Site icon BnBoi.Com

আফটার দি ফিউনারেল – আগাথা ক্রিস্টি

আফটার দি ফিউনারেল - আগাথা ক্রিস্টি

আফটার দি ফিউনারেল

১. বৃদ্ধ ল্যান্সকম্ব

প্রথম পরিচ্ছেদ

০১.

ঘরে গিয়ে বৃদ্ধ ল্যান্সকম্ব জানালাগুলো খুলে মাঝে মাঝে বাইরে উঁকি মারছিল।

এখুনি তারা ফিরে আসবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ করে। বৃদ্ধ জানালাগুলি তাড়াতাড়ি খুলবার চেষ্টা করল, অনেক জানালা।

এণ্ডারবি হল একটা বিরাট বাড়ি ভিক্টোরিয়ার আমলের। বৃদ্ধ বাটলার মেন্টালপিসের ওপর রাখা একটা ছবির দিকে তাকাল, কর্ণোলয়াস এবারেনথী। এই এণ্ডারবি হল ওঁরই জন্য তৈরি হয়েছিল।

মিঃ রিচার্ড হল বৃদ্ধের প্রভু। খুব ভালো লোক ছিলেন। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি ভীষণ আঘাত পেয়েছিলেন তরুণ মার্টিমারের মৃত্যুতে। এরপর বৃদ্ধ শোক সহ্য করতে না পেরে মারা গেলেন। প্রভুর মৃত্যু বৃদ্ধ এণ্ডারবিকে খুব আঘাত করেছে। যুদ্ধে মারা গেলেন মিঃ গর্ডন। এই আরেকটা শোক, মিঃ রিচার্ডের সহ্যশক্তিতে কুলোল না।

তৃতীয় জানালার ব্লাইণ্ড অর্ধেক খুলে আর খুলল না। আটকে গেছে। বিশেষ কেউ এ ঘরে আসে না। এই ঘরটা মেয়েদের জন্য। মাছ ধরা, বন্দুক চালানো আর সুইজারল্যাণ্ডে শীতের খেলাধুলো নিয়ে মত্ত ছিলো মার্টিমার তাই সুন্দর মেয়ে ঘরে আনল না। অনেক দিন কোনো বাচ্চার গলায় আওয়াজও শোনা যায়নি এ বাড়িতে।

বৃদ্ধ ল্যান্সকম্বের মনে ভেসে ওঠে অতীতের ছবিগুলো। মিঃ রিচার্ড ছিলেন পিতৃপ্রতিম। যখন ওঁর চব্বিশ বছর বয়স তখন ওর বাবা মারা যান। ব্যবসার ভার কাঁধে তুলে নেন রিচার্ড। সব সময় বাড়িটা আনন্দমুখর হয়ে থাকত, বাচ্চাদের চেঁচামেচিতে। কেমন যেন হয়ে গেল। এদিক ওদিক সবাই ছড়িয়ে পড়ল, মিঃ লিও মারা গেলেন। মিস লরাও চলে গেলেন। মিঃ টিমোথি পঙ্গু হলেন। বাইরে কোথাও মারা গেলেন মিস পেরালডিন। যুদ্ধ থেকে মিঃ গর্ডন আর ফিরলেন না, সবচেয়ে সে বড় ছিলো। এখন বাকি পঙ্গু টিমোথি এবং কোরা। সে ঐ অসুন্দর শিল্পীকে বিয়ে করেছে। ঐ ফরাসী লোকটাকে বিয়ে করে মিস কোরার সব গেছে। মেয়েটা খুব ভালোবাসত ল্যান্সকম্বকে। ওকে ওরা সবাই ভালোবাসত। তাদের লুকিয়ে ও জেলী দিত। এখন তাদের আর বিশেষ মনে রাখতে পারে না।

মাঝে মাঝে মিসেস লিও আসতো। ওকে প্রভু খুব ভালোবাসতেন, কিন্তু কোনো ছেলেপুলে ওঁর হল না।

উঠে দাঁড়াল ল্যান্সকম্ব, স্মৃতির জাল ছিঁড়ে সে তার বর্তমানে এসে দাঁড়াল। এখন তার কত কাজ।

.

০২.

রান্নাঘরে উঁকি মেরে ল্যান্সকম্ব বিরক্ত হল। এই সাতাশ বছরের মার্জোরীকে তার পছন্দ হয় না। এই বাড়িটাকে মাৰ্জোরী পুরনো সমাধি বলে। সে ভালো মাইনে পায় এবং মিঃ এবারেনথী তার রান্না ভালোবাসেন। একটা টেবিলে বসে জেনেট চা খাচ্ছিল। মিসেস জ্যাকস সাহায্য করার জন্য এসেছিলেন রান্নাঘরে।

তিনি বললেন, বিরাট ব্যাপার হয়েছিলো। উনিশটা গাড়ী, চার্চটা লোকে ভর্তি হয়েছিল। আহা এবারেনথী তুমি চলে গেলে। তোমায় কতলোক ভালোবাসত শ্রদ্ধা করত।

