Site icon BnBoi.Com

ফাইনাল কেসেস – আগাথা ক্রিস্টি

ফাইনাল কেসেস - আগাথা ক্রিস্টি

ফাইনাল কেসেস

১. স্যাংচুয়ারি

ফাইনাল কেসেস (মিস মার্পল)

স্যাংচুয়ারি

০১.

দুহাতে ফুটন্ত ক্রিসেনথেমাম নিয়ে ভাইকারের বউ প্রবেশ করলেন ভিকারেজের ঘরের মধ্যে। তার জুতোর ডগায় লেগে আছে শিশিরস্নাত মৃত্তিকার কণা, শুধু তাই নয়, তাঁর নাকের অগ্রে সাত সকালের নিষ্পাপ ভালোবাসার স্পন্দন, কিন্তু এ দুটি বিষয় সম্পর্কে তিনি মোটেই অবহিত নন।

দরজা খুলতে সামান্য পরিশ্রম করতে হল তাকে। অবাধ্য দরজা কিছুতেই খুলবে না বুঝি, দুষ্টু বাতাস উড়িয়ে দিতে চাইল তাঁর মাথার ওপর তেরছাভাবে বসানো ফেল্টের হ্যাট। অতি কষ্টে হ্যাটকে সামলালেন তিনি। বসে ডাকলেন-বথার।

উৎসাহী জননী ডিয়ানা মিসেস হারমনের নামটা পালটে বাঞ্চ করেছেন তার কিশোরী বেলায়। কিন্তু কেন, সে খবর আমরা জানি না। এখন তার নামের সাথে এই শব্দটি জুড়ে গেছে। দুহাতে ধরা ক্রিসেনথেমাম, এগিয়ে গেছে পথ চার্চ প্রাঙ্গনের দিকে, তিনি এগিয়ে গেলেন চার্চের দরজার পাশে।

নভেম্বরের বাতাস এখন মৃদুমন্দ বইছে। আর্দ্রতার চিহ্ন মাখা। আকাশের সেখানে এখানে দুষ্ট কালো মেঘের দল ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছে, চোখের পরতে নীলাভ রেখা। চার্চের ভেতর বাতাবরণ এখন অন্ধকারপথে শীতার্ত আর্তনাদ, সার্ভিস মুহূর্ত ছাড়া কখনো তাকে কাঙ্ক্ষিত উত্তাপ দেওয়া হয় না।

বাঞ্চ বলে উঠলেন–ধ্যুৎ, মনে হচ্ছে এই শীতে বোধহয় আমি আর বাঁচব না।

অভ্যাস মতো সংগ্রহ করেছেন ফুল সাজানোর জিনিসপত্র–ফুলদানি, জল, ঢাকা দেবার টুকরো, তারপর বাঞ্চ মনে মনে বললেন, লিলিফুল থাকলে ভালো হত, এই ক্রিসেনথেমাম দেখে আর ভালো লাগছে না আমার। তবুও অভ্যাসমতো আঙুল চালিয়ে ফুলকে সুসজ্জিত করার চেষ্টায় মেতে উঠলেন তিনি।

আজ এই সন্ধ্যার মধ্যে কোনো কিছুকেই আমরা মৌলিক অথবা কৃত্রিম বলতে পারি না। বাঞ্চ হারমেন হয়তো নিজের জীবনেও মৌলিকত্বকে সেভাবে আঁকড়ে ধরতে ভালোবাসেন না। তার কাজ কর্মের মধ্যে শৈল্পিক অনুভূতির ছাপ নেই কিন্তু তার মধ্যে এমন একটা আবেশ আছে যাকে আমরা গৃহস্থালি বলতে পারি। আর আছে অনুপম উপস্থাপনা। সাবধানে ফুলদানিটিকে ধরলেন তিনি। তারপর এগিয়ে গেলেন সামনের দিকে, এবার তাকে বেদী পর্যন্ত পৌঁছতেই হবে। বেদীতে পৌঁছবার সঙ্গে সঙ্গে আকাশের সূর্যের ঝলকানি চোখে পড়ল।

পূর্বদিকের জানলা পথে হাওয়া ঢুকে পড়েছে, তবে তার প্রবেশ পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ঘষা কাঁচের দল। নীল এবং লালের সমাহার, কোনো এক ভিক্টোরিও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির দান, এর ফলে সেখানে একটা অদ্ভুত আবছা আলোর সৃষ্টি হয়েছে। বাঞ্চ ভাবলেন, অনেকটা দামী মণিমুক্তোর মতো, ভাবনারা হারিয়ে গেল। তিনি ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। এবার তাঁকে সিঁড়িতে পা রাখতে হবে।

নীচু হয়ে সাবধানে ফুলগুলো সাজিয়ে দিলেন, ঘাড় নীচু করে কিছু যেন বলার চেষ্টা করলেন–একী? কালো মতো বস্তুটা কী? এখানে মানুষের দেহ? তিনি অবাক হলেন। হাঁটু মুড়ে বসলেন ওই পুরুষ মানুষটির পাশে। তারপর ধীরে ধীরে মানুষটিকে উল্টে দিলেন। এবার মনে হল তিনি যেন কিছু একটা অনুমান করতে পারছেন। কোনো বিপদ ঘটে গেছে কি? হাত দিলেন তার নাড়ির ওপর, অতি মৃদু স্পন্দনে, এত মৃদু যে সহসা তা উপলব্ধি করা যায় না। তার মানে? এখনও কি লোকটা বেঁচে আছে? তার সমস্ত মুখে ভয়ার্ত সবুজের আবরণ। নাঃ এই মানুষটি মৃতার্ত, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

লোকটিকে দেখে মনে হয় তার বয়স পঁয়তাল্লিশের এপাশ ওপাশ, ঘন অথচ মলিন পোশাক তার পরিধানে। ভদ্রমহিলা কী আর করবেন? আবার নাড়ির ধ্বনি অনুভব করার চেষ্টা করলেন। মনে হল, এখন বোধ হয় তাকে কিছুটা শুশ্রূষা করা দরকার। তিনি এই মৃতপ্রায় লোকটির বুকে ঘুষি মারার চেষ্টা করলেন, যাতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে। আবার ভালো ভাবে তার মুখের দিকে তাকালেন। কী আশ্চর্য, তার বুকের ওপর এমন শক্ত করে কাপড় বাঁধা কেন? মনে হচ্ছে, কেউ কি তাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে? মস্ত বড়ো এক টুকরো কাপড়। কিছুই বুঝতে পারছেন না শ্রীমতী তবু রহস্যটা বোঝার চেষ্টা করছেন। তার মানে? ওই কালচে রঙা বস্তুটি কী? রক্ত শুকিয়ে এমন কালচে হয়ে গেছে? এবার বাঞ্চ আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। কোনো রকমে বসে পড়লেন, ভয়ের ছবি আঁকা হল তার সমস্ত তনু বাহারে।

এবার লোকটির চোখের দিকে তাকালেন। বন্ধ চোখ, বেশ বোঝা যাচ্ছে, উনি বোধহয় প্রচণ্ড ভয় পেয়েছেন। একটু বাদে ভদ্রলোক চোখ দুটি খুললেন, তাকালেন বাঞ্চের মুখের দিকে, সেই চোখের তারায় কোথাও কোনো অনুভূতির চিহ্ন নেই, না, ভয় অথবা উত্তেজনা বা সাহস অথবা অবদমন, কিছুই চোখে পড়ল না কিন্তু চোখ দুটি এখনও জীবন্ত এবং সেখানে বুদ্ধিমত্তার ছাপ আছে। ভদ্রলোক ঠোঁট খুলে কিছু বলার চেষ্টা করলেন। বাঞ্চ নীচু হয়ে তার কথা শুনতে চাইছেন। কী আশ্চর্য, একটি মাত্র শব্দ বেরিয়ে এল তার মুখ থেকে, ফিসফিসানি শব্দ–স্যাংচুয়ারি, অর্থাৎ অরণ্য আবাস।

এই শব্দ কী দারুণ এক অর্থ বহন করছে। বাঞ্চ ভাবলেন, কিন্তু এই অর্থের মধ্যে কী লুকিয়ে থাকতে পারে? একটু বাদে ওই ভদ্রলোক আবার কাঁপা কাঁপা শব্দে বললেন স্যাংচুয়ারি, মানে অরণ্য আবাস।

তারপর? কী এক তন্দ্রাচ্ছন্নতা এসে গ্রাস করল ওই মানুষটিকে, তিনি আবার কেমন যেন হয়ে গেলেন। শ্বাসের শব্দ শোনা গেল। চোখ দুটি আবার বন্ধ হয়ে গেল, আরও একবার বাঞ্চ ওই মানুষটিকে বাঁচাবার চেষ্টা করলেন, তার কবজিতে হাত রাখলেন, কত নাড়ির স্পন্দন বোঝার চেষ্টা করলেন, কী আশ্চর্য! নাড়ির গতি এখন আরও কমে গেছে, মাঝে মধ্যে থেকে থেকে নাড়ির স্পন্দন শোনা যাচ্ছে। এবার তাকে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।

তিনি বললেন–নড়বার চেষ্টা করবেন তো তাহলে ফল মারাত্মক হবে। আমি দেখছি। কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি।

এই কটি কথা বোধহয় ওই মৃতার্ত মানুষের কানে পৌঁছে গিয়েছিল। তিনি অতি কষ্টে চোখ খোলার চেষ্টা করলেন। না, এবার বোধহয় আর দেখতেই পাবেন না, তবু দেখবার চেষ্টা করলেন। পূর্ব জানলা দিয়ে ছিটকে ছুটে আসা আলোর উৎসই তাকে এখন বাঁচিয়ে দিতে পারে। তিনি বিড়িবিড় করে কিছু একটা বলার চেষ্টা করলেন, শব্দগুলো এত অস্পষ্ট যে বাঞ্চ তার অর্থ বুঝতেই পারলেন না। বাঞ্চ ভাবলেন এই মানুষটির মধ্যে বোধহয় একটা রহস্য লুকিয়ে আছে। কিন্তু? এটা কি তার স্বামীর নাম উচ্চারিত হচ্ছে?

উনি বললেন–জুলিয়ান? আপনি কি এখানে এসেছেন জুলিয়ানকে খুঁজে পাবার জন্য?

এই প্রশ্নের কোনো উত্তর ভেসে এল না মৃতপ্রায় ওই মানুষটির মুখ থেকে। ভদ্রলোক শুয়ে আছেন, নিশ্চল, নিশ্চপ, চোখ দুটি বোজান, এখনও অতি মৃদু ভাবে নাড়ি স্পন্দিত হচ্ছে। তার মানে এখনও প্রাণ আছে। অতএব বাঞ্চকে এবার সচল এবং সজাগ হতেই হবে।

বাঞ্চ উঠে দাঁড়ালেন, অতি দ্রুত চার্চ থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন। তিনি তাকালেন তার ঘড়ির দিকে, সময়টা দেখে ঘাড় নাড়লেন উৎসাহের আতিশয্যে। তার মানে? ডাঃ গ্রিফিথস তখনও হয়তো তার সার্জারিতে বসে আছেন, কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিনি সেখানে পৌঁছে যেতে পারবেন। অতি দ্রুত হাঁটতে শুরু করলেন শ্রীমতী বাঞ্চ। এখন আর নষ্ট করার মতো সময় নেই, এখানে অপেক্ষা করার কোনো মানে হয় না, সোজা পৌঁছে গেলেন ডাক্তারের সার্জারি রুমে।

বাঞ্চ হাঁফাতে হাঁফাতে বললেন–স্যার আপনাকে এখনই আসতে হবে, ওদিক একটি মানুষ মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। একটু পরীক্ষা করি দেখুন ওই মৃতার্ত মানুষটিকে। পরীক্ষায় কী জানা গেল বোঝা যাচ্ছে না।

ডাক্তার বললেন–এই মানুষটিকে এখনই এখান থেকে ভিকারেজে নিয়ে যেতে হবে, সেখানে গেলে আমি আরও ভালোভাবে ওনার চিকিৎসা করতে পারব।

–কিন্তু কীভাবে সেটা সম্ভব?

বাঞ্চ বললেন–ঠিক আছে। আমিও আপনার পাশাপাশি থাকব। আমি আপনার হাতের কাছে সব কিছু গুছিয়ে দেব। আমি হাবার্ট এবং জোনসকেও সঙ্গে পাব। আমার মনে হয় ওদের এখনই ডাকা উচিত। না হলে মানুষটিকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।

-তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আমি ভিকারেজকে এখনই ফোন করছি, একটা অ্যাম্বুলেন্স আনতে হবে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে যদি বেশি সময় নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে হয়তো….

ডাঃ গ্রিফিথস তার কথা শেষ করলেন না। তিনি অতি দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন। তার অভিব্যক্তির মধ্যে এখন একটা ভয়চকিত ভাব বিরাজ করছে, বাঞ্চের বুঝতে অসুবিধা হল না যে, আহত লোকটির আয়ু আর বেশিক্ষণ নেই।

বাঞ্চ বললেন–রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গেছে?

ডাঃ গ্রিফিথস মাথা নাড়লেন। তিনি বললেন-হা, কতক্ষণ ধরে উনি এখানে পড়ে আছেন?

বাঞ্চ বললেন–আমার মনে হয়, সারারাত ধরেই উনি এইভাবে পড়ে আছেন। আসলে সকাল বেলা হাবার্ট চার্চের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে, কাজ শুরু করে, কিন্তু আজ এখনও তো সে আসেনি।

পাঁচ মিনিট পরে ডাঃ গ্রিফিথসের কার্য ধারা শুরু হয়ে গেল। তিনি ইতিমধ্যে সব কিছু শেষ করে এসেছেন। তিনি ঘরের ভেতর ঢুকে পড়লেন। আহত লোকটি তখনও মাটিতেই শুয়ে আছেন। তাঁকে সোফার ওপর শুইয়ে দেওয়া হল। গায়ের ওপর কম্বল চাপিয়ে দেওয়া হল। বাঞ্চ তখনই কাজ করতে শুরু করেছেন, তিনি জল পূর্ণ একটি পাত্র নিয়ে এলেন, ডাক্তারের নির্দেশমতো লোকটির ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে লাগলেন।

গ্রিফিথস বললেন–ঠিক আছে, আমি এখনই একটা অ্যাম্বুলেন্স পাঠাবার চেষ্টা করছি। তবে পুলিশকে একটা খবর তো দিতেই হবে।

ডাঃ গ্রিফিথস উঠে দাঁড়ালেন। রোগীর দিকে তাকালেন, চোখ দুটি তখনও বন্ধ। তিনি আবার ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন, বেশ বোঝা যাচ্ছে কোনো কারণে স্নায়বিক বিকার ঘটে গেছে ওই মানুষটির। কারণটা কী? তা জানার চেষ্টা করতে হবে কি?

গ্রিফিথস বললেন–না, এই লোকটিকে গুলি করা হয়েছে, কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে এই গুলি করার ঘটনা বেশিক্ষণ আগে ঘটেনি। তিনি রুমাল দিয়ে ক্ষতস্থানটি ঢাকবার চেষ্টা করেছেন, আর যাতে রক্ত না বের হয় তাই ওই জায়গাটাকে ব্যান্ডেজ বাঁধার ব্যর্থ প্রয়াস করেছেন।

বাঞ্চ জানতে চাইলেন–এই ঘটনাটা কখন ঘটেছে বলে মনে হয়? আর কী ভাবে আপনি এত কথা বলতে পারছেন?

আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আমাকে এই সিদ্ধান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে। আমরা জানি যদি কোনো মানুষ আহত হয় তাহলে সে নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টা করে, শুধু তাই নয়, সেই মরিয়া ভাবটা চোখে মুখে ফুটিয়ে রাখারও চেষ্টা করে। কিন্তু এইক্ষেত্রেও দেখে মনে হয় সে বোধহয় আহত হয়নি, যেন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তার শরীরটা একেবারে এলিয়ে যায়। আমার মনে হচ্ছে এই ভদ্রলোকের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটে গেছে। কিন্তু আমার অনুমান ওনাকে চার্চের ভেতর গুলি করা হয়নি। ওনাকে বোধহয় অন্য কোথাও গুলি করা হয়েছে। অথবা উনি আত্মহত্যার চেষ্টাও করে থাকতে পারেন, তার পর রিভলভারটা ফেলে দিয়েছেন। চার্চের দিকে এগিয়ে গেছেন আহত পায়ে, বেশিক্ষণ আগে এই ঘটনা ঘটেনি, আমার মনে হয়, এটা বোধ হয় খুব টাটকা ঘটনা।

হঠাৎ বাঞ্চ বলে উঠলেন–উনি অস্ফুটভাবে একটি শব্দ বলেছেন, স্যাংচুয়ারি!

ডাক্তার ঘাড় ঘুরিয়ে বললেন-স্যাংচুয়ারি?

বাঞ্চ বললেন–এখানেই জুলিয়ান এসে গেছে। তিনি এগিয়ে গেলেন, তারপরে বললেন তার স্বামীকে–জুলিয়ান, তাড়াতাড়ি এখানে এসো।

রেভারেন্ড জুলিয়ান হারমন ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলেন। তার চেহারার মধ্যে বৌদ্ধিক ছায়া আছে। মনে হয় তিনি বোধ হয় যথেষ্ট প্রাজ্ঞ এবং বিচক্ষণ ব্যক্তি। আর এই প্রাজ্ঞতা তার মধ্যে এমন একটা পরিমিত বোধের জন্ম দিয়েছে, যা তার বয়সটাকে অকারণে বাড়িয়ে তুলেছে।

জুলিয়ান হারমন বললেন–কী হয়েছে? তাঁর হাবভাবের মধ্যে অদ্ভুত এক চঞ্চলতা প্রকাশ পাচ্ছে। যদিও তিনি সেটাকে ঢাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তিনি ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে এলেন।

বাঞ্চ অতি অল্প শব্দ খরচ করে পুরো ঘটনাটা স্বামীর কাছে ব্যক্ত করলেন।

বাঞ্চ বললেন–চার্চের ভেতর ওই মৃতার্ত মানুষটি পড়েছিলেন, ডাক্তার মনে করছেন তাকে গুলি করা হয়েছে। জুলিয়ান, আমার মনে হয় উনি ঘোরে তোমার নামই বলছিলেন।

সোফার কাছাকাছি জুলিয়ান এসে দাঁড়ালেন। তারপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আহত ব্যক্তিটিকে লক্ষ্য করলেন। আহা, হতভাগ্য মানুষটি, জুলিয়ান নিজের মনে বললেন। মাথা নেড়ে বললেন–না, আমি এই জীবনে কখনো এই মানুষটিকে দেখিনি। নাহ, কোনো জায়গাতে এনার সাথে আমার যোগযোগ হয়েছিল বলে মনে পড়ছে না।

এই সময় ওই মৃতপ্রায় মানুষটির চোখ দুটি খুলে গেল। তিনি একবার ডাক্তারের মুখের দিকে তাকালেন, তারপর জুলিয়ান হারমনকে দেখলেন। এবার বোধহয় বাঞ্চের পালা। চোখের তারায় কী যেন একটা উত্তেজনা ফুটে উঠেছে, তিনি বাঞ্চের মুখের দিকে তাকালেন। ডাক্তার গ্রিফিথস সামনের দিকে এগিয়ে এলেন।

উনি বললেন–আসল ঘটনাটা কিন্তু আমিই জানি।

তার চোখ দুটি বাঞ্চের চোখের ওপর নিবদ্ধ। ভদ্রলোকের কণ্ঠস্বর একেবারে ভেঙে গেছে। তিনি বললেন–প্লীজ…..প্লীজ…..

তারপর? সমস্ত শরীরে একটা অদ্ভুত কম্পন দেখা দিল। এক মুহূর্তের মধ্যে তাঁর প্রাণপাখি খাঁচা ছেড়ে কোথায় যেন উড়ে গেল।

সার্জেন্ট হায়াত পেনসিলটাকে নিয়ে কী যেন চিন্তা করছেন। নোটবুকের ওপর তাকিয়ে আছেন।

শ্রীমতী হারমন, তাহলে এইটুকুই আপনারা জানেন, তাইতো? এর থেকে আর কোনো কিছু বেশি খবর কি আমি আশা করতে পারি না?

বাঞ্চ বললেন –এটাই হল গল্প, তার কোটের পকেট থেকে এইসব জিনিস পাওয়া গেছে।

সার্জেন্ট হায়াত তাকালেন টেবিলের দিকে, তার মনে এখন নানা প্রশ্নের ভিড়। টেবিলে সাজানো আছে একটা ওয়ালেট, একটা পুরোনো দিনের ঘড়ি, এখানে ডবলিউ এফ এই দুটি অক্ষর খোদাই করা আছে। লন্ডনে যাবার রিটার্ন টিকিট, এছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এই দ্রব্যগুলি দেখে ওই ভদ্রলোকের মৃত্যু রহস্য সম্পর্কে কোনো কথাই জানা যাবে না।

বাঞ্চ জিজ্ঞাসা করলেন–আপনারা কি বুঝতে পারছেন, এই ভদ্রলোক আসলে কে?

জনৈক মিস্টার এবং মিসেস একলেস স্টেশনে ফোন করেছিলেন। আমার মনে হয় এই ভদ্রলোক বোধহয় মিসেস একলেসের ভাই, এনার নাম বোধহয় স্যান্ডবর্ন, ইনি প্রথম থেকেই খুব দুর্বল চিত্তের মানুষ ছিলেন। বেশ কিছু দিনের জন্য তার মধ্যে এক অদ্ভুত উন্মাদনা দেখা দিয়েছিল। তিনি ক্রমশ খারাপের দিকে এগিয়ে যান। একদিন আগে উনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছেন। আর ফিরে যাননি। মনে হয় ওনার সঙ্গেই বোধহয় রিভলভারটা ছিল।

-নাহ, আমার মনে হয় এটা হয়েছে আত্মঅবদমন থেকে। যে কোনো কারণে উনি বোধহয় খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তাই এই জীবনের ভার আর বহন করতে চাননি। অনেক সময় এমন ঘটনা ঘটে যায়। হতাশা থেকে তো মানুষ জীবন সম্পর্কে নিস্পৃহ হয়ে ওঠে।

বাঞ্চ ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন–না, আমি জানতে চাইছি উনি এখানে এলেন কেন? রহস্যটা আমার কাছে বড়ো অদ্ভুত বলে মনে হচ্ছে।

সার্জেন্ট হায়াত এই ব্যাপারে কী জবাব দেবেন? তিনি পুরোনো দিনের পদ্ধতি অনুসারে বললেন–তিনি এখানে এসেছেন, আমার জানা আছে।

আবার অধৈর্য হয়ে উঠলেন বাঞ্চ। জানতে চাইলেন, সেটা তো আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু পৃথিবীতে এত জায়গা থাকতে বেছে বেছে এই চার্চেই এলেন কেন? এই রহস্যটা আমার কাছে পরিষ্কার হচ্ছে না।

হায়াত বললেন–সত্যি কথা বলতে কী মিসেস হারমন, ব্যাপারটা আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না। এর অন্তরালে কোন কারণ লুকিয়ে আছে সেটা জানার চেষ্টা করতে হবে। তবে যদি মনের ভারসাম্য হারিয়ে যায়….

বাঞ্চ তার কথা শেষ করতে দিলেন না। বোঝা গেল তিনি বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠেছেন। তিনি বললেন–সে যা হোক, আপনি কিন্তু কিছুতেই আমার মনকে শান্তি করতে পারছেন না। কোনো ব্যক্তি কেন বাস ধরে এমন একটি ছোট্ট শহরতলিতে এসে পৌঁছবেন, তিনি যেখানকার কিছুই জানেন না, ঠিক তো?

বাঞ্চের কথার মধ্যে বুদ্ধিমত্তার ছায়া স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সার্জেন্ট হায়াত বললেন–না, মনে হচ্ছে এই জায়গাটা সম্পর্কে তিনি খুব একটা ওয়াকিবহাল ছিলেন না। এবার তার কণ্ঠস্বরের মধ্যে কিছুটা ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গিমা জেগে উঠেছে। অকারণে খুক খুক করে কাশলেন তিনি। নিজের দুটি পায়ের ওপর ভর দিয়ে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবার চেষ্টা করলেন। তারপর বললেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই মিস্টার এবং মিসেস একলেস এখানে এসে পৌঁছবেন। ম্যাডাম, আপনি আর একটুখানি সময় অপেক্ষা করুন, আমার মনে হচ্ছে আসল তথ্যটা ওই দম্পতির কাছ থেকেই জানা যাবে। আশাকরি একটুখানি সময় অপেক্ষা করতে আপনার কোনো আপত্তি থাকবে না।

বাঞ্চ তির্যক কণ্ঠস্বরে বলে উঠলেন–না, না, সে ব্যাপারে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমাকে তো এখন অপেক্ষা করতেই হবে। আসলে ওনাদের মধ্যে আমি কিছু গোপন শব্দ লুকিয়ে রেখেছি। সেসব বলে দেব। এই কথায় সার্জেন্ট হায়াতের চোখে মুখে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। তিনি বললেন–ঠিক আছে, আপনি না হয় একটুখানি সময় অপেক্ষা করুন।

বাঞ্চ বললেন–আমি ভাবছি, এটা বোধহয় একটা হত্যার ঘটনা নয়, এর অন্তরালে অন্য কোনো রহস্য ঘনীভূত হয়ে আছে।

ভিকারেজ গেটের মধ্যে দিয়ে একটা গাড়ি প্রবেশ করল। সার্জেন্ট হায়াত উদাসীন ভাবে গাড়িটির দিকে তাকলেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য করলেন–মনে হয় শ্রী এবং শ্রীমতী একলেস এখানে এসে গেছেন, ম্যাডাম, ওঁরা আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন নিশ্চয়ই।

এই কথা শুনে ক্ষণকালের জন্য বাঞ্চ কী যেন চিন্তা করলেন। বেশ বোঝা যাচ্ছে তিনি মনে মনে সাহস সঞ্চয় করার চেষ্টা করছেন। আসলে তাঁকে এখন একটা শোকাবহ বাতাবরণের সামনে এসে দাঁড়াতে হবে। এই অস্বস্তিকর মুহূর্তটিকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি জানেন তা সম্ভব নয়। বাঞ্চ অনুচ্চ কণ্ঠস্বরে বললেন, –আমার মনে হয়, জুলিয়ানকে ডেকে পাঠানো দরকার। জুলিয়ান আমাকে সাহায্য করতে পারবে। যখন মানুষের মনের আকাশে শোকের মেঘ উড়ে যায়, তখন একজন পাদরির সাহায্য দরকার হয়।

শ্রী এবং শ্রীমতী একলেস-কে দেখে মনে হল বাঞ্চ যেমনটি অনুমান করেছিলেন তারা ঠিক তেমনটি। বাঞ্চ তাদের দিকে ভালো করে তাকালেন। কেমন একটা অনুভূতির সঞ্চারণ ঘটে গেল তার মনের মধ্যে। শান্তভাবে তিনি ওই দম্পতিকে অভ্যর্থনা জানালেন। কিন্তু তার মনের ভেতর বিস্ময়ের উদ্রেক হল। মিস্টার একলেসকে আমরা একজন সুদেহের অধিকারী পুরুষ বলে মনে করতে পারি। পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ আছে, যাদের দেখলে মনে হয় তারা সবসময় সুখের সাগরে অবগাহন করতে ভালোবাসে। এই বসুন্ধরাতে কোনো দুঃখ আছে, সেটা তারা ভুলে থাকতে ভালোবাসেন। তাকে দেখে সেকথাই মনে হল বাঞ্চের, এবার শ্রীমতী একলেসের কথা বলি, একলেসকে দেখলে কেমন অগোছালো স্বভাবের মহিলা বলে মনে হয়। তাঁর মুখটা গোলাকৃতি, আকারে ছোটো, তার কণ্ঠস্বরের মধ্যে একটা তীক্ষ্ণতা আছে, কিন্তু সেটা খুবই মিনমিনে এবং তার মধ্যে ভেসে উঠছে অনিশ্চয়তা।

তিনি বললেন–মিসেস হারমন, আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এটা আমাদের কাছে কত বড়ো একটা শোকের ঘটনা।

বাঞ্চ বলে উঠলেন–হ্যাঁ, আমি তা অনুমান করতে পারছি। কিন্তু যেটা ঘটে গেছে সেটাকে তো আটকাবার কোনো উপায় নেই। এখন আসুন, আমরা ঠাণ্ডা মাথায় পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আলাপ আলোচনা করি। অনুগ্রহ করে আপনি একটু বসবেন কি? এই সময় আপনি কি কিছু একটা খাবেন? এখন কি চা খাওয়ার সময় হয়ে গেছে?

বেশ বুঝতে পারা যাচ্ছে অসংলগ্ন কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে বাঞ্চ তার হারানো ব্যক্তিত্ব পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় মেতে উঠেছেন। শ্রীযুক্ত একলেস হাত নেড়ে বললেন-না, না, এখন আমরা কিছুই খাব না। আমাদের যে আপনি খেতে বলেছেন এ জন্য আপনাকে আমি অজস্র ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখন কিছু কথা বলতে হবে। বেচারি উইলিয়াম কী বলেছে সেটা আমাদের জানা দরকার। তার সম্পর্কে আপনি কোনো খবর জানতে পেরেছেন কি?

শ্রীযুক্ত একলেসের কণ্ঠস্বরের ভেতর কৌতূহল ঝরে পড়ছে। এবার শ্রীমতী একলেসের পালা। তিনি বললেন–আহা, বেচারি ভাইটি দীর্ঘদিন বিদেশে ঘুরে বেড়িয়েছে। আমার মনে হয় ওর বোধহয় এমন কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছিল যেগুলোকে আমরা ঠিক মতো ব্যাখ্যা করতে পারব না। জীবনে চলার পথে অনেক সময় আমাদের নানা অনভিপ্রেত ঘটনার সামনে এসে দাঁড়াতে হয়। এমন কিছু মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয় যাদের অতীতটা খুব একটা উজ্জ্বল নয়। কোনো একটা অজ্ঞাত কারণে আমার ভাইটি খুব শান্ত স্বভাবের হয়ে যায়। সবসময় নিজের তৈরি করা জগতের মধ্যে বাস করতে ভালোবাসত। আসলে যখন সে বাড়িতে ফিরে আসে এখন তার চরিত্রের মধ্যে লক্ষণীয় পরিবর্তনটা আমার নজরে পড়েছিল। বারবার সে বলত, এই পৃথিবীটা তার পক্ষে বাসযোগ্য গ্রহ নয়। এখানে সে কিছুই করতে পারবে না। হতভাগ্য! এছাড়া আর আমি কী বলতে পারি তাকে ছোটোবেলা থেকেই আমার ভাইটি ছিল এমন আবেগপ্রবণ আর পালটানো মনোভাবের। সত্য, এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে প্রতি মুহূর্তে আমাদের কত রক্তাক্ত সংগ্রামের সামনে দাঁড়াতে হয়। কত প্রতিবন্ধকতার সামনে এসে বসতে হয়, তার সঙ্গে লড়াই করার মতো সাহস থাকা দরকার। তা বলে সে নিজেকে এইভাবে বিসর্জন দেবে, আমি তো ভাবতেই পারছি না।

বাঞ্চ দুজনের দিকে তাকালেন। কিছুক্ষণ সময় কেটে গেল, তখন সেখানে বিরাজ করছে সীমাহীন নৈঃশব্দ্য। আসলে মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যখন ভাষারা সব হারিয়ে যায়।

শ্ৰীমতী একলেস বললেন-আমার স্বামীর রিভলভারটা ঘিরেই এই ঘটনাটা ঘটে গেছে। কিন্তু রিভলভারটা সে যে নিয়েছে সেটা কি আমরা জানতাম না। সে বাসে চেপে এখানে এসেছে। এখানে একা কেন, সেটাও আমি বুঝতে পারছি না। সে তো এই ঘটনাটা আমাদের বাড়িতেও ঘটাতে পারত।

মিস্টার একলেস বিড় বিড় করে বলে উঠলেন–হতভাগ্য, তার জন্য আমার অনুতাপ হচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বললেন-এই কাণ্ডটা করা তার পক্ষে উচিত। নি।

আবার কিছুক্ষণ সীমাবদ্ধ নীরবতা। শ্রীযুক্ত একলেস বলে উঠলেন–সে কি কোনো খবর দিয়েছে? তার মুখ থেকে উচ্চারিত শেষ শব্দগুলি কী ছিল? তার মধ্যে কোনো লুকোনো সংকেত ছিল কি?

তার চোখ দুটো হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সেই উজ্জ্বল চোখ মেলে তিনি বাঞ্চকে পর্যবেক্ষণ করলেন। শ্রীমতী একলেসকেও দেখা গেল বাঞ্চের দিকে তাকিয়ে থাকতে। এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য তিনি যে মনে মনে কতটা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন সেটা তাঁর আচরণে পরিস্ফুটিত হল। যদিও তিনি প্রাণপণ চেষ্টায় তার মনের মধ্যে হঠাৎ উথলে ওঠা এই উত্তেজনাকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর অভিব্যক্তির এই হঠাৎ পরিবর্তনে বাঞ্চ অবাক হলেন।

বাঞ্চ শান্তভাবে বললেন না, তিনি একেবারে মৃতার্ত অবস্থায় এইভাবে এসে পৌঁছেছিলেন। আর তার মুখ থেকে একটি শব্দ বেরিয়েছে–স্যাংচুয়ারি অর্থাৎ অরণ্য আবাস। এই শব্দের অভ্যন্তরে কোন্ গূঢ় অর্থ লুকিয়ে আছে তা আমি বুঝতেই পারছি না।

শ্ৰীমতী একলেস অবাক হওয়া কণ্ঠস্বরে বললেন–স্যাংচুয়ারি? এই শব্দটা ও বলল কেন?

শ্রী একলেস বাধা দিয়ে বলার চেষ্টা করলেন-আমার মনে হয়, এটা বোধহয় খুব পবিত্র একটা জায়গা হয়তো কোনো এক পাপ থেকে সে নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টা করছিল। তার মনের ভেতর অনুশোচনার আগুন জ্বলে উঠেছিল।

বাঞ্চ বললেন-মৃত্যুর আগে ওই ভদ্রলোক আরও কিছু বলার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেই চেষ্টা তার সফল হয়নি। তিনি প্লীজ এই শব্দটা বলেছিলেন। তারপর তাঁর মুখ থেকে আর একটি শব্দও বেরিয়ে আসেনি।

শ্রীমতী একলেস রুমাল দিয়ে চোখ মুছলেন। তারপর একটু হেঁকে বললেন–ওই আমার প্রিয় ভাইটি, আমি ব্যাপারটা কী করে সহ্য করব বুঝতেই পারছি না।

বেশ বোঝা গেছে এই ঘটনাতে তিনি বিহ্বল হয়ে উঠেছেন।

এবার তার স্বামীর পালা, তিনি বললেন-পান, এই ব্যাপারটাকে শান্তভাবে মানতেই হবে। সব জিনিস তো আমরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি না। বেচারি উইলি, এখন সে তো শান্তির শয্যায় শুয়ে আছে। এসো, আমরা ব্যাপারটা এইভাবে ভাববার চেষ্টা করি। শ্রীমতী হারমন, আশা করি আমাদের আগমনে আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কোন পরিবর্তন ঘটেনি। আমি জানি একজন ভাইকারের স্ত্রীকে কত কর্মব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটাতে হয়, ব্যাপারটা আমাদের স্পষ্ট জানা আছে।

এবার করমর্দনের পালা। তারপর একলেসরা যাবার জন্য এগিয়ে গেলেন। তাদের আচরণের ভেতর দ্রুততার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যেতে যেতে শ্রীমতী বলে উঠলেন–আর কিছু কি বলার বাকি থেকে গেল? আচ্ছা, আপনি কি তার গায়ে কোটটা দেখেছেন?

বাঞ্চ অবাক হওয়া কণ্ঠস্বরে শুধোলেন–কোট? কী বলতে চাইছেন আপনি?

শ্রীমতী একলেস বললেন–না, অনেক সময় মানুষ তার পছন্দের পোশাক পরেই আত্মহত্যা করে। বুঝতে পারছেন তো–এখানে আবেগ কাজ করে।

-তার কাছ থেকে একটা ঘড়ি পাওয়া গেছে, আর একটা ওয়ালেট, সেখানে রেলের টিকিট ছিল, এছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি। আমি সব কিছু সার্জেন্ট-এর হাতে তুলে দিয়েছি।

থেমে থেমে কথা বললেন বাঞ্চ।

শ্ৰীযুক্ত একলেস বললেন–ঠিক আছে, তাহলে এবার আমাদের যেতে হবে। আমার মনে হয় ওই ওয়ালেটের মধ্যে বোধ হয় ওর ব্যক্তিগত কাগজগুলো ছিল।

বাঞ্চ বললেন-না, সেখানে একটা এক পাউন্ডের নোট ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আর কিছু না।

–কোনো চিঠি ছিল না? চিঠি, অথবা চিরকূট?

এই প্রশ্ন শুনে বাঞ্চ মাথা নাড়লেন।

–ঠিক আছে, আপনাকে আবার ধন্যবাদ জানাচ্ছি শ্রীমতী হারমন। যে কোটটা সে পরে বেরিয়েছিল সেটা কোথায় গেল? সার্জেন্টের হাতে গেল কি?

বাঞ্চ সব কিছু মনে করার চেষ্টা করছিলেন।

তিনি বললেন–না, আমার তো মনে পড়ছে না, আমি আরও একবার পুরো ব্যাপারটা ভেবে দেখার চেষ্টা করি। ডাক্তার আর আমি তার কোট খুলে দিয়েছিলাম। যাতে ওই ক্ষতচিহ্নটা পরিষ্কার ভাবে দেখা যায়।

এবার তিনি ঘরের চার পাশে শূন্য দৃষ্টিতে তাকালেন। তারপর ধীরে ধীরে বললেন–কোটের ওপর রক্তের দাগ কালচে হয়ে লেগে ছিল। আমি সেটা ওপরে নিয়ে গিয়েছিলাম, পরিষ্কার করার জন্য। এখন আমার বেশ স্পষ্ট মনে পড়ছে।

–আপনি যদি কিছু মনে না করেন, শ্রীমতী হারমন, তাহলে কষ্ট করে আপনাকে একবার সেখানে যেতে হবে। ওই কোটটাই হল মৃত ব্যক্তিটির শেষ স্মৃতিচিহ্ন, বুঝতেই তো পারছেন এই ব্যাপারটা আমার স্ত্রীর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ওই কোটটা ছাড়া আর কোনো স্মৃতি আমরা ধরে রাখব বলুন তো?

বাঞ্চ বললেন–ঠিক আছে, আগে কোটটা পরিষ্কার করতে হবে। তার গায়ে রক্তের কলঙ্ক রেখা লেগে রয়েছে। এই কথা শুনে ভদ্রলোক হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বললেন–আমি খুবই দুঃখিত, যে মেয়েটি আমার সংসার দেখাশোনা করে সে ওই কোটটাকে নিয়ে চাদরে বেঁধে রেখেছিল। আর একটু হলেই কোটটাকে সে বেঠকখানায় পাঠিয়ে দিত। আমার সৌভাগ্য তেমন ঘটনা ঘটেনি। অনেকক্ষণ সময় লাগল ওটাকে খুঁজে বার করতে। এই দেখুন, আমি এই কোটটা নিয়ে এসেছি। এটাকে একটা বাদামি কাগজে মুড়িয়ে আপনাদের হাতে তুলে দিই কেমন?

বাঞ্চের এই প্রয়াসে ভদ্রমহিলা অথবা ভদ্রলোকের চোখে মুখে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। এবার বিদায় নেবার পালা। একলেস দম্পতি জীপে উঠে চার্চ প্রাঙ্গন থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে গেলেন।

বাঞ্চ এবার ঠাণ্ডা মাথায় পুরো ব্যাপারটা চিন্তা করার চেষ্টা করলেন। তিনি ঘরের ভেতর প্রবেশ করলেন, তারপর ধীর পায়ে হেঁটে গেলেন তার একান্ত স্টাডিতে। যখনই তার মাথায় নানা চিন্তার মেঘ জমে, তিনি তখন স্টাডিতে বসে সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। ওখানে রেভারেন্ড জুলিয়ান হারমন বসেছিলেন। তিনি বোধহয় শান্তভাবে কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছিলেন। আসলে তিনি একটি নীতিবাক্য রচনা করছিলেন। সময় ও সুযোগ পেলে এমন ভাবেই তিনি ছন্দের তালে তালে নীতিবাক্য লিখতে ভালোবাসেন। তাঁর মনে হল এবার বোধহয় তার ভাবনায় ছেদ পড়ে যাবে। কারণ তিনি যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছিলেন, সেটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জুডিকা এবং পথদর্শনের মধ্যে রাজনৈতিক টানা পোড়েন, যেটা ঘটে গিয়েছিল মাইনাসের রাজত্বকালে হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে গেল।

তিনি বললেন–প্রিয়তমা?

বাঞ্চ বললেন–জুলিয়ান স্যাংচুয়ারি শব্দটির আসল অর্থ কী, তুমি কি তা জানো?

জুলিয়ান অবাক চোখে স্ত্রীর দিলে তাকালেন। বেশ বুঝতে পারা যাচ্ছে, অভাবিত এই ঘটনাটা তাকে কতটা মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে। আসলে তিনি শান্ত জীবনযাপন করতেই ভালোবাসেন।

ভদ্রলোক বললেন–ঠিক আছে, আমি তোমাকে ওই শব্দটার আসল মানে বুঝিয়ে দিচ্ছি। রোমান এবং গ্রিক মন্দিরগুলোতে একটা ছোটো কুঠুরি থাকে, যেখানে কোনো এক দেবতার মূর্তি বসানো থাকে, তুমি বলতে পারো এটা হল দেবী এই শব্দটির ল্যাটিন পরিশব্দ, আজ এর মধ্যে আরেকটা ব্যাপার লুকিয়ে আছে যাকে আমরা নিরাপত্তা বলতে পারি।

যে কোনো বিষয়ে ভদ্রলোকের অসীম জ্ঞান। আসলে একেবারে ছোট বয়স থেকে তিনি গভীর ভাবে পড়াশোনা করেছেন বলেই বোধ হয় এই জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন। তিনি গড়গড়িয়ে বলে চললেন–৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে এই শব্দটার একটা আলাদা গুরুত্ব ছিল। তখনকার দিনের খ্রিস্টিয় চার্চে এই শব্দটি একটি অতিরিক্ত মর্যাদা পেত। এখান থেকেই জনগণের প্রতি নানা নির্দেশ উচ্চারিত হত। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সব থেকে পুরোনো যে স্যাংচুয়ারিটির অস্তিত্ব আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেটি ৬০০ খ্রিস্টাব্দের এথেলবাট থেকে। তখন কিছু নির্দেশ জারি হয়েছিল, জনগণ এই নির্দেশনামা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে বাধ্য থাকত।

উনি হয়তো আরও কিছু কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এতটা শোনার মতো ধৈর্য শ্ৰীমতীর নেই। মাঝে মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটে থাকে। এবার এই কথোপকথনে ইতি টানতে হবে। শ্রীমতী বলে উঠলেন–প্রিয়তম, সত্যি তুমি কত জানো সব কিছু। তোমার জন্য আমার বেশ অহঙ্কার হয়।

উনি ঝুঁকে পড়ে স্বামীর নাকের ডগায় চুমুর চিহ্ন এঁকে দিলেন। হঠাৎ এই পট পরিবর্তনে জুলিয়ান কেমন যেন হয়ে গেলেন। মনে হল তিনি বোধহয় একটা কুকুরছানা, দারুন একটা খেলা দেখিয়ে মনিব পত্নীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

বাঞ্চ বলে উঠলেন–একলেস দম্পতি এখানে এসেছিলেন।

এবার ভাইকারের অবাক হওয়ার পালা। আসলে তিনি গভীর জ্ঞান সাগরে সাঁতার কাটতে ভালোবাসেন। তাঁর স্র ভঙ্গিতে জেগে উঠল ঔৎসুক্য। তিনি বললেন একলেস? আমার তো ঠিক মনে পড়ছে না……

–সেকি তুমি এর মধ্যেই তাদের ভুলে গেলে? চার্চে যে মানুষটি মারা গিয়েছিলেন, তাঁর বোন এবং বোনের স্বামী।

প্রিয়তমা তোমার উচিত ছিল আমাকে ডেকে পাঠানো।

বাঞ্চ কঠিন কণ্ঠস্বরে বললেন–আমি তার কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছি না, তারা তো শোক সংবরণের জন্য এখানে আসেননি, তারা এসেছিলেন সম্পূর্ণ অন্য কাজে। আমি যদি কালকের খাবারটা ক্যাসারোলে তুলে রাখি তাহলে তুমি কি সেটা খেয়ে নিতে পারবে, জুলিয়ান?

আমার মনে হচ্ছে, আমাকে লন্ডনে যেতে হবে, সেখানে সেল শুরু হয়ে যাবে।

রেভারেন্ড আবার অবাক হয়ে গেলেন। তিনি শূন্য চোখে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন–সেলস মানে জাহাজ? সেটা কি ইয়ট, নাকি একটা নৌকা, অথবা এমন কিছু?

এবার বোধহয় বাঞ্চের রেগে যাবার পালা। তার পরিবর্তে তিনি খিল খিলিয়ে হেসে উঠে বললেন–না, ডার্লিং বাঘোস অ্যান্ড কোটম্যানের সাদা জিনিস পত্রের সেল শুরু হয়ে গিয়েছে। তুমি তো জান, এখন আমার বেডশিটের কত দরকার। টেবিল কভারটা নোংরা হয়ে গেছে। তোয়ালেগুলোও পালটাতে হবে। আরও কত কিছু টুকিটাকি জিনিস করতে হবে। আমি জানি না গ্লাসক্লথগুলো কী অবস্থা। কেচে কেচে সেগুলো তো প্রায় ছিঁড়েই গেছে। এছাড়া গভীর ভাবে চিন্তা করে তিনি বললেন-আমার মনে হয় একবার আন্টগ্র্যানের সঙ্গে দেখা করাটা খুবই জরুরী।

.

০২.

এবার আমরা ওই সুন্দর স্বভাবের বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা মিস মার্পল সম্পর্কে দুচার কথা শুনে নিই। এই মুহূর্তে তিনি তার মেট্রোপলিসে বসে ছুটির দিনগুলি উপভোগ করছিলেন। দেখতে দেখতে পনেরোটি দিন কেটে গেছে আহা, ভাইপোর কেনা এই স্টুডিও টাইপের ব্যালকনিতে থাকতে বেশ ভালোই লাগে। এখানে জীবনের সমস্ত উন্মাদনা জমা হয়েছে, জীবনটা এখানে বেশ অলসভাবেই কেটে যায়।

উনি বললেন–প্রিয়তম রেমন্ড, আমার ভাইপো আর জোয়ান আমেরিকাতে গেছে। দিন পনেরোর জন্য। তারা বলেছে আমি যেন এখানে এসে ফ্ল্যাটে দিন কাটাই। ডিয়ার বাঞ্চ, দেখি, তোমার চোখে মুখে এমন অস্বস্তিকর ছাপ পড়েছে কেন? তুমি কি কোনো ব্যাপার নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করছ?

বাঞ্চকে আমরা কী বলব? বাঞ্চ মিস মার্কলের অতি প্রিয়, দুজনের মধ্যে দীর্ঘকালীন সম্পর্ক। ওই বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা দুচোখের তারায় স্নেহের চাউনি এনে বাঞ্চকে ভালোভাবে দেখলেন। বেশ বোঝা যাচ্ছে, বাঞ্চের চোখে মুখে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তার মাথায় বসানো ফেল্ট হ্যাটটা বোধ হয় সেকথাই বলছে। এবার বাঞ্চ কি তার গল্পকথা শোনাবেন?

বাঞ্চের কণ্ঠস্বর পরিষ্কার। তিনি শান্তভাবে বললেন–কিছু কথা, মিস। মিস মার্পল সেই কথা শুনে মাথা নাড়লেন। বাঞ্চের গল্প বলা শেষ হয়ে গেল কি? মিস মার্পল বারবার বলার চেষ্টা করলেন–ঠিক আছে, আমি দেখছি, তুমি এত চিন্তা করো না।

বাঞ্চ বললেন-এই জন্যই তো আমি তোমার সঙ্গে দেখা করতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলাম। তুমি কি সব ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছ? তুমি তো খুব চালাক তাই না?

-তুমি কি আমার থেকে কম চালাক? এবার বোধ হয় ঠাট্টা তামাশার পালা শুরু হয়ে গেল।

-না, না, আমি না, আমি বোধহয় জুলিয়ানকেও চালাকিতে হারাতে পারব না।

-হ্যাঁ, জুলিয়ান সম্পর্কে আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে, তার মধ্যে এমন একটা সুন্দর বৌদ্ধিক ছাপ আছে তাকে আমি প্রশংসা না করে পারি না।

মিস মার্পলের এই সহজ সরল স্বীকারোক্তিতে মন ভরে গেল বাঞ্চের। স্বামীর প্রশংসা শুনলে কোন স্ত্রী না খুশি হয়?

তাহলে? বাঞ্চ বলে উঠলেন, জুলিয়ানের মধ্যে যে বুদ্ধির ছাপ আছে সেখান দিয়ে বিচার করলে আমি তো একেবারে নির্বোধ, তাই নয় কি?

বাঞ্চ, তোমার মধ্যে একটা সাধারণ বোধবুদ্ধি আছে, তোমার বুদ্ধির চাতুর্য মাঝে মধ্যে আমাকেও মোহিত করে দেয়।

একথা বলে আমাকে রাগিয়ে দেবার চেষ্টা করো না। এতে ভালো হবে না বলছি। আমি জুলিয়ানকে সব কথা জিজ্ঞাসা করতে পারতাম, কিন্তু সে তার ওপর চাপানো কাজের দায়িত্ব নিয়ে এত ব্যস্ত থাকে যে, আমার কথা মন দিয়ে শুনত না। তাই শেষ পর্যন্ত আমি বাধ্য হয়ে তোমার কাছে এসেছি।…….

এই কথাগুলির মধ্যে এমন একটা স্থির প্রজ্ঞা নির্গত হচ্ছে যে, মিস মার্পল অবাক না হয়ে পারলেন না। তিনি বললেন –একটু শান্ত হয়ে বসো, আমরা মেয়েরা অল্পতেই কেমন অধৈর্য হয়ে যাই। তুমি তো পুরো ঘটনাটা আমার কাছে বলেছ, বাঞ্চ, আমি বুঝতে পারছি না এর সঙ্গে তোমার যোগসূত্রতা কতখানি? এটাকে তুমি কেন একটা দুর্ঘটনা বা অঘটন বলে মনে করছ না?

বাঞ্চ বলে উঠলেন–না, না, একটা ব্যাপার আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না, এত জায়গা থাকতে ওই ভদ্রলোক এখানে কেন এলেন? তিনি কি ওই স্যাংচুয়ারি বা গোপন কুঠুরির সম্পর্কে সব কথা জানতেন? জুলিয়ান যেভাবে ব্যাখ্যা করেছে, সেটা শুনে আমি তো একেবারে অবাক হয়ে গিয়েছি। তার মানে ওই ভদ্রলোক পড়াশোনা করা মানুষ। যথেষ্ট শিক্ষাদীক্ষার অহঙ্কার আছে তার, অথচ তিনি জীবন সম্পর্কে এতখানি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠলেন কেমন করে? যদি উনি সত্যি সত্যি নিজেকে নিজেই গুলি করে থাকেন, তাহলে তিনি তো এখানে বেশিক্ষণ আগে আসেন নি। মৃত্যুর আগে উনি স্যাংচুয়ারি শব্দটা উচ্চারণ করেছেন, সেটা আমার কানে ঢুকে গেছে। স্যাংচুয়ারি বলতে কী বোঝায়? স্যাংচুয়ারি বলতে বোঝায় চার্চের এমন এক গোপন প্রকোষ্ট যেখানে বেরিয়ে গেলে তুমি বাইরের আক্রমণ থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে পারবে। কোনো কিছুই তোমাকে আর স্পর্শ করতে পারবে না। এমন কি এক সময় আইনের লম্বা হাতও স্যাংচুয়ারিতে গিয়ে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পারত না। তা হলে ভেবে দেখ, এই চার্চের গঠন সম্পর্কে ওই ভদ্রলোকের কী নিখুঁত ধারণা ছিল। না হলে উনি কী করে বুঝতে পারবেন যে যেখানে একটি গোপন কুঠুরি আছে।

এই কথাগুলি শেষ করে মিস মার্পলের দিকে সম্ভ্রম দৃষ্টিতে তাকালেন বাঞ্চ। মাথা নাড়লেন। বাঞ্চ বলে চললেন–একলেসদের দেখে মনে হল এই ব্যাপারটা সম্পর্কে তারা খুব একটা আগ্রহী নন। হয়তো কোনো কারণে একটা অদ্ভুত উদাসীনতা ওঁদের ব্যক্তিসত্ত্বাকে গ্রাস করেছে তারা ওই ব্যাপার নিয়ে খুব বেশি কথা বলতে চাইলেন না। এবার আমি ঘড়িটার কথা বলি। মৃত মানুষটির ঘড়ি, সেখানে ডবলিউ আর এস এই শব্দ দুটি বসানো ছিল। পেছনে দিকে কিন্তু ঘড়িটি খোলার পর আমি দেখেছি খুব ছোট ছোট কয়েকটি অক্ষর লেখা আছে, ওয়ালটারকে দেওয়া হয়েছে, বাবার উপহার, একটি তারিখ চোখে পড়েছে। কিন্তু একলেস তো কখনো ওই মানুষটিকে ওয়ালটার নামে ডাকেনি। তারা বারবার উইলিয়াম অথবা বিল–এই নামেই ডাকছিলেন। তাহলে ওয়ালটার কে? এই ব্যাপারটার মাথামুণ্ডু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

মিস মার্পলকে মনে হল তিনি বাঞ্চের কথা শুনতে বেশি মাত্রায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আসলে যাঁরা মিস মার্পলকে চেনেন, তারা জানেন, তিনি এখন গভীর চিন্তার জগতে পৌঁছে গিয়েছেন।

বাঞ্চ গড়গড়িয়ে বলতে থাকেন–আমরা একসময় একজন মানুষকে তার ধর্মদত্ত নামে ডেকে থাকি না। আশা করি তুমি আমার কথার আসল অর্থ বুঝতে পেরেছ। হয়তো ওই ভদ্রলোককে উইলিয়াম নামেই ডাকা হত, অথবা ওকে বগরি কিংবা ক্যারটস নামেও ডাকা হতে পারে। কিন্তু তুমি যদি কারোর বোন হও, তাহলে তুমি কি তার আসল ডাক নাম কটা জানবে না? উইলিয়াম অথবা বিলকে ওয়ালটার নামে ডাকা যেতে পারে কি? আমার কেবলই মনে হচ্ছে……..

মিস মার্পলের মাথার আকাশে বিদ্যুৎ চমক। তিনি চকিতে বলে ওঠেন–তার মানে তুমি অনুমান করছ ওই ভদ্রমহিলা সত্যি সত্যি ওই মৃত মানুষটির বোন নন, তাই তো?

এই ব্যাপারে আমি ঠিক স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না। কিন্তু ওনার হাবভাব দেখে আমার কেবলই মনে হয়েছে, উনি ওনার ব্যক্তিত্বের মধ্যে একটা আরোপিত সত্তা আনতে চেষ্টা করছিলেন। শুধু ওনাকে বলব কেন, ওনার স্বামীকেও আমি একইভাবে দোষী সাব্যস্ত করতে পারি। আমার কেবলই মনে হচ্ছে, ওঁরা ভিকারিজে এসেছিলেন কোনো জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে এবং জানতে মৃত্যুর আগেই ভদ্রলোকের মুখ থেকে কোনো শব্দ উচ্চারিত হয়েছে কিনা। তারা এ ব্যাপারে বারবার প্রশ্ন করেছিলেন। আমি যখন শেষ পর্যন্ত বললাম যে, উনি মৃত্যুর আগে কোনো কথা বলতে পারেননি, তখন ওনাদের মুখমণ্ডলে একটা অদ্ভুত প্রশান্তির ভাব ফুটে উঠল। প্রশান্তি বললে ভুল হবে, মনে হল উদ্বিগ্ন অবস্থা থেকে ওনারা মুক্তি পেয়েছেন। ব্যাপারটা আমার চোখ এড়ায়নি।

বাঞ্চ তার বক্তব্য শেষ করলেন–আমার স্থির সিদ্ধান্ত, একলেসই ওই ভদ্রলোককে গুলি করে হত্যা করেছেন।

মিস মার্পল বলে উঠলেন–সেকী? তুমি বলছ, এটা আত্মহত্যার ঘটনা নয়, এটা হল ঠাণ্ডা মাথায় খুন?

