“ইন্দ্রস্য নু বীর্য্যাণি প্র বোচং যানি চকার প্রথমানি বজ্রী।
অহন্নহিমন্বপস্ততর্দ্দ প্র বক্ষণা অভিনৎ পর্ব্বতানাং ||
অহন্নহিং পর্ব্বতে শিশ্রিয়াণাং ত্বষ্টাস্মৈ বজ্রং স্বর্য্যং ততক্ষ।
বাশ্রা ইব ধনবঃ স্যন্দমানা অংজঃ সমুদ্রবজগ্মুরাপঃ ||
বৃষায়মনোহবৃণীত সোমং ত্রিকদ্রুকেষ্বপিবৎ সুতস্য।
আ সায়কং মঘবাদত্ত বজ্রমহন্নেনং প্রথমজামহীনাং ||
যদিন্দ্রাহন্ প্রথমজামহীনামাণ্মায়িনামমিনাঃ প্রোত মায়াঃ।
আৎ সূর্য্যং জনয়ন্ দ্যামুষাসং তাদিত্না শত্রুং ন কিলাবিবিৎসে ||
অহন্ বৃত্রং বৃত্রতরং ব্যংসমিন্দ্রো বজ্রেণ মহতা বধেন।
স্কন্ধাংসীব কুলিশেনাবিবৃক্ণাহিঃ শয়ত উপপৃক্ পৃথিব্যাঃ ||
অযোদ্ধেব দুর্মদ আ হি জুহ্বে মহাবীরং তুবিবাধামৃজীষম্।
নাতারীদস্য সমৃতিং বধানাং সংরুজানাঃ পিপিষ ইন্দ্রশত্রুঃ ||
অপাদহস্তো অপৃতন্যদিন্দ্রমাস্য বজ্রমধি সানৌ জঘান।
বৃষ্ণো বধ্রিঃ প্রতিমানং বভৃষন্ পুরুত্রা বৃত্রো অশয়ৎ ব্যস্তঃ ||
নদং ন ভিন্নমমুয়া শয়ানং মনো রুহাণা অতিযন্ত্যাপঃ।
যাশ্চিৎ বৃত্রো মহিনা পর্য্যতিষ্ঠৎ তাসামহিঃ পৎসুতঃশীর্বভুব ||
নীচাবয়া অভবৎ বৃত্রপুত্রেন্দ্রা অস্যা অব বধর্জভার।
উত্তরা সূরধরঃ পুত্র আসীৎ দানুঃশয়ে সহবৎসা ন ধেনুঃ ||
অতিষ্ঠন্তীনামনিবেশনানাং কাষ্ঠানাং মধ্যে নিহিতং শরীরং।
বৃত্রস্য নিণ্যং বিচরন্ত্যাপো দীর্ঘং তম আশয়দিন্দ্রশত্রুঃ ||
দাসপত্নীরহিগোপা অতিষ্ঠন্নিরুদ্ধা আপঃ পণিনেব গাবঃ।
অপাং বিলমপিহিতং যদাসীৎ বৃত্রং জঘন্বাঁ অপ তদ্ববার ||
অশ্ব্যো বারো অভবস্তদিন্দ্র সৃকে যত্ত্বা প্রত্যহন্দেব একঃ।
অজয়ো গা অজয়ঃ শূর সোমমবাসৃজঃ সর্ত্তবে সপ্ত সিন্ধুন্ ||
নাস্মৈ বিদ্যুন্ন তন্যুতুঃ সিষেধ ন যাং মিহমকিরৎব্রাদুনিং চ।
ইন্দ্রশ্চ যৎযুযুধাতে অহিশ্চোতাপরীভ্যো মঘবা বিজিগ্যে ||
অহের্ষাতারং কমপশ্য ইন্দ্র হৃদি যত্তে জঘ্নুষো ভীরগচ্ছৎ।
নব চ যন্নবতিং চ স্রবন্তীঃ শ্যোনো ভীতো অতরো রজাংসি ||
ইন্দ্রো যাতোহবসিতস্য রাজা শমস্য চ শৃঙ্গিনো বজ্রবাহুঃ।
সেদু রাজা ক্ষয়তি চর্ষণীনামরান্ন নেমিঃ পরি তা বভূত ||”
অনুবাদ
১। “বজ্রধর ইন্দ্রদেব প্রথমে যে সমস্ত পরাক্রমসূচক কার্য্য করিয়াছিলেন তাহা আমি বর্ণনা করিতেছি। তিনি অহিনামে অভিহিত বৃত্রাসুরকে বিনাশ করিয়াছিলেন। জলসমূহ ভূমিতে পতিত করিয়াছিলেন। এবং পার্ব্বত্য প্রদেশের রুদ্ধ বহনশীল নদী সকলের কূল ভগ্ন করিয়া জল প্রবাহিত করিয়াছিলেন।
