সেক্সয়ালিটি যে সমাজে টাবু, বিয়ে না হলে সেক্স করা যাবে না যে সমাজের রীতি, সে সমাজে পর্ন ছবি দেখে অনেক অবিবাহিত অথবা যৌনসঙ্গীহীন যুবক যুবতী নিজেদের যৌনক্ষুধা নিজেরাই মেটাতে পারে। পর্নের পজিটিভ একটি দিক এটিই। যে ভারতের প্রাচীন মন্দির জুড়ে পর্নোগ্রাফি, যে ভারতের প্রাচীন কাব্যে পর্নোগ্রাফি, বাৎসায়ন যে ভারতে বসে লিখেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পর্নোগ্রাফি, যে ভারতে এক পর্ন অ্যাকট্রেস দুদিনেই তারকা বনে যায়, সেই ভারতে আজ পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ! দিন দিন মানুষ দৌড়ে যাচ্ছে সামনে, ভারতই কেবল ফিরে যাচ্ছে ভিক্টোরিয়ার যুগে।
এ তো গেল মত প্রকাশের অধিকারের পক্ষে আমার মত। পর্ন সম্পর্কে আমার কিছু নিজস্ব মত আছে, আমার মতের সঙ্গে অনেকে একমত নাও হতে পারেন, সম্ভবত না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। পর্ন শব্দটির উৎপত্তি গ্রীক শব্দ পর্ন থেকে। পর্ন শব্দের অর্থ যৌনদাসী। পর্নোগ্রাফি শুরু থেকেই মেয়েদের জন্য নয়, তৈরিই হয় পুরুষের সুখের জন্য। পর্নোগ্রাফিতে যৌনদাসির ভুমিকা ছাড়া মেয়েদের মুলত আর কোনও ভূমিকা নেই। তারা যৌন-আনন্দ দেবে পুরুষকে, পুরুষরা ঠিক যেভাবে যেভাবে যেভাবে পছন্দ করে, সেভাবে। পর্ন মানে পুরুষরা তাদের ইচ্ছেমতো কামড়ে খামচে ভোগ করবে মেয়েদের। পুরুষদের ইচ্ছেমতো, মেয়েদের ইচ্ছেমতো নয় কিন্তু। মেয়েদের ইচ্ছের কোনও মূল্য পর্নে নেই। মেয়েদের যৌনাঙ্গকে, পায়ুপথকে, মুখগহবরকে তুচ্ছার্থে বলা হয় ছিদ্র বা ফুটো, এগুলো পুরুষরা যতবার খুশি, যতক্ষণ খুশি, যত জন খুশী ব্যবহার করবে। শত যন্ত্রণাতেও, শত কষ্টেও শত অনিচ্ছেতেও মুখে হাসি ধরে রাখতে হবে মেয়েদের, আর ক্ষণে ক্ষণেই বলতে হবে ইয়েস ইয়েস, ভালো লাগছে, আরও চাই। অনেক পর্নতারকা জীবনের একটা সময়ে এসে স্বীকার করেছে তাদের ওই ইয়েসগুলো আসলে ইয়েস ছিল না, ওগুলো আসলে নো ছিল। পর্নে আমরা এই দৃশ্য খুব দেখি যে, একসঙ্গে একাধিক পুরুষ সেক্সের নামে নির্যাতন করছে একটা মেয়েকে, চড় দিচ্ছে, থাপ্পড় লাগাচ্ছে, চুল ধরে টানছে, যত বেশি যন্ত্রণা পাচ্ছে মেয়েটি, তত বেশি সে হাসছে। পর্নে মেয়েদের শারীরিক যন্ত্রণার নাম দেওয়া হয়েছে যৌনসুখ। মেয়েদের যন্ত্রণাকে ইরোটিসাইজ করা হয় পর্নোগ্রাফিতে পুরুষরা ইনভেড করে, আক্ষরিক অর্থেই দখল করে নেয় একটি মেয়ের শরীর, অথচ মেয়েটির জন্য তাদের কোনও প্রেম তো নেইই, ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধও নেই, এটিকে আর যে যাই বলুক, আমি অন্তত যৌন সঙ্গম বলি না। পর্নোগ্রাফি ধর্ষণের মতোই, যেখানে প্রাধান্য পায় পুরুষের আধিপত্য আর বর্বরতা। ধর্ষণের সময় যেমন বলা হয়, মেয়েটা