বাঞ্চ বললেন–হ্যাঁ, এ ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই। তাই তো ডার্লিং, আমি তোমার কাছে এসেছি, তোমার বুদ্ধিমত্তার প্রতি আমার অগাধ আস্থা। তুমি এর আগে একটা জায়গায় বসে কত রহস্যের যবনিকা উত্তোলন করেছ। প্লীজ, তুমি এই ব্যাপারটার তদন্ত ভার গ্রহণ করো। না হলে আমার আর অনুশোচনার অন্ত থাকবে না।

বাঞ্চের এইসব কথাবার্তা মিস মার্পলের মনের ভেতর কতখানি প্রভাব বিস্তার করেছে। সেটা জানার কোনো উপায় আমাদের নেই। মাঝে মধ্যে মিস মার্পলকে এমন প্রশংসার বাক্য শুনতে হয়। তিনি নিস্পৃহচিত্তে এসব শুনতে বাধ্য হন। আসলে খুনের ঘটনার তদন্ত করে ইতিমধ্যে বেশ নাম করেছেন মিস মার্পল। বলা যেতে পারে, তার অনেক স্তাবক জুটে গেছে।

বাঞ্চ আবার বলতে থাকলেন–ওই ভদ্রলোক মৃত্যুর আগে প্লীজ-এই শব্দটা বলতে পেরেছিলেন। আমার বেশ মনে হচ্ছে উনি বোধহয় আরও কিছু কথা বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ভগবান ওনার এই শেষ আশা পূর্ণ করেননি। সেই কথাগুলো জানতে পারলে আজ আমাকে তোমার কাছে ছুটে আসতে হত না। তাই সমস্ত ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন গোলমেলে বলে মনে হচ্ছে। তুমি না থাকলে এই সমস্যার সমাধান আর কেউ করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। পুলিশের ওপর আমার খুব একটা আস্থা নেই। ওরা সাধারণত মাথা মোটা স্বভাবের হয়ে থাকে। অবশ্য এর জন্য আমি ওদের খুব একটা দোষ দিতে পারছি না। ওদেরকে একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থেকে তদন্ত চালাতে হয়। বলতে পারো, ওদের হাত পা একেবারে বাঁধা।

মিস মার্পল এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে বাঞ্চের মুখ থেকে ঠিকরে ছুটে আসা এই শব্দগুলো শুনছিলেন। যদিও তার অভিব্যক্তিতে সেই মনোযোগী আচরণের কোনো পরিচয় নেই। এটাই হল মিস মার্পলের চরিত্রের সবথেকে বড়ো বৈশিষ্ট্য। ইতিমধ্যে একাধিক খুনের ঘটনাকে ইতিবাচক তদন্ত করে যথেষ্ট নাম এবং প্রশংসা অর্জন করেছেন তিনি।

বাঞ্চ বলতে থাকেন–ওই ভদ্রলোক মৃত্যুর ঠিক আগে প্লীজ শব্দটা উচ্চারণ করেছিলেন কিন্তু এর পর তিনি কী বলতে চেয়েছিলেন, সেটা আমার পক্ষে আর জানা সম্ভব হল না। যদি ঈশ্বর ওনাকে আর কয়েক মুহূর্ত বেঁচে থাকার ছাড়পত্র দিতেন, আমি সুনিশ্চিত, তাহলে খুনির নামটাও উনি উচ্চারণ করতেন। এই ব্যাপারটা আমাকে খুবই অনুশোচনার মধ্যে রেখেছে।

মিস মার্পল চুপ করে ভাবনার জগতে পৌঁছে গেলেন। তারপর তিনি বাঞ্চের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন–আচ্ছা, ওই ভদ্রলোক শেষ অব্দি তোমাদের চার্চে এলেন কেন, সেই ব্যাপারটা তো আমার কাছে এখনও পর্যন্ত পরিষ্কার হচ্ছে না।

বাঞ্চ বললেন–এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি তোমার সঙ্গে একমত পোষণ করছি। তুমি যদি স্যাংচুয়ারি শব্দটার ওপর বেশি জোর দাও, তাহলে উনি তো যে কোনো একটা চার্চের মধ্যেই ঢুকতে পারতেন। মোটামুটি সব চার্চেই এমন একটি গোপন প্রকোষ্ঠ থাকে। তিনি কেন বাসে করে অত দূরের একটা জায়গাতে যাবেন, যে বাসটা সারা দিনের মধ্যে মাত্র চারবার আমাদের এই শহরতলীতে আসে, তারপর তুমি কেন এমন একটা নির্জন জায়গা বেছে নেবে? না, রহস্যের জট ক্রমশই জটিল হয়ে উঠছে আমার কাছে।

মিস মার্পল মন্তব্য করলেন–তিনি নিশ্চয়ই কোনো একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে ওই চার্চে এসেছিলেন। আমার মনে হচ্ছে, উনি বোধহয় কারো সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। আসলে চিপিং লেক হর্নটা তো খুব একটা বড়ো জায়গা নয়, বাঞ্চ। সকলে সেখানে সকলের সাথে পরিচিত দেখতো, তিনি কার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন বলে তোমার মনে হয়?

ওই ব্যাপারটা নিয়ে এতক্ষণ এইভাবে ভাবতে পারেন নি বাঞ্চ। মনে মনে আরও একবার মিস মার্পলের অগাধ বুদ্ধির তারিফ করলেন তিনি। তিনি ওই ছোট্ট শহরতলির বাসিন্দাদের মুখচ্ছবিগুলি ভাববার চেষ্টা করলেন। তারপর মাথা নেড়ে বললেন–না আমি তো কাউকেই সম্ভাব্য মানুষ হিসাবে চিহ্নিত করতে পারছি না। আমাদের ওই ছোট্ট পল্লীতে এমন কে-ইবা আছেন, যাঁর সাথে ওই ভদ্রলোকের জরুরী দরকার ছিল?

–উনি কি কোনো নাম বলেছেন?

-হ্যাঁ, মনে পড়েছে। উনি জুলিয়ান শব্দটা উচ্চারণ করেছিলেন। তবে আমার ঠিক মনে নেই উনি জুলিয়ান, নাকি জুলিয়া বলেছিলেন। কিন্তু আমি যতদূর পর্যন্ত জানি, আমাদের চিপিং লেক হর্নে জুলিয়া নামে কোনো মেয়ে বসবাস করে না। আমি তো মোটামুটি সকলের সাথেই পরিচিত। বুঝতেই তো পারছ, আমাদের ছোট্ট জনপদ, মুখ পরিচিতি সকলের সাথেই আছে আমার।

আবার কথাটা থেমে গেল। বোঝা গেল এখন দুজনেই চিন্তার জগতে ডুব দিয়েছেন। অনেক কিছু ভাববার চেষ্টা করতে থাকেন বাঞ্চ। জুলিয়ান, নাকি জুলিয়া ঠিক মতো মনে পড়ছে না তাঁর। চোখ বন্ধ করলেন তিনি। ওই তো, সিঁড়ির ধারে শোয়ানো আছে রক্তাক্ত শরীরটা, জানলা দিয়ে যেটুকু আলো এসে পড়েছে তাতে কী এক অদ্ভুত অপছায়ার সৃষ্টি হয়েছে। মনে হচ্ছে সেখানে যেন হীরক-দতি জ্বলে উঠেছে।

মিস মার্পল শান্তভাবে উচ্চারণ করলেন–কোনো হীরে মণিমুক্তো?

বাঞ্চ বললেন–হ্যাঁ, এবার বোধহয় আমরা আমাদের গল্পের সব থেকে উল্লেখযোগ্য অংশে পৌঁছে গিয়েছি। শুধু এই ব্যাপারটার জন্য আজ আমি বৃত্তান্ত হয়ে তোমার কাছে ছুটে এসেছি। একলেসরা। একটা ব্যাপার নিয়ে খুবই জোরাজুরি করছিলেন। সেটা হল ওই মৃত মানুষটির কোট। যখন ডাক্তার ওনাকে পর্যবেক্ষণ করতে আসেন, তখন আমরা কোটটা ওনার দেহ থেকে খুলে নিয়েছিলাম। কোটটা পুরোনো দিনের। দেখলেই বোঝা যায় অনেকবার পরিধান করা হয়েছে। একেবারে শেষ অবস্থায় পৌঁছে গেছে। আমি বুঝতে পারছি না, কেন ওনারা ওই কোটটির জন্য এত ঘোরাঘুরি করছিলেন। শেষ পর্যন্ত কোটটি ফিরে পাবার পর ওনাদের মুখে স্বস্তির অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছিল। ওঁরা বলছিলেন এর সঙ্গে মৃত মানুষটির স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কিন্তু আমার মনে হয়, এই ব্যাপারটা অত সহজ নয়। আমার মনে হয় ওই কোটটির মধ্যেই বোধহয় আসল রহস্য লুকিয়ে আছে।

………আমি ওপরে উঠে গিয়ে কোটটি খুঁজছিলাম। যখন অনেক কষ্টে সেটি খুঁজে পেয়েছিলাম, তখন সেটাকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসি। আমার স্পষ্ট মনে আছে, এই কোটটি পাবার পর ওই ভদ্রলোকের সমস্ত চেহারাতে একটা স্বস্তির ছাপ ফুটে উঠেছিল। আমি কোটটি দেবার পর ওনার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আর একটা কথা তোমাকে না জানিয়ে পারছি না, এই কোটের লাইনিংএর ভেতর একটা অদ্ভুত ব্যাপার আমি লক্ষ্য করে ছিলাম। আমি দেখেছিলাম লাইনিংএর কিছুটা অংশে অন্য সুতো দিয়ে সেলাই করা হয়েছে। আর আমি সেখানে হাত দিয়ে দিয়ে দেখলাম, একটা করে কাগজ রয়ে গেছে। আমি সাবধানে কাগজটা বাইরে বার করেছিলাম, তারপর আবার সুন্দরভাবে ওটা সেলাই করে দিই, এমন সুতো ব্যবহার করেছিলাম যাতে ওপর থেকে দেখলে কিছুই বুঝতে পারা না যায়। আমি ব্যাপারটা সম্পর্কে খুবই ওয়াকিবহাল ছিলাম, আমার মনে হয়, একলেস হয়তো আমি কী করেছি সেটা ধরে ফেলতে পারে, অথবা তাদের নজর এড়িয়ে যেতে পারে এটা। আমি তারপর কোটটা নীচে এনে ওঁদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম যে, আমার কাজের মেয়েটা কোটটা বৈঠকখানায় নিয়ে যাবার জন্য তৈরি হয়েছিল তাই আমার কিছুটা দেরি হয়ে গেছে।

এবার মিস মার্পলের চোখের তারায় ফুটে উঠল ঔৎসুক্যের চিহ্ন। তিনি বললেন দেখি কাগজের টুকরোটা।

বাঞ্চ তার হ্যান্ডব্যাগটি খুললেন–আমি এটা কিন্তু জুলিয়ানকে দেখাতে পারিনি, আসলে আমার এই কাণ্ডটা হয়তো সে খুব একটা সমর্থন করবে না। আমার উচিত ছিল এই কাগজের টুকরোটা একলেসের হাতে সমর্পণ করা। কিন্তু আমি এটা তোমার কাছে নিয়ে এসেছি।

মিস মার্পল তাকালেন ওই কাগজের টুকরোটার দিকে, এটা হল বুকের একটা টিকিট, বেডিংটন স্টেশন লেখা আছে।

-তার মানে উনি বেডিংটন স্টেশনের রিটার্ন টিকিট আর একটা পকেটে রেখে দিয়েছিলেন তাই তো?

বাঞ্চ মন্তব্য করলেন।

এবার চার চোখের মিলন ঘটে গেল।

মিস মার্পল সাবধানে বললেন–তাহলে? কোনো একটা কার্যকারণ পাওয়া গেল কি? বাঞ্চ, তুমি কি লন্ডনে আসার পথে তোমার কোনো অনুসরণকারীকে দেখেছিলে? আমার মনে হচ্ছে তোমাকে কেউ নিঃশব্দে অনুসরণ করছে।

এই কথা শুনে বাঞ্চ খুবই অবাক হয়ে গেলেন, তিনি বললেন–কী বলছ? আমি কী করেছি যে, আমার প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর কড়া নজর দিতে হবে?

মিস মার্পল বললেন আমার মনে হচ্ছে, আমার অনুমান বলতে পারো, আমার স্থির সিদ্ধান্ত, এই পৃথিবীতে যখন তখন যে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে, তাই আগে থেকে আমাদের সাবধান হওয়া উচিত।

উনি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন তারপর বললেন-তুমি এখানে এসেছ এই খবরটা কি কেউ জানে? আমার মনে হয়, তোমার এখন একলেস-এর ওখানেই চলে যাওয়া উচিত। যেখানে গিয়ে তুমি কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকো। আমিও তোমার সঙ্গে যেতে চাই। যেতে যেতে আমরা না হয় কথা বলব, না, আমার এখন যাওয়াটা কি ঠিক হবে?

মিস মার্পল বলে চললেন–হ্যাঁ, তোমার সাথে আমাকে যেতেই হবে, এই রহস্যটা আমার মনকেও ভাবিয়ে তুলেছে।

দুই ভদ্রমহিলা প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ালেন। তারা নানা ধরনের জিনিসপত্র কিনে ফেললেন। যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে, এবার হারল্ড বাগ নামে একটি অঞ্চলে পৌঁছে গেলেন। সেখানে গিয়ে মনের আনন্দে মেতে উঠলেন খাদ্য অন্বেষণে, আহা, এত সুন্দর খাবার কি না চেখে থাকা যায়? হরিণের সাথে অ্যাপেলটাও, এবং টোস্টার–দুজনেরই অত্যন্ত প্রিয় পদ।

মিস মার্পল বলার চেষ্টা করলেন-দেখ, এত সুন্দর পেন্টাবল আমি কখনো দেখিনি। এর ওপর ছোটো করে জে বর্ণটা লেখা আছে। দেখ, রেডান্সের বউয়ের নাম তো জোয়ান, আমার মনে হয় এটা জোয়ানের জন্যই রাখতে হবে। তাহলেই বোধহয় আমাদের আশা পরিপূর্ণ হবে।

বাঞ্চ কিশোরীর আনন্দে মেতে উঠে বললেন–ওই গ্লাসক্লথগুলো আমার খুবই দরকার ছিল। এত সহজে যে পাব সেটা আমি কখনো ভাবতেই পারিনি। আমার মনে হয় যে কোনো ভদ্রমহিলার উচিত এখানে এসে ওগুলো কিনে ফেলা।

তাদের কথাবার্তায় ছেদ পড়ে গেল। আসলে তখনই অ্যাপেলবার্গে প্রবেশ করেছে। এক তরুণী। যথেষ্ট আকর্ষণীয় চেহারা ওর। ঠোঁটে রঞ্জনির ছোঁয়া। সে এখানে সেখানে তাকাল অর্থহীন দৃষ্টিতে। তারপর ছুটে এল তাদের টেবিলের দিকে। মিস মার্পলের উপস্থিতিতে খুশি হল সে।

মিস মার্পলের কোলের ওপর একখানি খাম ছুঁড়ে দিল।

তারপর অত্যন্ত দ্রুতভাবে বলল–মিস, তুমি এখানে?

মিস মার্পল বললেন-তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, গ্ল্যাডি। তোমাকে আমি সব সময় ধন্যবাদ জানাতে চাই, তুমি এত তৎপরতার সঙ্গে কাজগুলো করে ফেলো।

এই কথা শুনে গ্ল্যাডির লাল গাল আর একটু বেশি লালিমায় রাঙা হল। গ্ল্যাডি বলল–তোমার কথা মানতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করি, হেনরি আমাকে সব সময় বলে থাকে। মিস মার্পলের কাছ থেকে জীবনের সব সৎগুণগুলো নিয়ে নেবার চেষ্টা করবে। মিস মার্পলকে সেবা করার মধ্যে একটা আলাদা আনন্দ আছে–সে কথাই মেনে চলার চেষ্টা করি আমি। তাতে আমার কোনো কৃতিত্ব নেই।

মিস মার্পল গ্ল্যাডির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন-তুমি সত্যি খুব উপকারী মেয়ে, তোমার মতো এত ভালো মেয়ে আমি জীবনে খুব কমই দেখেছি।

যেমন ঝড়ের মতো এসেছিল গ্ল্যাডি, তেমনই চলে গেল সে। তখনও ক্যাফেটেরিয়াতে রয়ে গেল তার উজ্জ্বল উপস্থিতির দিকচিহ্নগুলি।

এবার মিস মার্পল এনভেলাপটা খুলে কিছু দেখার চেষ্টা করলেন। তারপর সেটা বাঞ্চের দিকে তুলে দিয়ে বললেন-তুমি কিন্তু এখন থেকে সাবধানে পথ চলবে। আচ্ছা, এখনও কি সেই সুদক্ষ ইন্সপেক্টার মেলচেষ্টরে কর্মরত অবস্থায় আছেন? আমার ঠিক মনে পড়ছে না।

বাঞ্চ বললেন–আমিও জানি না, মনে হয় উনি এখনও সেখানে কাজ করছেন।

মিস মার্পল চিন্তামগ্ন কণ্ঠস্বরে বলে উঠলেন–আচ্ছা, আমি দেখছি, আমার মনে হয় চীফ কনস্টেবলকে এখনই একটা ফোন করা দরকার। তিনি বোধহয় এখনও আমাকে মনে রেখেছেন।

বাঞ্চ বলে উঠলেন–হ্যাঁ, যিনি একবার তোমার সংস্পর্শে এসেছেন, তিনি কি তোমাকে ভুলে যেতে পারেন? তুমি তোমার উজ্জ্বল উপস্থিতি নিয়ে সব সময় বিরাজ করছ।

এবার বাঞ্চকে উঠে দাঁড়াতে হল। বেডিংস্টোন আসার পর বাঞ্চ লাগেজ অফিসে গেলেন, ক্লোকরুম টিকিটটা আধিকরিকের হাতে তুলে দিলেন। কিছুক্ষণ পরে একটা পুরোনো স্যুটকেস সেখানে এসে গেল। স্যুটকেস নিয়ে তিনি শান্তভাবে প্ল্যাটফর্ম ধরে হাঁটতে শুরু করলেন। .

বাড়ি আসা পর্যন্ত কোনো ঘটনা ঘটল না। ট্রেন চিপিং লেক হর্নের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। বাঞ্চের হাতে ধরা আছে ওই পুরোনো সুটকেসটা। তিনি শান্তভাবে স্যুটকেস ধরে হেঁটে চলেছেন। হঠাৎ একটা অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গেল, বাঞ্চ লক্ষ্যই করেননি যে আর এক ভদ্রলোক তাকে এইভাবে অনুসরণ করে আসছে। হঠাৎ সেই ভদ্রলোক তার হাত থেকে স্যুটকেসটা ছিনিয়ে নিল, ভিড়ের মধ্যে পালাবার চেষ্টা করল।

বাঞ্চ চিৎকার করে উঠল-থামোথামো! ওই লোকটিকে থামান, ও আমার স্যুটকেস চুরি করেছে।

গ্রাম্য স্টেশনের টিকিট কালেক্টাররা যেমনটি হয়ে থাকেন, অত্যন্ত মন্দাক্রান্তা ছন্দে তাঁদের জীবনচক্র বাঁধা। তিনি বললেন-দেখছি, এমনটি কখনো করা উচিত নয়…..

কিন্তু তার চোয়ালের ওপর নিখুঁত একটা ঘুষির পাঞ্চ। তিনি আর এগোতেই পারলেন না। স্যুটকেস নিয়ে রুদ্ধশ্বাসে স্টেশন থেকে বেরিয়ে গেল ওই দুবৃত্ত। অপেক্ষামান একটি গাড়িতে চড়ে বসল। পুলিশ কনস্টেবল আবেলের কণ্ঠস্বর শোনা গেল–তাহলে? কী ঘটনা ঘটেছে বলুন তো?

বাঞ্চ স্টেশন থেকে ইতিমধ্যে সেখানে পৌঁছে গেছে। লোকটি আমার স্যুটকেস তুলে নিয়েছে। আমি ট্রেন থেকে সেটা নিয়ে নামছিলাম।

লোকটি বলল –ননসেন্স, আমি জানি না, এই ভদ্রমহিলা কী বলার চেষ্টা করছেন। এটা আমার স্যুটকেস। আমি ট্রেন থেকে এটা নিয়ে নেমে এসেছি।

ওই লোকটা বাঞ্চের দিকে তাকাল। রাগী চোখের তারায়। পুলিশ কনস্টেবল অ্যাবেল কিছুই বুঝতে পারছেন না। মিসেস হারমন তাঁর বিশেষ পরিচিত। এর আগে মিসেস হারমনের সঙ্গে পুলিশ কনস্টেবল অ্যাবেলের বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা হয়েছে। বিশেষ করে কীভাবে ভালো সার দিলে গোলাপটা ফুটবে সেই সম্পর্কে অ্যাবেলের অসীম কৌতূহল।

পুলিশ কনস্টেবল অ্যাবেল বিব্রত সুরে বললেন–ম্যাডাম, এটি কি আপনার স্যুটকেস?

বাঞ্চ বললেন–অবশ্যই।

এবার আপনার কথা শুনি, স্যার।

–এটা আমার স্যুটকেস, আমি জোরের সঙ্গে বলছি।

লোকটা দীর্ঘদেহী, গায়ের রং ঈষৎ কালো। ভালো পোশাক পরিহিত। এমনভাবে কথা বলছেন যেন কর্তৃত্বের ছাপ আছে। গাড়ির ভেতর বসে ছিলেন এক ভদ্রমহিলা, তার এবার তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বর শোনা গেল।–এডুইন এখানে আর দেরি করে লাভ কী, তুমি এখনই স্যুটকেস নিয়ে এখানে চলে এসো। আমি জানি না এই ভদ্রমহিলা এসব কথা বলছেন কেন?

এবার পুলিশ কনস্টেবল অ্যাবেলের জয় হবার পালা। তিনি বললেন–ঠিক আছে, আমি ব্যাপারটার এখনই মীমাংসা করে দিচ্ছি।

-ম্যাডাম, যদি এটা আপনার স্যুটকেস হয়ে থাকে, তাহলে আপনি বলুন তো এর মধ্যে কী আছে?

বাঞ্চ একটুও ইতস্তত না করে বলে উঠলেন–জামাকাপড় আছে, একটা কোটও আছে, যার কলারের রঙটা ঈষৎ ময়লা হয়ে গেছে। দুটো উলের জাম্পার আছে, একজোড়া জুতো আছে।

পুলিশ কনস্টেবল অ্যাবেল বললেন–ঠিক আছে। বেশ ভালোভাবেই আপনি বলছেন দেখছি। এবার তিনি অন্যদিকে ঘুরে বললেন–এবার আপনি বলুন তো?

ওই দীর্ঘদেহী পুরুষটি বলে উঠলেন–এর মধ্যে থিয়েটারের কসটিউম আছে। থিয়েটারের জিনিসপত্র এখানে আছে। আমি এখানে এসেছি একটা অ্যামেচার থিয়েটারে অংশ নেব বলে।

পুলিশ কনস্টেবল অ্যাবেল বললেন–ঠিক আছে, স্যার, আমরা সুটকেসটা খুলে ফেলি কেমন? দেখি ভেতরে কী আছে। আমরা এখনই পুলিশ স্টেশনে যেতে পারি, তবে আপনার যদি খুব তাড়া থাকে, তাহলে আমরা স্যুটকেসটা স্টেশনে নিয়ে যেতে পারি। সেখানে গিয়ে না হয় এটা খুলে ফেলব।

এবার ওই ভদ্রলোকের অধৈর্য হবার পালা, তিনি বললেন–এই স্যুটকেসটা আমার, আমার নাম মস, এডুইন মস।

পুলিশ কনস্টেবল হাতে ধরা স্যুটকে নিয়ে স্টেশনে ফিরে গেলেন। তারপর বললেন–আমরা এখনই পার্সেল অফিসে যাব।

টিকিট কালেক্টারকে তিনি বললেন–চার্জ, এই স্যুটকেসটা এখনই পার্শেল অফিসে নিয়ে চলো তো।

পুলিশ কনস্টেবল অ্যাবেল ধীরে ধীরে হাঁটছিলেন, পার্শেল অফিসে স্যুটকেসটা পৌঁছে দেওয়া হল। স্যুটকেসটার তালা বন্ধ করা হয়নি। বাঞ্চ এবং মিস্টার এডুইন মস দু পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। একজন অন্যজনের দিকে অর্থহীন ভাবে তাকিয়ে আছেন।

পুলিশ কনস্টেবল বললেন–ঠিক আছে, এবার স্যুটকেসটা খুলে ফেলা যাক।

খুলে ফেলা হল, আহা, সেখানে সুন্দরভাবে পাট করা একটা পুরোনো দিনের টুইড কোট রয়েছে। দুটো মাফলারও চোখে পড়ল। সাধারণত আমরা যে চটি পায়ে দিয়ে বাড়িতে চলাফেরা করে থাকি তেমন একজোড়া চটি।

এবার পুলিশ কনস্টেবল অ্যাবেলের মুখে বুঝি বিস্ময়ের হাসি। তিনি বললেন–ম্যাডাম, আপনার বর্ণনা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে।

এবার মিস্টার এডুইন মস কী করবেন? তার কণ্ঠস্বরে একটা আশ্চর্য পরিবর্তন চোখে পড়ল।

তিনি বললেন-আমি অত্যন্ত ক্ষমাপ্রার্থী। বিশ্বাস করুন, আমি এই ব্যাপারটা কখনোই ঘটাতে চাইনি। কোথায় গেল আমার স্যুটকেসটা? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন-মনে হচ্ছে আমাকে এক্ষুনি ছুটে যেতে হবে। আমার স্যুটকেসটা বোধহয় ট্রেনেই রয়ে গেছে।

উনি ওনার হ্যাট ঠিক করতে করতে বাঞ্চের দিকে তাকিয়ে বললেন–আপনি আমাকে ক্ষমা করেছেন তো? অতি দ্রুত ভদ্রলোক পার্শেল অফিস থেকে চলে গেলেন।

বাঞ্চ পুলিশ কনস্টেবল অ্যাবেলের কানে কানে বললেন–আপনি ওকে ছেড়ে দিলেন কেন? ওনাকে আটকে রাখা উচিত ছিল।

অ্যাবেল কোনো কথা বললেন না। একটু বাদে তিনি বললেন-উনি বেশি দুর যেতে পারবেন না। এই ব্যাপারে আপনি আমার ওপর অগাধ আস্থা রাখতে পারেন। ওর গতিবিধির ওপর আমার লোকেরা কড়া নজর রেখেছে। আশা করি আপনি আমার কথার আসল অর্থ বুঝতে পারছেন।

বাঞ্চ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললেন–তাহলে ঠিক আছে।

পুলিশ কনস্টেবল অ্যাবেল বললেন–ওই বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা ফোন করে আমাকে সব কথা বলে দিয়েছেন। ওনার সাথে আমার অনেক দিনের পরিচয়। আমি সব কথা ঠিক বলছি তো? দেখা যাক, এবার ঘটনা কোন দিকে ঘুরে যায়। তবে মনে রাখবেন, আপনাকে কোনো ব্যাপারে চিন্তা করতে হবে না। আপনি আমার বুদ্ধিমত্তা এবং কার্যক্ষমতার ওপর আস্থা রাখতে পারেন। আশা করি কাল সকালে আপনার সাথে ইন্সপেক্টরদের দেখা হয়ে যাবে। ইন্সপেক্টর অথবা সার্জেন্ট। আজ রাতের ঘুমটা নষ্ট করবেন না।

.

০৩.

মিস মার্পলের পরিচিত ইন্সপেক্টার ক্রাডফও বাঞ্চকে অভিযানে জানালেন, তাঁর ঠোঁটের কোণে পুরোনো বন্ধুত্বের উষ্ণ হাসির পরশ।

তিনি বললেন–চিপিং লেক হর্নে আবার একটা অপরাধের ঘটনা ঘটে গেল। মিসেস হারমন, এখানে কি ব্যাপারটা নিয়ে তেমন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে?

ভদ্রলোকের এই কথা শুনে একটু রেগে গেলেন শ্রীমতী হারমন। আসলে কদিন ধরে তাঁর স্নায়ুর ওপর যে চাপ পড়েছে, রাগ দেখানোটাই স্বাভাবিক। তবুও নিজেকে শান্ত সংযত রেখে তিনি বললেন–আমি আপনার উদ্দেশ্যটা ঠিক মতো বুঝতে পারছি না। আপনি কি আমাকে প্রশ্ন করতে এসেছেন, নাকি আপনি এই ব্যাপারটা সম্পর্কে সত্যি তদন্ত করতে চান?

ইন্সপেক্টর বললেন–আমি প্রথমেই কয়েকটা কথা আপনাকে পরিষ্কারভাবে জানাতে চাইছি। আমি মিস্টার এবং মিসেস একলেসের গল্প দিয়ে এই কাহিনিটা শুরু করব। আমরা কিছু দিনের জন্য তাদের ওপর কড়া নজর রাখতে বাধ্য হয়েছি। তারা বিভিন্ন ধরনের ডাকাতি কাজের সঙ্গে যুক্ত। এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আর একটি বিষয়ের কথা আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, শ্রীমতী একলেসের একজন ভাই আছে। তার নাম স্যান্ড বর্ন। সে বিদেশ থেকে সম্প্রতি ফিরে এসেছে। কিন্তু যে মানুষটিকে আপনারা চার্চ প্রাঙ্গনে শুয়ে থাকতে দেখেছেন তিনি কিন্তু স্যান্ড বর্ণ নন। এ ব্যাপারে আমি একশো ভাগ নিঃসন্দেহ।

বাঞ্চ বললেন–আমি এ ব্যাপারটা আগেই অনুমান করেছিলাম। ওই ভদ্রলোকের নাম ওয়াল্টার, উইলিয়াম নয়–এটাও আমি জোরের সঙ্গে বলছি।

ইন্সপেকটর ঘাড় নেড়ে বললেন–ঠিকই অনুমান করেছেন আপনি। ওনার নাম ওয়াল্টার সেন্ট জন, ইনি ক্যারিংটন জেলখানা থেকে আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে পালিয়ে এসেছেন।

এই তথ্যটা শুনে শ্রীমতী বাঞ্চ একটু অবাক হলেন বৈকি। তিনি মনে মনে কিছু ভাবার চেষ্টা করলেন। তারপর বলে উঠলেন–তার মানে ওনাকে পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছিল। আর সেজন্য উনি এমন একটা নিরাপদ স্থানের সন্ধান করছিলেন যেখানে একবার ঢুকে পড়তে পারলে কেউ ওনার টিকিটটিও ছুঁতে পারবে না। তাই তো?

একটু বাদে শ্রীমতী বাঞ্চ প্রশ্ন করলেন–উনি কি কাজ করেছিলেন যার জন্য এই শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছিল?

–এটা একটা মস্ত বড়ো গল্প। গল্পের মধ্যে নানা জটিল অধ্যায় আছে। কয়েক বছর আগে একজন ড্যান্সার একটি মিউজিক হলে নৃত্য প্রদর্শন করছিল। আপনি কি কখনো তার নাম শুনেছেন? এক সময় সে আরবিয়ান নাইট ড্যান্সে খুব নাম করেছিল। তার একটা বিখ্যাত উপস্থাপনা ছিল রত্নগুহায় আলাদীন, সে এইভাবে যথেষ্ট অর্থবান হয়ে ওঠে।

………তবে নাচের ব্যাপারটা সে খুব একটা ভালো জানতো বলে, আমার মনে হয় না। অবশ্য সবই আমার ব্যক্তিগত অনুমান, কিন্তু তার চেহারার মধ্যে এমন একটা যৌন মাদকতা ছিল যে, পুরুষ দর্শকেরা তার শরীরের মধ্যে প্রাচ্য দেশীয় সৌন্দর্যের সাথে পাশ্চাত্যের আধুনিকতার সংমিশ্রণ ঘটে গিয়েছিল। এইভাবে সে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এক এশীয় রাজপুরুষ তার প্রেমে পড়ে যায়। সে ওই প্রেমিকাকে অসংখ্য জিনিস দিয়েছিল। তার মধ্যে প্রথমে একটা হীরের নেকলেসের কথা উল্লেখ করতে হয়।

এবার বাঞ্চ নিজের মনেই বলতে থাকলেন–তার মানে একজন রাজা সেই বিখ্যাত হীরে মাণিক তো?

ইন্সপেক্টর ক্রাডফ একটুখানি কেশে বললেন–না, মিসেস হারমন, এ ব্যাপারটাকে আরও ভালোভাবে বুঝিয়ে বলা উচিত। এই প্রেমের ঘটনাটা বেশি দিন ঘটতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত কেন যে এটা ভেঙে গেল আমি জানি না। আর তাই বোধহয় দেখা দিল কিছু বিশৃঙ্খলা।

………ওই নাচিয়ে মেয়েটির নাম জোরেইদা। অবশ্য এটা তার বানানো নাম হতে পারে। মাঝে মধ্যে সে নেকলেসটা পরে চারদিকে ঘুরে বেড়াতো। আসলে সে এই উপহারটাকে তার যৌবনের প্রশংসা হিসাবেই ধরে নিয়েছিল। শুধু তাই নয়, ওই ভেঙে যাওয়া প্রেম কাহিনির অন্তরালে এক খলনায়কের আবির্ভাব হয়, ভদ্রলোক সিনেমাতে চুটিয়ে অভিনয় করত, সে ওই মেয়েটির ওপর তার শারীরিক এবং মানসিক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। ইতিমধ্যে একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেল। নেকলেসটা হারিয়ে গেল নর্তকীর ড্রেসিংরুম থেকে। তখন সে থিয়েটারেই ছিল। কেউ বলে থাকে, এটি নাকি তারই এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র। সে ইচ্ছে করে নেকলেসটাকে চোখের সামনে থেকে তুলে নিয়ে গেল যাতে সেটার ওপর চোর ডাকাতের নজর না পড়ে। আবার অনেকে বলল, এভাবেই সে খবরের কাগজের পাতায়, নিজের নাম ছাপাতে চাইছে। অথবা এর অন্তরালে আরও কোনো কুরুচিকর উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

নেকলেসটা আর কখনো পাওয়া যায়নি, কিন্তু তদন্ত করে দেখা গেল, একজনের নাম বেরিয়ে এসেছে, পুলিশের খাতায় সে ওয়াল্টার সেন্ট জন নামে পরিচিত। এই লোকটার মোটামুটি পড়াশোনা আছে। সে যে কেন এই নীচ কাজ করতে গেল তা কে জানে। সে জুয়েলারির দোকানে কাজ করত। এর পাশাপাশি আরও এমন কিছু কাজ করত, যা হয়তো আমরা ঠিকমতো জানতে পারিনি। এর আগে কয়েকটা ছোটো খাটো অপরাধে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।

……..এটাও প্রমাণিত হল যে, ওই নেকলেসটা তার হাত দিয়েই পাচার করা হয়েছে। আর এই জন্য তাকে শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা দিতে হয়। তার বিচার শুরু হয়। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়াতে তাকে জেলখানায় পাঠানো হয় কিন্তু সেখানে সে বেশিদিন থাকতে পারেনি। কীভাবে যে সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেল সেটা এখনও আমার কাছে একটা অমীমাংসিত প্রশ্ন হিসাবেই রয়ে গেছে।

এই গল্পটার পরতে পরতে এত উত্তেজনা যে বাঞ্চ বোধহয় নিশ্বাস বন্ধ করে শুনছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি প্রশ্ন করতে বাধ্য হলেন–লোকটা এখানে একা কেন?

এই ব্যাপারটা সম্পর্কে আমার মনে একটা প্রশ্ন জেগে আছে। মিসেস হারমন আমি ঠিক কথাই বলছি। জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসার পর সে কোথায় যাবে হয়তো ভেবে ঠিক করতে পারছিল না। কিন্তু তার গতিবিধি লন্ডন শহরে সীমাবদ্ধ ছিল। সে তার পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে চায়নি, তবে এক বৃদ্ধা রমণীর কাছে গিয়েছিল। ওনার নাম শ্রীমতী জ্যাকাস উনি একসময় থিয়েটারে পোশাক সরবরাহ করতেন। ওই রমণী কিন্তু ভদ্রলোকের ব্যাপারে খুব বেশি কথা বলতে পারেন নি। স্থানীয় বাসিন্দারা দেখেছিল ওই লোকটির হাতে একটি স্যুটকেস ছিল।

বাঞ্চ বললেন–হ্যাঁ, মনে হচ্ছে এই স্যুটকেসটিই বোধহয় ওই লোকটি বেডিংটনে ক্লোকরুমে ফেলে আসে। তারপর সোজা এখানে চলে আসে।

ইন্সপেক্টার ক্রাডফ বলতে থাকেন–ওই সময় একলেস এবং যে লোকটি নিজেকে এডুইন মস বলে ঘোষণা করেছিল, তাদের সন্ধান পাওয়া গেল। তারা ওই স্যুটকেসটার ওপর তাদের অধিকার প্রমাণ করতে চাইল। ওই লোকটির সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায় বাসের মধ্যে। তারা বোধহয় গাড়িতে করে বাসটিকে অনুসরণ করতে থাকে। কিন্তু এই অনুসরণের ফল খুব একটা ভালো হয়নি। বাস থেকে শয়তান লোকটি নেমে আসে।

বাঞ্চ প্রশ্ন করলেন-তখনই তাকে হত্যা করা হয়েছে, তাই তো?

ক্রাডফ বললেন–আপনি ঠিকই অনুমান করেছেন, ম্যাডাম। আপনার বুদ্ধির তারিফ না  করে আমি পারছি না। খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছিল। একলেসের রিভলভার থেকে। কিন্তু মস কি এই কাজে অংশ নিয়েছিল? এ ব্যাপারে আমি খুব একটা সুনিশ্চিত নই। মিসেস হারমন, আমরা একটা ব্যাপার আপনার কাছ থেকে জানতে চাইছ। ওয়াল্টার সেন্ট জন যে স্যুটকেসটা বেডিংটন স্টেশনে জমা দিয়েছিল সেটা এখন কোথায় আছে?

বাঞ্চ বলতে চেষ্টা করলেন–আমার মনে হয় আন্ট জেনের কাছেই সেটা রয়ে গেছে। অর্থাৎ এই মিস মার্পলের একটা পরিকল্পনা। মিস মার্পল তার এক কাজের মেয়েকে বেটিংটন স্টেশনের ক্লোকরুমে পাঠিয়ে দিয়েছিল। সেখানেই সে স্যুটকেসটা দিয়ে দেয়। আমরা টিকিট বিনিময় করে নিই। মিস মার্পল অনুমান করেছিলেন, আমার হাত থেকে স্যুটকেসটা ছিনতাই হতে পারে। এখন বুঝতে পারছি কত বিচক্ষণ তিনি। যদি এইভাবে আগে থেকে পরিকল্পনা না করা হত তা হলে আসল স্যুটকেসটা আমি কখনোই পেতাম না।

এই কথা শুনে ইন্সপেক্টর ক্যাডফও খুব অবাক হয়ে গেলেন। তিনি বললেন–তা হলে? আমায় এখনই লন্ডনে যেতে হবে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য। আপনি কি আমার সঙ্গে যাবেন, মিসেস হারমন?

বাঞ্চ বললেন–ঠিক আছে, আমি এখনই তৈরি হচ্ছি। ব্যাপারটা আমার ভাবতে বড্ড ভালো লাগছে। গতকাল আমার দাঁতে যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। ভেবেছিলাম লন্ডন শহরে গিয়ে এক ভালো ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হব।

ইন্সপেক্টর ক্যাডও বললেন–আমার পরম সৌভাগ্য।

***

মিস মার্পল প্রথমে ইন্সপেক্টার ক্রাডফের মুখের দিকে তাকালেন। তারপর বাঞ্চ হারমনের উদ্বিগ্ন মুখমণ্ডলের ছবি তার চোখের পর্দায় ফুটে উঠল। টেবিলের ওপর স্টকসেটা পড়েছিল। ওই ভদ্রমহিলা বললেন আমি কিন্তু এখনও ওটা খুলিনি, খোলাটা আমার পক্ষে উচিত হবে না। তবে আমি অপেক্ষা করছিলাম আপনার আসার জন্য। তারপর তিনি বলে উঠলেন–এই স্যুটকেসটা কিন্তু বন্ধ করা আছে, তার ঠোঁটে ফুটে উঠেছে ভিকটোরিও যুগের দুষ্টুমি ভরা হাসির টুকরো।

ইন্সপেক্টার জানতে চাইলেন-এর ভেতর কী থাকতে পারে বলে আপনার অনুমান মিস মার্পল?

মিস মার্পল বললেন–আপনি তো জানেন আমি খুব ভালো অনুমান করতে পারি। আসলে অনেক সময় আমার অনুমান আর বাস্তব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এর ভেতর আছে জেবেইদার থিয়েটারের পোশাক। আপনি কি নেবেন ইন্সপেক্টার? কিছু একটা খেতে তো হবে? আমরা সরবত খেতে পারি কি?

সকলে মিলে খেতে শুরু করলেন। জানলা দিয়ে সূর্যের আলো ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েছে। মনে হচ্ছে সেখানে যেন হাজার রথের উজ্জ্বল উদ্ধার। কখনো সেটা লালাভ কামনায় ভরিয়ে তুলেছে পরিবেশ, কখনো সপ্তমীদের আলিঙ্গনে, কখনো সবুজের সীমাহীন তারুণ্য, আবার কখনো কমলার গৈরিক আবেদন।

মিস মার্পল বললেন–আলাদীনের গুহা, এইসব রত্নরাজিতে নিজেকে সাজিয়ে নিয়ে মেয়েটি নেচে উঠল। পুরুষ দর্শকদের মনে তৈরি হত এমন এক বিভ্রম, যার থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারত না।

ইন্সপেক্টার ক্রাডফ বললেন–আপনি সত্যি বলেছেন, কিন্তু শুধুমাত্র ওই কারণে কি একজন লোককে হত্যা করা উচিত?

মিস মার্পল চিন্তামগ্ন মুখে বললেন–আমার মনে হয় ওই মহিলা খুবই বুদ্ধিমতী কিন্তু সে কি মরে গেছে? ইন্সপেক্টার, আপনি কী বলছেন?

-হ্যাঁ, তিন বছর আগে তার মৃত্যু হয়েছে।

মিস মার্পল বললেন–এই অত্যন্ত মূল্যবান নেকলেসটি তো তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি? যদি তার থেকে পাথরগুলোকে খুলে নেওয়া যায়, আর মেয়েটির কসটিউমে তার লাগিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে কী হবে? তাহলে কি এক মায়াবী বিভ্রমের সৃষ্টি হবে? আর যদি কেউ আর একটা নকল নেকলেস তৈরি করে? সেই নেকলেসটা কি কখনো হারিয়ে যাবে? না, এই নেকলেসটা হয়তো কখনো হাতবদল হয়ে বাজারে আসবে না। কারণ চোরটা বুঝতেই পারবে যে, তার ওপর বানানো পাথর অথবা হীরের টুকরোগুলো একেবারে নকল।

বাঞ্চ বললেন–এখানে এনভেলাপটা আছে, এনভেলাপ-এর মধ্যে থেকে উজ্জ্বল বিচ্ছুরিত আলোর ঝর্ণাধারায় নির্গত রত্নরাজির টুকরোগুলো বেরিয়ে এল।

ইন্সপেক্টার ক্রাডফ এটি বাঞ্চের কাছ থেকে গ্রহণ করলেন। তারপর দুটো কাগজ সেখান থেকে বের করে আনলেন। সেখানে লেখা আছে–ওয়াল্টার এডমন্ড সেন্ট জোয়ান এবং ম্যারিমসেকের মধ্যে বিয়ের ঘোষণাপত্র। তার মানে? এটাই হল জোবেইদার আসল নাম।

মিস মার্পল বললেন–তার মানে ওরা বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী তাই তো?

বাঞ্চ জিজ্ঞাসা করলেন–তাহলে ব্যাপারটা আমার কাছে বোধগম্য হচ্ছে না। ওই কাগজটায় কী আছে?

-একটি কন্যা সন্তানের জন্ম শংসাপত্র। যার নাম জুয়েল।

বাঞ্চ চিৎকার করে উঠল-জুয়েল, চিপিং লেক হর্নে আমি এই নামটি প্রথম শুনেছিলাম। তার মানে ওই মৃতার্ত ভদ্রলোক এই শব্দটি উচ্চারণ করার চেষ্টা করেছিল–জুয়েল, র‍্যাভারনাম কটেজে আমি জুয়েলের দেখা পেয়েছি সেখানে জুয়েল সকলের মধ্যে দিন কাটিয়েছিল। হ্যাঁ, মনে পড়েছে, তবে ওখানে তাকে জিল নামে ডাকা হত। মিসেস মান্ডির কথাও মনে পড়ছে। এক সপ্তাহ আগে তার সাথে আমার দেখা হয়েছে। তারা ইনফরমারিতে এসেছিল। জিলের একটা ভালো নামের সন্ধান করতে হবে।

…..আমার মনে হয় জেলখানায় বসে হয়তো বাবার কানে এই সংবাদ পৌঁছে গিয়ে ছিল। তাই বোধহয় সে জেলখানার দুয়ার ভেঙে বাইরে আসার চেষ্টা করছিল। আর পুরোনো ড্রেসারের কাছ থেকে এই সুটকেসটা নিয়ে আসে অথবা এই সুটকেসটা হয়তো তার স্ত্রী ফেলে গিয়েছিল। আমার মনে হয় যদি সত্যি সত্যি ওই বহু মূল্যবান রত্নরাজি তার মায়ের হয়ে থাকে তাহলে সেগুলি বিক্রি করে দেওয়া উচিত, আর সেই টাকায় মেয়েটির ভালোভাবে বেড়ে ওঠায় সাহায্য করা উচিত।

–আমার অনেক কথাই মনে পড়ছে মিসেস হারমন। কিন্তু সেগুলো সত্যি সত্যি এখানে আছে কি?

–মিস মার্পল হাসি মুখে বলে উঠলেন–হ্যাঁ, এখানে সব কিছু নিরাপদে গচ্ছিত আছে।

.

০৪.

–রেভারেন্ড জুলিয়ান হারমনকে এখন আবার তাঁর আগের অবস্থানে দেখা গেল। তিনি তার স্ত্রীকে স্নেহ এবং সন্তুষ্টি ভরা আচরণের মাধ্যমে অভিনন্দিত করলেন। তারপর বললেন–তুমি যে ফিরে এসেছ, এতে যে আমি কত খুশি হয়েছি তোমাকে কী করে বোঝাব? শ্রীমতী বার্ড চেষ্টা করে সবকিছু ভালো ভাবে করতে। সে আমায় মাছের কেক করে খাইয়েছে। লাঞ্চের খাওয়াটা খুব একটা খারাপ হয় নি। কিন্তু তোমার মতো রান্না সে কি করতে পারে?

…….বাধ্য হয়ে আমি খাবারের টুকরোগুলো টিগালাথকে দিয়ে দিয়েছি।

–টিগলাথ? বাঞ্চ চিৎকার করে উঠলেন, তার মানে ওই মোটা সোটা বেড়ালটি, যেটা এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়, খাবারের জন্য। তিনি বলে উঠলেন, টিগলাথের ভাগ্য ভালো বলতে হবে। মনে হয় সে বোধহয় খেয়ে খেয়ে আরও একটু মুটিয়ে যাবে।

দাঁতের ব্যথাটা কেমন আছে, প্রিয়তমা? তুমি কি ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হবার সুযোগ পেয়েছিলে?

বাঞ্চ বলে, উঠলেন–এখন আর দাঁতের যন্ত্রণা তেমন ভাবে আমাকে আঘাত করছে না। আমি আরও একবার আন্ট জেনের সঙ্গে দেখা করতে যাব।

জুলিয়ান বললেন–তিনি এখনও ভালো আছেন, আমি আশা করি।

বাঞ্চ বলে উঠলেন–হ্যাঁ, তিনি কখনো খারাপ থাকেন না।

পরদিন সকালে ক্রিসেনথেমাম হাতে চার্চের দিকে এগিয়ে চলেছেন। সূর্যকে আবার পূর্ব দিগন্তে দেখা গেল। বাঞ্চের মনে হল, চারপাশে এখন হাজার হীরকের বর্ণচ্ছটা ছড়িয়ে পড়েছে। নিশ্বাস নিতে বড্ড ভালো লাগছে তার। তিনি ভাবলেন এখন আকশের দিকে দুহাত তুলে ওই নবজাতিকা মেয়েটির জন্য প্রার্থনা করা উচিত। তিনি মনে মনে বললেন-হে ঈশ্বর, এই মেয়েটি যেন ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে। আমাকে অনেকটা পথ এখনও হাঁটতে হবে ওকে সাহায্য করার জন্য।

তিনি ধীরে ধীরে চার্চে পৌঁছে গেলেন, বেশ কিছুটা সময় কাটালেন ঈশ্বরের সামনে নতজানু অবস্থায়। মনে হল গত দুটি দিনের স্মৃতি বুঝি তার মনের আকাশ থেকে চিরতরে বিলুপ্তি হয়ে গেছে। এখন তাকে নতুন উদ্যমে আবার জেগে উঠতে হবে। জেগে উঠতে হবে শুধুমাত্র ওই নবজাতিকা মেয়েটিকে মানুষ করার জন্য।

২. টেপ-মেজার মার্ডার

টেপ-মেজার মার্ডার

০১.

মিস পলিটকে দেখা গেল উদ্বিগ্ন মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার দরজায় শব্দ করেছে। সে আরও একবার করবে কি না ভাবছে। কিছুক্ষণের নীরবতা, তারপর আবার সে খটখট করে শব্দ করল। তার বাঁ হাতে একটা মোটা সোটা পালে ধরা আছে। নিজেকে স্থির রাখার চেষ্টা করল সে। এই পার্শেলের মধ্যে আছে শ্রীমতী স্পিনলোর নতুন সবুজ শীতকালীন পোশাক। একেবারে মাপসই করে বানানো হয়েছে মিস পলিটের বাঁ হাতে কালো সিল্কের তৈরি একটা ব্যাগ ঝোলানো আছে। ব্যাগের মধ্যে আছে মালা নেবার ফিতে, পিন কুশন আর মস্তবড়ো কঁচি।

মিস পলিট দীর্ঘদেহী তরুণী, তীক্ষ্ণ নাক তার। ঠোঁট দুটি লালাভ এবং লোভনীয় চুলের রংকে আমরা ঈষৎ বাদামি বলতে পারি। আরও একবার দরজায় আঘাত করা উচিত হবে কি না মনে মনে ভাবতে চেষ্টা করে সে। তারপর রাস্তার দিকে তাকায়। দেখে একটা শরীর ক্রমশ কাছে এগিয়ে আসছে, কে এই ভদ্রমহিলা? মিস হার্টনেল না? সময় যাকে কখনো ব্যস্ত করতে পারে না। পঞ্চান্ন বছর বয়স প্রায়। চিৎকার করে বলে উঠলেন–শুভ সন্ধ্যা, মিস পলিট।

ড্রেস মেকার উত্তর দিল শুভ সন্ধ্যা মিস হার্টনেল, কিন্তু তার কণ্ঠস্বরের মধ্যে কেমন একটা মায়াবী মৃদুময়তা খেলা করছে। কথা বলার আসল শক্তি কি সে হারিয়ে ফেলেছে? জীবন শুরু করেছিল একজন ভদ্রমহিলার পরিচারিকা হিসেবে। সে বলেই চলল–একটা কথা জানতে চাইছি, আপনার সাথে কি মিসেস স্পিনলোর দেখা হয়েছে? উনি কি বাড়িতে আছেন?

মিস হার্টনেল বলে উঠলেন–এ ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, আসলে ওনার সাথে আমার খুব একটা কথাবার্তা হয় না।

-দেখুন না, আমি কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। মিসেস স্পিনলোর জন্য নতুন ড্রেস নিয়ে এসেছি। তিনি বলেছিলেন সাড়ে তিনটের সময় আসতে। আমি কিন্তু সময় মেনে চলতে ভালোবাসি।

মিস হার্টনেল তার হাতঘড়ির দিকে তাকালেন। আধঘণ্টা হয়ে গেছে, বেচারি, তোমার জন্য সত্যি আমার মায়া হচ্ছে।

ইতিমধ্যে আমি তিনবার দরজায় শব্দ করেছি, কিন্তু ভেতর থেকে কোনো উত্তর পাইনি। বুঝতে পারছি না, এখন আমি কী করব? আমার মনে হয় মিসেস স্পিনলো বোধহয় বাইরে চলে গেছেন আর আমি যে আসব–এই ব্যাপারটা একেবারে ভুলে গেছেন। তবে উনি কিন্তু সাধারণত খুব একটা ভুলো মনের নন। তিনি এই পোশাকটা পরবেন, আমাকে বারবার তাগাদা দিয়েছিলেন। পরশুদিন কোনো একটা অনুষ্ঠানে এই পোশাকটা পরে যাবেন।

মিস হার্টনেল দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন। মিস পলিট তাকে অনুসরণ করল। র‍্যাভারনাম কটেজের বাইরে এসে তারা দাঁড়ালেন।

তিনি বলে উঠলেন–গ্ল্যাডির উত্তর শোনা যাচ্ছে না কেন? ওহ আজ তো বৃহস্পতিবার, তার মানে আজ গ্ল্যাডি ছুটি নিয়েছে। আমার মনে হয় মিসেস স্পিনলো হয়তো গভীরভাবে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আপনি কি বার বার বেল বাজিয়ে ওনার ঘুম ভাঙাতে পারবেন? না হলে কিন্তু ওনার ঘুম ভাঙবে না। আর আপনাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে।

এবার শুরু হল বার বার বেল বাজানোর পালা। ট্যাক ট্যাক শব্দে কলিং বেল বেজে উঠল। মনে হল দরজায় ধ্বনি প্রতিধ্বনির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তিনি চিৎকার করে ডাকলেন–কোথায় আছেন কেউ? কেউ কি ভেতরে আছেন?

ভেতর থেকে কোনো উত্তর ভেসে এল না।

মিস পলিট মনে মনে কিছু একটা বলার চেষ্টা করলেন। অস্ফুটে বললেন–আমার মনে হয় মিসেস স্পিনলো এই ব্যাপারটা ভুলে গেছেন। তিনি কখনো বাড়িতে নেই। দেখি অন্য কোনো একটা সময় আসতে হবে আমাকে।

তিনি বাইরে বেড়িয়ে আসার জন্য হাঁটতে শুরু করলেন।

মিস হার্টনেল বলে উঠলেন–একেবারে বোকা বুদ্ধি। এভাবে তোমার সঙ্গে ব্যবহার করাটা মোটেই উচিত হয়নি ভদ্রমহিলার। আমি হলে কখনো তা করতে পারতাম না। দেখা যাক, জানলা দিয়ে ভেতরের দিকে তাকিয়ে। জীবনের কোনো স্পন্দন চোখে পড়ে কি না?

ভদ্রমহিলা হেসে উঠলেন। এভাবেই হেসে তিনি সকলের সঙ্গে কথা বলতে ভালোবাসেন। ভাবলেন, ভারি সুন্দর একটা জোক বলা হয়েছে। তারপর, জানলার ভেতর দিয়ে ভেতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করলেন। বেশ কিছুক্ষণ ধরে এই প্রয়াস চলতে থাকল। কিন্তু এইভাবে তিনি কি ওই কাজে সফল হবেন? আসলে মিস্টার এবং মিসেস স্পিনলো যে বাতাবরণের মধ্যে জীবন কাটাতে ভালোবাসেন, সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ।

মিস হার্টনেল জীবনের স্পন্দন কোথাও দেখতে পেলেন না, বরং জানলার দিকে তাকিয়ে তার মনে হলো ভেতরে কিছু একটা বিপর্যয় ঘটে গেছে। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মিসেস স্পিনলোর শরীরটা নোয়ানো আছে, দেখলেই বোঝা যাচ্ছে মৃত্যু হয়েছে তার। তার মানে? একটা ভয়ঙ্কর ঝামেলার সামনে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করতে হবে এই দুই মহিলাকে।

পরবর্তীকালে এই গল্পটা বলার সময় হার্টনেল বলেছিলেন–আমি আমার মাথা ঠাণ্ডা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। বেচারি পলিট, ও তো বুঝতেই পারছে না, এই পরিস্থিতিতে তার কী করা দরকার। আমি ওকে বলেছিলাম–ব্যাপারগুলো আমার ওপর ছেড়ে দাও, তুমি শান্ত মাথায় এখানে চুপটি করে দাঁড়াও, আমি এখনই গিয়ে কনস্টেবল পলককে ডেকে আনছি।

আমার এই কথা শুনে পলিট কোনো জবাব দেয়নি। হয়তো সে একেবারে বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল। আমিও তার প্রতি বেশি মনোযোগ দিলাম না। তখন কাউকে না কাউকে তো শক্ত হতেই হবে। এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশি আলোচনা আমি মোটেই পছন্দ করি না। আমি কনস্টেবলকে ডাকার জন্য বার হচ্ছি, ঠিক সেই সময় মিস্টার স্পিনলো বাড়ির এককোণ থেকে বেরিয়ে এলেন।

এত অব্দি বলার পর মিস হার্টনেল ইঙ্গিতপূর্ণ বিরতি টানলেন। মনে হল তিনি বোধহয় কিছু একটা বলতে চাইছেন। আর শ্রোতার কণ্ঠে তখন জেগেছে ঔৎসুক্য। শ্রোতা জানতে চাইলেন, তাঁকে দেখে কীরকম লাগছিল আপনার? তিনি কি বিধ্বস্ত চেহারার নাকি উৎফুল্ল।

মিস হার্টনেল কথা চালিয়ে গেলেন। সত্যি কথা বলতে কী, তখনই আমার মনে হয়েছে তার আচরণের মধ্যে কোথায় যেন একটা অসঙ্গতির চিহ্ন লুকিয়ে আছে। তিনি বেশি রকমের শান্ত। তিনি একেবারেই উত্তেজিত হননি। এই অবস্থায় কেউ কি এই ভাবে শান্ত থাকতে পারে? যদি কাউকে বলা হয় তার স্ত্রীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে, তাহলে সেই ভদ্রলোক কোনো রকম আবেগ দেখাবেন না, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?

পরে উপস্থিত সকলে এই বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করলেন।

পুলিশও এই ব্যাপারটাকে মেনে নিয়েছিলেন। তাহলে মিস্টার স্পিনলোকেই কি আমরা সম্ভাব্য হত্যাকারী বলতে পারি? নাকি এর মধ্যেও অন্য কোনো কারণ লুকিয়ে আছে? নিজের স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে ভদ্রলোক কি এমন হয়ে গিয়েছিলেন? ইতিমধ্যে ঝুলি থেকে বেড়ালটা বেরিয়ে পড়ল। জানা গেল এই দম্পতির মধ্যে একটি আশ্চর্য চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। যদি কোনো কারণে শ্রীমতীর মৃত্যু হয়, তাহলে তার সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী হবেন ওই স্বামী বাবাজীবন। একথা শোনার পর কেউ কি তাকে চোখের বাইরে রাখতে পারে?

এবার মিস মার্পলের কথা বলার পালা। তার মুখমণ্ডলে একটা অদ্ভুত লাবণ্য লুকিয়ে আছে। তার জিভও অত্যন্ত দ্রুত এপাশ থেকে ওপাশে চলে যায়। স্পিনলের পাশের বাড়িতে আপাতত তার অবস্থান। আধ ঘন্টার মধ্যে খবর সেখানে পৌঁছে গেছে। পুলিশ কনস্টেবল পলকের সাহায্যে। পলকের সঙ্গে একটি নোটবুক আছে। তিনি শান্ত মনে সব কিছু লিপিবদ্ধ করছেন।

পলকের কণ্ঠস্বর শোনা গেল–ম্যাডাম, আপনি যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে কি আমি আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করতে পারি?

মিস মার্পল বললেন–এটা কি মিসেস স্পিনোর হত্যা সংক্রান্ত প্রশ্ন? তাহলে জবাব দিতে আমার কোনো আপত্তি নেই।

পলক কথা বলা শুরু করলেন–আমি জানতে চাইছি, ম্যাডাম, আপনি কী ভাবে এই বিষয়টির কথা জানতে পারলেন?

মিস মার্পলের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠেছে তাচ্ছিল্যের হাসি। তিনি বললেন–কোন বিষয়? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। মাছের টুকরোটা কেমন সেটা জানতে চাইছেন?

এমন প্রশ্ন আশা করেননি কনস্টেবল পালক। তিনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হলেন। আসলে জেলে যে মাছটা ধরে এনেছে যে সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ থাকবে কেমন করে? এই মাছটাই আজ মিস মার্পলের সান্ধ্যকালীন খাবার টেবিলে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মিস মার্পল সাবধানে কথা বলে চললেন–এটা সিটিং রুমের মেঝের ওপর পড়েছিল। ছোট্ট একটা বেল্ট দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা। পরবর্তীকালে ওটাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

পলকের মুখমণ্ডলে ঔৎসুক্যের ছাপ পরিস্ফুটিত। তিনি বললেন–কীভাবে ওই বাচ্চা ছোকরা প্রে সবকিছু জানতে পারে বলুন তো?

