১০, খগেন্দ্রনাথ মিত্র : (ক) জন্ম চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ পাদে, [পদামৃত মাধুরী পৃ. ৪৮]
(খ) জন্ম : ১৩৯০ খ্রীস্টাব্দে (বৈষ্ণব রস সাহিত্য)।
১১. সতীশচন্দ্র রায় : জন্ম ১৩৮০ খ্রীস্টাব্দ এবং শতাধিক বৎসর সুস্থ শরীরে জীবিত থাকিয়া নানা গ্রন্থ রচনা করেন [পদকল্পতরু ৫ম খণ্ড পৃ. ১৬৬-১৬৭]
১২. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ : জন্ম ১৩৫৪ এবং ১৪৬০ খ্রীস্টাব্দেও বিদ্যাপতি সজ্ঞানে সুস্থ শরীরে বিদ্যমান ছিলেন। রুদ্ৰসিংহের রাজত্বকালে (১৪৭৫ থেকে শুরু) বিদ্যাপতির মৃত্যু হয়।
(ক) বাংলা সাহিত্যের কথা, ২য় খণ্ড, পৃ. ৭২-৭৬। বিদ্যাপতি শতক, ভূমিকা পৃ.–১০)
১৩. সুকুমার সেন (ক) ১৪৬০ খ্রীস্টাব্দের পর বিদ্যাপতি বেশিদিন জীবিত ছিলেন বলিয়া মনে হয় না (বিদ্যাপতি গোষ্ঠী, পৃ. ২২-২৩) (খ) বিদ্যাপতি ১৪৬০ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত জীবিত, সমর্থ ও অধ্যাপনরত ছিলেন (বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস, ৩য় সং ১ম খণ্ড, পূর্বার্ধ, পৃ. ৩৮৩)।
১৪. বিমান বিহারী মজুমদার : ১৩৮০ খ্রীস্টাব্দের কাছাকছি সময়ে বিদ্যাপতির জন্ম এবং ১৪৬০ খ্রীস্টাব্দে বিদ্যাপতি জীবিত ছিলেন প্রমাণিত হইতেছে। (বিদ্যাপতির পদাবলী, ভূমিকা পৃ.)।
১৫. উমেশ মিশ্র : কবির জীবকাল ১৩৬০ থেকে ১৫০০ খ্রীস্টাব্দের মধ্যে। বিদ্যাপতি ঠাকুর (হিন্দুস্থানী একাডেমী, এলাহাবাদ ১৯৩৭ খ্রীস্টাব্দ পৃ ৩৬-৩৭)
১৬. শিবনন্দন ঠাকুর : জন্ম ১৩৫১ ও মৃত্যু ১৪৪৮ খ্রীস্টাব্দ। (মহাকবি বিদ্যাপতি পৃ. ৩৭-৩৯)
১৭. জয়কান্ত মিশ্র : জন্ম ১৩৬০ ও মৃত্যু ১৪৩৭ খ্রীস্টাব্দ ( History of Maithili literature )।
১৮. সুখময় মুখোপাধ্যায় : জন্ম ১৩৭০ ও মৃত্যু ১৪৬০ খ্রীস্টাব্দের মতো সময়ে। (বাংলা সাহিত্যের কালক্রম পৃ. ৪৭-৪৮)
১৯. অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় : জন্ম আ. ১৩৮০ ও মৃত্যু আ. ১৪৬০ খ্রীস্টাব্দ, (বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৭৮-৭৯)।
২০. সুভদ্র ঝা : মৃত্যু ১৪৬০ খ্রীস্টাব্দের পরে। ( Songs of Vidyapati, Introduction)
লক্ষণীয়, এর মধ্যে অনেকেই বিদ্যাপতির মৃত্যু সন ১৪৪৮ অথবা ১৪৬০ খ্রীস্টাব্দ ধরেছেন। যারা ১৪৪৮ সন বলে মনে করেন তাদের সিদ্ধান্তের ভিত্তি হচ্ছে বিদ্যাপতির রচনা বলে অনুমিত একটি পদ :
সপন দেখল হম শিবসিংহ ভূপ
বতিস বরস পর সামর রূপ।
বহুত দেখল হম গুরুজন প্রাচীন।
অব ভেলহু হম আয়ুবিহীন। [ নগেন্দ্র গুপ্ত : বসুমতী সং পৃ. ২৩৮ পদ সংখ্যা–১১ মিত্র ও মজুমদার পদসংখ্যা ৯১৪]
