এখানে আর এক-রকম ফড়িঙের ছবি দিলাম। তোমরা নিশ্চয়ই এই রকম পোকা বাগানের শুক্নো ঘাসের চিত্র ৬৮
ঘাসের মত ফড়িং মধ্যে দেখিয়াছ। দেখিলে মনে হয় যেন, ইহারা এক একটি শুক্নো ঘাস। কিন্তু ভালো করিয়া দেখিলে ইহাদিগকে ফড়িং ভিন্ন আর কিছুই মনে হইবে না। শুক্নো ঘাসের রঙের সঙ্গে নিজের গায়ের রঙ্ মিলাইয়া ঠিক ঘাসের মত চেহারায় ইহারা মাঠে পড়িয়া থাকে। এই জন্য পাখী ব্যাঙ প্রভৃতি শত্রুরা ইহাদিগকে প্রাণী বলিয়া চিনিতে পারে না। এই ফড়িংরাও ছোট পোকা-মাকড় ধরিয়া খায়।
গোবরে পোকা ও মাছির বাচ্চারা নোংরা জিনিস খাইয়া আমাদের অনেক উপকার করে। কিন্তু ফড়িদের কাছে আমরা সে-রকম কোনো উপকারই পাই না। অপকার করাই ইহাদের স্বভাব। বাগানের গাছপালা ইহাদের জ্বালায় নষ্ট হইয়া যায়। হয় ত তোমরা পঙ্গপাল দেখিয়া থাকিবে। লক্ষ লক্ষ ফড়িং লইয়া ইহাদের এক একটা দল হয়। যখন পঙ্গপাল আকাশ দিয়া উড়িয়া চলে, তখন মনে হয় যেন একখানা মেঘ ভাসিয়া যাইতেছে। কোনো শস্যের ক্ষেত্রে পড়িলে সেখানকার একটি গাছও আস্ত রাখে না। সাধারণ ফড়িং ও পঙ্গপালের অত্যাচারে পৃথিবীর নানা দেশের যে কত ক্ষতি হয়, তাহার হিসাবই হয় না।
ফড়িংরা যখন সন্ধ্যার সময়ে উড়িতে আরম্ভ করে তখন একবার ফড়্-ফড়্ শব্দ শুনিতে পাওয়া যায়। এই শব্দ ইহারা মুখ দিয়া করে না। উড়িবার সময়ে উহাদের পায়ের গায়ে সম্মুখের ডানা জোড়াটা ঘষা পাইয়া ঐ রকম শব্দ উৎপন্ন করে।
৬.৮.২ ঋজুপক্ষ পতঙ্গ : উচ্চিংড়ে ও ঘুর্ঘুরে পোকা
উচ্চিংড়ে ও ঘুর্ঘুরে পোকা
উচ্চিংড়ে ফড়িংজাতীয় পতঙ্গ কিন্তু ইহাদের আকৃতি-প্রকৃতি ও জীবনের ইতিহাস সকলি পৃথক্। ইহাদের চেহারা অতি কদর্য্য। দুটা লম্বা শুঁয়ো মাথা হইতে বাহির হইয়া পিঠের উপরে পড়িয়া থাকে। কয়েক জাতি ছোট উচ্চিংড়ের শুঁয়ো দেহের চেয়েও লম্বা হইতে দেখা যায়। ইহাদের প্রায় সকলেরি পিছনের পা দুটা লম্বা। এই পা দিয়া তাহারা ফড়িঙের মত লাফাইয়া চলে। ইহাদেরো দুখানা মোটা এবং দুখানা পাত্লা ডানা আছে। পাত্লা ডানা জোড়াটি এ-রকমভাবে পিঠের উপরে ভাঁজ করা থাকে যে, তাহার পিছনের অংশ দেখিলে মনে হয় যেন উহা হুল। কিন্তু ইহাদের পিছনে সত্যই হুল থাকে, তাহা দিয়া উহারা মাটির তলায় ডিম পাড়ে।
এখানে উচ্চিংড়ের একটা ছবি দিলাম। দেখ, ইহার মাথাটা ফড়িঙের মাথার চেয়ে কত মোটা।
সন্ধ্যা হইলেই বাগানের ঝোপ-ঝাপ ও জঙ্গল হইতে যে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ বাহির হয় তাহা তোমরা অবশ্যই শুনিয়াছ। এই শব্দের বিরাম দেখা যায় না। ঠিক কোন্ জায়গা হইতে শব্দ বাহির হইতেছে, তাহাও ভালো বুঝা যায় না। ঘরের বা বারান্দার কোণে যদি ময়লা জমা থাকে, তবে সেখান হইতেও এই ঝিঁ ঝিঁ শব্দ শুনা যায়। ঝিঁ ঝিঁর শব্দ মন্দ লাগে না, কিন্তু এক এক সময়ে সেই শব্দ এমন জোরে আসিয়া কানে ঠেকে যে, তাহাতে কষ্ট বোধ হয়। তোমরা যদি লক্ষ্য কর, তবে দেখিবে, বর্ষার শেষেই ঝিঁঝিঁর শব্দ বেশি শুনা যায়। কোন্ পোকারা এই শব্দ করে, তাহা বোধ হয় তোমরা জান না। আমরা যাহাদিগকে উচ্চিংড়ে বলিতেছি, তাহারাই বন-জঙ্গলে ও গর্ত্তে থাকিয়া ঐ শব্দ করে। স্ত্রী-উচ্চিংড়েরা নিরীহ প্রাণী; পুরুষেরাই অবিরাম শব্দ করিয়া সমস্ত রাত্রি জাগিয়া কাটায়।
