জার্মানি আর সুইডেনই নেবে অধিকাংশ শরণার্থী। এ বছরে সুইডেন নিচ্ছে মোট ৯০,০০০ শরণার্থী। ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো মুখে যত সহানুভূতি প্রকাশ করুক না কেন, শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রশ্ন এলেই পিছিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বলে দিয়েছে দশ হাজার শরণার্থী নেবে। সংখ্যাটা আরও বাড়বে ভবিষ্যতে। শরণার্থীর জন্য জার্মানি দরজা খুলেছে, সুইডেন খুলেছে, ইউরোপের অনেক দেশই দরজা হয়তো খুলবে। আমেরিকাও আরও খুলবে। যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশগুলোর সহায় এখন ইউরোপ আর আমেরিকাই। অমুসলামরাই। বিধর্মীরাই। পাশ্চাত্যে মুসলমানের সংখ্যা বাড়ছে। একদিন হয়তো এমন দিন আসবে, মুসলমানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠবে, পাশ্চাত্যের শ্বেতাঙ্গরা হয়ে উঠবে সংখ্যালঘু। একদিন হয়তো মুসলমানরাই শাসন করবে পৃথিবী। অমুসলমানরাই মুসলমানদের পেলে পুষে বড় করবে তাদের দেশে। অতঃপর আসবে সেই দিন, দারুল ইসলাম কায়েম করার দিন। শত্রুকে, বিধর্মীকে, অবিশ্বাসীকে কতল করে সুন্নি মুসলমানের তামাম দুনিয়ার খলিফা বনার দিন। এ কি শুধু কট্টর ডানপন্থীরাই ভাবছে? উদারপন্থীদের মনেও এমন আশংকা যে মাঝে মাঝে উঁকি দেয় না, তা হলফ করে বলা যাবে না।
অন্যরকমও হতে পারে। সেই অন্যরকমটিই যেন হয়। অন্যরকমটি এরকম– মুসলিম অভিবাসীরা সেকুলার শিক্ষায় শিক্ষিত হবে, বিজ্ঞানমনস্ক হবে, যুক্তিবাদী হবে, নারী পুরুষের সমান অধিকারে বিশ্বাস করবে। যে দেশে তারা বাস করবে যেন সংখ্যাগরিষ্ঠের সঙ্গে বাস করতে পারে, যেন তাদের কোনও ঘেটোতে বা বস্তিতে বাস করতে বাধ্য করা না হয়, যেন তাদের শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়, চাকরি বাকরির সুযোগ দেওয়া হয়। তাদেরকে যত পৃথক করা হবে মূলধারা থেকে, তত তারা বিচ্ছিন্ন হবে, তত তারা ধর্ম আর কুসংস্কার আঁকড়ে ধরবে, তত তাদের জাপটে ধরবে ক্ষদ্রতা আর অন্ধতা। কেবল আশ্রয় দিলেই আর খাওয়া পরার নিশ্চয়তা দিলেই নিরাশ্রয়দের সব সমস্যার সমাধান হয় না, কী করে তারা বেঁচে থাকবে, কতখানি মর্যাদা নিয়ে, কী শিক্ষা আর কতটা সচেতনতা নিয়ে, সেটা একটা বড় বিষয়। তা না হলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে, এইসব লোক দেখানো আশ্রয় কারও সত্যিকার কোনও উপকার করবে না।
মেক্সিকো
মেক্সিকোতে গিয়ে আমার এক চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়েছে, প্রায় প্রত্যেকে ভেবেছে আমি মেক্সিকান, আমার সঙ্গে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছে। যতই বলি। আমি মেক্সিকান নই, ততই তারা যেন শিওর হয় আমি মেক্সিকানই। মাথায় যখন আমার ব্রাউন ক্যাপটা পরি, তখন আমাকে পেরুভিয়ান বলবে ওরা, বলবেই।
সবুজ সার্ট পরা মানুষটি আমি। আমার পাশে একজন মেক্সিকান ইণ্ডিয়ান। কোথায় আমি? সম্ভবত আজটেকদের সান টেম্পল-মুন টেম্পল দেখতে গিয়েছি। আমার খুব ইচ্ছে ল্যাটিন আমেরিকাটা চষে বেড়ানোর। সেই কতকালের ইচ্ছে, আজও যাই যাই করে যাওয়া হয়নি। সঙ্গে যাওয়ার জন্য স্প্যানিশ জানে এরকম একজন বন্ধু খুঁজছি। ল্যাটিন আমেরিকার প্রতিটি দেশেই, আমার বিশ্বাস, আমাকে বলবে, আমি ওখানকার লোক। চিলিয়ান, ব্রাজিলিয়ান, আর্জিন্টিয়ান, কলোম্বিয়ান… যে কোনও কিছুই হতে পারি। আমার চেহারাটা স্প্যানিয়ার্ডদের মতো নয়, বরং নেটিভ ইণ্ডিয়ানদের মতো অনেকটা, অথবা মিক্সড, ক্রিয়ল। ল্যাটিন আমেরিকায় কেউ আমাকে বলবে না আমি ট্যুরিস্ট অথবা আউটসাইডার। চষে বেড়াতে হলে তো এই ই চাই।
মেনোপজ?