গাড়ীর শব্দ হল বাইরে। মিসেস বললেন, ওরা এসে গেছে।

কালো পোষাক পরা লোকেরা গাড়ী থেকে নেমে সবুজ বসবার ঘরে এসে হাজির হলেন। মিঃ অ্যান্টহুইল, অ্যান্টহুইল এণ্ড বোলার্ড ফার্মের সিনিয়র পার্টনার। দাঁড়িয়েছিলেন ফায়ার প্লেসের ধারে। একগ্লাস শেরী নিয়ে তিনি ঘরের অচেনা লোকদের তার অভিজ্ঞ আইনজ্ঞের দৃষ্টিতে দেখছিলেন। মিঃ অ্যান্টহুইলের বয়স বাহাত্তর। দু বছর আগে অ্যান্টহুইল্ল কাজপত্র ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু এই রিচার্ড পুরোন মক্কেল ও বন্ধু তাই তিনি না এসে থাকতে পারেননি। রিচার্ডের উইলের তিইি এক্সিকিউটার।

উইলের ব্যবস্থাগুলো তিনি ভাবছিলেন। মিসেস্ লিও হেলেন খুব সুন্দর ভদ্রমহিলা, তাকে উনি ভালোবাসেন ও শ্রদ্ধা করেন।

হেলেনের কত বয়স হবে, পঞ্চাশ কি বাহান্ন। মিঃ লিওর মৃত্যুর পর ও আর বিয়ে করেনি। ওরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসত।

এবার তার চোখ মিসেস টিমোথির উপর পড়ল। সবসময় তার বায়ুরোগগ্রস্ত স্বামীকে দেখাশুনা করে। বেশ অমিতব্যয়ী টিমোথি, তবে যুদ্ধের পর থেকে এত ট্যাক্স বেড়ে গেছে যে ওকে এখন একটু দেখেশুনে খরচ করতে হচ্ছে।

অ্যান্টহুইসলের চোখ এবার জর্জ ক্রসফিল্ডের দিকে ঘুরল। লরার ছেলে, তাকে বিশেষ কেউ চিনত না। একটা অনামী সলিসিটারের অফিসে কাজ করে জর্জ। লরা ওর জন্য কিছুই রেখে যায়নি।

এবার দুটো মেয়ের ওপর চোখ পড়ল অ্যান্টহুইসলের। একজন জেরান্ডিনের মেয়ে রোজামণ্ড অপরজন সুন্দর দর্শন অভিনেতাকে বিয়ে করেছে।

শেষকালে কোরার ওপর চোখ পড়ল মিঃ অ্যান্টহুইসলের, রিচার্ডের ছোট বোন, তার মা প্রসবের সময় মারা যান। কোরার বিয়ে হয়েছিল ল্যান্স কোয়েনেটের সঙ্গে। কিন্তু রিচার্ড এতে রাজী ছিলো না। তবে রিচার্ড ওর উইলে কোরার উপর অবিচার করেনি। অবশ্য এখন কোরা বিধবা, প্রায় বার বছর আগে ওর স্বামী মারা গেছে। কোরাকে বিষণ্ণ দেখাচ্ছিল, তার ভাইয়ের মৃত্যু নিশ্চয়ই তাকে আঘাত করেছে।

ঘরে ঢুকে ল্যান্সকম্ব নিচু গলায় বলল, লাঞ্চ দেওয়া হয়ে গেছে।

.

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

০১.

খাবারের টেবিলে সুখাদ্য ভারী আবহাওয়া হাল্কা করে দিল। খুব বেশি কেউ দুঃখ পায়নি এবারেনথীর মৃত্যুতে।

খাওয়া শেষ হয়ে গেলে ল্যান্সকম্ব বলল, আলো দেওয়া হয়েছে লাইব্রেরিতে। কফি দেওয়া শেষ করে ল্যান্সকম্ব দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেল।

দু একটা সাধারণ কথার পর সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাল অ্যান্টহুইসলের দিকে। ঘড়িটা দেখে নিয়ে তিনি বললেন :

আমায় তিনটে তিরিশের ট্রেন ধরতে হবে। অনেকেই বোধহয় ঐ ট্রেন ধরবেন।

সবই হয়ত জানেন আমিই রিচার্ডের উইলের একজিকিউটার—

কোরা বলল, তাই নাকি? আমি জানতাম না। দাদা আমার জন্য কিছু রেখে গেছেন?

মগ এবারেনথী গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করল : ও যদি নতুন না করতো তাহলে কি হত।

সমস্তটাই বোধহয় টিমোথি পেয়ে যেত।

অ্যান্টহুইসল বললেন, আমার পরামর্শ মত ও আর একটা নতুন উইল করল। তবে প্রথমে সে পরবর্তী পুরুষের লোকদের ভালো করে চিনে নিতে চেয়েছিলো।

সুসান বলল, তিনি প্রথমেই জর্জকে ও আমাকে নিয়ে পড়লো। তারপর রোজামণ্ড এবং মাইকেলকে।

আমি আপনাদের সবারই কাছে উইলের এক কপি করে পাঠিয়ে দেবো, আমি এখন পড়ে শোনাতে পারি। সংক্ষেপে বলছি : ল্যান্সকম্বের জন্য একটা মোটা বার্ষিক ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ স্টেটের একটা বিরাট অংশকে দু ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ভাগগুলো সমান। চারটে অংশ পাবে টিমোথি, জর্জ ক্ৰন্সফিল্ড, সুসান ব্যাঙ্ক এবং রোজামণ্ড শেন। বাকি দুটো অংশ ট্রাস্ট হিসেবে রাখা হয়েছে। এ ট্রাস্টে যা আয় হবে তার এক অংশ তার ভাই লিওর বিধবা স্ত্রী হেলেন পাবে আর একটা অংশ পাবে মিসেস্ কোরা ল্যান্স কোয়েনেট। ওরা সারা জীবন এই ট্রাস্টের আয় পাবে। তাদের মৃত্যুর পরে উপরোক্ত চারজনের মধ্যে এই ট্রাস্ট ভাগ করে দেওয়া হবে।

