ভারতবর্ষের সকল লোক যে এক জাতির নোক নয়, এ সত্য তো সকলের কাছেই প্রত্যক্ষ। এ দেশে বিভিন্ন প্রদেশের লোকের রূপের ও বর্ণের ভিতর কতটা স্পষ্ট প্রভেদ আছে তা সকলেরই চোখে পড়ে। এর থেকে অনুমান করা যেতে পারে যে, তাদের প্রকৃতিও বিভিন্ন। আমি পূর্বে তোমাদের বলেছি যে, পৃথিবীর জিয়োগ্রাফিকাল ভাগ ও পলিটিকাল ভাগ এক নয়। এ দেশের যে পলিটিকাল হিসেবে এক জাত হতে পারে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক হিসেবে এক জাত নয়। জিয়োগ্রাফির ভাগের হিসেবে তাদের জাতেরও স্পষ্ট ভাগ আছে। পলিটিক্সের হিসেবে কাশ্মীরি পণ্ডিত অবশ্য তামিল নাইডুর সহোদর, কিন্তু জিয়োগ্রাফির হিসেবে এরা পরস্পরকে কিছুতেই দেশকা ভাই বলতে পারেন না। আজ আমি তোমাদের কাছে যতদূর সংক্ষেপে পারি ভারতবর্ষের বর্তমান জিয়োগ্রাফির বর্ণনা করলুম; বারান্তরে তোমাদের ভারতবর্ষের প্রাচীন জিয়োগ্রাফি ও প্রাচীন ভারতবর্ষের জিয়োগ্রাফির কথা শোনাব। পুরাকালেও স্বদেশের জিয়োগ্রাফি জানবার কৌতূহল লোকের ছিল, এবং এ বিষয়ে যেটকু জ্ঞান তারা সংগ্রহ করেছিলেন তা তাঁরা লিখে রেখে গিয়েছেন; আর তার থেকেই জানা যায় যে, কালক্রমে ভারতবর্ষের জিয়োগ্রাফির কিঞ্চিৎ পরিবর্তন ঘটেছে।
তোমাদের ভরসা দিচ্ছি যে, সে বর্ণনা এ বর্ণনার চেয়ে ঢের ছোটো হবে, আর আশা করি ঢের বেশি সরস হবে। যে-সব দেশের, যে-সব শহরে, যে-পাহাড়ে, যে-সব নদীর নাম আমরা রামায়ণ-মহারতে পড়ি, তারা কোথায় ছিল আর তাদের ভিতর কোনটি, স্বনামে না হোক, স্বরূপে বিরাজ করছে, সে-সব ক নেতে তোমাদের নিশ্চয়ই ভালো লাগবে। সেকালের ভারতের পরিচয় দিতে আমাকে কষ্ট করতে হবে, কিন্তু শুনতে তোমাদের কোনো কষ্ট হবে না।
মাঘ ১৩৩২