- বইয়ের নামঃ মৃত্যুবাণ
- লেখকের নামঃ নীহাররঞ্জন গুপ্ত
- বিভাগসমূহঃ গোয়েন্দা কাহিনী
১.০১ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
মৃত্যুবাণ
কিরীটী অমনিবাস – নীহাররঞ্জন গুপ্ত
চরিত্রলিপি
মৃত্যুবাণ উপন্যাসটির মধ্যে বহু বিচিত্র ঘটনার সমাবেশ দেখা দিয়েছে, বহু বিচিত্র চরিত্র। পাঠক-পাঠিকাদের সুবিধার জন্যই একটি সম্পূর্ণ চরিত্রলিপি দেওয়া হল।
রাজা যজ্ঞেশ্বর মল্লিক – রায়পুর স্টেটের রাজা
রাজেশ্বর মল্লিক – যজ্ঞেশ্বরের খুড়তুতো ভাই
রাজা রত্নেশ্বর মল্লিক – যজ্ঞেশ্বরের একমাত্র পুত্র
রাজা শ্ৰীকণ্ঠ মল্লিক – রত্নেশ্বরের জ্যেষ্ঠ পুত্র
কুমার সুধাকণ্ঠ মল্লিক – ঐ মধ্যম পুত্র
রাজা বাণীকণ্ঠ মল্লিক – ঐ কনিষ্ঠ পুত্র
কাত্যায়নী দেবী – ঐ একমাত্র কন্যা ও নায়েব শ্রীবিলাস মজুমদারের ভ্রাতৃবধু
হারাধন মল্লিক – সুধাকণ্ঠের পুত্র, রায়পুর আদালতের মোক্তার
নিশানাথ মল্লিক – বাণীকণ্ঠের পুত্র, শোলপুর স্টেটের চিত্র-শিল্পী, বিকৃত-মস্তিষ্ক
রাজাবাহাদুর রসময় মল্লিক – নিষ্পুত্রক রাজা শ্রীক মল্লিকের দত্তক পুত্র
রাজাবাহাদুর সুবিনয় মল্লিক – রসময় মল্লিকের প্রথম পক্ষের পুত্র
কুমার সুহাস মল্লিক – ঐ দ্বিতীয় পক্ষের পুত্র
প্রশান্ত মল্লিক – সুবিনয় মল্লিকের একমাত্র পুত্র
জগন্নাথ মল্লিক – হারাধন মল্লিকের পৌত্র
সুরেন চৌধুরী – কাত্যায়নী দেবীর পুত্র
ডাঃ সুধীন চৌধুরী – ঐ পৌত্র বা সুরেন চৌধুরীর ছেলে
সুহাসিনী দেবী – সুরেন চৌধুরীর স্ত্রী
মালতী দেবী – ছোট রাণীমা, রসময়ের দ্বিতীয় স্ত্রী
দীনতারণ মজুমদার – রাজা যজ্ঞেশ্বরের নায়েব
শ্রীবিলাশ মজুমদার – দীনতারণের পুত্র ও শ্রীকণ্ঠ ইত্যাদির নায়েব
শিবনারায়ণ চৌধুরী – নৃসিংহগ্রামের নায়েব
দুঃখীরাম – শিবনারায়ণের ভৃত্য
সতীনাথ লাহিড়ী – রায়পুরের সদর ম্যানেজার ও সুবিনয়ের সেক্রেটারী
তারিণী চক্রবর্তী – রায়পুর স্টেটের খাজাঞ্চী
মহেশ সামন্ত – ঐ তহবিলদার
সুবোধ মণ্ডল – ঐ বাজার সরকার
হরবিলাস – নৃসিংহগ্রামের নতুন ম্যানেজার
সতীশ কুণ্ডু – স্টেটের একজন কর্মচারী
ছোট্টু সিং – ঐ দারোয়ান
শম্ভু – রাজা সুবিনয় মল্লিকের খাসভৃত্য
মহীতোষ চৌধুরী – ঐ দূরসম্পর্কীয় ভাই
ডাঃ কালীপদ মুখার্জী – প্রথিতযশা চিকিৎসক
ডাঃ অমর ঘোষ – ডাঃ মুখার্জীর সহকারী
ডাঃ অমিয় ঘোষ – রাজবাড়ির পারিবারিক চিকিৎসক
বিকাশ সান্যাল – রায়পুর থানার ও.সি.