মিস মার্পল তাঁর কথা শেষ করতে দিলেন না। তিনি বললেন–আপনার টিউনিকের ওপর একটা পিক লেগে আছে।

কনস্টেবল পলক তাকালেন। বুঝতে পারলেন এই কথার অন্তরালে কী অর্থ লুকিয়ে আছে। তিনি বললেন–সকলেই বলে থাকে ছাই দেখলেই উড়িয়ে দেখা উচিত সেখানে আগুন আছে কিনা, তাহলে হয়তো আমরা অনেক আপাত অকিঞ্চিৎকর প্রশ্ন থেকে রহস্যের সমাধান করতে পারব।

-এবার বোধহয় আপনি সত্য পথের পথিক হতে পেরেছেন। বলুন আমার কাছে আপনি কি জানতে চাইছেন, আমি আন্তরিক ভাবে চাইছি এই রহস্যটার সমাধান তোক।

কনস্টেবল পলক তার গলা আবিষ্কার করলেন। নোটবুকের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাববার চেষ্টা করলেন। তার পর বললেন–মৃত ভদ্রমহিলার স্বামী মিস্টার আর্থার স্পিনলো যে জবানবন্দি দিয়েছেন সেটা আমি সযত্নে রেখে দিয়েছি। মিস্টার স্পিনলো মারফত জানতে পারলাম, আজ দুটো বেজে তিরিশ মিনিটে আপনি ওনাকে ফোন করেছিলেন। আপনি ওনাকে আপনার বসার ঘরে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। আপনাদের মধ্যে কোনো একটা বিষয়ে আলোচনা হবে বলে। আপনি তিনটে বেজে পনেরো মিনিট ওই ভদ্রলোককে এখানে আসতে বলেছিলেন। কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে আপনি খুবই উদ্বিগ্ন। ম্যাডাম, আমি যা বলছি সব সত্যি কি?

কনস্টেবলকে অবাক করে দিয়ে মিস মার্পল বলে উঠলেন–কখনোই তা নয়, এসব বানানো গল্প কথা।

–সে কী? মিস্টার স্পিনলোকে আপনি দুটো বেজে তিরিশ মিনিটে ফোন করেননি?

–কখনোই না, দুটো তিরিশ-তিনটে তিরিশ-চারটে তিরিশ–কখনোই না।

বেশ বোঝা যাচ্ছে মিস মার্পল এখন বিরক্ত হয়ে উঠেছেন। হবারই কথা, কেউ যদি তার নামে মিথ্যে কিছু বলে থাকে তাহলে বিরক্তি তো মনের মধ্যে জাগবেই।

কনস্টেবল পলক বললেন-ঠিক আছে, এরপর তিনি পরম আনন্দের সঙ্গে তার গোঁফ জোড়া মুচড়ে দিলেন। উত্তেজিত হলে তিনি এভাবেই তার উত্তেজনার প্রশমনের চেষ্টা করে থাকেন।

মিস্টার স্পিনলো আর কী বলেছেন?

মিস্টার স্পিনলোর জবানবন্দির ভেতর অনেক কথাই জানা গেছে। তিনি নাকি অনুরোধে পড়ে এখানে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি তাঁর বাড়ি থেকে তিনটে বেজে দশ মিনিটে বেরিয়ে আসেন। তারপর মিস মার্পলের বাড়িতে পৌঁছে যাবার পর কাজের মেয়ে মারফত শুনতে পান, মিস মার্পল বাড়িতে নেই।

মিস মার্পল বললেন–গল্পের এই অংশটা একেবারেই সত্যি। ওই ভদ্রলোক হয়তো এখানে এসেছিলেন। কিন্তু আমি তখন উওমেনস ইনস্টিটিউটে একটি কাজে ব্যস্ত ছিলাম।

কনস্টেবল পলক আবার বললেন–ঠিক আছে তো?

মিস মার্পল বললেন-কনস্টেবল, মিস্টার স্পিনলো সম্বন্ধে আপনার কী ধারণা? আপনি কি ওনাকে এখানে সম্ভাব্য অপরাধী হিসেবে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করেছেন?

-তদন্তের এই অবস্থায় আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। অনেকগুলো নাম মিছিল করে হেঁটে চলেছে কিন্তু কে যে সত্যিকারের দোষী তা বের করব কীভাবে? আমাকে আরও সাবধানে পা ফেলতে হবে।

মিস মার্পল জিজ্ঞাসা করলেন–মিস্টার স্পিনলো?

মেয়েটি মিস্টার স্পিনলোকে ভালোবাসে। মিস্টার স্পিনলো মানুষ হিসাবে খুব একটা আকর্ষণীয় নন। খর্বাকৃতি প্রাচীন ভাবধারা আঁকড়ে ধরে পথ চলতে ভালোবাসেন, সাবধানে মেপে মেপে কথা বলেন। তাঁর চরিত্রের মধ্যে সম্মানীয় ব্যক্তিত্বের ছাপ আছে। মনে হয় তিনি বোধহয় কোনো একটা অজ্ঞাত কারণে গ্রামাঞ্চলে বসবাস করতে এসেছিলেন। এতদিন পর্যন্ত তিনি শহরেই তার জীবন কাটিয়ে গেছেন। তাই মিস মার্পলের কাছে এই চরিত্রটা খুব একটা আকর্ষণীয় না হলেও কৌতূহলের উপাদান নেই যে তা বলা যায় না।

তিনি বললেন–ছোটো থেকেই আমি আমার জীবনটা নিজের মতো কাটাতে চেয়েছি। আমি চেয়েছিলাম কোনো একদিন শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাব। ছোট্ট একটি বাগান বাড়ি থাকবে আমার। ফুল আমি অসম্ভব ভালোবাসি। আপনি জানেন আমার বউয়ের একটি ফুলের দোকান আছে। সেই দোকানে তার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল।

এই ধরনের জবানবন্দির মধ্যে আলাদা কোনো আকর্ষণ নেই। কিন্তু এর অন্তরালে রোমান্সের একটু ছোঁয়া আছে তা স্বীকার করতেই হবে। দেখা গেল ফুলের জলসাঘরে কমবয়েসী সুন্দরী শ্রীমতী স্পিনলো বসে আছেন।

শ্রীযুক্ত স্পিনলো অবশ্য ফুল সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানেন না। বীজ, বীজতলা তৈরি করা, এসব ব্যাপারে তাঁর অজ্ঞতা সকলেই জানে। অবশ্য তার মধ্যে একটা আশা আছে। যে আশা তাকে ওই সুন্দর বাগান বাড়িটায় মালিক করে তুলেছে। এখানে পা রাখলে মনে হবে আপনি বুঝি পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও পৌঁছে গেছেন। চারপাশে সুগন্ধি যুক্ত ফুলের মেলা। সাতরঙা রামধনু বুঝি পাখা মেলে উড়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যেই তাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করা হচ্ছে, তিনিও কিছুটা উদাসীন ভাবে উত্তর দিয়ে চলেছেন। শুধু তাই নয়, মিস মার্পলের কথাগুলো ছোট একটি নোটবুকে তুলে নিচ্ছেন।

তাঁকে দেখে শান্তস্বভাবের মানুষ বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ কেন তার সম্পর্কে এতখানি আগ্রহী হয়ে উঠবে? আসলে মৃত স্ত্রীর খবর শুনেও তিনি যে ভাবে তার আবেগ সামলাচ্ছেন, সেটাই অনেকের মনে সন্দেহের উদ্রেক করেছে। এই পৃথিবীতে অবশ্য এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা শোক অথবা দুঃখ, আনন্দ অথবা উল্লাসে একই রকম থেকে যান। শ্রীমতী স্পিনলো সম্পর্কে অনেক কথাই তখন জানা গেছে। বারবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে শ্রীযুক্ত স্পিনলোর কাছে। তা সত্ত্বেও আমরা কি তার হৃদয়ের গোপন দুয়ার খুলতে পারছি?

মস্ত বড়ো একটি বাড়িতে শ্রীমতী স্পিনলো একজন সাহায্যকারিনী হিসাবে জীবন শুরু করেছিলেন। তিনি ওই কাজটা ছেড়ে দিলেন, বাগান পরিচর্যা যিনি করতেন, তাঁকে বিয়ে করলেন। তাঁরই সহায়তায় লন্ডনে একটি ফুলের দোকান খুলেছিলেন। ধীরে ধীরে দোকানের শ্রীবৃদ্ধি হল। কিন্তু ওই উদ্দাম পরিচালকের অবস্থার ক্রমাবনতি দেখা গেল। দীর্ঘদিন রোগে ভুগে শেষ পর্যন্ত তিনি মারা গেলেন।

এবার ওই বিধবা মহিলা আশা ও ভালোবাসাকে পাথেয় করে এগিয়ে চললেন। তার দোকানের আরও শ্রীবৃদ্ধি ঘটল। তারপর? তিনি উক্তৃষ্ট দামে দোকানটা বিক্রি করে দিলেন। এবার আবার তাকে বিয়ের আসরে বসতে হল, তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী হলেন শ্ৰীযুক্ত স্পিনলো। মধ্যবয়সী একজন রত্ন ব্যবসায়ী, যিনি একটা ছোট্ট ব্যবসাকে স্বীয় উদ্যম এবং বুদ্ধি বলে বড়ো করে তুলেছেন। কিছুদিন বাদে তারা ঐ ব্যবসাটাও বিক্রি করে সেন্ট ম্যারিমেড-এ চলে আসেন।

শ্ৰীমতী স্পিনলোকে আমরা এক মোটামুটি অবস্থাপন্ন মহিলা বলতে পারি। আসলে ফুলের দোকান বিক্রি করে তিনি যে বিপুল অর্থ পেয়েছেন, তার থেকে নিয়মিত সুদ মাঝে মাঝে তার হাতে পৌঁছে যায়। জীবন যাত্রার মান খুব একটা উঁচু নয়। তাই হয়তো যে কোনো বিপর্যয় মোকাবিলা করার মতো সাহস এবং শক্তি তার আছে।

তিনি বুদ্ধি করে বিভিন্ন লগ্নীতে টাকা রেখেছেন। এর ফলে আগের গরিমাটা যথেষ্ট বেড়ে গেছে। আর এর ফলেই হয়তো তিনি আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকেছেন। শ্রীমতী স্পিনলো মাঝে মধ্যেই সম্মোহনের আসর বসান। শুধু তাই নয়, পরলোক সম্পর্কে তাঁর অগাধ আস্থা। মিডিয়াম ব্যবহার করে তিনি পরলোকের মানুষকে টেনে আনার চেষ্টা করেন। তিনি এক অদ্ভুত ধর্মমতে বিশ্বাস করেন। এর মধ্যে ভারতীয় আধ্যাত্ম শক্তির ছাপ আছে। শুধু তাই নয়, প্রাণায়াম এবং যোগক্রিয়াতেও তার উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। সেন্ট ম্যারি মেড-এ আসার পর তার ধার্মিক ভাবনাতে কিছু পরিবর্তন ঘটে গিয়েছিল। তিনি পুরোনো দিনের গোড়া ক্রিশ্চান হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। মাঝে মধ্যেই চার্চে যেতেন। চার্চের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখতেন। শুধু তাই নয়, স্থানীয় ঘটনাবলী সম্পর্কে তার আগ্রহের কোনো সীমা ছিল না। এমনকি তিনি মেয়েদের সঙ্গে বসে ব্রিজ খেলার আসরেও মেতে উঠতেন।

একটি সাধারণ জীবনযাত্রা, সেখানে কেন আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা? কেন এভাবে নিহত হতে হল তাকে।

.

০২.

কোনো ব্যাপার একবার তার মাথার মধ্যে ঢুকে গেলে আর নিস্তার নেই। সেটার শেষ না দেখে তিনি ছাড়বেন না। তিনি পরিষ্কার ভাবে বললেন–স্যার, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, স্বামীটাই খুন করেছে, তাকে আগে গারদে পুরতে হবে।

–তোমার কি তাই মনে হয়?

-এটা আমার অনুমান নয়, স্যার, আমার স্থির সিদ্ধান্ত। আপনি শুধু একবার ওই ভদ্রলোকের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখবেন। সমস্ত মুখ অপরাধে থমথম করছে। ওনার মধ্যে আপনি কি এক টুকরো আবেগের বিচ্ছুরণ দেখেছেন? উনি জানতেন যে, ভদ্রমহিলা মারা গেছেন। তাই অত আস্তে আস্তে হেঁটে বাড়ির দিকে আসছিলেন।

এছাড়া তুমি আর কাউকে সন্দেহের তালিকায় রাখতে পারছ না? ভেবে দেখ তো শোকের ভূমিকায় অভিনয় করা কি খুবই শক্ত?

–অনেকের ক্ষেত্রে এটা হয় না, স্যার। কোনো কোনো মানুষ আছে যারা আরোপিত ব্যক্তিত্বে বিশ্বাস করে না। স্পিনলো সেই জাতের বলে আমার মনে হয়।

–তার জীবনে কি অন্য কোনো মহিলার ছাপ আছে? কর্নেল জানতে চাইলেন।

-না, এখনও পর্যন্ত তেমন কোনো খবর আমার হাতে আসেনি। অবশ্য ওই ভদ্রলোক নানা ছলাকলা জানেন। তিনি যে কোনো গোপন অভিলাষ চেপে রাখতে পারেন। আমার মনে হচ্ছে উনি বোধহয় স্ত্রীকে আর সহ্য করতে পারছিলেন না। স্ত্রীর অগাধ অর্থ আছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই জাতীয় মহিলাদের সহ্য করা সত্যি সম্ভব নয়। স্বামীদের এঁরা চাকর করে রাখতে ভালোবাসেন। তাই উনি ঠাণ্ডা মাথায় এই খুনের পরিকল্পনাটা করেছিলেন। উনি হয়তো ওনার খিটখিটে মেজাজের স্ত্রীর কাছ থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন। বাকি জীবনটা সুখে শান্তিতে কাটিয়ে দেবার ইচ্ছে লুকিয়ে ছিল ওনার মনের মধ্যে।

–হ্যাঁ, হয়তো তোমার অনুমান সঠিক। এখন আমার তাই মনে হচ্ছে।

-এই অনুমানটার ওপরেই নির্ভর করে থাকুন স্যার, আমি বলছি আপনাকে ঠকতে হবে না। ওই ভদ্রলোক ধীরে ধীরে ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিলেন। তাই বোধ হয় ফোন কল এসেছে এমন একটা অছিলায় বের হয়ে যান।

মেলচেট জানতে চাইলেন–তার মানে কোনো ফোন কল আসেনি?

–না, স্যার। এর কী অর্থ হতে পারে? হয়তো ওই ভদ্রলোক মিথ্যে কথা বলেছেন, অথবা ওই কলটা এসেছিল পাবলিক টেলিফোন বুথ থেকে। এই গ্রামে মাত্র দুটো পাবলিক টেলিফোন বুথ আছে। একটা স্টেশনে, অন্যটা পোস্ট অফিসে। পোস্ট অফিসের টেলিফোন থেকে কল আসেনি। কারণ মিসেস ক্লোক মোটামুটিভাবে সকলকেই চেনেন। স্টেশনের টেলিফোন বুথ থেকে কলটা আসতে পারে। ট্রেন আসে দুটো সাতাশ মিনিটে, তখন খানিকটা হৈ চৈ হয়। তবে একটা ব্যাপার আমার মাথায় আসছে না। সেই ব্যাপারটা সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে হবে। তিনি বলেছেন, মিস মার্পল তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। এটা কিন্তু একেবারে ডাহা মিথ্যে। মিস মার্পলের বাড়ি থেকে ফোন কলটা আসেনি, কারণ মিস মার্পল তখন ইনস্টিটিউটে চলে গিয়েছিলেন।

–তাহলে তুমি কি মনে করছ? স্বামী ইচ্ছে করেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। যাতে অন্য একজন আততায়ী এসে মিসেস স্পিনলোকে হত্যা করতে পারে?

হ্যাঁ, আপনি ট্রেড ইয়ার্ডের কথা মনে রেখেছেন? আমি তার সঙ্গে কাজ করেছি, আমি দেখেছি, তিনি খুব এলোমলো স্বভাবের মানুষ। তিনি একটু পরে কী করবেন আগে থেকে তা নির্বাচন করতে পারেন না।

হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ, তার চরিত্রের মধ্যে কোনো দৃঢ়তা নেই। তার চরিত্রে একাধিক দোষও লুকিয়ে আছে।

-স্যার, আমার মন্তব্য যে একেবারে সঠিক আমি তা বলছি না। আমার মনে হয় এই ব্যাপারের সঙ্গে সেও জড়িয়ে থাকতে পারে। হয়তো সে এই ভাবে তার কৃতিত্ব জাহির করার চেষ্টা করেছে।

মেলচেট অবাক হয়ে জানতে চাইলেন–অক্সফোর্ড ব্লুবার্ডদের খবর কি?

-এই ব্যাপারটাও আমি ভেবে দেখেছি। মনে হয় কেউ হয়তো টাকার লোভে এই কাজটা করেছে। আমি এ ব্যাপারে কয়েকটা ক্ল্য আপনাকে দিয়ে গেলাম। আপনি এই ক্লু গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করবেন। আমার মনে হয় আপনি কদিনের মধ্যেই আসল আততায়ীকে ধরতে পারবেন।

কর্নেল মেলচেট বললেন-তোমার মন এত সন্দেহে ভরা কেন? যাক, তুমি কি মিস মার্পলের সঙ্গে কথা বলেছ?

এই ব্যাপারের সঙ্গে মিস মার্পলের কী যোগ থাকতে পারে, স্যার, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার তো মনে হচ্ছে এটা আমরাই সমাধান করতে পারব।

-না, হয়তো আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যোগসূত্ৰতা বলে কিছু নেই। কিন্তু ওই ভদ্রমহিলার অগাধ আস্থা এবং অসীম জ্ঞানের প্রতি আমি উপেক্ষা দেখাব কী করে? তোমার এখনই উচিত ওনার বাড়িতে গিয়ে ওনার সাথে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করা। ওনার বয়স হয়েছে, কিন্তু মাথাটা এখনও পরিষ্কার আছে।

প্যাট ইচ্ছে করেই বিষয়টা ঘোরাবার চেষ্টা করে বললেন–স্যার, একটা ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে পরামর্শ চাইছি। মৃতা ভদ্রমহিলা যেখান থেকে তার পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন, আমি বলতে চাইছি যেখানে তিনি পরিচারিকার কাজ করতেন, সেই ফ্ল্যাট রবার্ট অ্যাবার ক্রমগট জায়গাটা একবার দেখে এলে কেমন হয়? আমার মনে হচ্ছে সেখানে গেলে আমরা কোনো একটা সূত্রের সন্ধান পাব। ওখান থেকেই তো হীরে জহরত চুরি হয়ে গিয়েছিল। আমি বলতে চাইছি মরকত মণির কথা, আপনার তো মনে আছে, স্যার। সেগুলো আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি যথেষ্ট নাড়াচাড়া করেছিলাম, আমার মনে হচ্ছে ওই ভদ্রমহিলা যখন সেখানে কাজ করতেন তখনই এই ঘটনাটা ঘটে গিয়েছিল। এই সময় অবশ্য তিনি নেহাতই এক কিশোরী কন্যা ছিলেন। আপনার কি কখনো মনে হয় না স্যার, এর সাথে ওই ভদ্রমহিলার কোনো যোগ সূত্র থাকতে পারে? আসল স্পিনলো তো সেই সময় জুয়েলারির দোকান নিয়ে নাড়াচাড়া করতেন, মনের ভেতর উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকাটাই স্বাভাবিক, তাই নয় কি? ঘটনাটার কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে। পুলিশ মহলে একটা চালু কথা ছিল, তা হল ওই বাড়ির কোনো একটি ছেলে এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আছে, তার নাম হল জিম অ্যাবার ক্রমগই। সে হল বড়োলোকের বখে যাওয়া ছেলে। প্রচুর দেনা করে ফেলেছিল, আর ওই ভয়ঙ্কর ডাকাতিটা হবার পর সব দেনা সে শোধ করে দেয়। বলা হয়, কোনো এক ধনী ভদ্রমহিলা নাকি তার হয়ে এই সব দেনা শোধ করে দিয়েছিল, ব্যাপারটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য বলেই ঠেকেছিল। ভেবে দেখ, বৃদ্ধ অ্যাবারক্রমগই কিন্তু এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশি আলোচনা করতে চাননি। আমার মনে হয়, এটা বোধহয় নেহাতই একটা পারিবারিক কলঙ্ক, তাই তিনি চেষ্টা করেছিলেন এটাকে ধামা চাপা দেবার।

প্যাট একটু বিষণ্ণ হয়ে বলল–আমি আপনাকে আমার মনের কথা জানালাম স্যার, আমার তো ভুল হতে পারে।

.

০৩.

মিস মার্পল প্যাটকে অভিবাদন জানালেন। সাবধান এবং সন্তর্পণে। যখন শুনতে পেলেন যে, প্যাটকে কর্নেল মেলচেট পাঠিয়েছেন তখন তার মধ্যে আতিথেয়তার ভাব ফুটে উঠল। আসলে তিনি সব মহলের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইতেন।

-কর্নেল মেলচেটকে আমার অভিবাদন জানাবেন। আমি তো ভাবতেই পারছি না যে, তিনি এখনও আমাকে মনে রেখেছেন।

এটাই হলো মিস মার্পলের চরিত্রের ভদ্রতা।

–উনি সবসময় আপনার কথা মনে রাখেন, ম্যাডাম। উনি আমাকে বললেন এখনই আপনার সঙ্গে দেখা করতে। সেন্ট মেরিমেড-এ যেসব ঘটনা ঘটে চলেছে, আশা করি আপনি সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এই ব্যাপারে আপনার অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান আমাকে সাহায্য করে।

–আমি আবার কর্নেলকে আমার ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন এই ঘটনাটা সম্পর্কে আমি বিন্দু বিসর্গ কিছুই জানি না। কীভাবে যে হত্যাকাণ্ডটা ঘটেছে সে ব্যাপারে আমি এখনও অন্ধকারের মধ্যে আছি।

–আপনি কি বুঝতে পারছেন কী বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলতে চলেছি?

-হ্যাঁ, আমি খানিকটা অনুমান করতে পারছি, এইভাবে কথা বলে কোনো লাভ হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। শুধু শুধু কথা বলে সময় কাটানোর কী দরকার?

প্যাট বুঝতে পারছেন, পরিস্থিতি ক্রমশই তাঁর হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও তিনি শেষ চেষ্টায় খড় কুটো আঁকড়ে ধরার প্রয়াসে মত্ত থেকে বললেন–এটাকে নেহাতই একটা ব্যবসায়িক বা শুকনো আলোচনা বলে ভাববেন না, ম্যাডাম। মনে করা যাক আমরা অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় এসেছি। গোপনে আপনার সাথে কিছু শলা পরামর্শ করতে চাই।

-আপনি কি বুঝতে পারছেন, আপনার কথার অন্তরালে কী অর্থ লুকিয়ে আছে? আপনি কী সাহায্য আমার কাছ থেকে পেতে চাইছেন তা একবার খুলে বলবেন কী? আপনি কি সত্যিটার সন্ধানে আমার কাছে এসেছেন?

-হ্যাঁ, তা হতে পারে।

-তাহলে শুনুন, এব্যাপারে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমি মনে করছি। অবশ্য এক্ষেত্রে কিছুটা অনুমান শক্তির কথাও বলতে হবে। এখানে কি দুটো আলাদা শিবির হয়ে গেছে? আপনি কি আমার কথার অন্তরালে লুকিয়ে থাকা অর্থ বুঝতে পারছেন? আসুন, আমি সূত্রটা ধরিয়ে দিই। কিছু কিছু মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস জেগেছে যে, ওর স্বামীটাই আসল খুনি, তিনি বোধহয় এইভাবে নিজেকে চাপা দেবার চেষ্টা করছেন। আসলে যখনই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়, তখন যে বেঁচে থাকে তার ওপর আমরা জোর করে অভিযোগের দায়ভার চাপিয়ে দিই। আপনার মনেও কি ধারণা তাই নয়?

–হতে পারে, প্যাট নিজের মনোভাব গোপন রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করলেন।

-তাহলে? আমি কি ঠিক বলিনি? সবক্ষেত্র থেকেই সন্দেহটা মিস্টার স্পিনলোর ওপর পড়তে পারে। আমি শুনেছি মিসেস স্পিনলো নাকি অঢেল অর্থের অধিকারিনী ছিলেন। তাঁর মৃত্যু হলে সমস্ত অর্থ মিস্টার স্পিনলো পাবেন।

-এটাই তো আমরা জানি, এ ক্ষেত্রে আমাদের মনে কোন সন্দেহ হয়? অর্থের লোভে স্বামী স্ত্রীকে মেরে ফেলেছেন তাইতো? আমি কিন্তু এই ব্যাপারটার সাথে একদম একমত হতে পারছি না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় একেবারে শেষ মুহূর্তে আমাদের অনুমান ধারণা সবকিছু ভেঙে ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে।

-হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন, ম্যাডাম, স্ত্রীর মৃত্যুর ফলে হঠাৎ ভদ্রলোক বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হয়ে গেছেন।

আর তার জন্য কি তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়? ব্যাপারটার মধ্যে একটুখানি অবিশ্বাস্য আছে একথা আমি অস্বীকার করতে পারছি না। কিন্তু শুধু টাকার জন্য একজন পুরুষ মিছিমিছি তার স্ত্রীকে হত্যা করবেন কেন? আমার তো মনে হয় এর অন্তরালে অন্য একটা ব্যাপার লুকিয়ে আছে, কতকগুলো বিষয় অবশ্য আমি গোপন করতে পারছি না। যেমন, তিনি কেন মিথ্যে করে বললেন যে, আমার কাছ থেকে টেলিফোনের খবর পেয়ে তিনি ছুটে এসেছিলেন? তারপর ফিরে গিয়ে দেখেন যে, তার স্ত্রী মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। অর্থাৎ এই হত্যার ঘটনাটা ঘটেছে যখন তিনি বাড়িতে ছিলেন না, তার মানে? তার মানে কি কোনো অচেনা অজানা আগন্তুক এসে এই হত্যাকাণ্ডটা ঘটিয়েছে? এটা কি কোনো ছিঁচকে চোরের কাজ? হয়তো শ্ৰীমতী বাধা দেবার চেষ্টা করেছিলেন। ছিঁচকে চোর তার পাপের কোনো সাক্ষী রাখতে চায়নি।

ইন্সপেক্টার মাথা নাড়লেন–আপনি কি একবার টাকা পয়সার লেনদেনের কথাটা ভাববেন না? আমরা শুনেছি ইদানীং স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা ছিল না। পাড়া প্রতিবেশীরা মাঝে মধ্যেই তাদের চিৎকার শুনতে পেতেন।

মিস মার্পল এই কথা শেষ করতে না দিয়ে বললেন–এটা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা।

–তাহলে আপনি কী অনুমান করেন?

–না, সকলে যা ভাবছে আমি কিন্তু তা ভাবছি না। কী বিষয় নিয়ে তাদের ঝগড়া হত সে ব্যাপারটা একবার ভেবে দেখেছেন কি? আমার মনে হয় ওই পরিচারিকা গ্রাইট বেন্টের ওপর নজর রাখা দরকার। এই বেন্টের মারফতই তো খবরগুলো বাইরে চলে গেছে, তাই নয় কি?

এবার ইন্সপেক্টারের কণ্ঠস্বরের ভেতর কেমন একটা মলিনতা জেগেছে। ইন্সপেক্টার আমতা আমতা করে বলতে চেষ্টা করলেন–আসলে হয়তো এই কাজের মেয়েটি সব খবর জানে না। নেহাত উত্তেজনার বসে সে কিছু গুজব ছড়িয়েছে।

শুকনো ঠোঁটের কোণে হাসির চিহ্ন আঁকবার আপ্রাণ চেষ্টা করলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত পারলেন না।

মিস মার্পল তখন গড়গড়িয়ে বলে চলেছেন–এখানে অবশ্য আর একটা দল গড়ে উঠেছে, এবার টেড গোর্যান্টের কথা বলি, টেড গোর্যান্ট হল এক সুপুরুষ সুদর্শন যুবক। আমার মনে হয় রূপের সাহায্যে মানুষ অনেকের মন ভোলাতে পারে। টেডের ক্ষেত্রে কি তেমনই ঘটনা ঘটে গিয়েছিল? যে সমস্ত মেয়েরা চার্চে আসত, বিকেলে অথবা সকালবেলা, তাদের অনেকের সাথেই আমি কথা বলেছি। শুধু কী তাই? দেখা গেল মধ্যবয়সিনী মেয়েরাও চার্চের কাজে আরও বেশি মাত্রায় যোগ দিতে আসছে। তারা সঙ্গে আনছে টেডের জন্য ক্লিপার এবং স্কার্ট। এই ব্যাপারটা ওই মানুষটির মাথা ঘুরিয়ে দেবার পক্ষে যথেষ্ট নয় কি?

…কিছু দেখা যাক, এর মধ্যে কোনো সন্দেহ বা সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। আবার আমি টেড গোর্যান্টের কথা বলব। কেন টেড গোর্যান্টের নাম বারবার উচ্চারণ করছি বলুন তো? আসলে টেড গোর্যান্টে তো মাঝে মধ্যেই মিসেস স্পিনোর সঙ্গে দেখা করতে আসত, সেই খবরটা কি আপনার জানা আছে? মিসেস স্পিনলো কথা প্রসঙ্গে আমাকে একবার বলেছিলেন যে, তিনি অক্সফোর্ড গ্রুপের মধ্যে ঢুকে গেছেন। আসলে এখানে এক একটা ছোটো ছোটো গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এক সময় অক্সফোর্ড গ্রুপ নামে একটি ধার্মিক আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল, আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি এই মতবাদে যাঁরা বিশ্বাস করেন তারা সকলেই নিজস্ব কর্ম সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন এবং প্রাণপণ চেষ্টায় কাজটা শেষ করার কথা ভাবেন। আমার মনে হয় মিসেস স্পিনো বোধ হয় ওই ছেলেটির কথাবার্তা শুনে কিছুমাত্রায় তার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছিলেন।

নিঃশ্বাস নেবার জন্য মিস মার্পল কিছুক্ষণের জন্য বিরতি দিলেন। তারপর আবার গড়গড়িয়ে বলতে শুরু করলেন–তাদের মধ্যে অন্য কোনো ঘটনা ঘটেছিল কিনা সেটা আমি ঠিক বলতে পারব না। তবে আমার মন এত নীচ নয় যে, আমি পুরুষ এবং নারীর মধ্যে কোনো সহজ-সরল সম্পর্ক মেনে নেব না। তবুও আমার মনে হয় কোথায় যেন একটা ছোট গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। যে গোলমালের কেন্দ্রে পৌঁছোতে না পারলে এই রহস্যের সমাধান করা কখনোই সম্ভব হবে না। অনেকেই বলে থাকে, মিসেস স্পিনলো নাকি ওই অল্পবয়সী ছেলেটির দ্বারা বিশেষ ভাবে আকর্ষিতা হয়েছিলেন। শুধু তাই না, তিনি ওই ছেলেটিকে বেশ কিছু টাকা ধার হিসেবে দিয়েছিলেন। এই ঘটনার মধ্যে কতটা সত্যি লুকিয়ে আছে তা আমি জানি না। কিন্তু ওই ছেলেটিকে সেদিন স্টেশনে দেখা গিয়েছিল। দুটো সাতাশ মিনিটে ডাউন ট্রেনে সে চড়ে বসেছিল। থাকতেই পারে। কিন্তু তার আচরণের মধ্যে কিছু কিছু অস্বাভাবিকতা চোখে পড়েছে। ট্রেন যখন ছুটে চলেছে, তখন ছেলেটি কোথায় গেল? সে কি ট্রেনের কামরার মধ্যে দিয়ে অন্য দিকে চলে যায়? তারপর বাঁশের বেড়া পার হয়ে কাটাঝোপকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় স্টেশনের প্রবেশ পথের দিকে। তাকে কিন্তু কটেজের চারপাশে আর দেখতে পাওয়া যায়নি। আর একটা বিষয়ের কথাও আপনাকে মনে রাখতে হবে, তা হল মিসেস স্পিনলো কোনো পোশাক পরিধান করেছিলেন? সেই পোশাকের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে বলে আপনার কি মনে হয়?

–আমি তো এ ব্যাপারটা কখনো ভেবে দেখিনি, এ প্রশ্নটা আপনি কেন করছেন?

মিস মার্পল বলে উঠলেন–উনি একটা কিমোনো পরে ছিলেন, কোনো সাধারণ পোশাক নয়। কিমোননা কিন্তু কোনো কোনো মানুষের কাছে বিশেষ অর্থ বহন করে।

–আপনি কি তাই মনে করছেন?

-না, আমি ঠিক সেভাবে বলতে চাইছি না। আমি বলতে চাইছি, এর মধ্যে একটা অস্বাভাবিকতা লুকিয়ে আছে।

–আপনি কি এটাকে স্বাভাবিক বলে মনে করছেন?

মিস মার্পলের চোখ দুটি জ্বলে উঠল। এখনও সেখানে বজায় আছে শৈত্য ভাব এবং প্রতিফলনের ক্ষমতা। তিনি বলে উঠলেন–হ্যাঁ, কোনো কোন ক্ষেত্রে এটাকে সাধারণ ভাবে দেখা উচিত।

এবার ইন্সপেক্টার প্যাট মন্তব্য করলেন–তাহলে? ওনার স্বামীর বিরুদ্ধে আরেকটা অপরাধ-তত্ত্ব খাড়া করা যেতে পারে সেটা হল প্রচণ্ড হিংসা।

-না না, এখানে আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে, মিস্টার। আমার মনে হয় মিস্টার স্পিনলো কখনোই স্ত্রীকে হিংসা করতেন না। তিনি এসব ছোটোখাটো ব্যাপারে মাথা ঘামাতেন বলে আমার মনে হয় না। যতটুকু আমি তাকে দেখেছি, তার ভিত্তিতেই এ কথা বলছি। যদি ওনার বউ বাইরে চলে যায় এবং লণ্ঠনের ওপর একটা চিরকূট রেখে যান, তাহলেও কিন্তু উনি কিছু মনে করবেন না। ওনার স্বভাবটা এমন নয় বলেই আমার বিশ্বাস।

মিস মার্পল সন্দেহ ভরা দৃষ্টিতে ইন্সপেক্টার প্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। প্যাট একটু বিব্রত বোধ করলেন। এই মুহূর্তে প্যাটের মন থেকে ভাবনারা দূরে কোথায় হারিয়ে গেছে। মিস মার্পলের কথার বিরুদ্ধে যাবার মতো সাহস এবং শক্তি তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। শেষ অব্দি মিস মার্পল জোরের সঙ্গে বললেন-ইন্সপেক্টার স্পটে গিয়ে আপনি কি কোনো সূত্র খুঁজে পেয়েছিলেন? নাকি অন্ধকারে হাতড়েছেন?

–মিস মার্পল, এখনকার দিনে কেউ আর আঙুলের ছাপ কিংবা সিগারেটের ছাই রাখে না অনুসন্ধানের জন্য। এখন ব্যাপারটা একেবারে পাল্টে গেছে।

-কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এটা বোধহয় একটা পুরোনো ধরনের অপরাধ।

–প্যাট সঙ্গে সঙ্গে বললেন–এ কথার অর্থ কী? আমি তো ঠিক বুঝতে পারছি না।

মিস মার্পল শান্তভাবে জবাব দিলেন–আপনি কি কনস্টেবল পলকের সঙ্গে কথা বলেছেন? আমার মনে হয় এই ব্যাপারে কনস্টেবল আপনাকে যথেষ্ট সাহায্য করতে পারবেন। তিনিই কিন্তু প্রথম এই অপরাধটা দেখেছেন, তাই তার জবানবন্দির একটা আলাদা দাম আছে বৈকি।

.

০৪.

ডেক চেয়ারের ওপর বসে আছেন মিস্টার স্পিনলো। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি বোধ হয় জগৎ সংসার থেকে দূরে কোথাও হারিয়ে গেছেন। তিনি ঠাণ্ডা শান্ত স্বরে বলছেন–আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, কীভাবে ঘটনাটা ঘটেছে। আমার শ্রবণ শক্তি খুব একটা প্রখর না, অনেক শব্দ আমি ঠিক মতো শুনতে পাই না। কিন্তু আমার মনে হল একটি অল্প বয়সী ছেলে আমাকে ডেকে বলেছিল-ক্লিসেন্ট কার নাম? তার গলার শব্দ শুনে আমি ভেবেছি সে হয়তো কাউকে খুঁজছে, কিন্তু আমি, আমি ভাবতেই পারিনি যে, আমার প্রিয় সহধর্মিনী আর বেঁচে নেই। আমি, আমি কী করে তাকে জগৎ থেকে হারিয়ে ফেললাম।

মিস মার্পল একটি মৃত গোলাপের পাপড়ির দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন-তার মানে ওই ছেলেটি কি আপনাকে কোনো খবর দিতে এসেছিল? এই ব্যাপারে আমি একেবারে সুনিশ্চিত।

কিন্তু একটি বালকের মাথার ভেতর থেকে এমন বুদ্ধি আসবে কি? আমি তো কিছুই মাথা মুণ্ডু বুঝতে পারছি না।

মিস মার্পল বললেন–হ্যাঁ, এখন দেখা যাক বড়োরা কী কথা বলতে পারে?

তার মানে? অন্য অনেকের মনেও একই ভাবনা ঘুরপাক খেয়েছে?

–সেন্ট ম্যারিমেড-এর বাসিন্দাদের মধ্যে অর্ধেকজনই এই ভাবনাটায় একেবারে আপ্লুত হয়ে গেছে।

-কেন, কেন বলুন তো? এই ধরনের একটা ভাবনা কেন ভাবনায় এসেছে? আমাকে সবাই দোষী সাব্যস্ত করতে চাইছে কেন? আমি করেছি? আমি যে আমার স্ত্রীকে কতখানি ভালোবাসতাম তাতো সকলেই জানেন। আহা, আমি ভাবতেই পারছি না এখন আমার জীবন কীভাবে কাটবে? আসলে তার জন্য আমি শহর ছেড়ে গ্রামে বসবাস করতে শুরু করি। আমি ভেবেছিলাম এখানে আমাদের দিনগুলো ভালোভাবেই কেটে যাবে। হয়তো কোনো কোনো ব্যাপারে আমাদের মধ্যে সামান্য মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে, সেটাই স্বাভাবিক, তার জন্য আমি কখনো তাকে দোষারোপ পর্যন্ত করিনি। এই শূন্যতা আমি সামাল দেব কী করে?

–হয়তো আপনার মুখ থেকে ছুটে আসা প্রতিটি শব্দ সঠিক, কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আপনি কী বলবেন? আপনার হাতে কোনো অস্ত্র আছে কি?

মিস্টার স্পিনলো এবার উঠে দাঁড়ালেন। তারপর বললেন–আমার প্রিয় মহাশয়া, অনেক বছর আগে আমি এক চীনা দার্শনিকের কথা শুনেছিলাম। যিনি তাঁর স্ত্রীকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তখনকার দিনের নিয়মানুসারে সেই মহিলাটিকে রাস্তায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে নানাভাবে আহত এবং আক্রান্ত করা হয়। যেটা ছিল চীনা সমাজের এক বিকৃত উল্লাস, আমি জানি, তখন তার মনের ভেতর কী ভাবনার অনুরণন ধ্বনিত হয়েছিল। এক্ষেত্রে আমার মনও একই ভাবনায় প্লাবিত হয়েছে। আমি কী ভাবে আমার মনোভাব প্রকাশ করব?

মিস মার্পল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন মিস্টার স্পিনলোর দিকে। তারপর বললেন সেন্ট ম্যারিমেড-এর মানুষরা কিন্তু আপনার এসব তত্ত্ব কথায় বিশ্বাস করবে না। তাদের কাছে চীনা দার্শনিক তত্ত্বের কোনো মূল্য নেই।

-কিন্তু আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন?

মিস মার্পল এবার বললেন–আঙ্কেল হেনরি এই ধরনের মানুষরা আবেগ এবং অনুভূতিকে সংযত রাখতে পারে না। মাইকেল হেনরির উদ্দেশ্য কী ছিল? কখনো সর্বজন সমক্ষ্যে আবেগ দেখাবে না। ওই ভদ্রলোক কিন্তু ফুল ভালোবাসতেন।

এবার মিস্টার স্পিনলো বললেন–আমি একটা অন্য জিনিস ভাবছি, আপনার কথা বলার মধ্যে এক ধরনের ঔৎসুক্য ফুটে উঠেছে। আমি বাগানের এককোণে একটি সুন্দর পুরু বাগিচা তৈরি করেছি। একেবারে পশ্চিমদিকে। সেখানে গোলাপি গোলাপেরা সুবাস ছড়ায়। উসটোরি ফুলও আছে। এছাড়া একটি তারার মতো দেখতে সাদা ফুলও আছে, যার নাম এই মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে না।

ওই ভদ্রলোক খুব আস্তে আস্তে কথা বলছেন, তখনই মিস মার্পল বলছেন-এই তো, এখানে যে তালিকা আছে, সেখানে ফুলের নাম ও ছবি আছে। আপনি হয়তো এই ধরনের ফুলের কথা বলতে চাইছেন। এমন ফুল গ্রামে অনেক দেখতে পাওয়া যায়।

মিস্টার স্পিনলো ওখানে বসে থাকলেন, তার কোলের ওপর ক্যাটালগ। মিস মার্পল তার ঘরের ভেতর চলে গেলেন, একটি বাদামি কাগজে কোনো একটি পোশাক তুলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। তাকে এখন অতি দ্রুত পোস্ট অফিসে যেতে হবে। ড্রেস মেকার মিস্ পলিট ওই পোস্ট অফিসের পাশের ঘরেই বসবাস করেন।

মিস মার্পল সোজা ওপরের সিঁড়ি ধরে উঠে গেলেন। দুটো বেজে তিরিশ মিনিট, এক মুহূর্ত দেরি হয়েছে, মাচঝেহেমের বাস পোস্ট অফিসের দরজার সামনে এসে থামল। সেন্ট মেরিমেড-এর দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এটা একটা মনে রাখার মতো ঘটনা। পোস্ট-মিস্ট্রেস পার্শেল নিয়ে বেরিয়ে এলেন। পার্শেলটা এখনই বিলি করতে হবে। পোস্ট অফিস যে শুধুমাত্র ডাক বিলি করে তা না, এখান থেকে সন্দেশ পাওয়া যায়, ছোটোদের খেলনা বাটি আর সস্তা দামের বই পত্র।

কিছুক্ষণের জন্য অন্তত চার মিনিট মিস মার্পল পোস্ট অফিসে একলা ছিলেন।

পোস্ট-মিস্ট্রেস ফিরে আসার পর্যন্ত মিস মার্পল সেখানেই থাকলেন। তিনি সিঁড়ি ধরে ওপরতলায় গিয়ে মিস পলিটের কাছে সব কথা খুলে বললেন। তাকে একটা পুরোনো ধূসর রঙের ক্রেপের কাপড় দিতে হবে। আরও কিছু, মিস পলিট সব কিছু দেবার প্রতিশ্রুতি দিলেন।

.

০৫.

মিস মার্পলের নাম শুনে চিফ কনস্টেবল একটুখানি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি এসে নানা ধরনের ক্ষমা প্রার্থনা করে বললেন–খুব দুঃখিত, আপনাকে এভাবে বিরক্ত করতে হচ্ছে বলে। আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনাকে অত্যন্ত ব্যস্ত মুহূর্ত কাটাতে হয়। কর্নেল মেলচেট আশা করি আপনি আমার ধৃষ্টতা ক্ষমা করবেন। আমার মনে হচ্ছে ইন্সপেক্টার প্যাট না হয়ে আপনি আমার সঙ্গে কথা বলতেন তা হলে রহস্যের সমাধানটা এতদিনে হয়ে যেত। একটা বিষয় আপনাকে আমি খুলে বলছি। কনস্টেবল পলককে বলবেন, সে যেন সাহায্য করে। সত্যি কথা বলতে কী কনস্টেবল পলকের সাক্ষ্য এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হতে পারে।

এসব কথা শুনে কর্নেল মেলচেট কেমন যেন হয়ে গেলেন। তিনি বললেন–পলক? সেন্ট ম্যারিমেড-এর কনস্টেবল? এই সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে তার কাছে যেতে হবে। নাকি?

–ওই ভদ্রলোক একটা পিন তুলে নিয়েছিলেন, আপনি কি তা জানেন? এটা ছিল টিউনিকের সঙ্গে লাগানো। আমার মনে হয় এই পিনটা বোধহয় পাওয়া গেল মৃতা স্পিনলোর বাড়ি থেকে।

শান্ত হোন, শান্ত হোন। ঠিক করে বলুন তো, এই পিনটা নিয়ে এত চিন্তা করার কি আছে? মিসেস স্পিনসোর মৃতদেহের কাছে এই পিনটা ছিল, তাই তো? প্যাট তো এই কথাটা গতকাল আমাকে জানিয়েছিল, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। না, কোনো বস্তু তো সরানো হয়নি। ব্যাপারটা নিয়ে এত মাথা ঘামাবার কিছু আছে কি? এতো একটি অত্যন্ত সাধারণ পিন, এইদিন মেয়েরা যা সচরাচর ব্যবহার করে থাকে।

-না না কর্নেল মেলচেট, এখানেই কোথাও বোধহয় আপনার ভুল হচ্ছে। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির তফাতে অনেক বস্তু তার বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে। একজন সাধারণ পুরুষের চোখে যাকে অতি সাধারণ পিন বলে মনে হচ্ছে, এটা কিন্তু তা না। এটা এক বিশেষ ধরনের পিন, অত্যন্ত পাতলা, যেটাকে আমরা ব্যবহার করে থাকি কোনো পোশাক পরিচ্ছদ পরার জন্য। ড্রেসমেকাররা সচরাচর যে পিন ব্যবহার করে যাবে।

মেলচেট এবার অবাক চোখে মিস মার্পলের দিকে তাকালেন। তিনি কি সমস্যার গভীরে প্রবেশ করতে পারছেন? মিস মার্পল অধৈর্য হয়ে বার বার তার মাথা নাড়লেন।

-হ্যাঁ, এবার আমি একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছি। তার মানে? ওই ভদ্রমহিলা কিমানো পরেছিলেন কেন? তিনি তার নতুন পোশাকটা পরার চেষ্টা করছিলেন। তার জন্য তিনি সামনের ঘরে চলে গিয়েছিলেন। মিস পলিট তখন কী করছিলেন? মিস পলিট বোধ হয় ব্যস্ত ছিলেন তাঁর কাজে। আর তিনি সামান্য অসতর্কতার মুহূর্তে ভদ্র মহিলার গলায় টেপ পেঁচিয়ে দিয়েছিলেন। কেন একাজটা তিনি করেছিলেন? হা, এই হত্যাকাণ্ড করা হয়েছে গলায় টেপ পেঁচিয়ে দিয়ে। তারপর? আবার অতি দ্রুত মিস পলিট বাইরে বেরিয়ে যান। দরজা বন্ধ করে দেন। তারপর? সামনে দাঁড়িয়ে বারবার দরজায় বেল বাজাতে থাকেন। এর অর্থ কী? এর অর্থ তিনি সকলকে বোঝাতে চেয়েছিলেন, তিনি বোধহয় তখনই ওখানে এসেছেন। কিন্তু ওই পিনই তার সর্বনাশের প্রহর ঘনিয়ে এনেছে। ওই পিনই বলে দিয়েছে আগেই তিনি ঘরের মধ্যে ঢুকেছিলেন, বাকিটুকু সবটাই তার অভিনয়।

তার মানে? মিস পলিট শ্রীমতী স্পিনলোকে খুন করেছিল, তাই তো?

–হ্যাঁ, পোস্ট অফিস থেকে ফোনটা করা হয়। দুটো বেজে তিরিশ মিনিটের সময়, তখন বাসটা আসে এবং কিছুক্ষণের জন্য পোস্ট অফিস ফাঁকা হয়ে যায়, তখন মিস পলিট এই সুযোগটাই গ্রহণ করেছিলেন।

কর্নেল মেলচেট বললেন–কিন্তু মিস মার্পল কেন? কেন এমন একটা হত্যার সঙ্গে মিস পলিট নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন? আমরা জানি যে কোনো হত্যার অন্তরালে একটা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। যাকে আমরা মোটিভ বলে থাকি। এক্ষেত্রে মোটিভটা কী, সেটাই তো আমার বোধগম্য হচ্ছে না।

আচ্ছা, আমি সব কিছু বুঝিয়ে বলছি। কর্নেল মেলচেট, আপনি কি বুঝতে পারছেন, এই হত্যার পরিকল্পনাটা অনেক বছর আগে করা হয়েছে। আপনি কি আমার দুজন ভাইয়ের গল্প শুনবেন? আমার নিজের ভাই নয়, তুতো ভাই। কিন্তু মনে হচ্ছে এই গল্পটা আপনার শুনে রাখা দরকার। তাদের নাম হল অ্যান্টনি আর গর্ডন। অ্যান্টনি যা কিছু করত সেটাকে সঠিক বলে মনে করত। হতভাগ্য গর্ডন কিন্তু কোনো ব্যাপারে তার সঙ্গে একমত হতে পারত না। এইভাবে তাদের মধ্যে একটা ঝগড়ার পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আর এক্ষেত্রে কী হয়েছে? এক্ষেত্রে দুই মহিলা একে অন্যের বিপরীতে চলতে গিয়ে এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, যার ফলে দুজনকে প্রাণ দিতে হয়।

কর্নেল মার্পলের কথাবার্তা কিছুই বুঝতে পারছেন না। তিনি প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে থাকলেন মিস মার্পলের দিকে। তারপর বললেন–আপনি কি অনুগ্রহ করে আমাকে সব বুঝিয়ে বলবেন?

–ওই ডাকাতির ঘটনাটা একবার ভাবুন তো। কত দামী মরকত মণি চুরি হয়ে গিয়েছিল, অন্তত আমি যা শুনেছি। এই ঘটনার সাথে দুজন মহিলার নাম জড়িয়ে যায়, একজন হল ওই ভদ্রমহিলার পরিচারিকা, আর একজন অচেনা মহিলা। একটি ব্যাপার কিন্তু এখনও পর্যন্ত অমীমাংসিত থেকে গেছে, যখন ওই মেয়েটি উদ্যান পরিচালককে বিয়ে করে তখন তার হাতে কি এত অর্থ ছিল, যা দিয়ে সে একটা ফুলের দোকান তৈরি করতে পারে? এই সমস্যার সমাধান হল ডাকাতির একটা ভালো অংশ সে পেয়েছিল। এটাই হল একটা সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত। আপনি তো জানেন, টাকায় টাকা বাঁধে। কিন্তু ওই বেচারি পরিচারিকা? তার কী হল? সে কি চিরদিন দুর্ভাগ্যকে সাথী করে দিন কাটাবে? সে একটা গ্রামে এসে সাধারণ পোশাক সরবরাহকারীর পেশা গ্রহণ করল। অনেক বছর পরে তাদের মধ্যে আবার দেখা হয়। আমার মনে এক্ষেত্রে টেড গের্যান্টের কিছু ইতিবাচক ভূমিকা আছে।

..মিসেস স্পিনলো সব সময় বিবেকের দংশনে ভুগতেন, তিনি অত্যন্ত আধ্যাত্মিক স্বভাবের মহিলা ছিলেন। আর ওই ভদ্রলোক যখন তাঁর জীবনে নতুন বার্তা নিয়ে এল, তখন তিনি আপনার সামনে দাঁড়িয়ে ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি হয়তো সব কথা খুলে বলার জন্য ব্যগ্র হয়ে উঠেছিলেন। আবার মিস পলিটের ক্ষেত্রে ঘটনাটা একেবারে অন্যভাবে ঘটে যায়। পলিট বুঝতে পারছিল যদি মিসেস স্পিনলো বেঁচে থাকেন তাহলে একদিন হয়তো ডাকাতির অপরাধে তাঁকেই দোষী সাব্যস্ত করা হবে। শেষ পর্যন্ত তার দিন কাটবে রুদ্ধ কারার অন্তরালে। অনেক বছর আগে ঘটে যাওয়া একটা মারাত্মক ঘটনার ফল তাকে এই ভাবেই ভোগ করতে হবে। অথচ মিসেস স্পিনলোকে কেউ সন্দেহ পর্যন্ত করতে পারবে না। এই সমস্যার সমাধান কী ভাবে হতে পারে? অনেক দিন বেচারী পলিট নিজের বিবেকের সঙ্গে লড়াই করেছে, শেষ পর্যন্ত সে একটার ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছে গেল। যে করেই হোক মিসেস স্পিনলোকে পৃথিবী থেকে সরাতেই হবে। মাঝে মাঝে মানুষ আবেগ দ্বারা তাড়িত হয়ে কত অসম্ভব কাজ যে করে ফেলে, এছাড়া মিস পলিটকে যতটুকু দেখেছি, সে কিন্তু অত্যন্ত শয়তানি মনোভাবের মেয়ে। সে-ই এই বুদ্ধিটা করে, যাতে মিস্টার স্পিনলোকে ফাঁসিকাঠে ঝুলতে হয়, তাহলে হয়তো তার দুটো উদ্দেশ্য সফল হবে।

কর্নেল মেলচেট আমতা আমতা করে বলতে থাকেন–আপনার এই তথ্যটাকে আমি একেবারে খারিজ করতে পারছি না। কিন্তু কি সত্যি সত্যি অ্যাবারক্রমগাই এর পরিচারিকা? এ ব্যাপারে আপনি একশো ভাগ নিঃসন্দেহ?

এবার মিস মার্পলের ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি দেখা গেল। তিনি আশ্বস্ত সুরে বললেন–আমার অনুসন্ধানের কাজে কখনো কোনো ভুল হয় না, কর্নেল। আমি যখন যে কথা বলি, অনেক ভেবে চিন্তেই বলি। তাহলে কী হল? তাহলে দেখা গেল সত্য একদিন প্রকাশিত হবেই। এছাড়া আমি ওই টেপটার মাটা নিয়েছি, গতকালই আমি এটা করেছি। দেখা গেল, পুলিশ এদিকে নজর দেয়নি, আসলে পুলিশ বুঝতেই পারেনি যে, এখন থেকে হত্যার বিষ তীর ছুটে আসতে পারে। আমার মনে হয় আপনি ব্যাপারটা এই ভাবে সাজিয়ে নিন। তাহলে এই কেস-এ আপনি জিতে যাবেন।

এবার মার্পলের ঠোঁট থেকে বেরিয়ে এল আশাব্যঞ্জক হাসি। তিনি বললেন আপনার কোনো সমস্যা হবে না, আমি আপনাকে একশো ভাগ সাহায্য এবং সহায়তা করব।

অনেক দিন বাদে মিস মার্পলের ঠোঁটে আবার আশ্বস্ত ভরা হাসি দেখা গেল। মনে হল এক ছাত্র বোধহয় অনেক কষ্টে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে কলেজে ঢোকার ছাড়পত্র পেয়ে গেছে।

সত্যি কথা বলতে কী, ওই পরীক্ষায় কর্নেল ভালোভাবেই পাশ করতে পেরেছিলেন।

৩. দি কেস অফ দ্য কেয়ারটেকার

দি কেস অফ দ্য কেয়ারটেকার

০১.

-ঠিক আছে। ডাক্তার হেডক তার রোগীকে আশ্বস্ত করল, আর আজকের দিনটা কেমন লাগছে?

মিস মার্পল তার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।

-আমি মনে করি, সত্যি আমি খুব ভালো আছি, সে স্বীকার করল। কিন্তু আমি মনে করি আমি ভীষণ হতাশাগ্রস্ত, আমার কিছু করার নেই, শুধু ভাবি, এটা কত ভালো হত যদি আমি মারা যেতাম, সর্বোপরি, আমি একজন বৃদ্ধা মহিলা। কেউ আমাকে চায় না এবং কেউ আমার দেখাশোনা করে না।

চিরাচরিত তৎপরতার সঙ্গে ডাক্তার হেডক মাঝখানে থামিয়ে দিল তাঁকে। –হ্যাঁ, এই প্রতিক্রিয়াই দেখা যায় এই ধরনের ফু-এর পর। তোমার এখন প্রয়োজন কারও সাহায্য নেওয়া। যে তোমাকে তোমার থেকে টেনে বার করবে। এটা মনের ওষুধ।

মিস মার্পল দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল এবং তারপর মাথা নাড়াল।

–আর কি বাকি আছে, ডাক্তার হেডক বলেই চলল, আমি সঙ্গে করে আমার ওষুধ নিয়ে এসেছি।

সে একটা লম্বা খাম রাখল বিছানার উপর।

–এটা তোমার জন্য একদম উপযুক্ত।

একটি বিভ্রান্তিতে মিস মার্পল খুব আগ্রহান্বিত হলেন।

–এটা আমার সাহিত্যিক প্রচেষ্টা। ডাক্তার বলল লাল হয়ে। চেষ্টা কর এখান থেকে একটা রোবকের গল্প তৈরি করতে। লোকটি বলল, মহিলাটি বলল মেয়েটি ভাবল ইত্যাদি এই গল্পের ঘটনাগুলো সত্যি।

ডাক্তার হেডক ভেংচি কাটল, কারণ ব্যাখ্যাটা এখন তোমার উপর নির্ভর করছে। আমি দেখতে চাই তুমি কতটা চালাক, যতটা তুমি করে এসেছ সবসময়।

রেগে সে সেখান থেকে প্রস্থান করল।

মিস মার্পল হস্ত লিখিত লিপিগুলি তুললেন এবং পড়তে শুরু করলেন।

কন্যা কোথায়? মিস হারমন ভদ্রভাবে জিজ্ঞাসা করল।

গ্রামটি পুরো ছিল উত্তেজনাপূর্ণ যেহেতু তারা দেখতে চেয়েছিল ধনী এবং সুন্দরী যুবতী স্ত্রীকে যাকে হ্যারি ল্যাক্সটন বিদেশ থেকে এনেছিল। সেখানে একটা প্রশ্রয় দেওয়ার অনুভূতি দেখা গেল, যে হ্যারি একটা বদমায়েশ হয়েও কীভাবে ভাগ্যের জোরে যুবতী, সুন্দরী স্ত্রীকে পেয়েছিল। সবাই এর হ্যারির প্রতি প্রশ্রয় দেওয়ার মনোভাব ছিল। এমনকি জানালার মালিকরা যারা তার বেপরোয়া গুণ্ডামির আওয়াজে ভুগেছে, তাদের রাগটাও দমিত হয়ে গেল হ্যারির করুণ এবং অনুশোচনা পূর্বক মুখ দেখে। তার ঘরের জানালা ভাঙ্গা ছিল, সুশোভিত ফলের বাগান ছিল, অনধিকারী খরগোশগুলি ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে সে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। এবং সে একজন তামাক ব্যবসায়ী কন্যার দ্বারা আকৃষ্ট হয়েছিল। তারপর তাকে সেখান থেকে মুক্ত করা হয়েছিল। তারপর তাকে আফ্রিকায় পাঠানো হয়েছিল, এবং গ্রামটিতে প্রতিনিধিও করেছিল। বিভিন্ন বয়সের কুমারী মেয়ে, যারা প্রশ্রয় দেওয়ার ভান করে বলছিল, জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়ে সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে!

