- বইয়ের নামঃ প্রতিবেশিনী
- লেখকের নামঃ কাসেম বিন আবুবাকার
- প্রকাশনাঃ কাকলী প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ উপন্যাস
১. কক্সবাজার জেলার কৃতী সন্তান
হামিদ সাহেব কক্সবাজার জেলার কৃতী সন্তান। তিনি আমেরিকায় সেটেল্ড। সেখানকার বিরাট ব্যবসায়ী। তারা দুভাই এক বোন। বোনের বিয়ে হয়েছে চকরিয়ায় এক ধনাঢ্য পরিবারে। বড় ভাই দেশে থাকেন। হামিদ সাহেব দুএক বছর অন্তর দেশে এসে বেড়িয়ে যান। অনেক বছর আমেরিকায় বসবাস করলেও নিজে যেমন ধর্মের আইন-কানুন মেনে চলেন, তেমনি পরিবারের সবাইকে ধর্মীয় অনুকরণে পরিচালনা করেন। এবারে মা-বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে স্বপরিবারে দেশে আসেন। তাদের রুহের মাগফেরাতের জন্য পঞ্চাশ বেডের একটা দাঁতব্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠান করেন। মা বাবার নামে হাসপাতালের নাম দিয়েছেন, রহিম আফরোজা দাঁতব্য হাসপাতাল। এখানে সব শ্রেণীর মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা করা হয়। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর ধার্মীক ও চরিত্রবান ডাক্তার, নার্স ও অফিস স্টাফ নিয়োগ করার জন্য কাগজে বিজ্ঞপ্তী দেন। তাদের ইন্টারভিউ নিজে নিয়েছেন। সমুদ্র সৈকতের প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে বিশ একর জমির উপর এই হাসপাতাল। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য যেমন অতি মনোরম, তেমনি রাতের সমুদ্রের গর্জন মনকে উতলা করে তোলে। পুরো হাসপাতাল পাকা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। এর মধ্যেই ডাক্তার নার্স ও অফিস স্টাফদের থাকার কোয়ার্টার। এটার দুটো গেট। একটা পূর্ব দিকে। আর অন্যটা পশ্চিম দিকে। পূর্ব দিকের গেটের রাস্তা শহরের রাস্তার সঙ্গে মিশেছে। পশ্চিম গেটের রাস্তা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত গিয়েছে।
ডাক্তার মাহবুবা এখানকার সুপারিন্টেন্ডেন্ট। তার উপরেই পুরো হাসপাতালের দায়িত্ব। তিনি একজন ধার্মীক পর্দানশীল মহিলা। হাতে পায়ে মোজা ও বোরখা পরে ডিউটি করেন।
বেলা তখন দুটো। ডাঃ মাহবুবা যোহরের নামায পড়ে খেয়ে উঠে সবেমাত্র অফিসে এসে বসেছেন, এমন সময় নার্স ইয়াসমীন হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল, ম্যাডাম, একটা মুমূর্ষ রুগীকে নিয়ে একজন এসেছেন। কোনো ডাক্তার এখনো লাঞ্চ থেকে ফেরেন নি। আপনি যদি—–।
ডাঃ মাহবুবা তাকে কথাটা শেষ করতে দিলেন না। স্টেথিস্কোপটা গলায় ঝুলিয়ে বললেন, চলুন।
বেডের কাছে এসে ডাঃ মাহবুবা রুগী দেখে চমকে উঠে বাস্তব জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। টোপরের কঙ্কালসার শরীরের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি রোধ করতে পারলেন না।
টোপর তখন যন্ত্রণায় ছটফট করছে।
ইয়াসমীন ডাঃ মাহবুবার পরিবর্তন দেখে বেশ অবাক হয়ে বলল, ম্যাডাম, রুগীর অবস্থা খুব সঙ্গিন। দেখছেন না, কি রকম ছটফট করছেন?
ডাঃ মাহবুবা নার্সের কথায় সম্বিত ফিরে পেয়ে টোপরকে পরীক্ষা করে চার্টে ব্যবস্থাপত্র লিখলেন। তারপর ঘুমের ইঞ্জেকসান দেওয়ার সময় বললেন, ইনাকে কেবিনে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
ইঞ্জেকসান দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে টোপর নিথর হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। ডাঃ মাহবুবা নিজের রুমে ফিরে এসে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে আগের জীবনের স্মৃতিচারণে ডুবে গেলেন।
টোপর এস.এস.সি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে পাঁচটা লেটার নিয়ে ষ্টার মার্ক পেয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হল। অল্প দিনের মধ্যে ভালো ছাত্র হিসাবে তার সুনাম সারা কলেজে ছড়িয়ে পড়ল। কলেজ ইলেকশনের সময় এক পার্টির নেতা সাগর তাকে কৌশলে পার্টির মধ্যে টেনে নিল। টোপর প্রথমে খুব আপত্তি করে বলেছিল, পার্টি করলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে। সাগর তাকে কথা দিয়েছিল, পার্টির কাজ করতে গিয়ে তোমার যাতে পড়াশোনার ক্ষতি না হয়, সে দায়িত্ব আমি নিলাম। এরপর টোপর আর আপত্তি করতে পারেনি। অবশ্য সাগর তার কথা রেখেছে। তাই তার সঙ্গে টোপরের বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
টোপর এইচ.এস.সি.তেও পাঁচটি লেটার সহ স্টার মার্ক পেয়ে ঢাকা ভার্সিটিতে বি.এস.সি. অনার্সে এ্যাডমিশন নিল। সাগরও পাশ করে ঢাকা ভার্সিটিতে বাংলায় অর্নাস নিয়ে এ্যাডমিশন নিল। ভার্সিটিতেও সাগর টাকার জোরে পার্টির নেতা হল। টোপর পার্টিকে এড়িয়ে চলতে চাইলেও সাগর তাকে ছাড়ল না।
সাগর খুব বড় লোকের একমাত্র ছেলে। তাদের দুটো গাড়ি। একটা তার, অন্যটা তার বাবার। পার্টির পিছনে প্রচুর টাকা খরচ করে। কলেজের বড় লোকের মেয়েদের অনেকে এবং উঁচু সোসাইটির আত্মীয় অনাত্মীয় অনেক মেয়ে তার গার্লফ্রেন্ড। তাদের পিছনে ও বন্ধুদের পিছনে পানির মতো টাকা খরচ করে। টোপরের সঙ্গে সাগরের একটু বেশি অন্তরঙ্গতা। তাই সাগর তাকে বাসায় নিয়ে গিয়ে মা বাবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। মাঝে মাঝে টোপর সময় অসময়ে তাদের বাসায় যায়। টোপরের সঙ্গে টিকলীর সম্পর্ক এবং তাদের দুই ফ্যামিলীর মনোমালিন্যের কথাও সাগর জানে। আর টোপর ও সাগরের অনেক কিছু জানে। তার যে দুতিন জন বান্ধবীদের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক আছে তাও জানে।
একদিন কথায় কথায় সাগর টোপরকে জিজ্ঞেস করল, তোর প্রেমিকার সঙ্গে তোর দৈহিক সম্পর্ক আছে?
টোপর বলল, না।
সে কিরে, যাকে এত বছর ধরে ভালবাসিস, তার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক হয় নি, কথাটা কি সত্যি বললি?
হ্যাঁ সাগর সত্যি। আমাদের দুজনের দৈহিক সম্পর্ক করার কথা কখনো মনে হয় নি।