পোয়া বারো-মুচিরাম জেলা লুঠিতে লাগিল। প্রথম লোকের কাছে চাহিয়া চিন্তিয়া দুই চারি আনা লইত। তার পর দাঁও শিথিল। ফেলু সেখের ধানগুলি জমীদার জোর করিয়া কাটিয়া লইতে উদ্যত, সাহেব দয়া করিয়া পুলিশকে হুকুম দিলেন, ফেলুর সম্পত্তি রক্ষা করিবে। সাহেব হুকুম দিলেন, কিন্তু পুলিশের নামে পরওয়ানাখানি লেখা আর হয় না। পরওয়ানা লেখা মুচিরামের হাত। পরওয়ানা যাইতে যাইতে ধান থাকে না; ফেলু মুচিরামকে এক টাকা, দুই টাকা, তিন টাকা, ক্রমে পাঁচ টাকা স্বীকার করিল-তৎক্ষণাৎ পরওয়ানা বাহির হইল। তখন মাজিষ্ট্রেটেরা স্বহস্তে জোবানবন্দী লইতেন না-এক কোণে বসিয়া এক একজন মুহুরি ফিস্ফিস্ করিয়া জিজ্ঞাসা করিত, আর যাহা ইচ্ছা তাহা লিখিত। সাক্ষীরা এক রকম বলিত, মুচিরাম আর এক রকম জোবানবন্দী লিখিতেন, মোকদ্দমা বুঝিয়া ফি সাক্ষ্য-প্রতি চারি আনা, আট আনা, এক টাকা পাইতেন। মোকদ্দমা বুঝিয়া মুচি দাঁও মারিতেন; অধিক টাকা পাইলে সব উল্টা লিখিতেন। এইরূপে নানাপ্রকার ফিকির ফন্দীতে মুচিরাম অনেক টাকা উপার্জ্জন করিতে লাগিলেন-তিনি একা নহেন, সকলেই করিত-তবে মুচি কিছু অধিক নির্লজ্জ-কখন কখন লোকের টেঁক হইতে টাকা কাড়িয়া লইত।
যাই হৌক, মুচি শীঘ্রই বড়মানুষ হইয়া উঠিল-কোন্ মুচি না হয়?-অচিরাৎ সেই অকৃতনাম্নী প্রতিবাসিনী স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিতা হইল। মদ, গাঁজা, গুলি, চরস, আফিঙ্গ-যাহার নাম করতে আছে এবং যাহার নাম করিতে নাই-সকলই মুচিবাবুর গৃহকে অহর্নিশি আলোক ও ধূমময় করিতে লাগিল। মুচিরামেরও চেহারা ফিরিতে লাগিল-গালে মাস লাগিল-হাড় ঢাকিয়া আসিল-বর্ণ জাপান লেদার ছাড়িয়া দিল্লীর নাগরায় পৌঁছিল। পরিচ্ছদের বৈচিত্র্য জন্মিতে লাগিল-শাদা, কালো, নীল, জরদা, রাঙ্গা, গোলাপী প্রভৃতি নানা বর্ণের বস্ত্রে মুচিরাম সর্ব্বদা রঞ্জিত। রাত্রি দিন মাথায় তেড়ি কাটা, অধরে তাম্বূলের রাগ এবং কণ্ঠে নিধুর টপ্পা। সুতরাং মুচিরামের পোয়া বারো।
দোষের মধ্যে সাহেব বড় খিট্খিট্ করে। মুচিরাম একে ঘোরতর বোকা, কোন কর্ম্মই ভাল করিয়া করিতে পারিত না, তাহাতে আবার দুর্জ্জয় লোভ,-সকল-তাতে মুচিরাম গালি খাইত। সাহেবটাও বড় বদরাগী-অনেক সময়ে মুচিরামকে কাগজপত্র ছুঁড়িয়া মারিত। সাহেবের ভিতরে ভিতরে হৃদয়ে দয়া ছিল-নচেৎ মুচিরামের চাকরী অধিক কাল টিকিত না।
সৌভাগ্যক্রমে সে সাহেব বদলি হইয়া গেল-আর একজন আসিল।