উচ্চিংড়েরা কি রকমে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ করে, তাহা বোধ হয় তোমরা জান না। বেহালা বা এস্রাজের তারের উপরে ছড় ঘসিলে, কেমন সুন্দর শব্দ বাহির হয় তাহা তোমরা জান। তারের উপরে ছড় টানিলে, তার কাঁপিতে থাকে এবং ইহাতে শব্দ উৎপন্ন হয়। উচ্চিংড়েরা এই রকমে তাহাদের একখানা ডানার গায়ে আর একখানা ডানা ঘষিয়া ঝিঁ ঝিঁ শব্দ বাহির করে। উহারা মুখ দিয়া শব্দ করে না।
ছোট আকারের উচ্চিংড়েরা ঘরের কোণে, দেওয়ালের ফাটালে বা আধপচা লতাপাতা প্রভৃতি আবর্জ্জনার তলায় লুকাইয়া দিন কাটায় এবং রাত্রি হইলেই সেই সব জায়গায় থাকিয়া ঝিঁ ঝিঁ শব্দ করে। বড় উচ্চিংড়েরা এরকম জায়গায় থাকে না। তাহারা মাটির তলায় রীতিমত গর্ত্ত করিয়া বাস করে। তোমরা উচ্চিংড়ের গর্ত্ত দেখ নাই কি? একটা আধুলির যতটা ফাঁদ প্রায় সেই রকম ফাঁদের যে-সব গর্ত্ত বাগানের বা মাঠের সমতল জায়গায় দেখা যায়, সেগুলি প্রায়ই উচ্চিংড়ের গর্ত্ত। সম্মুখের পা ও মুখ দিয়া ইহারা অল্প সময়ের মধ্যেই এই-রকম গর্ত্ত খুঁড়িতে পারে। গর্ত্তে খানিকটা জল ঢালিয়া দিলে উচ্চিংড়েরা তাড়াতাড়ি গর্ত্তের বাহির হইয়া পড়ে।
আমাদের ঘরের ভিতরে যে-সকল উচ্চিংড়ে থাকে তাহাদিগকে কখনো কখনো দুধের বাটিতে ও তেলের পাত্রে পড়িয়া মরিতে দেখা যায়। ইহাতে মনে হয়, উচ্চিংড়েরা পিঁপ্ড়ের মত দুধ ও মিষ্টান্ন খাইতে ভালবাসে। কচি ঘাস পাতা বা গাছের কচি শিকড় প্রভৃতিও ইহাদের প্রিয় খাদ্য।
ইহারা ফড়িংদের মতই মাটির তলায় ডিম পাড়ে। ডিম ফুটিয়া বাচ্চা বাহির হইতে এবং সেই বাচ্চাদের সম্পূর্ণ আকার পাইতে প্রায় এক বৎসর কাটিয়া যায়।
ঘুর্ঘুরে পোকা (Mole Crickets) তোমরা নিশ্চয়ই দেখিয়াছ। ইহারা উচ্চিংড়েদেরই জ্ঞাতি। কিন্তু আকারে ইহারা প্রকাণ্ড হয়, এবং সম্মুখের দুখানি পায়ে বড় বড় দাঁত লাগানো থাকে। এই পা দিয়া ইহারা চট্পট্ মাটি খুঁড়িয়া গর্ত্ত তৈয়ার করিতে পারে। রাত্রিতে ইহারা ঘরে দুয়ারে আসিয়া ঘুর্-ঘুর্ করিয়া চারিদিকে ঘুরিয়া বেড়ায়। বোধ হয় এই জন্যই ইহাদিগকে ঘুর্ঘুরে পোকা বলা হয়। বারো চৌদ্দ হাত গভীর গর্ত্ত খুঁড়িয়া ইহারা মাটির তলায় বাস করে এবং মাটির তলায় যে-সব ছোট পোকা-মাকড়ের বাসা থাকে, মাটি খুঁড়িয়া সেগুলিকে খাইয়াই বাঁচিয়া থাকে। ঘুর্ঘুরে পোকারাও গাছপালার পরম শত্রু। বাগানের গাছের কচি শিকড় কাটিয়া খাইয়া ইহারা বড় ক্ষতি করে।
৬.৮.৩ ঋজুপক্ষ পতঙ্গ : আরসুলা
আর্সুলা