আমরা যদি বন্ধুত্ব করতে চাই, তাহলে অন্যদের কাজ করতে প্রস্তুত থাকতে হবে–যে কাজ করতে হলে চাই সময়, মানসিকতা, নিঃস্বার্থতা আর চিন্তাধারা। ডিউক অব উইণ্ডসর যখন প্রিন্স অব ওয়েলস ছিলেন তখন দক্ষিণ আমেরিকা সফরে যাওয়ার আগে তিনি স্প্যানিশ ভাষা শিখতে আরম্ভ করেন যাতে সে দেশে গিয়ে তাদের ভাষাতেই কথা বলতে পারেন। দক্ষিণ আমেরিকার মানুষ এজন্য তাকে খুবই ভালবাসত।
.
অনেক বছর যাবৎ আমি এটা ঠিক করেছি আমার বন্ধু বান্ধবদের জন্মদিনের তারিখটা মনে রাখতে হবে। কিভাবে? যদিও জ্যোতিষশাস্ত্র সম্বন্ধে আমার কণামাত্রও বিশ্বাস নেই তাহলেও আমি তাদের জিজ্ঞাসা করি কারও জন্মদিনের তারিখের সঙ্গে সেই মানুষের চরিত্র আর ভাবভঙ্গীর কোন সম্পর্ক আছে কি না? তারপর আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, তার জন্মমাস আর তারিখ কি? সে যদি বলে ২৪ নভেম্বর, তাহলে আমি বার বার আউড়ে চলি–২৪ নভেম্বর, ২৪ নভেম্বর! তারপর সে পিছনে ফিরলেই একটা কাগজে তার নাম আর জন্মতারিখটা লিখে ফেলি। পরে সেটা জন্মদিনের একটা ডায়েরীতে লিখে রাখি। প্রত্যেক বছরের গোড়ায় ঐ সব জন্ম তারিখ আমার ক্যালেণ্ডারে পর পর লিখে রাখি; ফলে সবই আমার সহজেই। মনে থাকে। ঠিক তারিখটা হলেই তার কাছে আমার চিঠি বা টেলিগ্রাম পৌঁছে যায়। এর প্রতিক্রিয়া দারুণ হয়! কারণ পৃথিবীতে আমিই একমাত্র মানুষ যে তার জন্মদিনের ব্যাপারটা আমার মনে আছে।
আমরা যদি বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে চাই তাহলে মানুষকে অত্যন্ত সজীব ভঙ্গীতে আর উৎসাহ দিয়ে অভ্যর্থনা করি আসুন। কেউ টেলিফোন করলেই এমনভাবে ‘হ্যাল্লো’ বলুন যেন মনে হয় তার গলা পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন আপনি। দি নিউইয়র্ক টেলিফোন কোম্পানী তাদের অপারেটরদের শেখানোর জন্য নানা ব্যবস্থা করে থাকে। যাতে তারা কেউ ফোন করলেই এমনভাবে আপনার নম্বরটা বলুন যেন মনে হয় ‘সুপ্রভাত, আপনার সেবা করতে পেরে আনন্দিত’ এটাই বোঝায়। কাল টেলিফোন করার সময় কথাটা মনে রাখবেন।
কাজে কর্মে এই দার্শনিক তত্বটা কি কাজ দেবে? এর বেশ কিছু উদাহরণ আমি দিতে পারি তবে সময়ের অভাবে মাত্র দুটো দিচ্ছি।
নিউইয়র্ক শহরের একটা বড় ব্যাঙ্কের চার্লস এবং ওয়াল্টার্সের উপর দায়িত্ব পড়ে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য একটা গোপন রিপোর্ট তৈরি করার। তিনি জানতেন মাত্র একজন লোকই তাঁর যে সব বিষয় জরুরী দরকার তা জানে। মি. ওয়াল্টার্স তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন–ভদ্রলোক বিরাট এক প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট। মি. ওয়াল্টার্সকে তার ঘরে নিয়ে যাওয়া হলে এক তরুণী দরজার মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে প্রেসিডেন্টকে জানালো তার জন্য ওইদিন কোন ডাকটিকেট নেই।