এবং এখনই সত্যিই উড়নচণ্ডীটা ফিরে এসেছে এটা নয় যে সে মানসিক যন্ত্রণা পেয়ে ফিরে এসেছে। কিন্তু সে সাফল্যের সঙ্গে ফিরে এসেছে। হ্যারি ল্যাক্সটন ভালই করেছে, যেভাবে বলা হয়েছিল, সে সবার আগে নিজেকে টেনে নিয়ে এগিয়ে গেছে, কঠোর পরিশ্রম করেছে এবং তারপর অবশেষে সে সাক্ষাৎ পেয়েছে একটি মেয়ের। আর হ্যারির ভবিষ্যৎ গড়ার পেছনে সে হল মূল অধিকারিনী।

হ্যারি লন্ডনে থাকতে পারত বা একটা সুন্দর শিকারী দেশে একটা জায়গা কিনতে পারত। কিন্তু সে পছন্দ করত পৃথিবীর এই অংশে ফিরে আসার জন্য, যেটা তার কাছে একটা নিজস্ব ঘরের মত ছিল এবং সেখানে তার রোমান্টিকতার পথ ধরে একটা পরিত্যক্ত জায়গা কিনেছিল। সেখানে এবং যৌতুক হিসাবে প্রাপ্ত ঘরে সে তার শৈশব কাটিয়েছিল।

কিংসডেন ঘরটি পরিত্যক্ত রয়েছে বহু বছর হয়ে গেল। এটা ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পরিত্যক্ত ঘরে পরিণত হয়েছে। একজন বয়স্ক রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তার স্ত্রী ওই ঘরের একটি কোণে অতিথির মত জীবন যাপন করত। অতীতে এটা একটা বড় আড়ম্বর এবং জাঁকজমকপূর্ণ প্রাসাদ ছিল। সেখানে বাগানে বিভিন্ন উচ্চতার গাছ দেখা যেত। এবং গাছগুলোর পাড় বা আঁচলা যাদুকরের গুহার মত অন্ধকার পূর্ণ ছিল।

যৌতুক দেওয়া ঘরটা খুবই মনোরম, খুবই সুন্দর শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছিল। এবং এই ঘরটাতে মেজর ল্যাক্সটন হ্যারির বাবা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে। বালক হিসাবে হ্যারি কিংসডেন প্রাসাদে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়িয়েছে এবং এই গৃহের প্রত্যেকটা খুঁটিনাটি বিষয় সম্বন্ধে অবগত আছে। এবং পুরানো ঘরটা সবসময় তাকে আকৃষ্ট করত।

মেজর ল্যাক্সটন কিছু বছর আগে মারা গেছে। সুতরাং এটা ভাবা যেতে পারে যে, হ্যারির কোনও দায়িত্ব ছিল না মেজর ল্যাক্সটনকে ফিরিয়ে আনার জন্য। তথাপি হ্যারি তার নতুন বউকে নিয়ে তার ছেলেবেলার ওই ঘরটিতে পা রাখতে দ্বিধা বোধ করেনি। ধ্বংসপ্রাপ্ত পুরানো কিংসডেন ঘরটা টেনে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এক দল বাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা এবং কনট্রাক্টরটা ছোঁ মেরে এই জায়গাটাকে নিয়ে নিয়েছে এবং অবিশ্বাস্যভাবে খুব কম সময়ে এবং বিস্ময়করভাবে সমস্ত প্রাচুর্য নিয়ে নতুন ঘরটাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। এই নতুন ঘরটা সাদা রঙের এবং উজ্জ্বল এবং চকচক করছে গাছের ভেতরকার মধ্যে দিয়ে।

তারপরে এল কিছু বাগানের রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং তাদের চলে যাওয়ার পর এল আসবাধপত্রের গাড়িগুলি।

ঘরটি পুরোপুরি তৈরি। পরিচারিকা সব এসে গেল। অবশেষে একটা অমিশ্রিত, একটা মূর্তি হ্যারি এবং মিসেস হ্যারিকে গড়ে দেওয়া হল সম্মুখ দরজায়।

গ্রামের লোকেরা সবাই ছুটে গেল ডাকতে। তখন মিসেস প্রাইস যে এই ঘরটির মালিক হিসাবে ছিল এবং যে নিজেকে সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য স্থানে প্রতিষ্ঠিত করে দিল, সে আমন্ত্রণ লিপি পাঠাল পার্টি করার জন্য। যাতে সে বিবাহিত কন্যাকে সাক্ষাৎ করতে পারে।

এটা নিঃসন্দেহে একটা বড় ঘটনা ছিল। অনেক মহিলার নতুন ফ্রক ছিল এই পার্টিতে আসার জন্য। সবাই খুবই উত্তেজিত ছিল। উদগ্রীব ছিল। এবং আবেগপ্রবণ ছিল, এই মোহিত মেয়েটিকে দেখার জন্য। তাই সবাই বলছিল যে এটা একটা পরীর গল্পের মত ছিল।

মিস হারমন শীতকাতুরে ছিল এবং একজন হৃদয়বান কুমারী ছিল। সে একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল, যেহেতু সে তার রাস্তাটা মেপে মেপে তৈরি করছিল জনাকীর্ণ ড্রয়িং ঘরের দরজার সম্মুখে।

ওহ আমার প্রিয়, সত্যিই মিষ্টি দেখতে। তার ব্যবহারও খুব সুন্দর, সে খুব যুবতীও। সত্যি, তুমি জান এটা সত্যি অন্যকে ঈর্ষান্বিত করে তুলবে। আর এইরকম সমস্ত সুযোগ সুবিধা আছে। ভালো দেখতে অনেক টাকা এবং অনেক সন্তান সন্ততি যারা যারা সত্যিই পৃথক এই মহিলার থেকে, এবং হ্যারি সত্যিই তার প্রতি ভীষণ অনুরক্ত ছিল।

আহ মিস হারমন বলল–এটা সত্যিই আগেকার দিন।

মিস ব্রেন্ট-এর সরু নাক আন্দোলিত হল, প্রশংসা শুনে। –আহ আমার প্রিয় সত্যিই কি তুমি আমার কথা ভাব।

–আমরা সবাই জানি, হ্যারি কী ধরনের লোক, হারমন বলল।

–আমরা জানি সে কি ছিল। কিন্তু আমি এখন প্রত্যাশা করি।

–আহ, মিস হারমন বলল, মানুষ মাত্রেই একই প্রবৃত্তির। একবার যদি হাসিখুশি প্রতারক হও তাহলে সারাজীবন হাসিখুশি প্রতারক হয়ে থাকবে। আমি তাদেরকে জানি।

–প্রিয়, প্রিয় করুন জিনিস, মিস ব্রেন্টকে অনেক সুখী লাগছিল। হ্যাঁ, আমি মনে করি সে তার সঙ্গে সবসময় সমস্যা নিয়ে আসে। কারুর তাকে সতর্ক করা উচিত। আমি অবাক হয়ে যাই যদি সে পুরনো গল্প সম্বন্ধে কিছু শোনে তাহলে?

–এটা খুবই দৃষ্টিকটু মিস ব্রেন্ট বলল।–যে তার কিছুই জানা উচিত নয়। ভীষণ অদ্ভুত। মূলত একটা ওষুধ দোকান ছিল ওই গ্রামে।

–আগের তামাক ব্যবসায়ীর কন্যায় বিয়ে হয়েছে মিঃ এবং এর সঙ্গে। সে ছিল একজন ওষুধ প্রস্তুতকারক।

এটা সত্যিই খুব ভালো ঘটনা। মিস ব্রেন্ট বলল। যদি মিসেস ল্যাক্সটন তার বুট নিয়ে ব্যবসা করত।

আমি হলফ করে বলতে পারি, মিস হারমন বলল, যে হ্যারি ল্যাক্সটন তার নিজের সম্বন্ধে প্রস্তাব দেবে।

এবং একবার একটা তাৎপর্যপূর্ণ চাউনি অতিক্রম করল তাদের দুজনের মধ্যে।

–কিন্তু আমি নিশ্চিত ভাবে ভাবি–মিস হারমন বলল, যে তার জানা উচিত।

.

০২.

-পশুগুলি! ক্ল্যারিস ভেন ক্রুদ্ধ হয়ে বলল তার কাকাকে, ডাক্তার হ্যাডড়কে, কিছু মানুষ পুরোপুরি পশু।

সে তার দিকে উৎকণ্ঠার সঙ্গে তাকাল।

সে ছিল একজন লম্বা, কালো মেয়ে। সুন্দরী উষ্ণ মনের এবং আবেগপ্রবণ মেয়ে। তার বড় বাদামী চোখগুলো ক্রোধে ভরে গিয়েছিল। এবং সে বলল, সমস্ত বিড়ালগুলি কিছু বলছে, কিছু নির্দেশ করছে।

–হ্যারি ল্যাক্সটন সম্বন্ধে?

–হ্যাঁ, তার একটা প্রণয় ঘটিত ব্যাপার ছিল, তামাক সেবনকারীর মেয়ের সঙ্গে।

–ওহ, তাই নাকি! ডাক্তার তার কাধ ঝাঁকাল, এই রকম অনেক যুবক লোকের এই রকম ধরনের প্রণয় ঘটিত ব্যাপার ছিল।

–অবশ্যই তাদের সম্পর্ক ছিল এবং এখন এটা পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে গেছে। সুতরাং এখন কেন এটা নিয়ে আলোচনা করছ? ক্রমশ আমাদের ভাবতে হবে তার পরের বছরগুলোর কথা। এটা ঠিক ক্ষত চিহ্নের মত মৃত শরীরগুলিতে। এটা আলোচনা করা মানে এটা দাঁড়ায়।

আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, আমার প্রিয়, এটা তোমার মত ব্যাপার মনে হয়, কিন্তু তুমি দেখ তাদের এখানে বলার মত অল্প কিছু রয়েছে, এবং আমি ভীত যে তারা অতীতের দাঙ্গা হাঙ্গামাগুলো নিয়ে ভাবছে। কিন্তু আমি জানতে চাই কেন তোমাকে এটা এত বিষাদগ্রস্ত করে তুলেছে?

ক্ল্যারিস ভেন তার ঠোঁটে আঘাত করল। সে কৌতূহলের সাথে বলল–তাদেরকে ভীষণ খুশী লাগছে। আমি বোঝাতে চাইছি ল্যাক্সটনদের। তারা সবসময় যুবক এবং ভালোবাসায় পরিপূর্ণ এবং এটা কতটা আনন্দের ব্যাপার তাদের জন্য। আমি সবসময় ঘৃণা করি, যে কোনো ঘটনা কানভাঙানিদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এবং আমি পশুসুলভ আচরণকেও ঘৃণা করি।

–হুম, আমি দেখছি।

ক্ল্যারিস বলে চলল সে আমাকে এখুনি বলল। তাকে এখুনি খুব সুন্দরী, খুব খুশী, কৌতূহলী এবং উত্তেজিত লাগছিল। এবং হ্যাঁ, তাকে শিহরিতও দেখাচ্ছিল যেহেতু তার মনের বাসনা পূর্ণ হয়েছে। যখন সে দেখেছে যে কিংসডেনে ঘরটা পুরোপুরি নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। তার এই আচরণ একটা শিশুর মত এবং আমি ভাবি যে, তার জীবনে কোনো কিছু ভুল ঘটেনি। সে যখন যেটা খুঁজেছে সেটা পেয়েছে। তুমি তাকে দেখেছ। তাকে দেখে তোমার কী মনে হয়?

ডাক্তার কিছু উত্তর দিল না। অন্য লোকের কাছে লুইসি ল্যাক্সটন একজন ঈর্ষার বিষয়। একজন নষ্ট হয়ে যাওয়া ভাগ্য। তার কাছে সে (মহিলা) হল একজন সাময়িক বিরতি। একটা জনপ্রিয় গানের যেটা বহু বছর আগে মানুষ শুনেছে, গরীব ছেলে ধনী মেয়ে।

একটি ছোট্ট সুন্দর চেহারা, পশমের মতো চুল, যেগুলি কোঁচকানো সেগুলি ঝুলে পড়েছিল তার লম্বা মুখের এবং চোখের চারধারে।

লুইস একটুখানি ঝুঁকে গেল, লম্বা অভিনন্দন যেটা চলছিল সেটা তাকে ক্লান্ত করে তুলেছিল। সে এমনভাবে একপাশে লাফাচ্ছিল যে তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে এখুনি চলে যাবে। সম্ভবত, এমনকি এখনও হ্যারি সেটা বলতে পারত, সে হ্যারিকে পাশ ফিরে তাকাল। এত লম্বা এবং প্রশস্ত কাধ! তার আনন্দ পাওয়াটা একটা ভাঁওতা। সুতরাং পার্টিটা তার কাছে ভয়ঙ্কর এবং নীরস ছিল।

.

০৩.

–ওফ! এটা একটা দীর্ঘশ্বাস পূর্ণ বিদায়।

হ্যারি তার স্ত্রীর দিকে আনন্দিত হয়ে তাকাল। তারা তখন পার্টি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল।

সে বলল-ডার্লিং এটা সত্যিই একটা ভয়ঙ্কর পার্টি ছিল।

হ্যারি অট্টহাস্যে হাসতে লাগল–সত্যিই সুন্দর এবং ভয়ানক। কিছু মনে কর না, আমার মিষ্টি প্রিয়া, এটা করা উচিত, তুমি জান, সমস্ত বৃদ্ধাপুসিগুলো আমাকে চিনেছিল, যখন আমি এখানে একজন বালক হিসাবে থাকতাম। তারা কখনই ভয়ানকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে ওঠেনি, তোমাকে এত কাছে দেখতে পেয়ে।

লুইসি একটা ভেংচি কাটল। সে বলল–আমি কি তাদের অনেকজনকে দেখতে পাব?

–কি? ওহ না। তারা আসবে এবং অনুষ্ঠানের জন্য তোমাকে কার্ড দিয়ে আমন্ত্রণ করবে এবং তুমি সমস্ত কার্ডগুলোকে তাদের ফেরত দিয়ে দেবে। কিন্তু তারা এটা নিয়ে কেউ ভাববে না, তুমি গেলে কি না গেলে। তুমি তোমার নিজের বন্ধুদের সঙ্গে থাকতে পার অথবা তুমি সেটা করবে যেটা তোমার পছন্দ।

লুইসি একমিনিট কিংবা দু মিনিট পরে বলল–কেউ কি আমোদ প্রমোদ পায় এখানে নিচু তলায় বাস করে।

-ওহ, হ্যাঁ, সেটা হল কার্টলি তুমি জান। যদিও তুমি তাদেরকে বৃদ্ধ হিসাবে দেখতে পার। তারা সবাই কুকুর কিংবা ঘোড়ার প্রতি আগ্রহান্বিত। তোমাকে অবশ্যই ঘোড়ায় চড়ে যেতে হবে। তুমি এটা অবশ্যই উপভোগ করবে। ইগলিনটন আই ডি একটা ঘোড়া দিল, যেটাকে তোমার মত দেখতে। একটা সুন্দর পশু। পুরোপুরি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, এবং তার মধ্যে কোন খুঁত নেই। কিন্তু অসম্ভব তো রয়েছে।

কিংসডেন প্রাসাদের দ্বারে গাড়িটা দাঁড় করানো হয়েছিল। গাড়িটা ঘোরানোর জন্য হ্যারি চাকাটাকে বলপূর্বক ভাবে টানল এবং শপথ করল যেহেতু একটা অদ্ভুত কদাকার চেহারা রাস্তার মাঝখানে দেখা গিয়েছিল এবং সে চেষ্টা করছিল কিভাবে তাকে এড়িয়ে যাওয়া যায়। এটা সেখানে দাঁড়িয়েছিল তারপর একটা নাড়া দিল এবং তাদের পিছনে চিৎকার করতে লাগল। হুইস তার বাহু তুলে ধরল। সে একজন ভয়ঙ্কর বৃদ্ধা মহিলা।

হ্যারির ভ্রু কুঁচকে গেল, এটা হল বৃদ্ধ–মারগাট্রায়েড। মারগাট্রয়েড এবং তার স্ত্রী এই পুরনো বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণকারী ছিল। তারা সেখানে প্রায় ৩০ বছর ধরে ছিল।

–সে তার মুষ্টি কেন তোমার দিকে নাড়াচ্ছে?

হ্যারির মুখ লাল হয়ে গেল। সে যে বিরক্ত প্রকাশ করছে। যেহেতু বাড়িটা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। সেজন্য তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার স্বামী দুবছর আগে মারা গেছে। সবাই বলছে যে সে এখন অদ্ভুত আচরণ করছে, তার স্বামী মারা যাওয়ার পর।

-তাই কি, তাই নয় কি–সে উপবাস করছে।

লুইসির ধারণা নিতান্তই অস্পষ্ট এবং নাটকে পরিপূর্ণ ছিল। ধনীরা তোমাকে বাধা দিয়েছে যাতে তুমি সত্যিটার সংস্পর্শে না আসতে পার।

হ্যারি খুব রেগে গেল। ভালো লুইস, কী ধারণা দিয়েছে। আমি তার ভাতা বন্ধ করে দিয়েছি। অবশ্যই তার জন্য একটা নতুন কুঁড়েঘর এবং সবকিছু বার কর।

লুইসি জিজ্ঞাসা করল হতবুদ্ধি হয়ে–কেন যে এটা মনে করো।

হ্যারি ভ্রু কোচকাতে লাগল।–ওহ, আমি এটা কিভাবে জানব? এটা পাগলামি। সে সত্যিই বাড়িটাকে ভালোবাসত।

–কিন্তু সেটা তো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে তাই নয় কি?

–অবশ্যই এটা হয়েছে, একদম ছোট ছোট টুকরোতে ভেঙে গেছে, ছাদ ফুটো হয়ে গেছে। কম বা বেশি এটা নিরাপত্তাহীন, যাই হোক, আমি মনে করি এটা তার কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে এখানে দীর্ঘদিন ধরে আছে। ওহ, আমি জানি না, আমি মনে করি এরা বৃদ্ধ। এটা কারসাজি।

লুইসি অস্বস্তিকর ভাবে বলল–সে আমি মনে করি, সে আমাদের অভিশাপ দিয়েছে। ওহ, হ্যারি, আমি মনে করি যাতে এটা না হয়।

লুইস এটা মনে করল যে তার নতুন বাড়িটাতে কিছু খুঁত ছিল এবং বাড়িটা একটা ক্ষতিকর বৃদ্ধার দ্বারা দূষিত হয়েছিল। সে যখন গাড়ির বাইরে গেল, যখন সে ঘোড়ায় চড়ল, সে যখন কুকুরের সঙ্গে হাঁটছিল, সবসময়ই তার সামনে সেই চেহারা অপেক্ষা করছিল। তারপর কুঁকড়ে গিয়ে সে তার লৌহ ধূসর চুলে একটা টুপি পরল এবং কিছু ভূত প্রেত তাড়ানোর মন্ত্র উচ্চারণ করছিল।

লুইসি তখন বিশ্বাস করল যে হ্যারি ঠিক বলেছিল–বৃদ্ধা মহিলাটি সত্যিই পাগল ছিল। তথাপি এটা সবকিছু সহজ করে দেয়নি। মিসেস মারগাট্রায়েড কখনোই ওই বাড়িতে আসেনি। এমনকি সে কখনোই ভীতি প্রদর্শন করেনি। এমনকি হিংসাও ছড়িয়ে দেয়নি। তার উবু হয়ে বসা চেহারা সবসময়ই গেটের বাইরে ছিল। পুলিশের কাছে। আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি এবং যদিও কখনো মনে হয়নি হ্যারি ল্যাক্সটন বিমুখ হয়েছে এই কাজটার প্রতি, সে বলল–এটা তার জন্য দয়ার উদ্রেক করবে বৃদ্ধা পশুর জন্য যে লুইস এর থেকেও তাড়াতাড়ি ব্যাপারটা বুঝে নিতে পারল।

ভয় পেও না, ডার্লিং। সে কিছুক্ষণ বাদে তার মুখামিপূর্ণ ব্যাপারে ক্লান্ত হয়ে যাবে। সে সম্ভবত নতুন কাজ শুরু করার চেষ্টা করছে।

সে করছে না হ্যারি, সে আমাদের ঘৃণা করে আমি এটা অনুভব করতে পারছি। সে আমাদের যাতে ক্ষতি হয় সেই ইচ্ছা করছে।

–সে ডাইনি নয়, ডার্লিং। যদিও তাকে তাদের একজনের মতো দেখতে। সুতরাং এটা ভেবে মনমরা হয়ো না।

লুইসি শান্ত হয়ে গেল, তার প্রথম উত্তেজনা এটার জন্য তো শেষ হয়ে গেল। সে নিজেকে একাকী অনুভব করল এবং সে একদম শেষ প্রান্তে এসে উপস্থিত হয়েছে। সে সবসময় ইংল্যান্ডে থেকে অভ্যস্ত হয়ে গেছে এবং রিভিরেরাতেও তার কোনো ধারণা এবং জ্ঞানই নেই ইংরেজদের দেশের জীবনযাত্রা সম্বন্ধে। সে বাগান পরিচর্যা সম্বন্ধে কিছুই জানে না। সে শুধু জানে ফুল ফোঁটার মুহূর্তে কীভাবে গাছকে পরিচর্যা করতে হয়। সে কুকুরদের যত্ন নেয় না। সে যখন প্রতিবেশীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, তখন সে পরিশ্রান্ত হয়ে যায়। সে ঘোড়ায় চড়ে ভ্রমণ করতে ভীষণ ভালোবাসে এবং যদি হ্যারি সঙ্গে থাকে। কিন্তু হ্যারি যখন প্রাসাদের কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে গাছপালা এবং বনজঙ্গল এবং সরু গলি রাস্তার মধ্যে ঘুরে বেড়ায় এবং তার ফলে সে সুন্দর ঘোড়ার চলন উপভোগ করে এবং এই ঘোড়াটাকেই হ্যারি লুইসির জন্য এনেছিল।

এমনকি প্রিন্স হল যেটা খুবই অনুভূতি প্রবণ কাজুবাদামের আবাসস্থল হিসাবে, সেটাও খুব নিরিবিলি ছিল এবং এটা মনে হত যে সে তার মহিসীকে অতীতের কোনো অপকারী বৃদ্ধা মহিলার সংস্পর্শে নিয়ে গেছেন।

একদিন লুইসি তার সাহস দুহাত ভরে নিল। মারগাট্রায়েড তখন হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে যাচ্ছিল। সে মিসেস মারগাট্রায়েডকে অতিক্রম করে এসেছিল এবং এমন ভান করছিল যে সে তাকে দেখেনি। হঠাৎ সে পিছনে ফিরে তাকাল এবং সোজা মিসেস মারগাট্রায়েড-এর কাছে গেল। সে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল–এটা কি? কি ব্যাপার? তুমি কি চাও?

বৃদ্ধা মহিলাটি লুইসি-এর দিকে চোখ পিট পিট করে তাকাল। তার কালো মুখে চতুরতা বিরাজ করছিল। এমনকি এটা তার লৌহ ধূসর চুলেও প্রতিফলিত হয়েছিল। তার চোখে সন্দেহের প্রকাশ ছিল। লুইসি বিস্মিত হয়ে গেল এই ভেবে যে, সে কি উন্মত্ত হয়ে আছে।

সে ভীতিসূচক সুরে বলল–তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করছ আমি কি চাই? কি, বাস্তবিক পক্ষে যেটা আমার থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কে আমাকে কিংসডেন বাড়িটা থেকে বিতাড়িত করেছে? আমি সেখানে থাকতাম মেয়ে এবং মহিলাদের নিয়ে, প্রায় চল্লিশ বছর ধরে। এটা একটা অপরাধমূলক কাজ। আমাকে তাড়ানো এবং এটা খারাপ অন্ধকার ভাগ্য নিয়ে এসেছে। যেটা আমাকে তোমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।

লুইস বলল–তুমি একটা সুন্দর কুঁড়ে ঘর পেয়েছ এবং …।

সে থামল, বৃদ্ধা মহিলাটি তার বাহু তুলল। সে আর্তনাদ করতে লাগল–কী ভালো হয়েছে আমার জন্য? এটা আমার নিজের বাসস্থান যেটা আমি চাই এবং আমি আমার জন্য নিজস্ব আগুন চাই। যাতে আমি আগুনের পাশে সারাবছর বসতে পারি। তোমার এবং তার জন্য এটা আমি তখন পাচ্ছি না। আমি বলছি তোমরা কখনও সুখী হবে না তোমাদের নতুন বাড়িতে। সেখানে তোমাদের জন্য অন্ধকার এবং দুঃখ অপেক্ষা করে আছে। সেখানে তোমরা শুধু দুঃখ, মৃত্যু এবং আমার অভিশাপ পাবে এবং সেখানে তোমাদের সুন্দর মুখগুলো পচতে শুরু করবে।

লুইসি ফিরে তাকাল এবং তারপর হোঁচট খেয়ে ছুটতে ছুটতে ঘরে প্রবেশ করল। সে ভেবেছিল, আমরা এখান থেকে পালিয়ে যাব এবং এই বাড়িটা আমরা বেচে দেব। আমরা অবশ্যই চলে যাব।

ঠিক এই মুহূর্তে একটা সমাধান ব্যাপারটাকে আরও সহজ করে দিল কিন্তু হ্যারির নির্বুদ্ধিতার জন্য তাকে আবার ফিরে আসতে হল। যে চিৎকার করতে লাগল। এখান থেকে চলে যাও। বাড়িটা বিক্রি কর কারণ, মত্ত বৃদ্ধা মহিলার ভীতি প্রদর্শন! তুমি পাগল হয়ে যাবে এখানে থাকলে।

-না, আমি পাগল হব না। কিন্তু সে যে আমাকে ভয় দেখায়। আমি জানি কিছু ঘটবে।

হ্যারি ল্যাক্সটন ভয়ঙ্করভাবে বলল-মিসেস মারগাট্রায়েডকে আমার উপর ছেড়ে দাও, আমি তার ব্যবস্থা করব।

.

০৫.

একটা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ সৃষ্টি হল ক্ল্যারিস ভেন এবং মিসেস ল্যাক্সটনের মধ্যে। দুজনেই বেশ প্রাপ্তবয়স্ক ছিল। কিন্তু দুজনের চরিত্র এবং রুচি আলাদা ছিল। ক্ল্যারিসের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে লুইসি নিশ্চিত ভবিষ্যৎ খুঁজে পেয়েছিল। ক্ল্যারিস আত্মবিশ্বাসী ছিল এবং নিজের প্রতি গভীর আস্থা ছিল। লুইস একদিন তার কাছে মিসেস মারগাট্রায়েড এবং তার ভীতি উল্লেখ করল। কিন্তু ক্ল্যারিস-এর কাছে এটা বেশি বিরক্তিকর লাগল ভীতিকর থেকেও।

-এটা খুব বোকা বোকা ব্যাপার। সে বলল, এটা তোমার জন্য সত্যি বিরক্তিকর।

-তুমি জান, ক্ল্যারিস আমি…….আমি কখনো, কখনো ভীতি অনুভব করি, আমার হৃদয়ের মধ্যে সশ্রদ্ধ ভয় উঁকি দেয়।

-দুর্বোধ্য, তুমি এইরকম বোকা ব্যাপারটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হয়ো না। সে নিশ্চয়ই একসময় ক্লান্ত হয়ে যাবে।

সে এক কিংবা দুমিনিট ধরে নিস্তব্ধ থাকল। ক্ল্যারিস বলে উঠল–কি ব্যাপার?

লুইসি এক মিনিটের জন্য থেমে গেল। তারপরে সে সবেগে উত্তর দিল–আমি এই জায়গাটা ঘৃণা করি। আমি সবকিছুকে ঘৃণা করি। যেমন এই বন, এই ঘর, এবং রাত্রিবেলায় ভয় মিশ্রিত নিস্তব্ধতা এবং পেঁচার অদ্ভুত আওয়াজ। আমি লোকজনকেও ঘৃণা করি।

-লোকজন? কোন্ লোকজন?

–লোকজন যারা গ্রামে বাস করে, যারা সবসময় ঘোরা ফেরা করে। গল্পগুজব করে বৃদ্ধ চাকরবাকরেরা।

ক্ল্যারিস তীক্ষ্ণভাবে বলল–তারা কি বলছিল?

–আমি জানি না। কোনো কিছুই স্পষ্ট নয়। কিন্তু তাদের মনগুলো ভীষণ নোংরা। যখন তুমি তাদের সঙ্গে কথা বলবে তুমি বুঝতে পারবে যে তুমি কাউকে বিশ্বাস করবে না–কাউকেই না।

ক্ল্যারিস রূঢ়ভাবে বলল-তাদেরকে ভুলে যাও। তাদের কোনো কাজ নেই একমাত্র গল্পগুজব করা ছাড়া এবং যখনই তারা কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলে, মনে হয় তারা কোনো আবিষ্কার করে।

লুইসি বলল–আমি অভিপ্রায় করি যে আমরা এখানে কখনোই আসব না। কিন্তু হ্যারি খুব শ্রদ্ধা করে এই বাড়িটাকে, তাই আমরা আসি। তার সুর নরম হয়ে গেল।

ক্ল্যারিস ভাবল কিভাবে যে তাকে শ্রদ্ধা করে, সে খুব সংক্ষিপ্তভাবে বলল–আমি এখুনি যাব।

-আমি তোমাকে গাড়িতে করে ফেরত পাঠিয়ে দেব। আবার তাড়াতাড়ি ফিরে এস।

ক্ল্যারিস মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করল। লুইসি খুব আরাম অনুভব করল তার নতুন বন্ধুর আগমনে। হ্যারি লুইসির খুশি দেখে খুব আনন্দিত হল এবং তখন থেকে সে জিদ ধরল যাতে ক্ল্যারিস তার বাড়িতে প্রায়শই আসে।

তারপর একদিন সে বলল–তোমার জন্য ভালো খবর আছে ডার্লিং।

-ওহ, কী খবর?

–আমি মারগাট্রায়েডকে একটা জায়গায় স্থির করে দিয়েছি। যে আমেরিকাতে তার ছেলেকে খুঁজে পেয়েছে। তুমি জান, ঠিক আছে। আমি তার যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি এবং তুমি তার সঙ্গে যোগদান কর। আমি তার ভ্রমণের সমস্ত টাকা দিয়ে দেব।

-ওহ, হ্যারি, সত্যিই এটা ভীষণ বিস্ময়কর।

আমি মনে করি আমাকে শেষ পর্যন্ত কিংসডেনেই থাকতে হবে। যাও এটাকে পছন্দ করে থেকে যাও। কারণ এটা হল বিশ্বের সব থেকে বিস্ময়কর জায়গা।

লুইসি মৃদু সাড়া দিল। সে তার কুংস্কারপূর্ণ ভীতি কিছুতেই মুছে ফেলতে পারছিল না।

.

০৬.

যদি সেন্ট মেরিমেডের মহিলারা এটা ভেবে আনন্দ পায় যে তারা তার স্বামীর অতীত ঘটনাকে নতুন বউ-এর কাছে বলে দেবে, কিন্তু এই আনন্দটাকে অবজ্ঞা করা হয়েছিল, হ্যারি ল্যাক্সটনের দ্রুত তৎপরতার জন্য।

মিস হারমন এবং ক্ল্যারিস ভেন মি. এজের দোকানে ছিল। একজন মোথবলগুলি কিনছিল এবং অন্যজন এক প্যাকেট সোহাগা কিনছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে হ্যারি ল্যাক্সটন এবং তার স্ত্রী প্রবেশ করল দোকানে।

দুজন মহিলাকে সম্বোধন করে, হ্যারি কাউন্টারের দিকে ঘুরল এবং একটা টুথব্রাশ চাইল। হঠাৎ সে বাধাপ্রাপ্ত হল এবং মনের আনন্দে চীৎকার করে উঠল–ঠিক, ঠিক, দেখো সেখানে কে আছে। বেলা, আমি ঘোষণা করব।

মিসেস এজ যে পিছনের পার্লার থেকে দ্রুততার সঙ্গে বেরোচ্ছিল, তার উদ্দেশ্য ছিল ভিড় ঠাসা জমায়েতে যোগদান করা। আনন্দের সঙ্গে ঝুঁকে তার দিকে তাকাল এবং তাকে তার সাদা দাঁত দেখাল।

সে হল একজন কালো সুন্দরী মেয়ে এবং নিঃসন্দেহে একজন সুন্দরী স্ত্রীলোকও বটে। কিন্তু তার মুখে বাজে দাগ পড়েছে। কিন্তু তার বাদামী চোখদুটো উষ্ণতায় পরিপূর্ণ। সঙ্গে সঙ্গে সে বলে উঠল–বেলা এটা কি, মিঃ হ্যারি এবং আমি এই বছরগুলোতে তোমাকে দেখে খুব আনন্দিত হলাম।

হ্যারি তার স্ত্রীর দিকে ফিরে তাকাল। সে বলল–বেলা হচ্ছে আমার প্রজ্জ্বলন।

মিসেস এজ বলল–এটাই সেটা যেটা তুমি বলছ।

লুইসি অট্টহাস্যে হাসতে লাগল। সে বলল–আমার স্বামী খুব খুশী। তার পুরনো বন্ধুদের পেয়ে।

মিসেস এজ বলল-আহ, আমরা তোমাকে ভুলিনি মিস্টার হ্যারি। এটা একটা কাল্পনিক গল্পের মত যে তুমি বিয়ে করে একটা নতুন বাড়ি তৈরি করেছ যেটা আগে পুরো ধ্বংসপ্রাপ্ত পুরনো কিংসডেন বাড়ি ছিল।

হ্যারি বলল–তোমাকে সুস্থ এবং পুলকিত লাগছে। তখন মিসেস এজ বলতে শুরু করল এবং বলল লুইসির এখানে কোনো ভুল নেই, এবং তারপর জিজ্ঞাসা করল টুথব্রাশটা সম্বন্ধে।

ক্ল্যারিস মিসেস হারমন এর সুখটা দেখল যে হারমন হতবুদ্ধিতে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে।

তারপর ক্ল্যারিস নিজেকে উঁচু স্থানে তুলে ধরল এবং বলল-ওহ, ভালো করেছে। হ্যারি, তুমি তাদের বন্দুকের খুঁটি পুঁতে দিয়েছ।

.

০৭.

ডাক্তার হেডক খুব সংক্ষিপ্তভাবে তার ভাইঝিকে জিজ্ঞাসা করল–কী ঘটে চলেছে বৃদ্ধা মিসেস মারগাট্রায়েডকে নিয়ে এবং কিংসডেনকে নিয়ে এবং সে নাকি তার মুষ্টি নাড়াচ্ছে এবং নতুন বাড়িটাকে অভিশাপ দিয়ে চলেছে।

এটা দুর্বোধ্য নয়। এটা বাস্তবিক পক্ষে সত্যি। এটা সত্যি দুঃখের যে লুইসির একটা ভালো পরিকল্পনা ছিল।

–তাকে বলল সে যাতে ভয় না পায়। যখন মারগাট্রায়েডরা এখানে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করত, তারা কখনই এই জায়গাটির বিড়বিড়ানি বন্ধ করিনি। তারা একমাত্র সেখানে থাকত কারণ মারগাট্রায়েড খুব বেশি উন্মত্ত হয়ে গেছল এবং কোনো কাজ পারছিল না।

-আমি তাকে বলব, ক্ল্যারিস সন্দেহপূর্ণভাবে বলল, আমি মনে করি না সে তোমাকে বিশ্বাস করবে। ওই বৃদ্ধা মহিলাটি খুব সুন্দরভাবে রাগের সঙ্গে আতনাদ করে।

–সর্বদা আমি বালক হিসাবে হ্যারির অন্ধভক্ত ছিলাম। আমি বুঝতে পারি না।

ক্ল্যারিস বলল–ওহ, ঠিক আছে। তারা তার থেকে শীঘ্রই মুক্তি পাবে। হ্যারি তার আমেরিকা যাওয়ার জন্য সমস্ত বন্দোবস্ত করে দিয়েছে।

তিনদিন পরে লুইসিকে তার ঘোড়া থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল এবং তারপর তাকে মেরে ফেলা হয়েছিল।

দুজন মানুষ যারা বেকারির গাড়ি চালাচ্ছিল, তারা এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিল। তারা দেখল লুইসি গেট দিয়ে বেরিয়ে ঘোড়ায় উঠল। তারা দেখল বৃদ্ধা মহিলাটি উঠে বসল এবং রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়ল। তার হাত ছাড়িয়ে এবং চীৎকার করতে লাগল। ঘোড়াটি তার যাত্রা শুরু করল। এবং তারপর উন্মত্তের মতো ছুটতে লাগল এবং লুইসি ল্যাক্সটনকে ঘোড়া তার মাথার উপর নাড়াচাড়া করতে লাগল।

একজন লুইসির অচেতন দেহের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং সেই লোকটা বুঝতে পারছিল না, এই অচেতন দেহ নিয়ে কি করা উচিত। সেই মুহূর্তে অন্যরা ঘরের দিকে ছুটে গেল সাহায্যের জন্য।

হ্যারি ল্যাক্সটন দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আসল। তার মুখটা বিরক্তিতে ভরে উঠছিল। লুইসিকে ঘরের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হল। কিন্তু সে আর জ্ঞান ফিরে পেল না। সে মারা গেল ডাক্তার আসার আগে।

(ডাক্তার হেডক-এর হস্তলিপি সমাপ্ত)

৪. ট্রেঞ্জ জেস্ট

স্ট্রেঞ্জ জেস্ট

এবং এটা বলল জেন হেলিয়ার তার উপস্থাপনা শেষ করে। এটা কি মিস মার্পল?

অভিনেত্রী হওয়ার জন্য সে তার লক্ষ্য তৈরীতে সক্ষম ছিল। এটা ছিল তার স্পষ্টত চরম পরিণতি। সাফল্যের শেষ সীমা। তার সুরও প্রকাশ পেয়েছিল তার সশ্রদ্ধ ভয়মিশ্রিত অনুভূতি এবং সাফল্য।

সবথেকে অযৌক্তিক অংশটি ছিল এর মধ্যে যে, সেটাতে বলা হত, সেটা খুব নম্র, ভদ্র, ব্যস্ততাপূর্ণ বড় অবিবাহিতা স্ত্রীলোক ছিল, দুজন যুবক লোকের চোখে যারা এই মাত্র এসেছে, তারা জেনের সঙ্গে দেখা করা মাত্র তাদের মধ্যে একটা অবিশ্বাস এবং আতঙ্ক দেখা গেল। তারা খুব সুন্দর দেখতে ছিল, মেয়েটির নাম ছিল চারমিয়ান স্টাউড। সে ছিল কালো এবং রোগা এবং লোকটির নাম হল এডওয়ার্ড রোলিটার, যার চুলগুলো খুব সুন্দর এবং বন্ধুত্বপূর্ণ যুবক দৈত্য।

চারমিয়ান হাঁফ ছেড়ে বলল–ও! আমরা তোমার সঙ্গে দেখা করতে পেরে খুব আনন্দিত এবং সশ্রদ্ধ ভীতও। কিন্তু তার চোখে সন্দেহ দেখা গেল। সে তৎক্ষণাৎ জেন হেলিয়ারের দিকে জিজ্ঞাসামূলকভাবে তাকাল।

–ডার্লিং, জেন বলল, তার তাকানোর উত্তর দেওয়ার পর, সে হল সত্যিই বিস্ময়কর, এটা সমস্তটা তার উপর ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে বলেছিলাম যে আমি এখানে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি এবং আমার আছে, সে মিস মার্পলকে আরও বলল তোমাকে এটা স্থির করতে হবে ওদের জন্য, আমি জানি এটা তোমার পক্ষে খুব সহজ হবে।

মিস মার্পল তার শান্ত, নীল চোখে মি. রোলিটার-এর দিকে ঘুরে তাকালেন। বললেন–তুমি আমাকে বলবে না, এগুলো কী হচ্ছে?

চারমিয়ান বলে উঠল অধৈৰ্য্যভাবে জেন-এর বন্ধু আমাদের বন্ধুও বটে। আমি এবং এডওয়ার্ড দুজনে স্থির সিদ্ধান্তে এসে গেছি। জেন বলল, যদি আমরা তার পার্টিতে আসতে পারি, তাহলে সে আমাদের কারোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে, এরা এই লোকটি কে,–কে হতে পারে বা কে ছিল

এডওয়ার্ড আসল পুনরুদ্ধারের জন্য, জেন আমাদের বলল, তোমরা হল স্লিউথস এর শেষ শব্দ, মিস মার্পল!

বৃদ্ধা মহিলাটি চোখ পাকাতে লাগলেন, কিন্তু সে বিনম্রভাবে প্রতিবাদ করলেন–ওহ, না, না! এই রকম কিছু ব্যাপার নয়, এটা হচ্ছে আমরা যেরকম গ্রামে বাস করি সেরকম, একজন খুব বেশি জানতে পারে মানুষের প্রকৃতি সম্বন্ধে। কিন্তু সত্যিই তুমি আমাকে বেশি কৌতূহল উদ্দীপক করে তুলেছ, চলো তোমার সমস্যাগুলো আমাকে বল।

-আমি কিন্তু একজন ভয়ঙ্করভাবে স্ক্রৈন–সেটা, একটা গুপ্ত সম্পদের মত, এডওয়ার্ড বলল–প্রকৃতপক্ষে সত্যিই? কিন্তু শব্দগুলি খুবই উত্তেজনাদায়ক!

–আমি জানি এটা সম্পদ দ্বীপ-এর মত কিন্তু আমাদের সমস্যা, সাধারণ রোমান্টিক অনুভুতিগুলোর অভাববোধ করে কোন উদ্দেশ্যই এখানে খাটে না সেটা যাই হোক, হয় মস্তিষ্ক এবং ক্রসডের তালিকা, বা আদেশ যেমন চারটে ধাপ বামদিকে, কিংবা উত্তর পশ্চিম দিকে এটা ভয়ঙ্কর ভাবে গদ্যতুল্য–ঠিক যেমন সেখানে, আমাদের খনন করা উচিত।

-তুমি কি এটা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছ।

–আমাদের দুটো নিখুঁত বর্গাকার একর বাগান খুঁড়তে হবে, পুরো জায়গাটা তৈরি করা হয়েছে বাজারের বাগান হিসাবে পরিসর করার জন্য। আমরা এখন আলোচনা করছি। কিভাবে এখানে শাকসবজি যেমন আলু কিংবা কলাই ফলানো যায়।

চারমিয়ান বরং সংক্ষিপ্তভাবে বলল–আমরা কি তোমাকে সবকিছু বলতে পারি এটার সম্বন্ধে?

কিন্তু, অবশ্যই, আমার প্রিয় বল।

–তবে চল আমরা একটা নিরিবিলি জায়গা খুঁজি, এস এডওয়ার্ড, সুতরাং সে জনাকীর্ণ এলাকা থেকে বেরিয়ে একটা ধোঁয়াময় ঘরের দিকে নিয়ে গেল। তারপরে তারা সিঁড়িতে উঠে গেল এবং একটা ছোট বসার ঘরে পৌঁছল, সেটা ছিল দ্বিতীয় ফ্লোরে।

যখন তারা সেখানে বসল, চারমিয়ান সংক্ষিপ্তভাবে শুরু করল–ঠিক আছে, চল! গল্পটা শুরু হয় কাকা ম্যাথিউজকে নিয়ে। কাকা বরং বলা যায় মহান, মহৎ কাকা আমাদের কাছে, সে অবিশ্বাস্যভাবে বহু পুরনো ছিল। এডওয়ার্ড এবং আমি ছিলাম তার একমাত্র আত্মীয়, সেও আমাদের প্রতি গভির অনুরক্ত ছিল এবং সবসময় বলত যে যখন সে মারা যাবে, সে তার সমস্ত টাকা আমাদের মধ্যে ভাগ করে দেবে। যাইহোক, কাকা মারা গেল গত মার্চ মাসে এবং সমস্ত কিছু রেখে গেল যেগুলো আমাদের দুজনের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার কথা ছিল। আমি এখন খুব উদাসীন হয়ে গেছিলাম, আমি এটা বলতে চাইনি যে, সে মারা গেছে এটা ঠিক

সত্যি বলতে আমরা তার অন্ধ ভক্ত ছিলাম, কিন্তু সে খুব অল্প সময়ের জন্য অসুস্থ হয়েছিল।

বিষয়টা হচ্ছে যে সবকিছু যা সে রেখে গেছিল, সেগুলোর কিছুই মূল্য নেই। সুতরাং এটা আমাদের কাছে স্পষ্টতই একটা বড় আঘাত! তাই নয় কি, এডওয়ার্ড?

বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে এডওয়ার্ড সম্মতি জ্ঞাপন করল। তুমি দেখ, সে বলল–আমরা এটার সম্বন্ধে খুব অল্প গণনা করেছি, আমি বলতে চাই, যখন তুমি জানো যে অল্প টাকা তোমার কাছে আসছে–তুমি কি জানতে না–ঠিক আছে, ধরে রাখ এবং এটা নিজের জন্য করার চেষ্টা কর। আমি সৈন্যবাহিনীতে আছি, আমার কোনও অধিকার নেই আমার এক্তিয়ারের বাইরে কিছু বলা এবং চারমিয়ানও একটা মটরশুটিও পায়নি। সে কাজ করে একজন স্টেজ ম্যানেজার হিসাবে, একটা রিপারটরি রঙ্গমঞ্চে, সত্যিই আগ্রহোদ্দীপক, এবং সে এটা উপভোগ করে–কিন্তু এখানে কোনও টাকা নেই। আমরা এটা হিসাব করেছি আমাদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর। কিন্তু আমরা কি সত্যিই টাকাটা নিয়ে ভীত ছিলাম না। কারণ আমরা উভয়েই জানতাম আমরা একদিন না একদিন অনেক টাকার মালিক হব।

এবং এখন, তুমি দেখ, আমরা কি সত্যিই খুশী নই। চারমিয়ান বলল, আর কি বলার আছে, অ্যানেস্টে–এটা হচ্ছে একটা পারিবারিক জায়গা, এবং এডওয়ার্ড এবং আমি দুজনে এটা খুব ভালোবাসি–উইলটাকে সম্ভবত বিক্রি করে দিতে হবে। কারণ এডওয়ার্ড এবং আমি মনে করি, যে আমরা এটাকে টেনে নিয়ে যেতে পারব না। কিন্তু আমরা যদি কাকা ম্যাথিউজ-এর টাকা খুঁজে না পাই, তাহলে আমাদের বিক্রি করতে হবে।

এডওয়ার্ড বলল–তুমি জান, চারমিয়ান, আমরা কিন্তু আমাদের মূল বিষয়বস্তুতে আসিনি।

-ঠিক আছে, তুমি বল, তাহলে।

এডওয়ার্ড মিস মার্পল-এর দিকে ঘুরে তাকাল, এটা এটার মত, তুমি দেখ যেহেতু কাকা ম্যাথিউজ বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিল, সে অনেক অনেক সন্দেহবাতিক হয়েছিল, সে কাউকেই বিশ্বাস করত না।

-খুব বুদ্ধিমান লোক ছিলেন তিনি,–মিস মার্পল বলল, মানুষের প্রকৃতির মহার্ঘত হল তার অবিশ্বাস্যতা।

-ঠিক আছে, তুমিই ঠিক হতে পার এই বিষয়ে, ঠিক আছে। কাকা ম্যাথিউজ হয়তো এটাই ভেবেছিল। তার একজন বন্ধু ছিল সে সমস্ত টাকা হারিয়ে ফেলে একটা ব্যাঙ্কে। এবং আর একজন বন্ধু, তার সর্বনাশ করেছিল একজন আত্মগোপনকারী তোলাবাজ, তাছাড়া সে নিজে কিছু টাকা হারিয়েছিল একটা প্রতারিত কোম্পানির ফাঁদে পড়ে, যেহেতু সে শিক্ষা পেয়েছিল, তাই সে সবসময় বলত, যে একমাত্র নিরাপদ, নিশ্চিত বিষয় হল যে টাকাকে স্বর্ণ বা রৌপ্যের পিণ্ডতে পরিণত করা এবং মৃত্তিকাগর্ভে স্থাপন করা। আ, মিস মার্পল বল, আমি দেখছি।

-হ্যাঁ, বন্ধুরা তার সঙ্গে তর্ক করে চলল, এটা লক্ষ্য করা গেল যে তার কোনও আগ্রহ নেই এই বিষয়ে, কিন্তু সে এটা এমনভাবে উপস্থাপনা করল যে এটা তার কাছে কোন ব্যাপারই নয়। সে বলল, তোমার গচ্ছিত টাকা রাখা উচিত একটা বাক্সে। তোমার বিছানার তলায় অথবা পুঁতে দাও বাগানে। এগুলো ছিল তার উপদেশ।

চারমিনার বলতেই থাকল এবং যখন সে মারা গেল, তার গুপ্ত সম্পদ কিছুই পাওয়া গেল না, যদিও সে খুব ধনী ব্যক্তি ছিল, সুতরাং আমরা ভাবলাম এইজন্যই সে এটা করেছে।

এডওয়ার্ড বিস্তারিতভাবে বলল, আমরা দেখেছিলাম সে তার সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছিল এবং তার বদলে সে সময়ে সময়ে বড় অঙ্কের টাকা পেত। এবং কেউই জানত না সে তার সম্পদগুলো কি করেছে। কিন্তু এটা স্পষ্টতই বোঝা গেল যে, সে তার আদর্শ ও নীতিতে সজাগ ছিল, এবং সেই জন্যই সে সোনা কিনত এবং মাটিতে পুঁতে রাখত।

-সে তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কিছু বলেনি এ ব্যাপারে। এমনকি কোনও কাগজ কিংবা কোনও চিঠি রেখে যাননি এ ব্যাপারে।

এটা একটা পাগলামির মত। সে অনেকদিন অচেতন ছিল। কিন্তু সে আমাদের ডেক পাঠিয়েছিল। তার মৃত্যুর আগে আমরা গেলাম। তারপর সে আমাদের দিকে তাকাল এবং মুখ টিপে হাসল–একটু মূচ্ছা, তারপরে দুর্বল মুখটেপা হাসি। সে বলল তুমিই ঠিক, আমার সুন্দর জোড়া ঘুঘু তারপর সে তার চোখ বুজে ফেলল–তার ডান চোখ–এবং তারপর পিটপিট করে তাকাল। এবং তারপর সে মারা গেল। খুবই করুণ, বৃদ্ধ কাকা ম্যাথিউজ-এর এভাবে চলে যাওয়া।

–সে কি তার চোখ বুজে ফেলেছিল, মিস মার্পল চিন্তামগ্ন হয়ে বললেন।

এডওয়ার্ড কৌতূহলভাবে বলল–এটা কি তোমাকে কিছু আভাস দেয়? এটা আমাকে আরসেন লুপিন গল্পের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেখানে বলা হয়েছিল যে কিছু লুকানো ছিল একজন মানুষের স্বচ্ছ কাঁচের মত চোখে।

মিস মার্পল তার মাথা নাড়লেন। না–এই মুহূর্তে আমি অন্য কিছু চিন্তা করতে পারছি না।

চারমিয়ান হতবাক হয়ে বললেন-জেন আমাদের বলেছিল, তুমি আমাদের একবার বল কোথায় খুঁড়তে হবে।

মিস মার্পল হাসতে লাগলেন–আমি জাদুকর নই, তুমি জান। আমি তোমার কাকাকে জানি না। এবং আমি এটাও জানি না যে সে কি ধরনের মানুষ ছিল। এবং আমি এটাও জানি না তার ঘর কিংবা মাঠ।

চারমিয়ান বলল-তুমি যদি তাকে জানতে?

–ঠিক আছে, এটা খুব সহজ হত, সত্যি, সহজ হত না কি? মিস মার্পল বলল।

চারমিয়ান বলল।–তুমি অ্যাস্ট্রেতে অ্যাশ এবং দেখ এটা কতটা সহজ!

এটার মানে যে সে কোনরকম গভীর আমন্ত্রণ নির্দেশ করেনি, কিন্তু মিস্ মার্পল তৎপর হয়ে বলল–ঠিক আছে, সত্যি, আমার প্রিয়, এটা তোমার মত আমি সর্বদা চেষ্টা করেছি গুপ্ত সম্পদ দেখার এবং সে তার দিকে তাকিয়ে নিচু হয়ে ভিক্টোরিয়ান হাসি হেসে বলল।–ভালবাসার আগ্রহও বটে। চারমিয়ান তখন নাটকে যেরকম ঘটে সেরকম অঙ্গভঙ্গি করতে লাগল।

তারা অ্যানস্টিতে একটা ভ্রমণ শেষ করে ফিরেছে, তারা শাকসবজির বাগান পরিদর্শন করেছে। সেখানে পরিখা খনন করা ছিল। তারা গহন জঙ্গলের মধ্যে দিয়েও গেছে। সেখানে জঙ্গলে অনেক প্রয়োজনীয় গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। তারপর তারা সেখানে একটা সরু গলির দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল তারা চিলেকোঠার উপরেও উঠেছিল, সেখানে অনেক ট্রাঙ্ক ছিল এবং কিছু বাক্স ছিল, যেগুলো বিভিন্ন জিনিস দ্বারা ভর্তি ছিল। তারা নিজের ঘরগুলোও পরিদর্শন করেছে। তারা সমস্ত কিছুই পরিমাপ করে দেখেছে এবং দেওয়ালগুলো পুনরায় তৈরী করেছে। মিস মার্পলকে পুরনো সমস্ত আসবাবপত্র দেখানো হয়েছে। সেখানে একটা সন্দেহজনক ড্রয়ারও ছিল।

সকালে যেখানে প্রাতরাশ খাওয়া হয় সেই ঘরে একটা টেবিল ছিল। সেই টেবিলে কাগজের স্তূপ ছিল–এই কাগজগুলো ম্যাথিউজ স্ট্রাউড রেখে গেছে। কোনও কিছুই ক্ষতি হয় নি। চারমিয়ান এবং এডওয়ার্ড সেই কাগজগুলো ফেরৎ পাঠায়নি। সেখানে কিছু নথিপত্র, আমন্ত্রণলিপি এবং ব্যবসার কাগজপত্র ছিল। তারা পাঠায়নি কারণ তারা ভেবেছিল এখান থেকে যদি কোনও সূত্র পাওয়া যায় এই ঘটনাটার। চারমিয়ান বলল তুমি কি মনে কর আমরা এগুলো কোথাও দেখিনি?

মিস মার্পল তার মাথা নাড়লেন। এবং বললেন–তোমাকে খুব সহজ সাদাসিধে মনে হচ্ছে। যদি আমি এটা বলি, যে তুমি খুব সহজ, সাধারণ নও, আমি মনে করি প্রত্যেকের একটা পরিকল্পনা থাকা উচিত। আমার একজন বন্ধু মিসেস এল্ডরিচ, তার একজন সুন্দর পরিচারিকা ছিল। এই পরিচারিকা লিনোলিয়াম-এর ব্যবহার খুব ভালো জানত। এমনকি সে এতটাই সাধারণ ছিল যে সে বাথরুমের মেঝেও লিনোলিয়াম দিয়ে মাজত। আর মিসেস এল্ডরিচ যখনই বাথরুম থেকে বেরোত তখনই সে পিছলে পড়ে যেত এবং তার পা ভেঙ্গে গিয়েছিল। এটা খুব খারাপ ব্যাপার। কারণ ওই সময় বাথরুমের দরজা বন্ধ ছিল। এবং বাগানের মালি তখন ছিল না। সে মই আনতে গিয়েছিল। তারপর মালী জানালা দিয়ে মিসেস এল্ডরিচের করুণ অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছিল। মিসেস এল্ডরিচ খুব বিনয়ী স্বভাবের মহিলা ছিল।

এডওয়ার্ড অস্বস্তিকরভাবে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াল।

মিস মার্পল তৎপর হয়ে বললেন-আমাকে ক্ষমা কর, কারণ একটা ঘটনা, অন্য ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। কখনো কখনো এই সমস্ত ঘটনা সাহায্যও করে বটে। যদি আমরা আমাদের জ্ঞান বাড়াতে চাই এবং একটা সুন্দর জায়গার কথা ভাবতে শুরু করি তাহলে

এডওয়ার্ড বলল–আপনি একজনের কথা ভাবুন, মিস মার্পল। কারণ চারমিয়ান এবং আমার মাথায় এবং মনে কিছুই নেই জ্ঞান পাওয়ার মত অথবা দেওয়ার মত।

তারপর মিস মার্পল কাগজের দিকে তাকিয়ে বললেন-যদি তুমি কিছু মনে না কর, তাহলে কি আমি ওই কাগজগুলো দেখতে পারি। তিনি আরও বললেন–যদি সেখানে ব্যক্তিগত কিছু থাকে, অমি তাহলে এগোব না।

–ওহ, ঠিক আছে। আমি ভয় পাচ্ছি, তুমি কিছু এখন দেখবে না।

মিস মার্পল টেবিলের পাশে বসলেন; তারপর কাগজপত্র নিয়ে দেখতে লাগলেন। সে যখন একটা একটা করে কাগজ দেখতে লাগল, তখন কাগজগুলো বিভিন্ন স্কুপে আলাদা আলাদা ভাবে রাখা হল। যখন সে কাগজপত্র দেখা শেষ করল সে সেখানে কিছুক্ষণ ধরে বসে থাকল এবং এক দৃষ্টিতে কাগজগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকল।

এডওয়ার্ড বিদ্বেষপূর্ণভাবে মিস মার্পলকে বললেন–সবকিছু কি ঠিক আছে?

মিস মার্পল উদাস হয়ে গেলেন, এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করাতে তিনি স্বজ্ঞানে ফিরে আসলেন, এবং বললেন–হ্যাঁ এটা সত্যিই সাহায্য করবে।

–তুমি কি কিছু প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পেয়েছ?