অ্যান্টহুইসল বললেন, খুব অসুস্থ হলেও ও যে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে কেউ আশা করেনি। ডাক্তারও অবাক হয়ে গেছে।

বিস্ময়ে কোরা বড় বড় চোখ করে সবার দিকে তাকাল। সে তার মাথাটা একদিকে ঝুঁকিয়ে বলল :

কিন্তু ওকে খুন করা হয়েছে, করা হয়নি?

.

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

০১.

মিঃ অ্যান্টহুইসল লণ্ডনগামী ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাস এ বসে কোরার অস্বস্তিকর কথাটা ভাবছিলেন। যদিও কোরা একটু বোকা।

তিনি ভাবতে লাগেলেন এই মন্তব্যের ফলাফলটা। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে সবাই তাকিয়েছিল। কোরা ওদের অদ্ভুত দৃষ্টির অস্বস্তিবোধ করছিল। এমন সব হাস্যকর কথাবার্তা বলে কোরা মেয়েটা। ওর ধারণা থাকে না কি কথা ও বলছে। এইরকম অপ্রিয় সত্যি কথা–

চিন্তার প্রবাহ হঠাৎ থেমে গেল অ্যান্টহুইসলের। এই দ্বিতীয়বার এই গোলমেলে কথাটা তার কানে এল সত্য। এত অস্বস্তিকর কেন এই কথাটা?

সে একবার এই ভাবেই কীচেন মেডের চেহারা সম্বন্ধে মন্তব্য করেছিল। মলি ওর মোটা পেটের জন্য পৌঁছতে পারে কীচেন টেবিলে? ওর পেটটা মাস দুই হল ফুলতে আরম্ভ করেছে। চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল কোরাকে। এবারেনথীর বাড়ির লোকেরা ভিক্টোরিয়া যুগের। কচেন মেড ঐ বাড়ি থেকে চারদিনের জন্য অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।

ভীষণ অস্বস্তিকর কোরার এই কথাটাও। কোরার কথার মধ্যে কি এমন আছে যাতে তার অচেতন মনটা তাকে এমন অস্বস্তি দিচ্ছে। তিনি ওর কথা দুটো বিশেষ করে ভাবতে লাগলেন। একটা হল ও যা বলেছিলো তাতে আমি ভেবেছিলাম এবং দ্বিতীয় ওর মৃত্যুটা এত হঠাৎ।

অ্যান্টহুইসল ভাবতে লাগলেন হা ওর মৃত্যুটা হঠাই বৈকি? ডাক্তার বলেছিল মিঃ এবারেনথী যদি স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখেন তাহলে তিনি আরও বছর দুই তিন নিশ্চয় বাঁচবেন।

এতদূর মনে পড়ে অ্যান্টহুইসলের, রিচার্ড কোনো দিন আসতে বলেনি কোরাকে। কোরার প্রথম কথা ও যা বলেছিল তাতে আমি ভেবেছিলাম এই কথাটা ওর কাছে অস্বাভাবিক এবং অযৌক্তিক মনে হল।

রিচার্ড ওকে কি বলেছিল? কোথায় বলেছিল? রিচার্ড কি বার্কশায়ারে কোরার কাছে গেছিল অথবা চিঠি লিখে কিছু জানিয়েছিল। ভীষণ অস্বস্তিতে ভুগছিলেন অ্যান্টহুইসল। কোরা মেয়েটি বোকা, সে একটা কথার অন্য রকম মানে করতে পারে। ওর ইচ্ছে হল এক্ষুনি গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসেন কোরাকে–এমন কি কথা বলেছিল রিচার্ড যাতে কোরা বলতে পারল ওকে খুন করা হয়েছে।

.

০২.

একটা তৃতীয় শ্রেণীর কম্পার্টমেন্টে গ্রেগরি ব্যাঙ্কস ওর স্ত্রীকে বলল : তোমার এই গিন্নী বোধ হয় একটু পাগল।

আন্ট কোরা? সুসান বলল, ও একটু সহজ সরল। জর্জ ক্রসফিল্ড বিপরীত দিকে বসেছিল। সে বলল, উনার এই রকম কথা বলা বন্ধ করতে হবে। এতে লোকে কিছু ভেবে নিতে পারে।

রোজামণ্ড বলল : আমার মনে হয় না ঐ রকম পাগলের কথা কেউ শুনবে।

অপ্রত্যাশিতভাবে ওর স্বামী বলল : আমার মনে হয় জর্জ ঠিক কথা বলেছে। লোকেরা অনেক কিছু বলতে পারে।

রোজামণ্ড বলল, তাতে কি হবে? একটা হাসির ব্যাপার ছাড়া আর কি হবে?

হাসি? প্রশ্ন করল চারটে গলা।

হুঁ, বাড়িতে একটা খুন হলে একটা উত্তেজনার ব্যাপার হবে।

রোজামণ্ড বলল–উনি যদি খুন হয়ে থাকেন, তাহলে কে খুন করেছে বলে মনে হয়?

