- বইয়ের নামঃ মার্ডার অ্যাট দ্য ভিকারেজ
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রহস্য, গোয়েন্দা কাহিনী
মার্ডার অ্যাট দ্য ভিকারেজ
১. ভিকারেজ থেকেই গল্পটা শুরু
মার্ডার অ্যাট দ্য ভিকারেজ – আগাথা ক্রিস্টি
অনুবাদ : নচিকেতা ঘোষ
০১.
ভিকারেজ থেকেই গল্পটা শুরু করা যাক।
সেদিন দুপুরে খাবার টেবিলে খেতে বসেছি আমি, আমার স্ত্রী গ্রীসলডা আর ভাইপো ডেনিস।
নানান প্রসঙ্গে গল্প হচ্ছে। কথা প্রসঙ্গে বললাম, কর্নেল প্রথেরো বড্ড গোলমাল বাঁধাচ্ছে। ও যে ব্যাপারে থাকে তাতেই গোলমাল বাঁধায়।
ডেনিস বলল, বুড়োটা বড্ড অহঙ্কারী গোঁয়ার। ওই স্বভাবের জন্যই মনে হয় আগের বউটা তার কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।
গ্রীসলডা বলল, কি হয়েছে বল তো। তোমরা দেখছি লোকটার ওপরে হাড়ে হাড়ে চটা।
আমি বললাম, চটা কি বলছ, কর্নেল প্রথেরোকে যদি কেউ খুন করে তাহলে নিঃসন্দেহে পৃথিবীর একটা বড় কাজ করবে।
ছুঁড়ে ছুঁড়ে না বলে, মোদ্দা ব্যাপারটা বল না। বলল গ্রীসলডা।
বলব কিনা ইতস্তত করছি। কেননা, গ্রীসলডা কোন ব্যাপারটাকেই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে পারে না। সেটা অবশ্য ওর বয়সের দোষ। আমার সঙ্গে ওর কুড়ি বছরের বয়সের ব্যবধান।
সুন্দরীরা সাধারণত চঞ্চলমতি হয়ে থাকে। গ্রীসলডাও সুন্দরী। ওর মানসিক উন্নতির জন্য ধৈর্য ধরে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু চেষ্টা কার্যকরী হয়নি।
মাঝে মাঝে মনে হয় আমার বিয়ে না করাই উচিত ছিল। কেন যে পরিচয় হবার পর ওকে বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলাম বুঝতে পারি না।
সব মানুষের জীবনেই বিয়েটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। খুব চিন্তাভাবনা করে পরস্পরকে ভালভাবে বুঝে বিয়ে করা উচিত। তা না করার ফলেই এখন মানসিক চাপ সয়ে আমাকে সংসার করতে হচ্ছে।
গ্রীসল ফের সাগ্রহে জানতে চাইল, তোমাদের মধ্যে গোলমালটা কি নিয়ে। বল না শুনি।
বললাম, খুবই সাধারণ ব্যাপার। বিপত্তিটা ঘটেছে মিস প্রাইস রিডলের পাউণ্ডের তুচ্ছ একটা নোট নিয়ে।
মিস রিডেল হলেন আমাদের মহাসভার একজন সদস্যা। ওঁর বাবার মৃত্যুবার্ষিকী পালনের সময় সংগ্রহ করা অর্থের সঙ্গেই নোটটা রাখা হয়েছিল। পরে সেটা পাওয়া যায়নি। ঘটনা এটুকুই। কিন্তু এ নিয়ে অভিযোগ করেছিল আমাকে।
আমি অবশ্য তাকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলাম যে কোথাও একটু ভুল করে ফেলেছে। কিন্তু এ ব্যাপার নিয়েই ঝঞ্ঝাট পাকিয়ে ফেলল প্রথেরো।
সেদিনটা ছিল বুধবার। সেদিন সকালে আমি চার্চ ডে স্কুলে পড়াই। অহেতুক মনের ওপর চাপ পড়ায় সারা দিনটাই অস্বস্তিতে কাটাতে হয়েছিল।
সংক্ষেপে ঘটনাটা স্ত্রীকে জানালাম। সে স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে জবাব দিল, কর্নেল থেরো নিশ্চয় তামাসা করেছেন।
একটু থেমে ফের বলল, মানুষটার কথা তো জান, মন মেজাজ ভাল থাকে কি করে। আপনজন বলতে কেউ নেই। নতুন বউ আর মেয়ে দুজনেরই চক্ষুশূল। ওভাবে বলে মিস রিডলের একটু মন ভেজাবার চেষ্টা করেছিলেন সম্ভবত।
–তাই বলে ওই তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে অমন উঠেপড়ে লাগবার কিছু হয়নি। কিছুটা রুক্ষ শোনালো আমার গলা। তার কথার অর্থটা কি দাঁড়াতে পারে তা তার ভেবে দেখা উচিত ছিল। বোধবুদ্ধিহীন মন্তব্য করে চার্চের হিসেবনিকেশ দেখার প্রসঙ্গ পর্যন্ত তুলে ফেলল।
একটু থেমে পরে বললেন, ওকি মনে করে চার্চের তহবিলের টাকা আমি তছরুপ করে থাকি?