-না সেরকম কিছুই পাই নি। কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি তোমার কাকা ম্যাথিউজ কী ধরণের লোক ছিল। কিছুটা আমার কাকা হেনরির মত। আমার কাকা হাসিঠাট্টা খুব ভালবাসত। সে অবিবাহিত ছিল–কিন্তু আমি বিস্মিত হই, কেন সে এত হতাশায় ভেঙ্গে পড়েছিল? এটা ঠিক যে অনেকে বিয়ে করতে পছন্দ করে না। কিন্তু তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম।

মিস মার্পলের পিছনে চারমিয়ান এডওয়ার্ডকে ইশারা করল।

মিস মার্পল তার অসুস্থ কাকা হেনরির কথা আনন্দ সহকারে বলতে লাগলেন। –আমার কাকা হেনরি মজা, কৌতুক খুব ভালবাসত। কিন্তু অনেকের কাছে কৌতুক কিংবা মজা বিরক্তিকর ছিল। শুধুমাত্র কথা তাকে ভীষণ বিরক্ত করে তুলত, সে একজন সন্দেহজনক লোক ছিলও বটে। সবসময় সে ভাবত যে তার চাকর-বাকরেরা কিছু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য কখনো কখনো তারা চুরি করত। কিন্তু সবসময় চুরি করত না। কিন্তু কাকা হেনরি তাদের সবসময় সন্দেহ করত। এমনকি শেষের দিকে সে তাদের খাবার-দাবার নিয়েও সন্দেহ করতে লাগল এবং শেষ পর্যন্ত সে খাওয়া ছেড়ে দিল। পাছে তার খাবার চুরি হয়ে যায়। সে সবসময় সিদ্ধ ডিম খেতে লাগল। কিন্তু আমার কাকা হেনরি একটা সময় খুব হাসিখুশি লোক ছিল। সে রাতের খাবারের পরে কফি খেতে পছন্দ করত। কিন্তু সে সবসময় বলত, এই কফিটা খুব জঘন্য। কারণ সে কফি পছন্দ করত কিন্তু কম পরিমাণে খেত।

এডওয়ার্ড ভাবল, যদি সে কাকা হেনরির সম্বন্ধে আরো বেশি কিছু শুনত। তাহলে সে পাগল হয়ে যেত।

মিস মার্পল বললেন –কাকা হেনরি যুবক ছেলেদের ভীষণ ভক্ত ছিল। তাদেরকে উত্যক্ত করতে পছন্দ করত। সে এক ব্যাগ মিষ্টি এমন এক জায়গায় রেখে দিত। সেখানে একজন ছেলেও প্রবেশ করতে পারবে না।

চারমিয়ান নম্র সুরে বলল–কাকা হেনরি সত্যিই খুব ভয়ঙ্কর লোক ছিল।

কারণ সে অবিবাহিত ছিল, তাই তার কোনো বাচ্চা ছিল না, কিন্তু হেনরি বোকাও ছিল না। সে সবসময় বাড়িতে টাকা পয়সার ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করত। এবং সে অনেক টাকাও সঞ্চয় করেছিল। এবং সে খুঁটিনাটি ব্যাপারে অতি সতর্কও ছিল বটে, তার অত্যধিক কথা বলার জন্য। একদিন রাত্রিবেলা কিছু বদমায়েশ তার ঘরে জোর করে প্রবেশ করল। তারপর যেখানে হেনরি টাকা রেখেছিল, সেখানে একটি গর্ত কাটল। টাকা-পয়সাগুলো ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য।

এডওয়ার্ড বলল, তোকে ঠিক পথে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।

মিস মার্পল বললেন-সেখানে কোনও কিছু নিরাপদ ছিল না। সে অনেক টাকা পাঠাগারে বইয়ের তলায় রেখেছিল এবং সে লোকজনদের বারণ করত ওই পাঠাগার থেকে বই নেওয়ার জন্য।

এডওয়ার্ড বাধা দিয়ে বলল–আমি মনে করি, এটা খুব ভালো বুদ্ধি। পাঠাগার সম্বন্ধে আপনি কি জানেন?

চারমিয়ান বিদ্রুপাত্মকভাবে তার মাথা নাড়াল। তুমি কি মনে কর আমি এই বিষয়ে ভাবিনি। আমি প্রত্যেকটি বই গত সপ্তাহের মঙ্গলবার পড়েছি, যখন তুমি পোর্টমাউথে ছিলে। যতই তুমি নাড়াচাড়া কর, সেখানে কিছুই পাবে না।

এডওয়ার্ড দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল–তারপর সে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে লাগল। সে বলল–সত্যিই এটা খুব ভাল মিস মার্পল আপনি আমাদের সাহায্য করতে এসেছেন। কিন্তু আমি বলছি যে এগুলো সব আলোচনা হয়ে গেছে। আমরা এখানে অনেক সময় অতিবাহিত করলাম। যাইহোক এবার আমরা গাড়ি নিয়ে বেরোব। এবং আপনি ৩ টে ৩০-এর গাড়িটা ধরতে পারবেন। কিন্তু মিস মার্পল বললেন, আমাদের কিছু টাকা নিতে হবে। তাই নয় কি মিঃ রোসিটার। তুমি এই ব্যাপারটা ছেড়ে দিয়ো না। যদি তুমি প্রথমে সাফল্য না পাও, তাহলে বার বার চেষ্টা কর।

–তার মানে তুমি চলে যাচ্ছ, আমি চেষ্টা করে যাব।

মিস মার্পল বললেন–আমি একদমই শুরু করিনি। মিসেস বিটন তার রান্নার বইতে বলে, প্রথমে তোমার খরগোসটা ধর। কিন্তু তার রান্নার বই অনেক দামী। এবং প্রত্যেকটা রান্নার প্রণালী শুরু হত এইভাবে। একটু ক্রিম নাও এবং ১২টা করে ডিম নাও। আমাকে দেখতে দাও, আমি কোথায় ছিলাম? ওহ হা মনে পড়েছে। আমি বলছিলাম আমাদের খরগোস ধরার কথা। তোমার কাকাকে ম্যাথিউজকে খরগোস বানিয়ে আমাদের দেখতে হবে কোথায় সে টাকাটা লুকিয়ে রেখেছে। এটা খুব সহজ, সাধারণ হবে বলে মনে হয়।

চারমিয়ান বলে উঠল–আপনি ভাবছেন এটা সহজ হবে?

–হ্যাঁ আমি মনে করি সে সঠিক কাজটাই করেছে–একটা গোপন ড্রয়ার যেখানে সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে।

এডওয়ার্ড মনমরা হয়ে বলল–তুমি নিশ্চয়ই এই গোপন ড্রয়ারে সোনা লুকিয়ে রাখনি।

এডওয়ার্ড বলল-না একদমই না। কারণ টাকা কখনো সোনা হতে পারে না।

সে সবসময়ই এটা বলত–কিছু আমার কাকা হেনরি এ বিষয়ে খুব নিশ্চিত ছিল, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি সেখানে কিছু গুপ্ত রহস্য আছে। কারণ সেখানে হিরেও একটা গোপন ড্রয়ারে থাকতে পারে।

–আমরা সমস্ত গোপন ড্রয়ারগুলো খুঁজে দেখেছি। আমাদের একজন কেবিনেট প্রস্তুতকারী ছিল সে আসবাবপত্রগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করত।

-সত্যি, এটা খুব চালাকিপূর্ণ কাজ আমি বলব, তোমার কাকার ডেস্কও এইরকম ছিল।

হ্যাঁ আছে। আমি তোমাকে দেখাব, সেখানে দেখা গেল পায়রার কোটরের মত কুঠুরি, এবং ছোট ছোট ড্রয়ারগুলো। মিস মার্পল মাঝখানের ছোট দরজাটা খুলল এবং একটা স্প্রিং পেল বাম হাতের দিকে ড্রয়ারে। তারপর চারমিয়ান সেটাকে বার করে আনল এবং দেখা গেল সেটা কার।

মিস মার্পল বললেন–তুমি কি মনে কর না এটা কোইনসিডেন্ট, কাকা হেনরিরও এরকম একটা ডেক্স ছিল, তার ডেক্স ছিল ওয়ালনাটের তৈরি এবং এটা মেহগনি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।

চারমিয়ান বলল–যদি তুমি দেখ, তাহলে দেখবে সেখানে কিছুই ছিল না।

মিস মার্পল বললেন–আমি মনে করি, তোমার কেবিনেট প্রস্তুতকারী একজন যুবক মানুষ ছিল। সে কিছুই জানত না। মানুষ যখন এই সমস্ত গোপন জায়গাগুলো খুঁজে বার করে তাহলে এটা মনে যে লোকেরা খুব অঙ্কন শিল্পে মনোযোগ দিতে পারে। এবং একটা গোপন তথ্যের মধ্যে আর একটা গোপন তথ্য থাকতে পারে। তারপর মিস মার্পল তার ধূসর চুল থেকে পিন বার করল। তারপর সে সেটাকে গোপন ড্রয়ারে লাগাল, খুলতে চেষ্টা করল। তারপর সে সফল হল তার মধ্যে ছোট ড্রয়ারটা খুলতে। সেখানে অনেক পুরনো চিঠিপত্র এবং একটা মোড়া কাগজ ছিল।

এডওয়ার্ড এবং চারমিয়ান দুজনেই ঝাঁপিয়ে পড়ল এটা দেখার জন্য। কাঁপতে কাঁপতে এডওয়ার্ড কাগজটা খুলল। সে তারপর আবার বিরক্তিতে সেটা ছুঁড়ে ফেলে দিল।

চারমিয়ান রিবনটা খুলতে লাগল, যেটাতে সমস্ত চিঠিগুলো একসঙ্গে বাঁধা ছিল। সে একটা বার করল এবং দেখল এগুলো ভালবাসার চিঠি।

মিস মার্পল তার ভিক্টোরিয়ান ভঙ্গিতে এর প্রতিক্রিয়ার উত্তর দিলেন এবং বললেন–এটা সত্যিই আগ্রহজনক এবং এই কারণের জন্য তোমার কাকা কখনো বিয়ে করেনি। চারমিয়ান সশব্দে পড়তে শুরু করল।

আমার চিরদিনের প্রিয় ম্যাথিউজ, আমি অবশ্যই স্বীকার করব যে সময়টা অনেক দিন পেরিয়ে গেছে, যখন আমি তোমার চিঠিটা পেয়েছিলাম। আমি নিজেকে অনেক কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে চেয়েছিলাম। এবং নিজেকে বলতাম যে আমি পৃথিবীর একজন ভাগ্য জনক ব্যক্তি। এবং আমি আমেরিকায় গেছি এবং অনেক দ্বীপ ঘুরে বেড়িয়েছি।

চারমিয়ান থেমে গেল–এটা কোথা থেকে? ওহ, হাওয়াই! মিস মার্পল পড়তে লাগলেন? সত্যিই এটা দুর্ভাগ্যজনক, এই সমস্ত প্রতিবেশী দেশের লোকেরা কখনো ভালো দেখতে পায় না। তারা সমসময় অসভ্য এবং অমার্জিত অবস্থায় বিরাজ করে, সবসময় তারা সময় কাটায় হয় সাঁতার কেটে কিংবা মালা পরে নিজেদের সাজায়। সে এবং মিসেস গ্রে সত্যিই নিরুৎসাহিত ছিল। আমরা সমস্ত কিছু করতে পারি তাকে আনন্দ দিতে। কিন্তু আমরা একটা কারণের জন্য দুঃখিত। তুমি কি জান ম্যাথিউজ কারণটা কি? সত্যি, অনুপস্থিতি হল খুব খারাপ ভালোবাসার হৃদয়ে। তোমার স্নেহপূর্ণ প্রতিবাদমূলক আচরণ আমাকে অনেক আনন্দ প্রদান করেছে। তোমার খুব অনুরক্ত এবং বিশ্বস্ত হৃদয় আছে। এবং আমি তোমার সত্যিকারের ভালোবাসা, বেটি মার্টিন।

আমি আমার বন্ধু মার্টিন গ্রেভসকে চিঠি দিয়েছিলাম। আমি আশাকরি, স্বর্গে আমাদের ক্ষমা করে দেবে।

এডওয়ার্ড সশব্দে বলল–একজন মহিলা মিশনারি। যে কাকা ম্যাথিউজ এর ভালোবাসা ছিল? কিন্তু আমি বিস্মিত হয়ে যাই এটা ভেবে যে কেন তারা বিয়ে করেনি।

আমার মনে হয় সে সমস্ত পৃথিবীটা ঘুরে দেখেছে।

চারমিয়ান বলল, চিঠিগুলো দেখে। সে মেয়েটি মাউরিটিয়াম-এও গেছে। সম্ভবত সে মেয়েলি হলুদ জ্বর কিংবা অন্য অসুখে মারা গেছে।

তারা একটু হাসল এবং তাদের যাত্রা শুরু করল। মিস মার্পলকে খুব আনন্দিত দেখাচ্ছিল।

মিস মার্পল বললেন–এটা খুবই মজার।

মিস মার্পল একটা রান্নার প্রস্তুত প্রণালী পড়েছিলেন। তাদের অনুসন্ধিৎসা দেখে, মিস মার্পল পড়তে লাগলেন। সেঁকা শাকসবজি, একটা স্যামন-এর সুন্দর টুকরো নাও, লবঙ্গ দাও, এবং বাদামী চিনি দিয়ে ঢেকে দাও। অল্প তাপে গরম কর। তারপর সেটাকে শাক দিয়ে পরিবেশন কর। এটাকে কেমন খাবার বলে মনে হচ্ছে?

এডওয়ার্ড বলল–এটা খুব নোংরাজনক খাবার বলে মনে হচ্ছে।

-না না, এটা খুব ভালো হবে। কিন্তু তুমি পুরো ঘটনাটা নিয়ে কি ভাবছ?

এডওয়ার্ডের মুখ হঠাৎ আলোকিত হয়ে উঠল–তুমি কি মনে কর এটা এক ধরনের ক্রাইপটোগ্রামী, সে এটা বাজেয়াপ্ত করেছিল এখানে দেখ, চারমিয়ান, তুমি তাহলে জানতে পারবে। সেখানে গোপন ড্রয়ারে আর কোন রান্নার প্রস্তুত প্রণালী রাখতে হবে না। মিস মার্পল বললেন–ঠিক বলেছ? খুব তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছ।

চারমিয়ান বলল–আমি জানি এটা কি হতে পারে–এটা কি অদৃশ্য কালি এটাকে গরম হতে দাও। এটাকে ইলেকট্রিকের আগুনে ঘোরাও।

এডওয়ার্ড তাই করল, কিন্তু কোনও লেখা দেখা গেল না।

মিস মার্পল কাশতে শুরু করলেন–তুমি জান আমি মনে করি যে তুমি এটাকে আরো কঠিন বানিয়ে ফেলছ। এই রান্নার প্রস্তুত প্রণালী একটা নির্দেশ বহন করছে। তাহলে বল সেই নির্দেশটা কী। আমি মনে করি চিঠিগুলো খুব তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ।

–চিঠিগুলো গুরুত্বপূর্ণ?

মিস মার্পল বললেন–সম্ভবত সইগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু এডওয়ার্ড মিস মার্পলের কথায় কান দিল না। সে উত্তেজিত হয়ে বলল –চারমিয়ান, এখানে এস, মার্পল সত্যি কথা বলছেন, খামগুলো দেখ এগুলো পুরনো। কিন্তু চিঠিগুলো অনেক পরে লেখা হয়েছিল।

মিস মার্পল বললেন–ঠিক বলেছ।

–সত্যিই এগুলো নকল চিঠি, কিন্তু পুরনো। আমি এটা হলফ করে বলতে পারি যে কাকা ম্যাট এই সমস্ত জাল চিঠিগুলো নিজে তৈরি করেছে। মিস মার্পল বললেন–হ্যাঁ, খুব অল্প চিঠি জাল করেছে।

সেখানে কোনও মিশনারি নেই আমার বাচ্চারা। এটাকে কঠিন করার কোনও প্রয়োজন নেই। তোমার কাকা একজন সহজ সাধারণ মানুষ। সে অনেক সময় কৌতুক, মজা করতে ভালোবাসে, এটুকুই এর বেশি কিছু নয়।

এই প্রথম চারমিয়ান এবং এডওয়ার্ড মিস মার্পলের কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনতে লাগল।

চারমিয়ান জিজ্ঞাসা করল–মিস মার্পল আপনি কি বলতে চাইছিলেন।

–আমি বলতে চাইছি যে তোমরা টাকাটা নিজের হাতেই রেখেছিলে।

চারমিয়ান মাথা নিচু করল এবং আর কারোর দিকে তাকাল না। এই সইটা যেটা সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে গেছে। রান্নার প্রস্তুত প্রণালীটা একটা নির্দেশ মাত্র। এই রান্নার প্রণালীতে লবঙ্গ এবং বাদামি চিনি মেশানো ছিল। এবং অবশিষ্ট কি কি ছিল এগুলো বাদে? তাহলে কেন শূকরের জঙ্ঘা এবং শাক বাদ যাবে। শূকরের জঙ্ এবং শাক! সত্যিই এটা খুব দুর্বোধ্য। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, এই চিঠিগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এবং যদি তুমি বিবেচনা কর যে তোমার কাকা মরার আগে কি করেছিল। সে নাকি তার চোখ বন্ধ করেছিল, তুমি বলেছিলে। ঠিক আছে এইগুলিই তোমাকে কিছু সংকেত জ্ঞাপন করবে।

চারমিয়ান বলল–আমরা কি পাগল, না তুমি পাগল? তুমি নিশ্চিতভাবে জান যে কিছু ঘটনা সত্যি ছিল না। আবার কিছু ঘটনা এখনকার দিনে কেউ বিশ্বাস করে না। মিস মার্পল বলল–আমি বেটি মার্টিনকে স্পষ্টভাবে চিঠিতে দেখতে পেয়েছি।

এডওয়ার্ড হাঁপাতে লাগল। সে চিঠিটার দিকে তাকাল এবং বেটি মার্টিনের নাম দেখতে পেল।

মিঃ রোসিটার বলল–সত্যিই এটা ঠিক। তুমি সেটা বলেছিলে। এখানে সেরকম কোনও লোকই নেই। এই চিঠিগুলো তোমার কাকা লিখেছে, এই খামে যে লেখাটা রয়েছে সেটা অনেক পুরনো, এই খামটির সঙ্গে এই চিঠিগুলোর কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ একটা খামে পোষ্টমার্ক দেওয়া রয়েছে ১৮৫১ সালের।

মিস মার্পেল থামলেন। তারপর সে জোর দিয়ে বলল–সত্যিই কি এটা ১৮৫১ সালের, তাহলে এটা থেকে কি সবকিছু বোঝা যাবে না?

এডওয়ার্ড বলল–আমি বুঝতে পারব না, মিস মার্পল বলল–ঠিক আছে মার্পল আমি হলফ করে বলতে পারি যদি এটা আমার ভাইপো লিওনেলের না হয়, তাহলে এটা তোমারও হতে পারে না। এরকম একটা হৃদয়গ্রাহী ছেলে এবং আবেগপূর্ণ স্ট্যাম্প সংগ্রহকারী। কারণ লিওনেল স্ট্যাম্পের ব্যাপারে সবকিছু জানত। সে আমাকে অনেক বিরল এবং মূল্যবান স্ট্যাম্পের কথা বলেছিল এবং আরো বলেছিল একটা নতুন স্ট্যাম্প নীলামের জন্য গেছিল। আমি একটা নাম উল্লেখ করতে পারি যেটা লিওনেল আমাকে বলেছিল। স্ট্যাম্পটা হল ১৮৫১ সালের ব্লু টু সেন্ট। এটার দাম ২৫ হাজার ডলার ছিল। আমি মনে করি অন্য স্ট্যাম্পগুলোও খুব বিরল এবং মূল্যবান ছিল। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় তোমার কাকা এগুলো কিনেছিল এবং সেগুলো খুব যত্ন করে রাখত। এইগুলোর সম্বন্ধে জানতে পারি তার গোয়েন্দা গল্প পড়ে।

এডওয়ার্ড আর্তনাদ করে উঠল, সে বসে পড়ল এবং তার নিজের মুখটা হাত দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখল।

চারমিয়ান জিজ্ঞাসা করল কী ব্যাপার? এডওয়ার্ড বলল–কিছু না, এটা সত্যিই একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা, কিন্তু মিস মার্পলের জন্য আমরা সেই চিঠিগুলো সুন্দর করে পুড়িয়ে ফেলেছি।

মিস মার্পল বললেন–এই ভদ্রলোকেরা যারা ঠাট্টা পছন্দ করত, তারা এর গুরুত্ব কখনোই বুঝতে পারে নি। কাকা হেনরি আমাকে খ্রিস্টমাসে পাঁচ পাউন্ড টাকা পাঠিয়েছিল। সে খ্রিস্টমাস কার্ডের মধ্যে এই টাকা রেখেছিল। তারপর কার্ডটাকে আঠা দিয়ে সাঁটিয়ে দিয়েছিল এবং কার্ডটার ওপরে লিখেছিল আমার ভালবাসা এবং ওভকামনা, আমি সবকিছুই এই বছর ব্যবস্থা করে নিতে পারব।

মিস মার্পল এটা দেখে খুব রেগে গিয়েছিলেন এবং আগুনে সেই কার্ডটাকে ফেলে দিয়েছিলেন। ফলে এটা শুনে তার কাকা তাকে আর একটা কার্ড পাঠিয়েছিল।

এডওয়ার্ডের যে অনুভূতি ছিল তারা কাকা হেনরির প্রতি, সেটা পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গেল।

এডওয়ার্ড মিস মার্পলকে বললেন আমি এক বোতল শ্যামন আনতে যাচ্ছি। আমরা সবাই মিলে পান করব কাকা হেনরির স্বাস্থ্যের কথা ভেবে।

৫. ইন এ গ্লাস ডার্ক লি

ইন এ গ্লাস ডার্ক লি

আমার কাছে এই গল্পের কোনো ব্যাখা নেই। আমার কাছে কোনো তত্ত্বও নেই–কেন এবং কীজন্য এটা, এটা একটামাত্র জিনিস–যেটা ঘটেছিল।

সবকিছু একইরকম। আমি কখনো কখনো বিস্মিত হয়ে যাই, কিভাবে জিনিসগুলো এগোতে পারত যদি আমি সময়মতো সেগুলো লক্ষ্য করতে পারতাম। একটামাত্র গুরুত্বপূর্ণ খুঁটিনাটি তথ্য। কিন্তু আমি এটা কখনোই উপলব্ধি করিনি। এবং এটা আমি অনেক বছর পরে বুঝতে পেরেছিলাম। যদি আমি এটা লক্ষ্য করতাম–ঠিক আছে, আমি মনে করি তিন জনের জীবনে অনেক বেশি পরিবর্তন আসত। যাইহোক এটা খুবই একটা ভীতিপ্রদ চিন্তা।

এখানে ঘটনাটা শুরুর জন্য, আমাকে গরমকালের ১৯১৪ সালে ফিরে যেতে হয়েছে–এটা যুদ্ধের আগে। যখন আমি ব্যাজওয়ার্দি থেকে নীল কারসলেকে নিয়ে নেমে এসেছিলাম। নীল, আমি মনে করি আমার প্রিয় বন্ধু। আমি তার ভাই অ্যালানকেও চিনি, কিন্তু ভালোভাবে চিনি না। সিলভিয়া, তাদের বোন, আমি তার সঙ্গে কখনই সাক্ষাৎ করিনি। সে অ্যালান-এর থেকে দুবছরের বড় এবং নীলের থেকে তিন বছরের ছোট। দুবছর যখন আমরা স্কুলে একসঙ্গে ছিলাম, আমি তার সঙ্গে ছুটির দিনে সময় কাটানোর জন্য ব্যাজওয়ার্দিতে যেতাম এবং দুবার আমাকে কেউ বাধা দিয়েছিল। সুতরাং এটা বোঝ গিয়েছিল গেল যে আমি ২৩ বছরের ছিলাম যখন আমি নীল এবং অ্যালানের ঘরে গেছিলাম।

আমাদের সেখানে অনেক বড় বড় পার্টি হত। নীলের বোন একজনের সঙ্গে ঘনিষ্ট হয়েছিল। সেই লোকটার নাম হল চার্লস ক্ৰলে। নীল বলেছিল যে ক্রলে তার বোনের থেকে একটু বেশী বয়সী ছিল কিন্তু সে খুব মার্জিত, ভদ্র এবং বাস্তবিকপূর্ণ ছিল।

আমরা পৌঁছেছিলাম, আমি মনে করছি, ঠিক সাতটার সময় সন্ধেবেলা। প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব ঘরে গেছে রাতের খাবার খাওয়ার পর। নীল আমাকে নিয়ে গেল, ব্যাজওয়ার্দি খুব আকর্ষিত এবং ভ্রাম্যমান পুরনো বাড়ি ছিল। এটা শেষ তিন শতকে বিনামূল্যে যোগ করা হয়েছিল এবং অনেক সিঁড়িতে ভর্তি ছিল। যেগুলো ওপরে কিংবা নীচের দিকে গেছে। এটা এমন একটা ঘর যেখানে তুমি তোমার পথ খুঁজে পাবে না। আমি মনে করি নীল আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আসবে বলে এবং আমাকে ওখানে নিয়ে গেছিল রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। আমি তখন খুব লজ্জিত হয়েছিলাম যখন আমি সেই সমস্ত লোকেদের সঙ্গে প্রথমবার সাক্ষাৎ করেছিলাম। আমি মনে করি যে অট্টহাসি হেসে এটা বলা যেতে পারে যে এটা এমন এক ধরনের বাড়ি যেখানে লোকজন সরু গলির মধ্যে ভূতের দেখা পাবে। এবং সে বলেছিল অসতর্কভাবে যে সে বিশ্বাস করে এই জায়গাটায় একটা ভূতের বাসস্থান ছিল। কিন্তু কেউ কখনই ভূতকে দেখেনি। এবং এমনকি সে নিজেও জানে না ভূতকে কেমন দেখতে ছিল।

তারপর সে তাড়াহুড়ো করে গেল, তারপর আমি অ্যানি। সন্ধেবেলার পোশাকের জন্য স্যুটকেসে ঢুঁ মারলাম। তখন কারসলেকটা ঠিকঠাক ছিল না। তারা তাদের পুরনো ঘরকে আঁকড়ে ধরেছিল। কিন্তু সেখানে কোনো ছেলে চাকর ছিল না যে সন্ধেবেলার পোশাকটা বার করে দেবে।

ঠিক আছে, আমি মঞ্চে চলে গেলাম, টাইটাকে ঠিকঠাক বেঁধে। আমি গ্লাসের সম্মুখে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি আমার নিজের মুখ এবং নিজের কাঁধগুলো দেখতে পাচ্ছিলাম এবং তাদের পিছনে একটা ঘরের দেওয়াল ছিল–একটা প্রশস্ত দেওয়াল, যেটা মাঝখানে ভেঙ্গে গেছে দরজার দ্বারা–এবং যখন আমি আমার টাইটা শেষবারের মত বাঁধলাম, আমি দেখলাম যে দরজাটা খোলা ছিল।

আমি জানি না আমি কেন চারিদিকে ফিরে তাকালাম না আমি মনে করি এটা একটা প্রাকৃতিক জিনিস হওয়া উচিত কিছু করার জন্য। যাইহোক, আমি এটা করিনি। আমি শুধু দেখেছিলাম দরজাটা দুলছিল ভোলা অবস্থায়। যখন এটা দুলছিল তখন আমি ঘরটা অতিক্রম করে দেখলাম। এটা একটা শোওয়ার ঘর ছিল-আমার ঘর থেকেও এটা অনেক বড়–দুটো বিছানার সুবিধা ছিল। এবং আমার শ্বাসপ্রশ্বাসটা যেন কেউ চেপে ধরেছিল।

খাটের একটা পায়াতে একজন মেয়ে ছিল এবং তার গলায় মানুষের দুটো হাত দিয়ে জড়ানো ছিল এবং লোকটি তাকে আস্তে আস্তে পিছনের দিকে টানছিল এবং তার গলা চেপে ধরছিল যেরকম সাধারণতঃ করা হয় যাতে মেয়েটি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়।

সেখানে ভুল হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা ছিল না। আমি যেখানে কি দেখলাম পুরো পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছিল, সেখানে একটা হত্যার ঘটনা ঘটেছিল।

আমি পরিষ্কারভাবে সেই মেয়েটির মুখটা দেখতে পাচ্ছিলাম, তার স্পষ্টত সোনালী চুলগুলো। এবং নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক ভীতি তার সুন্দর চোখের মধ্যে। যেটা রক্তের দ্বারা লাল হয়ে উঠেছিল। তাদের মধ্যে ওই লোকটার পেছনে, তার হাতগুলো এবং একটা ক্ষত তার মুখের বামদিক থেকে গলা পর্যন্ত চলে গিয়েছিল।

এটা কিছু সময় লাগবে বলার জন্য। কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে একটা কিংবা দুটো মুহূর্ত অতিবাহিত হয়েছিল তারপর আমি বোকার মত তাকিয়ে থাকলাম। তারপরে আমি ঘুরতে লাগলাম কিভাবে এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।

এবং আমার পেছনের দেওয়াল, যেটা গ্লাসে প্রতিফলিত হচ্ছিল, সেখানে একটা ভিক্টোরিয়ান মেহগনির আলখিল্লা ছিল। কোনো দরজা খোলা ছিল না, সেখানে কোনো হিংসাও ছিল না। আমি আবার আয়নার দিকে ঘুরে গেলাম তখন আয়নার মধ্যে শুধু আলখিল্লার প্রতিফলন পড়ল।

আমি আমার চোখের চারদিকে হাতটা ঘোরালাম। তারপর আমি ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম এবং আলখিল্লাটাকে সামনের দিকে টানতে চেষ্টা করলাম, ঠিক সেই মুহূর্তে নীল অন্য দরজা দিয়ে প্রবেশ করল এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করল–আমি কি সমস্ত বাজে কাজ করার চেষ্টা করছি।

সে আমাকে নিশ্চয়ই কিছুটা বুদ্ধিহীন ভেবেছিল, যখন আমি তার দিকে ফিরে তাকালাম এবং আমি দাবি করলাম আলখিল্লার পেছনে কোনো দরজা আছে। সে বলল, সেখানে একটা দরজা ছিল, সেটা পরের ঘরে যাওয়ার পথ নির্দেশ করেছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম–কে পরের ঘরটা অধিকার করে আছে এবং সে বলল লোজন তাকে ওলাডাম বলে ডাকে। এই ওলাডাম তার স্ত্রীকে নিয়ে এখানে বসবাস করত। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম–মিসেস ওলডাম-এর কি সুন্দর সোনালী চুল ছিল এবং তখন সে শুকনো ভাবে উত্তর দিল যে মিসেস ওলডাম কালো ছিল। তখন আমি ভাবতে পারলাম যে আমি নিজে নিজেকে ওদের সঙ্গে টেনে তুললাম, কিছু অবাস্তব ব্যাখ্যা করলাম, তারপর একসঙ্গে আমরা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসলাম। আমি নিজেকে বললাম যে আমার মনের মধ্যে কিছু ঘটনা উদিত হচ্ছে–আমি তখন খুব লজ্জিত হয়ে গেলাম এবং আমি তখন নিজেকে গাধার সঙ্গে তুলনা করলাম।

এবং তখন–নীল বলল–আমার বোন সিলভিয়া এবং আমি যে মেয়েটার সুন্দর মুখটা দেখেছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আমাকে শ্বাসরুদ্ধ করে মারার চেষ্টা করা হয়েছিল। এবং আমাকে তার বাকদত্তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই লোকটা একজন কালো লম্বা মানুষ যার মুখমণ্ডলের বামদিকে ক্ষতের দাগ আছে।

-ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমি ভাবতে পছন্দ করি এবং বলি, তোমার কি করা উচিত ছিল আমার জায়গায়, এখানে সেই মেয়েটা–যাকে চিহ্নিত করা গেছে–এবং এখানে সেই মানুষটাকে দেখছি যে সেই মেয়েটার গলা টিপে ধরেছিল। এবং তাদের একমাসের মধ্যে বিয়ে হবে।

আমি ছিলাম–কি ছিলাম না-এটা একটা ভবিষ্যতের দৈবদৃষ্ট ছিল। যদি সিলভিয়া এবং তার স্বামী ভবিষ্যতে কিছু সময় এখানে থাকার জন্য আসত এবং তাদেরকে যদি এই ঘরটা দেওয়া হত (সব থেকে খালি ঘর) এবং এই জায়গায় আমি এই করাল বিভীষিকা লক্ষ্য করতে পারতাম।

আমাকে এটার সম্বন্ধে কী করতে হল? আমি কি কিছু করতে পেরেছিলাম? কেউ কি এমনকি নীল, কিংবা ওই মেয়েটা, তারা কি আমাকে বিশ্বাস করেছিল?

আমি পুরো ঘটনাটা আমার মনের মধ্যে এক সপ্তাহ ধরে ভাবতে লাগলাম। আমি ভাবলাম, এটা বলব কি বলব না? এবং ঠিক সেই সময়ে একটা জটিল পরিস্থিতি উদ্ভব হল। তুমি দেখ আমি সিলভিয়া কারসলেক-এর সঙ্গে ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়লাম, যখনি আমি তাকে প্রথমবার দেখেছি।

আমি তাকে অনেক বেশী করে চাইতাম পৃথিবীর অন্য কিছুর থেকেও…এইভাবে যেটা আমার হাত বেঁধে দিয়েছিল।

এবং অধিকন্তু, আমি যদি কিছু না বলতাম, সিলভিয়া চার্লস ক্ৰলেকে বিয়ে করত এবং ক্রলে তাকে মেরে ফেলত।

এবং সুতরাং আমার আসার আগের দিন, আমি তাকে বোকার মত সবকিছু বলে ফেললাম। আমি বলেছিলাম সে যেন আমাকে বুদ্ধিসম্পন্ন ভাবে, কিন্তু আমি জাঁকজমকপূর্ণভাবে শপথ করি যে আমি যা দেখেছি আমি তাকে বলেছিলাম, তারপরে আমি ভেবেছিলাম যে সে ক্ৰলেকে বিয়ে করার জন্য দৃঢ় সংকল্প, আমার অবশ্যই তাকে অদ্ভুত অভিজ্ঞতা বলা উচিত ছিল।

সে শান্তভাবে শুনছিল, তার চোখে কিছু দেখা গেল কি না, আমি বুঝতে পারলাম না। সে মোটেই রাগী ছিল না, যখন আমি বলা শেষ করলাম, সে আমাকে অনেক ধন্যবাদ জানাল। আমি একটা মূখের মত বারবার বলতে লাগলাম। আমি এটা দেখেছিলাম, আমি সত্যিই এটা দেখেছিলাম। তারপর সে বলল–আমি বিশ্বাস করছি তুমি যখন এত করে বলছ, আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।

ঠিক আছে। আমি জানি না এটা ঠিক কিংবা আমি একজন বোকা। কিন্তু এক সপ্তাহ পরে সিলভিয়া চার্লস ক্রলের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভেঙ্গে দিল।

তারপরে যুদ্ধ আরম্ভ হল, এবং তখন অন্য কিছু ভাবার আর সময় ছিল না। একবার কিংবা দুবার সিলভিয়াকে ছেড়ে আমাকে যেতে হয়েছিল, তাই আমি চেষ্টা করেছিলাম যতটা সম্ভব তাকে এড়িয়ে যেতে।

আমি তাকে পাগলের মত ভালবাসতাম এবং সারা জীবনের জন্য তাকে চাইতাম। কিন্তু আমি ভাবতাম যেন এটা হচ্ছে না কি, এটা আমাকে ঋণী করেছিল যে সে ক্ৰলের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে এবং আমি নিজেকে বলতে লাগলাম যে আমি এটার বিবেচনা করেছি এবং এটা খুব একটা আগ্রহান্বিত ছিল না।

তারপর, ১৯১৬ সালে নীল মারা যায়, এবং তার শেষ মুহূর্তের কথাগুলো আমাকে বলতে হয়েছিল সিলভিয়াকে। আমি কিন্তু তারপরে বসে থাকিনি, সিলভিয়া নীলকে ভীষণ শ্রদ্ধা করত এবং সে আমার প্রিয় বন্ধু ছিল। সিলভিয়া খুব মিষ্টি এবং শ্রদ্ধার ক্ষেত্রেও খুব মিষ্টি মেয়ে ছিল, আমাকে আমার নিজের জিভকে ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হয়েছিল এবং প্রার্থনা করতে হয়েছিল যাতে একটা বুলেট সমস্ত দুর্দশাগ্রস্ত ব্যবসাকে শেষ করে দিতে পারে। সিলভিয়া ছাড়া জীবনে বাঁচা যাবে না সে উপলব্ধি করেছিল।

কিন্তু সেখানে আমার নামে কোন বুলেট ছিল না, একজন আমার ডানকানের কাছে ছিল, কিন্তু আমি জবুথবু না হয়ে সোজা এগিয়ে চললাম। চার্লস ক্ৰলে ১৯১৮ সালের শুরুতে যুদ্ধে মারা যায়।

যাইহোক এটা একটা পার্থক্য তৈরী করেছিল, আমি ১৯১৮ সালের বসন্তকালে বাড়িতে আসলাম, এবং আমি সোজা সিলভিয়ার কাছে চলে গেলাম এবং তাকে বললাম যে, আমি তাকে ভালোবাসি। আমার খুব বেশী বিশ্বাস ছিল না যে সে আমার দেখাশোনা করবে এবং তুমি আমাকে একটা পালক দিয়ে নাড়িয়ে দিয়েছিলে যখন সিলভিয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে আমি তাকে এত তাড়াতাড়ি বলিনি কেন। আমি ক্ৰলের সম্বন্ধে ভাবতে লাগলাম এবং সে বলল, কিন্তু কেন, তুমি ভাব যে আমি এই সম্পর্কটা তার সঙ্গে ভেঙ্গে দিয়েছি। এবং তারপরে সে আমাকে বলল যে সে আমাকে ভালবেসেছে যেরকম আমি তাকে ভালো বেসেছিলাম–একদম প্রথম দেখা থেকে।

আমি বললাম যে আমি ভেবেছিলাম হয়তো এই গল্পের জন্য এটা ঘটেছে এবং সে বিদ্রুপাত্মকভাবে অট্টহাস্যে হাসতে লাগল এবং বলল–তুমি যদি একজন মানুষকে ভালবাস, তাহলে তোমার এতটা কাপুরুষ হওয়া উচিত নয়, এবং আমি আমার পুরনো কল্পনাগুলি ভাবতে লাগলাম এবং তারপর বুঝতে পারলাম যে এটা ছিল অদ্ভুত কিন্তু এর থেকে বেশী কিছু নয়।

ঠিক আছে, এটার পর আর কিছু বলার নেই। তারপর সিলভিয়াকে আমি বিয়ে করলাম এবং আমরা খুব খুশী ছিলাম। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে সে সেই মুহূর্তে আমার হয়ে গেছে। তখন সে আমাকে ভালো স্বামী হওয়া থেকে রুখতে পারবে না, আমি সিলভিয়ার প্রতি ভীষণ অনুরক্ত ছিলাম, কিন্তু আমি অন্যের প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিলাম। কারণ তার হাসিটা আমাকে তার প্রতি আগ্রহান্বিত করে তুলেছিল। এটা তাকে আনন্দিত করেছিল, আমি মনে করি বরং সে এটা পছন্দ করত। এটা প্রমাণ করেছিল আমি তার প্রতি কতটা অনুরক্ত ছিলাম।

আমার জন্য, আমি পুরোপুরি বুঝতে পেরেছিলাম, এবং নির্ভুলভাবে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি নিজে নিজেকে বোকা বানাচ্ছিলাম। এবং আমাদের জীবনে শান্তি এবং সুখ আরো বেশি বিপদাপন্ন হয়ে উঠেছিল। আমি জানতাম,আমি বললাম, কিন্তু আমি পরিবর্তন করতে পারলাম না। প্রত্যেক সময় সিলভিয়া একটি করে চিঠি পেয়েছিল। সে আমাকে দেখায়ওনি। এবং আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম এটা ভেবে যে কার কাছ থেকে এই চিঠিগুলো আসছে। যদি সে হাসত এবং অন্য কোনও লোকের কথা বলত, আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।

প্রথমে আমি যেরকম বলেছিলাম সিলভিয়া আমাকে নিয়ে অট্টহাসি হাসত, সে ভাবত এটা একটা বড় ঠাট্টা, তারপর সে ভাবত না যে ঠাট্টাটা অনেক মজার ছিল। শেষপর্যন্ত সে ভাবল না যে এটা একটা ঠাট্টা ছিল।

ধীরে ধীরে সে আমার থেকে দূরে সরে যেতে লাগল, কোনও শারিরিক অনুভূতি নয়, সে তার গোপন মনটি আমার থেকে দূরে সরিয়ে নিল, আমি কখনোই বুঝতে পারিনি কি তার ভাবনা ছিল। সে খুব দয়ালু, কিন্তু দুঃখজনক যে এটা অনেক দূরত্ব থেকে ভাবা হয়েছিল।

আস্তে আস্তে আমি বুঝতে পারলাম যে সে আমাকে কখনই ভালবাসেনি। তার ভালাবাসা মরে গেছে এবং আমি সেটাকে মেরে ফেলেছি।

পরের ধারাটি সত্যিই অনস্বীকার্য। আমি নিজে এটার জন্য অপেক্ষা করতাম–এটি সত্যিই ভয়ঙ্কর ছিল।

তারপর ডেরেক ওয়েনরাইট আমাদের জীবনে আসল, তার সবকিছু ছিল যেটা আমার ছিল না। তার বুদ্ধি ছিল এবং গভীর জ্ঞানলব্ধ মন ছিল। সে খুব ভালো দেখতে ছিল, এবং আমাকে বাধ্য করা হয়েছিল এটা স্বীকার করার জন্য–এবং সত্যিকারে সে একজন খুব ভালো ছেলে ছিল। যেই মুহূর্তে আমি তাকে দেখলাম আমি নিজে নিজেকে বললাম এটাই হচ্ছে সেই মানুষ সিলভিয়ার জন্য…..।

সিলভিয়া এটার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল, আমি জানতাম সে লড়াই করেছিল কিন্তু আমি তাকে কোনও সাহায্য করিনি। আমি পেরেছিলাম না সাহায্য করতে। আমি আমার বিষাদগ্রস্ত অন্ধকার নিয়ে বিরাজ থাকতাম। আমি নরকের যন্ত্রণা ভোগ করেছিলাম, আমি আমি আমার নিজের হাত বাড়াতে পারছিলাম না নিজেকে রক্ষা করার জন্য, আমি তাকেও সাহায্য করতে পারিনি। আমি জিনিসগুলো খারাপের দিকে নিয়ে গেছিলাম। আমি তাকে একদিন হারালাম। এটা অভদ্র, অমার্জিত, অপব্যবহার। আমি ঈর্ষা এবং দুর্দশায় পাগল হয়ে গেছিলাম। যে সমস্ত জিনিসগুলো বলেছিলাম সেগুলো নির্দয় এবং অসত্য ছিল এবং এটা যখন আমি বলেছিলাম তখন বোঝা গেল এটা কতটা নির্দয় এবং অসত্য ছিল। যদি আমি এটা বলে বর্বরোচিত আনন্দ পেয়েছিলাম।

আমি মনে করতে পারছি না, সিলভিয়া কোনও প্রতিক্রিয়া করেছিল কিনা এবং আস্তে আস্তে কুঁকড়ে গেল।

আমি তাকে সহ্যের শেষ সীমা পর্যন্ত নিয়ে আসলাম।

–আমি মনে করি, সে বলল, এটা চলতে পারে না।

যখন আমি বাড়ি আসলাম সেই রাত্রে ঘরটা ফাঁকা ছিল–পুরোপুরি ফাঁকা, সেখানে একটা নোট ছিল যেটা চিরাচরিত আদবকায়দায় লেখা।

এটাতে সে বলেছিল যে সে আমাকে ছেড়ে দিল–চিরদিনের জন্য। সে ব্যাজওয়ার্দিতে এক কিংবা দুদিনের জন্য যাচ্ছিল, তারপর সে একজন লোকের কাছে গেল যে সিলভিয়াকে খুব ভালোবাসত এবং তাকে চাইত। আমাকে এটা চূড়ান্ত বলে ধরে নিতে হল।

আমি মনে করলাম, যে আমি আমার সন্দেহটাকে বিশ্বাস করিনি। আমার খারাপ ভয়ের কালো-সাদার ধারণা আমাকে উন্মত্তের মত পাগল করে তুলেছিল।

আমি ব্যাজওয়ার্দিতে গেলাম তারপর। যাতে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়। আমি গাড়িতে গেলাম।

সিলভিয়া তখন তার ফ্রকটা পরিবর্তন করছিল রাতের খাবারের জন্য। আমার মনে পড়ছে আমি যখন সজোরে ঘরের মধ্যে প্রবেশে করলাম, আমি তার মুখ দেখতে পেয়েছিলাম–আর হতচকিত হয়ে গেলাম তার সুন্দর মুখ দেখে, সেইসঙ্গে আমি ভয়ও পেয়ে গেছিলাম।

আমি বললাম–তোমার জন্য কেউ নেই, আমি একমাত্র আছি। কেউ না। কেউ নেই।

আমি তার গলা টিপে ধরলাম এবং আঁকড়ে তাকে পেছনের দিকে বাঁকিয়ে দিলাম।

হঠাৎ আমি আমার প্রতিফলন আয়নাতে দেখতে পেলাম। সিলভিয়া শাসরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছিল এবং তার গলা টিপে ধরেছিলাম। এবং আমার গালের যে ক্ষত যেখানে বুলেটের দাগ ছিল, ডান কানের তলা পর্যন্ত।

-না–আমি তাকে হত্যা করিনি। এই ঘটনাটা আমাকে বিপর্যস্ত করেছিল। এবং আমি তার গলাটা ছেড়ে দিলাম যাতে সে মেঝেতে পড়ে যায়।

তারপর আমি ভেঙ্গে পড়লাম–এবং সে আমাকে সান্ত্বনা দিল…হ্যাঁ। সে আমাকে সান্ত্বনা দিল।

আমি তাকে সবকিছু বললাম এবং সে আমাকে একটা কথা বলল–একজন মানুষ তাকে ভালোবাসে এবং তাকে চেয়েছিল। সিলভিয়া বলল যে–এটা হল তার ভাই অ্যালান, আমরা তখন দুজন দুজনের হৃদয়ের দিকে তাকালাম ওই রাত্রে, এবং আমি মনে করি না, যে সেই মুহূর্ত থেকে, আমরা কখনও দূরে সরে গেছি দুজনে দুজনের থেকে।

এটা সত্যিই একটা গূঢ় ভাবনা জীবনের মধ্যে দিয়ে যাওয়া-যাই হোক ভগবান কিংবা আয়নার দয়ায় একজন মানুষ হত্যাকারী হতে পারে।

একটা জিনিস ওই রাত্রে মারা গিয়েছিল–ঈর্ষার শয়তানটা যেটা আমাকে অনেকদিন ধরে আবদ্ধ রেখেছিল।

কিন্তু আমি কখনো কখনো বিস্মিত হয়ে যাই–মনে করি যে আমি এইরকম প্রথম ভুল কখনো করিনি–আমার বাম গালে যে ক্ষত–যখন এটা সত্যিই ডান গালে ছিল–সেটা আয়নার দ্বারা উলটে গিয়েছিল। আমি এতটাই নিশ্চিত হতে পারি যে ওই লোকটা চার্লস ক্ৰলে ছিল? আমার কি সিলভিয়াকে সতর্ক করা উচিত ছিল? যদি সে আমাকে বিয়ে করত–অথবা তাকে?

অথবা অতীত এবং ভবিষ্যৎ সমস্তই একই হত?

সমস্তই একই হত?

আমি একজন সহজ সাধারণ মানুষ–এবং আমি কখনোই ভান করতে পারি না এগুলো বোঝার জন্য–কিন্তু, আমি দেখেছিলাম, আমি কি দেখেছিলাম–এবং কী কারণে আমি দেখেছিলাম, আমি এবং সিলভিয়া দুজনে আদবকায়দার সঙ্গে ছিলাম–এবং মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি এবং সম্ভবত এতটা অতিক্রম করে।

৬. মিস মার্পল টেলস এ স্টোরি

মিস মার্পল টেলস এ স্টোরি

আমি মনে করি না আমি তোমাকে কখনো বলেছি কিনা–আমার প্রিয়জন–তুমি, রেমন্ড এবং তুমি জোয়ান, এবং আগ্রহের ছোট্ট ব্যবসাটা সেটা কিছু বছর আগে ঘটেছে। আমি মনে করি না কোনও কারণে গর্ব করব–অবশ্য আমি জানি যে তোমাদের মত যুবক লোকেদের সঙ্গে তুলনায় আমি মোটেই চালাক নই।–রেমন্ড অনেক আধুনিক বই লিখেছে এবং সমস্ত বইগুলো যুবক লোক এবং মহিলাদের অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে–এবং জোয়ান অনেক স্মরণীয় ছবি এঁকেছে। এই ছবিতে বর্গাগার লোকেদের তুলে ধরা হয়েছে এবং তাদের আগ্রহী স্ফীতি ছিল–খুব চালাক তুমি–আমার প্রিয়। কিন্তু রেমন্ড সবসময় বলে (দয়ার অনুভূতি নিয়ে, কারণ সে হল তার ভাইপোদের মধ্যে সহৃদয়বান)। আমি হচ্ছি আশাতীতভাবে ভিক্টোরিয়ান। আমি মি. আলমাটাডেমাকে প্রশংসা করি এবং মি. ফ্রেডারিক লেটনকেও। এবং আমি তাদের সম্বন্ধে মনে করি তারা অসহায়ভাবে, এখন আমাকে দেখতে দাও, আমি কী বলেছিলাম? ওহ, হ্যাঁ, আমি চাই না গর্বিতভাবে আবির্ভাব হতে, কিন্তু আমার কিছু করার নেই। তাই আমাকে একটুখানি আনন্দিত হয়ে থাকতে হয়, কারণ আমাকে সাধারণ ধারণা প্রয়োগ করতে হয়। আমি বিশ্বাস করি আমি সমস্যাটা সমাধান করতে পারি আমার যেটা থেকে অনেক চালাক লোককে হতবুদ্ধি করেছিল, যদিও আমার ভাবা উচিত ছিল যে পুরো জিনিসটা প্রথম থেকেই সুস্পষ্ট ছিল।

ঠিক আছে, আমি তোমাকে আমার ছোট্ট গল্পটা বলব। যদি তুমি ভাব যে আমি গর্বিত হওয়ার জন্য খুব আগ্রহান্বিত, তাহলে তুমি অবশ্যই স্মরণ করবে যে আমি অন্ততপক্ষে একজন অনুগামী মানুষকে সাহায্য করেছিলাম, যে লোকটা অনেক দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল।

এই ব্যবসাটার প্রথম বিষয় হল যে–একদিন সন্ধেবেলা নটার সময় যখন গোয়েন–তোমার মনে আছে গোয়েন? আমার ছোট দাসী, যার লাল চুল ছিল, ঠিক আছে–গোয়েন ভিতরে এল এবং আমাকে বলল যে মি. পেথারিক এবং একজন ভদ্রলোক এসেছেন, আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য। গোয়েন তাদেরকে বসার ঘরে বসিয়েছে–এটা একদম ঠিকই হয়েছে। আমি তখন খাওয়ার ঘরে বসেছিলাম কারণ বসন্তের খুব সকালে আমি ভাবি এটা সময় অপচয় করা যেখানে পাশাপাশি দুটো আগুন জ্বলছে।

আমি গোয়েনকে চেরিব্র্যণ্ডি আনার জন্য নির্দেশ দিলাম এবং তাকে কয়েকটি গ্লাসও আনতে বললাম। তারপর আমি বসার ঘরে তাড়াহুড়ো করে ছুটে গেলাম, আমি জানি না তুমি মি. পেথারিককে মনে রেখেছে কি রাখনি? সে দু বছর আগে মারা গেছে। কিন্তু তার একজন বন্ধু আছে যে অনেকবছর আগে আমার আইনসম্মত ব্যবসায় যোগদান করেছিল। এবং সে আমারও বন্ধু ছিল বটে। সে খুব তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এবং সত্যিই একজন চালাক লোক ছিল। এখন তার ছেলে আমার ব্যবসায় যোগদান করেছে। সে খুবই ভালো ছেলে এবং খুব নিয়মানুবর্তী এবং প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব। কিন্তু কেন জানি না আমি ছেলেটির উপর তেমন বিশ্বাস রাখতে পারি না, যতটা না রেখেছিলাম মি. পেথারিক-এর উপর।

আমি আগুনের সম্বন্ধে মি. পেথারি-ককে ব্যাখ্যা করেছিলাম এবং সে এক মুহূর্তে বলল যে সে এবং তার বন্ধু খাওয়ার ঘরে আসবে–তারপর সে তার বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে ছিল। যে ছিল মি. রডস। সে একজন যুবক মানুষ–বয়স চল্লিশ বছরের বেশী নয়–এবং আমি তৎক্ষণাৎ দেখলাম যে সেখানে কিছু ভুল হচ্ছে। তার রীতিনীতিগুলো নির্দিষ্ট নিজস্ব বৈশিষ্ট্যসূচক ছিল। এটাকে একজনের অভদ্র এবং অমার্জিত আচরণ বলা হত। যদি না তিনি মানুষটির দুঃখ বুঝতেন। কারণ মানুষটি মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল।

যখন আমরা খাবার ঘরে বসলাম এবং গোয়েন চেরি ব্র্যান্ডিটা আনল, মিঃ পেথারিক তার আসার কারণ ব্যাখ্যা করল।

মিস মার্পল, সে বলল, তুমি অবশ্যই উদাসীনতা নেওয়ার জন্য ক্ষমা করবে একজন বৃদ্ধ বন্ধুকে। আমি এখানে এসেছি তোমার সঙ্গে মন্ত্রণা বা পরামর্শ করার জন্য।

আমি মোটেই বুঝতে পারিনি সে কি বলতে চাইছে। এবং তারপরে সে বলতে লাগলঃ

–অসুস্থ হওয়ার কারণ একজন দুটো মত পছন্দ করে। একটি হল বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে ডাকা এবং পরিবারের হাউস ফিজিসিয়ান-কে ডাকা। কিন্তু এখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে ডাকা একটা শোভনতায় পরিণত হয়েছে। এবং এর একটা অবশ্যই খুব বড় মূল্য আছে। কিন্তু আমি জানি না আমি কতটা এ বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তার নিজের বিষয় সম্পর্কে অভিজ্ঞতা আছে-কিন্তু পরিবারের সাধারণ ডাক্তারের সম্ভবত অল্প জ্ঞান আছে। কিন্তু একটি বিশাল অভিজ্ঞতা।

আমি এটা বলতে চেয়েছিলাম, কারণ আমার একজন যুবতী ভাইঝি তার বাচ্চাকে নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। যে ত্বকের অসুখে ভুগছিল। কিন্তু তার নিজস্ব হাউস ফিজিসিয়ানের সঙ্গে আলোচনা করেনি যাকে সে একজন বৃদ্ধ থুরথুরে লোক বলে ভাবত। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তাকে খরচসাপেক্ষ পরিচর্যার জন্য আদেশ দিল, কিন্তু পরে দেখা গেল যে শিশুটি মিসল রোগে ভুগছিল।

আমি এটা উল্লেখ করেছি, যদিও আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম–এটা দেখানোর জন্য যে আমি মি. পেরিকের বক্তব্যকে উৎকর্ষতা দান করি। কিন্তু আমার কোনও ধারণাই নেই যে সে কি চাইছিল আমার কাছে।

-যদি মি. রডস অসুস্থ হয়–আমি বললাম এবং থেমে গেলাম–কারণ নবাগত লোকটা তখন একটা ভয়ঙ্কর অট্টহাসি হাসল।

সে বলল–আমি আশা করছি কিছু মাসের মধ্যে আমি ভাঙ্গা গলা নিয়ে মারা যাব।

এবং তখন সমস্তই বেরিয়ে আসল যে একটা হত্যার ঘটনা ঘটেছিল বার্নচেষ্টার এটা একটা শহর, সেটা ছিল ২০ মাইল দূরে। আমি ভীত যে আমি এটাতে ঠিক সময়ে যথেষ্ট মনোযোগ দিতে পারিনি। কারণ আমি অনেক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সামিল হয়েছি। আমাদের রাজ্যের নার্সের সম্বন্ধে আমার উত্তেজনা ছিল এবং বাইরের ঘটনা যেটা একটা ভূমিকম্পের মত। একটা হত্যা ঘটেছিল বানচেস্টারে, যদিও এটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল–সেটা আমাকে উত্তেজনা উদ্রেকের পথ করে দিয়েছিল, আমি ভীত যে গ্রামগুলো এরকমই, তবুও, হোটেলে ছুরিবিদ্ধ হওয়া একটা মহিলার ঘটনা পড়ার পর মনে করতে পারি। যদিও আমি তার নাম মনে রাখতে পারিনি। কিন্তু এখন এটা মনে হয় যে এই মহিলাটি ছিল মি. রডসের স্ত্রী–এবং এটা খুব একটা খারাপ ছিল না–তাকে সন্দেহ করা হয়েছিল তার নিজের স্ত্রীকে হত্যা করার জন্য।

সব কিছুই মি. পেথারিক স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বলল। এটা বলে, যদিও করণার এর জুরি একটা অপরিচিত লোকের দ্বারা হত্যার আইনী কাগজগুলি নিয়ে আসল। মি. রডস-এর নির্দিষ্ট কারণ ছিল বিশ্বাস করার যে এক কিংবা দুদিনের মধ্যে তাকে সম্ভবত জেল হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হবে, এবং সে মি. পেথারিকের কাছে এসেছিল এবং তার হাতে ধরা দিয়েছিল।

মি. পেথারিক বলতে লাগল যে তারা বিকেলে স্যার ম্যালকম ওড, কে. সির সঙ্গে পরামর্শ করেছে, তারপরে ব্যাপারটা ট্রায়াল-এ আসল যেটার দায়িত্বে ছিল স্যার ম্যালকম। সুতরাং স্যার ম্যালকমকে খুব সংক্ষিপ্তভাবে বলা হয়েছিল মি. রডসকে প্রতিরোধ করার জন্য।

স্যার ম্যালকম একজন যুবক মানুষ ছিল। মি. পেথারিক বলল সে স্যার ম্যালকম তার পদ্ধতি সম্পর্কে খুব সতর্ক এবং ওয়াকিবহাল এবং সে একটা নিশ্চিত প্রতিরোধও নির্দেশ করেছে। কিন্তু এই প্রতিরোধের জন্য মি. পেথারিক সন্তুষ্ট নয়।

-তুমি দেখ, আমার প্রিয় মহিলা সে বলল, বিশেষজ্ঞের যে মত বলেছিলাম সেটা কলঙ্কিত হয়েছে। মি. ম্যালকমকে একটা ঘটনা দাও এবং সে একমাত্র একটা লক্ষ্য দেখবে–যে প্রতিরোধটা সবাই পছন্দ করে। কিন্তু সবথেকে ভালো প্রতিরোধ মূল লক্ষ্যটাকে প্রতিরোধ করতে পারে এবং অবজ্ঞা করতে পারে এটা কোন কৈফিয়ত দিতে হবে না যে সত্যিকারে কি ঘটেছিল।

তারপর সে কিছু দয়াপূর্ণ এবং তোমোদজনক বিষয় বলতে লাগল। এই বিষয়গুলো ছিল আমার নিজের সূক্ষ্ম বিচারবুদ্ধি এবং বিচার এবং মানুষের প্রকৃতি সম্বন্ধে আমার জ্ঞান। তারপরে আমি অনুমতি চাইলাম আমাকে একটা গল্প বলার জন্য এই বিষয়ে যাতে আমি তাদেরকে কোনও ব্যাখ্যা প্রস্তাব করতে পারি।

আমি দেখলাম মি. রডস আমার কোনও ব্যবহারে সন্দেহ প্রকাশ করছে। এবং সে খুব বিরক্তও বটে এখানে তাকে আনার জন্য। কিন্তু মি. পেথারিক তার প্রতি কোনও লক্ষ্য করল না এবং তারপরে আমাকে মার্চ মাসের ৮ তারিখ রাতে কী ঘটনা ঘটেছিল আমাকে তা বলতে উদগ্রীব হল।