২। ইন্দ্রদেব পর্ব্বতে লুক্কায়িত বৃত্রাসুরকে বধ করিয়াছিলেন। ত্বষ্টৃদেব ইন্দ্রদেবের নিমিত্ত গর্জ্জনশীল বজ্র নির্ম্মাণ করিয়া দিয়াছিলেন। বৃত্রাসুর হত হইলে পর রুদ্ধগতি নদী সকল বেগের সহিত সমুদ্রে প্রবাহিত হইয়াছিল, যদ্রূপ গো সকল হম্বারব করিয়া সত্বর বৎসরে নিকট গমন করে।
৩। বলবান্ ইন্দ্রদেব সোমরস পান করিতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন এবং উপর্য্যুপরি যজ্ঞত্রয়ে সোমরস পান করিয়াছিলেন। তৎপরে বলবান্ ইন্দ্রদেব মারকবজ্র গ্রহণপূর্ব্বক অহিদিগের শ্রেষ্ঠ বৃত্রাসুরকে বধ করিয়াছিলেন। ৪। হে ইন্দ্রদেব! আপনি যখন অহিদিগের শ্রেষ্ঠ বৃত্রাসুরকে বধ করিয়া মায়াবী অসুরদিগের মায়া নষ্ট করিয়াছিলেন এবং তৎপরে যখন সূর্য্য ঊষাকাল এবং আকাশ সৃষ্টি করিয়াছিলেন তখন আর কোন শত্রু দেখিতে পান নাই।
৫। ইন্দ্রদেব তাঁহার বৃহৎ ও বধকারী বজ্রের সহিত লোকের উপদ্রবকারী বৃত্রাসুরকে লোকে যেমন কুঠার দ্বারা বৃক্ষস্কন্ধ ছেদন করে, তদ্রূপ বাহুচ্ছেদনপূর্ব্বক বধ করিয়াছিলেন, এবং বৃত্রাসুরকে তদবস্থ ভূমির উপর পাতিত করিয়াছিলেন।
৬। আমার সমান যোদ্ধা আর কেহ নাই এইরূপ দর্পযুক্ত বৃত্রাসুর মহাবীর ও বহুশত্রুনিবারক ইন্দ্রদেবকে যুদ্ধার্থে স্পর্দ্ধা করিয়াছিলেন। কিন্তু ইন্দ্রদেবের অস্ত্রপ্রহার হইতে কোন প্রকারে আপনাকে রক্ষা করিতে না পারিয়া অবশেষে হত হইয়া নদী সকলের উপর পতিত হইয়া তাহাদের কূলাদি ভগ্ন করিয়াছিলেন।
৭। হস্ত ও পদশূন্য হইয়াও বৃত্রাসুর ইন্দ্রের সহিত যুদ্ধ করিয়াছিল এবং ইন্দ্র ইহার পাষাণসদৃশ স্কন্ধের উপর বজ্র নিক্ষেপ করিয়াছিল। পৌরুষবর্জ্জিত ব্যক্তি যদ্রূপ পৌরুষবিশিষ্ট ব্যক্তির সমকক্ষ হইতে ইচ্ছা করে, তদ্রূপ বৃত্রাসুর ইন্দ্রের সমকক্ষ হইতে ইচ্ছা ইন্দ্র কর্ত্তৃক শরীরের নানা স্থানে আহত হইয়া ভূমিতে পতিত হইয়াছিল।
৮। নদীর জল সকল ভগ্ন কূলের উপর যেমন বেগের সহিত প্রবাহিত হয় তদ্রূপ নদীর উপর পতিত বৃত্রাসুরের দেহের উপর প্রবাহিত হইয়াছিল। বৃত্রাসুর জীবনদশায় যে জল সকল বলের দ্বারায় রুদ্ধ রাখিয়াছিল সেই জল সকলের নিম্নে মৃত্যুর পর তাহার দেহ পতিত রহিল।
