চারিত্রিক মাধুর্য ও বিনয় আজ কোথায়?
মনে পড়ছে আরো একটা ঘটনা। রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ রাষ্ট্রীয় সফরে জাপান গিয়েছেন। একদিন এক রাষ্ট্রীয় ভোজের ঠিক আগে সহযাত্রী রাষ্ট্রপতি ভবনের এক কর্মী হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হলে উনি ভোজসভা বাতিল করতে উদ্যত হয়েছিলেন। তারপর প্রবীণ অফিসারদের পরামর্শে উনি ভোজসভায় যোগদান করলেও আবার রোগীর শয্যাপার্শে ফিরে আসেন।