এঁরা শিবসিংহের মৃত্যু সন ধরেছেন ১৪১৫-১৬ খ্রীস্টাব্দ এবং বিশ্বাস করেছেন পদোক্ত স্বপ্নফল অবশ্যম্ভাবী। কাজেই ১৪১৬+৩২=১৪৪৮ খ্রীস্টাব্দেই বিদ্যাপতির মৃত্যু হয়েছিল। কেননা ব্ৰহ্মবৈবর্ত পুরাণ-মতে স্বপ্ন মিথ্যে হবার নয়।
আর যারা বিদ্যাপতির মৃত্যু সন ১৪৬০ খ্রীস্টাব্দ বলে নিরূপণ করেছেন তাঁদের দলিল হচ্ছে একটি পুথির লিপিকাল। হলায়ুধ মিশ্রের ব্রাহ্মণ সর্বস্ব গ্রন্থের একটি প্রতিলিপি তৈরি করেছিলেন বিদ্যাপতির ছাত্র রূপধর। পুষ্পিকায় লিপিকাল ও জীবিত বিদ্যাপতির উল্লেখ আছে। যথা :
লসং ৩৪১ মুড়িয়ার গ্রামে সক্রিয় সদুপাধ্যায় নিজকুল কুমুদিনী চন্দ্রবাদি মওভ সিংহ পরম সচ্চরিত্র পবিত্র শ্রীবিদ্যাপতি মহাশয়েভ্য পঠিতা ছাত্র শ্রীরূপ ধরেণ। লিখিত মদঃ পুস্তকম।
৩৪১ লক্ষ্মণ সংবেতের সঙ্গে ১১১৯ যোগ করেই তারা ১৪৬০ খ্রীস্টাব্দ পেয়েছেন। কিন্তু ৩৪১ এর সঙ্গে ১০৮০, ১১০৮ কিংবা ১১২৯ যোগ করিলে যথাক্রমে ১৪২১ ১৪৪৯ এবং ১৪৭০ খ্রস্টাব্দও পাওয়া যায়। তবে পুস্পিকা সূত্রে মনে হয় বিদ্যাপতি তখন যশ ও মনে অনন্য, কাজেই লিপিকাল ১৪৪১ খ্রীস্টাব্দ ধরাই সঙ্গত। বিশেষ করে যিনি নেপালের দ্রৌণবাররাজ পুবাদিত্যের আশ্রয়ে (রাজাবনৌলি গাঁয়ে) থেকেও জীবকার্জনের জন্যে লিখনাবলী রচনা করেছেন ২৯৯ লং সংবতে তথা (২৯৯+১১২৯) ১৪২৮ খ্রীস্টাব্দে বা তৎপরে, তার তখনো খ্যাতি-প্রতিপত্তি উক্ত সব বিশেষণের আনুপাতিক হয়ে না-উঠারই সম্ভাবনা।
বিদ্যাপতি নাকি তালপাতায় একখানি ভাগবতের প্রতিলিপি তাৈন করেছিলেন। তার পুষ্পিকায় বিদ্যাপতির নাম ও অস্পষ্ট লিপিকাল রয়েছে : শুভমস্ত সৰ্ব্বর্থগতা সংখ্যা লং ৩০৯ শ্রাবণ শুদি ১৫ কুজে রাজাবনৌলি গ্রামে শ্রী বিদ্যাপতের্লিপিরিয়মিতি। দ্বিারবঙ্গের রাজগ্রন্থাগারে রক্ষিত]।
বিস্ফী গাঁয়ের কবি বিদ্যাপতি কিংবা রাজসভার কবি ও রাজপণ্ডিত বিদ্যাপতি ১৪৩৮ সনেও রাজাবনৌলি গায়ে বসে ভাগবত নকল করেছেন, এ কথা বিশ্বাস করা কঠিন। পদ্মসিংহের মৃত্যু ও নরসিংহের সিংহাসন প্রাপ্তির সন্ধিকালে হয়তো রাজনৈতিক বিপর্যয়ের ফলে কবি নেপালে দ্রৌনবারের রাজার আশ্রয় নিয়েছিলেন। লিখনাবলী সূত্রে বোঝা যায় তিনি ১৪২৮ খ্রীস্টাব্দেও সেখানে ছিলেন। কিন্তু তাই বলে আরো দশ বছর সেখানে বাস করার কথা নয়। কেননা, তিনি নরসিংহ পরিবারের প্রতি অর্জন করেছিলেন। কাজেই উক্ত প্রতিলিপি হয়তো অন্য কোননা বিদ্যপতির কৃতি। নাম-সাদৃশ্যে গুরুত্ব আরোপ না-করাই সঙ্গত। আর (৩০৯+১১২৯=) ১৪৩৮ খ্রীস্টাব্দেই এ পুথি লিপীকৃত। কেননা ঐ বছরের শ্রাবণ মাসের শুদি ১৫ বা পূর্ণিমা তিথি মঙ্গলবারে পড়েছিল এবং ঐদিন তারিখ ছিল ৫ই আগস্ট।