- বইয়ের নামঃ মায়াজাল
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রোমাঞ্চকর গল্প
মায়াজাল
০১.
রবিনের টোকার সাড়া দিল না সোফি।
পাশে দাঁড়ানো মারলার দিকে তাকাল। রবিন। আবার টোকা দিল দরজায়। জবাব নেই এবারেও। উঁকি দিয়ে দেখল রান্নাঘরের টেবিলে ঘাড় গুঁজে বসে আছে সোফি। অবাক হলো। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল।
সোফির সামনে টেবিলে বিছানো একটা পত্রিকা। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস।
কি হয়েছে, সোফি? জিজ্ঞেস করল মারলা। খবর সব ভাল তো?
জবাব দিল না সোফি। দুহাতে গাল চেপে ধরে তেমনি ভঙ্গিতে বসে আছে। অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণ ও, জানা আছে মারলার। তবু অবাক লাগল। আচরণটা স্বাভাবিক নয়।
সোফির পেছনে এসে পিঠে হাত রাখল রবিন, খুব খারাপ কিছু?
গাল থেকে হাত সরিয়ে মুখ তুলে তাকাল সোফি। চোখ লাল। কোন কথা না বলে কাগজের নিচ থেকে গোলাপী রঙের একটা খাম বের করল। বাড়িয়ে ধরল সেটা। হাত কাঁপছে।
কি এটা? বলতে বলতে খামটা নিল রবিন। মুখ খোলা। ভেতর থেকে বের করল একটা চিঠি। অদ্ভুত চিঠি। লিখেছে:
শোনো,
তোমার ধারণা তুমি আমাকে চেনো। আসলে চেনো না। হয়তো ভাবছ আমি তোমার বন্ধু। না, তা-ও নই। আমি তোমার তত্ত্বাবধায়ক। তোমার ভালমন্দ দেখাশোনার দায়িত্ব এখন থেকে আমার। মন দিয়ে শোনো।
এই চিঠির নিচে একসারি নাম দেখতে পাচ্ছ। সবার ওপরে রয়েছে। তোমার নামটা। তুমি যে আমার বাধ্য আছ তার ছোট্ট একটা প্রমাণ দিতে হবে। তারপর তোমার নামটা সারির ওপর থেকে কেটে পাশের তারকাচিহ্নের যে কোনও এককোণার ভেতরে লিখে দেবে। একবার তারকায় ঢুকে যেতে পারলে আর চিন্তা নেই, ওখানেই থাকবে তুমি, বেরোনোর প্রয়োজন হবে না।
সাবধান: আবার বলছি–তারকার কোণায় লিখবে, ভুলেও মাঝখানে নয়। তাহলে সেটাকে তোমার অবাধ্যতা ধরে নেব আমি। মারাত্মক বিপদে পড়বে। আমার কথামত কাজ সেরে তোমার পরের নামটা যার চিঠিটা ত্বর কাছে পাঠিয়ে দেবে। তোমাকে কি করতে হবে সেই নির্দেশ পাবে টাইমস পত্রিকার বিজ্ঞাপনের পাতায় একটা বক্সের মধ্যে। তারকাচিহ্ন আঁকা থাকবে বিজ্ঞপ্তির ওপর। সুতরাং চিনতে অসুবিধে হবে না কোনটা তোমার জন্যে। অক্ষরগুলো সব উল্টোভাবে লেখা থাকবে–যেমন dog-কে লেখা হবে god। ঠিকমত সাজিয়ে নিলেই পেয়ে যাবে আসল বাক্যটা। চিঠি পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে অবশ্যই তোমাকে তোমার বাধ্যতা প্রমাণ করতে হবে।
তালিকায় বাকি যাদের নাম আছে ইচ্ছে করলে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে পারো। বাধা নেই। আমার ধারণা, আমার মতই ওরাও তোমার বন্ধু নয়, মুখে যতই বন্ধু বন্ধ করুক। তালিকার বাইরে কারও সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ করবে না। যদি করো, রেগে যাব আমি।