তার দৃষ্টি গাড়ীর চারদিকে ঘুরতে লাগল। রোজামণ্ড বলল, উনার মৃত্যুতে আমাদের সবারই সুবিধে হয়েছে।

রোজামণ্ডের কথা কেউ আর শুনছিল না। সবাই তাদের ভবিষ্যতের কথা ভাবছিল। গ্রেগরী ভাবছিল, ধরা ও ছেড়ে দেওয়া। এবার আমি টাকাটা আনতে পারি কেউ সন্দেহ করবে না।

সুসান বলছিল, বুড়ো মামা মারা গেল আমার কষ্ট হচ্ছে। মার্টিমার মারা গেল। পঙ্গু হয়ে কষ্ট পেয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে এই ভালো হয়েছে।

.

০৩.

সে রাতে মড এবারেনথী এণ্ডারবীতে থেকে গেলেন। তিনি ভাবছিলেন সবই রিচার্ডের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। ব্যক্তিগত চিঠিও থাকতে পারে, তবে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্র সবই অ্যান্টহুইসলের জিম্মায় গেছে মনে হয়। উনি তাড়াতাড়ি টিমোথির কাছে গেলেন, না গেলে টিমোথি রাগ করে। আর রাগলে মাঝে মাঝে জ্ঞানকাণ্ড থাকে না। সে ভাবল ডঃ বার্টনকে একথা বলবে কিনা–টিমোথি ঐ স্লিপের পীলগুলো এখন বেশি মাত্রায় খাচ্ছে। টিমোথি ওষুধের ব্যাপারে ভীষণ অবুঝ।

সে নিশ্বাস ফেলল, তার মনটা তারপর খুশী হয়ে উঠলো। উদাহরণ হিসেবে বাগানটা….

.

০৪.

বসার ঘরে বসে হেলেন এবারেনথী ডিনারের জন্য মডের অপেক্ষা করছিল। এখানে লিও এবং অন্যদের সাথে তার পুরোন দিনের কথাগুলো মনে হল।

এই বাড়ি কে কিনবে? এটাকে সম্ভবত তরুণদের জন্য হোস্টেল করা হবে। সে ভাবতে লাগল যা টাকা পেল তাতে রাখতে পারবে সাইপ্রাসের ভিলাটা। এতদিন যতসব পরিকল্পনা করেছে সে সব কাজে লাগাতে পারবে।

বেচারা রিচার্ড। ঘুমের মধ্যে ওর মৃত্যু হয়েছে বাইশ তারিখে। ওর মৃত্যু নিশ্চয়ই খুন এই কথাটা কোরার মাথায় ঢুকেছে।

হেলেন ভাবল, তবে কি ভাবে সহজে বলে দিলো। ওকে খুন করা হয়েছে,তাই না। এই ছবিটা হঠাৎ পরিষ্কারভাবে তার মনের মধ্যে ফুটে উঠতে, হেলেনের কপালে ভাঁজ পড়ল…একটু গোলমাল আছে ছবিটাতে।

এটা কি কারুর মুখের ভাব? তাই কি? সেই রকম কিছু একটা, কি করে সে এটাকে বোঝাবে? ঐ রকম কিছু থাকা ওখানে উচিত ছিল না…?

.

০৫.

সুইনডন বুফেতে বসে একজন মহিলা চা খেতে খেতে ওর ভবিষ্যতের কথা ভাবছিল।

তারপর সে ঘড়ির দিকে তাকাল। আর পাঁচ মিনিট দেরি আছে ট্রেন ছাড়ার। সে একটা সুখী শিশুর মত হাসল।

সে এতদিন একটু ফুর্তি করতে পারবে, ট্রেনের দিকে যেতে যেতে সে প্ল্যান আঁটছিল।

.

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

০১.

একটা অশান্ত রাত কাটালেন মিঃ অ্যান্টহুইসল।

সে বাড়িটার দেখাশুনা করে তার বোন–ট্রেতে করে নিয়ে এল সকালের ব্রেকফাস্ট।

তার বোন বলল–তোমার মত বয়সের লোকের কারুর অন্ত্যেষ্টিতে উপস্থিত থাকা খুব খারাপ। তুমি যদি নিজের দিকে নজর না দাও তাহলে শীগগিরই তোমার অনেক দিনের বন্ধুর কাছে হঠাৎ চলে যাবে।

সন্ধ্যে পৌনে ছটার সময় টেলিফোন বেজে উঠল। তারের অন্যপ্রান্তে অ্যান্টহুইসল এণ্ড বোলার্ডের দ্বিতীয় পার্টনার মিঃ জেমান প্যারটের গলায় শব্দ শোনা গেল।

প্যারট বলল শোন অ্যান্টহুইসল, আমাকে এইমাত্র লীচেট সেন্ট মেরী নামে একটা জায়গা থেকে পুলিশ ফোন করেছিল।

লীচেট সেন্ট মেরী?

হ্যাঁ, একজন কোরা ল্যান্স কোয়েনেট সম্বন্ধে। ও এবারেনথী এস্টেটের একজন ভাগীদার না?

হ্যাঁ, আমার সাথে পরশুদিন দেখা হয়েছিল, কি হয়েছে ওর?