চেয়েছিল, মেয়েটার ভালো লাগছিল ধর্ষণ, ধর্ষিতার না টাকে হ্যাঁ বলে ধরা নেওয়া হয়। পর্নোগ্রাফিতেও ওই একই মিথ্যের বেসাতি চলে, মেয়েটার ওই ডবল পেনেট্রেশন বা ট্রিপল পেনেট্রেশন ভালো লাগছিল, মেয়েটা আনন্দ পাচ্ছিল। যত বেশি নিগ্রহ আর নির্যাতন ঘটে মেয়ের ওপর, তত দর্শক উত্তেজিত হয়। আজকাল ইন্টারনেটের পর্ন সাইটগুলো বিজ্ঞাপন দেয় এই ভাষায়, ধর্ষণ আছে, যন্ত্রণায় মেয়েরা কাঁদে, চিৎকার করে, মেয়েটাকে ছিঁড়ে খাওয়া হচ্ছে, কচি মেয়েকে রাপচার করে দিচ্ছি, দেখবে এসো। পর্নোগ্রাফি দেখে উত্তেজিত হয়ে বাস্তবে কে কটা ধর্ষণ করেছে আমি জানি না। কেউ কোনও ধর্ষণ না করলেও, পর্নোগ্রাফির কারণে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটলেও, পর্নোগ্রাফি নারীবিদ্বেষীদের কাজ, এ কথা জোর গলায় বলতে পারি। পর্নোগ্রাফি নারীকে শুধু অপমানই করে না, নারীকে আস্ত একটা যৌনাঙ্গ ছাড়া আর কিছু মনে করে না। পর্নোগ্রাফিতে অংশগ্রহণ করতে শিশুদের বাধ্য করছে। বিলিয়ন ডলারের পর্ন ব্যবসায়ীরা। শিশু পাচার বাড়ছে এ কারণে।
পর্নকে নয়, ইরোটিকাকে মূল্য দিই আমি। ইরোটিকা শব্দটি এসেছে ইরোস থেকে। ইরোস শব্দের অর্থ প্রেম। ইরোটিকার যৌনতার সঙ্গে মিশে আছে প্রেম। ইরোটিকাগুলো শুধু পুরুষের যৌন-আনন্দের জন্য নয়, নারীর যৌন-আনন্দের জন্যও। পর্নোগ্রাফি আর ইরোটিকার মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে হবে। পর্নোগ্রাফির সঙ্গে সম্পর্ক বর্বরতার, আর ইরোটিকার সঙ্গে সম্পর্ক নির্ভেজাল সেক্সের, লাভ মেকিংএর। ইরোটিকায় কেউ কারও ওপর আধিপত্য বিস্তার করে না, কেউ কারও যৌনপ্রভু নয়, কেউ কারও যৌনদাস বা যৌনদাসী নয়। দুজনই পরস্পরের সঙ্গী। সেই ইরোটিকাগুলোকে নিষিদ্ধ করা মোটেও স্বাস্থ্য সম্মত নয়।
রতের হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা মুক্তমনাদের খুন করছে
বাংলাদেশে যা ঘটছে, তা ভারতেও ঘটছে। বাংলাদেশে যুক্তিবাদী আর মুক্তচিন্তকদের ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হচ্ছে। ভারতেও তাই হচ্ছে। নরেন্দ্র দাভোলকার, গোবিন্দ পানেসার, আর দুদিন আগে খুন হলেন এম এম কালবুরগি। দাভোলকার, পানেসর, আর কালবুরগি ছিলেন যুক্তিবাদী, মুক্তমনা বুদ্ধিজীবি। অনেককাল লক্ষ করছি হিন্দুদের মধ্যে একটি দল অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে দিন দিন। হাতে ত্রিশূল, কপালে চন্দন বা গায়ে গেরুয়া পোশাক না থাকলে চেনার উপায় নেই তারা হিন্দু সন্ত্রাসী নাকি মুসলিম সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসী, সে যে ধর্মেরই হোক, যে বিশ্বাসেরই হোক, তারা নিজের ছাড়া অন্যের মত প্রকাশের অধিকারে বিশ্বাস করে না, মুলত তারা কোনও গণতন্ত্রেই বিশ্বাস করে না।