অভিমন্যু সম্ভব কাব্য। শ্রীপ্রসাদ দাস গোস্বামী কর্তৃক প্রণীত ও প্রকাশিত। ইডেন্ প্রেস, মূল্য ছয় আনা মাত্র।
এই অমিত্রাক্ষর ছন্দের কাব্যখানি সুন্দর ও প্রাঞ্জল হইয়াছে। কিন্তু গ্রন্থকারের কল্পনা সুকুমার কিশোর কল্পনা। স্থলে স্থলে তাহার পদস্খলন হয়। সর্বত্রই সমভাবে তাঁহার বলিষ্ঠ স্ফূর্তি দেখা যায় না। ভাষাও সকল স্থানে সহজ স্রোতোবাহী হয় নাই। তথাপি আমরা কাব্যখানি পাঠ করিয়া প্রীত হইয়াছি।
The Indian Homoeopathic Review. Edited by B. L. Bhaduri.
এখানি আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মাসিক পত্র। কবিরাজী বা হাকিমী, অ্যালোপ্যাথি বা হোমিওপ্যাথি, কোন্্ প্রথাটা যে আমাদের উপকারী– সে বিষয় লইয়া তর্ক করিতে আমরা এখন চাহি না– চাহিলেও সিদ্ধান্তে আসিতে আমরা পারগ কি না, তাহাও বলিতে পারি না। তবে এই মাত্র বলিতে পারি, যে এরূপ সাময়িক পত্রে আমাদের উপকার ব্যতীত অপকারের সম্ভাবনা নাই । কিন্তু জিজ্ঞাস্য এই– এই পত্র আংশিক ভাবে বাংলা ভাষায় না হইয়া সমস্তটাই বাংলা ভাষায় প্রচারিত হইল না কেন?– কাহাদের জন্য এ পত্র প্রকাশিত হইতেছে ?– যদি বাঙালিদের জন্য হয় তবে তাহা বাংলা ভাষাতেই প্রচারিত হওয়া উচিত। আর যদি ইংরাজদের জন্য হয়, তবে ইহা প্রকাশ করিবার আবশ্যক নাই। তবে এই আধা-ইংরাজী আধা-বাঙালি পত্র– এই “ইঙ্গ-বঙ্গ” মাসিক পত্রের উদ্দেশ্য কী?
এই-সকল কথা মহোদয় সম্পাদকের ভাবা উচিত ছিল। আমরা স্বীকার করি যে সম্পাদকীয় কার্য সুন্দররূপে সম্পাদিত হইয়াছে । শ্রীযুক্ত প্রতাপচন্দ্রের সরল ও সহজ বাংলাতে যে প্রবন্ধগুলি লিখিত হইয়াছে তাহার আমরা সুখ্যাতি করি, কিন্তু এই পত্রিকাতে আরও বিস্তর লোকের লেখা আছে। M.M. Bose. M.D.L.R.C.P. একজন উক্ত পত্রিকার লেখক। তিনি ইংলণ্ড ও আমেরিকায় শিক্ষা লাভ করিয়াও লিখিতেছেন যে “May we hope that our educated countrymen of the locality will come forward to help the commission with informations as respects to drinking water &c। ” তিনি আরও লিখিতেছেন “We would like to call the attention of manager &c to the teaching of elimentary knowledge of Animal Physiology &c।” যদিও আমরা স্বীকার করি, বাঙালির ইংরাজীতে ভুল থাকাই সম্ভব, তথাপি যেমন করিয়া হউক ইংরাজি যে লিখিতেই হইবে তাহার আমরা কোনো আবশ্যক দেখি না। তবুও যাহা হউক লেখকের উন্নত উদ্দেশ্য দেখিয়া তাঁহার ইংরাজি লেখা মার্জনা করা যায়। আমরা এই অত্যাবশ্যক পত্রটির উন্নতি কামনা করি।
ভারতী, মাঘ, ১২৮৮
গ্রন্থসমালোচনা – ০২
আনন্দ রহো। ঐতিহাসিক নাটক। শ্রীগিরিশচন্দ্র ঘোষ দ্বারা প্রণীত ও প্রকাশিত। মূল্য ১ টাকা।