প্যারেট বলল, ও খুন হয়েছে।

খুন হয়েছে? পুলিশ তোমাকে ফোন করল কেন?

কোরার মিস গিলক্রিস্ট নামে একজন কাজের মেয়ে। পুলিশ ওকে সলিসিটারের নাম জিজ্ঞাসা করতে ও আমাদের নাম বলে দিয়েছে।

পুলিশ কি করে বুঝল খুন হয়েছে?

কারণ খুনি কুড়ুল দিয়ে খুন করেছে।

ডাকাতি?

সেইরকমই মনে হয়।

কখন হয়েছে?

আজ বিকেল দুটো থেকে সাড়ে চারটের মধ্যে।

কাজ করার লোক কোথায় ছিল?

লাইব্রেরীতে বই পাল্টাতে গেছিল। পুলিশ জিজ্ঞেস করল কোরাকে কে আক্রমণ করতে পারে। আমি বলেছি, খুব অস্বাভাবিক। হয়ত স্থানীয় কোনো বোকা চোর চুরি করতে ঢুকে মাথা ঠিক রাখতে না পেরে খুন করে ফেলেছে।

ফোনটা রেখে দিলেন অ্যান্টহুইসল। আবার সত্যি কথাটা আঘাত করল অ্যান্টহুইসলের মনে।

.

০২.

ইনস্পেক্টর মর্টন ও মিঃ অ্যান্টহুইসল এখন সামনাসামনি বসে আছেন।

ইনস্পেক্টর জিজ্ঞাসা করলেন, মিঃ অ্যান্টহুইসল, আপনি তো মিসেস ল্যান্স কোয়েনেটকে অন্ত্যেষ্টির দিন দেখেছিলেন। অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেছিলেন কি?

অ্যান্টহুইসল বললেন, যে খুন হবে তাকে কি আগে থেকে অস্বাভাবিক হতে হবে?

মর্টন হেসে বললো, আমি কিছু একটা খুঁজে বেড়াচ্ছি।

ও কি সম্পত্তি পেয়েছিল?

হা।

তবে প্রচণ্ড মাথার যন্ত্রণায় ওর ঘুম ভেঙে গেছিল। সে দুটো ঘুমের বড়ি খেয়ে নিয়েছিল এবং গিলফ্রিস্টকে লাইব্রেরীতে বই পাল্টানোর জন্যে পাঠিয়ে দিয়েছিলো। সেই সুযোগে খুনী জানালা ভেঙে বাইরে থেকে কুড়ুল নিয়ে ঢুকেছিল।

অ্যান্টহুইসল বললেন, যদি মেয়েটা বাধা দেয়–

না, না মেডিকেল রিপোর্ট পাওয়া গেছে ঘুমোনোর সময় খুন করা হয়েছে। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হয়নি সুতরাং খুনী যদি গাড়ী করে এসে থাকে তবে বোঝা মুস্কিল।

কিছু চুরি গেছে?

সেও অদ্ভুত ব্যাপার। গয়নার বাক্স থেকে কিছু গয়না নিয়ে গিয়ে বাইরের ঝোঁপের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গেছে।

হা হতে পারে, গিলফ্রিস্টও খুন করতে পারে। এই দুজন মেয়ের হয়ত কোনো ঝগড়া হয়েছিল। আপনি বলছেন ল্যান্স কোয়েনেটকে মেরে কারুর স্বার্থসিদ্ধি হবে না?

আমি ঠিক সে কথা বলিনি।

মর্টন বলল, আপনি বললেন, ল্যান্স কোয়েনেটের নিজের বলতে কিছু ছিল না। তার ভাইয়ের সম্পত্তি তার একমাত্র উপার্জনের উপায় ছিল?

সত্যি কথা।

আমি বলছি ওর ভাই যে সম্পত্তির ভাগ ওর জন্য রেখে গেছিল, ওর মৃত্যুর পর কারুর পাওয়ার সম্ভাবনা আছে?

না ওর মৃত্যুর পরে ওর ভাগের সম্পত্তি সবার মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে।

ইনস্পেক্টরকে হতাশ দেখাল।

কখন সে দেহটা দেখতে পায়?

পাঁচটা পর্যন্ত কেউ দেখেনি। গিলক্রিস্ট চারটে পঞ্চাশের বাসে ফিরে ছিল। রান্নাঘরে গিয়ে সে ঘরময় ভাঙা কাঁচ দেখতে পায়। সে উপরে গিয়ে শোবার ঘরে উঁকি মারে, ওকে এই অবস্থায় দেখে চেঁচাতে চেঁচাতে নিচে নেমে যায়। গিলফ্রিস্টের ঘরে বা বাথরুমে, ওর কাপড়-চোপড়েও কোনোরক্তের চিহ্ন ছিল না। তাই ওকে সন্দেহ করা যায় না। আপনি গিলফ্রিস্টের সাথে দেখা করতে যাবেন?

