- বইয়ের নামঃ প্রেম ও স্বপ্ন
- লেখকের নামঃ কাসেম বিন আবুবাকার
- প্রকাশনাঃ আফসার ব্রাদার্স
- বিভাগসমূহঃ উপন্যাস
১. সাঁতার প্রতিযোগীতা
প্রেম ও স্বপ্ন – ইসলামিক প্রেমের উপন্যাস – কাসেম বিন আবুবাকার
০১.
মাহবুব সাঁতার প্রতিযোগীতায় তিনটে স্বর্ণপদক পেয়ে স্টেডিয়াম থেকে বেরোবার সময় গেটে প্রচণ্ড ভীড়ের সম্মুখীন হল। কয়েকশো ছেলে-মেয়ে অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য তাকে ঘিরে ধরেছে। বন্ধু মাসুমের সাহায্যে অটোগ্রাফ দিতে দিতে কোনো রকমে ভীড় ঠেলে যখন রাস্তায় এসে রিকশায় উঠবে, ঠিক তখনই মাহবুবা নোটবুক খুলে এগিয়ে ধরল।
মাহবুব তার মুখের দিকে এক পলক তাকাতে গিয়ে দৃষ্টি আটকে গেল। এত সুন্দর মুখ আর কখনো দেখেনি। মাসুমের কুনুইয়ের গুঁতো খেয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে অটোগ্রাফ দিল।
প্লীজ, বাসার ঠিকানাটা দিন।
মাহবুব রাগতে গিয়ে পারল না। তার মনে হল কেউ যেন কানে মধু ঢেলে দিল। মুখের দিকে না তাকিয়ে পারল না। ফলে চোখে চোখ পড়ে গেল। চোখ নয় যেন প্রেমের সাগর। তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল, আমি মেসে থাকি।
মেসের ঠিকানাই দিন।
মেয়েটার কণ্ঠস্বর বার-বার মাহবুবের কানে যেন মধু ঢেলে দিচ্ছে। নিজের অজান্তেই ঠিকানা লিখে দিল।
মাহবুবা নোট বুক নেওয়ার সময় ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, যদি কিছু মনে না করেন, আমি আপনাদেরকে লিস্ট দিতে চাই।
মাহবুব স্মিত হাস্যে ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, মাফ করবেন, আমি আপনার অফার গ্রহণ করতে পারছি না। তারপর রিকশায় উঠে বসল।
মাসুম আগেই উঠে বসেছিল, মাহবুব বসার পর রিকশাওয়ালাকে যেতে বলল।
রিকশা কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর মাসুম পিছন দিকে তাকিয়ে দেখল, মেয়েটা তাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ঘাড় ফিরিয়ে কুনুইয়ের ধাক্কা দিয়ে কথাটা মাহবুবকে বলে বলল, মনে হয় মাইণ্ড করেছে।
মাহবুব বলল, তা করতে পারে। তাই বলে তার কথা আমাকে শুনতে হবে না কি?
মাসুম বলল, যাই বলিস, মেয়েটা দেখতে কিন্তু দারুণ। এত সুন্দরী মেয়ে জীবনে আর কোনো দিন দেখিনি। মেয়েটার কথা শুনে ও ড্রেস দেখে মনে হচ্ছে, নিশ্চয় ধনীর দুলালী।
মাহবুব একটু বিরক্ত হয়ে বলল, তাতে আমার কি? তুইও তো ধনী পুত্র। যদি মনে ধরে থাকে ফিরে গিয়ে আলাপ কর।
আমি তো আর তোর মতো সুঠাম দেহের অধীকারী সুপার স্টার নই, আর সাঁতারে তিনটে স্বর্ণপদকও পাইনি।
তুই চুপ করবি, না রিকশা থেকে নামিয়ে দেব?