কর্ণেল মেনন – বম্বে প্লেগ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ
মুন্না – সাঁওতাল সর্দার
কিরীটী – রহস্যভেদী
সুব্রত – কিরীটীর সহকারী
জাস্টিস মৈত্র – হাইকোর্টের জজ
ভবানীপ্রসাদ – উচ্ছৃঙ্খল বিত্তহীন ধনীর পুত্র
ন্যাপা, বিষ্টুচরণ, কৈলাস – ঐ দলের লোক
নির্মল, মিঃ হুড – কোর্ট অফ অর্ডারস্-এর ম্যানেজার
ডঃ আমেদ – কলিকাতার পুলিস সার্জেন
.
প্রথম পর্ব
০১. ২৯শে ফেব্রুয়ারী
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
জজসাহেব রায় দিলেন, জুরীদের সঙ্গে একমত হয়ে সুহাস মল্লিকের হত্যা-মামলার অন্যতম আসামী ডাঃ সুধীন্দ্র চৌধুরীকে।
অবশেষে একদিন সেই দীর্ঘপ্রতীক্ষিত রায়পুরের বিখ্যাত হত্যা-মামলার রায় বের হল। বিহার প্রদেশে অবস্থিত ছোটখাটোর মধ্যে অত্যন্ত সচ্ছল রায়পুর স্টেট; সেই স্টেটের ছোট কুমার শ্রীযুক্ত সুহাস মল্লিকের রহস্যজনক হত্যা-সম্পর্কিত মামলা।
জনসাধারণের চাইতেও কলকাতার ও আশেপাশের শহরতলীর বিশেষ করে চিকিৎসক সম্প্রদায়ের মধ্যে মামলাটি শুরু হতেই একটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। বলতে গেলে প্রত্যেকেই মামলার ফলাফলের জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলেন, শেষ পর্যন্ত মামলার ফলাফল কি দাঁড়ায়। সেই মামলার রায় আজ বের হয়েছে।
শীতের সন্ধ্যায় মজলিসটা সেদিন বেশ জমে উঠেছিল। বহুকাল পরে সেদিন আবার কিরীটীর টালিগঞ্জের বাসায় সকলে একত্রিত হয়েছে। কিরীটী, সুব্রত, রাজু, নীতিশ, ইন্সপেক্টার মফিজুদ্দীন তালুকদার, পুলিস সার্জেন ডাঃ আমেদ।
আলোচনা চলছিল রায়পুরের বিখ্যাত খুনের মামলা সম্পর্কে।
আজ জজ সাহেব রায় দিয়েছেন, আসামী ডাঃ সুধীন চৌধুরীর যাবজ্জীবন কারাবাসের আদেশ জারি হয়েছে।
রায়পুরের ছোট কুমার সুহাস মল্লিকের রহস্যজনক হত্যা-সম্পর্কিত মামলায় তিনিই ছিলেন প্রধান আসামী।
তর্ক-বিতর্ক হচ্ছিল। কারণ এদের মধ্যে কেউই আসামী সুধীন্দ্র চৌধুরীর দোষ সম্পর্কে একমত নয়।
কেবল ওদের মধ্যে একা কিরীটীই একপাশে একটা আরামকেদারায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে পাইপ টানতে টানতে সকলের তর্ক-বিতর্ক শুনছিল, এবং এতক্ষণও কোনো মতামত প্রকাশ করেনি।
এই মামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না থাকলেও, কিরীটী কাগজে পড়েছে এবং আগাগোড়াই মামলাটিকে লক্ষ্য করেছে। কিন্তু হঠাৎ একসময় যখন সুব্রত কিরীটীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলে, কিরীটী, তোর কি মনে হয়? তুইও কি মনে করিস ডাঃ সুধীন্দ্র চৌধুরী এই হত্যার ব্যাপারে সত্যিই দোষী? তাঁর বিরুদ্ধে যেসব এভিডেন্স খাড়া করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কোনো ত্রুটিই নেই?
কিরীটী সুব্রতর প্রশ্নে চোখ মেলে তাকাল, ব্যাপারটা বিশেষ রকম জটিল ও রহস্যপূর্ণ। কিন্তু সে কথা যাক, মোটামুটি এই হত্যার ব্যাপারে তর্ক-বিতর্ক করতে গিয়ে গোড়া থেকেই তোমরা সকলেই একটা মস্তবড় ভুল করছ বলেই আমার কিন্তু মনে হয়।