-ধন্যবাদ মঁসিয়ে। এটা সত্যিই একটি দামী খবর।
.
২২.
নাগিনীর বিষ নিঃশ্বাস
মিঃ ক্যাথারিন তার হোটেলে ফিরে আসতেই রিসেপশন ক্লার্ক বললেন, এক ভদ্রলোক আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।
-কে? কি নাম?
–নাম বললেন না। শুধু বললেন, আপনার সঙ্গে তার দরকারী কথা আছে। আমি তাকে অপেক্ষা করতে বলেছি।
-কোথায়?
–সেলুনে।
–ঠিক আছে। আমি এখুনি যাচ্ছি।
সেলুনে ঢুকেই দেখলেন বসে আছেন কাউন্ট দ্য লা রোচি। তিক্ত কণ্ঠে বললেন, আমার মনে হয় এখানে আসাটা নিতান্তই পণ্ডশ্রম হয়েছে আপনার।
–আমার তা মনে হয় না। আমার কথাগুলো শুনলে আপনি বুঝবেন কথাগুলি গুরুত্বপূর্ণ।
–বেশ বলুন, কি বলতে চাইছেন।
–প্রথমে আমি আপনার গভীর শোকের বেদনা জানাই।
–আপনি যদি একথা বলার জন্যে এসে থাকেন তাহলে আপনি আসুন। এসব শোনার সময় আমার নেই।
–ইংরেজদের ভদ্রতাবোধ যে কত কম তা আর একবার প্রমাণিত হল। এবার আমার বক্তব্যটা শুনুন। আপনি এখন বেশ মোটা টাকার মালিক, তাই না?
–তাতে আপনার কি এসে যায়?
–আমাকে পুলিশ আপনার স্ত্রীর হত্যাকারী বলে সন্দেহ করছে।
–তাই নাকি?
–আমি এ ব্যাপারে একেবারেই নিরপরাধ। আমি আপনার কাছে প্রতিজ্ঞা করে বলছি….
–আমার কাছে প্রতিজ্ঞা করে লাভ নেই, ওটা আপনি মঁসিয়ে ক্যারেজ-এর কাছে করলে লাভবান হবেন। তিনি মামলার অ্যাজ দ্য ইনস্ট্রাকশন।
–আমার আরও কিছু বক্তব্য আছে মঁসিয়ে।
–সংক্ষেপে সারুন।
–বর্তমানে আমি খুবই আর্থিক অনটনে পড়েছি। আমার কিছু টাকার দরকার। কাউন্টের কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ড্রেক আসন ছেড়ে উঠল।
এই কথাটাই আমি শুনতে চাইছিলাম। কিন্তু জেনে রাখ নরপশু, ব্ল্যাকমেলিং করে আমার কাছ থেকে একটি ফ্রাও আদায় করতে পারবে না।
কাউন্ট দেখলেন যে ক্যাথারিন চলে যাচ্ছেন তাই বললেন, আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন মিঃ ক্যাথারিন। আমি আপনাকে ব্ল্যাকমেল করতে আসিনি। আমি বলতে এসেছি, আপনি যে আপনার স্ত্রীকে হত্যা করেছেন এর নির্ভরযোগ্য প্রমাণ আছে আমার কাছে। আপনি যদি ইচ্ছা করেন তাহলে কিছু টাকার বিনিময়ে ব্যাপারটা চাপা দিতে চাই। আশা করি বিষয়টার গুরুত্ব বিবেচনা করে আপনার মতামত এখুনি আমায় জানিয়ে দেবেন।
–আপনি কি আমাকে ভয় দেখাতে চাইছেন?
-না, কাউকে ভয় দেখানো আমার পেশা নয়। আমি শুধু বলতে চাইছি, আপনি ইচ্ছে করলে ব্যাপারটাকে চাপা দিতে পারেন। যে মহিলা আপনার অপকর্মের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী, তার মুখ বন্ধ করতে হলে অবশ্যই কিছু অর্থ ব্যয় করতে হবে আপনাকে। তাছাড়া আমারও কিছু চাই…
–কার কথা বলছেন আপনি? মিরেলি?