মি. এবং মিসেস রডস বানচেস্টারের ক্রাউন হোটেলে থাকতে শুরু করেছিল। মিসেস রডস (সুতরাং আমি মি. পেথারিকের সতর্কতাপূর্ণ ভাষা থেকে সংগ্রহ করেছিলাম)। ছিল সম্ভবত একটা আতঙ্কে ছায়া, সে তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে এবং তার স্বামী পার্শ্ববর্তী ঘর যেটাতে দরজা ছিল, সেটা অধিকারে রেখেছিল। মি. রডস প্রাগঐতিহাসিক বই লিখছিল, এবং সে পার্শ্ববর্তী একটা ঘরে ছিল কাজের জন্য। এগারটায় সময় সে তার কাগজগুলো গুছিয়ে ফেলল এবং বিছানায় যাবার জন্য প্রস্তুত হল। এটা করার আগে, সে তার স্ত্রীর ঘরে একবার টু মারল যাতে সে নিশ্চিত হয় যে, সে যা চেয়েছিল সেখানে কিছুই নেই। সে ইলেকট্রিক লাইট দেখতে পেল এবং দেখল তার স্ত্রী ছুরিকাঘাত হয়ে পড়ে আছে। সে অতন্তপক্ষে একঘণ্টা আগে মারা গেছে–বা সম্ভবত একটু বেশি হবে।

এই অভিপ্রায়গুলি করা হয়েছিল, মি. রডের ঘরটা যেটা বারান্দায় সঙ্গে মিশেছে, সেখানে আর একটা দরজা ছিল, এই দরজাটা বন্ধ ছিল এবং ভেতর থেকে বন্ধ করা ছিল, ঘরের একটা মাত্র দরজা বন্ধ ছিল এবং চাবি দিয়ে আটকানো ছিল, মি. রডের মতে, যে ঘরে সে বসত সেখানে কেউ প্রবেশ করতে পারত না একমাত্র তার ঘরের দাসী যে তার জন্য গরম জল ভর্তি বোতল নিয়ে আসত। আঘাতের মধ্যে একটা অস্ত্র, ছুরি দেখা গেল যেটা মি. রডসের ড্রেসিং টেবিল-এর উপর রাখা ছিল। সে এটাকে কাগজের ছুরি হিসাবে ব্যবহার করত। সেখানে কোনও হাতের আঙ্গুলের ছাপ নেই।

পরিস্থিতিটা আরো উত্তপ্ত হয়ে গেল এটার পর। সে ঘরে কেউ প্রবেশ করতে পারত না। একমাত্র মি. রডস এবং তার পরিচারিকা প্রবেশ করত।

আমি পরিচারিকাকে জিজ্ঞাসা করলাম।

-এটা হল আমার অনুসন্ধানের শুরু, মি. পেথারিক বলল, মেরি হিল একজন স্থানীয় মহিলা, সে ক্রাউণ এ পরিচারিকা হিসাবে ১০ বছর ধরে কাজ করছে, সেখানে কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি যে সে কেন তার ঘরের অতিথিকে আক্রমণ করতে গেল। সে সত্যিকারের অত্যধিকভাবে বোকা ছিল এবং খুব একটা প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ছিল না, তার গল্পটা কখনই পরিবর্তন হয়নি, সে মিসেস রডসএর জন্য গরম জলের বোতল নিয়ে এসেছিল এবং বলল সে মহিলাটি তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ছিল–এটা মনে হল যে সে ঘুমের ঘোরে আছে।

সত্যি বলতে কি, আমি বিশ্বাস করতে পারি না, এবং আমি নিশ্চিত যে, কোন জুরিই বিশ্বাস করবে না, যে সে অপরাধ করেছে।

মি. পেথারিক কিছু অতিরিক্ত খুঁটিনাটি উল্লেখ করতে লাগল। ক্রাউন হোটেলের সিঁড়ির মাথায় সেখানে একটা ছোট্ট লাউঞ্জ ছিল। সেখানে লোকেরা বসত এবং কফি খেত। একটা রাস্তা ডানদিকে গেছে এবং এর শেষ দরজাটা, মি. রডসদের দরজাও বটে। তারপরে গলিটা একটু বেশি ডানদিকে ঘুরে গেছে এবং কোণাটার কাছে যে দরজাটা আছে সেটা মি. রডসের ঘরে ঢোকার প্রথম দরজা। প্রত্যক্ষদর্শীরা এই দুটি দরজা খুব স্পষ্টভাবে দেখতে পাবে, প্রথম দরজা–যেটা মি. রডসদের ঘরের দিকে, সেটাকে আমি A বলে বলেছিলাম, সেটা চারজন লোক ছিল দুজন ব্যবসায়ী ভ্রমণকারী এবং দুজন বয়স্ক বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী যারা কফি খাচ্ছিল। তাদের মতে কেউই A দরজার বাইরে কিংবা ভিতরে প্রবেশ করেনি, একমাত্র মি. রডসরা ছাড়া এবং দাসী চাকর ছাড়া। এবং B গলিতে অন্য একটা দরজা ছিল। যেখানে একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কাজ করছিল এবং সে শপথ করে বলল যে, কেউই বামদিকের B দরজায় প্রবেশ করতে পারবে না একমাত্র তাদের চাকর ছাড়া।

এটা সত্যিই একটা আগ্রহান্বিত এবং আকাঙ্ক্ষামূলক ঘটনা ছিল, দরজার সম্মুখে এমনভাবে তালা বন্ধ করা ছিল যে, মনে হল মি. রডস তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। কিন্তু আমি দেখলাম মি. পেথারিক তার ক্লাইন্টের নির্দোষতা সম্বন্ধে খুব বেশি আস্থাপূর্ণ। এছাড়া মি. পেথারিক একজন খুব তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও বটে।

মি. রডস একটু ইতস্তত করে গল্প বলল। গল্পটা ছিল কিছু মহিলাদের নিয়ে যারা ভীতিপূর্বক চিঠি লিখে তার স্ত্রীকে পাঠিয়েছে। তার গল্পটা, আমার কাছে একটি তেমন একটা দৃঢ়তাপূর্ণ ছিল না, মি. পেথারিকের অনুরোধে সে বলতে লাগল।

–স্পষ্টভাবে, সে বলল–আমি কখনও এটা বিশ্বাস করি না। আমি ভাবি অ্যামি সমস্তটাই করে দিয়েছে।

মিসেস রডস, আমার দেখা মিথ্যুকদের মধ্যে একজন। সে জীবনের সমস্ত কিছুই গুছিয়ে এগিয়ে গেছে যেটা সে হাতের কাছে পেয়েছে। তার রোমাঞ্চকর ঘটনার সম্পূর্ণটা। এবং তার নিজস্ব মতো, যে তার সঙ্গে একবছরের মধ্যে ঘটেছিল সেটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। যদি সে কিছুটা কলার ছোবড়া ফেলে দিত তাহলে সে মৃত্যু থেকে হয়ত রক্ষা পেত, যদি একটা ল্যাম্পের ছায়া আগুন ধরাত। তাহলে সে জ্বলন্ত বাড়িটা থেকে মুক্তি পেতে পারত। যখন তার এই বিপদজনক পরিস্থিতি চলছে, তার স্বামী তার কথার কোন গুরুত্বই দেয়নি। তার গল্পটা মনে হয়েছিল এটা এমন একটা ঘটনা যেটার সঙ্গে একটা ঘটনার তুলনা করা যেতে পারে। যেখানে একজন মহিলার বাচ্চা মোটর দুর্ঘটনায় আঘাত পেয়েছে এবং সে সেই মহিলার প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ-ঠিক আছে–কিন্তু মি. রডস-এর এই দিকে লক্ষ্য করেনি।

ঘটনাটা ঘটেছিল তার বিয়ের আগে এবং যদিও মহিলাটি তাকে বিধি পড়িয়ে শুনিয়েছিল, যেটা উন্নত ভাষায় লেখা ছিল। তখন সে মহিলাকে সন্দেহ করল এগুলির পেছনে তার হাত রয়েছে কিনা সেই এরকম ঘটনা এর আগে একবার কিংবা দুবার করেছে, সে একজন উদ্ভট প্রকৃতির মহিলা, সে সবসময়ই উত্তেজনা পেতে পছন্দ করে।

এখন, সবকিছুই আমার কাছে খুব স্বাভাবিক মনে হচ্ছে–বাস্তবিকপক্ষে আমাদের একজন যুবতী মহিলা গ্রামে আছে, সেও এইরকম ঘটনা ঘটিয়েছিল, এই সমস্ত লোকেদের বিপদ সে যখন কোনকিছু অত্যাধুনিকভাবে ঘটে তাদের কাছে, তখন কেউই বিশ্বাস করে না যে তারা সত্যি কথা বলছে। এটা আমার কাছে মনে হল যে এই ব্যাপারে কী ঘটেছিল। পুলিশ, যাদেরকে আমি জড়ো করেছিলাম, তারা বিশ্বাস করল যে মি. রিডস তার অকার্যমূলক গল্পটা তৈরি করছে যাতে সে তার উপর সন্দেহটাকে সরিয়ে ফেলতে পারে।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম সেখানে কি কিছু মহিলা তারা নিজেরাই কি হোটেলে বাস করছিল। এটা মনে হল যে দুজন থাকত–একজন হল মিসেস গ্ৰাণবি, যে ছিল ইঙ্গো ভারতীয় বিপত্নীক, এবং আর একজন ছিল মিস ক্যারিউমিয়ারস, যে ছিল ঘোড়ার মত কুমারী। যে তার g-এর টাকে ফেলে দিয়েছিল, মি. পেথারিকের যে অতি সূক্ষ্ম অনুসন্ধানটা ব্যর্থ হয়েছে অবৈধভাবে কাউকে প্রবেশ করানোর জন্য, যারা এই অপরাধটা দেখেছে কিংবা যাদের এই অপরাধ সম্বন্ধে কোন যোগাযোগ নেই, আমি তাদেরকে বললাম তাদের ব্যক্তিগত আভাসগুলি দিতে। সে বলল মিসেস গ্রানবির লাল রঙের চুল আছে যেটা অগোছালো। এবং তার বয়স পঞ্চাশ বছর। তার কাপড়গুলো চিত্রবৎ ছিল। সেটা দেশীয় সিল্ক দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল, মিস ক্যারুথারাস-এর বয়স চল্লিশ বছরের মত। তার কোঁকড়ানো চুল ছিল ছেলেদের মত এবং ছেলেদের মত কোট এবং স্কার্ট পরেছিল।

–প্রিয় আমি–আমি বললাম যেটা এটাকে খুব কঠিন করে তুলেছে। মি. পেথারিক অনুসন্ধানপূর্বক তাকাল আমার দিকে। কিন্তু আমি সেই মুহূর্তে কিছু বলতে চাই নি সুতরাং আমি জিজ্ঞাসা করলাম স্যার ম্যালকম ওল্ড কী বলেছে।

স্যার ম্যালকম; তার উওধিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার দ্বন্ধ ডাকাতে খুব সক্ষম ছিল বলে মনে হয় এবং সে প্রস্তুত ছিল কিভাবে আঙ্গুলের চিহ্নের সমস্যাকে দূর করা যায়, আমি মি. রডসকে জিজ্ঞাসা করলাম সে কি ভাবছে এবং সে বলল যে সমস্ত ডাক্তাররাই বোকা কিন্তু সে বিশ্বাস করল না যে তার স্ত্রী নিজে নিজেকে হত্যা করেছে, সে এই রকম ধরনের মহিলাই নয়-সে খুব সহজভাবে বলল এবং আমি তাকে বিশ্বাস করেছিলাম উন্নত লোকেরা কখনই আত্মঘাতী হয় না।

আমি এক মিনিট ধরে ভাবলাম এবং তারপরে জিজ্ঞাসা করলাম। মি. রডস-এর ঘরটা কি বারান্দার দিকে, রাস্তা থেকে দেখা যায়? মি. রডস না বলল–এবং বলল সেখানে একটা হল ছিল এবং একটা বাথরুম এবং স্নানাগার ছিল। এটা ছিল শোয়ার ঘর এবং হলঘরের দরজা। সেটা বন্ধ ছিল এবং ভেতর থেকে তালা বন্ধ ছিল।

এই ক্ষেত্রে–আমি বললাম পুরো ঘটনাটা স্মরণীয় এবং সহজ বলে মনে হচ্ছে।

সত্যিই, তুমি জান এটা কে করেছিল–এটাই ছিল সবথেকে সহজ ঘটনা। পৃথিবীতে কেউই এটাকে এইভাবে দেখেনি।

মি. পেথারিক এবং মি. রডস দুজনেই আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকাল যাতে আমি কিছুটা হতবাক হয়ে গেলাম।

–সম্ভবত–মি. রডস বলল, মিস মার্পল এই কঠিন অনুভবগুলো উপলব্ধিজনক বলে ভাবে নি।

–হ্যাঁ, আমি বললাম, আমি ভাবি আমার আছে। সেখানে চারটে সম্ভাব্য কারণ ছিল, এটা হতে পারে যে মিসেস রডস তার স্বামীর দ্বারা খুন হয়েছিল কিংবা তার পরিচারিকার দ্বারা, কিংবা নিজে আত্মঘাতী হয়েছিল, কিংবা বাইরের কোনও লোক তাকে মেরে ফেলেছিল যাকে কেউ দেখতে পায়নি, সে কখন প্রবেশ করেছিল এবং কখন বেরিয়ে গেছিল।

–এটা অসম্ভব, মি. রডস বলে উঠল। সে বলল–কেউই আমার ঘরে প্রবেশ করেনি আমার অলক্ষ্যে, এবং যদিও কেউ ব্যবস্থা করে আমার স্ত্রীর ঘরে ঢুকত, তাহলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি নিশ্চয়ই তাকে দেখতে পেত। এবং সেই শয়তানটা কখনই বন্ধ দরজার ভেতরে প্রবেশ করতে পারত না।

মি. পেথারিক আমার দিকে তাকাল এবং বলল–ঠিক আছে, মিস মার্পল সে খুব উৎসাহ সহকারে বলল,

–আমার পছন্দ করা উচিত ছিল, আমি বললাম একটা প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করতে চাই মি. রডস-এর পরিচারিকাকে দেখতে কেমন ছিল?

সে বলল–সে নিশ্চিত নয়–সে ছিল লম্বা, সে ভেবেছিল, সে মনে করতে পারল না সে ফর্সা ছিল কি কালো ছিল। আমি মি. পেরিকের দিকে ঘুরে তাকালাম এবং একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলাম।

সে বলল–পরিচারিকা মাঝারি উচ্চতার ছিল, তার চুলগুলো খুব সুন্দর ছিল এবং তার চোখগুলো ছিল নীলরঙের এবং খুবই বেশি রঙে পরিপূর্ণ ছিল।

মি, রডস বলল আমার থেকে তুমি ভাল লক্ষ্য করেছ পেথারিক?

আমি অসম্মত হওয়ার জন্য ঝুঁকি নিলাম, আমি তারপর মি. রডসকে জিজ্ঞাসা করলাম–সে কি আমার ঘরে পরিচারিকার বর্ণনা করতে পারবে? কারণ সে কিংবা মি. পেথারিক কেউই এটা করতে পারবে না।

-তুমি কি জান না এটা কি বোঝায়–আমি বললাম, তোমরা দুজনেই তোমাদের দুজনের বিষয়ে নিয়ে এসেছ এবং যে লোকটা তোমাদের প্রবেশ করতে দিয়েছিল, সে ছিল একজন পার্লারের পরিচারিকা, মি. রডসের ক্ষেত্রেও হোটেলে একই ঘটনা ঘটেছিল। সে তার পোশাক এবং উপরে আচ্ছাদন দেওয়ার জামা দেখল। তার কাজ দেখে ভীষণ অনুরক্ত হয়ে গেল। কিন্তু মি. পেথারিক এই মহিলার সঙ্গে আলাপচারিতা করেছিল একটু আলাদা পদ্ধতিতে সে মহিলাকে দেখেছিল একজন ব্যক্তি হিসাবে।

সেইজন্যই যে মহিলা হত্যা করেছিল, তার হিসেব রাখা হল।

যেহেতু তারা দেখতে পেয়ে ছিল না, তাই আমাকে বর্ণনা করতে হল।

–আমি মনে করি–আমি বললাম, যে এটা কিভাবে গেছিল। পরিচারিকাটি A দরজাতে এসেছিল। তারপরে মি. রডসের ঘর অতিক্রম করে মিসেস রডসের ঘরে পৌঁছেছিল গরম জলের বোতল নিয়ে এবং তারপর B গলির মধ্যে দিয়ে হলঘরেতে চলে গিয়েছিল। আমাদের হত্যাকারীকে ডাকা হয় X বলে, সে B দরজায় এসে পৌঁছল। হলঘরের ভেতর দিয়ে, তারপরে নিজেকে লুকিয়ে রাখল, একটা নিশ্চিত কক্ষে এবং তারপর অপেক্ষা করছিল যতক্ষণ না পরিচারিকা বাইরে যায়, তারপরে সে মিসেস রডসের ঘরে প্রবেশ করল, তারপর ড্রোসিং টেবিল থেকে সরু ফলাযুক্ত ছুরি নিল (এটা দেখে মনে হল যে সে এর আগে এই ঘরটায় পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চালিয়েছে)। তারপরে সে ছুরি নিয়ে বিছানার কাছে গেল। তারপর ঘুমন্ত মহিলাকে ছুরিবিদ্ধ করল। তারপর ছুরির হাতলটা মুছে ফেলল, তারপর ঘরটা বন্ধ করল এবং পালাতে গেল যেদিক দিয়ে সে প্রবেশ করেছিল। এবং তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেল যেখানে মি. রডস কাজ করছিল।

মি. রডস চিৎকার করে উঠল–কিন্তু আমি তাকে দেখতে পেতাম, কিংবা ইলেকট্রিক মিস্ত্রি তাকে দেখতে পেত, সে যখন চলে যাচ্ছিল।

-না, আমি বললাম, এখানেই তুমি ভুল করছ, তুমি তাকে মোটেই দেখনি, কারণ সে পরিচারিকার পোশাকেও ছিল না। আমি একটু ভেবে তারপরে বললাম–তুমি তোমার কাজে ব্যস্ত ছিলে–তুমি তোমার চোখের লেজুড় দিয়ে কিভাবে দেখবে যে একজন পরিচারিকা ঘরের মধ্যে ঢুকেছিল। এবং তোমার স্ত্রীর ঘরে প্রবেশ করেছিল। তারপরে আবার ফিরে এসেছিল এবং তারপরে চলে গিয়েছিল। এই একই পোশাক–কিন্তু একই মহিলা ছিল না। সেইজন্যই লোকজন যারা কফি খাচ্ছিল তারা দেখেছে যে একজন পরিচারিকা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেছে এবং ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। ইলেকট্রিক মিস্ত্রিও একই কাজ করেছিল আমি হলফ করে বলতে পারি যদি পরিচারিকাটি সুন্দরী হত, তাহলে যে কোনও ভদ্রলোক তাকে দেখত–মানুষের প্রকৃতিই হল এরকম–কিন্তু যদি সে সাধারণ মধ্যবয়স্কা মহিলা হয়–ঠিক আছে–এটা পরিচারিকারই পোশাক হবে যেটা তুমি দেখেছ–শুধুমাত্র মহিলা নিজে নয়।

মি. রডস কেঁদে বলল–সে কে ছিল?

-ঠিক আছে, আমি বলেছিলাম–যেটা খুব কঠিন হতে চলেছে, এটা নিশ্চয়ই মিসেস গ্রানবি অথবা মিস ক্যারিউথারস হবে। মিসেস গ্রানবি এমনভাবে বলছিল যেন সে পরচুলা পরেছিল–সুতরাং সে তার নিজের চুলটাকে পরিচারিকার চুল হিসাবে পরেছিল।

অন্যদিকে মিস ক্যারিউথারস তার ছেলেদের মত মাথা নিয়ে সহজে একটা পরচুলা পরতে পারত তার দৃশ্যটাকে উপস্থাপনা করার জন্য আমি হলফ করে বলতে পারি যে তুমি তখন খুব সহজে বুঝতে পারতে সে কে ছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে এটা মিস ক্যারিউথারস ছিল।

এবং সত্যিই, আমার প্রিয়রা, এটা হল এই গল্পের সমাপ্তি, ক্যারিউথারস ছিল মিথ্যা নাম, কিন্তু সে প্রকৃতপক্ষে একজন মহিলাই ছিল। তার পরিবারের মধ্যে পাগলামি ছিল। মিসেস রডস, যে একজন বেপরোয়া এবং বিপজ্জনক চালক ছিল, সে তার ছোট্ট মেয়েকে চাপা দিয়ে দিয়েছিল, এর ফলে ছোট্ট মেয়েটার মাথা কাটা গেছিল। সে তার পাগলামিটা চালাকি করে লুকিয়ে রেখেছিল। ব্যতিক্রম ছিল তার পাগলামি চিঠিগুলি। তার ইচ্ছাপূর্বক শিকারদের প্রতি সে তাকে কিছুক্ষণ ধরে অনুসরণ করছিল এবং সে তার পরিকল্পনা খুব চালাকির সঙ্গে পরিচালিত করেছিল। মিথ্যা চুল এবং পরিচারিকার পোশাক যেটা সে পার্সেলে করে পাঠিয়েছিল পরের দিন সকালে। যখন সত্যিটা উঘাটিত হল সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল এবং সত্যিটা স্বীকার করল। সবথেকে খারাপ দিক হল এই সে এখন ব্রডমুরে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন। কিন্তু এটা একটা খুব চালাকিপূর্ণ পরিকল্পনামূলক অপরাধ ছিল।

মি. পেথারিক পরে আমার কাছে এসেছিল এবং সঙ্গে এনেছিল আমার জন্য একটা সুন্দর চিঠি, মি. রডস-এর কাছ থেকে নিয়ে এসেছিল–সত্যিই এটা আমাকে লজ্জায় লাল করেছে। তারপর আমার পুরনো বন্ধু আমাকে বলল–একটা জিনিস-কেন তুমি ভাব যে এটা বেশি পছন্দসই কারথিউথাসের ক্ষেত্রে গ্রানবি থেকেও? তুমি কখনই তাদেরকে দেখনি।

-ঠিক আছে, আমি বলেছি, এটা ছিল g-এর। তুমি বলেছিলে সে তার g টা ফেলে দিয়েছিল। এটা অনেক শিকারী লোকের দ্বারা বইতে করা হয়েছিল। কিন্তু আমি জানি না। অনেক লোক যারা এটা সত্যিকারের করেছিল–এবং নিশ্চিতভাবে কেউই ৬০ বছরের নীচে নয়, তুমি বলেছিলে এই মহিলার বয়স চল্লিশ। এই ফেলে দেওয়া g গুলো আমার কাছে একজন মহিলার মত লাগছে যে একটা অংশ সম্পাদন করেছিল এবং আরো বেশি করে করেছিল।

আমি বলতে পারব না মি. পেথারিক এই বিষয়ে কী বলেছিল–কিন্তু সে খুব উপদেশ দিত–কিন্তু আমার কিছুই করার ছিল না, তাই আমাকে নিজের জন্য আনন্দিত হতে হয়েছিল।

এবং এটা খুবই অসাধারণ ছিল কিভাবে জিনিসগুলো বিশ্বের সবথেকে ভালো বিষয় উৎপন্ন করেছিল, মি. রডস পুনরায় বিয়ে করেছে একজন সুন্দরী, সহানুভূতিশীল মেয়েকে–এবং তাদের একাট ছোট্ট বাচ্চা আছে এবং–তুমি কী ভাব? তারা আমাকে বলেছিল। এটা তাদের জন্য ভালো নয় কি?

এখন অমি আশা করি যে তুমি ভাব না যে আমি অনেক পথ অতিক্রম করে আসছি।

৭. গ্রিনসহ’স ফোল্লি

গ্রিনসহ’স ফোল্লি

দুজন মানুষ কোথায় জঙ্গলের মধ্যে ঘুরছিল।

-ঠিক আছে, তুমি ওখানে-রেমন্ড ওয়েস্ট বলল, ঠিক আছে।

হোরাস বিল্ডলার একটা গভীর শ্বাস ফেলল।

–কিন্তু আমার প্রিয়, সে কেঁদে বলল, কতটা বিস্ময়কর, তার স্বরটা খুব বেশি হয়ে গেল সৌন্দর্য শাস্ত্রের আনন্দে, তারপরে সশ্রদ্ধ ভয়ে স্বরটা আরও গম্ভীর হয়ে গেল। এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। এই বিশ্বজগতের বাইরে এটা সত্যিই একটা ভালো ঘটনা।

আমি মনে করি তুমি এটা পছন্দ করেছ,–রেমন্ড ওয়েস্ট বলল সন্তোষজনক ভাবে।

পছন্দ কর? আমার প্রিয়–হোরানের এই কথাটা ব্যর্থ হল। সে তার ক্যামেরা খুলল এবং ব্যস্ত ছিল।

এটা আমার সংগ্রহের একটা রত্ন হয়ে থাকবে–সে আনন্দের সঙ্গে বলল। আমি মনে করি, তুমি কি মনে কর না, যে এটা সত্যিই আনন্দের কিছু মনস্ট্রিসিটিস সংগ্রহ করা? সাত বছর আগে স্নানের সময় একদিন রাত্রে আমার মনে এই ধারণা এসেছিল। আমার শেষের রত্নটা হচ্ছে, যেটা আমি ক্যাম্পো সেন্টোতে। জেনোয়াতে পেয়েছিলাম, আমি মনে করি যে এটা আমাকে প্রহার করে, এটাকে কী বলে?

–আমার ন্যূনতম ধারণা নেই এটার সম্বন্ধে, রেমন্ড বলল।

–আমি মনে করি, এটা একটা নাম পেয়েছে।

–হতে পারে। কিন্তু ঘটনাটা হল এটা অন্য কিছুর মত এতটা গুরুত্ব পায়নি। কিন্তু বেশি গুরুত্ব পেয়েছে গ্রিনসর মূর্খর্তা।

-গ্রিনস মানুষ হওয়ার জন্য এটা তৈরি করেছে?

-হ্যাঁ, এটা তৈরি করা হয়েছিল ছিয়াশি কিংবা সত্তর কিংবা ওই সময়ে, সেটার সময় স্নায়ীর সাফল্যের ঘটনা ঘটেছিল। খালি পায়ে যে ছেলে চলাফেরা করত সে অনেক সম্পদের মালিক হয়ে, স্থানীয় ধারণাকে ভাগ করা হয়েছিল যে কেন সে এই বাড়িটা তৈরী করেছিল। এটা কি প্রাচুর্যের উদাহরণ না তার আস্থাভাজনদের অনুপ্রাণিত করার জন্য এই বাড়িটা তৈরি করেছিল। যদি পরেরটা সঠিক হয় তাহলে কিন্তু তার আস্থাভাজনেরা অনুপ্রাণিত হয়নি, তাই সে হয়ত দেউলিয়া হয়ে গেছিল কিংবা পরের কাজটার প্রতি অগ্রসর হয়েছিল। তারপর নামটা এসেছিল গ্রিনসর মূর্খ।

হোরাসের ক্যামেরায় একাট আওয়াজ হল সেখানে, সে বলল সন্তোষজনক সুরে আমাকে স্মরণ করাও তোমাকে ৩১০ নম্বরটা দেখাতে আমার সংগ্রহ থেকে। এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি এবং এটা ইতালিয়দের রীতিনীতি মেনে করা হয়েছিল, সে তারপর ঘরটার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি বুঝতে পারি না কিভাবে মি. গ্রিনস এটা ভেবেছিল।

এটা কিছু ক্ষেত্রে স্পষ্টও বটে, রেমন্ড বলল, সে লয়ার এর চেটিয়াক্স পরিদর্শন করেছে, তুমি কি সেটা মনে কর না? ওই চূড়াগুলো এবং তারপর, দুর্ভাগ্যভাবে, সে ওরিয়েন্ট ভ্রমণে গিয়েছিল। তাজের প্রভাব সত্যিই স্মরণীয় হয়ে থাকার মত। আমি বরং মুরিস উইং পছন্দ করি। সে বলল, ভেনেসিয়ান প্রাসাদের লক্ষণগুলো বটে।

একজন অবাক হয়ে যাবে এটা ভেবে যে সে কিভাবে একজন স্থপতিকারীকে নিয়ে এসেছিল এই পুরো ভাবনাটাকে বাস্তবায়িত করার জন্য।

রেমন্ড তার কাঁধ ঝাঁকুনি দিল।

–এটার সম্বন্ধে কোনও সমস্যা নেই, আমি প্রত্যাশা করি। সে বলল, সম্ভবত স্থপতিকারী একটা ভালো উপার্জন করে সরে গেছে। যখন গ্রিনস দেউলিয়া হয়ে গেছে।

–আমরা কি এটা অন্য দিক থেকে দেখতে পারি? জোরাস জিজ্ঞাসা করল, অথবা আমরা কি অনধিকার প্রবেশ করছি!

আমরা সত্যিই অনধিকার প্রবেশ করছি, রেমন্ড বলল, কিন্তু আমি মনে করি না এটা কোন ব্যাপার ঘটাবে।

সে ঘরের কোণার দিকে তাকাল এবং হোরাস তাকে অনুসরণ করতে লাগল

–এখানে কে বাস করে, আমার প্রিয়? মাতৃপিতৃহীন লোক না ছুটিতে যারা পরিদর্শনে আসে? এটা একটা বিদ্যালয় হতে পারে, এটা কোন খেলার মাঠ কিংবা তৎপরতার দক্ষতা হতে পারে না।

ওহ, একজন গ্রিনস এখানে এখনও থাকে,-রেমন্ড তার কাঁধ চাপড়ে বলল, এই ঘরটা এখনও ধ্বংস হয়ে যায়নি। ওল্ড গ্রিনস-এর ছেলে এই ঘরটার উত্তরাধিকারী; সে একটু কৃপণ স্বভাবেরও বটে, এবং এই কোণে থাকত। কখনই সে একটা টাকাও খরচ করত না সম্ভবত তাদের খরচ করার মত কোন টাকা ছিল না। তার মেয়ে এখন এখানে বাস করে। বৃদ্ধা, মহিলাটি-খুব পাগলের মত।

যখন সে রেমন্ডকে বলছিল তখন সে নিজেকে অভিনন্দন জানাচ্ছিল গ্রিনসর মূর্খতা ভেবে, যেটা মনে হয়েছিল তার অতিথিকে আমোদ-প্রমোদ করানো, সাহিত্যিক নিন্দুকরা সবসময় তাদের নিজেদেরকে ভবিষ্যৎবাণী করেছে যেহেতু তারা সপ্তাহের ছুটির দিনটা শহরে কাটানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে, এবং তারা কখনই শহরটাকে ক্লান্তিকর ভাবত না যখন তারা সেখানে আসত। আগামীকাল সেখানে রবিবারের পেপারগুলি আসবে এবং তারজন্য আজকে রেমন্ড ওয়েস্ট নিজেকে অভিনন্দন জানিয়েছে। সে প্রস্তাব দিয়েছে যে সে গ্রিনসর ফোল্লিতে যাবে হোরাস বিল্ডসারসের মন্সট্রিসিটিস এর চেনা সংগ্রহগুলোকে সমৃদ্ধ করার জন্য।

তারপর তারা ঘরের কোণার দিকে তাদের দৃষ্টি ফেরাল এবং তারা একটা অবহেলিত সরুগলির মধ্যে আসল। এটার এক কোণে একটা কৃত্রিম অমসৃণ পাথরের স্তূপ ছিল, এবং সেই পাথরের তলায় একটা চেহারা ছিল যেটাকে দেখানো হয়েছে হোরাস রেমন্ডকে আনন্দের সহিত জড়িয়ে ধরেছিল।

আমার প্রিয়, সে চিৎকার করে উঠল। তুমি কি জান সে কি পেয়েছে? একটা চিত্রিত পোশাক। এই পোশাকটা দেখতে বাড়ির পরিচারিকার মত। যেমন সেখানে অনেক পরিচারিকা থাকত।

আমার সবচেয়ে ভালো রোমহর্ষকর অভিজ্ঞতা হচ্ছে যখন আমি এই ঘরটাতে বাস করতাম এবং এই শহরে। আমি তখন ছোট্ট একটা ছেলে ছিলাম। এই ঘরটাতে সত্যি একটা পরিচারিকা ছিল যে সকালে ডেকে নিত। তার পরনে ছিল ছাপা পোশাক এবং একটা চুটি, সত্যি তার একটি চুটি ছিল। যাইহোক সে একজন সত্যিকারের পরিচারিকা ছিল এবং সে বড় পিতলের পাত্রে গরম জল নিয়ে আসত। তখন আমরা কতটা আনন্দদায়ক দিন কাটাতাম।

তার পোশাকে যে চেহারাটা ছিল সেটা খাড়া অবস্থায় ছিল এবং তারপর এটা তাদের দিকে ঘরে গিয়েছিল, তার চেহারাটা দেখে চমকে যাওয়ার মত অবস্থা হত, অগোছালো চুলগুলো তার কাঁধের উপর পড়ত। একটা চুটি যেটা দেখতে লাগত টুপির মত, এই চুটি যেটা ইটালির ঘোড়াগুলো পরত। যেটা তার মাথায় ঠাসাঠাসি হয়ে থাকত। রঙিন রঙের যে পোশাক সে পরত সেটা তার গোড়ালি পর্যন্ত চলে আসত। আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সে এই পোশাক পরত, তার মুখটা ততটা পরিষ্কার ছিল না, তার তীক্ষ্ণ সুবুদ্ধিসম্পন্ন চোখগুলো তার দিকে কিছু জ্ঞাপন করছিল।

আমি অবশ্যই অপরাধ স্বীকার করব এইভাবে অনধিকার প্রবেশের জন্য মিস গ্রিনস-রেমন্ড ওয়েস্ট বলল, যখন সে তারদিকে এগিয়ে গেল, কিন্তু মি. হোরাস বিল্টলারকে আমার সঙ্গে থাকছে?

হোরাস তার মাথা নিচু করল এবং টুপিটা সরিয়ে নিল।

এটা খুবই আগ্রহের–পুরনো ইতিহাস এবং সুন্দর প্রাসাদ।

রেমন্ড ওয়েস্ট খুব শান্ত হয়ে একজন সুপরিচিত লেখক সম্বন্ধে বলতে লাগল, সে জানে যে রেমন্ড ওয়েস্ট একজন খ্যাতনামা লোক ছিল, সে সবজায়গায় ঝুঁকি নিতে পারে, কিন্তু অন্যরা সেটা পারে না।

দুমড়ে মুচড়ে মিস গ্রিনস দেখল তার পিছনে কিছু দাঁতখিচানো আধিক্য চলছে।

এটা একটা সুন্দর বাড়ি সে প্রশংসনীয় সুরে বলল, আমার দাদু এটা তৈরী করেছিল, আমার সময়ের আগে, অবশ্যই, এটা বর্ণনা করা হয়েছিল যে সে তার প্রতিবেশীদের বিঘ্নীত করতে চেয়েছিল।

আমি বলব সে এটা করেছিল, ম্যাডাম, হোরাস বিল্ডলার বলল।

-মি. বিল্ডলার একজন, সুপরিচিত সাহিত্যমনস্ক নিন্দুক,রেমন্ড ওয়েস্ট বলল। মিস গ্রিনসর কোন শ্রদ্ধা নেই সাহিত্যিক সমালোচকদের জন্য, সে কোন অনুভূতি দেখাল না।

–আমি এটা ভাবি, মিস গ্রিনস বলল, যখন সে এই ঘরটার–বর্ণনা দিচ্ছিল। সে বলল এটা একটা স্মৃতিসৌধ আমার দাদুর প্রতিভার। তোমরা বোকা লোকগুলো এখানে এস, এবং জিজ্ঞাসা কর কেন আমি এটা বিক্রী করিনি এবং কেন আমি ফ্ল্যাটে থাকার ব্যবস্থা করিনি। আমি ফ্ল্যাটে গিয়ে কী করব? এটা আমার ঘর তাই আমি এখানে থাকি, মিস গ্রিনস বলল।

মিস গ্রিনস বলল তুমি কি এখানে সবসময় বসবাস করছ, সে অতীত ঘটনা চিন্তা করে বলল। সেখানে আমরা তিনজন থাকতাম, লরা যাজককে বিয়ে করেছিল, বাবা তাকে কোন টাকা দিয়েছিল না, এবং যাজকদের অবিশ্বজনীন হওয়া উচিত, মিস গ্রিনস মারা গিয়েছিল তার একটা বাচ্চাকে রেখে। বাচ্চাটাও মারা গিয়েছিল। সেটি তার ঘোড়ার সওয়ার শিক্ষকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল। বাবা তাকে তার সম্পত্তি থেকে বিচ্ছেদ করেছিল। হার ফ্লেচার খুব সুন্দর দেখতে ছিল, কিন্তু কোন কাজের ছিল না, মনে কর না সেটি তার সঙ্গে সুখে ছিল। যাইহোক, সে বেশিদিন বেঁচেছিল না। তাদের একটা ছেলে ছিল, সে আমাকে কখনও কখনও লিখত, কিন্তু সে গ্রিনস ছিল না, আমি গ্রিনস বাবাধরের শেষ উত্তরাধিকারী। মিস গ্রিনস তার কাঁধ ঝাঁকাল গর্বের সঙ্গে এবং তারপর আবার এবড়ো খেবড়ো টুপিটাকে ঠিকঠাক করে নিল, তারপর ঘুরে সে তীক্ষ্ণভাবে বলল।

হ্যাঁ, মিসেস ক্রসওয়েল, এটা কি?

ঘর থেকে একটা চেহারা বার হল তাদের পাশে পাশে মিস গ্রিনশকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মিস গ্রিনসকে হাস্যকরভাবে কিছুটা পৃথক বলে মনে হচ্ছিল, মিসেস ক্রসওয়েল এর চুলগুলো পরিপাটি করে সাজানো ছিল। চুলগুলো নীলরঙের ছিল, এবং চুলগুলো খুঁটিনাটিভাবে কখনো কোঁচকানো কিংবা কখনো গুটিয়ে ছিল। তার চুল দেখে এটা মনে হচ্ছিল যে সে একজন ফ্রান্সের মারকুইস যে একটা সুন্দর পোশাকের পার্টিতে যাচ্ছে। আর অন্য একজন মধ্য বয়স্ক লোককে ঠিকভাবে সাজানো হয়েছিল।

যদিও সে একজন লম্বা মহিলা নয়, তার একটা খুব উন্নত এবং মহার্ঘ্য বক্ষ ছিল, তার গলার স্বরটা খুব গম্ভীর ছিল, কিন্তু কিছু শব্দ বলার ক্ষেত্রে তাঁর ইতস্ততা আসত, যেমন যে সমস্ত শব্দগুলো দিয়ে শুরু হয়েছে। এবং তার উচ্চারণে অতিরঞ্জিত করার জন্য সন্দেহের উদ্রেক হত। এবং এটা মনে হত যে অনেক আগে তার যৌবনকালে সেই এইরকম সমস্যায় পড়েছিল এক উচ্চারণ করা নিয়ে।

–মাছ, ম্যাডামস–মিসেস ক্রসওয়েল বলল, কড মাছের টুকরো। এটা এখনও পৌঁছায়নি। আমি আলফ্রেডকে বলেছি এটা খোঁজ করার জন্য যেতে। কিন্তু সে এটা করতে প্রত্যাখ্যান করেছে।

বরং অপ্রত্যাশিতভাবে, মিস গ্রিনস হাসিতে ফেটে পড়ল।

–প্রত্যাখ্যান। সত্যিই সে কথাটা প্রত্যাখ্যান করেছে?

–আলফ্রেড হচ্ছে সবথেকে অলস এবং অবাধ্য লোক। মিস গ্রিনস তার দুটো আঙ্গুল ঠোঁটে তুলল এবং একটা কান কেটে যাওয়ার মত হুইসেল বাজাল এবং তারপরেই তারস্বরে চিৎকার করতে লাগল :

–আলফ্রেড, আলফ্রেড, এখানে এস।

কর্ণারে ঘোরার মুখে একজন যুবক এই ডাকে এগিয়ে আসল। তার হাতে একটা ঝটা ছিল। সে খুব সাহসী এবং দেখতে সুন্দর ছিল। এবং সে যখন মিসেস ক্রসওয়েলের কাছে আসল তার মুখটা ভীষণ ক্ষতিকর বলে মনে হচ্ছিল এবং মিসেস ক্রসওয়েলের দিকে এক পলকে তাকাল।

–তুমি আমাকে চাইছিলে, মিস? সে বলল।

–হ্যাঁ, আলফ্রেড, তুমি নাকি মাছের খোঁজ নেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছ। এটা কি সত্যি?

আলফ্রেড বলল–যে সে এটা অবশ্যই করবে।

–আমি আপনার জন্য মাছের খোঁজে যেতে পারি, যদি তুমি চাও মিস, তুমি যেহেতু আমাকে বলেছ।

–আমি এটা চেয়েছিলাম–আমি রাত্রিরের খাবার জন্য এটা চাই।

তুমি ঠিক বলেছ মিস, আমি এক্ষুনি যাব।

সে তারপর মিসেস ক্রসওয়েলের দিকে উদ্ধত দৃষ্টি নিয়ে তাকাল, কিন্তু ক্রসওয়েল বিড়বিড় করে কিছু বলতে লাগল।

-সত্যি! এটা মানা যায় না।

–এখন সে আমি ভাবি-মিস গ্রিনস বলল, এক স্বামী-স্ত্রী যারা অদ্ভুত পরিদর্শনকারী। তাদেরকে মনে হয়, তারা আমার ইচ্ছার মত নয়, মিসেস ক্রসওয়েল।

মিসেস ক্রসওয়েলকে বিভ্রান্ত লাগছিল।

–আমি সত্যিই দুঃখিত, ম্যাডাম–তুমি জান কি, মিস গ্রিনস বলল তার মাথা নাড়িয়ে। একটা উইলের সুবিধা নিশ্চয়ই উইল প্রত্যক্ষ করবে না, এটা ঠিক, তাই নয় কি? সে তারপর রেমন্ড ওয়েস্টকে আবেদন করল।

স্পষ্টতই ঠিক। রেমন্ড বলল : আমি অনেক আইনকানুন জানি, মিস গ্রিনস বলল, এবং তোমরা দুজন যুবক ছেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে।

তারপর সে তার কর্নিককে বিয়ের ঝুড়িতে ছুঁড়ে ফেলে দিল।

–তুমি কি কিছু মনে করবে যদি তুমি আমার সঙ্গে পাঠাগারে আসো।

–হোরাস বলল এটা খুব আনন্দদায়ক ব্যাপার।

সে তারপর হোরাসকে ফ্রেঞ্চ-এর জানলা দিয়ে পথ নির্দেশ করল এবং তারা হলুদ এবং সোনালী রঙের বসবার ঘর অতিক্রম করল। সেখানে দেখা গেল সমস্ত আসবাবপত্র ধূলোয় ভরে গেছে। তারপরে তারা একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরের মধ্যে দিয়ে গেল। তারপর সিঁড়িতে উঠল এবং তারপর প্রথম তলার একটি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল।

–এটা আমার দাদুর পাঠাগার। সে সজোরে বলল।

হোরাস ঘরের চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখল এবং খুব আনন্দ পেল। এটা একটা ঘর সেটাতে আমার দাদুর মতামত বিরাজ করত। এবং এই ঘরটা মনস্ট্রিসিটিজ-এ ভর্তি ছিল। একটা দানবীয় মত আসবাব ছিল, সেটা একদম আলাদা, সেটা ব্রোঞ্জ দিয়ে মোড়ক দেওয়া ছিল। সে ভাবল, চাল এবং ভারজিনিয়া এবং একটা বড় ব্রোঞ্জের ঘড়ি যার একটা ফটোগ্রাফ সে নিতে চেয়েছিল। অনেক সুন্দর সুন্দর বই, মিস গ্রিনস বলল।

রেমন্ড তখন বইয়ের দিকে নজর দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে কোনও বইই আগ্রহসূচক ছিল না, এবং কোনও বইই মনে হচ্ছিল না যে পড়া হয়েছে। সেগুলি চমৎকারভাবে ক্লাসিকে পরিপূর্ণ। যেগুলো আনা হয়েছিল ৯০ বছর আগে একজন ভদ্রলোকের পাঠাগার সাজানোর জন্য। কিন্তু লুপ্তপ্রায় উপন্যাসগুলোও এখানে সংযযাজন করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো পড়া হয়েছে বলে মনে হল না।

মিস গ্রিনস একটা বড় ডেক্সের ড্রয়ারে কিছু হাতড়াচ্ছিল, তারপর সে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পেল।

আমার উইল–সে বলতে লাগল, যদি আমি উইল ছাড়া মারা যেতাম, তাহলে এই ঘোড়া নিয়ে আসা ছেলেটা এটা পেয়ে যেত। হ্যারি ফ্লেচার খুব সুন্দর দেখতে একটা লোক। কিন্তু তার মত ভবঘুরে কেউই নেই। তুমি দেখো না কেন তার ছেলে এই স্থানের উত্তরাধিকারী হয়েছে। না, সে বলেই চলল, এটা মনে হচ্ছিল যে সে কোন না বলা আপত্তিগুলো তুলছে। আমি মনস্থির করে নিয়েছি আমি এটা ক্রসওয়েলকে ছেড়ে দিচ্ছি।

তোমার রক্ষণাবেক্ষণকারীর কী হবে?

-হ্যাঁ, আমি তাকে সব কিছু বলেছি। আমি একটা উইল করেছি যাতে সে আমার সমস্ত কিছু পায় এবং আমি ভাবি তাকে আর কোন মজুরি দিতে হবে না, এখনকার খরচ থেকে এটা আমাকে রক্ষা করবে। সে খুব ভালো তাই নয় কি? কিন্তু তার বাবা একজন সীমার জিনিসপত্র বিক্রেতা, তার কিছুই নেই যাতে সে সুখে থাকতে পারে।

তারপর সে কাগজটা খুলল। তারপর একটা পেন নিয়ে কালিতে ডোবাল এবং তার সই করল, তার নাম হল ক্যাথরিন ডরথি গ্রিনস।

–এটাই ঠিক, সে বলল, তুমি এটা দেখছ সই করা আছে। এবং এতে তুমি একটা সই কর, তখন এটা আইনিমাফিক পরিণত হয়ে যাবে।

তারপরে সে পেনটা রেমন্ড ওয়েস্ট কে দিল। সে এক মুহূর্ত ইতস্ততবোধ করল, এবং একটা অপ্রত্যাশিত অনুভূতি দেখে সে অবাক হয়ে গেল। তারপরে সে তার চেনা সইটা তাড়াতাড়ি করল।

হোরাস তার কাছ থেকে পেনটা নিয়ে নিল এবং সেই পেপারে এক মিনিটে একটা সই করল।

-এটা আইন সম্মত হয়ে গেল, মিস গ্রিনস বলল।

তারপর সে বইরের ধার ঘেঁষে এগিয়ে গেল, এবং বইগুলো অনিশ্চিতভাবে দেখতে লাগল। তারপর সে কাঁচের দরজাটা খুলল, একটা বই নিল এবং তারপর কাগজটা রেখে দিল সেই ঘরের মধ্যে।

–আমার নিজস্ব ঘর আছে এই জিনিসগুলি রাখার জন্য, সে বলল।

লেডি অডলের সিক্রেট, রেমন্ড ওয়েস্ট বলল, এই শিরোনামের দিকে তাকিয়ে সে বইটা অন্য জায়গায় রেখে দিল।

মিস গ্রিনস আবার অট্টহাস্যে হেঁসে উঠল।

এখনকার যুগে এটা সবথেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে। সে বলল, তোমার বইয়ের মতন। নয়।

সে রেমন্ডের দিকে একটা হঠাৎ বন্ধুত্বপূর্ণ ঝাঁকুনি দিল, রেমন্ড খুব বিস্মিত হয়ে গেল সে কখনই জানত না যে সে বই লিখেছিল। যদিও রেমন্ড ওয়েস্ট-এর নাম সাহিত্যে বিখ্যাত হয়ে আছে। কখনই সে নিজেকে সবথেকে ভালোে বিক্রেতা বলে বলেনি। যদিও মধ্যবয়স্ক হওয়ার জন্য সে কিছুটা নরম স্বভাবের হয়ে গেছে। তার বইগুলো নীরস সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করে।

-আমি বিস্মিত হয়ে যাই, হোরাস এক নিঃশ্বাসে বলে গেল, আমি কি একটা ঘড়ির ছবি নিতে পারি?

এটা তোমার উপর নির্ভর করছে। গ্রিনস বলল, এটা এসেছিল, আমি নিশ্চিত যে এটা প্যারিসের প্রদর্শনী থেকে এসেছিল।

–সম্ভবত তাই হবে, হোরাস বলল, তারপর হোরাস তার দাদুর ছবি তুলল।

–এই ঘরটা খুব বেশি ব্যবহৃত হয় না আমার দাদুর সময় থেকে, গ্রিনস বলল, এই ঘরটা তার পুরনো ডায়েরিতে ভর্তি ছিল। এটা সত্যিই আগ্রহজনক, আমি এটা মনে করি, আমার চোখের দৃষ্টিও নেই যে এটা আমি নিজে নিজে পড়তে পারি। আমি চাই এটা যাতে প্রকাশনা করা হয়। কিন্তু আমি মনে করি একজনকে এদের উপর কাজ করতে হবে।

-তুমি এ বিষয়ে কাউকে নিযুক্ত করতে পার, রেমন্ড ওয়েস্ট বলল।

-সত্যিই তুমি বলছ এটা? একটা একটা ধারণা, তুমি জান, আমি এটার সম্বন্ধে ভাবব।

রেমন্ড ওয়েস্ট তার ঘড়ির দিকে এক পলক তাকাল।

-আমি তোমার দয়াতে কখনোই অনধিকার প্রবেশ করব না। সে বলল।

-আমি তোমাকে দেখে খুব আনন্দিত হলাম–মিস্ গ্রিনস মাধুর্যসহকারে বলল, আমি শুনেছিলাম তুমি নাকি পুলিশ-এ ছিলে, যখন আমি শুনেছিলাম তুমি ঘরের কোণায় ঘুরে বেড়াচ্ছ।

–কেন একজন পুলিশের দরকার, হোরাস দাবী করল, সে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে কখনোই ইতস্তত বোধ করেনি।

মিস গ্রিনস অপ্রত্যাশিতভাবে উত্তর দিল।

–যদি তুমি সময় জানতে চাও, তাহলে একজন পুলিশকে জিজ্ঞাসা কর। মিস গ্রিনস বলতে লাগল এবং ভিক্টোরিয়ান বুদ্ধির উদাহরণ দ্বারা হোরাসের পাঁজর চাপড়াল এবং অট্টহাস্যে চিৎকার করতে লাগল।

এটা সত্যিই একটা বিস্ময়কর বিকেল ছিল, হোরাস দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল। যখন তারা বাড়ির দিকে এগোচ্ছিল, সত্যি বলতে কি, এই জায়গায় সবকিছু আছে। এই পাঠাগারে একজন লোকের দরকার। সেই সমস্ত পুরনো গোয়েন্দার গল্প হত্যা সম্বন্ধে পাঠাগারে–এইরকম ধরনের পাঠাগার লেখকদের খুব ভালো পছন্দ।

-যদি তুমি হত্যা নিয়ে কথা বলতে চাও, তাহলে তোমাকে জেন কাকিমার সঙ্গে কথা বলতে হবে। রেমন্ড বলল।

–তোমার কাকিমা মানে নি তুমি মিস মার্পলকে বোঝাচ্ছ? সে কিংক্যবিমূঢ় হয়ে গেল।

–সেই পুরনো আদবকায়দার সুন্দর মহিলাটি যাকে তোমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল রাত্রের আগে, সেই হচ্ছে শেষ ব্যক্তি যে হত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল।

ও, হ্যাঁ। হত্যার বিষয়ে ওই মহিলা সত্যিই বিশেষজ্ঞ ছিল, রেমন্ড বলল।

–কিন্তু এটা সত্যিই ষড়যন্ত্র। তুমি কী বলতে চাইছ?

–আমি এটা বলতে চাই, রেমন্ড বলল, সে সংক্ষিপ্ত করল–কেউ এই হত্যাটা করেছিল, কিংবা এই হত্যায় কেউ জড়িত ছিল, কিংবা কারুর উপর হত্যার অপরাধটা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমার কাকিমা, জেন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে।

-তুমি মজা করছ।

-না, একদমই করছি না, আমি তোমাকে আগেকার স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড-এর কথা উল্লেখ করতে পারি এবং আরো কয়েকজন মুখ্য কনস্টেবল কিংবা একজন এবং দুজন পরিশ্রমী সি. আই. ডি ইনসপেক্টরের নাম ঘোষণা করতে পারি।

হোরাস বলল যে বিস্ময় কমানো শেষ হবে না, চা-এর টেবিলে তারা জোয়ান ওয়েস্ট-এর সম্বন্ধে বলল সে ছিল রেমন্ড-এর স্ত্রী, লু অক্সলি তার ভাইজি, এবং বৃদ্ধ মিস মার্পল। এটা দেখা গেল যে মিস গ্রিনস তাদেরকে বলেছে।

আমি মনে করি এই পুরো ঘটনায় একটা ছোট পাপ লুকিয়ে আছে। হোরাস বলল, এইরকম রাজকুমারীর মতন মেয়ে, আবার তারা পরিচারিকা চা-এর টেবিলে, আজ্ঞে সে নিশ্চয়ই তার মহিষীকে জানে, তার জন্য এই উইলটা করে দিয়েছে।

-তুমি আমাকে জেন কাকিমার সম্বন্ধে বল, সেখানে সত্যি কি হত্যা ঘটেছিল–না, ঘটেনি? তুমি কি মনে কর?

মিস মার্পল বললেন–তুমি এই সমস্ত বিষয় নিয়ে মজা করা উচিত নয়। আর্সেনিক হল একটি সম্ভাব্যতা অর্জন করা খুব সহজ।

জেন ওয়েস্ট স্নেহপূর্ণভাবে বলল–এটা, সত্যি, ডার্লিং, এটা খুব বেশি সুস্পষ্ট ছিল না। রেমন্ড বলল–এটা উইল করার পক্ষে খুব ভাল, আমি মনে করি না। এই পুরনো জিনিসটার কিছু ছাড়ার মত আছে একমাত্র বাড়ির সাদা ঘোড়াটা ছাড়া? এবং কে এটাকে নেবে?

হোরাস বলল–একটা সিনেমা সংস্থা কিংবা একটা হোটেল কিংবা একটা প্রতিষ্ঠান?

রেমন্ড বলল–তারা একটা গানের জন্য কিনবে, কিন্তু মিস মার্পল তার ঘাড় নাড়াচ্ছিল।

–আমি তোমার সঙ্গে একমত হতে পারছি না, রেমন্ড। আমি বলতে চাইছি ওই টাকাটা সম্বন্ধে, দাদু একজন অপব্যয়ী ছিল, তাই যদিও যে প্রচুর টাকা উপার্জন করত, সে রাখতে পারত না, যদি এটা বলা হয় যে সে দেউলিয়া হয়ে গেছিল, তবে এটা বলা ঠিক হবে না কারণ তাহলে তার ছেলে এত বড় একটা বাড়ি তৈরী করতে টাকা কোথায় পেল।

কিন্তু তার ছেলে তার বাবার থেকে অনেক বেশী পৃথক একজন, একজন কৃপণ। সে প্রত্যেকটা টাকা জমিয়েছে। আমি বলতে পারি যে সে তার জীবনে অনেক টাকা সঞ্চয় করেছে। এই মিস গ্রিনস তাকে নিতে এসেছিল, কারণ গ্রিনস কম টাকা ব্যয় করা পছন্দ করত না, হ্যাঁ আমি মনে করি সে একটা বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছে।

–এই ব্যাপারে, আমি অবাক হয়ে যাই–লু-এর কী ভাবনা জোয়ান ওয়েস্ট বলল।

তারা লুর দিকে তাকিয়ে যে নিস্তব্ধভাবে আগুনের পাশে বসেছিল।

লু হল জোয়ান ওয়েস্ট-এর ভাইঝি, সাম্প্রতিককালে তার বিয়ে ভেঙ্গে গেছে। তার দুটো ছেলেমেয়ে রয়েছে, এবং খুব সামান্য পরিমাণ টাকা রয়েছে তাদেরকে লালন-পালন করার জন্য।

–আমি বলতে চাইছি যদি এই মিস গ্রিনস কাউকে চায় সে তার দিনলিপিটা পড়বে এবং একটা বই প্রকাশ করবে, জোয়ান বলল।

–এটা একটা ভাল ধারণা, রেমন্ড বলল।

লু-খুব নিচু স্বরে বলল।

-এটা একটা কাজ আমি করেছিলাম, এবং আমি আনন্দ উপভোগ করেছিলাম।

রেমন্ড বলল, আমি তাকে লিখব। আমি বিস্মিত হয়ে যাই, এই মহিলাটি পুলিশের সম্বন্ধে এমন মন্তব্য করে কি বোঝাতে চাইছিল। মিস মার্পল চিন্তামগ্ন হয়ে বলল।

-ওহ এটা একটা মজা ছিল।

-এটা আমাকে মনে করিয়ে দিল। মিস মার্পল তার মাথা নাড়িয়ে বলল এবং বললেন এটা তাকে মি. নেজস্মিথ-এর কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। রেমন্ড উদগ্রীভাবে জিজ্ঞাসা করল মি. নেজস্মিথ কে?

মিস মার্পল বললেন–সে মৌমাছি রাখত। সে রবিবারের কাগজে চিত্ৰকাব্য লেখাতে খুব দক্ষ ছিল এবং সে লোককে ভুল বাসনা প্রদান করত মজা পাওয়ার জন্য। কিন্তু কখনও কখনও এটা তাকে সমস্যায় ফেলেছিল।

তখন সবাই নিস্তব্ধ হয়ে গেল মি. নেজস্মিথএর কথা ভেবে এবং মিস গ্রিনস এবং মি. নেজস্মিথের মধ্যে কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না, তারা স্থির করল যে জেন কাকিমা তার বৃদ্ধ বয়সে কিছুটা বিছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।

.

০২.

