আহমদ মোহাম্মদকে ওবামা ডেকেছেন, সমর্থন জানিয়েছেন বাঘা বাঘা সব লোক। আহমদ কতটা বুদ্ধিমান জানি না। ও বড় হয়ে কত বড় বিজ্ঞানী হবে তা জানি না, তবে শুনেছি ও ঘড়ির বিভিন্ন পার্টস কিনে এনে জোড়া দিয়েছে মাত্র। তবে যা কিছুই করুক, যেভাবেই যা বানাক, তাকে আমি ধন্যবাদ দিই সে যে বোমা না বানিয়ে। ঘড়ি বানানোর চেষ্টা করেছে। আমেরিকার অনেক মুসলিম কিশোরই আইসিসে যোগ দিয়েছে, ইরাকে আর সিরিয়ায় গিয়ে জঙ্গীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে মানুষ মারছে। অনেক শিশু-কিশোরকে জঙ্গীরা খুন করতে শেখাচ্ছে। অনেকে জঙ্গীদের আকারে ইঙ্গিতে অথবা প্রকাশ্যে সমর্থনও করছে। আইসিসের পোশাক না পরে আহমদ নাসার টিশার্ট পরেছে, সে কারণে কৃতজ্ঞতা জানাই তাকে। আমরা আহমদকে উৎসাহ দেবো যেন সে বিজ্ঞানমনস্ক হয়, শিক্ষিত হয়, সচেতন হয়। কিন্তু অনুগ্রহ করে কেন আহমদকে সন্দেহ করা হলো, সে মুসলমান বলেই সন্দেহ করা হলো, সাদারা সবাই রেসিস্ট, আমেরিকানরা মুসলিম-বিদ্বেষী বলে ন্যাকামো না করাই ভালো। মুসলমানকে কেন সন্ত্রাসী বলে সন্দেহ করা হয়, তা না জানলে জেনে নিন মুসলমানদের সন্ত্রাসের ইতিহাস। গর্ত খুঁড়ে পুরোনো কাহিনী বের করতে হবে না। যা ঘটছে চারদিকে এখন, তা জানলেই যথেষ্ট।
সন্ত্রাসী যে কোনও ধর্মের, যে কোনও বর্ণের মানুষই হতে পারে। তবে ধর্মের নামে হলেই গোটা ধর্মীয় গোষ্ঠীর ওপরও সন্দেহের চোখ পড়ে। এ আমাদের বুঝতে হবে এবং এই সন্দেহ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে মুসলিমদের উচিত ধর্মের নামে যারা জিহাদ করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, নিজেদের ধর্মান্ধতা থেকে মুক্ত করা, বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত করা। মুসলিম জঙ্গিরা মুসলিমদের যতটা ক্ষতি করেছে, ততটা ক্ষতি অন্য কোনও শ এ যাবৎ করেনি।
ঈদ
মুসলমানদের জন্য পবিত্র দিন। ঈদের নামাজ তো সুপার পবিত্র। আর ঈদের নামাজেই কিনা বোমা মেরেছে মুসলিম সন্ত্রাসীরা যারা নিজেদের সবচেয়ে খাঁটি মুসলমান বলে দাবি করে! নাইজেরিয়ায় নিহত, ইরাকে নিহত, সৌদি আরবেও নিহত। এখন কথা হলো, ধার্মিকেরা যদি ঈদের দিন নামাজ পড়তে থাকে, তাহলে কী উদ্দেশে আরেক দল ধর্মপ্রাণ ওদের লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে, ওদের খুন করে? ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম–কিন্তু চারদিকের কোথাও শান্তি তো দেখি না। এই ধর্ম নিয়ে বর্বরতা কম হচ্ছে না। প্রতিটি মুসলিম দেশে কোনও না কোনও অশান্তি লেগেই আছে।
ঈদের নামাজ নিষিদ্ধ
