কামেশ্বর [ ঐনবার বংশ ]
ভোগীশ্বর (আ. ১৩৫৩–৫৫- ৮০ খ্রী.)
পত্নী পদ্মাদেবী।
ভবসিংহ
১৪০৪– ০৫}
হরসিংহ
ত্রিপুরাসিংহ
গণেশ্বর
গরুড়নারায়ণ
দেবসিংহ।
(পত্নী হাসিনীদেবী। কীর্তিসিংহ বীরসিংহ রাওসিংহ ( ১৪০৬-৯ এবং ১৪১৬-১৭ [ ১৪০২-০৪ খ্রী.]
অর্জুন. অমর [ অরাজকতা ১৪২৫-২৯ খ্রী:]
রূপনারায়ণ শিবসিংহ
পদ্মসিংহ পিত্নী লক্ষ্মীদেবী ] পত্নী বিশ্বাসদেবী। ( ১৪১০– ১৫ খ্র.]
১৪১৮-২৫ খ্রী. 1 [ এঁর জ্ঞাতিভ্রাতা : রাঘব ও রুদ্ৰসিংহ
দর্পনারায়ণ নরসিংহ পিত্নী ধীরমতি ] [ ১৪৩০– ৫৩ খ্রী. ]
যুবরাজ ভৈরবসিংহ
চন্দ্ৰসিংহ
কংসনারায়ণ ধীরসিংহ পিত্নী সুরমাদেবী ] [ ১৪৫০– ৫৫ খ্র.)
জগন্নারায়ণ
রাঘবসিংহ। [ পত্নী স্বর্ণমতীদেবী
রুদ্ৰসিংহ
গদাধর
ভোগীশ্বর থেকে রুদ্ৰসিংহ অবধি কামেশ্বর বংশীয় সব রাজা, রাজকুমার ও রানীর প্রশংসাসূচক ভণিতা দিয়েছেন বিদ্যাপতি তাঁর রচিত পদে। গ্রন্থগুলোও রচিত হয়েছে তাঁদের কারো-না-কারো নির্দেশে। বংশ তালিকাটি দীর্ঘ হলেও কাল-পরিসর দীর্ঘ নয়। খুব দীর্ঘায়ু না হয়েও এমনি স্বল্পজীবী অনেক সুলতানের (গিয়াসুদ্দীন বলবন থেকে গিয়াসুদ্দীন তুঘলক অবধি প্রতিপোষণ পেয়েছিলেন কবি জামীর খুসরুও (১২৫৩-১৩২৫ খ্রী.]। ভোগীশ্বর থেকে রুদ্ৰসিংহ অবধি কালের বিস্তৃতি হবে মোটামুটি ৭৫ বৎসর (আনু ১৩৮০-১৪৫৫ খ্রীস্টাব্দ]। বিদ্যাপতি দীর্ঘজীবী ছিলেন বলে লোকশ্রুতি আছে। অতএব, বিদ্যাপতির আয়ু [ ১৩৬৪– ১৪৫৪ খ্রী.] নব্বই বছর হলেই ভোগীশ্বর থেকে রুদ্ৰসিংহ অবধি সবাই তার জ্যেষ্ঠ, সমবয়স্ক কিংবা কনিষ্ঠ সমসাময়িক হতে পারেন।
আমাদের ধারণা দর্পনারায়ণ নরসিংহের রাজত্বকালেই যুবরাজ ছিলেন। ধীরসিংহ এবং ভৈরবসিংহ রাজত্ব করেছেন পনেরো শতকের শেষদশকে (মুদ্রার প্রমাণে)। ধীরসিংহের পুত্র রাঘব কিংবা পৌত্র রুদ্ৰসিংহ দর্পনারায়ণ নরসিংহের আমলেই যথাক্রমে প্রৌঢ় ও যুবক ছিলেন। আর সৌজন্যের ভাষায় রাজপরিবারের লোকমাত্রই রায় বা রাজা। এইজন্যে তাঁরা যথার্থ রাজা ছিলেন। বলে মনে করা অসঙ্গত। এ প্রসঙ্গে দীর্ঘজীবী আওরঙজীবের বংশধারা–বাহাদুর শাহ– আজিমুশোন–ফররুখশিয়র প্রভৃতি স্মর্তব্য। আওরঙজীবের মৃত্যুকালে প্রপৌত্র ফররুখশিয়রই প্রায়-প্রৌঢ়।
বিদ্যাপতি যেসব গ্রন্থ রচনা করেছেন, সেগুলোর আদেষ্টানুক্রমিক তালিকা এরূপ :
গ্রন্থ ——— আদেষ্টা
১. কীর্তিলতা ——– কীর্তিসিংহ।
[১৪০২-০৪]।
২. কীর্তিপতাকা ——– রূপনারায়ণ
৩. পুরুষ পরীক্ষা ——– শিবসিংহ
৪. গোরক্ষ বিজয় [নাটক] —- [১৪১০-১৫ খ্রী.]
৫. ভূপরিক্রমা ——— গরুড়নারায়ণ দেবসিংহ।
[১৪১৬-১৭ খ্রী.]
