ভারত বাংলাদেশ বা পাকিস্তান নয়। ভারতের গণতন্ত্র এখনও বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে মজবুত। ভারত এখনও প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বেশি ধর্মনিরপেক্ষ। তারপরও ভারতে কিন্তু এখন দাভোলকার আর পানেসরের খুনীদের গ্রেফতার করা হয়নি। এখনও কোনও বিচার হয়নি। এই একটি জায়গায় হয়তো বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কোনও পার্থক্য নেই। ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশেও গোপনে গোপনে বেড়ে উঠছে। এবং এই সন্ত্রাসীরা যখন বুদ্ধিজীবী খুন করে পালিয়ে যায়, এত বড় দেশটির এত বড় গোয়েন্দা বাহিনী তাদের খুঁজে পায় না। এই ব্যাপারেও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অদ্ভুত মিল দেখতে পাচ্ছি। চোখ বুজে খুনী খুঁজলে কি খুনীর খোঁজ পাওয়া যায়? তবে কাল ভূবিথ শেঠি বলে বজরং দলের এক হিন্দু কট্টরপন্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যে কালবুরগির মৃত্যুতে খুশি হয়ে টুইট করেছিলো, হিন্দু ধর্ম নিয়ে বিদ্রূপ করো তো কুকুরের মতো মরতে হবে এবং কে.এস. ভাগওয়ান নামের কাউকে হুমকি দিয়েছিল এই বলে যে, এরপর তোমাকেও মরতে হবে। জানিনা ভুবিথ শেঠিকে কতদিন জেলে রাখা হবে। তবে ভুবিথ শেঠি খুব সম্ভবত খুন করেনি। খুনীদের না গ্রেফতার করে এদিক ওদিক থেকে লোক ধরে এনে দেশের মানুষকে বোকা বানাবার চেষ্টা করতে দুদেশই পারদর্শী। যতদূর জানি অপকর্ম করে পালিয়ে যাওয়া প্রচুর হিন্দু সন্ত্রাসীদের এখনও ধরি ধরি করেও ধরা হচ্ছে না। ২০০৬ আর ২০০৮ এর মালেগাঁও বিস্ফোরণ যারা করেছিল, তারা আজও ধরা পড়েনি। ২০০৭ সালে ভারত-পাকিস্তানের সমঝোতা এক্সপ্রেসে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। যারা, তাদের আজও ধরা হয়নি। একই বছর মক্কা মসজিদে যারা বোমা ছুঁড়েছিল, তাদেরও ধরা হয়নি। এসব বোমা বিস্কোরণের পেছনে, গোয়েন্দাদের রিপোর্টে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ আর বজরং দলের ভূমিকা আছে।
অনেক হয়েছে, আশা করছি ভারত আর চুপচাপ বসে থাকবে না, সন্ত্রাসীরা যে গর্তেই লুকিয়ে থাকুক না কেন, সেই গর্ত থেকে তাদের তুলে এনে শাস্তির ব্যবস্থা করবে। মুক্তমনা বুদ্ধিজীবীদের খুনের বিচার ভারত করবে। এই আশা আমাদের করতেই হবে। এ ছাড়া উপায় নেই। আজ ভারতে ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা পার পেয়ে গেলে প্রতিবেশী দেশগুলোতেও এই ট্রেণ্ড চলে আসবে। তখন হয়তো নবারুণ ভট্টাচার্যের মতো করে আমরা বলতে বাধ্য হব, এই মৃত্যু উপত্যকা আমার উপমহাদেশ নয়।
ভাষা দিবস