এই নূতন সাহেবটির নাম (Grongerham) লিখিবার সময়ে লোকে লিখিত গ্রঙ্গারহ্যাম-বলিবার সময়ে বলিত গঙ্গারাম সাহেব। গঙ্গরাম সাহেব অতি ভদ্রলোক, দয়ার সাগর, কাহারও কোন অনিষ্ট করিতেন না, মোকদ্দমা করিতে গিয়া, কেবল ডিষমিস করিতেন। তবে সাহেব কিছু অলস, কাজ কর্ম্মে বড় মন দিতেন না, এবং নিজে সরল বলিয়া তাঁবেদারদিগের উপর বড় বিশ্বাস ছিল। সকল কর্ম্মের ভার সেরেস্তাদার এবং হেড কেরাণীর উপর ছিল। যত দিন সাহেব ঐ জেলায় ছিলেন, একদিনের জন্য একখানি চিঠি স্বহস্তে মুশাবিদা করেন নাই-হেড কেরাণী সব করিত।
সাহেব প্রথম আসিয়া, মুচিরামের কালোকালো নধর সুচিক্কণ শরীরটি দেখিয়া, এবং তাহার আভূমিপ্রণত ডবল সেলাম দেখিয়া নিজের সরলচিত্তে একেবারে সিদ্ধান্ত করিলেন যে, আপিসের মধ্যে এই সর্ব্বাপেক্ষা উপযুক্ত লোক। সে বিশ্বাস তাঁহার কিছুতেই গেল না। যাইবারও কোন কারণ ছিল না–কেন না, কাজকর্ম্মের তিনি খবর রাখিতেন না। একদিন আপিসের মীর মুন্সী মিরজা গোলাম সর্ফদর খাঁ সাহেব, দুনিয়াদারি নামাফিক মনে করিয়া ফৌত করিলেন। সাহেব পরদিনেই মুচিরামকে ডাকিয়া তৎপদে অভিষিক্ত করিলেন। মীর মুন্সীর বেতন কুড়ি টাকা-কিন্তু বেতনে কি করে? পদটি রুধিরে পরিপ্লুত। অজরামরবৎপ্রাজ্ঞ মুচিরাম শর্ম্মা রুধিরসঞ্চয় করিতে লাগিলেন।
দোষ কি? অজরামরবৎপ্রাজ্ঞ বিদ্যামর্থঞ্চ চিন্তয়েৎ। দুইটা একজনে পারে না-মুচিরাম বিদ্যাচিন্তা করিতে সক্ষম নহেন; কোষ্ঠীতে তাহা লেখে নাই-অতএব
বিষ্ণুশর্ম্মার উপদেশানুসারে মৃত্যুভয় রহিত হইয়া তিনি অর্থচিন্তায় প্রবৃত্ত। যদি সেই “হিতোপদেশ”গুলি অধীত হইবার যোগ্য হয়-যদি সে গ্রন্থ এই ঊনবিংশ শতাব্দীতেও পূজার যোগ্য হয়-তবে মুচিরামও প্রাজ্ঞ-আর এ দেশের সকল মুচিই প্রাজ্ঞ।
বিষ্ণুশর্ম্মা ভারতবর্ষের মাকিয়াবেল্লি-চাণক্য ভারতের রোশফুকল। যাহার এইরূপ গ্রন্থ বিদ্যালয়ের বালকদিগকে পড়াইবার নিয়ম করিয়াছে, তাহাদিগের উচিত, আবার বিদ্যালয়ের প্রবেশ করা। তাহাদের শিক্ষা হয় নাই।
মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত – ০৭
সপ্তম পরিচ্ছেদ
মুচিরাম দুই তিন বৎসর মীর মুন্সীগিরি করিল-তার পর কালেক্টরীর পেস্কারি খালি হইল। পেস্কারিতে বেতন পঞ্চাশ টাকা-আর উপার্জ্জনের ত কথাই নাই। মুচিরাম ভাবিল, কপাল ঠুকিয়া একখানা দরখাস্ত করিব।
তখন কালেক্টর ও ম্যাজিষ্ট্রেট পৃথক্ পৃথক্ ব্যক্তি হইত। সেখানে সে সময়ে হোম নামা এক সাহেব কালেক্টর ছিলেন। তিনি অতিশয় বুদ্ধিমান্ ও কর্ম্মঠ লোক ছিলেন, কিন্তু একটা দোষ ছিল-কিছু মিষ্ট কথার বশ।
