- বইয়ের নামঃ সৈকতে সাবধান
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রোমাঞ্চকর গল্প
সৈকতে সাবধান
০১.
বিকেলটা মায়ের সঙ্গে কাজ করে কাটাল জিনা। গাড়ি থেকে মালপত্র নামানো, ব্যাগ সুটকেস খুলে জিনিসপত্র গোছানো, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ঘরগুলো সাফসুতরো করা, খাবার আর প্রয়োজনীয় জরুরী জিনিস কিনে আনা, অনেক কাজ।
জিনার বাবা মিস্টার পারকার কোন সাহায্যই করতে পারলেন না। করতে এসেছিলেন, কিন্তু কাজের চেয়ে অকাজ বেশি-উল্টোপাল্টা করে কাজ আরও বাড়াতে লাগলেন, শেষে তাকে বিদেয় করে দিয়ে রেহাই পেয়েছেন মিসেস পারকার।
বারান্দায় বসে একটা বিজ্ঞানের বইতে ডুবে আছেন এখন মিস্টার পারকার।
বালিয়াড়ির আড়ালে অস্ত যাচ্ছে সূর্য। প্রবল বাতাসে নুয়ে নুয়ে যাচ্ছে বাড়ির পেছনের শরবন। মিসেস পারকার রান্নাঘরে। হট ডগ আর মাংস ভাজার সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।
ডিনারের পর ওপরে চলে এল জিনা। হাত-মুখ ধুয়ে কাপড় বদলানোর জন্যে আলমারি খুলল। অ্যানটিক ড্রেসিং টেবিলে রাখা ঘড়ির দিকে। তাকাল। দেরি হয়ে গেছে। মুসারা বসে থাকবে। দেখা করার কথা সাড়ে সাতটায়।
দুই টান দিয়ে পাজামা খুলে মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলল সে। আলমারি ঘেঁটে বের করল একটা ডেনিম কাটঅফ।
সৈকতে যাবে না? নিচ থেকে শোনা গেল মায়ের কণ্ঠ।
নাহ। তুমি যাও, জবাব দিলেন মিস্টার পারকার। আমি এই চ্যাপ্টারটা…
একা যেতে ইচ্ছে করছে না। থাক, সকালের নাস্তার জোগাড়টা করে। ফেলিগে।
কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলেও পারো। অনেক পরিশ্রম করেছ।
আগে কাজকর্মগুলো সেরে ফেলি, তারপর…
আয়নার সামনে এসে বসল জিনা। তামাটে চুল অনেক লম্বা হয়েছে। তারপরেও কাটতে ইচ্ছে করল না। ভাবতেই হেসে উঠল তামাটে চোখের বড় বড় দুটো মণি। মনে পড়ল, কয়েক বছর আগের গোবেল বীচের কথা। তখন। চুল কেটে ছেলেদের মত করে রাখতে পছন্দ করত সে। এখন রাখে লম্বা চুল। মাত্র কয়েক বছরেই কত পরিবর্তন এসে যায় একজন মানুষের। বিশেষ করে মেয়েদের। আগে হলে রাফিয়ানকে অবশ্যই সঙ্গে আনত। কোথাও বেড়াতে গেলে ওকে ফেলে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারত না। আর এখন দিব্যি ফেলে এসেছে বাড়িতে, রকি বীচের বাড়িতে। আনাটাই বরং ঝামেলার মনে হয়েছে ওর কাছে।
সৈকত শহর স্যান্ডি হোলোতে বেড়াতে এসেছে ওরা। গরমকালটা এখানেই কাটানোর ইচ্ছে মিসেস পারকারের। মিস্টার পারকারের এ নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। যেখানেই যান, বই আর গবেষণায় ডুবে থাকতে পারলেই তিনি খুশি।
নিচে নেমে হাত নেড়ে মাকে গুড-বাই জানিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল। জিনা। বাড়ির সামনের দিকটা ঘুরে এসে দ্রুতপায়ে হাঁটতে লাগল বীচ হ্যাঁভেন ড্রাইভ ধরে শহরের দিকে।
বীচ হ্যাভেন ড্রাইভ!