আমার বার বছরের ছেলের জন্য ডাকটিকেট জোগাড় করছি, প্রেসিডেন্ট ওফাল্টার্সকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলেন।
মিঃ ওয়াল্টার্স এবার তাঁর কাজের কথায় এলে প্রশ্ন করা শুরু করলেন। প্রেসিডেন্ট কিন্তু বেশ ছাড়া ছাড়া ভাব দেখাতে চাইছিলেন, তিনি দুচারটে কথাই শুধু বললেন। কথা বলার উৎসাহ তাঁর ছিল না, কোনভাবেই তাঁকে দিয়ে বলানোও গেল না। সাক্ষাৎকার পর্ব ওখানেই শেষ হলো।
‘খোলাখুলি বলছি,’ মিঃ ওয়াল্টার্স ক্লাসে কাহিনী বলতে গিয়ে জানালেন, কি করা দরকার বুঝতে পারিনি। তারপরেই আমার মনে পড়ে গেল তার সেক্রেটারি কি বলেছিল–ডাকটিকেট, বার বছরের ছেলে … তখনই আমার মনে পড়ে গেল আমাদের বিদেশ দপ্তর ডাকটিকিট জমায়–সাত সমুদ্র পার হয়ে আসা বিভিন্ন মহাদেশের যত ডাকটিকেট।
‘পরদিন বিকেলে আমি আবার ভদ্রলোকের কাছে হাজির হলাম আর খবর পাঠালাম যে তার ছেলের জন্য কিছু ডাকটিকিট এনেছি। আমাকে খাতির করে ভিতরে ডাকা হয়েছিল কি? হ্যাঁ স্যার তাই হয়েছিল। তিনি আমার সঙ্গে এতো জোরে করমর্দন করেন যেন কংগ্রেসের জন্য নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন। আনন্দে উচ্ছল হয়ে পেটে পড়লেন ভদ্রলোক। আমার জর্জের এগুলো খুবই পছন্দ হবে’, ডাকটিকিটগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে তিনি বললেন এটা একবার দেখুন। সত্যিই দারুণ তাই না?
‘এরপর আমরা প্রায় আধঘন্টা ডাকটিকিট নিয়ে আলোচনা করে আর তাঁর ছেলের ছবি দেখে কাটালাম। তারপর তিনি একঘন্টা ধরে আমি যে খবর চাইছিলাম তাই দিতে লাগলেন। সব খবরই তাঁর কাছ থেকে এসে গেলো। আমাকে কোন রকম চেষ্টাই করতে হল না। তার যা যা জানা ছিল সবই তিনি জানালেন আমায়। তারপর তার অধীনস্থ কর্মচারিদের ডেকে পাঠিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক খবর দিলেন। নিজের সহকর্মীদের টেলিফোনেও করলেন। বলতে গেলে খবরের আর রিপোর্টের একটা বোঝা আমার উপর চাপিয়ে দিলেন। খবরের কাগজের লোক হিসেবে আমি একেবারে বাজিমাত করেছিলাম বলা যায়।’
আর একটা উদাহরন নিন :
ফিলাডেলফিয়ার সি. এম. ন্যাফল, জুনিয়ার প্রায় তিন বছর ধরে একটা মস্ত চেইনষ্টোরকে কয়লা বিক্রি করার চেষ্টা চালান। কিন্তু ওই চেইন-স্টোর কোম্পানী শহরের বাইরের এক সরবরাহকারীর কাছ থেকেই কয়লা কিনে তা আবার মিঃ ন্যাফলের অফিসের দরজার সামনে দিয়েই নিয়ে আসত। এরপর একদিন মিঃ ন্যাফলে আমার ক্লাসে এসে ওই চেইন-স্টোরের বিরুদ্ধে তাঁর গায়ের জ্বালা মিটিয়ে গাল দিলেন আর বললেন এরা হচ্ছে দেশের শত্রু ছাড়া কিছু না।