৯। বৃত্রাসুরের মাতা পুত্রদেহ রক্ষা করিবার নিমিত্ত স্বয়ং বৃত্রকে ব্যবহিত করিয়াছিল। কিন্তু ইন্দ্রদেব বৃত্রের মাতার উপর বজ্র প্রহার করেন, তাহাতে বৃত্রমাতা হত হইয়া গাভী বৎসের সহিত যেমন শয়ন করে, তদ্রূপ মৃত পুত্রের উপর পতিত হইয়া তাহা আচ্ছাদিত করতঃ শয়ন করিয়াছিল।
১০। অবিশ্রান্ত প্রবহনশীল নদী সকলের জলমধ্যে বৃত্রাসুরের দেহ পতিত হইল। জল সমূহ বন্ধনমুক্ত হইয়া অন্তর্হিত বৃত্রদেহের উপর প্রবাহিত হইতে লাগিল। ইন্দ্রদেবের সহিত শত্রুতা করিয়া বৃত্রাসুর চিরনিদ্রায় নিদ্রিত হইল।
১১। দাস এবং অহিনামে প্রসিদ্ধ বৃত্রাসুর যে সকল নদীর প্রবাহ নিরোধ করিয়াছিল যদ্রূপ পণি নামক অসুর গো সকল গুহাতে নিরুদ্ধ করিয়া রাখিয়াছিল, ইন্দ্রদেব বৃত্রাসুরকে বধ করিয়া সেই সকল নিরোধ দূর করিয়া প্রবাহমার্গ মুক্ত করিয়া দিয়াছিলেন।
১২। হে ইন্দ্রদেব! যখন অসহায় বৃত্রাসুর আপনার বজ্রে প্রতিপ্রহার করিয়াছিল তখন আপনি অনায়াসে বৃত্রাসুরকে নিরাকৃত করিয়াছিলেন, যদ্রূপ অশ্বপুচ্ছগত বালসমূহ মক্ষিকাদি অনায়াসে নিরাকৃত করে। তদন্তর আপনি পণি নামক অসুর কর্ত্তৃক অপহৃত অনিরুদ্ধ ও নিরুদ্ধ গোসমূহ জয় করিয়া স্ববশে আনয়ন করিয়াছিলেন। জয়লাভ করিয়া সোমরস পান করিয়াছিলেন এবং সপ্তনদীর প্রবাহ নিরোধ অপনয়নপূর্ব্বক তাহাদিগকে প্রবাহিত করিয়াছিলেন।
১৩। বৃত্রাসুর ইন্দ্রকে নিরস্ত করিবার নিমিত্ত যে বিদ্যুৎ প্রহার, যে গর্জ্জন, যে বর্ষণ, যে অশনি নিক্ষেপ, এবং যে অপরাপর কৌশল প্রয়োগ করিয়াছিলেন, তৎসমুদায়ই ইন্দ্রের অনিষ্ট করিতে ব্যর্থ হইয়াছিল এবং অবশেষে ইন্দ্র বৃত্রাসুরকে অভিভূত করিয়াছিলেন।
১৪। হে ইন্দ্রদেব! আপনি যখন বৃত্রাসুরকে বধ করিয়া ভীত হইয়াছিলেন, এবং ভীত হইয়া শ্যেন পক্ষীর ন্যায় একোনশত সংখ্যক প্রবহনশীল নদী পার হইয়াছিলেন, তখন বৃত্রাসুর বধের নির্য্যাতনেচ্ছু কোন্ জনকে দেখিয়াছিলেন।
১৫। বজ্রধর ইন্দ্রদেব স্থাবর এবং জঙ্গম জগতের রাজা, শান্ত এবং দুর্দান্ত জীবগণের অধীশ্বর। এবম্ভূত ইন্দ্রদেব মনুষ্যদিগের প্রভু। রথচক্রের নেমি যদ্রূপ চক্রগত অরাখ্য কাষ্ঠ সকল বেষ্টন করিয়া থাকে, তদ্রূপ তিনি মনুষ্যদিগকে সর্ব্বতোভাবে বেষ্টনপূর্ব্বক রক্ষা করেন।”2