৩. তাঁর নতুন গৃহসঞ্চার-এর কথা:..সেদিনকার কাগজে।
(পৃষ্ঠা ১১ / পংক্তি ৯-১০)
(সমাচার দর্পণ : ২০ ডিসেম্বর ১৮২৩ / ৬ পৌষ ১২৩৩)
নূতন গৃহসঞ্চার ।।–মোং কলিকাতা ১১ ডিসেম্বর ২৭ অগ্রহায়ণ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে শ্ৰীযুত বাবু দ্বারিকানাথ ঠাকুর স্বীয় নবীনবাটীতে অনেক ২ ভাগ্যবান সাহেব ও বিবিরদিগকে নিমন্ত্রণ করিয়া আনাইয়া চতুর্বিধ ভোজনীয় দ্রব্য ভোজন করাইয়া পরিতৃপ্ত করিয়াছেন এবং ভোজনাবসানে ঐ ভবনে উত্তম গানে ও ইংগ্লণ্ডীয় বাদ্য শ্রবণে ও নৃত্য দর্শনে সাহেবগণে অত্যন্ত আমোদ করিয়াছিলেন। পরে ভাঁড়েরা নানা শং করিয়াছিল কিন্তু তাহার মধ্যে একজন গো বেশ ধারণপূর্বক ঘাস চর্বণাদি করিল।
(ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় : সংবাদপত্রে সেকালের কথা, প্রথম খণ্ড পৃষ্ঠা ১৩৮-১৩৯)
৪. মহর্ষি পরিবারে…গৃহের রক্ষয়িত্ৰী। (পৃষ্ঠা ১৯ পংক্তি ১০-১১)
আমার শ্বশুর আমার বড়ো ননদকে বড়ো ভালোবাসিতেন। তাঁহার এই সকল সৎকার্যে খুশি হইয়া তাহাকে তিনি গৃহরক্ষিতা সৌদামিনী নামকরণ করিয়াছিলেন।
(প্রফুল্লময়ী দেবী : আমাদের কথা, স্মৃতিকথা পৃষ্ঠা ৩২)
৫. দেবেন্দ্রনাথ সুকুমারীর বিয়ে ব্রাহ্মবিবাহ।
(পৃষ্ঠা ২১ / পংক্তি ২২-২৪) ব্রাহ্ম ধর্মমতে দেবেন্দ্রনাথের ইহাই প্রথম অপৌত্তলিক বিবাহ-অনুষ্ঠান।… পৌত্তলিকতা রহিত করিবার উদ্দেশ্যে তিনি তুলসীপত্র বিল্বপত্র কুশ শালগ্রামশিলা গঙ্গাজল ও হোমাগ্নি বর্জন করিয়া এক নূতন অনুষ্ঠানপদ্ধতি সংকলন করিলেন ও তদানুযায়ী কন্যার বিবাহ দিলেন।
(প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় : রবীন্দ্রজীবনী, ১ম খণ্ড / পৃষ্ঠা ১১)
৬. উন্নতমনা মহর্ষিও…শোনা যায়নি। (পৃষ্ঠা ৬৫ / পংক্তি ২২-২৬)
প্রসঙ্গত বলে রাখি, আমাদের নির্ভর করতে হয়েছে একমাত্র প্রফুল্লময়ী দেবীর লেখা আমাদের কথার ওপরে। সেখানে দেখি, বলেরে মৃত্যুর পর প্রফুল্লময়ীর মনে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্যে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ দুজনে বিদ্যারত্ন মহাশয়কে নিযুক্ত করেছিলেন গীতা ও উপনিষদ পড়ে শোনাবার জন্যে। বিদ্যারত্ন মহাশয় এক বছর প্রতিদিন প্রফুল্লময়ীকে ধর্মপুস্তক পড়ে শোনাতেন। এছাড়া দ্বিজেন্দ্রনাথের পুত্রবধূ হেমলতা দেবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসতেন পরমহংস শিবনারায়ণ স্বামী। তিনিও বহু সদুপদেশ দান ও আহুতি অনুষ্ঠান করে প্রফুল্লময়ী দেবীর মনে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। রবীন্দ্রনাথও তাকে একদিন সমম্বোপযোগী সুন্দর গীতা শ্লোক শোনান। কিন্তু মহর্ষি তাঁকে নিজে কোন উপদেশ দান করেছিলেন কিনা জানা যায়নি।
৭. তাই কৌতুক করে…মামলা হতো।
(পৃষ্ঠা ৬৯ পংক্তি ১৪-১৬ পর পৃষ্ঠা)
কবির এই কৌতুককর অনবদ্য উক্তিটি আমাদের উপহার দিয়েছেন মৈত্রেয়ী দেবী তার রবীন্দ্রনাথ গৃহে ও বিশ্বে গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ১০)।
৮. প্রজ্ঞা বিবাহসূত্রে অসমিয়া …কেন কে জানে!