মুচিরাম একখানি ইংরেজি দরখাস্ত লিখাইয়া লইল-মুচিরামের নিজবিদ্যা দরখাস্ত পর্য্যন্ত কুলায় না। যে দরখাস্ত লিখিল, মুচিরাম তাহাকে বলিয়া দিলেন, “দেখিও যেন ভাল ইংরেজি না হয়। আর যা হৌক না হৌক, দরখাস্তের ভিতর যেন গোটা কুড়ি ‘মাই লার্ড’ আর ‘ইওর লার্ডশিপ’ থাকে |” লিপিকার সেই রকম দরখাস্ত লিখিয়া দিল। তখন শ্রীমুচিরাম বেশভূষায় প্রবৃত্ত হইলেন। আপনার চারখানির ঢিলা পায়জামা পরিত্যাগ করিয়া, থানের ধুতি শ্রীঅঙ্গে পরিধান করিলেন; চুড়িদার আস্তীন আল্পাকার চাপকান পরিত্যাগ করিয়া, পূর্ব্বক, বুকফাঁক বন্ধকওয়ালা ঢিলা আস্তীন লাংক্লথের চাপকান গ্রহণ করিলেন। লাটুদার পাগড়ি ফেলিয়া দিয়া, স্বহস্তে মাথায় বিড়া জড়াইলেন; এবং চাঁদনির আম্দানি নূতন চক্চকে জুতা ত্যাগ করিয়া চটিতে চারুচরণদ্বয় মণ্ডন করিলেন। ইতিপূর্ব্বে গঙ্গারাম সাহেবকে হরিয়েক রকম সেলাম করিয়া, কাঁদো কাঁদো মুখ করিয়া, একখানা সুপারিস চিঠি বাহির করিয়া লইয়াছিলেন। এইরূপ চিঠি, দরখাস্ত ও বিহিত সজ্জাসহিত সেই শ্রীমুচিরামচন্দ্র, যথায় হোম সাহেব এজলাসে বসিয়া দুনিয়া জলুস করিতেছিলেন, তথায় গিয়া দর্শন দিলেন।
রেল দেওয়া কাটরার ভিতর, উঁচুতে হোম সাহেব এজলাস করিতেছেন। চারি দিকে অনেক মাথায় পাগড়ি ঙ বসিয়াছে-লোকে কথা কহিলেই চাপরাশী বাবাজিউরা দাড়ি ঘুরাইয়া গালি দিতেছেন-একটা স্পানিয়েল টেবিলের নীচে শুইয়া, অর্থিগণের নয়নপথে লাঙ্গুল-শোভা বিকাশ করিতেছে-এক ফোঁটা গুড় পড়িলে যেমন সহস্র সহস্র পিপীলিকা তাহা বেষ্টন করে, খালি চাকরীটির মালিক হোম সাহেবকে তেমনি উমেদওয়ার ঘেরিয়া দাঁড়াইয়াছে। সাহেব উমেদওয়ারদিগের দরখাস্ত শুনিতেছেন। অনেক বড় বড় ইংরেজিনবীশ আসিয়াছেন-সেকেলে কেঁদো কেঁদো স্কলার্শিপ হোল্ডার। সাহেব তাঁহাদিগকে এক এক কথায় বিদায় করিলেন। “I dare say you are well up in Shakespeare and Milton and Bacon and so forth. Unfortunately we don’t want quotations from Shakespeare and Milton and Bacon in the office. It is not the most learned man who is best fitted for this kind of work. So you can go, Baboo.” অনেক শামলা মাথায় দিয়া, চেন ঝুলাইয়া, পরিপাটী বেশ করিয়া আসিয়াছিলেন, সাহেব দৃষ্টিমাত্র তাঁহাদিগকে বিদায় দিলেন। “You are very rich I see; I want a poor man who will work for his bread. You will throw up your place on the slightest quarrel. You can go.” শামলা চেনের দল, অভিমন্যুসম্মুখে কুরুসৈন্যের ন্যায় বিমুখ হইতে লাগিল। বাকি রহিল মুচিরাম, এবং তাহার সমকক্ষজনকয়-বানর। সাহেব মুচিরামের দরখাস্ত পড়িলেন-হাসিয়া বলিলেন, “Why do you call me, my Lord? I am not a Lord.”
