4 যদি বল, শ্রৌত স্মার্ত্ত কর্ম্মই কর্ম্ম, কাজেই যজ্ঞ ভিন্ন কর্ম্ম নাই, তাহা হইলে “ন হি কশ্চিৎ ক্ষণমপি জাতু তিষ্ঠত্যকর্ম্মকৃৎ” (৫ম শ্লোক), এবং “শরীরযাত্রাপি চ তে ন প্রসিধ্যেকর্ম্মণ:” (৮ শ্লোক) ইত্যাদি বাক্যের অর্থ নাই।
5 Even where the tellers of legends may have altered or forgotten its earlier mythic meaning, there are often sufficient grounds for an attempt to restore it. *** For instance the Greeks had still present to their thought the meaning of Argos Panoptes, Io’s hundred eyed all seeing guard, who slain by Hermes and changed into a peacock, for Macrobus writes as recognizing in him the star-eyed heaven itself, even as the Aryan Indra-the Sky-is the “thousand eyed.”
Tylor’s Primitive Culture, p. 230, Vol. I.
“সমস্ততেজা: পরমেশ্বরত্বনিমিত্তেন্দ্রশব্দবাচ্য: সবিতৈবাহনি লীয়মানতয়া রাত্রেরহল্যাশব্দবাচ্যায়া: ক্ষায়াত্মকজরণহেতুত্বাজ্জীর্জত্যম্মদনেন বোধিতেন বেত্যহল্যাজার ইত্যুচ্যতে ন পরস্ত্রীব্যভিচারাৎ।” ইহার অর্থ। তেজোময় সবিতা ঐশ্বর্য্যহেতুক ইন্দ্রপদবাচ্য, অহন অর্থাৎ দিনকে লয় করে বলিয়া রাত্রের নাম অহল্যা। সেই রাত্রিকে ক্ষয় বা জীর্ণ করেন বলিয়া ইন্দ্র অর্থাৎ সবিতা অহল্যাজার, ব্যভিচার জন্য নহে। বঙ্গদর্শন, ১২৮১-৪৬৮ পৃ:।
উপাসনা
পূর্ব্বে উপাসনা সম্বন্ধে যাহা বলা গিয়াছে, তাহাতে দেখা গিয়াছে যে, উপাসনা দ্বিবিধ। এক, যাহাদের ফলপ্রদ বিবেচনা করা যায়, তাহাদের কাছে ফলকামনাপূর্ব্বক তাহাদের উপাসনা, আর, এক যাহাকে ভালবাসি, বা যাহার নিকট কৃতজ্ঞ হই, তাহার প্রশংসা বা আদর। প্রথমোক্ত উপাসনা সকাম, দ্বিতীয় নিষ্কাম। এইরূপ সামান্য নিষ্কাম উপাসনা কেবল ঈশ্বর সম্বন্ধে হইতে পারে এমত নহে, সামান্য জড়পদার্থ সম্বন্ধে হইতে পারে। ভিন্নজাতীয় মহাত্মাদিগের বিশ্বাস যে, হিন্দু গোরুর উপাসনা করে। বস্তুতঃ এমন হিন্দু কেহই নাই যে, বিশ্বাস করে যে, আমি আমার গাইটির স্তবস্তুতি বা পূজা করিলে সে আমাকে কোন ফল দিবে। গোরু ঘাস খায়, আর দুধ দেয়, তাহা ছাড়া আর কিছু পারে না, তাহা সকলেই জানে। তবে সাধারণ হিন্দুর এই বিশ্বাস যে গোরুকে যত্ন করিলে, আদর করিলে, দেবতা প্রসন্ন হয়েন। এ কথাটা তত অসঙ্গত নহে। যাহা উপকারী, তাহা আদরের। যাহা আদরের, তাহার আদর অনুষ্ঠেয় কার্য্য ঈশ্বরানুমোদিত। এইরূপ গোরুর আদরের একটা উদাহরণের বেদ হইতে উদ্ধৃত করিতেছি।
শুক্ল যজুর্ব্বেদ সংহিতায় দর্শপূর্ণমাস যজ্ঞে বৎসাপাকরণ কার্য্যের মন্ত্রে আছে,
“হে বৎসগণ, তোমরা ক্রীড়াপরবশ, সুতরাং বায়ুবেগে দিগ্দিগন্তরে ধাবমান হও। বায়ুদেবতাই তোমাদিগের রক্ষক। ৩ ||
হে গাভীগণ, আমরা শ্রেষ্ঠতম কার্য্য আরম্ভ করিয়াছি। তৎসাধনার্থ সবিতা-দেবতা তোমাদিগকে প্রভূত তৃণ বন প্রাপ্ত করান। ৪ ||
হে (স্বল্প বা বহুতর) রোগশূন্য অচিরপ্রসূতা অবধ্য গাভীগণ! তোমরা অক্ষুব্ধ চিত্তে নিঃশঙ্ক ভাবে গোষ্ঠে প্রচুর তৃণ শস্য ভোজন করতঃ ইন্দ্র দেবতার ভোগের উপযোগী দুগ্ধের পরিবর্দ্ধন কর। তোমাদিগকে ব্যাঘ্রাদি হিংস্র জন্তুর বা চৌর প্রভৃতি পাপিগণ কেহই আয়ত্ত করিতে সমর্থ হইবে না। তোমরা এই যজমানের গৃহে চিরদিন বহুপরিবার হইতে থাক। ৫ ||1
