- বইয়ের নামঃ তিন বিঘা
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
তিন বিঘা
০১.
ম্যানিলা রোডের শেষ বাড়িটার সামনে এসে গাড়ি থামালেন মিস কেলেট। বাড়ির দিকে তাকিয়ে মন্তব্য করল কিশোর, দারুণ কটেজ!
বন আর পাহাড়ের কোলে ছবির মত একটা বাড়ি। পুরানো পাথরের দেয়াল, টালির ছাত, পর্দা ঢাকা জানালা। বিরাট বাগানটাতে উজ্জ্বল রঙের ফুলের মেলা। ঝোপঝাড় আর বেডগুলো সব পুরানো ধাচে তৈরি।
ওল্ড-মেনস ভলান্টিয়ার সার্ভিসের একজন সদস্য মিস কেলেট। টীম প্রধানদের একজন। কিশোরও জুনিয়র মেম্বার। আজ ওর আসার কথা ছিল না; যার আসার কথা সে অসুস্থ থাকায় মিস কেলেটের অনুরোধে তাকে আসতে হয়েছে।
হ্যাঁ, কিশোরের হাসিটা ফিরিয়ে দিলেন মিস কেলেট। সেভারনরা এসেছেন এখানে বছরখানেক হলো। কণ্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বললেন, বাড়িটাতে নাকি ভূতের উপদ্রব আছে।
আবার হাসল কিশোর। বুদ্ধিদীপ্ত সুন্দর চোখ দুটো ঝিক করে উঠল। যাহ, ঠাট্টা করছেন!
না, ঠাট্টা করছি না। আমার সামনেই স্ত্রীকে বকাবকি করেছেন মিস্টার সেভারন, ভয় পান বলে। অদ্ভুত সব শব্দ নাকি শুনতে পান মহিলা, ঘরের মধ্যে নাকি ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যায়। কারা নাকি হাসাহাসি করে। বেচারি!
হু। ভূতের গল্প আমার ভাল লাগে। মিসেস সেভারনকে জিজ্ঞেস করে। সব জেনে নিতে হবে।
দেখো, সারাদিন ধাক্কিয়েও দরজা খোলাতে পারো নাকি, অস্বস্তিভরা কণ্ঠে বললেন মিস কেলেট। আজকাল অপরিচিত কাউকে দেখলে দরজাও খুলতে চান না ওঁরা।
কেন?
জানি না। কিছু হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু স্বীকার করলেন না। পুরো ব্যাপারটাই কেমন রহস্যময়।
কান খাড়া হয়ে গেছে কিশোরের। ভাল কোন রহস্য পেলে আর কিছু চায় না সে।
দেখো, মুখ খোলাতে পারে কিনা। বুড়োবুড়ি খুব ভাল মানুষ। বলেও ফেলতে পারেন।
যদি ঢুকতেই না দেন?
হাসলেন মিস কেলেট। যাও, আমি আছি এখানে। দরজা না খুললে পরে যাব। নাকি এখনই সঙ্গে যেতে বলছ?
গাড়ির দরজা খুলল কিশোর। না, আমিই যাই। লাঞ্চ নিয়ে গেছি দেখলে না খুলে পারবেন না। আধঘণ্টা পর এসে নিয়ে যাবেন আমাকে।
ঘুরে গাড়ির পেছনে চলে এল কিশোর। হীটেড ট্রলি থেকে গরম গরম দুই প্লেট রোস্ট বীফ আর এক প্লেট পুডিং বের করল। হাত নেড়ে মিস কেলেটকে চলে যেতে ইশারা করে পা বাড়াল কটেজের মরচে পড়া গেটটার দিকে।
নীল রঙ করা সামনের দরজায় টোকা দিল সে। চিৎকার করে বলল, ওল্ড মেনস ভলান্টিয়ার!
সাড়া নেই।
আবার টোকা দিল সে। জানালায় পর্দা টানা। ভেতরে কেউ আছে কিনা উঁকি দিয়ে দেখার উপায় নেই। দোতলার দিকে তাকাল। ওখানকার বেডরূমের জানালায়ও পর্দা টানা। বাড়ি আছেন তা সেভারনরা?
