রাজেন্দ্রলাল মিত্রই প্রথম (১৮৫৮-৫৯ সনে) বিবিধার্থ সংগ্রহে বঙ্গ ভাষার উৎপত্তি নামক প্রবন্ধে বিদ্যাপতির পরিচয় দেন। এর পর আলোচনা করেন রামগতি ন্যায়রত্ন তাঁর বাঙ্গালা ভাষা ও বাঙ্গালা সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাবে (১৮৭২ সনে)। এসব ছাড়াও হরিমোহন মুখোপাধ্যায় কবি চরিতে (১৮৬৯ সন), মহেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বঙ্গ ভাষার ইতিহাসে (১৮৭২ সনে) এবং মহেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বাঙ্গালা সাহিত্য সংগ্রহে (১৮৭২) বিদ্যাপতির লোকশ্রুতিমূলক পরিচয় দান করেন।
কিন্তু বিদ্যাপতি সম্বন্ধে যথার্থ ঐতিহাসিক অনুসন্ধিৎসা শুরু হয় জন বীমসের প্রবন্ধ দিয়ে। এ প্রবন্ধের সমালোচনা স্বরূপ রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় বঙ্গ দর্শন পত্রিকায় বিদ্যাপতি নামে তথ্যবহুল একটি প্রবন্ধ লেখেন। জন বীমস রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বিদ্যাপতি সম্বন্ধে আর একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত করেন Indian Antiquary-তে। এরপর G. A. Grierson ১৮৮১ সনে তাঁর An introduction to the Maithili language of North Bihar, containing a grammar, Chrestomathy and vocabulary ( vol II) acts গ্রন্থে এবং পরবর্তী দুটো প্রবন্ধে বিদ্যাপতির বিশেষ পরিচয় দেন। তারপর জগদ্বন্ধুভদ্র ১৮৭৪ সনে মহাজন পদাবলী (১ম খণ্ড) নামে বিদ্যাপতির পদাবলী সংকলন করেন। আর ১৮৭৮ সনে। অক্ষয়চন্দ্র সরকারের প্রাচীন কাব্য সংগ্রহ (২য় খণ্ড) গ্রন্থে বিদ্যাপতির পদ সংকলিত হয়। ১৮৯২ সনে (১২৮৫ বঙ্গাব্দে) প্রকাশিত হয় সারদাচরণ মিত্রের বিদ্যাপতির পদাবলী নামক সংকলন গ্রন্থ। এরপর ১৯০৯ সনে (১৩১৬ বঙ্গাব্দে) নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত সংগৃহীত ও সম্পাদিত প্রখ্যাত বিদ্যাপতি ঠাকুরের পদাবলী প্রকাশিত করেন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ। পরে বসুমতী সাহিত্য মন্দির থেকে নগেন্দ্র গুপ্ত সংকলিত বৈষ্ণব মহাজন পদাবলী (২য় খণ্ড) : মহাকবি বিদ্যাপতির পদাবলী প্রকাশিত হয় ১৩৪২ বঙ্গাব্দে (১৯৩৫ সনে)। এর এক বছর আগে খগেন্দ্রনাথ মিত্র ও অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ বের করেন (১৩৪১ বাং ১৯৩৪ সন) বিদ্যাপতি পদাবলী। ১৩৫৯ বঙ্গাব্দে তথা ১৯৫২ সনে প্রকাশিত হয় খগেন্দ্রনাথ মিত্র ও ডক্টর বিমানবিহারী মজুমদারের বিদ্যাপতি পদাবলী, ডক্টর শহীদুল্লাহর সংকলিত বিদ্যাপতি শতক বের হয় ১৩৬১ বঙ্গাব্দে বা ১৯৫৪ সনে। এগুলো ছাড়াও কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদের বিদ্যাপতির বঙ্গীয় পদাবলী (১৮৯৪ সন), পঞ্চানন তর্করত্নের বিদ্যাপতি পদাবলী (১৮৯৫) হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর নবাবিষ্কৃত বিদ্যাপতি পদাবলী (১৯০০-০৬), কীর্তিলতা (১৯২৫) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এসব ছাড়াও রয়েছে ব্রজানন্দ সহায়-এর মৈথিল কোকিল বিদ্যাপতি (১৯১০), নগেন্দ্রনাথ গুপ্তের বিদ্যাপতি ঠাকুর (১৯১০), রামকৃষ্ণ শর্মার বিদ্যাপতি কি পদাবলী (১৯৩১), বসন্ত কুমার ময়ূরের বিদ্যাপতি কি পদাবলী (১৯৫২), শম্ভু প্রসাদের মৈথিল কোকিল বিদ্যাপতির সংক্ষিপ্ত পদাবলী (১৯৪৭), লালা দেবেন্দ্র সিংহ ও সূর্যাবলী সিংহের বিদ্যাপতি (১৯৫০), সুভদ্র ঝা-র বিদ্যাপতি Songs of Vidyapati (১৯৫৪), অরবিন্দ ঘোষের Songs of Vidyapati (১৯৫৬) প্রভৃতি। এগুলো ছাড়াও যে-কোনো পদাবলী সংকলন গ্রন্থে বিদ্যাপতির পদ রয়েছে, এবং সবাই বিদ্যাপতির অল্প বিস্তর পরিচয় দেবার চেষ্টা করেছেন। বিদ্যাপতির কীর্তিলতা পুরুষ পরীক্ষা ও তাঁর স্মৃতিগ্রন্থগুলোর সম্পাদনা কিংবা আলোচনা প্রসঙ্গেও বিদ্যাপতি সম্বন্ধে নানা তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা হয়েছে। তাছাড়া বাঙলা ও মিথিলার রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক ইতিহাসেও রয়েছে বিদ্যাপতি সম্পর্কে নানা তথ্য।
এবার বিদ্যাপতির জন্ম-মৃত্যুর কাল সম্বন্ধে বিভিন্ন বিদ্বানের মতগুলো এখানে তুলে ধরছি।
১. সারদাচরণ মিত্র : খ্রীস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধেই তাঁহার পদাবলী প্রকাশিত হইয়াছিল। (বিদ্যাপতির পদাবলী ১৮৭৮ খ্র.)
২. জি. এ. গ্রিয়ার্সন : Vidyapati flourished and was a celebrated author during at least the first half of the 15th century (Introduction, p 11, Puruhsa Pariksa).
৩. নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত : ক)] বিদ্যাপতি ১৩৫৮ খ্রীস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং মৃত্যু হয় ১৪৪৮ খ্রীস্টাব্দে (বিদ্যাপতি ঠাকুরের পদাবলী)। [–বা, সা. প. সং ভূমিকা পৃ.]।
খ) বিদ্যাপতি সাতাশী-অষ্টাশী বৎসর বয়স পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। মহাকবি বিদ্যাপতির পদাবলী, বসুমতী সাহিত্য মন্দির পৃ. ১]
৪. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী : জীবনকাল ১৩৪৭-১৪৫৬ খ্রীস্টাব্দ (কীর্তিলতা, ভূমিকা পৃ. ]
৫. কুমার গঙ্গানন্দ সিংহ : জন্মসন ১৩৫০ খ্রীস্টাব্দে। (বিদ্যাপতি কি পদাবলী পৃ. ১১, ৩১)
৬. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় : End of 14th, begining of 15th century. (Original and Development of Bengali language vol. 1)
৭. দীনেশ চন্দ্র সেন : জন্মসন ১৩৫৮ কিংবা তদ্রূপ কোনো সময় (বঙ্গভাষা ও সাহিত্য)।
৮. বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় : জন্ম ১৩৭২, মৃত্যু ১৪৪৮ খ্রীস্টাব্দ, [Journal of Development of Letters, Calcutta. vol. XVI, p 36]
৯. অমূল্য চরণ বিদ্যাভূষণ : জন্ম : ১৩৫০ খ্রীস্টাব্দের পর নিকটবর্তী কোনো সময়। [বিদ্যাপতির পদাবলী : ভূমিকা]।