হোরাস বিল্ডলার লন্ডনে ফিরে গেল, আর কোন মন্সট্রিসিটিস সংগ্রহ না করে, এবং রেমন্ড ওয়েস্ট একটা চিঠি লিখল মিস গ্রিনসকে। এই চিঠিতে সে বলল যে সে মিসেস লুইসা অক্সলেকে চেনে, সে দিনলিপি লেখার ক্ষেত্রে একজন প্রতিযোগী ছিল। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর। একটা আদবকায়দাযুক্ত চিঠি আসল, এই চিঠিটাতে পুরনো হাতের লেখায় লেখা ছিল, সেখানে মিসেস গ্রিনস নিজেকে ঘোষণা করেছিল যে সে মিসেস অক্সলির কাজে যোগদান করবে। এবং মিসেস গ্রিনসকে অক্সলির সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় দিতে হবে।

লোক নিযুক্ত করা হল। সে তার সমস্ত কাজ বুঝে নিল এবং সে সেই দিন থেকে কাজ করতে শুরু করল।

সে রেমন্ডকে বলল আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ। এটার আমার পক্ষে খুব সুন্দর একটা কাজ। আমি বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে পারি, কিংবা বাচ্চাদের গ্রিনসর কলিতে নিয়ে যেতে পারি। এই পুরো ঘটনাটা কতটা সুন্দর হবে! এই বৃদ্ধা মহিলাকে ভর করা যেতে পারে।

প্রথম দিন কাজের সন্ধ্যেবেলায় সে ফিরে আসল এবং তার দিনটা কেমন গেল বর্ণনা করল।

সে বলল, আমি কখনও পরিচারিকাকে দেখিনি। সেই পরিচারিকাটি সাড়ে এগারোটার সময় কফি এবং বিস্কুট নিয়ে আসল। তার মুখটা শুষ্ক কাঁচের মত হয়ে গিয়েছিল এবং সে আমার সঙ্গে খুব একাট কথা বলল না। আমি ভাবলাম সে হয়তো আমার নিযুক্তটা মেনে নেয়নি। সে বলতে লাগল যে বাগানের মালি আলফ্রেড এবং পরিচারিকার মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। আলফ্রেড স্থানীয় ছেলে এবং ভীষণ অলস ছিল। আমার মনে হয় সে এবং পরিচারিকা দুজনে কারোর সঙ্গে কথা বলে না, মিস গ্রিনস ভান করে বলল, সেখানে সবসময়ই দ্বন্দ্ব বাগানের মালি এবং ঘরের পরিচারিকার মধ্যে। এই ধারণাটা আমার দাদুর সময় থেকে চলে আসছে। সেখানে তিনজন লোক এবং একটা ছেলে বাগানে তখন ছিল, এবং ঘরে আটজন পরিচারিকা ছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে সবসময় সংঘর্ষ লেগে থাকত।

ওই দিন লু একটা অন্য খবর নিয়ে ফিরল।

–এটা মজা করার জন্য। আমাকে বলা হয়েছিল আমার ভাগ্নেকে ডাকার জন্য,–সে বলল।

–তুমি কি মিস গ্রিনসর ভাইপোর কথা বলছ?

-হ্যাঁ। এটা মনে হয় সে একটা কোম্পানিতে কাজ করছে। সেই কোম্পানিটা বোরহামে সমুদ্রের উপর গরমকালে কাজ করছিল। আমি নাট্যশালাকে ডেকে পাঠালাম এবং তাকে বললাম আগামীকাল দুপুরে খাওয়ার জন্য আসতে। এটা সত্যিই মজার ছিল এবং এই বৃদ্ধা মেয়েটা রক্ষণাবেক্ষণকারীকে জানায়নি। আমি মনে করি মিসেস ক্রসওয়েল কিছু করেছিল যেটা তাকে বিরক্ত করছিল।

রেমন্ড বলল–আগামীকাল এরকম একটা শিহরণ সৃষ্টিকারী দৃশ্য হবে?

–এটা সত্যিই একটা ঘটনাক্রম, তাই না? ভাইপোর সঙ্গে পুনর্মিলন, যেখানে জলের থেকেও রক্ত গাঢ় এবং আর একটা উইল হবে এবং পুরনো সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।

–তোমাকে খুব উদ্বিঘ্ন দেখাচ্ছে জেন কাকিমা।

–সত্যিই কি আমাকে বিপদজনক দেখাচ্ছে। তুমি কি পুলিশের সম্বন্ধে কিছু শুনেছ?

–লু-কে খুব বিভ্রান্ত লাগছিল, এবং বলল, আমি পুলিশে সম্বন্ধে কিছু জানি না।

–এই মন্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে সেখানে নিশ্চয়ই কিছু গুপ্ত অবস্থায় রয়েছে, মিস মার্পল বললেন।

লু পরের দিন মনের আনন্দে কাজে যোগ দিল। সে প্রথম দরজা পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল যেখানে দরজা এবং জানালাগুলি সবসময় ভোলা ছিল, মিস গ্রিনস-এর কোনও ভয় ছিল না, তাই সে এগিয়ে আসল। এবং সে সত্যিই সঠিক ছিল এই মহুর্তে যা করা উচিত। যেহেতু ঘরের প্রত্যেকটা জিনিসের অনেক ওজন ছিল কিন্তু সেখানে কোন বাজার মূল্য ছিল না।

গাড়ি চালানোর সময় লু আলফ্রেডকে অতিক্রম করে চলে গেল। যখন লু আলফ্রেডকে দেখতে পেল, তখন আলফ্রেড একটা গাছে হেলান দিয়ে ধূমপান করছিল। কিন্তু যেই মুহূর্তে আলফ্রেড লুকে দেখতে পেল। আলফ্রেড একটা ঝাটা নিল এবং পাতা আঁটাতে শুরু করল, না ভাবল, একজন অলস লোক, কিন্তু সুন্দর দেখতে। লোকটার লক্ষণগুলো লু-কে একজনের কথা মনে করিয়ে দিল। যখন সে হলঘরের মধ্যে দিয়ে সিঁড়িতে উঠে পাঠাগারে যাচ্ছিল, লু একবার ন্যাথানিয়াল গ্রিনসর ছবির দিকে দৃষ্টিপাত করল। ছবিটা ম্যান্টলপিস-এর উপর ছিল। ছবিটা ভিক্টোরিযান প্রাচুর্যের চূড়া হিসাবে পরিগণিত হচ্ছিল। পিছনে একটা আরামকেদারা ছিল। এই ছবিটার হাতগুলো ধারণ ক্ষমতা যুক্ত পাকস্থলীতে ছিল। যখন লু-সেই ছবিটার পাকস্থলী থেকে মুখের দিকে তাকাল, তখন সে ছবিটার সুন্দর ভ্রু এবং কালো গোঁফ দেখল। সে ভাবল ন্যাথানিয়াল গ্রিনসকে খুব সুন্দর দেখতে ছিল। যাকে খানিকটা আলফ্রেড-এর মত দেখতে।

সে তারপরে পাঠাগারে গেল। দরজা বন্ধ করে দিল, তারপর টাইপরাইটার খুলল, তারপর পাশের ড্রয়ার থেকে ডায়েরিটা বার করল। খোলা জানলা দিয়ে সে মিস গ্রিনসকে দেখতে পেল যে একটা রঙীন পোশাক পরে আগাছাগুলো তুলছিল। সেখানে দুদিন ভেজা দিন ছিল তাই আগাছাগুলো খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠেছে।

লু যেহেতু একটা শহরের মেয়ে, সে স্থির করল যদি তার একটা বাগান হয় তাহলে সেখানে শিলাপ রাখবে না। কারণ এতে প্রচুর আগাছা জন্মে। এবং সেগুলোকে হাত দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়, তারপর লু আবার তার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

যখন মিসেস ক্রসওয়েল পাঠাগারে সাড়ে এগারটার সময় কফি নিয়ে প্রবেশ করল। সে খুব রেগে ছিল। সে দুম করে চায়ের ট্রেটা টেবিলে রেখে দিল, এবং তারপর অন্যদিকে তাকাতে লাগল।

বাড়িতে কিছুই নেই। আমার এখন কি করা উচিত। আমাকে অবশ্যই জানতে হবে, আলফ্রেড-এর কোনও পাত্তা নেই।

–সে রাস্তায় ঝাঁট দিচ্ছিল, যখন আমি এখানে আসলাম, তাকে রাস্তায় দেখলাম। লু বলল।

আমি হলফ করে বলতে পারি, এটা সত্যিই একটা ভালো কাজ।

-মিসেস ক্রসওয়েল সজোরে ঘর থেকে বেরিয়ে আসল এবং দরজায় দুম করে আওয়াজ করে বেরিয়ে গেল। লু…নিজের প্রতি ভেঙ্গচি কাটল। সে বিস্মিত হয়ে গেল, ভাইপো কেমন হবে।

সে কফিটা শেষ করল। এবং তারপর আবার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এটা এতটা ব্যস্ত কাজ যে দ্রুত সময় অতিবাহিত হতে লাগল। ন্যাথানিয়াল গ্রিনস যখন তার দিনলিপি রাখত, সে এই খোলমেলা স্বভাবের আনন্দে সামিল হয়েছিল, লু বলল, একটা দ্রুত সম্পাদনার কাজ খুব জরুরি।

যেহেতু সে এটা শুনছিল। সে বাগান থেকে একটা আর্তনাদ শুনতে পেল, লাফিয়ে উঠে সে খোলা জানালার দিকে তাকাল। মিস গ্রিনস তার প্রস্তরময় বাগান থেকে টলতে টলতে বাড়ির দিকে আসছিল, সে তার হাতগুলো তার বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে আসছিল। তার বুকের মধ্যে একটা শর গেঁথে গিয়েছিল, লু চিনতে পেরেছিল এটা নিশ্চয়ই শর বা তীর হবে।

মিস গ্রিনসর মাথা তার নিজের বুকে ঝুঁকে যাচ্ছিল, সে লুকে খুব নিম্নস্বরে বলেছিল, …হত্যা …সে আমাকে হত্যা করেছে একটা শর দিয়ে…আমি সাহায্য চাই…।

লু দরজার দিকে ছুটে গেল। সে হাতলটা ঘোরাল, কিন্তু দরজাটা খুলছিল না, সে এক কিংবা দু মিনিট ধরে এই ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছিল, কিন্তু সে জানত না যে তাকে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে, সে আবার জানলার দিকে ছুটে গেল।

–আমি বন্দী হয়ে গেছি।

মিস গ্রিনস যে লুর দিকে পেছন ফিরে ছিল, এবং কঁপছিল সে ঘরের রক্ষণাবেক্ষণকারীকে জানালা দিয়ে ডাকছিল।

–পুলিশকে ফোন কর, টেলিফোন…তারপর মাতালের মত এদিক-ওদিক দুলতে দুলতে সে অদৃশ্য হয়ে গেল তারপরে দেখা গেল মিস গ্রিনস বসার ঘরে রয়েছে, কিছুক্ষণ পর লু-চায়না মাটির কিছু আসবাবপত্র ভাঙ্গার আওয়াজ পেল। একটা খুব জোরে শব্দ এবং তারপর সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে গেল। তার মনের কল্পমান সে আবার দৃশ্যটাকে পূর্ণগঠিত করল, মিস গ্রিনস অন্ধের মত টলছিল। তার পাশে একটা টেবিল ছিল এবং সেখানে চায়ের সেটগুলো ছিল।

বেপরোয়াভাবে লু দরজায় লাফিয়ে পড়ল। তারপর ডাকতে এবং চেঁচাতে লাগল, সেখানে কোনও লতাপাতা পাইপ ছিল না। সেগুলো তাকে হয়ত সাহায্য করত এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য।

দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে সে ক্লান্ত হয়ে গেল, সে জানলার দিকে ফিরে তাকাল। তার ঘরে বসার ঘরের জানালা থেকে রক্ষণাবেক্ষণকারীর মাথাটা দেখা গেল।

–এস, আমাকে এখান থেকে বার কর মিসেস অক্সলে, আমি এখানে বন্দি হয়ে আছি।

–আমিও বন্দি হয়ে আছি, মিসেস অক্সলে বলল।

-সত্যি, একটা এক সশ্রদ্ধ ভয়মিশ্রিত ঘটনা। আমি পুলিশকে ফোন করেছি। এই ঘরের একটা বাড়তি অংশ আছে, কিন্তু মিসেস অক্সলে আমরা বুঝতে পারছি না কেন আমাদের তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আমি কখনই চাবির ঠিকানা শুনতে পাইনি, তুমি কি পেয়েছ?

-না, আমিও কিছুই শুনতে পাই নি, তাহলে আমরা এখন কী করব? আলফ্রেড হয়ত এটা শুনে থাকতে পারে। লু তীক্ষ্ণস্বরে আলফ্রেড, আলফ্রেড বলে চেঁচাতে লাগল।

–তুমি রাত্রির খাবার খেতে যাচ্ছ না এখন কটা বেজেছ তুমি জান?

লু তার ঘড়ির দিকে তাকাল-১২টা বেজে ২৫ মিনিট হয়ে গেছে।

–যতক্ষণ না ১২টা ৩০ মিনিট বাজবে, ততক্ষণ সে যাবে না, কিন্তু আগে যখনই সে পারত তখনই সে ছিকত।

-তুমি কি এটা মনে কর

লু বলতে চাইল–তুমি কি মনে কর সে মরে গেছে? কিন্তু তার গলায় কথাগুলো আটকে গেল।

আর কিছু করার ছিল না, কিন্তু অপেক্ষা করতে হল। সে জানলার উপর উঠে বসল। এটা মনে হল যে একটা পুলিশ হেলমেট পরে ঘরের কোণা থেকে বেরিয়ে আসছে। সে জানলায় হেলান দিয়ে থাকল। তারপর আলফ্রেড লু-র দিকে তাকাল, তার নিজের চোখ বন্ধ করে। তারপর তার গলার আওয়াজে তিরস্কার বেরিয়ে আসছিল।

সে খুব রেগে গিয়ে বলল–এখানে কি হচ্ছে? জানালা দিয়ে লু এবং মিসেস ক্রসওয়েল তার দিকে কিছু উত্তেজিত তথ্য ছুঁড়ে দিচ্ছিল।

কনস্টেবল একটা নোটবই এবং একটা পেনসিল আনল। তোমরা মহিলারা নিজেই সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেছ এবং নিজেদের সেখানে বন্দি করেছ? ঠিক আছে, তোমাদের নামগুলো বল?

-না, আমরা নিজেদের তালাবন্ধ করিনি, কেউ আমাদের এখানে আবদ্ধ করে রেখেছিল, এস আমাদের এখান থেকে মুক্ত কর।

তারপর কনস্টেবল তিরস্কার করে বলল–সব কিছু ঠিক সময়েই ঘটে। তারপর নিচের জানলায় অদৃশ্য হয়ে গেল।

সময়ও অনির্দিষ্ট হতে লাগল। লু একটা গাড়ি আসার আওয়াজ পেল, মনে হল এটা একটা ঘণ্টা, কিন্তু তিন মিনিটের মধ্যেই মিসেস ক্রসওয়েল এবং লুকে পুলিশ সার্জেন্ট মুক্ত করল, যেহেতু সার্জেন্ট অনেক বেশি সতর্ক এবং তৎপর ছিল।

লুর স্বর আস্তে হয়ে গেল এবং বলল–মিস গ্রিনস কোথায়? কি কি ঘটেছিল?

সার্জেন্ট তার গলাটা খুলে দিল। সে বলল–আমি তোমাকে এটা বলে ভুল করেছি ম্যাডাম, আমি মিসেস ক্রসওয়েলকে বলেছিলাম যে মিস গ্রিনস মারা গেছে।

মিসেস ক্রসওয়েল বলল–হত্যা করা হয়েছিল, এটা কি সত্যিই হত্যা?

সার্জেন্ট সন্দেহাতীতভাবে বলল–যদি এটা দুর্ঘটনা হত, তাহলে কিছু জেলে শর এবং তীর নিক্ষেপ করত।

আবার একটা গাড়ি আসার আওয়াজ পাওয়া গেল, সার্জেন্ট বলল।

–এটা নিশ্চয়ই MO হবে। এবং তারপর সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসল।

কিন্তু ইনি MO ছিল না, যখন লু এবং মিসেস ক্রসওয়েল সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিল, একজন ইতস্ততভাবেই সামনের দরজায় প্রবেশ করল এবং থেমে গেল। তারপর বিভ্রান্ত অবস্থায় চারদিক ফিরে তাকাতে লাগল।

এইরকম সুন্দর স্বর লুর খুব চেনা লাগল–সম্ভবত মিস গ্রিনসর পরিবারের সঙ্গে সদৃশতা ছিল,–তাই সে জিজ্ঞাসা করল।

-মিস গ্রিনস কি এখানে থাকে?

-তোমার নামটা দয়া করে বলবে, সার্জেন্ট জিজ্ঞাসা করল। লোকটি বলল–আমার নাম ফ্লেচার, ন্যাট ফ্লেচার, আমি মিস গ্রিনসর ভাইপো।

–সত্যি নাকি–আমি সত্যিও দুঃখিত–আমি নিশ্চিত।

ন্যাট ফ্লেচার জিজ্ঞাসা করল–কিছু কি ঘটেছে?

–সেখানে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। তোমার কাকিমাকে একটা তীর দিয়ে বিদ্ধ করা হয়েছে।

মিসেস ক্রসওয়েলকে মৃগী রোগ আচ্ছন্ন করেছিল এবং সে সুস্থ অবস্থায় ছিল না।

-তোমার কাকিমাকে হত্যা করা হয়েছে।

.

০৩.

ইন্সপেক্টার ওয়েলচ চেয়ার নিয়ে টেবিলের কাছে বসল এবং তার দৃষ্টি সেই ঘরের চারজনের দিকে তাকাল, এটা ওই একই দিনের সন্ধেবেলা, সে ওয়েস্ট হাউসে গেছিল লু-অক্সলের বিবৃতি নেওয়ার জন্য।

–তুমি কি সঠিক শব্দটা সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে তাকে নিক্ষেপ কর–সে আমাকে একটা শর নিক্ষেপ করল–সে সাহায্য চায়?

লু মাথা নাড়াতে লাগল–সময়টা কত ছিল?

আমি আমার ঘড়ির দিকে এক মিনিট কিংবা দুমিনিট পরে তাকালাম-তখন ঘড়িতে বেজেছিল ১২:২৫ মিনিট।

তোমার ঘড়ি সঠিক সময় নির্দেশ করে তাই না?

আমি আমার নিজের ঘড়ির দিকে তাকালাম।

ইন্সপেক্টর রেমন্ড ওয়েস্টের দিকে তাকাল।

–এটা মনে হচ্ছে স্যার যে এক সপ্তাহ আগে তুমি এবং হোরেস বিল্ডলার দুজনেই মিস গ্রিনসর উইলের সাক্ষী ছিল?

সংক্ষিপ্তভাবে রেমন্ড বিকেলের পরিদর্শনের ঘটনাগুলি বর্ণনা করতে লাগল। এবং সে বলল, সে এবং হোরাস বিল্ডলার গ্রিনসর ফোল্লিতে গিয়েছিল।

ওয়েলচ বলল–তোমার এই পরীক্ষা-নীরিক্ষা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। মিস গ্রিনস আলাদভাবে তোমাকে বলেছে, বলেনি কি? বল উইলটা সম্বন্ধে সেটা মিসেস ক্রসওয়েলের পক্ষে করা হয়েছিল। এই মিস গ্রিনস ছিল রক্ষণাবেক্ষণকারী সে মিসেস ক্রসওয়েলকে কোন মজুরি দিত না কারণ মিসেস ক্রসওয়েল তার উইল পাবে বলে।

-হ্যাঁ, এটাই সে আমাকে বলছিল। তুমি কি মনে কর মিসেস ক্রসওয়েল ওটা সম্বন্ধে খুব বেশী সতর্ক।

আমি এটা নিঃসন্দেহে বলতে পারি, মিস গ্রিনস এটা আমাকে বলেছে এবং মিসেস ক্রসওয়েল বুঝেছিল, গ্রিনস কি বোঝাতে চেয়েছিল। যাইহোক মিস গ্রিনস আমাকে বলেছিল যে সে এসেছিল মিসেস ক্রসওয়েলের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া করার জন্য।

তাই মিসেস ক্রসওয়লকে বিশ্বাস করতে হল। এবং মিস গ্রিনস বলেছিল যে তাকে একজন লোক তীর নিক্ষেপ করেছিল–

-সত্যিই কি তাকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল?

-হ্যাঁ সার্জেন্ট কেলে তাকে বার করে এনেছিল, এটা পুরনো আদবকায়দার চাবিও বটে। চাবিটা তালার মধ্যে ছিল না। এবং এটাতে কোন কিছু কৌশল প্রয়োগ করে খোলা যাচ্ছিল না, তুমি এটা ভাবতে পার মিসেস ক্রসওয়েলকে ঘরে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছিল এবং বাইরে বেরোতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু ঘরের মধ্যে কোনও শর বা তীর ছিল না। এবং জানলা থেকেও মিস গ্রিনসকে তীর নিক্ষেপ করা হয়নি। জানলার কোণাগুলি বাধা দিয়েছিল।

তারপর রেমন্ড একটু থামল এবং বলতে লাগল :

–তুমি কী মনে কর মিস গ্রিনস একজন বাস্তবিক ঠাট্টাকারী?

মিস মার্পল তার কোণা থেকে তীক্ষ্ণভাবে তাকালেন।

মিস মার্পল বলল–উইলটা মিসেস ক্রসওয়েল-এর অনুকূলে নেই।

ইন্সপেক্টর ওয়েলচ বিস্মিত হয়ে গেল।

সে বলল–তুমি খুব চালাকি করে অনুমান করেছ না, মিসেস ক্রসওয়েল নামটা কি অনুকূল নয় উইলের পক্ষে।

এটা মি. নেস্নিথ-এর মত ব্যাপার মিস মার্পল বললেন, তার মাথা নেড়ে। মিস গ্রিনস, মিসেস ক্রসওয়েলকে বলেছিল সে তাকে সবকিছু দিয়ে দেবে। সেজন্য তাকে মজুরি প্রদান করেনি। কিন্তু সে তার সমস্ত টাকা ক্রসওয়েলকে না দিয়ে অন্য কাউকে দিয়েছিল। যাইহোক সে খুব আনন্দিত ছিলও বটে।

যাই হোক মিসেস অক্সলে আমাদের বলেছিল কোথায় উইলটা আছে, ইন্সপেক্টর বলল। সে আরো বলল, যদি অক্সলে না বলত তাহলে আমাদের অনেক বেশী করে খুঁজতে হত।

রেমন্ড ওয়েস্ট বলল–এটা একধরনের ভিক্টোরিয়ানদের অনুভূতির হাস্যকর অবস্থা। মনু বলল মিস গ্রিনস তার সমস্ত টাকাকড়ি তার ভাইপোকে দিয়ে দিয়েছে।

ইন্সপেক্টর তার মাথা নাড়াল। ইন্সপেক্টর বলল, না, সে এটা ন্যাট ফ্লেচারকে দেয়নি, এই গল্পের অন্য ঘটনা আছে–সম্ভবত আমি এই স্থানে নতুন এবং আমি এখানে অন্যের কথায় বিশ্বাস করতে হচ্ছে–কিন্তু আমার মনে হচ্ছে যে পুরনো দিনে মিস গ্রিনস এবং তার বোন দুজনেই একজন শিক্ষকের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল এবং মিস গ্রিনসর বোন শিক্ষককে পেয়েছে, না সে তার সমস্ত টাকাটা তার ভাইপোকে দেয়নি। সে থেমে গেল, তারপর তার চিবুক ঘসতে লাগল। তারপর বলল, মিস গ্রিনস সমস্ত টাকাকড়ি আলফ্রেডকে দিয়ে গেছে।

জোয়ান বিস্মিত হয়ে বলল–আলফ্রেড, সেই মালী?

–হ্যাঁ, মিসেস ওয়েস্ট, আলফ্রেড পোলক।

লু কেঁদে বলল–কিন্তু কেন?

মিস মার্পল কাশতে শুরু করলেন এবং বিড়বিড় করে বললেন।

–আমি মনে করি, হয়ত আমি ভুলও বলতে পারি, এখানে কিছু পারিবারিক কারণ রয়েছে।

ইন্সপেক্টার বলল–তুমি এইভাবে বলতে পার, এটা গ্রামে একটা সুপরিচিত ঘটনা। এটা মনে হচ্ছে থমাস পোলক, আলফ্রেডের দাদু, মিঃ গ্রিনসর চেনা পরিচয় ছিল খুব পুরনো বন্ধু হিসাবে।

–ঠিক বলেছ, লু বলল, এই সুদৃশতা সকালে দেখেছি।

সে মনে করল কিভাবে আলফ্রেড চলে যাওয়ার পর গ্রিনস এই ঘরটাতে এসেছিল এবং পুরনো গ্রিনসর ছবিটা দেখছিল।

মিস মার্পল হলফ করে বললেন–মিস গ্রিনস ভেবেছিল আলফ্রেড পোলকের এই ঘরটা সম্বন্ধে নিশ্চয়ই গর্বিত আছে, অথবা সে হয়ত এখানে থাকতে চেয়েছিল, কিন্তু সেখানে তার ভাইপো এটাকে কোন গুরুত্ব দেয়নি এবং তাড়াতাড়ি এই ঘরটাকে বিক্রি করে দিয়েছিল, সে একজন অভিনেতা, তাই নয় কি? সে এখন কোন নাটকে অভিনয় করছে।

ইন্সপেক্টার ওয়েলচ ভাবল, একটা বৃদ্ধা মহিলাকে বিশ্বাস করা উচিত। কিন্তু সে বলল।

-আমি বিশ্বাস করি, ম্যাডাম, তারা জেমস ব্যারির নাটকগুলিতে অভিনয় করছে।

মিস মার্পল চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বললেন বললেন–ব্যারির নাটকে।

ইন্সপেক্টার ওয়েলচ বলল–প্রত্যেকটা মহিলা কি জানে তারপরে সে রেগে লাল হয়ে গেল, তারপর বলল–নাটকটার নাম কি, সে আরো বলল, আমি থিয়েটার মঞ্চে বেশি যেতে ভালবাসি না, কিন্তু আমার স্ত্রী গেছে এবং গত সপ্তাহে এটা দেখেছে আমার স্ত্রী বলল, এটা সত্যিই একটা ভালো নাটক।

মিস মার্পল বললেন–ব্যারি অনেক সুন্দর সুন্দর নাটক লিখেছে। কিন্তু আমি বলব যখন আমি আমার বন্ধু, জেনারেল ইস্টারলির সঙ্গে, ব্যারির নাটক লিটল মেরি দেখতে গিয়েছিলাম। তারপর মিস মার্পল দুঃখিত হয়ে বলল, আমরা কেউই জানতাম না সেখানে কী দেখব?

ইন্সপেক্টার লিটল মেরি নাটকটা দেখেনি, তাই সে, বিভ্রান্ত হয়ে গেল। মিস মার্পল বলল-ইন্সপেক্টর, আমি যখন একটা মেয়ে ছিলাম, কেউই পাকস্থলী কথাটা উল্লেখ করেনি।

ইন্সপেক্টোর বেশি করে সমুদ্রের দিকে তাকাল এবং মিস মার্পল নিজে বিড়বিড় করতে লাগল, নাটকের শিরোনামগুলো।

প্রশাসনীয় ক্রিটেন খুব চালাকিপূর্ণ একটা নাটক। মেরি রোজ আর একটা সুন্দর নাটক, আমি কেঁদে বললাম আমার মনে পড়ছে, কোয়ালিটি স্ট্রিট আমি এটাকে বেশি পছন্দ করতাম না। তারপর আর একটা নাটক হল এ কিস কর সিনড্রোমস, ও সত্যিই খুব ভাল নাটক।

ইন্সপেক্টার ওয়েলচ-এর নাটক নিয়ে কথা বলার মত কোনও সময় ছিল না, সে তারপর ঘটনাটাতে ফিরে গেল।

সে বলল–ব্যাপারটা হচ্ছে, আলফ্রেড পোলক কি জানত যে বৃদ্ধা মহিলাটি তার জন্য একটা উইল করে গেছে? সে কি পোলককে বলেছিল? ইন্সপেক্টার আরও বলল তুমি দেখ, সেখানে একটা তিরন্দাজি ক্লাব রয়েছে বোরহাম লভেল-এ এবং আলফ্রেড পোলক তার একজন সদস্য, আলফ্রেড পোলক অবশ্য ভালো ধনুর্বিদ।

রেমন্ড ওয়েস্ট জিজ্ঞাসা করল–তুমি কী এখনও বুঝতে পারনি এটা ঠিক যে দুজন মহিলাকে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছিল এবং পোলক জানত যে এই দুই মহিলা কোথায় ছিল।

ইন্সপেক্টার রেমন্ড ওয়েস্ট-র দিকে তাকাল। তারপর বিষাদগ্রস্ত স্বরে, ইন্সপেক্টার বলল–সে অপরাধ করে অন্য জায়গায় থাকার অজুহাত দেখিয়েছে।

আমি সবসময় মনে করি, এটা সন্দেহজনক।

ইন্সপেক্টার ওয়েলচ বলল–হ্যাঁ, এটা সত্যিই সন্দেহের, তুমি একজন লেখক হিসাবে এই কথা বলছ।

রেমন্ড ওয়েস্ট বলল–আমি গোয়েন্দা গল্প লিখি না।

ইন্সপেক্টার ওয়েলচ বলল–তুমি সন্দেহভাজন ঘটনা জান, কিন্তু আমরা দুর্ভাগ্যবশত এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতে হত।

ইন্সপেক্টার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল।

ইন্সপেক্টার বলল–আমরা তিনজনকে সন্দেহ করেছি। এই তিনজনের ভীষণ কাছাকাছি সম্পর্ক ছিল এই ঘটনাটাতে, সব থেকে অদ্ভুত ঘটনা হচ্ছে যে, এটা মনে হচ্ছে কেউই এই কাজটা করেনি, রক্ষণাবেক্ষণকারীর সাথে আলোচনা করেছি। তার ভাইপোর সঙ্গে ন্যাট ফ্লেচারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এবং সেই মুহূর্তে কয়েক মাইল দূরে একজন লোক এবং তার সহকারী, গ্যারেজে গাড়িতে তেল ভরছিল, এবং আলফ্রেড পোলকের হয়ে দুজন শপথ করে বলতে পারে সে ডগ এবং ডাকে প্রবেশ করেছল ১২টা ২০-র সময় এবং তারপর সেখানে খাবার খেয়েছিল।

রেমন্ড ওয়েস্ট আশাপূর্ণভাবে বলল–এটা সত্যিই সন্দেহের। ইন্সপেক্টার ওয়েলচ বলল–হ্যাঁ এটা হতে পারে কিন্তু যদি তাই হয়, তাহলে সে এটা প্রকাশ করবে কেন?

সেখানে নিস্তব্ধতা বিরাজ করল, তারপর রেমন্ড মিস মার্পলের দিকে ঘুরে তাকাল যেখানে মিস মার্পল চিন্তামগ্ন হয়ে বসেছিলেন।

রেমন্ড বলল এবার তোমার পালা জেন কাকিমা। ইন্সপেক্টার বিভ্রান্ত হয়ে গেল, জোয়ানও বিভ্রান্ত হয়ে গেল, সার্জেন্টও বিভ্রান্ত হয়ে গেল, আমিও বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম, জোয়ান এবং লুও বিভ্রান্ত হয়ে গেল। কিন্তু জেন কাকিমা এটা তোমার পক্ষে স্পষ্ট হওয়া উচিত। আমি কি ঠিক বলেছি?

মিস মার্পল বললেন–আমি এটা বলব না, এটা একটা হত্যা, খেলা নয়। আমি মনে করি না, মিস গ্রিনস মরতে চেয়েছিল এবং এটা একটা নারকীয় হত্যাও ছিল বটে। একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং ঠাণ্ডা মাথায় খুন। এটা মজা করার ব্যাপার নয়।

-রেমন্ড লজ্জিত হয়ে বলল–আমি দুঃখিত, আমি এতটা উদাস নই যতটা আমি বলছি। একজনের এটাকে খুব হালকাভাবে নেওয়া উচিত মিস মার্পল বলল, এগুলি হচ্ছে আধুনিক প্রবণতা, সমস্ত যুদ্ধই মজা হিসাবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে। সত্যি, আমি চিন্তাহীন হয়েছিলাম যখন আমি বলেছিলাম যে তুমি উদাসীন ছিলে।

জোয়ান বলল–এটা সেটা নয়, যদিও আমি, গ্রিনসকে ভালোভাবে চিনি।

মিস মার্পল বললেন–এটা একদম সত্যি, তুমি কিন্তু তাকে চেন না জোয়ান, আমিও তাকে চিনি না, একদিন বিকেলে কথাবার্তা থেকে রেমন্ড অনুভুতি সংগ্রহ করেছিল লু তাকে দুদিন ধরে জানত।

রেমন্ড বলল–এখন এস জেন কাকিমা, আমাকে তোমার মতামত বল, ইন্সপেক্টার কিছু মনে করবে না?

ইন্সপেক্টার ভদ্রভাবে বলল-একদমই না।

–ঠিক আছে, এই তিনজন লোকের উদ্দেশ্য ছিল এই বৃদ্ধা মহিলাকে হত্যা করা এবং সেখানে তিনটে কারণ আছে। কেন তিনজনের কেউই সেটা করেনি, রক্ষণাবেক্ষণকারী এটা করতে পারে না কারণ সে বন্দি ছিল ঘরের মধ্যে এবং মিস গ্রিনস বলেছিল যে একটা লোক তাকে হত্যা করেছিল। মালি এটা করেনি কারণ সে ওই সময় ভগ এবং ডাকের মধ্যে ছিল যখন হত্যাটা ঘটানো হয়েছিল, তার ভাইপোও এটা করবে না কারণ সে তার গাড়ি নিয়ে কিছুটা দূরত্বে ছিল হত্যার সময়।

ইন্সপেক্টার বলল–ঠিক বলেছ, ম্যাডাম।

-এবং এটা মনে হচ্ছে যে বাইরের কেউ এই কাজটা করেছে, কখন করেছে, আমরা জানি না।

রেমন্ড ওয়েস্ট বলল–সেটাই ইন্সপেক্টার জানতে চাইছে।

মিস মার্পল কৈফিয়ত সমর্থন করে বললেন–একজন সবসময় উল্টো করে সবকিছু দেখে। আমরা যদি এই তিনজনের অবস্থান পরিবর্তন করতে না পারি, তাহলে আমরা কি হত্যার সময়টা পরিবর্তন করতে পারি না?

লু জিজ্ঞাসা করল–তুমি কি বলতে চাইছ যে আমার হাতঘড়ি এবং দেওয়াল ঘড়ি দুটোই ভুল ছিল?

মিস মার্পল বললেন–না আমি সেটা বলতে চাই নি, আমি বলতে চাইছি যে যখন তুমি মনে করছ হত্যা কাণ্ডটা ঘটেছিল, তখন কিন্তু এটা ঘটেনি।

লু চিৎকার করে বলল–আমি এটা দেখেছিলাম।

–আমি বিস্মিত হয়ে যাই যে, তুমি কি এটা বলতে চাওনি, আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তুমি জান, এটা কি সত্যি, ঘটনা ছিল না, তুমি এই কাজটার জন্য কেন নিযুক্ত হয়েছিলে?

জেন কাকিমা জিজ্ঞাসা করল–তুমি কি বলতে চাইছ।

–এটা খুব অদ্ভুত লাগছে। মিস গ্রিনস টাকা খরচ করা পছন্দ করত না এবং সে তুমি ইচ্ছা সহকারে রাজী হয়েছিলে, সেটা তোমাকে বলা হয়েছিল, এটা বলা হয়েছিল সম্ভবত তুমি ওই পাঠশালাতে ছিলে, তুমি জানলা দিয়ে দেখেছিলে যাতে তুমি মূল সাক্ষী হতে পার,-একটা নির্দিষ্ট সময় এবং স্থান হত্যার জন্য।

লু অবিশ্বাস্যভাবে বলল তুমি এটা বলতে পার না যে মিস গ্রিনসকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

মিস মার্পল বললেন-আমি কি বলতে চাইছি এটা কি যে তুমি মিস গ্রিনসকে চেন না, সেখানে সত্যি কোনও কারণ নেই, তাহলে কি তুমি যখন মিস গ্রিনসকে দেখতে তার বাড়ি গিয়েছিলে, এটা কি সেই মিস গ্রিনস ছিল। রেমন্ড তাকে অনেকদিন আগে দেখেছে? মিস মার্পল বলতে লাগলেন আমি জানি, এটা বলে সে লুর উত্তরকে বাধা দিতে চাছিল সে একটা নিজস্ব পুরনো আদবকায়দাযুক্ত পোশাক পরেছিল এবং একটা অদ্ভুত ধরনের টুপি এবং অগোছালো চুল ছিল। সে ঠিক রেমন্ডের মত ঘটনাটা বলল। কিন্তু ওই দুজন মহিলা, তুমি জান, একই রকম বয়স, একই উচ্চতা সম্পন্ন। আমি রক্ষণাবেক্ষণকারীর কথা বলছি এবং মিস গ্রিনস।

লু চিৎকার করে বলল-রক্ষণাবেক্ষণকারী খুব মোটা কিন্তু তার মনটা খুব নরম।

মিস মার্পল কাশতে লাগলেন–কিন্তু অমি দেখছি এখনকার দিনে আমরা অবাধে দোকানে চলাফেরা করছি। এবং একজনের পক্ষে এটা খুব সহজ আবক্ষ মূর্তি রাখা।

রেমন্ড দাবী করে বলল–তুমি কী বলতে চেষ্টা করছ?

–আমি ভাবছিলাম যে, এই দুই-তিনদিনে লু সেখানে কাজ করছিল। একজন মানুষ দুটো অংশ একসঙ্গে ভূমিকা নিতে পারে। তুমি নিজেকে বলেছিলে যে লু তুমি রক্ষণাবেক্ষণকারীকে দেখেছিলে কিনা মনে পড়ছে না। একমাত্র একটা মাত্র দৃশ্য ছাড়া সেখানে সেই মহিলাটি সকালে কফি ট্রেতে করে নিয়ে এসেছিল। একজন দেখে এই বিভিন্ন লোকগুলো বিভিন্ন চরিত্রে এক কিংবা দু-মিনিটের মধ্যে অভিনয় করছে এবং আমি নিশ্চিত এই পরিবর্তন শীঘ্রই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তুমি কি মনে কর জেন কাকিমা যে মিস গ্রিনস আমার এখানে কাজ করার আগে মারা গেছে?

আমি বলব–সে মরেনি, এইরকম একটা বিবেকবুদ্ধিহীন বর্জিত মহিলা রক্ষণাবেক্ষণকারী এটা করতে পারে। তারপর সে তোমার সঙ্গে কথাবার্তা বলেছিল এবং তুমি তার ভাইপোেকে ফোন করে জিজ্ঞাসা কর দুপুরের খাওয়ার সঠিক সময়ে আসতে। একজন লোক এটা জেনেছিল যে, এই মিস গ্রিনস সেই মিস গ্রিনস নয়। এবং তুমি যদি মনে কর যদি দুদিন কাজ করার সেখানে ভেজা ছিল এবং মিস গ্রিনস এখানে থাকত, কিন্তু আলফ্রেড এখানে আসত না। তার দ্বন্দ্ব ছিল রক্ষণাবেক্ষণকারীর সঙ্গে এবং গত সকালে আলফ্রেড যখন গাড়ি চালাচ্ছিল, মিস গ্রিনস তার বাগানে শিলাময় স্কুপে কাজ করছিল–আমি তখন নেই শিলাস্তূপগুলোর দিকে তাকালাম।

–তুমি কি মনে কর মিসেস ক্রসওয়েল মিস গ্রিনসকে হত্যা করেছে?

-আমি মনে করি, কফি আনার পর ওই মহিলা দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল এবং তারপর বাইরে গেছিল, এবং সে মিস গ্রিনসের অচেতন দেহকে বসার ঘরে বয়ে নিয়ে গেছিল। তারপরে সে মিস গ্রিনসর হিসাবে সাজল আবার শিলাস্তূপে বাগানে কাজ করতে গেল। যেখান থেকে তুমি জানলা দিয়ে দেখতে পাচ্ছিলে। সেই সময় গ্রিনস আর্তনাদ করতে লাগল এবং ঢলতে ঢলতে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে বুকে তীরবিদ্ধ অবস্থায়…যেন এটা মনে হচ্ছে তার গলায় আটকে গেছে। সে সাহায্যের জন্য চীৎকার করতে এবং বলতে লাগল সে আমাকে আঘাত করেছে। যাতে রক্ষণাবেক্ষণকারীকে সন্দেহ না করা হয়। সে রক্ষণাবেক্ষণকারীকে জানালা দিয়ে ডাকছিল যেন সে তাকে সেখান থেকে দেখেছে। তারপর সে টেবিলের উপর পোর্সিলেন ছুঁড়ে ফেলেছিল–এবং দ্রুত সিঁড়িতে উঠে গেল। তারপর তার পোশাক পরে নিল এবং তারপর মাথাটা জানলার বাইরে দেখাতে লাগল এবং বলল সে আটকে আছে।

লু বলল–তাকে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল।

–আমি জানি, সেখানে পুলিশ আসছে, কি পুলিশম্যান?

আমি বিস্ময় হয়ে যাই, কি পুলিশ ইন্সপেক্টার তুমি আমাকে বল কখন এবং কিভাবে। তুমি এখানে উপস্থিত হয়েছিলে?

ইন্সপেক্টার হতবুদ্ধি হয়ে গেল।

১২টা বেজে ২৯ মিনিটে আমরা একটা টেলিফোন পেলাম মিসেস ক্রসওয়েলের কাছ থেকে সে মিস গ্রিনসর রক্ষণাবেক্ষণকারী ছিল এবং কোন মতে বলল যে তার মহিষীকে মারা হয়েছে। আমি এবং সার্জেন্ট কেলে গাড়ি করে সেখানে গেলাম এবং ১২টা বেজে ৩৫ মিনিটে সেখানে উপস্থিত হলাম। আমরা দেখলাম মিস গ্রিনস মরে পড়ে আছে। এবং দুজন আবদ্ধ অবস্থায় ঘরের মধ্যে ছিল।

মিস মার্পল লু-কে বলল তুমি ব্যাপারটা বোঝ যে পুলিশকে তুমি দেখেছিলে, সে কিন্তু সত্যি পুলিশ কনস্টেবল ছিল না, তুমি তাকে কখনোই ভাবনি। কারুর পক্ষে ভাবা সম্ভব নয়। একজন আইন অনুযায়ী একটা মাত্র ইউনিফর্ম পরতে পারে।

-কিন্তু কেন?

-যদি তারা একটা নাটক এ কিস ফর সিনড্রেলা পরিবেশন করছিল, একজন পুলিশ হল মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করে, ন্যাট ফ্লেচারকে তার নিজের পোশাক পরে অভিনয় করতে হল। তাকে একটা গ্যারেজে নিয়ে যাওয়া হল যাতে তার সমস্ত মনযোগ সময়ের দিকে থাকে–সময়টা ছিল ১২টা বেজে ২৫ মিনিট, তারপর তাড়াতাড়ি চল। ঘরটা কোণায় রেখে দাও। তারপর পুলিশের পোশক পর এবং কাজটা শুরু কর।

কিন্তু কেন? কেন?

একজনকে বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে রাখতে হবে এবং একজনকে মিস গ্রিনসর গলায় তীরবিদ্ধ করতে হবে। তুমি কাউকে তীর দিয়ে আঘাত কর–কিন্তু এটার জন্য প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োজন।

তুমি কি মনে কর তারা দুজনে এর মধ্যে ছিল।

হ্যাঁ, আমি মনে করি, মা এবং ছেলে একরকম নয়।

কিন্তু মিস গ্রিনসর কেন অনেক আগে মারা গেছে?

হ্যাঁ আমার কোন সন্দেহ নেই যে মি. ফ্লেচার আবার বিয়ে করেছিল। সে এমনভাবে ভান করে মনে হয় যেন বাচ্চা শিশুটিও মারা গেছে। এবং এই তথাকথিত ভাইপো হল দ্বিতীয় স্ত্রীর বাচ্চা এবং সেখানে সত্যিই কোন সম্পর্ক নেই। মহিলাটি রক্ষণাবেক্ষণকারীর স্থান লাভ করেছিল এবং জায়গাটাকে লক্ষ্য করছিল। তারপর ফ্লেচার নিজে তার ভাইপো হিসাবে পরিচয় দিয়েছিল এবং তাকে ডেকে পাঠিয়েছিল–যদিও সে পুলিশের পোশাকে এসে কিছু ব্যঙ্গকর উক্তি করেছিল এবং জিজ্ঞাসা করেছিল এই নাটকটিকে দেখতে, কিন্তু আমি মনে করি সে সত্যিটাকে মেনে নেয়নি, সন্দেহ করেছিল এবং তাকে দেখতে অস্বীকার করেছিল, সে তার উত্তরাধিকারী হত যদি সেই উইল না করে মারা যেতে। কিন্তু অবশ্যই সেই রক্ষণাবেক্ষণকারীর অনুকূলে উইলটা করেছিল, (যেটা তারা ভেবেছিল) তারপর এটা পরিষ্কার হয়ে গেল।

জোয়ান আপত্তি করে বলল। কেন শর বা তীর ব্যবহার করা হয়েছিল। এটা অনেক দূর থেকে আনতে হয়। মোটেই দূর থেকে আনা হয়নি। আলফ্রেড তিরন্দাজি ক্লাবে যুক্ত ছিল। আলফ্রেডকে দোষ দেওয়া হয়েছিল। আলফ্রেড যে ধারাতে ছিল ১২টা ২০ মিনিটে। এটাই তার পক্ষে দুর্ভাগ্যের বিষয়। সেজন্যই তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে। আলফ্রেড সবসময় সময়ের কিছু আগে বেরিয়ে যায় এবং এটাই তার পক্ষে সঠিক– জোয়ান মাথাটা নাড়ল, এটা মনে হচ্ছে সবকিছুই ভুল হয়েছে। আম মনে করি আলফ্রেড-এর অলসতা তার নিজের জীবনকে রক্ষা করেছিল।

ইন্সপেক্টার তার গলা থেকে তীর বার করল।

–ঠিক আছে ম্যাডাম, তোমার প্রস্তাবগুলো সত্যিই আগ্রহজনক আমাকে অনুসন্ধান করে দেখতে হবে।

.

০৪.

মিস মার্পেল এবং রেমন্ড ওয়েস্ট বাগানের কাছে শিলাস্তূপের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। এবং বাগানের ঝুড়ির দিকে তাকাচ্ছিলেন সেটা শুকনো ফলে ভর্তি ছিল। মিস মার্পল বিড়বিড় করতে লাগলেন–অ্যালিসান, স্যাক্লিফ্রেজ, সিটিসাস, থিম্বল ক্যামপেনুলা…।

-হ্যাঁ এই সমস্ত প্রমাণগুলো আমার দরকার। যে এই বাগানে আগাছাগুলো তুলছিল, সে কিন্তু মালী নয়–সে গাছ উপড়ে ফেলছিল আগাছা ভেবে, কিন্তু আমি জানি আমি সঠিক। ধন্যবাদ রেমন্ড আমাকে এখানে আনার জন্য, আমি এই জায়গাটা নিজের জন্য দেখতে চাই।

সে এবং রেমন্ড দুজনে রাগী গ্রিনস কলির দিকে তাকিয়ে থাকল।

কিন্তু একটা কাশি তাদেরকে ঘুরতে বাধ্য করাল, একজন সুন্দর যুবক লোকও এই ঘরটার দিকে তাকাচ্ছিল।

সে বলল–প্লেগি বড় জায়গা, এটা খুব বড় এখনকার দিনে। আমি এটা সম্বন্ধে জানি না। আমি যদি একটা ফুটবলের পথ ধরলাম তাহলে অনেক টাকা উপার্জন করতাম। এইরকম একটা বাড়ি আমাকে তৈরী করতে হবে।

সে আমার দিকে লজ্জিত এবং কুণ্ঠিত হয়ে তাকাল।

আলফ্রেড পোলক বলল, আমি বলতে পারি এই বাড়িটা আমার দাদুর দাদু তৈরী করেছিল। সত্যিই এটা খুব সুন্দর বাড়ি, এবং তারা এটাকে গ্রিনস কলি বলে।

৮. দ্যা ড্রেসমেকার’স ডল

দ্যা ড্রেসমেকার’স ডল

ভেলভেট চেয়ারের ওপর পুতুলটা বসানো ছিল।

ঘরে অনুজ্জ্বল আলোর প্রভা, লন্ডনের আকাশের মুখ ভার। মৃদু ধূসর-সবুজ বিষণ্ণতার বাতাবরণ।

চারদিকে, চারপাশে। এই ঘরের সর্বত্র হালকা সবুজের আচ্ছাদন। পর্দা এবং কম্বলে তারই টুকরো টুকরো জলচ্ছবি। সব মিলিয়ে রঙের এক সুন্দর সমাহার। সমস্ত দিকে একই রকমভাবে রঙীন করা হয়েছে।

পুতুলটা হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে। তার পরণে সবুজ ভেলভেটের জামাকাপড়, মাথার ওপর ভেলভেটের টুপি, মুখের উপরও রঙের ছোঁয়া।

সে হলো পুতুল নাচের পুতুল। যার জাদুর দেখাতে রঙের ছোঁয়া বিত্ত শালিনী মহিলাদের মতো। এই পুতুলকে কখনো কখনো টেলিফোনের পাশে বসে থাকতে দেখা যায়। কখনো তার শয়ন হয় ডিভানের কুশনের উপর।

সেখানে আরাম করে বসে মনে হয় সে বুঝি জীবন্ত হয়ে উঠেছে।

বিংশ শতাব্দীতে ঘর সাজানোর অন্যতম উপকরণ এইসব পুতুল নাচের পুতুলরা।

সিবার্ন থক্স-এর কথা বলি, এখন সে ব্যস্ত আছে কয়েকটা ডিজাইন ও স্কেচ নিয়ে তাকিয়ে আছে সদ্য সমাপ্ত স্কেচটির দিকে।

পুতুলটির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ তার মুখমণ্ডলে একটা অদ্ভুত কিছুটা অসহায়তা উঠল। কিছুটা আশ্চর্যের আভা, সে অকারণে অবাক হল, কিন্তু কে? নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার, খবর রাখার সে কি জানে? দোনোমনা ভাবল–কি হয়েছে এই নীল ভেলভেট নকশার শুটাকে আমি কোথায় রেখেছিলাম?

মনে পড়ছে, এখানে মাথায় কিছুই ঢুকছে না। এইসব কথা বিড়বিড় করে বলতে বলেত সে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলে এখন তাকে কাজের ঘরে ঢুকতে হবে।

–এলসপেথ এলসপেথ-এলসপেথ। তুমি কি নক্সাটা ওখানে রেখেছ? যে কোন সময় শ্রীমতী ফেলোস ব্রাউন এসে পড়বেন, ওনাকে ওটা দিতে না পারলে ভারী মুশকিলে পড়ব আমি।

পুতুলটার দিকে আবার তাকাল। একি! এই তো এটা! এখানেই আছে, শেষপর্যন্ত সে ওই নক্সাটা খুঁজে পেল। হাত থেকে কখন হয়ত পড়ে গিয়েছিল। ক্যান্টিন-এর পাশে শব্দ শোনা গেল। এলিভেটার এসে গেছে। দু-এক মিনিটের মধ্যে পিকিনিস কুকুরটাকে সঙ্গে নিয়ে ঢুকে পড়বেন মিসেস ফেলোস ব্রাউন।

শ্রীমতী ফেলোস ব্রাউন, মনে হচ্ছে তিনি বোধ হয় কোন এক লোকাল ট্রেনে চড়ে শহরতলীর স্টেশনে পৌঁছে গেছেন। তাঁর আচরণের মধ্যে এমনই একটা উদ্বিগ্নতার ছাপ ছিল।

উনি রাগতস্বরে বললেন–ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আর পারছি না।

তিনি gloves এবং fur ছুঁড়ে ফেললেন ভয়ে। কুকুর হ্যারিশিয়া কোম্বে এসে গেছে। এখন সবসময় ব্যস্ত থাকে সে। অবশ্য তাকে আমরা এ ঘরে খুব একটা দেখি না। বিশেষ কোনো অতিথি এলে তবেই এঘরে আসার অনুভূতি বা সুযোগ পায় সে, আমরা বুঝতে পারছি শ্ৰীমতী ব্রাউন হলেন একটা উঁচু দরের খদ্দের।

এই ওয়ার্করুমের আসল কাজের মেয়েটি হল ওই এলপেথ। সে তাড়াতাড়ি সামনে চলে এসেছে। ফেলোস ব্রাউনের দিকে তাকিয়ে বললেন–হয়ে গেছে। আশাকরি ব্যাপারটা আপনার পছন্দ হবে। এটা দারুণ হয়েছে।

মিসেস ফেলোস ব্রাউন এদিক ওদিক তাকালেন আয়নার দিকে চোখ করে।

উনি বললেন–হ্যাঁ, এই পোশাকটা ভালই হয়েছে বলতে হবে। পেছনদিক থেকে আমাকে যথেষ্ট আকর্ষণীয় লাগছে।

সাইবিল আশ্বস্ত স্বরে বলল–তিনমাস আগে আপনি যতটা ছিলেন। এখন আর একটু রোগা হয়ে গেছেন। কিন্তু এই পোশাকে সেটা মনে হচ্ছে না।

মিসেস ফেলোস-ব্রাউন বললেন–না না। অথচ রোগা আমি হই নি। এটা বেশ ভালো হয়েছে তো, তোমাদের কাট্টিয়ের মধ্যে একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। এটা আমার শরীরটাকে একটুখানি রোগা করে দিয়েছে।

মনে হয়, আমি যতটা সুন্দরী এটা পরে তার থেকে আরো বেশী সুন্দরী হয়ে উঠছি।

ছোট একটা জিজ্ঞাসা চাপার চেষ্টা করলেন ভদ্রমহিলা। এবার তাকে বোধ হয় চলে যেতে হবে। তিনি বললেন–একটু। ট্রায়াল দিলে ভালো হত।

কয়েক বছর ধরেই তো আমি তোমাদের তৈরী করা জিনিসপত্র ব্যবহার করছি। মনে হয় কাল তার দরকার হয়ত হত না।

–ঠিক আছে। ভবিষ্যতে আবার দেখা হবে। অ্যালিশিয়া কোম্বে বলে ওঠে–আমাদের আর কিছু হাতের কাজ দেখবেন নাকি?

মিসেস ফেলোস-ব্রাউন ঈষৎ চিন্তা করে হাটাহাটি করতে থাকেন।

তিনি বলে উঠলেন–এই কাজটাও সুন্দর হয়েছে মানতেই হবে। কি মনে হয় তোমাদের। তোমরা কোন্ ধরনের খদ্দের বেশি পছন্দ কর বল? তোমরা কি তোমাদের মহিলা খদ্দেরের পেটের দিকে তাকিয়ে দেখেছ? অনেকের পেটই বেঢপ হয়ে গেছে।

–তাতে কী সহযোগিতা হতে পারে?

–আমার দিকে দেখো না, আমি কত রোগা ছিপছিপে ছিলাম এখন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মুটিয়ে গিয়েছি।

নিজেকে ভালো করে দেখলেন তিনি আয়নার প্রতিফলনের মাধ্যমে। তারপর হঠাৎ বলে ওঠেন–বাঃ এই পুতুলটা তো ভারী সুন্দর।

–এটা এখানে কতদিন ধরে আছে? সাইবিল অ্যালিসিয়া অর্থপূর্ণ চোখে তাকাল। এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে একটু থমকে গেল। আসলে উত্তরটা দেবে কিনা ভাবছে?

তারপর আমতা আমতা করে শুরু করলেন। আমার ঠিক মনে পড়ছে না। আসলে সময়টা আমি ভুলে গেছি। আসলে এখন খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আর মনে পড়ে না। আমার কি হয়েছে, আমার স্মৃতিলোপ ঘটে গেছে বোধ হয়। সাইবিল, আমরা পুতুলটা কবে এনেছিলাম বলো তো?

সাইবিল সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয় আমারও ঠিক মনে পড়ছে না। এবার শ্রীমতি ব্রাউন বললেন ঠিক আছে। ও যেন আমাকে নির্দেশ দিচ্ছে–বস্তুত ওর চোখের চাউনির মধ্যে কেমন একটা আলাদা আকর্ষণ আছে। মনে হচ্ছে বোধহয় ও পোশাক সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। ওকি আমাদের বিদ্রূপ করছে নাকি? যদি ওই পুতুলটা আমার হত তাহলে আমি ওটাকে ভ্যানিস করে দূরে সরিয়ে দিতাম। ওর চাউনির মধ্যে একটা অশুভ সংকেত আছে। তোমরা কি তা বুঝতে পারছ না?

–কি আশ্চর্য, তারপর তিনি ওটা ভাবতে শুরু করলেন, তারপর পোশাক সম্পর্কে খুঁটিনাটি আলোচনার মেতে উঠলেন। মাঝে মধ্যেই পুতুলটার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছেন।

-তারপর বলে উঠলেন স্লিভটা ইঞ্চিখানেক ছোট করলে কি ভালো হত না? লম্বা ঝুলটা কেমন হয়েছে?

এই ব্যাপারগুলোর একটা মীমাংসা হওয়া দরকার। আসলে পোশাক সম্পর্কে শ্ৰীমতী ফেলোস ব্রাউন-এর খুবই খুতখুতানি।

উনি মনে করেন ওনার শরীর ঈশ্বরের একটা আশ্চর্য অবদান। সেটাকে সবসময় সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে হয়। উনি হাঁটতে হাঁটতে পুতুলটার দিকে আরো একবার তাকালেন। ওনার মনে হলো পুতুলটা ওনার দিকে তাকিয়ে আছে।

উনি বললেন-না, আমার আচার-আচরণ-এ পছন্দ হচ্ছে না। এটা এখানে কেন এনেছেন? এটা অস্বস্তিকর, এটাকে যদি বিদায় করে দাও।

এবার রেগে যাওয়ার ফলাফল সাইবিল বললেন–আপনি এসব কথা বলে কী বলতে চান?

মিসেস ফেলোস ব্রাউন তখন ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছেন নিচের দিকে, অ্যালিসিয়া কোম্বে উত্তর দেওয়ার আগেই, মিসেস ফেলোস ব্রাউন ঘাড় বেঁকিয়ে তাকালেন দরজার দিকে দৃষ্টি গেল তার। তিনি বললেন, ঠিক আছে। আমি অগ্রিম সম্পর্কে সবকিছু ভুলেই গেছি। ঠিক আছে। আমি কখনই এই বিষয়ে আর কথা বলব না।

তারা পরস্পর চোখাচুখি করল, পুতুলটা ওই সবুজ ভেলভেট আচ্ছাদিত চেয়ারের ওপর বসে আছে মনে হয় সে বুঝি পুতুলটাকে নিরীক্ষণ করছে চোখের মধ্যে। কোন ছাপ নেই। আগে এখানে কত কৌতুক খেলা করত।

এখন সেখানে শুধু অসহায়তা ফুটে ওঠে।

শ্ৰীমতী ফেলোস ব্রাউন বললেন–এসো এসো আমার ছোট্ট সোনামণি, এসো,

কিন্তু এই ছোট্ট সোনামনি তার, এই আকুল আহ্বানে কান দিল না, যেখানে ছিল সেখানেই বসে থাকল। তাই মিসেস ফেলোস ব্রাউন এবার এগিয়ে গিয়ে বললেন-তুমি দিন দিন দুষ্টু হয়ে উঠছ কিন্তু এরকম করলে আমি কিন্তু তোমাকে আর ভালোবাসব না। এসো এসো, দিন দিন।

কেঠালিন এবার তার মাকে এদিক ওদিক করল, তাকাল তার দিকে। কিন্তু বোঝ গেল এখন থেকে চলে আসার সময় সামান্যতম ইচ্ছে বা অভিপ্রায় তার নেই। সে সবকিছু গভীর দৃষ্টিতে পুতুলটাকে কন্ট্রিবিট করতে লাগল। মিসেস ফেলোস ব্রাউন বললেন, আমি তো এরকম আচরণ করতে ওকে কখনো বলিনি।

–একি?

