রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুবাদের কাজে বাণী দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের বহু গান তিনি অনুবাদ করেছেন সুরের সঙ্গে, ছন্দের সঙ্গে, ভাবের সঙ্গে কথা মিলিয়ে। তাঁর অনুবাদ করা গানই বিদেশীদের আকৃষ্ট করে সবচেয়ে বেশি। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এসিয়-ভাষাবিভাগের অধ্যাপক এডোয়াড ডিমক বাণীর অনুবাদ করা গান শুনে উচ্ছ্বসিত হয়ে একটা অভিনন্দনপত্র পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠিটি পড়লে বোঝা যায় বাণীর কাজের গুরুত্ব কতখানি। তিনি জানিয়েছেন, সমস্ত পৃথিবীর মানুষই এতে উপকৃত হবেন কারণ রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান সম্বন্ধে এঁদের কোন স্পষ্ট ধারণা গড়ে উঠতে পারেনি। একটু বড় হয়ে গেলেও ডিমকের পত্রাংশ অনুসরণ করা যাক :
This is just a note to express appreciation for the work you are doing in translating Rabindranaths song into English. In the first place, anything at all that is done to make the work of that genius more knowu to the nonBengali-speaking people of the world is that much to the good. Your work, however, goes one step farther. The world seems to have some idea, however, vague, of Rabindranaths greatness as a poet, and perhaps somewhat less, of his greatness as a novelist. But as far as I know, there is very little idea of how very many facets his creative had. He seems to be very little known outside Bengal, for example, as a lyricist and musician, even though he towers, as high in these fields as in the others.
This gap you will be helping to fill by giving the English-speaking world the opportunity to hear Rabindranaths words in translation, sung to his original music. It seems to me a unique and wonderful thing. I am looking forward very much to the publication of your book, but even more to the first performance of the music. For, as you have showu, songs are ineant to be sung and heard and not read. I am grateful to you for your work, and when your work becomes known, I will not be alone.
প্রতিমার নৃত্যশিক্ষার স্কুলের সবচেয়ে উজ্জ্বল রত্ন বোধহয় নন্দিতা। রবীন্দ্রনাথের একমাত্র দৌহিত্রী, মীরার মেয়ে বুড়ি বা নন্দিতা। যদিও দৌহিত্রীদের সবাইকে ঠিক ঠাকুরবাড়ির মেয়ে বলা যায় না তবে নন্দিতার কথা স্বতন্ত্র। তিনি শান্তিনিকেতনের উৎসবের সঙ্গে প্রথম থেকেই জড়িয়ে আছেন। নৃত্য নিয়ে কবির নবনিরীক্ষায় তিনি প্রথম থেকেই যোগ দিয়েছিলেন সানন্দে। ১৯৩৬ সালে চিত্রাঙ্গদার তোড়জোড় শেষ হলে নন্দিতা মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন সুরূপা চিত্রাঙ্গদার ভূমিকায়। অবশ্য নাচের পরিকল্পনা চলছিল বর্ষামঙ্গল, ঋতুরঙ্গের সময় থেকেই। শান্তিদেব ঘোষের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী ১৯৩৬ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে চিত্রাঙ্গদা অভিনীত হয়েছিল চল্লিশবার। প্রথমবার কলকাতা থেকে পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন শহরে নাচের দল নিয়ে গিয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। তিনি সব সময়ে মঞ্চে স্বয়ং উপস্থিত থাকতেন। ফলে নৃত্যানুষ্ঠানকে কেউ অবজ্ঞা করতে পারত না। পাটনা, দিল্লী, এলাহাবাদ, লাহোর, মীরাট, লক্ষে—সর্বত্র চিত্রাঙ্গদা দারুণভাবে সফল হল। দলের সকলের অভিনয়ই সুন্দর। নন্দিতা সব সময়ই সাজতেন সুরূপা। তবে অন্যান্য ভূমিকাগুলিও তাঁরা সকলেই জানতেন। একদিন দেখা গেল যমুনাদেবীর জর। সর্বনাশ! কুরূপ কে সাজবেন, একা নন্দিতাই দুজনের কাজ চালিয়ে দিলেন অবলীলায়! এর উল্টোটাও মাঝে মাঝে ঘটত।
চিত্রাঙ্গদার সঙ্গে আরো কটি নৃত্যনাট্য তৈরি করা হল—চণ্ডালিকা, শ্যামা ও তাসের দেশ। প্রতিটিতেই নন্দিতার প্রধান ভূমিকা, অনবদ্য অভিনয়। তার অপূর্ব দেহমুদ্রা ও ভাবব্যঞ্জনায় প্রতিটি চরিত্রই যেন জীবন্ত হয়ে উঠত। আরো কয়েকজনের নামও করা যায়। মটীর পূজায় শ্ৰীমতীর ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেন গৌরী বস্তু। একক নৃত্যাভিনয়ে খ্যাতি অর্জন করেন শ্রীমতী হাতিসিৎ। রবীন্দ্রনাথ চণ্ডালিকার রূপ দেবার সময় শ্ৰীমতী ও নন্দিতার কথাই ভেবেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত শ্ৰীমতী চণ্ডালিকায় অভিনয় করেননি। নন্দিতা অবশ্য চণ্ডালিকা ও তাসের দেশ দুটিতেই অভিনয় করেন। তাদের দেশে তার ভূমিকা ছিল হরতনীর, শুধু প্রথম অভিনয়ে তিনি দিয়েছিলেন চিড়েতনীর রূপ। নাতনী মঞ্চে নামলে কধিও স্বস্তি পেতেন। তাই সময়-অসময়ে ডাক পড়ত তার। কবি লিখতেন মীরাকে :
…বিপদে পড়েছি। হঠাৎ সংবাদ পেয়েছি, এক ঝাক জাপানী আসবেআমাদের নাচের পরীক্ষার জন্য।…বুড়িকে না পেলে এমন একটা লোক-হাসানো ব্যাপার হবে যা সমুদ্র পার হয়ে যাবে।
নন্দিতাও এসেছেন। যখনই ডাক পড়েছে সাড়া দিয়েছেন। অপরিসীম প্রাণপ্রাচুর্যে পরিপূর্ণ ছিলেন তিনি। শান্তিনিকেতনে থাকলে সব রকম অনুষ্ঠানেই যোগ দিতে ভালবাসতেন। আরেকবার ঠিক হল অরূপরতন অভিনীত হবে। সুরঙ্গমা কে সাজবে? কবির ইচ্ছে ছিল তিনি নিজেই নেবেন সুরঙ্গমার পার্ট কিন্তু অন্যেরা তাতে রাজী না হওয়ায় বাধ্য হয়েই পাটটা দিলেন নাতনীকে। আর সুদর্শনা সাজলেন অমিতা।