এখন তোমাদিগকে ঝিনুকদের কথা বলিব। ইহাদের দেহের উপরে দুইখানা খোলা থাকে। সাধারণ শামুকদের যেমন মুখ, শুঁয়ো, চোখ ইত্যাদি আছে, ইহাদের তাহা নাই। তোমাদের পুকুর হইতে একটা ঝিনুক আনিয়া কাঁচের পাত্রে রাখিয়া পরীক্ষা করিয়ো। দেখিবে, দুই খোলার জোড়ের জায়গা হইতে ঠোঁটের মত কতকটা মাংস বাহির হইয়াছে।
ঝিনুকের খোলা গ্রীষ্মকালে পুকুরের জল শুকাইলে অনেক পাওয়া যায়। তোমরা দু’খানা খোলা লইয়া পরীক্ষা করিলে দেখিবে, খোলার ভিতরে একএকটি করিয়া দাগ আছে। ঐ দাগের জায়গায় ঝিনুকদের দেহের মোটা মাংসপেশী লাগানো থাকে। ইহা সঙ্কুচিত বা প্রসারিত করিয়া ঝিনুকেরা ইচ্ছামত খোলার মুখ খুলিতে বা বন্ধ করিতে পারে।
দেহের মধ্যে ঝিনুকদের কান্কো আছে এবং তাহার সহিত কতকগুলি শুঁয়োর মত অংশ লাগানো আছে। এই গুলিকে নাড়িলে খোলার ফাঁক দিয়া কান্কোর উপরে জলের স্রোত বহিতে থাকে। ঝিনুকেরা এই রকমে কান্কোর সাহায্যে জলে-মিশানো অক্সিজেন্ টানিয়া লয়। সাধারণ শামুকদের মত ঝিনুকের দল পেটুক ও হিংস্র নয়। জলের স্রোতের সঙ্গে যে জলচর পোকা-মাকড় উহাদের দেহের ভিতর প্রবেশ করে, ঝিনুকেরা তাহা খাইয়াই বাঁচিয়া থাকে।
অন্য শামুকদের মতই ঝিনুকেরা ডিম পাড়ে। কিন্তু ইহাদের ডিম বড় অদ্ভুত। প্রত্যেক ডিমের গায়ে একএকটা শুঁয়ো লাগানো থাকে। মায়ের পেট হইতে পড়িয়া শুঁয়ো নাড়িয়া সেগুলি ভাসিয়া বেড়ায় এবং শেষে জলের তলায় পড়িয়া যায়। জলের তলাতে ডিম ফুটিলে ঝিনুকের বাচ্চা বাহির হয়।
আমাদের দেশে সকলে ঝিনুকের মাংস খায় না। কিন্তু ইউরোপ ও আমেরিকায় এই মাংসের বড়ই আদর। ঐ সকল দেশে হাজার হাজার লোক সমুদ্র হইতে ঝিনুক ধরিয়া বাজারে বিক্রয় করে। আমেরিকার এক নিউ-ইয়র্ক সহরেই বৎসরে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকার ঝিনুকের মাংস বিক্রয় হয়।
সমাপ্ত