–হ্যাঁ তিনিই। এক লক্ষ ফ্রা হলেই মুখ বন্ধ করা যাবে।
–এবার তাহলে আমার উত্তরটা শুনবেন কি?
–নিশ্চয় শুনবো মঁসিয়ে।
–আপনি এখান থেকে সোজা বেরিয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে ক্যাথারিন সেলুন থেকে বেরিয়ে গেলেন।
ড্রেক ক্যাথারিন সেলুন থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেলেন মিরেলির হোটেলে। রিশেপশন অফিসে খবর জানতে পারলেন মিরেলি ঘরেই আছেন। তিনি তার নাম ছাপানো কার্ডখানা রিশেপশন ক্লার্কের হাতে দিলেন। আমি তার সঙ্গে এখুনি দেখা করতে চাই।
বয় কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফিরে এসে মিঃ ক্যাথারিনকে বললেন, আপনি আসুন মঁসিয়ে।
তিনতলায় একটা ঘরের সামনে গিয়ে বলল, এই ঘরেই মাদমোয়াজেল থাকেন। আপনি ভেতরে যান।
ড্রেক ঘরে ঢুকতেই মিরেলি চোখ সরাল। তাহলে শেষ পর্যন্ত তুমি এলে? আমি জানতাম তুমি আসবে। এলেই যখন, বসতে আপত্তি হবে না নিশ্চয়ই।
ড্রেক না বসেই বললেন, কাউন্টকে আমার কাছে পাঠিয়েছিলে কেন?
–সেকি! আমি তাকে পাঠাব কেন?–সারা শরীরে বিস্ময় দেখান মিরেলি।
–ব্ল্যাকমেলিং করে কিছু হাতিয়ে নেবার জন্যে।
ড্রেক-এর কথা শুনে মিরেলি বললেন, কাউন্ট যে তোমাকে ব্ল্যাকমেলিং করতে যাবে তা অনুমান করতে পারিনি। আমি তার কাছে গিয়েছিলাম ঠিকই, এবং তোমার ওপরে অভিমান করে কয়েকটা কথা বলেছিলাম কিন্তু আসলে কিছুই না। ওকথা কেবল তুমি আর আমি ছাড়া কেউ জানে না। ড্রেক ডারলিং, মিছিমিছি আমাকে ভুল বুঝো না।
কাছে এগিয়ে এসে ড্রেকের মুখের সামনে নিজের মুখটি তুলে ধরে আবেশে চোখ বুজলো। ড্রেক তাকে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। তুমি যদি ভেবে থাক আমার স্ত্রীকে আমিই হত্যা করেছি তাহলে মহা ভুল করবে তুমি। আমি এতটা নিচে নামিনি যে টাকার জন্যে নিজের স্ত্রীকে হত্যা করব।
এবার মিরেলি বিষধর গোখরো সাপের মতো রাগে মাথা তুলে বলল, তুমি এ ব্যাপারে আমাকে ধাপ্পা দিতে পারবে না ড্রেক। এখনও বলছি তুমি আগুন নিয়ে খেলা করো না। সেদিন তুমি বলেছিলে তোমার স্ত্রীর মতো স্বাস্থ্যবতী স্ত্রীলোক কেবল অ্যাকসিডেন্টেই মরতে পারেন আর কোনো কারণে তোমার স্ত্রীর মৃত্যু ঘটলে তুমি তোমার পাওনাদারদের হাত থেকে রক্ষা পাবে। ড্রেক তুমি যদি এখনও আমার কাছে ফিরে আস তাহলে তোমার কথা কোনো তৃতীয় ব্যক্তির কানে যাবে না।
তুমি আমাকে ভয় দেখিয়ে বশ করতে চাও! কিন্তু তোমার যা খুশি তাই করতে পার, আমি আর তোমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবো না।
-বেশ, তাহলে তাই হবে। তোমার অপকর্মের সঙ্গী আমি নিজে। আমি নিজের চোখে দেখছি নয়েনশ স্টেশনে ট্রেন থামার সঙ্গে সঙ্গে তুমি তোমার স্ত্রীর কামরা থেকে বেরিয়ে এসেছিলে আর তখন তোমার স্ত্রী আর বেঁচে ছিল না।