(পৃষ্ঠা ১১৮ / পংক্তি ১৮-২০)।
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর ভ্রাতুস্পুত্রী প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর যোগযোগ সত্যই ছিন্ন হয়েছিল বলে মনে হয় না। তবে লক্ষ্মীনাথ বেজবড়ুয়ার আমার জীবনস্মৃতি পড়ে বোঝা যায় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে লক্ষ্মীনাথের ভাষা সম্পর্কে নানারকম তর্কবিতর্ক হয় এবং কবি পরে অপ্রীতিকর তর্কে যোগ দেওয়া থেকে বিরত হন। লক্ষ্মীনাথের ভাষায়, রোজ রোজ ভাষা সম্পর্কে তাদের সঙ্গে এই তর্ক বিতর্ক বেড়েই চলতে লাগলো আর এই যুবকদের নেতা রবিকাকা অবস্থা বিষম দেখে মৌনবলম্বন করলেন। তখন থেকে আজ এই বুড়োবয়স অবধি ঠাকুরমশাই তাদের এই পোষ না মানা জামাইয়ের সঙ্গে তর্ক করা ছেড়ে দিলেন।
আবার অন্যত্র,
…আমার সঙ্গে যখন আমার সাহিত্যিক শ্যালকদের তর্কাতর্কি হতে শুরু হলো এবং পরে রবিকাকার কাছে গিয়ে পৌঁছালো তখন শ্বশুর জামাইয়ের মধ্যেও একটি ছোটখাটো তর্কযুদ্ধ বাধলো। তারপরে মুখের তর্ক বন্ধ হলে রবিকাকা ভারতী পত্রিকায় অসমিয়া ভাষার উপর মন্তব্য প্রকাশ করে লিখলেন এই প্রবন্ধ। আমি তার প্রতিবাদ লিখে ভারতীতে ছাপাবার জন্যে পাঠিয়ে দিলাম। প্রতিবাদটা ভারতীতে ছাপা হয়। ওদিকে পুণ্য পত্রিকাতেও আমার প্রতিবাদ বেরুল। এরকম ভাবে তর্কযুদ্ধের শেষ হল। (পৃষ্ঠা ১৩০)
হয়ত এসব কারণেই প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর আমিষ ও নিরামিষ আহার প্রসঙ্গে কবির কোন মতামত জানা যায়নি।
৯. তবে এই প্রতাপাদিত্য উৎসব শুরু হয়।
(পৃষ্ঠা ১৬৮ / পংক্তি ১৬-১৭)
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সরলা দেবীর মতবিরোধ সুবিদিত ঘটনা। এ প্রসঙ্গে নিত্যপ্রিয় ধোষ রবীন্দ্রনাথ বনাম সরলা দেবী (অমৃত / বর্ষ ২৫ সংখ্যা ২৩ কার্তিক ১৩৮৫) প্রবন্ধে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। আমরা সেই দীর্ঘ প্রসঙ্গে প্রবেশ করিনি, তবে মনে হয় এই মতান্তরের সূচনা হয় প্রতাপাদিত্য উৎসব নিয়েই। কবির কোন লিখিত মন্তব্য এ সময় হয়তো প্রকাশিত হয়নি কিন্তু সরলা দেবী জীবনের ঝরাপাতায় লিখেছেন,
…তীর এসে বিধলো আমার বুকে রবীন্দ্রনাথের হাত থেকে—সাক্ষাতে নয়, দীনেশ সেনের মারফতে। দীনেশ সেন একদিন তার দূত হয়ে এসে আমায় বললেন,—আপনার মামা ভীষণ চটে গেছেন আপনার উপর।
কেন?
আপনি তার বৌঠাকুরাণীর হাটে চিত্রিত প্রতাপাদিত্যের ঘণ্যতা অপলাপ করে আর এক, প্রতাপাদিত্যকে দেশের মনে আধিপত্য করাচ্ছেন। তাঁর মতে, প্রতাপাদিত্য কখনো কোন জাতির hero-worship-এর যযাগ্য হতে পারে না।