এমনতর মাথা-মুণ্ড-বিরহিত নাটক আমরা কখনো দেখি নাই। ইহার না আছে শৃঙ্খলা, না আছে অর্থ, না আছে ভাব, না আছে একটা পরিষ্কার উপন্যাস। লেখকের কল্পনা,লাগাম খুলিয়া লইয়া, এই ৭৭ পৃষ্ঠার মধ্যে ঊনপঞ্চাশ বায়ুর ঘোড়দৌড় করাইয়াছেন। গিরিশবাবুর লেখায় আমরা এরূপ কল্পনার অরাজকতা আশা করি নাই।
সীতার বনবাস। দৃশ্যকাব্য। শ্রীগিরিশচন্দ্র ঘোষ প্রণীত। মূল্য ১ টাকা।
লক্ষ্মণ-বর্জন। দৃশ্যকাব্য। শ্রীগিরিশচন্দ্র ঘোষ প্রণীত। মূল্য চারি আনা।
গিরিশবাবুর রচিত পৌরাণিক দৃশ্য কাব্যগুলিতে তাঁহার কবিত্বশক্তির যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া গিয়াছে। তিনি তাঁহার বিষয়গুলির সৌন্দর্য ও মহত্ত্ব কবির ন্যায় বুঝিয়াছেন ও তাহা অনেক স্থলে কবির ন্যায় প্রকাশ করিয়াছেন। সীতার বনবাসে লক্ষ্মণের বীরত্বই যথার্থ বীরত্ব । রাম যে কর্তব্যজ্ঞানের গুরুভারে অভিভূত হইয়া সীতাকে বনবাসে দিতে পারিয়াছেন, লক্ষণের নিকট সে কর্তব্যজ্ঞান নিতান্ত লঘু। প্রজারঞ্জনের অনুরোধে যে, নির্দোষী সীতাকেও বনবাস দিতে হইবে, ইহার কর্তব্যতা লক্ষ্মণ বুঝিতে পারেন নাই, কিন্তু তবুও সেই সীতাকে বনবাসে দিতে তিনি বাধ্য হইয়াছিলেন। রাম তো আজ্ঞামাত্র দিয়া গৃহের মধ্যে লুক্কায়িত হইলেন, কিন্তু লক্ষ্মণ স্বহস্তে সেই সীতাকে বিসর্জন দিয়া আসিয়াছিলেন। সীতার বনবাসে রামকে নায়ক না করিয়া লক্ষ্মণকে নায়ক করিলে একটি অতি মহান চিত্র অঙ্কিত করা যায়। দুর্ভাগ্যক্রমে সীতার বিসর্জন আমাদের সমালোচ্য দৃশ্যকাব্যের এক অংশ মাত্র, উহাই সমস্ত নহে; সুতরাং সীতা বর্জনের মধ্যে যতটা কবিত্ব আছে, তাহা ইহাতে স্ফূর্তি পায় নাই। সীতা বর্জন ব্যাপারে রামের বাহ্য ঘটনার সহিত হৃদয়ের দ্বন্দ্ব, কর্তব্যজ্ঞানের সহিত অনুরাগের সংগ্রাম; লক্ষ্মণের কর্তব্যের সহিত কর্তব্যজ্ঞানের অনৈক্য ,করুণার সহিত নিষ্ঠুরতার অনিচ্ছা সহবাস; সীতার জীবনের সহিত মরণের তর্কবিতর্ক, অর্থাৎ মরণের প্রতি অনুরাগের ও জীবনের প্রতি কর্তব্যজ্ঞানের সম্বন্ধ, এই যে-সকল দ্বন্দ্ব-প্রতিদ্বন্দ্ব ও কতর্ব্যের সহিত হৃদয়ের সংগ্রাম আছে, তাহা এই দৃশ্যকাব্যে পরিস্ফুট হয় নাই। যতগুm ঘটনা লইয়া এই কাব্যখানি রচিত হইয়াছে তাহা একটি ক্ষুদ্রায়তন দৃশ্যকাব্যের মধ্যে পরিস্ফুটভাবে বর্ণিত হইতে পারে না। ইহাতে সমস্তটার একটি ছায়া মাত্র পড়িয়াছে। কিন্তু ইহাতে কবিতার অভাব নাই। সীতা-বর্জনের ভার লক্ষ্মণের প্রতি অর্পিত হইলে লক্ষ্মণ রামকে যাহা কহিয়াছিলেন, তাহা অতি সুন্দর। যদিও বনবাসের পর সীতার বিলাপ সংক্ষেপ ও মর্মভেদী হয় নাই, দীর্ঘ ও অগভীর হইয়াছে, তথাপি সীতার শেষ প্রার্থনাটি অতি মনোহর হইয়াছে। যখন পৃথিবীতে জীবনের কোনো বন্ধন নাই, অথচ জীবন রক্ষা কর্তব্য, তখন দেবতার কাছে এই প্রার্থনা করা, সন্তান বাৎসল্য ভিক্ষা করা,