৬. শৈবসর্বস্বসার ——– পদ্মসিংহ ও তৎপত্নী বিশ্বাসদেবী
৭. গঙ্গাবাক্যাবলী। ——- [১৪১৮-২৫ খ্রী.]
৮. লিখনাবলী ——— দ্রোণবারের রাজা পুরাদিত্য
[ল, সং ২৯৯+১১২৯=১৪২৮ খ্রী.]
দ্রষ্টব্য : JASB, 1915, p.422 ]
৯. বিভাগসার ———– দর্পনারায়ণ নরসিংহ।
১০. দানবাক্যাবলী ——– নরসিংহ পত্নী ধীরমতি
১১. দুর্গাভক্তিতরঙ্গিণী —— কংসনারায়ণ ধীরসিংহ আঃ ভৈরবসিংহ [রূপনারায়ণ ও হরিনারায়ণ]।
১২. ব্যাড়ীভক্তিতরঙ্গণী ——- দর্পনারায়ণ নরসিংহ
[৯-১২ —- ১৪৩০-৫৫ খ্রী]
১৩. বর্ষকৃত্য বা ক্রিয়া-অপ্রাপ্ত।
১৪. গয়াবাক্যাবলী বা গয়াপত্তন–অপ্রাপ্ত।
বিদ্যাপতি ব্যাড়ীভক্তি তরঙ্গিণীতে প্রসঙ্গক্রমে দুর্গা ভক্তিতরঙ্গিনীর উল্লেখ করেছেন–অনুত্তং যদন্যম দুর্গাভক্তিতরঙ্গিন্যাম অনুসন্ধেয়ং গ্রন্থ কলেবর শঙ্কয়াএ পুণর্লিখিতমিতি–গণেশচরণ বসুর মতে স্মৃতিকারেরা নিজের রচনা উল্লেখ প্রসঙ্গেই সাধারণত অনুসন্ধেয়ং শব্দটি প্রয়োগ করতেন।
এ থেকে আমরা বুঝতে পারি ব্যাড়ীভক্তি তরঙ্গিণী দুর্গাভক্তি তরঙ্গিণীর পরে রচিত। বিদ্বানদের মতে দুর্গাভক্তি তরঙ্গিণী ভৈরব সিংহের আদেশে প্রণীত। ভৈরব সিংহের পিতা নরসিংহ দর্পনারায়ণ যে ১৪৫৩ খ্রীস্টাব্দ অবধি জীবিত ছিলেন, তার প্রমাণ তার তাম্রশাসন। কাজেই এ সময়ে বা কিছু আগে কিংবা পরে যে ব্যাড়ীভক্তি তরঙ্গিণী রচিত হয়েছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এবং সম্ভবত এটিই বিদ্যাপতির শেষ গ্রন্থ।
সম্ভবত গিয়াসুদ্দীন তুঘলকই (১৩২৪-২৫ খ্রীস্টাব্দে) মিথিলার কর্ণাট-বংশের উচ্ছেদ সাধন করে রাজপণ্ডিত কামেশ্বরকে মিথিলার সিংহাসন দান করেন। মুহম্মদ তুঘলকের রাজত্বকালে হাজী ইলিয়াস ওর্ষে গৌড় সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ ১৩৪৫-৪৬ খ্রীস্টাব্দে বিহার জয় করে হাজীপুর শহরের পত্তন করেন। পরে ফিরোজ তুঘলক ইলিয়াস শাহকে বিতাড়িত করে মিথিলার রাজা করলেন কামেশ্বর-পুত্র ভোগীশ্বরকে। হয়তো তাঁর ভাই ভবসিংহও বিহারের এক অংশ শাসনের অধিকার পান, এবং কীর্তিসিংহের পর ভবসিংহের পুত্র শিবসিংহ বাহুবলে বিহারের একচ্ছত্র অধিপতি হন।
এক বিদ্বানের অনুমান, আরসালান কর্তৃক গণেশ্বর নিহত হওয়ার পরে হয়তো গণেশ্বরের পুত্র বীরসিংহ ও কীর্তিসিংহ দিল্লী ও গৌড় সুলতানের দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করে ব্যর্থ হয়ে জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিম শর্কীর সাহায্য গ্রহণ করেন এবং পরেও নানা রাজনৈতিক বিপর্যয়ে মিথিলারাজকে হয়তো বিভিন্ন দরবারে ধরনা দিতে হয়েছে। এ সূত্রেই মিথিলার দরবারী কবি বিদ্যাপতি–গৌড় সুলতান গিয়াসুদ্দীন আজম শাহ, গৌড়ের সুফী-পীর আলম শাহ (হযরত নূর কুতুব-ই-আলম) অথবা দিল্লীর সৈয়দ বংশীয় সুলতান আলম শাহ (১৪৪৪-৪৮ খ্রী.) দিল্লীর তুঘলক সুলতান নাসিরুদ্দীন নুসরত শাহ (১৩৯৪-৯৯ খ্রী.), গৌড় সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ (১৪৩৩-৫৯ খ্রীস্টাব্দ) শকী হোসেন শাহ বা মখদুম সুলতান হোসেন শাহ, মালিক বাহারুদ্দীন প্রভৃতির প্রশস্তি যোগ করেছেন তাঁর রচিত পদাবলীতে। যথা: