আর্যা বর্তন্তে তত্র পুনঃ পুনরুদ্ভবস্ত্যাক্রম্যাক্রম্যাপি তত্র ন চিরং ম্লেচ্ছাঃ স্থাতারে। ভবন্তি।
এই উত্থানপতনের ইতিহাসই ভারতবর্ষের অতীত ইতিহাস।
১৪
বাণভট্ট হূনদের বরাবর হূন-হরিণী ব’লে এসেছেন; কিন্তু তারা ঠিক হরিণ-জাতীয় ছিল না, না রূপে, না গুণে। হূনরা ছিল হিংস্র বনমানুষ। ভিসেন্ট স্মিথ বলেন–
Indian authors having omitted in give any detailed description of the savage invaders who ruthlessly oppressed their country for three quarters of a century, recourse must be had to European writers to obtain a picture of the devastation wrought and the terror caused to settled communities by the fierce barbvarians.
হূন নামক যে ঘোর নৃশংস বর্বর জাতি পঞ্চম শতাব্দীতে ইউরোপের ঘাড়ে গিয়ে পড়ে, সেই জাতিরই একটি বিশেষ শাখা পারস্যদেশ ও ভারতবর্ষ আক্রমণ করে। সুতরাং ইউরোপের লোক তাদের যে বর্ণনা করেছে, তার থেকে আমরা হূনদের রূপগুণের পরিচয় পাই। স্মিথ বলেন–
The original accounts are well summarised by Gibbon:
The numbers, the strength, the rapid motions and the implacable cruelty of the Huns, were felt and dreaded and magnified by the astonished Goths, who beheld their fields and villages consumed with flames and deluged with indiscriminate slaughter. To these real terrors, they added the surprise and abliorrence which were excited by the slurill voice, the unčouth gestures, and the strange deformity of the Huns. They were distinguished from the rest of the human species by their broad sloulders, flat wioses and small black eyes, deeply buried in their hiad; and as they were almost destitute of beards, they never enjoyed thie manly graces of youth or the venerable aspect of age.
যে হূনরা ইউরোপ আক্রমণ করেছিল, তাদেরই জাতভাইরা ভারতবর্ষ আক্রমণ করেছিল, সুতরাং রূপে ও চরিত্রে তারা যে পূর্বোক্ত হূনদের অনুরূপ ছিল, এরূপ অনুমান করা অসংগত নয়। তারা যে ঘোর অসভ্য ও ঘোর নৃশংস নরপশু, শুনতে পাই, এ বিষয়ে সংস্কৃত সাহিত্যও সাক্ষ্য দেয়।
এ দেশে যাঁরা আসেন, ইউরোপীয়রা তাদের White Huns বলেন; কি কারণে, তা জানি নে। কিন্তু তারা যে কৃষ্ণকায় ছিলেন না, তার প্রমাণ বক্ষ্যমাণ সংস্কৃত পদে পাওয়া যায়।
সদ্যো মুণ্ডিতমত্তহূনচিবুক প্ৰস্পর্দ্ধি নারঙ্গকম্।
এ উপমা থেকে এই জানা যায় যে হূনের রং ছিল হলদে, ও তাদের চিবুক ছিল almost destitute of beards। কারণ, তাদের যে নামমাত্র দাড়ি ছিল, তা কামালে মাতাল হৃনের চিবুক নারঙ্গের রূপ ধারণ করত।
এই কিম্ভুতকিমাকার জাতির আচারব্যবহারও অতিশয় কদর্য ছিল। হিন্দুর মত শুদ্ধাচারী জাতির পক্ষে এ কারণেও হূনজাতি অসহ্য হয়েছিল। চৈনিক পরিব্রাজক ই-সিং তার ভ্রমণবৃত্তান্তে এ কথা উল্লেখ করেছেন।
সুতরাং হূনদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া ভারতবাসীর পক্ষে একটা মারাত্মক রোগের দ্বারা আক্রান্ত হবার স্বরূপ হয়ে উঠেছিল। যে ব্যক্তি ভারতবর্ষকে এ রোগের হাত থেকে মুক্ত করেছিলেন, তাকে যে দেশের লোক মহাপুরুষ বলে গণ্য করবে, এতে আশ্চর্য কি?