যেতে পারি।

যদি যান ভালো হয়, ভদ্রমহিলা ভালো। আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। আপনি হয়ত নতুন কোনো সূত্র পেতে পারেন। সে থামল তারপর বলল। দেহটা মর্গে আছে, যদি দেখতে চান

মজার ব্যাপার যে আর একটা খুনের কথা বলেছিল তার নিজের খুনের আগেই।

ওকে খুন করা হয়েছে তাই না? ইনস্পেক্টরকে একথাটা বলা কোনো মানেও হয় না। কোরাকে রিচার্ড কি বলেছিল গিলফ্রিস্ট হয়ত সে সম্বন্ধে কিছু শুনেছিল।

অ্যান্টহুইসল মনে মনে ঠিক করলেন আমাকে তাড়াতাড়ি গিলফ্রিস্টের সাথে দেখা করতে হবে।

.

০৩.

অ্যান্টহুইসলকে গিলক্রিস্ট পঞ্চাশোর্ধ ভদ্রমহিলা অভিনন্দন জানালেন।

আপনি এসেছেন, আমি খুব খুশী হয়েছি। বসার ঘরে নিয়ে গেলেন অ্যান্টহুইসলকে। ঘরগুলোতে জায়গা কম। এখানে ওখানে কতকগুলো ছবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

মিসেস ল্যান্স কোয়েনেট ছবি খুব ভালোবাসত। সেলে কিনত, কোনো ছবিই সে এক পাউণ্ডের বেশি দামে কেনেনি। এই ছবিটাকে প্রাচীন ইটালিয়ান ছবি বলত।

আমাকে দেখে বুঝতে পারল গিলক্রিস্ট। বলল, আমিও ছবি সম্বন্ধে বিশেষ বুঝি না, আমিও বাচ্চা বয়সে ছবি আঁকার চেষ্টা করতাম।

গিলফ্রিস্ট বলল, আমরা দুজনে বেশ ছিলাম, কোরা একদিক থেকে বাচ্চা মেয়ের মত ছিল। কোনো কিছু মাথায় এলেই সে বলে ফেলত।

তুমি মিসেস ল্যান্স কোয়েনেটের কাছে কতদিন ছিলে?

সাড়ে তিন বছর।

তুমি ওর সঙ্গী ছিলে এবং বাড়ির দেখাশুনা করতে?

গিলক্রিস্ট বলল, আমি রান্না করতাম, ঘরটা পরিষ্কার করতাম, অবশ্য বাড়ির ভারী কোনো কাজ করতাম না।

মিস গিলফ্রিস্ট একটু থেমে বললেন : ইনস্পেক্টর মর্টন খুব ভালো লোক। তিনি আমায় মিসেস লেফের কাছে যেতে বলেছিলেন। তবে আমি রাজি হইনি। ওরা ওর দেহটা নিয়ে ঘর বন্ধ করে দিল। একজন কনস্টেবলকে পাহারা রেখে গেল।

অ্যান্টহুইসল বললেন, আমায় ব্যাপারটা হওয়ার আগের ঘটনা বল।

উত্তর থেকে ফিরে আসায় ট্রেন খুব দেরী করেছিল? ও বেশ ক্লান্ত হয়ে বাড়ি এল।

ও অন্ত্যেষ্টি সম্বন্ধে কিছু বলেছিল? হ্যাঁ, দুএকটা কথা বলেছিল, যেমন চার্চে লোকে ভর্তি হয়ে গেছিল। তার ভাই টিমোথি না আসায় একটু দুঃখ অনুভব করেছিল। টিমোথি তো?

হা টিমোথি।

সে তারপর বলল সে তার ভাইকে গত কুড়ি বছরে দেখেনি। টিমোথি তার স্ত্রী মওকে সহ্য করতে পারত না….ও-হ একথাটা বলে ফেলার জন্য আমায় ক্ষমা করবেন।

মিঃ অ্যান্টহুইসল বললেন, আমি ওদের আত্মীয় নই। তাছাড়া কোরা ও ওর বৌদির ভালো সম্পর্ক ছিল না তা আমি জানি।

হা সে তার বৌদি সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করত না। ও তারপরে শুতে চলে যায়।

তার আর কোনো কথা মনে নেই?

ও আমাকে বলেছিল তুমি সাইপ্রেস যেতে চাও? ও বলেছিল, আমরা যাব। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম ও ভাইয়ের জন্য কিছু রেখে গেছে।

অ্যান্টহুইসল তাড়া দিলেন, পরের দিন সকালে?

হা পরের দিন সকালে ওর শরীর ভালো ছিল না। বিছানাতেই ব্রেকফাস্ট খেয়েছিল। তারপর লাঞ্চের সময় বলল, ওর ঘুম কিছুতেই আসছে না। তাই দুটো ঘুমের ট্যাবলেট দিতে বলল, তার আগে বলল লাইব্রেরী থেকে বই পাল্টে আনতে। তাই আমি দুটোর একটু পরে লাইব্রেরীতে রওনা হয়ে গেছিলাম।

মিঃ অ্যান্টহুইসল প্রশ্ন করলেন, তাহলে সে বিশেষ করে আত্মীয়দের কথা বলেনি?

না, না, শুধু টিমোথির অনুপস্থিতিতে ওর দুঃখ ছাড়া।

সে তার ভাইয়ের মৃত্যু সম্বন্ধে কিছু বলেনি?

না। শুনেছিলাম অনেকদিন থেকে অসুখে ভুগছে।

তুমি ওকে দেখেছ কবে?

যখন উনি এখানে মিসেস ল্যান্স-কোয়েনেটের সাথে দেখা করতে আসেন। দাঁড়ান বলছি…এই সপ্তাহ তিনেক আগে।

ওর অসুখের কথা শুনে কোরা আরও অবাক হয়ে গেছিল।

সে জানত যে ওর ভাই অসুস্থ?