আহা, কি নাম! কানা ছেলে তার নাম পদ্মলোচন। সরু, এবড়োখেবড়ো একটা পথ, খোয়াও বিছানো হয়নি ঠিকমত।
গুচ্ছ গুচ্ছ সামার কটেজগুলোর কাছ থেকে মিনিট দশেক হেঁটে এলে পড়বে এক চিলতে বালিতে ঢাকা জমি। চারপাশ ঘিরে জন্মেছে শরবন। তারপর বিশাল ছড়ানো প্রান্তর, ঘাসে ঢাকা, মাঝে মাঝে তাতে মাথা তুলে রেখেছে একআধটা ওক কিংবা উইলো গাছ। ওগুলো সব পার হয়ে গেলে দেখা মিলবে ছোট্ট শহরটার।
রাস্তা ধরে মিনিট পাঁচেক এগোতেই শরবনের আড়াল থেকে লাফ দিয়ে এসে সামনে পড়ল একটা ছায়ামূর্তি। বাঘ আর কুকুরের মিশ্র ডাকের মত চিৎকার করে উঠল খাউম করে। হাত চেপে ধরল জিনার।
ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিল জিনা। অস্ফুট একটা শব্দ করল। মুখোমুখি হলো মূর্তিটার।
কেমন ভয়টা দেখালাম, হাসি ছড়িয়ে পড়েছে মুসার মুখে। ঝকঝকে সাদা দাঁত।
ভয় না, কচু! কিচ্ছ ভয় পাইনি আমি।
তাহলে চেঁচিয়ে উঠলে কেন?
কোথায় চেঁচালাম?
কোথায় চেঁচালে? দাঁড়াও, সাক্ষি জোগাড় করছি। শরবনের দিকে তাকিয়ে ডাক দিল মুসা, রিকি। বেরোও।
শরবনের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল মুসার চেয়ে অনেক খাটো, রোগা একটা ছেলে। গাজর রঙের কোকড়া চুল। নীল চোখ। লাজুক ভঙ্গি। খুব শান্ত।
ওর দিকে হাত বাড়াল মুসা, দাও পাঁচ ডলার। বলেছিলাম না ভয় দেখাতে পারব।
জিনার চোখের দিকে একবার তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিল রিকি। কড়া দৃষ্টি সহ্য করতে পারল না। তা তো বলেছিলে…
আমি ভয়ে চিৎকার করেছি! কোমরে হাত দিয়ে খেঁকিয়ে উঠল জিনা। আমি!
অ্যাঁ!…না না.না! ভয়ে প্রায় কুঁকড়ে গেল ছেলেটা। মুসার চোখে চোখ পড়তেই আবার বলল, করেছে, কিন্তু…
নাহ্, তোমাকে আর মানুষ করা গেল না,হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে লাগল জিনা। পুরুষ মানুষ, এত ভয় পাও কেন?
জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে রইল রিকি।
মাস দুই হলো জিনাদের বাড়ির পাশে ওদেরই অন্য একটা বাড়ি ভাড়া নিয়েছে রিকিরা। ভীষণ লাজুক ছেলে। দুই মাসে জিনা আর তিন গোয়েন্দা ছাড়া আর কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারেনি। পড়শী বলে ওরাই যেচে পড়ে খাতিরটা করেছে, নইলে তা-ও হত না।
আজই এলে? পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে জানতে চাইল মুসা।
আজ বিকেলে, জবাব দিল জিনা। বাড়িটা ভালই, কিন্তু পরিষ্কার করতে জান শেষ। একটা হপ্তা লাগবে।
আমাদেরটাও একই। কাল এসে তো ঢুকেই মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হলো মার। একটা জানালার কাচ ভেঙে কি জানি কি একটা জানোয়ার ঘরে ঢুকেছিল। আমাদের কার্পেটটাকে বাথরূম মনে করেছিল।