মুচিরাম যোড়হাতে হিন্দীতে বলিল, “বান্দা কো মালুম থা কি হুজুর লার্ড- ঘরানা |”
এখন হোম সাহেবের সঙ্গে একটা লার্ড হোমের দূরসম্বন্ধ ছিল। সেই জন্য তাঁহার মনে বংশমর্য্যাদা সর্ব্বদা জাগরূক ছিল; মুচিরামের উত্তর শুনিয়া আবার হাসিয়া বলিলেন, “হো সকতা; লার্ড ঘরানা হো সকতা; লার্ড ঘরানা হোনে সে হি লার্ড হোতা নেহি |”
সকলেই বুঝিল যে, মুচিরাম কার্য্য সিদ্ধ করিয়াছে। মুচিরাম যোড়হাতে প্রত্যুত্তর করিল, “বান্দা লোক কে ওয়াস্তে হুজুর লার্ড হেঁয় |”
সাহেব মুচিরামকে আর দুই চারিটি কথা জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া তাহাকে পেস্কারিতে বহাল করিলেন।
Struggle for existence? Survival of the Fittest! মুচির দলই এ পৃথিবীতে চিরজয়ী।
হোম সাহবের কিছু মাত্র দোষ নাই। দেশী, বিদেশী, সকল মনুষ্যই এইরূপ। সকলেই মিষ্ট কথার বশ। অবোধ বাঙ্গালীরা আজকাল মিষ্ট কথা ভুলিতেছে। হোম সাহেব একজন অতিশয় সুদক্ষ, সুবিজ্ঞ লোক। মূর্খ মুচিরামও তাঁহাকে ভুলাইতে পারিল-কেবল মিষ্ট কথার বলে।
মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত – ০৮
অষ্টম পরিচ্ছেদ
মুচিরামবাবু-এখন তিনি একটা ভারি রকম বাবু, এখন তাঁহাকে শুধু মুচিরাম বলা যাইতে পারে না-মুচিরামবাবু পেস্কারি পাইয়া বড় ফাঁফরে পড়িলেন। বিদ্যাবুদ্ধিতে পেস্কারি পর্য্যন্ত কুলায় না-কাজ চলে কি প্রকারে? “ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়”-মুচিরামবাবুর বোঝা বাহিত হইল। ভজগোবিন্দ চক্রবর্ত্তী নামে একজন তাইদনবীশ সেই কালেক্টরী আপিসে থাকে। ভজগোবিন্দ বার বৎসর তাইদনবীশ আছে। সে বুদ্ধিমান্, কর্ম্্ঠ, কালেক্টরীর সকল কর্ম্ম কাজ বার বৎসর ধরিয়া শিখিয়াছে। কিন্তু মুরুব্বি নাই-ভাগ্য নাই-এ পর্য্যন্ত কিছু হয় নাই। তাহার বাসাখরচ চলে না। মুচিরাম তাহাকে অবলম্বন করিলেন। আপনার বাসায় লইয়া গিয়া রাখিলেন। ভজগোবিন্দ মুচিরামের বাসায় থাকে, খায় পরে, গৃহকর্ম্মের সহায়তা করে, রাত্রিকালে বাবুর ঘরে বাহিরে মোসাহেবী করে, এবং আপিসের সমস্ত কাজ কর্ম্ম করিয়া দেয়। মুচিরাম তাহাকে টাকাটা সিকেটা দেওয়াইয়া দেন। ভজগোবিন্দের সাহায্যে মুচিরামের কর্ম্ম কাজ রেলগাড়ির মত গড় গড় করিয়া চলিল। হোম সাহেব অনেক প্রশংসা করিতেন। বিশেষ মুচিরাম বিশুদ্ধ প্রণালীতে সেলাম করিত, এবং “মাই লর্ড” এবং “ইওর আনর” কিছুতেই ছাড়িত না।