আইসিসের কাণ্ড। তারাঈদের নামাজ নিষিদ্ধ করেছে ইরাকের মসুলে। বলেছে, ঈদের নামাজের সঙ্গে ইসলামের কোনও সম্পর্ক নেই। উপবাসের পর খাওয়া-দাওয়ার আর দল বেঁধে প্রার্থনার উৎসব এক কাফেররাই করতো। পুরোনো কালের মুসলিমরা ঈদের নামাজ পড়তো না। মসুলের কারও অধিকার নেই ঈদের নামাজ পড়ার। কেউ যদি নামাজ পড়তে যায়, তাদের নাকি মেরে ফেলা হবে। এই ইরাকে বসে বসে কী কাণ্ডই না করেছে আইসিসের সশস্ত্র লোকগুলো! বুলডোজার দিয়ে, ডিনামাইট দিয়ে, কুড়োল দিয়ে, শাবল দিয়ে ভেঙেছে মুসলমানের মাজারগুলো, শিয়াদের মসজিদগুলো, হাজার বছরের পুরোনো শিল্পকর্ম, মিউজিয়াম।
আইসিস কি একসময় নামাজ জিনিসটাকেই নিষিদ্ধ করবে? কারণ নামাজটা তো ইসলাম আসার আগে বিধর্মীরা পড়তো! ইহুদিদের আর কপ্টিক ক্রিশ্চানদের প্রার্থনা রুকু সেজদাসহ নামাজের মতোই। আইসিস তো মাজার, এমনকি কাবা শরিফ, রওজা শরিফ সব ভেঙে ফেলার কথাও বলছে। এগুলোও নাকি একধরনের মুর্তি পুজো। অনেকে মনে করে, ১৪০০ বছর আগের খাঁটি ইসলাম ধর্মকেই আইসিস অবিকৃত অবস্থায় পালন করছে। আইসিস সেনারা, অনেককে বলতে শুনেছি, পয়গম্বরের যোগ্য উত্তরসূরি।
বিধর্মীদের সংস্কৃতি যদি আইসিস ইসলাম থেকে বাদ দিতে শুরু করে, তাহলে শেষ অবধি কী থাকবে অবশিষ্ট ইসলামে? আইসিস তো এও বলতে পারে, এখন থেকে শুয়োর খাওয়া হালাল, কারণ আরবদেশে শুয়োর খাওয়া হারাম ছিল বিধর্মীদের মধ্যে। এখন থেকে খৎনা করা হারাম, কারণ বিধর্মীরা অর্থাৎ ইহুদিরা খনা করতো। কাফেরদের, বিধর্মীদের, অমুসলিমদের, অবিশ্বাসীদের গল্প আদম হাওয়ার গল্প। ইসলাম শুরু হওয়ার হাজার বছর আগেই এই গল্প লেখা হয়েছে। তাহলে এই গল্পটিকেও আনৈসলামিক বলে বাদ দেওয়া যায়? এভাবে নুহ নবীর গল্প, আবিল। কাবিলের গল্প, এবং আরও অনেক গল্পকে ইসলামের গল্প নয় বলে সরিয়ে রাখতে হয়। ওসব গল্প ইসলামের অনেক আগের, তাহলে ওসবও ডিলিট করে দিতে হয়। বাহাত্তর জন হুরি এবং হাতে গোনা কিছু গল্প ছাড়া সবই তো প্রায় হয় পেগানদের, নয় ইহুদি নাছারাদের গল্প। ইসলাম শুধু অন্য সংস্কৃতি থেকে নয়, ধর্ম গ্রহণ করেছে অন্য ধর্ম থেকে। সব ধারগুলো আজ ফেরত দিলে কি ইসলাম আর ইসলাম থাকবে? আইসিস যদি এভাবে চলতে থাকে যেভাবে চলছে, তাহলে খুব শীঘ্র ইসলাম বলে সম্ভবত কিছুরই আর অস্তিত্ব থাকবে না।
একবিংশ শতাব্দীতে সপ্তম শতাব্দীর সংস্কৃতি আনতে চাওয়া কি বৃদ্ধির কথা! মানুষ পেছনে যাবে নাকি সামনে এগোবে! মানুষ আর কতটা পেছোবে! পিছু হঠতে হঠতে দেয়ালে ঢুকে গেছে পিঠ। যখন নারীর স্বাধীনতা পাওয়ার কথা, মানবাধিকার লজ্বন না হওয়ার কথা, দারিদ্র ঘুচে যাওয়ার কথা, যখন সবারই বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার কথা, যখন মানুষের আরও মানবিক হওয়ার কথা, আলোকিত হওয়ার কথা, তখন লোক ধর্ম ধর্ম করে মাতম করছে, ফিরতে চাইছে অন্ধকার যুগে। আইসিস ছাড়াও অন্ধকারের উপাসনা করার লোক এই পৃথিবীতে আরও আছে।