একটা কথা পরিষ্কারভাবে জেনে রাখো, তোমাদের গোপন কথাটা জানি আমি। কিন্তু সেটা নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমার। পুলিশকে জানাতে যাব না।
আমার কথার অবাধ্য হলে মারাত্মক পরিণতি অপেক্ষা করবে তোমার জন্যে। ভয়ঙ্করভাবে মৃত্যু ঘটবে তোমার।
–তোমাদের তত্ত্বাবধায়ক।
চিঠিটা পড়ে মারলার হাতে দিল রবিন।
মারলা পড়ে বলে উঠল, দূর, যত্তোসব ছাগলামি। কেউ রসিকতা। করেছে। দলামোচড়া করে ফেলে দিতে যাচ্ছিল, বাধা দিল রবিন, দাঁড়াও। দেখি, দাও তো। আরেকবার পড়ে দেখি।
পড়ে দেখার কিছু নেই, রাগ করে বলল মারলা। যে পাঁচজনের নাম আছে এটাতে, তাদের কেউই পাঠিয়েছে ভয় দেখানোর জন্যে। ক্লডিয়া হতে পারে।
কেন, ড্যানিয়েল নয় কেন? ভুরু নাচাল রবিন।
হ্যাঁ, ড্যানিয়েলও হতে পারে। রবিনের দিকে তাকাল মারলা। বাজে রসিকতার অভ্যাস আছে ওদের দুজনেরই। ফেলো ওটা। অ্যাই সোফি, গুম হয়ে বসে না থেকে ওঠো তো। চলো, বারগার খেয়ে আসি মলে গিয়ে। কিছু কেনাকাটাও আছে আমার।
যাও তোমরা। আমি বাড়ি যাব। সোফি, বইটা দাও তো, কাল যেটা এনেছিলে। পড়া শেষ হয়নি আমার।
ওদের কথা, যেন কানেই ঢুকল না সোফির। ফিসফিস করে বলল, উড়িয়ে দিয়ো না ব্যাপারটাকে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও কিন্তু দিয়েছে। এই দেখো।
পড়ে ভুরু কুঁচকে গেল রবিনের। তত্ত্বাবধায়ক লিখেছে: বৃহস্পতিবারের মধ্যে তোমার কুকুরছানাটাকে পানিতে চুবিয়ে মারো, সোফি।
বিরক্ত হয়ে মুখ বাঁকাল রবিন, হু, বললেই হলো। ফাজলেমি পেয়েছে। পাত্তাই দিয়ো না এসবে।
বিজ্ঞাপনটার দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে মাথা দুলিয়ে বলল মারলা, এ কাজ ক্লডিয়া ছাড়া আর কারও নয়। কারণ ও মানসিক রোগী।
কিন্তু রোগী হলেও ক্লডিয়া জন্তু-জানোয়ার অপছন্দ করে না, রবিন বলল। ও নিজে যখন কুত্তা পালে সোফির কুকুরটাকে মারতে বলবে, এ কথা বিশ্বাস হচ্ছে না আমার। আর বললেই বাচ্চাটাকে মেরে ফেলবে না একথাও জানে ক্লডিয়া। ভয়টা আসলে দেখাতে চেয়েছে অন্য কেউ।
আরেকবার চিঠিটার দিকে তাকাল রবিন। টাইপরাইটারে টাইপ করা। বিড়বিড় করে বলল, তত্ত্বাবধায়ক আসলে কি চাইছে বুঝতে পারছি নাঃ.
রেগে উঠল মারলা, এর মধ্যে বোঝাবুঝির কি আছে? স্রেফ ভয় দেখানোর জন্যে করেছে এই কাজ। সোফি ভয় পাচ্ছে ভেবে এখন নিশ্চয় একা একাই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ফেলো ওটা, ফেলে দাও। সোফি, ওঠো তো। চলো।
চেয়ারে বসল রবিন। চিঠির নামগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, মুসার নামও আছে। কিন্তু আমারটা নেই কেন?