ঠিক আছে, এই চুপ করলাম বলে মাসুম গম্ভীর হয়ে বসে রইল। কিন্তু বেশিক্ষন চুপ করে থাকতে পারল না। বলে উঠল, দোস্ত, সত্যি বলছি, আমার দিকে কোনো মেয়ে ঐ ভাবে তাকালে নির্ঘাৎ মোমের মতো গলে যেতাম। তোর দিলটা আল্লাহ যে কী দিয়ে। তৈরী করেছে না, তা তিনিই জানেন।
মাহবুব রিকশাওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বলল, এই যে ভাই থামান।
মাসুম রিকশাওয়ালাকে থামাতে নিষেধ করে মাহবুবের কাঁধে একটা হাত রেখে বলল, এত নির্দয় হসনি দোস্ত। কি জানিস, মেয়েটা তোর দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে ছিল, যেন আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ দেখছে। আর তুইও তো বাপু তার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলি।
মাহবুব খুব বিরক্ত বোধ করলেও হেসে ফেলল। বলল, তুই কখনো পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করেছিস? তুই তো কেমেস্ট্রির ছাত্র, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আঠার ঘন্টা বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকিস, চাঁদের সৌন্দর্য দেখার সময় তোর কোথায়?
তা ঠিক, তবে পূর্ণিমার চাঁদ অনেকবার দেখেছি। সত্যি বলতে কি, মেয়েটার মুখটাও ঠিক পূর্ণিমার চাঁদের মতো।
মাহবুব আবার হেসে ফেলে বলল, কেমেস্ট্রির ফরমূলা মুখস্থ করতে করতে সত্যিই তোর ব্রেন আউট হয়ে গেছে। নচেৎ একবার আমাকে আবার একবার মেয়েটাকে পূর্ণিমার চাঁদের সঙ্গে তুলনা করতিস না। লুকিং গ্লাসে নিজের মুখ ভালো করে দেখবি। নিজের মুখকেও তাই মনে হবে।
মাসুমের গায়ের রং শ্যামলা। তাই মুখ ভার করে বলল, আমি কালো, তাই কোনো মেয়ে আমার দিকে তাকায় না। কিন্তু তুই একথা বলতে পারলি?
মাহবুব বলল, কথা প্রসঙ্গে রসিকতা করে বললাম, তুই মাইণ্ড করবি জানলে বলতাম না। ঠিক আছে, আর কখনো এরকম রসিকতা করব না মাফ করে দে।
মাসুম ভনিতা করে কথাটা বলেছিল। মাহবুবের কথা শুনে বলল, মাফ করতে পারি, যদি আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিস।
বল কি জানতে চাস।
মেয়েটা অত্যন্ত সুন্দরী এটা ঠিক কিনা তোকে বলতে হবে?
মাহবুব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, হ্যাঁ তোর কথাই ঠিক, মেয়েটার মুখ যেন পূর্ণিমার চাঁদের মতো।
মাসুম তার পিঠ চাপড়ে বলল, এইতো দোস্ত, সেই ঘাটের পানি খেলি, তবে ঘোলা করে।
ততক্ষনে তারা মেসে পৌঁছে গেল।
তারা দয়াগঞ্জ বাজারের উত্তর পাশে স্বামী বাগে একটা মেসে থাকে। মেসটার মোট ছয়টা রুম। প্রত্যেক রুমে চারটে করে সিট। এখানে যারা থাকে তারা সবাই চাকরি করে। শুধু মাসুম ও মাহবুব ছাত্র। তারা দু বন্ধুতে মিলে একটা রুমে থাকে। মাহবুব ইংলিশে আর মাসুম কেমেস্ট্রিতে মাষ্টার্স করছে।
রুমে ঢুকে মাসুম বলল, মেয়েটা তোর ঠিকানা কেন নিল কিছু বুঝতে পারছিস?
কেন পারব না? মনে করেছিল আমি হয়তো কোনো বড় লোকের ছেলে। মেসে থাকি শুনে তো আর না করতে পারে না তাই সেটাই দিতে বলল।