১৫
ভারতবর্ষ সেকালে ছিল নানা রাজার দেশ। সুতরাং রাজায় রাজায় যুদ্ধ ছিল সেকালে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কিন্তু কোন্ রাজা কাকে মারলে, তাতে সমাজের বেশি কিছু যেত আসত না। মনুর বিধান আছে যে–
জিত্ব সম্পূজয়েবোন্ ব্রাহ্মণাংশ্চৈব ধার্মিকান্।
প্রদদ্যাৎ পরিহারাংশ্চ খ্যাপয়েদভয়ানি চ।।
সর্বেষান্তু বিদিত্বৈষাং সমাসেন চিকীষিতম্।
স্থাপয়েৎ তত্র তদ্বংশং কুর্য্যাৎ চ সময়ক্রিয়াম্। (মনু। ৭ অধ্যায় ২০১-২০২ শ্লোক)
উপরি-উক্ত শ্লোকদ্বয়ের মেধাতিথিকৃত ভাষ্যানুবাদ—
বিজয়ী রাজা পররাজ্য জয় করবার পর পুরী ও জনপদের প্রশমন করে, তত্রস্থ দেবদ্বিজ ও ধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তিদের রণার্জিত ধনের চতুর্থাংশ ও ধূপদীপগন্ধপুষ্প দ্বারা পূজা করবেন। তার পর সে দেশের গৃহস্থ ব্যক্তিরা যাতে কোনোরূপ কষ্টে না পড়ে, তজ্জন্য তাদের এক বৎসর কিংবা দু বৎসরের কর ও শুল্কপ ভার থেকে মুক্তি দেবেন, যাতে তাদের জীবনযাত্রার কোনোরূপ ব্যাঘাত না হয়। তার পর নগরের ও জনপদের অভয়দান করবেন, অর্থাৎ ডিণ্ডিম প্রভৃতির দ্বারা থোষণা করবেন যে, যারা পূর্বস্বামীর প্রতি অনুরাগবশতঃ আমার বিরুদ্ধাচরণ করেছে, তাদের আমি ক্ষমা করলুম, তারা যেন নির্ভয়ে স্ব স্ব ব্যাপারে নিযুক্ত হয়ে জীবনযাত্রা নির্বাহ করে।
বিজিত রাজ্যের জনসাধারণকে পূর্বোক্ত উপায়ে শান্ত ও সন্তুষ্ট করবার চেষ্টা করেও বিজয়ী রাজা যদি জানতে পান যে, সে রাজ্যের প্রজাদের পূর্বস্বামীর উপর অনুরাগ অতি প্রবল, এবং তারা কোনো নূতন রাজা ও রাজশাসন চায় না, তাহলেও তিনি সংক্ষেপে প্রজাদের মনোভাবের বিষয় অবগত হয়ে সেই বংশের অপর কোনো উপযুক্ত ব্যক্তিকে রাজপদে প্রতিষ্ঠিত করবেন, এবং তদ্দেশের সমবেত প্ৰজামণ্ডলী ও রাজপুরুষদের সম্মতিক্রমে ও তাদের সমক্ষে সেই নব অভিষিক্ত রাজার সঙ্গে এই মর্মে সন্ধি করবেন যে, তোমার আয়ের অর্ধেক আমি পাব, এবং তুমি আমার সঙ্গে পরামর্শ করে সকল বিষয়ে ব্যাকর্তব্য স্থির করবে; আর আমি যদি দৈবক্রমে এবং অকারণে বিপগ্রস্ত হই, তুমি স্বয়ং উপস্থিত হয়ে তোমার অর্থ ও বলের দ্বারা আমার সাহায্য করবে।