–আমি এখানে শেষ কবে এসেছিলাম। আমি এখানে পুতুলটাকে দেখেছি?

কখন কি

এই কথা শুনে, বাকি দুই ভদ্রমহিলা অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে চোখাচোখি করল। সাইবিলকে এখন কিছু একটা বলতেই হবে। অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন।

-আমার মনে নেই পুতুল টুতুল এখানে কবে থেকে আছে।

–সাইবিল তোমার কিছু মনে পড়ছে?

এবার মিসেস ফেলোস ব্রাউন জানতে চাইলেন–ও এখানে কী করে এল?

ওর কাছে কি আপনারা কিনেছেন?

-না না! অ্যালিসিয়া কোম্বে কোনরকমে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সামলে দেবার চেষ্টা করল–মনে হয় এটা বোধ হয় কেউ….

মনে পড়ছে না!

-আসলে ব্যাপারটা আমাদের স্মৃতির জগৎকে হারিয়ে গেছে। কত জিনিসতো মনে রাখতে হয়, তার মধ্যে একটা ছোট্ট পুতুল কী করে সর্বনাশ ঘটাতে পারে বলুন তো?

এবার মিসেস ফেলোস ব্রাউন চিৎকার করে বললেন

কৌলিন আর বোকার মত আচরণ করো না, আমি কি তোমাকে জোর করে টেনে আনব নাকি?

তিনি এগিয়ে গেলেন সামনের দিকে। কোনদিন মুখ দিয়ে একটা কড়াকড়া শব্দ করে তার বিরক্তি প্রকাশ করলেন।

শুরু হয়ে গেল কৌলিন্যের সাথে তার! মনিব পত্নীর লুকোচুরি খেলা। কৌলিন এখানে সেখানে ছুটে পালাবার চেষ্টা করছে। শেষ অবধি তাকে ধরা দিতেই হল।

শ্ৰীমতী গোমস বললেন–এই তো পুতুলটা এটাকে এখানে রাখ না। কোথাও দিয়ে আসতে হবে?

–কিন্তু কী করে?

মিসেস গোমস এবার ঘর পরিস্কার করবেন। তাকে এই কাজটা যত্নের সঙ্গে করতে হবে। ধীরে ধীরে সে ঘরে সবকিছু গুছিয়ে রাখল। ডাস্টার দিয়ে ঝাড়পোছ করতে লাগল।

মিসেস গোমস বলে ওঠেন–

–গতকাল কি পুতুলটা এখানে ছিল?

–এটা কবে এখানে নিয়ে এসেছ?

বললেন–তুমি কি এটা পছন্দ করছ না?

আমি বলতে পারি মিসেস ব্রাউন এই পুতুলটা মোটেই ভালো নয়। এটা কিন্তু অদ্ভুত স্বভাবের। আমি কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছেন তো?

–এ কেমনভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। একে দেখে মোটেই ভালো কিছু মনে হয় না।

এবার সাইবিলের রেগে যাওয়ার কথা। তুমি কিন্তু এই ব্যাপারে আগে আমাকে বিরক্তিকর কথা কখনোই বল নি।

-হ্যাঁ, বলেছি। আপনারা ব্যাপারটা পাত্তা দেন নি। আজ সকালের আগে পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে আপনারা ভাবনা চিন্তা করেননি। আমি এই পুতুলটাকে এখানে বসে থাকতে দেখেছি।

এবার বোধ হয় তার অবাক হবার পালা, এই রাত্রিবেলায় আমি একটা স্বপ্ন দেখি, মনে হয় সে বোধ হয় কোনও রহস্য কথা চুপি চুপি বলতে চাইছে। ধীরে ধীরে সে শুটিং রুমে চলে গেল। তারপর তার এখন অনেক কাজ পড়ে আছে। এই হবে টুকিটাকি জিনিসপত্র সাজাতে হবে।

সাইবিল ওই পুতুলটার দিকে তাকাল। পুতুলটার মুখের মধ্যে কেমন একটা অদ্ভুত উৎসুকের ছাপ লেগে আছে। অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে উঠল।

সাইবিল তার দিকে তাকাল,

মিস কোম্বের এই পুতুলটা আছে এখানে কতদিন ধরে?

এই পুতুলটা জিজ্ঞাসা প্রিয়। আমায় ক্ষমা কর। আমার তো মনে পড়ছে। গতকালকে পুতুলটা এখানে ছিল কিনা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি তো বাইরে গিয়েছিলাম বক্তৃতা শুনব বলে।

দরকারী কথা মনে পড়ে যাওয়ার সুযোগে ফিরে আসি।

–আমি কোথায় যাচ্ছিলাম তাও আমার মনে নেই। আমার মনে হয় আমি বোধ হয় স্পটনামস্টে যাচ্ছিলাম। সেখানে গিয়ে কী করব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। ওই লেকচারটার কথা আমার আর মনে পড়ছে না, সেখানে যে কী বকর বকর করা হয় তা আমি জানি না।

–একি হল আমার?

স্মৃতির থেকে আবেদন।

–আমি আমার চশমা কোথায় রেখেছি? আমার হ্যান্ডব্যাগের মধ্যে কি?

হ্যাঁ কি?

ঠিক খুঁজে পাচ্ছি না। আমি একটু তখন পত্রিকা পড়ছিলাম।

সাইবিল বলে উঠল-ম্যান্টলাপিসের ওপরে চশমাটা আছে। কিভাবে তুমি পুতুলটা পেয়েছ বললে না তো? একি? এটা কেউ তোমায় উপহার হিসাবে দিয়েছে?

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন-না, এটা কেউ পাঠিয়েছিল, কি মনে পড়ছে না। তবে এখন বুঝতে পারছি পুতুলটা ঘরের পক্ষে নেহাতই বেমানান। কিন্তু কারোর উপহার তো দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া যায় না।

সাইবিল বলে উঠল–এটাকে এখানে রাখার কোনও দরকার নেই। আমি একে কোথায় রাখি বল তো!

-একটু সময় দাও আমি ভেবে চিন্তে বলব। অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন-না। আমিও এখন একেবারে গোলমেলে অবস্থায় মধ্যে আছি।

-তোমার মাথাটা একটু পরিষ্কার থাকার দরকার। তোমার বয়স আমার থেকে অনেক কম।

কিন্তু

-সত্যি বলছি মিস কোম্বে, আমি একেবারে মনে করতে পারছি না। গতকালও আমি এটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এর মধ্যে একটা আশ্চর্য জিনিস লুকিয়ে আছে।

শ্রীমতী ফেলোস কিন্তু ঠিক কথাই বলেছেন। কি একটা অদ্ভুত রহস্য! আমার মনে হচ্ছে পুতুলটার মধ্যে একটা প্রাণ আছে। বা আমি সেই প্রাণের ব্যাপারটা বেশ উপলব্ধি করতে পারছি। আর কিছু আমার মনে নেই। পুতুল তো এমন আচরণ করে না।

–আজকে ওর আচরণের মধ্যে একটা পরিবর্তন এটা কি তোমাদের কারোর নজরে পড়ছে না?

-হতেও পারে।

–না, ও বোধ হয় বঁটার ওপর বসে জানলা দিয়ে ঢুকে পড়েছে একটু। মিস পুরো ব্যাপারটাকে তরল করার চেষ্টা করে।

ওটা আমাদের সম্পত্তির চারপাশে থাকবে বলে এসেছে। তারপর বলে–এই পুতুলটার কথা বাদ দিয়ে ঘরটার কথা ভাবতে পার না? একবার চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখ তো!

সাইবিল বলে কাঁপতে কাঁপতে–তুমি ঠিকই বলেছ। এই পুতুলটা এখন এই ঘরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত হয়েছে।

-তাহলে?

–একবার ভাবত?

–একবার ভাববার চেষ্টা করলে আমার সমস্ত শরীরে কাঁপুনি দেখা দেবে।

–তাহলে আমরা পুতুলটা নিয়ে কী করব?

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন–এই বেচারী পুতুলের মধ্যে এমনকি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে আছে?

মনে হচ্ছে সেটা যেন একটা পরিত্যক্ত আবর্জনার মত, অথচ এর প্রাণ আছে। আমি বেশ বুঝতে পারছি। আমি কি এর সাথে কথা বলব?

সে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল। তারপর পুতুলটার দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। তুমি এমন আচরণ করছ কেন? তোমার চোখে বিষণ্ণতার ছায়া, থিকথিক করে কাঁপছ কেন? তুমি কি কিছু বলতে চাও?

-তুমি এত লাজুক কেন?

–বল কি বলতে চাও?

বলে ওঠে সে শ্রীমতি ফেলোস ব্রাউন বোধ হয়–এইজন্য পুতুলটাকে দূরে ঠেলে সরিয়ে দেবার কথা বলছিলেন।

–তিনি কী করে পুতুলটার মনের ভাষা পড়বেন বলুন তো?

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে উঠলেন সইদুল বলতে থাকে, এই পুতুলটা ভদ্র মহিলার মনে খারাপ ছাপ ফেলে গেছে।

ওরা ওই পুতুলের মর্ম কী করে বুঝবেন? ওরা জীবনে সুখে সংযমে ব্যস্ত থাকেন।

সইকুল এসে বলল ঠিক আছে। এই পুতুলটার আচরণ পাল্টে গেছে একথা তোমাকে মানতেই হবে।

কিন্তু এখানের চেয়েও থাকবে না।

কোন আকর্ষণীয় শক্তি ছিল না। সত্যি সত্যি হয়ত জানলার কথা ভাবতে ছিল।

তারপর এখানে?

অ্যালিসিয়া কোম্বে বললেন–না, এই পুতুলটা বেশ লাগছে কেন?

তবে তার অস্তিত্ব আমাদের সামনে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।

সাইবিল বলেন, একথা আপনি বললে আমি ভালোভাবে বুঝতে পারছি আপনার মনে সন্দেহ জেগেছে। গতকাল সে এখানে এসেছিল। একথা আমি আবার হলফ করে বলছি।

এবার অ্যালিসিয়া কোম্বে চিৎকার করে বললেন–তুমি কী বলছ? তুমি একটা সামান্য ব্যাপারকে এত কঠিন করে ফেলছ কেন?

মনে হচ্ছে তুমি এই ঘটনাটাকে ভালো মনে নিতে পারছ না? তোমার মধ্যে এমন একটা আতঙ্ক জেগে উঠছে কেন?

অ্যালিসিয়া কোম্বে পুতুলটার হাতে করে তুলে নেয়। তারপর তার পোশাক ঠিকঠাক করে দেয় অন্যের চেয়ারটাতে বলিয়ে দেয়। কিন্তু পুতুলটা নিজে নড়েচড়ে বসে ওঠেন আরামপ্রদ অবস্থানে থেকে যায়।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন না। এর মধ্যে জীবন্ত সত্তা জেগেছে। ভালো করে চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ। সাইবিল তোমার কি মনে হচ্ছে না।

চোখ দুটো কিছু বলতে চাইছে। হয়তো একটু বাদে পুতুলটা কথা বলতে শুরু করবে?

শ্ৰীমতী গোমস বলল–এবার বোধ হয় আমার পালা। এখন সে একমনে ঝাড়পোচের কাজ করে চলেছে। বিড়বিড় করতেই থাকে আমি কিন্তু আর মিটিং রুমে কখনোই যাবো না।

মিস কোম্বে জানতে চাইল–

কী বলছ ভালো করে বল তো গোমস, তখন সে বসেছিল ঘরের এক কোণে। লেখার টেবিলের সামনে, বিভিন্ন হিসেবপত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিল।

সে আবার গলা চড়িয়ে বলতে থাকে তোমাকে নিয়ে আর পারছি না, তুমি সব ব্যাপার নিয়ে এত ঝগড়া কর কেন?

মনে রেখো বিকেলের মধ্যেই কিন্তু হাতের কাজটা শেষ করতে হবে। দুটো সান্ধ্য পোশাকে তৈরী করতে হবে। তিনটে ককটেল ড্রেস তৈরি করতে বাকি আছে। এছাড়া এমন একটা স্যুট তৈরি করতে হবে যা আমাদের যথেষ্ট পয়সা দেবে।

তুমি তা করতে পারবে তো?

শ্ৰীমতী গোমস বিড়বিড় করে বলে ওঠেন–পুতুলটা আমার মাথা খারাপ করে দেবে।

–আবার এই পুতুলটা নিয়ে বাজে বকবক করছ?

-হ্যাঁ, ওটা ডেক্সের ওপর বসে আছে একটা জীবন্ত মানুষ হয়ে। আমার দিকে মাঝে। মাঝে পিটপিট করে তাকাচ্ছে?

–তুমি কি বলছ?

–এসব কথার কোনো মাথা মুণ্ডু আছে কি?

অ্যালিসিয়া কোম্বে উঠে দাঁড়াল। ঘরের এককোণে চলে গেল। বাইরে উঁকি মেরে দেখলো। উল্টোদিকের ঘরটাই হল সিটিং রুম। সেখানে একটা ছোট সেরাটোন ডেস্ক আছে। এককোণে ডেস্ক আছে। সামনে চেয়ার আছে এবার অ্যালিসিয়া সেখানে গিয়ে বসল। শুধু পুতুলটাকে ও বসিয়ে দিল ডেস্কের ওপরে।

পুতুলটা ড্যাব ড্যাব করে তাকাল।

অ্যালিসিয়া কোম্বে মন্তব্য করে-মনে হয় কেউ বোধ হয় আমাদের নিয়ে মজা করছে। হ্যাঁ পুতুলটার হাবভাবের মধ্যে একটা কৌতুক লুকিয়ে আছে এখন তার দিকে তাকিয়ে দেখ, রহস্য চিহ্ন আছে কি?

ঠিক সেই সময় সাইবিল বলল–সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এল, হাতে একটা অসমা ড্রেস যা নিয়ে এখন সে খুব ব্যস্ত আছে। সকালবেলা থেকে চলছে তার পরীক্ষা নিরীক্ষা।

এখানে এসো সাইবিল, দেখতো তার ব্যক্তিগত ডেস্কের উপর পুতুলটা কেমন বসে আছে। ওকে কি এখানে মানাচ্ছে না?

দুই মহিলা অর্থপূর্ণভাবে দৃষ্টি বিনিময় করে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন–হ্যাঁ হ্যাঁ এখানে ওকে ভারী মজার দেখাচ্ছে।

–তুমি কি ওকে এখানে বসিয়েছ?

সাইবিল বলে–না। আমি তো এ কাজটা করিনি, বোধ হয় ওপর থেকে কোনো একটি কাজের মেয়ে এই দুষ্টুমিটা করেছে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে মন্তব্য করেন–হ্যাঁ। এটা আমার একটা মারাত্মক আমোদ।

সে ডেস্ক থেকে পুতুলটা নিয়ে যায়, তারপর তাকে সোফাতে বসিয়ে দেয়।

-সাইবিল তখন পোশাকের দিকে তাকিয়ে আছে। পোশাকটা চেয়ারের ওপর রাখছে। বাইরে বেরিয়ে ওপরের দিকে চলে যায়। এখন তাকে ওয়াসরুমে ঢুকতে হবে। সে বলল-তোমরা জান যে পুতুলটাকে কোম্বের ঘরে নিয়ে গেছে। তুমি কী জান? বল বল তোমরা কে এই কাজটা করেছ।

দুটি কাজের মেয়ে হতভম্ব হয়ে গেছে। তারা মুখ চাওয়াচায়ি করতে করতে থাকে বোঝা যায় আসল উত্তরটা কারোর কাছেই নেই।

কিন্তু, মিস, আমরা কি উত্তরটা জানি?

-হ্যাঁ বল!

আজ সকালবেলা মজা করে কে পুতুলটাকে ডেক্সের উপর বসিয়ে দিয়ে গেছে?

তিনজন মেয়ে তাকায় আকাশের দিকে, আমতা আমতা করে কিছু বলার চেষ্টা করে এবার এরোসপেক্টের পালা। এরোসপেক্ট নামে ওই কোট ওম্যান বলে আমি এই কাজটা করিনি। ঠিক আছে কে ডেক্সের উপর বসিয়েছে?

আর একটি কাজের মেয়ে বলে ওঠে আমি তো করিনি, তুই করেছিস। মার্লিন?

মার্লিন সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রচালিতের মত মাথা নাড়ায়।

এরোসপেক্ট। এটা কিন্তু একটা ভয়ঙ্কর ঠাট্টা।

এরোসপেক্ট বলে ওঠে, আমাকে দোষ দেবেন না। এরোসপেক্টকে দেখলে মনে হয় সে বোধহয় এক মুখরা মহিলা, সব সময় তার গলার মধ্যে পিন ফুটে আছে। সে বলতে থাকে–আমার কি পুতুল নিয়ে খেলা করার মত সময় আছে? আর মাথায় কত কাজের বোঝা?

সাইবিল বলে ওঠে, এখানে তাকাও, তার গলার স্বর ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে।

হ্যাঁ।

ঠাট্টাটা খুবই ভালো, কিন্তু আমি জানতে চাইছি আসল অপরাধী কে?

এবার তিনজন মহিলার গলা শুকিয়ে গেছে।

আমরা আগেই বলেছি, মিসেস কক্স, আমরা কেউ এই কাজটা করিনি। মার্লিন আমরা করেছি কি?

মার্লিন হেসে বলে না আমি তো করিনি, পিলিও করেনি। মার্গারেট যখন না বলছে তখন তাকে অবিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। তাহলে ম্যাডাম আমাদের কেউ তো এই কাজটা করেনি। আপনি শুধু শুধু আমাদের বকছেন।

ফেলোস ব্রাউন বলে ওঠেন।

-আমি কি এটা করতে পারি, মিসেস কক্স?

আমি কখনো এই ধরণের ছেলেমানুষি খেলা খেলি না।

এবার মার্লিন বলে ওঠে। এটা বোধ হয় মিসেস গোমস এর কাজ। এখন ভয় পেয়ে সত্যি কথাটা চেপে যাচ্ছে।

সাইবিল মাথা নেড়ে বলল, না মিসেস গোমস-এ কাজ কখনো করবে না।

তার সম্পর্কে আমি যা জানি, তিনি এইসব ছোট খাট্টো ব্যাপারে মাথা ঘামান না।

মিস এরোসপেক্ট বলে ওঠে। তার মানে পুতুলটা নিজেই সিঁড়ি দিয়ে নেমে গিয়ে ওখানে বসে গেছে তাই তো?

সাইবিল বলে ওঠে। এভাবে ঠাট্টা করো না।

মিস উম্বে তাকে ডেস্ক থেকে নিয়ে গিয়েছিল এবং সোফাতে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছিল, অ্যালিসিয়া আবার বলতে থাকে। তার মানে আমি দুষ্টামি করে তাকে বসিয়েছি?

না এই ঘটনাটার মধ্যে আনন্দের কি আছে? বরং এতে মনের মধ্যে ভয়ের বাতাবরণ তৈরী হয়। তাই নয় কি?

–আমি তো আপনাকে আবার বলছি কক্স মার্গারেট বলে ওঠে। আপনি কেন আমাদের দিয়ে মিথ্যে কথা বলাতে চাইছেন। আমরা এই ব্যাপারটার বিন্দু বিসর্গ কিছুই জানি না।

সাইবিল বলে ওঠে। আমি দুঃখিত আমি তোমাদের মন নষ্ট করছি। অপরাধী তোমাদের মধ্যে লুকিয়ে আছে। পুতুলটা তো নিজে নিজে হেঁটে এখানে–হ্যাঁ আমার তাই মানে হচ্ছে।

এটা বোধ হয়। পুতুলটার নিজের কাজ হি হি

মার্লিন হাসতে হাসতে জবাব দেয়। আমাদের মনে হয় এই ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা বন্ধ করা উচিত।

সে বলে ওঠে–হ্যাঁ।

আমরা এসব আজে বাজে ব্যাপারে মাথা ঘামাই না।

তারপর সে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকে।

মিসেস কোম্বে দেখে মনে হল সে বোধ হয় আনন্দে আছে। সে গান গাইছে। চারপাশে তাকাচ্ছে।

সে বলল, আমার চশমাটা আবার হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু এটা আমার কাছে খুব একটা গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপার নয়। এই মুহূর্তে আমি আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ভাবছি। একটা ছোট সমস্যা দেখা দিয়েছে। দেখ, আমি কি কম নই। বারবার কেন চশমাটা হারায় বলত? আর একটা চশমা করে রাখতে হবে। তুমি কি সেটা দেখেছে? সাইবিল বলে আমি দেখেছি।

কোথায় আছে। একটু আগে তো এটা আমার হাতে ছিল?

-হ্যাঁ আমি চশমাটা নিয়েই ঘরের ও প্রান্তে গিয়েছিলাম, তখন তুমি ওপারে বলে গেলে আমি ওপারে বলে গেলে আমি সেখানে?

সে বেরিয়ে গেল অন্য ঘরের দিকে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে উঠলেন একি কথা আমি তো বুঝতে পারছি না।

তো কাজ করছিলাম। আমার চোখের যা অবস্থা চশমা ছাড়া একেবারেই পড়তে পারব না।

আমি দেখছি।

ওই কোণ থেকে তোমার দ্বিতীয় চশমাটা নিয়ে আসব?

সাইবিল জানতে চায়।

না আমার কাছে আর কোন চশমা নেই উদ্বিগ্নভাবে মাথা নাড়ে অ্যালিসিয়া কোম্বে!

ওটা আমি কোথাও ফেলে এসেছি। আমি গতকাল দুপুরে লাঞ্চ খেতে গিয়েছিলাম, সেখানে দুতিনটে দোকানে গিয়েছিলাম। মনে হয় ভুলে সেখানে হয়ত রেখে এসেছি।

ডিয়ার সাইবিল বলে ওঠে। তোমার উচিত তিনটে চশমা সঙ্গে রাখা। না। হলে এই অবস্থা হবে।

হ্যাঁ, তুমি একদম ঠিকই বলেছে। অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন, সারাজীবন ধরে আমাকে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমার মনে হয় একটি ছাত্রী ভালোভাবে রপ্ত। সে আর তার প্রতি কখনো অমনোযোগী হতে পারবে না।

সাইবিল বলে কোথায় সেটা রেখেছ? ভালো করে ভেবে দেখ। তুমি কি এই দুটো ঘর ছাড়া অন্য কোথাও গিয়েছিলে?

তাহলে?

আমার তো মনে হয় তুমি চশমাটা ভুল করে বোধ হয় সিটিং রুমে রেখে এসেছ। সাইবিল এগিয়ে যায়। চারপাশে ভালো করে খোঁজে। শেষ পর্যন্ত সে ভাবে দেখা যাক তো পুতুলটা কোন দুষ্টুমি করেছে কিনা।

সে পায়ে পায়ে পুতুলটার দিকে এগিয়ে যায়। পুতুলটা এক সোফা থেকে সরিয়ে দেয়।

আমি চশমাটা এখানে পেয়েছি। কোথায় পেলে সাইবিল?

এই অত্যন্ত দামী পুতুলটার তলায় আমার মনে যা তুমি বোধ হয় ভুল করে চশমাটা এখানে রেখে পুতুলটা তার ওপর বসিয়েছ।

না না আমি ঈশ্বরের শপথ করে বলছি। একাজ আমি কখনো করতে পারি না।

তাহলে?

এবার সাইবিলের আচরণে ঘটেছে এক অদ্ভুত আতঙ্ক মিশ্রিত বিশ্বাস। সে বলতে থাকে তুমি কি ভাবছ পুতুলটা তোমার সঙ্গে ঠাট্টা করবে বলে চশমাটা লুকিয়ে রেখেছিল?

অ্যালিসিয়া চিৎকার করে বলে আসলে—

আমি তা বলতে চাইছি না।

দেখো পুতুলটাকে দেখে মনে হচ্ছে সে খুব বুদ্ধিমতী।

–তোমার কী তাই মনে হয়?

সাইবিল বলে আমি তার মুখের গড়নটা একদম পছন্দ করছি না, মনে হয় সে বোধ হয় মনের সব খবর পড়ে উঠতে পারে।

হ্যাঁ, মিস কোম্বে–

ওকে দেখে মনে হয় ও বিষণ্ণতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠে।

তার কথা বলার মধ্যে একটা অস্পষ্ট ছাপ রয়েছে।

সাইবিল বলে ওঠে যাক পুতুলটাকে নিয়ে আর ভাবনা চিন্তা করতে হবে না। ওটাকে এক জায়গায় রেখে দাও।

স্টিফেন ভ্যালি কী বলেছেন। এইভাবে কথা বললে আমরা হয়ত একদিন পাগল হয়ে যাবো।

আমরা অন্য কাজে লেগে পড়ি, মনে হয় দশ মিনিটের মধ্যে সব এখানে আসবেন, সব ঠিকঠাক করে পাঠাতে হবে।

তুমি কি আমাকে একটু সাহায্য করবে?

মিসেস কক্স, মিসেস মার্গারেট, কী হয়েছে বল। সাইবিল বলতে চায়।

সাইবিল, যখন টেবিলের উপর ঝুঁকে পড়ে একটা কাজ করছে। কাপড়গুলোকে গুছিয়ে টুকরো টুকরো করছে। মিসেস কক্স, আবার সেই পুতুলটার খবর কি পেয়েছে। আমি তাকে গতকাল পোশাক পরিয়েছিলাম। ডেস্কের উপর পুতুলটা বসেছে এরকম ঘটনা কেন ঘটল বুঝতে পারছি না।

এই কথা শুনে সাইবিলের কাছে একটু সরে গেল। সে বেশ ভয় পেয়েছে। সে রাগতস্বরে বলে ওঠে। আমাকে এ নিয়ে বিরক্ত করো না। তুমি কি পুতুলটা সম্পর্কে আবার কোন গালগল্প শোনাতে চাও নাকি?

পুতুলটা কিন্তু ডেস্কের উপর উঠে বসেছে। সাইবিল এগিয়ে গেল। সিটিংরুমে পৌঁছে গেল, দেখতে পেল সত্যি সত্যি ডেস্কে পুতুলটা বসে আছে যেখানে গতকাল সাইবিল তাকে বসিয়ে দিয়েছিল।

সাইবিল উচ্চস্বরে কথা বলে, এখানে তুমি বসবে তাই না?

কী আশ্চর্য।

পুতুলটা কোন প্রত্যুত্তর দিল না। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।

সে পুতুলটাকে নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। তাকে ডেস্কের ওপর বসিয়ে দেয়।

সাইবিল বলে এটা তোমার জায়গা। তুমি এখানেই থাকবে।

–সে পায়ে হেঁটে অন্য ঘরে চলে যায়।

মিস কোম্বে বলে ওঠেন, হ্যাঁ সাইবিল, বোধ হয় আমাদের সঙ্গে কেউ মজা করছে। দেখ পুতুলটা আবার ডেস্কে উঠে বসেছে।

কি আমাদের সঙ্গে এই খেলা খেলবে?

আমার মনে হয় যে তিনটে মেয়ে ওপরে কাজ করছে। তাদের কেউ আমাদের বোকা বানাতে চায়।

সাইবিল অনেক ভেবেচিন্তে মন্তব্য করে। এরা ভাবছে বোধ হয় এরা আমাদের মনে ভয় ধরাবে, কিন্তু তারা কখন যে এখানে এল। সেটাই বুঝতে পারছি না।

কাকে তুমি অপরাধী বলে মনে কর?

মার্গারেটের দিকে না। না, আমার মনে হয় মার্গারেট এই কাজটা করবে না। সে একটি হাসিখুশি মেয়ে তার মধ্যে এত শয়তানি বুদ্ধি নেই।

যখন সে আমার কাছে সবকিছু স্বীকার করেছে। তার কথা বলার মধ্যে একটা আশ্চর্য অঙ্গীকার লুকিয়েছিল। আমার মনে হয় সবসময় হিহি করে হাসতে থাকা মেয়েটা এই কাজটা করেছে।

সাইবিল বলে ওঠে, ব্যাপারটা বোকা বোকা বুদ্ধি এনিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু একটা শেষ সংকেত উঁচিয়ে দেওয়া উচিত।

তাহলে তুমি কী করতে চাও?

দেখই না, আমি কী করি সাইবিল অর্থপূর্ণভাবে বলে।

ওই রাতে যাবার সময় সাইবিল একটা নতুন কাজ করল। সে সিটিং রুমটাকে বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে দিল।

সে বলল, আমি দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে গেলাম। চাবিটা আমার কাছে থাকল। অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠে। ঠিক আছে দেখা যাক। এইভাবে তুমি ওদের মজা করা আটকাতে পার কিনা। তুমি কি ভাবছ আমি ভুললামনা। তুমি নিজেই নিজের কাজগুলো কর? আমি ডেস্কে পুতুলটাকে বসাব সে আমাকে কাজগুলো করে দেবে।

এটা একটা সুন্দর ব্যাপার।

তারপর সবকিছু ভুলে যাব?

সাইবিল বলে হ্যাঁ তার একটা সম্ভাবনা আছে বৈকি।

এখন দেখা যাক আজ রাতে যেন আর কোন অঘটন না ঘটে।

সকালবেলা সাইদুলের ঠোঁট একেবারে শুকিয়ে গেছে।

সে তখন ইচ্ছে করি ওই ওয়ার্কশপের মধ্যে তারপর মিটিং রুমের দরজাটা খুলে দিল। এগিয়ে গেল সামনের দিকে।

শ্রীমতি গোমসকে দেখা গেল একহাতে ছাতা। অন্যহাতে ডাস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ে-বোধ হয় এখন এই দরজা খোলার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।

সাইবিল বলল, আমরা কী দেখব বলতো?

সে নিঃশ্বাস চেপে ভেতরে চলে গেল। দেখতে পেল পুতুলটা ডেস্কের উপর বসে আছে। মিসেস গোমস বলে উঠল–এই তো, মিসেস, তোমাকে এত বিবর্ণ দেখাচ্ছে কেন?

মনে হচ্ছে তোমার কথায় অস্পষ্টতা রয়েছে। রাতে ঘুম হয়নি? আমি কি মিস কোম্বেকে ডেকে আনব? তোমাকে ঘুমের ওষুধ দেবে?

সাইবিল নিজেকে শুধরে নিয়ে বলল না। আমি ঠিক আছি। সে পায়ে পায়ে পুতুলটার দিকে যেতে লাগল, তাকে আলতো করে তুলে ধরে, তাকে হাতে নিয়ে ঘরের ওই প্রান্তে চলে যায়।

মিসেস গোমস বলেন, আমার সঙ্গে আবার কেউ শয়তানির খেলা খেলছে।

সাইবিল বলে ওঠে। আমি তো বুঝতে পারছি না এই ঘটনাটা ঘটল কী করে।

কিন্তু আমি তো দরজাটা বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে গেছিলাম। তাহলে কারা এই তালাটা ভেঙ্গেছে।

এই ব্যাপারটার মধ্যে কেমন একটা রহস্য আছে বলে আমার মনে হচ্ছে।

এবার মিসেস গোমস বলে ওঠেন, মনে হচ্ছে চাবি কারোর কাছে একটা আছে। সেই চাবিটা দিয়ে এই শয়তানের কাজটা করেছে।

-সাইবিল বলে না তা কখনই সম্ভব নয় যে আর নকল চাবি তৈরি করবে?

এটা হল একটা পুরনো তালা? এরকম তো এখন আর পাওয়াই যায় না।

তাহলে অন্য কোন চাবি এই তালার মধ্যে ঢুকে গেছে, দেখতে এই ব্যাপারে অনুষ্ঠান করা দরকার।

এবার সবগুলো চাবি চেষ্টা করা হল, কিন্তু কোন চাবি দিয়েই ওই তালাটা খোলা গেল না।

সাইবিল শেষ পর্যন্ত বলে ওঠে ব্যাপারটা সত্যি রহস্যজনক মিস কোম্বে।

তখন তারা আসরের পিছনে বসেছিল।

অ্যালিসিয়া কোম্বেকে দেখে মনে হচ্ছে সে বোধ হয় একটা সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছে।

সে বলল আমরা ছোট্ট একটা বিষয়কে অকারণে বড় করে দেখছি। আমাদের উচিত এই ব্যাপারটা এখন ভুলে যাওয়া কেউ যদি আমাদের পেছনে রাখতে চায় তাকে রাখতে দাও। ধীরে ধীরে সে নিজেকে ক্লান্ত হয়ে এই কাজটা ছেড়ে দেবে, সাইবিল জানতে চায় এই বিষয়টা কপি প্রিন্ট হয়ে চলবে বলে তোমার মনে হয়? বলতো?

অ্যালিসিয়া বলে ওঠে। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।

তার মতে বাসে পৌঁছে গেলে এসব ব্যাপার নিয়ে ভাববে।

আমার মনে হল যা, পুতুলটা সত্যি সত্যি নিজের উপর বিরক্ত হয়ে উঠেছে। পুতুলটার হাবভাব দেখে তাই মনে হয়েছে।

–সাইবিল এবং অ্যালিসিয়া কোম্বে আবার দরজাটা ভালোভাবে বন্ধ করে দিল।

আমার সব মনে আছে। সাইবিল বলল, তোমার মনে আছে? আমার স্পষ্ট মনে পড়ছে আমাদের সাথে কেউ মজা করছে। কিন্তু কেন ধরনটা আমি বুঝতে পারছি না।

তোমার কি মনে হয় সকালবেলা পুতুলটাকে তুমি ডেক্সের উপর দেখবে?

হ্যারিস জানতে চাইলেন। হা সাইবিল বলে আমি বুঝতে পারছি।

তবে এই অশ্রুমান সত্যি হয় না। পুতুলটাকে আর ডেস্কের উপর বসিয়ো না। সেটা বসে পড়েছে।

জানলার ওপর। জানলার দিকে তাকিয়ে আছে। অদ্ভুত লাগছে তার এই গুণ। অবশ্য কেউ যদি তাকে ওখানে না বসিয়ে দেয়।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠে। এবার কিন্তু ব্যাপারটা আমাকে ভাবাচ্ছে। সেদিন মনে হয় চা খেতে খেতে, তারপর বলে আমি বুঝতে পারছি না কিভাবে পুতুলটা নিজেই সচল হয়ে উঠছে?

সত্যি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হবে। এই সমস্যার হাত থেকে আমরা কী করে মুক্তি পাব। একটা অনড় পুতুল তার অবস্থান পরিবর্তন করছে কী করে।

তখন থেকে আরো নতুন নতুন ঘটনা যাতে দেখা গেল, এতদিন পর্যন্ত রাতের অন্ধকারে পুতুলটা সজীব ও সচল হয়ে উঠেছিল।

এখন কিন্তু দিনের আলোতে সেটার জায়গা পরিবর্তন। হঠাৎ তাকে দেখা গেল সে। লিভিং রুমে বসে আছে। কয়েক মুহূর্তের পর তাকে দেখা গেল অন্য কোন জায়গায়। কখনও তার কোন জায়গায়। পড়ছে পা ছড়িয়ে কখনও চেয়ারে হাতলের উপর চুপটি করে বসে, কখনও বিভিন্ন চেয়ারে ঘুরিয়ে বসছে। কখনও আবার উঠে যাচ্ছে জানলার উপর উঠে যাচ্ছে জানলার উপর পিটপিট করে দেখছে চলমান জীবন। আবার কখনো ডেস্কে কিরে আসছে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে। মন্তব্য করে ইচ্ছেমত খুঁজে বেড়াচ্ছে আমার মনে হয় পুতুলটা বুঝি খুবই আনন্দ পেয়েছে।

তারা কী করে এই সমস্যার সমাধান করবে বুঝতে পারবে না। দৈনন্দিন কাজকর্ম মাথায় উঠে গেছে। ভেলভেটের টুকরোগুলো চারপাশে জড়ানো ছিটানো অবস্থায় পড়ে আছে।

সেগুলোকে একসাথে রঙিন করে তোলার দরকার। যা হলে ঠিক সময়ের প্রস্তুতিতে দেবে কী করে? এইরকম চলতে থাকলে ব্যবসা একেবারে লাটে উঠে যাবে।

শেষ পর্যন্ত অ্যালিসিয়া কোম্বে একটা স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। সে বলল এবার মনে হচ্ছে পুতুলটার কাছ থেকে আমাদের নিষ্কৃতি নিতে হবে। ব্যাপারটাকে শেষ করে দিতে হবে। তারই প্রস্তাবে সাইবিল অবাক হয়ে গেল। বলল সে সত্যি সত্যি তুমি কি।

কোথায় যেন একটুকরো বিষণ্ণতার সুর।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন–হ্যাঁ। ওকে আমরা আগুনে ফেলে ঘি দিয়ে মাখব।

এখানে আগুন কোথায় পাওয়া যাবে বলো তো?

-ও একটা কাহিনী, ওকে পুড়িয়ে মারতেই হবে।

একটু চিন্তিত হয়ে সে আবার মন্তব্য করে–অযথা ওকে ছুঁড়ে ডাস্টবিনে দিয়ে এলে হয়।

সাইবিল বলে ওঠে

-না এটা করা বোধ হয় ঠিক হবে না। ডাস্টবিন থেকে কেউ ওকে নিয়ে যাবে আবার সেখানে বসিয়ে দিয়ে যাবে। তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না।

অ্যালিসিয়া কোম্বে অনেক ভাবনাচিন্তা করে বলে ওঠে–তাহলে আমরা কি ওকে উপহার হিসাবে কোথাও পাঠাতে পারি না?

সোসাইটি আমার কাছে পুতুলের জন্য বায়না করে, শুধু কি তাই? ওকে কুমস ডে তে পাঠিয়ে দিলে কেমন হয়? আমার মনে হচ্ছে এটাই বোধ হয় ওর হাত থেকে বাঁচবার ভালো উপায়।

সাইবিল বলে–আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। কাজটা করতে গেলে আমরা ঠিকমতা পারব তো?

-তুমি কেন এইকথা বলছ সাইবিল বলে ওঠে। আমার যেন জানি না, মনে হচ্ছে। পুতুলটা আবার এখানে চলে আসবে।

–কেন একথা মনে হচ্ছে তোমার?

ঠিক বলতে পার–ঘরে ফেরা পায়রার মত। হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ? তাহলে? তাহলে ওর হাত থেকে আমরা কী কোনদিন মুক্তি পাব না।

অ্যালিসিয়া কোম্বে জানতে চায়–পেতেই হবে। ও হচ্ছে একটা জীবন্ত শয়তানি। বারোমাস ও আমাদের এভাবে জ্বালাবে। তাই আবার হয় নাকি।

সাইবিল বলে ওঠে। আমার সমস্ত শরীরের ভিতর একটা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পুতুলটা আমাদের থেকে অনেক শক্তিশালী এটা বলতে পারি–তুমি আমি দুজনে মিলে ওকে সরাতে পারব না।

–আমি কি করব?

এসো ঐসব উল্টোপাল্টা কথা কেন বলছ? তুমি একবার পুতুলটার মধ্যে থেকে সবকিছু বের করো। পুতুলটাও চাইছে আমাদের শেষ করতে। কিন্তু আমরা তো ওর কোনো ক্ষতি করিনি। এটা বোধ হয় এর প্রতিহিংসার একটা বড় উদাহরণ।

-তুমি কী বলছ?

অ্যালিসিয়া কোম্বে সন্তর্পণে চারিদিকে তাকায়। কী বলছ তুমি? দেখছ রংগুলো বিবর্ণ হয়ে গেছে। পুতুলটা কি এখানে ছিল? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তার মধ্যে জেগে উঠেছে একটা অসহনীয়তা। ও কেন এখানে এল?

তার আমি করব?

দেখ মিসেসের ব্যাপারটা কেমন যেন হয়ে গেছে।

সেকি ভয় পেয়েছে? সে বোধ হয় পুতুলটার সংস্পর্শে আসতে চাইছে না।

ওর মধ্যে কেমন একটা ঘৃণার মনোভাব রয়েছে।

অ্যালিসিয়ার কণ্ঠস্বর আরো তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে—

সাইবিল বলতো এখন আমরা কী করব? তুমি তো সব ব্যাপারে আমাকে সৎ পরামর্শ দিয়েছ। এখন এই পুতুলটার হাত থেকে কীভাবে নিষ্কৃতি পাব বলতো? সাইবিল স্বীকার করে–সত্য কথা বলতে কী আমি মন রাখতে পারছি না। পুতুলটা কী এভাবে আমাদের মেরে ফেলতে চাইছে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে মন্তব্য করে–সত্যি অত ভালো কাজ আমরা করতে পারতাম। মনে হচ্ছে এবার বোধ হয় পুতুলটাকে বিদায় দিতেই হবে।

-তুমি কি সত্যি তাই চাইছ।

অ্যালিসিয়া অধৈর্যস্বরে বলে ওঠে–আমি ঠিক জানি না, সত্যি সত্যি কী ঘটতে চলেছে।

পরের দিন সকাল বেলা সাইবিল ওয়ার্ক রুমে প্রবেশ করে দেখল সিটিং রুমটার বাইরে তালা মারা।

–মিস কোম্বে তোমার কাছে কী চাবিটা আছে?

–গতকাল তালা বন্ধ করেছিলে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠে-হা, আমি তো তালা বন্ধ করেছিলাম। দেখা যাক কী হয়।

-তুমি কী বলতে চাইছ?

–আমি ওই ঘরটার আশা ত্যাগ করেছি। ওই ঘরটা এখন থেকে পুতুলের ঘর। আমাদের দুটো ঘর নিয়ে কী হবে? এই একটা ঘরের মধ্যে আমরা সব কাজ করতে পারি।

–কিন্তু ওটাতো তোমার নিজস্ব সিটিং রুম। ওটার আর কোন প্রয়োজন নেই। আমার কাছে? আমার একটা ভারী সুন্দর বেডরুম আছে। আমি সেখানে বসার ব্যবস্থা করতে পারব।

–তার মানে তুমি কী আর কখনো সিটিং রুমে যাবে না।

সাইবিল অবাক হয়ে প্রশ্ন করে। কিন্তু এটাই আমার স্থির সিদ্ধান্ত।

কিন্তু ওটা পরিষ্কার করবে? না হলে সে একেবারে বিশ্রী নোংরা হয়ে আছে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলেন–দেখা যাক। যদি একটা পুতুল ওখানে থেকে আনন্দ পায় তাই যাক। ও না হয় ঘরটার ওপর দখলদারি কায়েম করল। দেখো ও নিজেই ঘরটা পরিষ্কার করবে। ও আমাদের ঘৃণা করে তুমি সেটা জানতো। সাইবিল এবার অবাক হয়ে জানতে চায়–কী বলছ তুমি? এটা কি কোন বিশ্বাসযোগ্য কথা।

হ্যাঁ, তুমি কখনো ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখেছ? সেখান থেকে ঘৃণার দৃষ্টি ঝরে পড়ছে।

সাইবিল অর্থপূর্ণভাবে জবাব দেয়–হ্যাঁ, আমি মাঝে মধ্যেই ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই। ও বোধ হয় সত্যি আমাদের ঘৃণা করে এবং ও একা থাকতেই ভালবাসে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে-ওটা একটা অদ্ভুত ছোট্ট পদার্থ। এখন জিজ্ঞাসা করি, ও আর অসুবিধে করবে না।

ঘটনাগুলো স্বাভাবিকভাবেই চালানো।

অ্যালিসিয়া কোম্বে তার সহকর্মীদের কাছে জানিয়ে দিয়েছে সে এখন থেকে আর সিটিং রুমটা ব্যবহার করবে না। এতগুলো ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুব একটা সহজ কাজ নয়।

কিন্তু মেয়েরা কি এভাবে কাজ করতে পারবে? একজন তো মন্তব্য করেই বসলেন –মিস কোম্বের মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে? উনি এরকম আচরণ করছেন কেন জানি না। সবকিছু ভুলে যাচ্ছেন। মনে হয় উনি বোধ হয় পুতুলটার হাত থেকে নিষ্কৃতি চাইছেন।

আর একজন বলে বসে–কিন্তু ওনার ওই স্বভাব কখনো সফল হবে, উনি বোধ হয়। আর সফল হবেন কিনা আমার সন্দেহ হচ্ছে।

অ্যালিসিয়া তার চেয়ারে বসে আছে। চিন্তামগ্ন সে। তারপর নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে–আমি কি ঠিক কাজ করলাম। সইবিল কি আমাকে সাহায্য করবে? সাইবিল এবং মিস কোম্বে যদি আমাকে সাহায্য করে তাহলে আমার কোন সমস্যা থাকবে না। কিন্তু এই ব্যাপারটার শেষে কী আছে তাতে আমি জানি না।

দেখতে দেখতে তিনটি সপ্তাহ কেটে গেল–সাইবিল অ্যালিসিয়া কোম্বেকে বলল আমাদের তো একবার ঘরটা দেখে আসা দরকার। কেন?

আমি বলতে চাইছি কি ওর অবস্থা কেমন সেটা দেখতে হবে। আমার মনে হয় ওই ঘরটা এখন খুব নোংরা হয়ে গেছে। একবার ধুলো পরিষ্কার করা দরকার। ঝাট দিয়ে ধুলো বাইরে ফেলে তারপর না হয় আবার তালা বন্ধ করে দেব।

-ওটা এখন বন্ধই থাক। কি দরকার পুতুলটাকে রাগিয়ে দিয়ে? অ্যালিসিয়া কোষে মন্তব্য করে। এর পর সাইবিল বলে ওঠে–ঠিক আছে। তুমি দেখছি আমার থেকে বেশী কুসংস্কারচ্ছন্ন হয়ে গেছ।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে-হা, নিজের মনের উপর এখন আমার কোন অস্তিত্ব নেই। আমি এসব ব্যাপারগুলো বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছি। আমি কীভাবে যে দিন কাটাব তোমাকে বোঝাতে পারব না। আমি আর কখনো ঘরটাতে ঢুকতে চাইছি না।

সাইবিল এবার জোরের সঙ্গে বলল, আমি ওখানে যাবই? তুমি কি আমাকে চাবিটা দেবে?

তুমি কেন জেনেশুনে এত বড় একটা ভুল করতে চলেছ? তোমার আচরণটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। মন্তব্য করে বসে অ্যালিসিয়া কোম্বে।

-ঠিক আছে, কাজটা আমার উপরই ছেড়ে দাও। দেখব পুতুলটা ওখানে কী করছে? ওখানে ওকে একা থাকতে দাও না। অ্যালিসিয়ার অনুরোধ, আমরা না হয় ওই ঘরটার উপর থেকে আমাদের সমস্ত সত্ত্ব ত্যাগ করলাম। আপনি বোধ হয়–পুতুলটার উপর রসিকতা করছেন।

ও খুশী বলেই তো ভালো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে অ্যালিসিয়া বলে ওঠে কী বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করছি তাই জানি না।

হ্যাঁ, আমি এই ব্যাপারে মাথা ঘামিয়ে ফেলেছি–না। তুমি কথা বলছ। আমি উত্তর দিচ্ছি। সময় চলে যাচ্ছে। এখন আমাকে চাবিটা দাও।

ঠিক আছে ঠিক আছে।

আমার মনে হয় তুমি বোধ হয় ভয় পাচ্ছ। আমি এখন দেখতে চাইছি পরেরটা কেমন আছে।

শেষ অবধি সাইবিল দরজার তালা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ল। সে বলে উঠল-কী আশ্চর্য, ঘরটা কি পরিচ্ছন্ন বলে মনে হচ্ছে না তোমার?

অ্যালিসিয়া উঁকি মেরে বলে–সত্যি তাই? কিন্তু পরিষ্কার করল কে?

-তুমি ঠিক বলছো তো?

আমি হলফ করে বলতে পারি—

–সাইবিল বলে–ওই তো মহারানী ওখানে বসে আছেন, পুতুলটা সোফার উপর বসে। সে কিন্তু তার গতানুগতিকায় বসে নেই। মনে হচ্ছে, সে বোধ হয় হাত-পা ছড়িয়ে আরাম করে বসেছে।

তার পিঠে একটা বালিশ রয়েছে। বালিশের উপর সে মাথাটা এলিয়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছে কারোর জন্য অপেক্ষা করছে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠে–হ্যাঁ পুতুলটা বেশ ভালই আছে তাই না? আমি কী এখানে এসেছি বলে ওর কাছে মাফ চেয়ে নিতে হবে।

সাইবিল বলে–চলো আমরা বাইরে বেরিয়ে যাই।

তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে আসে। দরজাটা তালা বন্ধ করে দেয়। মহিলা দুজন পরস্পরকে পর্যবেক্ষণ করে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে মন্তব্য করে–আমি জানি না এই ব্যাপারটা শেষ হবে কী করে। তুমি ঠিকই বলেছ, আমরা কী সত্যি সত্যি একটা পুতুলের ভয়ে ঘরটা ছেড়ে দেব?

শেষ অবধি কী হবে বল তো? পুতুলটা আমাদের সমস্ত সত্তাকে গ্রাস করে নেবে? ওটা কি একটা জীবন্ত পুতুল হয়ে উঠবে?

–আমার মাথায় একটা পরিকল্পনা এসেছে।

–কী ব্যাপার বলতো। এটা কী পুতুলটার বিষয়ে? তুমি কী জান ওই পুতুলটা সত্যি সত্যি কোথা থেকে এসেছে?

এই ব্যাপারটা একদম আমার মনে নেই। অ্যালিসিয়া বলে এ বিষয় নিয়ে আমি যত চিন্তা করি মাথাটা একেবারে গোলমাল হয়ে যায়। তবে যে ওকে আমি কিনিনি। এ ব্যাপারে আমি সুনিশ্চিত। আমার মনে হয় ওটা বোধ হয় কেউ উপহার হিসেবে আমাকে–দিয়েছে। অথবা ও নিজেই উড়ে এসে জুড়ে বসেছে।

–উপহার হবে কী করে?

–তুমি এমন বোকার মত কথা বল না?

অ্যালিসিয়া বলে ওঠে–হ্যাঁ, আমার কথার ভেতর যুক্তি নেই। আমি নিজেই বুঝতে পারছি না যুক্তি আসবে কোথা থেকে? দেখছে না পুতুলটা কেমন আচরণ করছে।

মনে হল ওরা বোধ হয় পুতুলটাকে নিয়ে এখন আলোচনা করবে। সাইবিল শোরুমে গেল, সে নানাকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তারপর তারা আবার ফিরে এল ওয়ার্করুমে।–মিস কোম্বে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসুন।

-কী হয়েছে?

অ্যালিসিয়া কোম্বে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী করে। তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ দেখা পড়েছে। গতকাল তার ঠিক মত ঘুম হয়নি। সাইবিল কী হয়েছে বল তো?

-দেখ দেখ, কী হয়েছে।

ওরা দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। আমার এটা হল শোরুমে। পুতুলটা বসে আছে সোফার ওপর। হাত পা ছড়িয়ে মুখে মিষ্টি হাসি। সাইবিল বলে দেখেছ! পুতুলটা বন্ধ ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখানে এই ঘরটার উপর নিজের দখলদারি কায়েম করতে চাইছে।

অ্যালিসিয়া এবার চিৎকার করে বলেন, এবার একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে, পুতুলটা বোধ হয় গোটা দোকানটা কিনতে চাইছে।

সাইবিল বলে তুমি ঠিকই বলেছ। অ্যালিসিয়া বলে ওঠে। চুপ চুপ শয়তানি পুতুলটা রয়েছে তাই না?

–এইভাবে আমার সবকিছু গ্রাস করবে? আমরা ওকে আর চাইছি না।

সাইবিলের কথাগুলো কেমন যেন শোনায়, পুতুলটা নড়ে চড়ে বসে। মনে হয় তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি সতেজ হয়ে উঠেছে। একটা হাত বাড়িয়ে দেয় সামনের দিকে, মুখটা ঢাকা থাকে। মনে হয় সে বোধ হয় পিট পিট করে তাকাচ্ছে তার আচরণের মধ্যে লাজুক শব্দটা ফুটে উঠেছে।

অ্যালিসিয়া বলে ওঠে–এতটা শয়তান আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তুই আমার চোখের সামনে থেকে বেরিয়ে যা।

হঠাৎ সাইবিলকে অবাক করে দিয়ে অ্যালিসিয়া ঘরের এক কোণে চলে যায়। পুতুলটাকে তুলে নেয়। জানলার কাছে চলে যায়। জানলাটা খুলে দেয়। তারপর পুতুলটাকে ছুঁড়ে দেয় রাস্তার দিকে। সাইবিলের মুখ থেকে ভয়ঙ্কর আর্তনাদ বেরিয়ে আসে। তখন সে অবাক হয়ে যায় বাধা দেবার সামান্যতম সুযোগ পায়নি।

–ও অ্যালিসিয়া, তুমি এমন করলে কেন?

এটা করা তোমার কখনো উচিত হয়নি। অ্যালিসিয়া কোম্বে জ্বলে ওঠে। এই প্রথম আমি বোধ হয় ভয়ের কাজকে জয় করতে পারলাম। আমি জানি ও আর কখনো এসে আমাদের জ্বালাতন করবে না।

সাইবিল অতিদ্রুত জানালার দিকে এগিয়ে যায়। তখন পুতুলটা শোয়ানো আছে। রাস্তার উপর, হাত পা গুলো ছিঁড়ে গেছে।

সাইবিল বলে ওঠে-তুমি ওকে মেরে ফেললে?

অ্যালিসিয়া বলল–বাজে কথা বলে না। যার মধ্যে জীবন নেই তাকে আমি হত্যা করব কী করে? ওখানে কী আছে বলতো?

ওখানে আছে ভেলভেট, চুল-ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো বা রঙিন চামড়া, ওটা কী একটা জীবন্ত পুতুল?

সাইবিল বলে ওঠে–হ্যাঁ, তুমি দেখনি, পুতুলটার মধ্যে প্রাণ স্থাপিত হয়েছিল।

অ্যালিসিয়া কথা বলতে পারে না। আমার মনে হয় কে যেন তার নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিয়েছে। হায় ওই ছোট্ট মেয়েটা ছুটে আসছে না। পরেই পোশাক পরা একটি মেয়ে দ্রুত চলে আসে। তাকিয়ে থাকে সে এক দৃষ্টিতে পড়ে থাকা পুতুলটার দিকে। অনেকবার এপাশ-ওপাশ তাকায়। যখন দেখে কেউ তাকে দেখছে না, সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। বাড়ির পাঁচিল ডিঙিয়ে যায়। তখন সে নিচু হয় তারপর সে পুতুলটাকে কোলে তুলে নেয়। রাস্তা দিয়ে যেতে থাকে।

চীৎকার করে অ্যালিসিয়া বলে-থাম থাম। সে সাইবিলের দিকে তাকায়।

তারপর বলে ওঠে–ওই পুতুলটাকে কেউ যেন ওখানে থেকে নিয়ে যেতে না পারে। ওই পুতুলটা সাংঘাতিক। ওটা একটা শয়তান। চলো আমরা বেরিয়ে গিয়ে মেয়েটাকে আটকাই।

তারা খুব তাড়াতাড়ি বাইরে এগিয়ে যায়। কিন্তু সামনে তখন অনেকগুলো গাড়ি চলে এসেছে। তিনটে ট্যাক্সি একে অপরকে পথ করতে চাইছে না। তাদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বেঁধে গেছে। তখনও গাড়িটাকে দেখা যাচ্ছে। সে একটা আইল্যান্ডের উপর দাঁড়িয়ে আছে। সাইবিল ওকি। মৃত্যু পুতুলটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

অ্যালিসিয়া কোম্বে তাকে শোনার চেষ্টা করছে না। একটা বড় ভ্যান এসে পথ আটকে দিয়েছে। সাইবিল বলে ওঠে কী করছ? সাইবিল আর অ্যালিসিয়া কোম্বেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছিল। তারা আস্তে আস্তে সেই আইল্যান্ডের দিকে এগিয়ে আসে।

মেয়েটা ইতিমধ্যে অন্যদিকে চলে গেছে। ও কি রাস্তা পার হতে পারে। তখন পর্যন্ত পুতুলটাকে ছাড়ে নি। অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠে তুমি কিন্তু পুতুলটাকে নেবে না। এটা আমাকে দিয়ে দাও।

বালিকা এবার মুখ ফিরিয়ে তাকায়। তাকে দেখে বোঝা যায় তার মধ্যে বিচ্ছিন্নভাব রয়েছে। বয়স আট বছরের বেশী হবে না। চোখ মুখে উদ্ধতের ছাপ। সে নালিশ করে-তোমরা পুতুলটাকে জানলা দিয়ে ছুঁড়ে দিয়েছিলে?

তোমরা যদি ওর সঙ্গে এমন ব্যবহার কর তাহলে তোমাদের কাছে ফিরে যাবে কেন? তোমরা তো ওকে চাও না, তাই ওই পুতুলটা এখন আমার।

অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠে–আমি তোমাকে আর একটা পুতুল এনে দেব। আমাদের একটা খেলনার দোকান আছে। যে পুতুল তুমি চাইবে। সেটাই তোমাকে দেব।

আমি তোমাকে সবথেকে ভাল পুতুল দেব। তুমি আমাকে ওই পুতুলটা ফেরৎ দাও। মেয়েটি বলে ওঠে-না, ও তোমাদের কাছে যাবে না।

–ভেলভেটের পুতুলটাকে নিয়ে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করল।

সাইবিল বলে ওঠে–কথা শোন, শেষ বারের মত বলছি, পুতুলটা আমাদের কাছে দিয়ে দাও। ওই পুতুলটা কখনই তোমার নয়।

সে খুব তাড়াতাড়ি, মেয়েটির কাছে পৌঁছে পুতুলটাকে ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করল। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি তার ওপরে আঘাত করে অতি দ্রুত চিৎকার করে ওঠে। আঘাতের শব্দ শোনা যায়।

সে বলে ওঠে–কখনও না, কখনও না। আমার–আমার, আমার পুতুল, আমি এটাকে ভালোবাসি, তোমরা কেউ এটাকে ভালোবাসো না। তোমরা পুতুলটাকে ঘৃণা কর। বল ঠিক বলেছি কি না। তোমরা তাই পুতুলটাকে ছুঁড়ে বার করে দিয়েছ।

পুতুলটা আমাকে ভালবাসে। ও ভালবাসা ছাড়া আর কিছুই চায় না। তারপর একদিন চলমান মোটরগাড়ি থেকে কোথায় যেন হারিয়ে গেল।

ধীরে ধীরে সে অনেকটা দূরত্বে চলে গেল। তাকে আর ধরা যাবে না। এই বিষয়টাকে বুঝতে পারল।

আলিসিয়া বলে ওঠে–ও চলে গেছে। ও কি বলে গেল যাবার আগে শুনেছ?

পুতুলটা ভালবাসা ছাড়া আর কিছু চায় না।

অ্যালিসিয়া মন্তব্য করে–হ্যাঁ, সেটা সঠিক কথা বলেছে পুতুলটা এমন এক জায়গায় পৌঁছে গেছে সেখানে অ্যালিসিয়ার মত মেয়ে বেঁচে আছে। এখানে অন্ধকার বলে কিছু নেই।

পুলিশটা অবাক হয়ে দেখল মাঝ বয়সী ভদ্র মহিলার চোখে অশ্রুর ঈশারা। সে বেচারি বুঝতেই পারছে না এখন তার কী করা উচিত!

–সমাপ্ত–

Exit mobile version