মিঃ অ্যান্টহুইসল জানেন রিচার্ডের মধ্যে কোনো অথর্বের ভাব ছিল না। বেশ টনটনে জ্ঞান ছিল রিচার্ডের, তার উপর অত্যাচার করা হচ্ছে।

সে তার বোনের সাথে এরকম একটা কথা বলেছে এটা খুব অস্বাভাবিক। এও হতে পারে এবারেনথীর কথার অন্যরকম মানে করেছে এই বোকা মেয়ে কোরা।

জিজ্ঞেস করলো মিঃ অ্যান্টহুইসল। কোরার কোনো উইল ছিল কিনা। গিলফ্রিস্ট উত্তর দিল তার ব্যাঙ্কে আছে।

মিঃ অ্যান্টহুইসল তাকে অনুরোধ করলেন নতুন কাজ না পাওয়া পর্যন্ত ঐ কটেজে থাকতে। গিলক্রিস্ট সহজে রাজী হয়ে গেল।

.

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

০১.

তোমার বয়স হয়েছে, মিস্ অ্যান্টহুইসল বললেন, রিচার্ড এবারেনথী ওঁর অনেক দিনের বন্ধু ছিল।

বন্ধু ছিল তো কি হয়েছে, ও তো মারা গেছে। আচ্ছা ওরা তোমারই কাছে আসে কেন?

আমি কোরাকে রিচার্ডের অন্ত্যেষ্টিতে উপস্থিত হওয়ার জন্য যে চিঠি দিয়েছিলাম, পুলিশ ঐ চিঠিটা পেয়েছিল।

ওঃ এই এবারেনথীরা তো জ্বালিয়ে মারল। ওদেরই একজন টিমোথি আজ ফোন করেছিল। সেও নিউইয়র্ক শায়ারের একটা অন্ত্যেষ্টির কথা বলল, পরে আবার ফোন করবে বলেছে।

মড এবারেনথী সন্ধ্যাবেলায় অ্যান্টহুইসলকে ফোনে ডাকল। কোরার মৃত্যুর কথা শুনে টিমোথির অবস্থা ভীষণ খারাপ হয়ে পড়েছে। বলল।

মড বলল, আপনি কি মনে করেন এটা খুন?

হ্যাঁ, খুন।

কাগজে লিখেছে একটা কুড়ুল দিয়ে?

হা।

আমি টিমোথিকে নিয়ে বিশেষ চিন্তিত। ওকে আমি শুইয়ে রেখেছি। কিন্তু ও বার বার আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে। ও জানতে চাইছে কোরা কোনো উইল করে গেছে কিনা।

হ্যাঁ, একটা উইল করে গেছে এবং টিমোথিকে একজিকিউটার করে গেছে। সে তার ছবিগুলো এবং ক্রমেথি ব্রোচটা তার সঙ্গী গিলখ্রিস্টের জন্য রেখে গেছে, বাকি সবই সুসানের জন্য।

সুসানের জন্য? ওতো বাচ্চা বয়সে ছাড়া সুসানকে চোখে দেখেনি।

মড একটু থেমে বলল, আচ্ছা তাহলে কোরার রিচার্ডের দেওয়া সম্পত্তির ভাগটা সুসান পাবে?

না না। কোরার সম্পত্তিটা সবার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।

কাউকে ধরা হয়েছে?

এখনও না।

আপনি তাহলে আসতে পারবেন না, আপনি এলে আমি খুশি হতাম অর টিমোথি একটু স্বস্তি পেত।

ঠিক আছে, আমি যাব, একজিকিউটর হিসাবে কয়েকটা কাগজপত্রে টিমোথির সইও লাগবে।

খুব ভালো হল। কালকে রাত্রে থাকবেন এখানে। এগারটা কুড়ির ট্রেনই সবচেয়ে সুবিধাজনক।

না না, আমি বিকেলের ট্রেনে যাচ্ছি।

.

০২.

একটু বিস্ময়ের সাথে জর্জ ক্রসফিল্ড অভ্যর্থনা জানালেন মিঃ অ্যান্টহুইসলকে।

অ্যান্টহুইসল বললেন, আমি এইমাত্র লীচেট সেন্ট মেরী থেকে ফিরলাম।

তাহলে অ্যান্ট কোরাই? আমি কাগজে পড়ে বিশ্বাস করতে পারিনি। ভেবেছিলাম ঐখানের আর কেউ হবে।

ল্যান্স কোয়েনেট সাধারণ নাম নয়।

অধিক, তবে নিজের আত্মীয়দের মধ্যে কারুর বিপদের কথা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না।

আপনি বিশেষ কিছু চিন্তা করছেন?

না, না, তা নয়। সম্পত্তির ব্যাপার ঠিকঠাক হতে সময় লাগবে। তোমার কি আগাম টাকার দরকার?