মেনোপজকে বাংলায় সম্ভবত রজঃনিবৃত্তি বলে। আমার রজঃনিবৃত্তি হচ্ছে হবে বলে একটা আশংকা করছিলাম গত তিন চার বছর। হতে হতে তিপ্পান্ন গড়ালো। গত আড়াই মাস আমি ঋতুর দেখা পাইনি, ফুলে ধরেই নিয়েছি আমার রজঃনিবৃত্তি ঘটেছে। অবশ্য রজঃনিবৃত্তি দুম করে ঘটে যায় না, বেজায় বাহানা করে বিদেয় নেওয়ার আগে। কান পাতলে এই যাচ্ছি, খানিকটা জিরোই, অত তাড়া কিসের এসবও শুনি। এমনও হতে পারে হঠাৎ আমাকে চমকে দিয়ে উনি এসে উপস্থিত হবেন। আমি অবশ্য ঋতুর মুখ আর দেখতে চাইনে বলে আবদার করিনি। দেখতে পেলে যত্নআত্তির অভাব রাখবো না,আর না পেলে প্রকৃতির বিচারকে বিনাতকে মেনে নেবো। আমার একটা ক্ষীণ অস্বস্তি ছিল রজঃনিবৃত্তির মন্দ দিকগুলো নিয়ে। হরমোন নিঃসৃত না হলে শরীর আর আগের মতো বিপদমুক্ত থাকবে না জানি। ভেবেছিলাম যৌন ইচ্ছেগুলোরও বোধহয় ছুট্টি হয়ে যাবে। ও মা, গত আড়াই মাস ধরে একটুও দেখলাম না কিছু বদলেছে। যেমন ছিল, তেমনই। আমি বলবো না আমার সেই পঁচিশে যেমন ছিল, এখনও তেমন। সেরকম পাগলপাগল না হলেও খুব কম নয়।
এখন যৌনতা কী চমৎকার উপভোগ করছি আমি, আর মনে পড়ছে আমার মার কথা। মাকে দেখেছি সম্ভবত তার পঁয়ত্রিশ বা তারও কম বয়স থেকেই আলাদা বিছানায় থাকে। কাচ্চা বাচচা খানিকটা বড় হয়ে গেলে বাঙালি বাবা মারা আর এক বিছানায় ঘুমোন না। যখন ছোট ছিলাম, বাবা মাদের এক বিছানায় না ঘুমোনোটাকেই খুব স্বাভাবিক মনে হতো। আত্মীয় স্বজন, পাড়া পড়শি সব বাড়িতেই এই নিয়ম দেখেছি। ঘর আলাদা। বিছানা আলাদা। ছোটবেলায় বাবা মাদের বয়স খুব বেশি বলে মনে হতো। যখন বয়স তাদের তিরিশের ঘরে, তখনও মনে হতো তারা পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ। লজ্জা শরমের বালাই না থাকলেই ওই বয়সে যৌনতার বোধ থাকে। এরকম ভাবতাম। কিন্তু এখন ভাবছি ওই অল্প বয়সে আমার মা একা একা কী করে যৌনতাহীন জীবন কাটাতো! শুধু মা কেন, আর সব মেয়েরা! চার পাঁচটা বাচ্চা পর পর প্রসব করার পর মায়ের দায়িত্ব ওদের বড় করা। ওই নিয়েই পড়ে থাকা। নিজের জীবন বলে আর কিছু না থাকা। শরীরের সুখ আনন্দ বলে কিছু না থাকা। তখন তাদের পরিচয় আর প্রেমিকা নয়, স্ত্রী নয়, শুধুই মা। মাদের যৌনতা নৈব নৈব চ।