কি করবে ভাবছে কিশোর, এই সময় ফাঁক হয়ে গেল নিচতলার জানালার পর্দা। দেখা গেল একটা মুখ।
ওল্ড-মেনস ভলান্টিয়ার! সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠল সে। আপনাদের লাঞ্চ নিয়ে এসেছি।
বন্ধ হয়ে গেল ফাঁকটা।
দরজার শেকল খোলার শব্দ। ছিটকানি খুলল। দরজা খুলে দিলেন এক বৃদ্ধা। ছোটখাট মানুষ। মাথার চুল সব সাদা। সন্দেহভরা চোখে তাকিয়ে রইলেন কিশোরের দিকে।
মিসেস সেভারন?
মাথা ঝাঁকালেন বৃদ্ধা, হ্যাঁ।
আপনাদের লাঞ্চ নিয়ে এসেছি। জলদি নিন। ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।
তোমাকে তো চিনি না। মিস কেলেট কোথায়?
আরেক বাড়িতে গেছেন। আমি তার সহকারী। একা পেরে ওঠেন না। তাই আমাকে নিয়ে এসেছেন। আমার নাম কিশোর পাশা।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিশোরের আপাদমস্তক দেখলেন বৃদ্ধা। মুখ ফিরিয়ে ডাকলেন, জন, লাও। কিশোরের দিকে ফিরে অস্বস্তিভরা হাসি হেসে শেকলটা খুলে দিয়ে সরে দাঁড়ালেন। এসো। কিছু মনে কোরো না। আজকাল অপরিচিত কাউকে ঢুকতে দিতে ভয় লাগে আমাদের।
হা, সাবধান থাকা ভাল। চোর-ডাকাতে ভরে গেছে দেশটা।
কিশোর ঘরে ঢুকতেই দরজা লাগিয়ে ছিটকানি তুলে দিলেন বৃদ্ধা। তার হাত থেকে ট্রে-টা নিতে নিতে বললেন, তুমি কি একটু বসবে? আমরা লাঞ্চটা সেরে নিই?
সারুন, সারুন, কোন অসুবিধে নেই। আমি বসছি। মিস কেলেটের ফিরে আসতে সময় লাগবে।
রান্নাঘরে ট্রে-টা রেখে এলেন মিসেস সেভারন। কিশোরকে নিয়ে এলেন বসার ঘরে।
থ্যাংকস, পুরানো, আরামদায়ক একটা সোফায় বসে বলল কিশোর। ওক কাঠে তৈরি ছোট কফি টেবিলে রাখা দুটো ম্যাগাজিন আর একটা ছবির অ্যালবাম। অ্যালবামটা দেখি? মানুষের ছবি দেখতে ভাল লাগে আমার।
দেখো। তবে মানুষের ছবির চেয়ে এই কটেজের ছবিই বেশি।
সেভারনরা লাঞ্চ খেতে বসল। অ্যালবামের পাতা ওল্টাতে লাগল কিশোর। কটেজ আর বাগানটার সুন্দর সুন্দর ছবি। বাগানের ঠেলাগাড়িতে বসা এক বৃদ্ধের ছবি আছে। মিস্টার সেভারনের ছবি, অনুমান করল কিশোর।
প্রথম পাতায় রয়েছে এক যুবকের বেশ কয়েকটা ছবি। খাটো করে ছাটা চুল। লম্বা, সুগঠিত শরীর, ব্রোঞ্জ-রঙ চামড়া। পরনে জিনস আর কলেজ সোয়েটশার্ট। মিসেস সেভারনের সঙ্গে চেহারার অনেক মিল।
অ্যালবাম থেকে মুখ তুলে ঘরের চারপাশে চোখ বোলাল কিশোর। ৫ ঘর। ওক কাঠের মোটা মোটা কড়িকাঠ। ম্যানটলপীসে রাখা মাউন্টে এ ছবি-অ্যালবামে যে যুবকের ছবি আছে তার। অ্যাথেনসের পারথেননের সামনে দাঁড়িয়ে তোলা। কড়া রোদ। পিঠে ঝোলানো ব্যাকপ্যাক। হাসিমুখে ক্যামেরার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।