ঐ যজ্ঞের দুগ্ধকে সম্বোধন করিয়া ঋত্বিক্ বলেন,
“হে দুগ্ধ, যজ্ঞীয় সুপবিত্র শতধার এই পবিত্রে তুমি শোধিত হও। সবিতা-দেবতা তোমাকে পবিত্র করুন।”
উখা অর্থাৎ হাঁড়িকে সম্বোধন করিয়া বলিতে হয়। “হে উখে! তুমি মৃন্ময়, সুতরাং পৃথিবীরূপিণী ত বটেই। অধিকন্তু তোমার সাহায্যে যজমানগণের দ্যুলোক প্রাপ্তি হয়। অতএব দ্যুরূপাও তোমাকে বলিতে পারি। ২ ||
“হে উখে, তোমার উদরে অবকাশ আছে। সুতরাং বায়ুর স্থান অন্তরীক্ষলোকও তোমার অধীন। অতএব তোমাকে অন্তরীক্ষলোকও বলিতে পারি। এতাবতা তুমি ত্রিলোকস্বরূপ। সমস্ত দুগ্ধ ধারণেই সক্ষম হইতেছ। স্বীয় উৎকৃষ্ট তেজে দৃঢ় থাকিবে। বক্র হইবে না। সাবধান! তোমার দার্ঢ্যের ন্যূনতা বা বক্রতা হইলেই যজ্ঞবিঘ্ন হইবে। সুতরাং যজমান আমাদিগের প্রতি বক্র হইতে পারেন, অতএব তিনি যাহাতে বক্র না হন। ৩ ||”
এখানে সকলেই দেখিতে পাইতেছেন, যাহার উপাসনা হইতেছে, উপাসক তাহাকে অচেতন জড়পদার্থ বলিয়া জানেন। হাঁড়ি কি দুধকে কেহই ইষ্টানিষ্টফলপ্রদানে সক্ষম চৈতন্যবিশিষ্ট বস্তু বলিয়া মনে করিতে পারে না। অথচ তাহার উপাসনা হইতেছে। এ উপাসনা কেবল আদর মাত্র। গোবৎস সম্বন্ধেও ঐরূপ। অন্য যজ্ঞের মন্ত্র হইতে কিছু উদ্ধৃত করিতেছি।
চাতুর্ম্মাস্য যাগে দর্ব্বী অর্থাৎ হাতাকে বলা হইতেছে,
“হে দর্ব্বি, তুমি অন্নে পরিপূর্ণ হইবার অপূর্ব্ব শোভা ধারণ করিয়াছ। এই আকারেই ইন্দ্র দেবতার সমীপে গমন কর। ভরসা করি পুনরাগমনকালেও ফলে পরিপূর্ণ হইয়া এইরূপ শোভিত হইবে।”
অগ্নিষ্টোম যজ্ঞে প্রথমেই যজমানের মস্তক কেশ ও শ্মশ্রু প্রভৃতি ক্ষুরের দ্বারা মুণ্ডন করিতে হয়। আগে কুশা কাটিয়া ক্ষুর পরীক্ষা করিতে হয়। সেই সময় কুশাকে বলিতে হয়, “হে কুশা সকল! অতীক্ষ্ণধার ক্ষুরের দ্বারা ক্ষৌরে যে কষ্ট হইতে পারে তাহা হইতে ত্রাণ কর। অর্থাৎ তোমাদের দ্বারাই তাহা পরীক্ষিত হউক।”
পরে ক্ষৌরকালে ক্ষুরকে বলিতে হয়, “হে ক্ষুর, তুমি যেন ইঁহার রক্তপাত করিও না।”
পরে স্নান করিয়া ক্ষৌম বস্ত্র পরিধান করিতে হয়। বস্ত্র পরিধানকালে বস্ত্রকে বলিতে হয়, “হে ক্ষৌম! তুমি কি দক্ষিণীয় কি উপসদ উভয় প্রকার যজ্ঞেরই অঙ্গীভূত হইতেছ। আমি এই স্নানে সুন্দর কান্তি লাভ করতঃ সুখস্পর্শ কল্যাণকর তোমাকে পরিধান করিতেছি।”
তার পর গাত্রে নবনীত মর্দ্দন করিতে হয়। মর্দ্দনকালে নবনীতকে বলিতে হয়, “হে গব্য নবনীত! তুমি তেজ সম্পাদনে সমর্থ হইতেছ। আমাকে তেজঃপ্রদান কর।”
এ সকল স্থানে কি কুশা কিংবা ক্ষুর বা বস্ত্র বা নবনীতকে কেহ ফলপ্রদানে সক্ষম চৈতন্যবিশিষ্ট দেবতা মনে করিতেছে না। বাতুল ভিন্ন অপরের দ্বারা এরূপ বিবেচনা হওয়া সম্ভব নহে। এ সকল কেবল যত্নের বস্তুতে যত্নজনক বিধি প্রয়োগ মাত্র। ইন্দ্রাদি দেবের যে স্তুতি সকল ঋগ্বেদে আছে আদৌ তাহা প্রশংসনীয় বা আদরণীয়ের প্রশংসা বা আদর মাত্র ছিল। উদাহরণস্বরূপ আমরা একটি ইন্দ্রসূক্ত উদ্ধৃত করিতেছি।