আজ দিল্লির বেঙ্গল এসোসিয়েশন পালন করলো ১৯শে মে, ভাষা দিবস। আসামের শিলচরে বাংলাভাষার জন্য ১৯৬১ সালের ১৯শে মে তারিখে এগারো জন বাঙালি প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই ছিলো আজকের এই ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান। তখনকার প্রাদেশিক সরকার বাঙালি অধ্যুষিত শিলচর, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দির বাংলা ভাষার বদলে অহমীয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র ভাষা বলে। ঘোষণা করেছিলেন, তখনই বাঙালিরা শুরু করেন ভাষা আন্দোলন। ১৯শে মে সকালে শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে রেলপথ অবরোধের সময় আসাম রাইফেলস বাংলা ভাষার সৈনিকদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে, ঘটনাস্থলেই মারা যান এগারো জন ভাষা সৈনিক, অর্ধশত বাঙালি আহত হয়েছিলেন সেদিন।
আজ শুধু শ্রোতা হিসেবেই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। মাঝে মাঝে শুধু শ্রোতা হতে খুব ভালো লাগে। অন্যরকম আরাম বোধ করি। অনেকে ভাষণ দিয়েছেন। এতকাল ২১শে ফেব্রুয়ারি পালন করেছি। এই প্রথম আমার ১৯শে মে পালন করা। শুধু ভাষণ নয়, কবিতা হলো, আবৃত্তি হলো। দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নাচের অনুষ্ঠানও হলো। তিন-চার বছর বয়সী বাচ্চারও নাচের পোশাক পরে নেচেছে। নাচ পরিচালনা করেছে স্মিতা চক্রবর্তী, স্মিতা নেচেছেও। ও যে কী করে এত ছোট ছোট বাচ্চাদের নাচ শিখিয়েছে! নিশ্চয়ই খুব কঠিন কাজ। স্মিতা চক্রবর্তী অনুষ্ঠানের আগে আমাকে এসে বলে গেছে, আমার লেখা ও কী ভীষণ ভালোবাসে। তারপর অনুষ্ঠান শেষে মঞ্চ থেকে বলেছে, আমার উপস্থিতি তার জন্য বিশাল কিছু। বেঙ্গল এসোসিয়েশনের প্রধান তপন সেনগুপ্তও অনুষ্ঠানের শুরুতে ঘোষণা করেছিলেন, আমার উপস্থিতির জন্য তাঁরা গর্বিত। এই ভালোবাসা, এই শ্রদ্ধা কখনও কখনও বড় অপ্রস্তুত করে আমাকে, কখনও কখনও চোখে জল এনে দেয়।
ভিন্নমতের নিরাপত্তা নেই, বাংলাদেশ কি আদৌ কোনও ডেমোক্রেসিং?
১.
আহমেদ রাজিব হায়দার (থাবা বাবা)
অভিজিৎ রায়
অনন্ত বিজয় দাশ
ওয়াশিকুর রহমান বাবু
জগৎজ্যোতি তালুকদার
আশরাফুল আলম
নিয়াজ মোর্শেদ বাবু
আরিফ রায়হান দ্বীপ
নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় (নিলয় নীল)
এরপর কে? আমরা জানি না এরপর কে। অনেক ব্লগার দেশ ছেড়েছে। যারা আছে দেশে, তাদের কুপিয়ে মেরে ফেলা হবে। ধর্মে অবিশ্বাস, এমন কারও অস্তিত্ব বাংলাদেশে রাখা হবে না।
বাংলাদেশ কোনও নাস্তিককে নিরাপত্তা দেবে না। হাসিনা ভয় পাচ্ছেন, নাস্তিকদের নিরাপত্তা দিলে তাঁকে না আবার নাস্তিক বলে ভাবা হয়। নাস্তিক বলে ভাবলে তাঁর তো আবার মুসলমানের ভোট জুটবে না। শেখ হাসিনা কি নাস্তিক নন? নাস্তিক তো আসলে প্রায় সবাই। তুমি যদি হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস না করো, তুমি একজন অবিশ্বাসী। তুমি খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাস না করো, তুমি একজন অবিশ্বাসী। যদি ইহুদি ধর্মে বিশ্বাস না করো, মরমন ধর্মে, জিহোবাজ উইটনেসে, প্যাগান ধর্মে বিশ্বাস না করো, তুমি একজন অবিশ্বাসী। পৃথিবীতে প্রচুর ধর্ম ছিল, আছে। সব ধর্মের কাছে। তুমি অবিশ্বাসী। তুমি শুধু একটি ধর্ম বিশ্বাস করো, বাকি হাজারো ধর্ম অবিশ্বাস করো। তুমি যত না বিশ্বাসী, তার চেয়ে বেশি অবিশ্বাসী। যত না আস্তিক, তার চেয়ে ঢের বেশি নাস্তিক।