গ্রীসলডা কোমল সুরে বলল, ওরকম সন্দেহ তোমাকে কেউ করবে না। আসলে তুমি সন্দেহের এমন ঊর্ধ্বে যে সেটাই তহবিল তছরুপের একটা সুযোগ হয়ে উঠতে পাবে।
এই সময় মেরী ঘরে ঢুকল। আমি কথা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম।
টেবিলে রাইস পুডিং-এর ডিস রেখে মেরী চলে গেলে গ্রীসলডাকে বললাম, কাল সন্ধ্যাবেলা প্রথেরো আসছে। কথা হয়েছে, দুজনে মিলে হিসেব পরীক্ষা করব। আজকের মধ্যেই আমাকে সি.ই.এম-এর জন্য আমার মন্তব্য লিখে রাখতে হবে।
তারপরই আমি প্রসঙ্গান্তরে যাবার চেষ্টা করলাম, ভাল কথা আজ বিকেলে তুমি কি করছ?
গ্রীসলডা হেসে বলল, নতুন করে আর কি করব। দু-চারজন পাড়াপড়শী হয়তো আসবে। তাদের সঙ্গে চা সহযোগে পরচর্চার আসর বসবে আর কি।
কে কে আসবে তোমার আসরে?
গ্রীসলডা বলল, এই ধরো, মিস প্রাইস রিডলে, মিস ওয়েদারাই, মিস হাটনেল। সেই জাঁহাবাজ মহিলা মিস মারপল তো থাকছেনই।
আমি বললাম, তুমি জাঁহাবাজ বললেও মিস মারপলকে কিন্তু আমার বেশ ভালই লাগে। মহিলা রঙ্গরস বোঝেন, নিজেও রসিকা।
–তা যতই থাক, গ্রামের মধ্যে অমন ধুরন্ধর মহিলা দ্বিতীয় নেই। সব ঘটনাই কেমন করে জেনে যান আর সেই ঘটনা থেকে অদ্ভুত সব সিদ্ধান্ত টেনে বার করেন।
-তোমার চায়ের আসরে আমি কিন্তু থাকছি না। ডেনিস বলল আমার স্ত্রীকে।
–কেন কোথায় যাবে?
–প্রথেরো টেনিস খেলার আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
খাওয়াদাওয়ার পাট চুকলে ডেনিস বেরিয়ে গেল। আমি আর গ্রীসলডা পড়ার ঘরে চলে এলাম।
লেখার টেবিলে একটা চেয়ার টেনে বসলাম। গ্রীসলডা টেবিলের ওপরে মুখোমুখি বসল। বলল, একটু ভুল হল বোধহয়।
-কি রকম? জানতে চাইলাম।
–আজকের চায়ের আসরে ডঃ স্টোন, মিস ক্ৰেম আর মিসেস লেসট্রেসকে আসতে বললে ভাল হত। কাল অবশ্য আমি মিসেস লেসট্রেসের বাড়ি গিয়েছিলাম। কিন্তু দেখা হয়নি, বাড়ি ছিল না।