মুচিরামবাবুর উপার্জ্জনের আর সীমা রহিল না। হাতে অনেক টাকা জমিয়া গেল। ভজগোবিন্দ বলিল, “টাকা ফেলিয়া রাখিবার প্রয়োজন নাই-তালুক মুলুক করুন |” মুচিরাম সম্মত হইলেন, কিন্তু যে যে জেলায় কর্ম্ম করে, সে জেলায় বিষয় খরিদ করা নিষেধ। ভজগোবিন্দ বলিল যে, বেনামীতে কিনুন। কাহার বেনামীতে? ভজগোবিন্দের ইচ্ছা, ভজগোবিন্দের নামেই বিষয় খরিদ হয়, কিন্তু সাহস করিয়া বলিতে পারিল না। এ দিকে মুচিরাম কাহারও বাসায় গল্প শুনিয়া আসিলেন যে, স্ত্রীর অপেক্ষা আত্মীয় কেহ নাই। কথাটায় তাঁহার সম্পূর্ণ বিশ্বাস হইল কি না জানি না-কিন্তু মনে মনে ভাবিলেন যে, স্ত্রীর নামে বিষয় করাই বেনামীর শ্রেষ্ঠ। এই এখনকার দেবত্র। আগে লোকে বিষয় করিত ঠাকুরের নামে-এখন বিষয় করিতে হয় ঠাকুরুণের নামে। উভয় স্থলেই বিষয়কর্ত্তা “সেবাইত” মাত্র-পরম-ভক্ত-পাদপদ্মে বিক্রীত। এইরূপ রাধাকান্ত জিউর স্থানে রাধামণি, শ্যামসুন্দরের স্থানে শ্যামসুন্দরী দেবী মালিক হওয়া ভাল হইয়াছে, কি মন্দ হইয়াছে, জানি না-তবে একটা কথা বুঝা যায়। বিষয় হস্তান্তরের কিছু সুবিধা হইয়াছে। দধি ভোজনের পক্ষে নেপোর খুব সুযোগ হইয়াছে।
স্ত্রীর বেনামীতে বিষয় করা শ্রেয়ঃ, ইহা মুচিরাম বুঝিলেন, কিন্তু এই সঙ্কল্পে একটা সামান্য রকম বিঘ্ন উপস্থিত হইল-মুচিরামের স্ত্রী নাই। এ পর্য্যন্ত তাঁহার বিবাহ করা হয় নাই-অনুকল্পের অভাব ছিল না। কিন্তু এ স্থলে অনুকল্প চলিবে কি না, তদ্বিষয়ে পেস্কার মহাশয় কিছু সন্দিহান হইলেন। ভজগোবিন্দের সঙ্গে কিছু বিচার হইল–কিন্তু ভজগোবিন্দ একপ্রকার বুঝাইয়া দিল যে এ স্থলে অনুকল্প চলিবে না। অতএব মুচিরাম দারগ্রহণে কৃতসঙ্কল্প হইলেন। কোন্ কুল পবিত্র করিবেন, তাহার অন্বেষণ করিতেছিলেন, এমন সময় ভজগোবিন্দ জানাইল যে, তাহার একটি অবিবাহিতা ভগিনী আছে-ভজগোবিন্দের পিতৃকূল উজ্জ্বল করায় ক্ষতি নাই। অতএব মুচিরাম একদিন সন্ধ্যার পর শুভ লগ্নে মাথার টোপর দিয়া, হাতে সুতা বাঁধিয়া, এবং পট্টবস্ত্র পরিধান করিয়া ভদ্রকালী নাম্নী ভজগোবিন্দের সহোদরাকে সৌভাগ্যশালিনী করিলেন। তাহার পর হইতে ভদ্রকালীর নামে অনেক জমিদারী পত্তনি ছলে, বলে, কলে, কৌশলে খরিদ হইতে লাগিল। ভদ্রকালী হঠাৎ জেলার মধ্যে একজন প্রধানা ভূম্যধিকারিণী হইয়া দাঁড়াইলেন।
মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত – ০৯
নবম পরিচ্ছেদ