হা, আমি আজ সকালে ব্যাঙ্কে গেছিলাম। আমি ওদের কাছে আপনার কথা বলেছি, ওরা ওভারড্রাফট দিতে রাজি।

চোখ পিটপিট করল জর্জ। অ্যান্টহুইসল তার অভিজ্ঞতার দৃষ্টি দিয়ে এর অর্থ বুঝলেন।

অ্যান্টহুইসলের নীরবতায় ভুল বুঝে জর্জ ব্যাখ্যা করতে লাগল।

আমার একটু ধারণা সময় যাচ্ছে, যাতে টাকা খাঁটিয়েছিলাম যেটা সফল হল না। আমার কিছু মূলধন দরকার।

অ্যান্টহুইসল বললেন, অন্ত্যেষ্টির পরে আমি তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম, তোমাকে অফিসে পাইনি।

হা কোরার মৃত্যুতে টাকার অঙ্কটা আরও বাড়বে।

দুঃখের ভান করে জর্জ বলল :

বেচারা, যখন একটা নতুন জীবনের পথে পা ফেলতে যাচ্ছিল—

তুমি যে দুটো ঘোড়ায় জিতেছিলে তাদের নাম মনে করতে পারবে?

বলছি। মার্ক আর ফ্রগ। ওদের নাম ভুলব না।

শুষ্ক হাসি হেসে মিঃ অ্যান্টহুইসল বিদায় নিলেন।

.

০৩.

রোজামণ্ড বলল, আপনাকে দেখে খুশী হলাম। তবে এত সকালে।

ব্ল্যাক কফি নিয়ে হাই তুলতে তুলতে মাইকেল এল।

মিঃ অ্যান্টহুইসল দেখলেন, ঘরের চারদিকে পোড়া সিগারেট, বোতল, গ্লাস ছড়ানো, একটা বিশৃংঙ্খল অবস্থা।

এই বিশৃংঙ্খলার মাঝে দুজন সুন্দর যুবক-যুবতী। রোজামণ্ড বলছিল, আমাদের ভাগ্য ভালো। রিচার্ড মামা খুব ভালো।

তাই নাকি?

চুরি করে, ডাকাতি করে, খুন করে পুলিশের তাড়া খায়–কিন্তু শেষকালে একটা বিস্ময়কর কাজ করে।

মাইকেলের মুখ থেকেও বিরক্তিটা মুছে যায়নি। অ্যান্টহুইসল বিরক্ত হয়ে বলল। তুমি তোমার বকবকানি থামাবে।

অ্যান্টহুইসল বললেন, আমি এইমাত্র লীচেট সেন্ট মেরী থেকে ফিরলাম।

তাহলে আন্ট কোরা খুন হয়েছেন। কুড়ুল দিয়ে? আমি ওদের বললাম। ওরা বিশ্বাস করল না।

নীরব মাইকেল।

দুটো খুন একটার পর একটা।

বোকার মত কথা বোল না। তোমার মামা খুন হয়নি।

কোরা বলল, মামা খুন হয়েছেন, অ্যান্টহুইসল হস্তক্ষেপ করলেন।

তোমরা অন্ত্যেষ্টির পর লণ্ডনে ফিরে এসেছিল?

হা।

আমি তার পরের দিনটায় তোমাদের খবরটা চাই।

ডীয়ার আমরা পরের দিন কি করেছিলাম? আমরা বারটা পর্যন্ত বাড়িতে ছিলাম। তারপরে তুমি রোজে হাইসের সাথে দেখা করতে চাইলে এবং অসকারের সাথে লাঞ্চ খেতে গেলে। বিকেলে বাজার গিয়ে খাওয়ার পর আমরা ক্যানটিনে ডিনার খেয়ে দশটার সময় বাড়ি ফিরি।

মাইকেল বলল, আমাদের সম্বন্ধে কি জানতে চাইছো?

এবারেনথীর সম্পত্তি সম্বন্ধে কয়েকটা ব্যাপার আর সই নেওয়ার জন্য।

রোজামণ্ড বলল, টাকা এখন পাওয়া যাবে?

দেরী হবে।

রোজামণ্ড জিজ্ঞেস করল, আন্ট কোরা টাকা রেখে গেছেন নাকি?

সামান্য, সুসানের জন্য।

সুসানের জন্য কেন? কত টাকা?

কয়েকশ পাউণ্ড আর কয়েকটা আসবাবপত্র।

.

০৪.

সুসান ব্যাঙ্কের উজ্জীবিত ভঙ্গীতে কথা বলা লক্ষ্য করেছিলেন অ্যান্টহুইসল। সুসানকে দেখতে অনেকটা রিচার্ডের মত। রিচার্ডের বিচারে সুসানই উপযুক্ত উত্তরাধিকারী হতে পারত। কিন্তু সুসান শুধু একটা ভাগ পেল যা রোজামণ্ডও পেয়েছে।

কারণটা বোধ হয় সুসানের স্বামী। গ্রেগরী ব্যাঙ্ককে ওর স্বামী হিসেবে মোটেই মানায়নি। তবুও সুসান সবার মতের বিরুদ্ধে একেই বিয়ে করেছিল।

সুসান তোড়ে কথা বলে যাচ্ছিল।

পুলিশ কোনো কাজের নয়। কোনো অপরাধীকেই পুলিশ ধরতে পারল না।

অ্যান্টহুইসল ঠাট্টা করে বললেন, তুমি কি খুন নিয়ে গবেষণা করছ?

এসব ভাববার ব্যাপার নয়? আজ আমার আন্ট মরল। এইসব অপরাধী খুনীগুলো নৃশংস খুন করে বেড়াচ্ছে, আর পুলিশের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

পুলিশকে ছোট করে দেখো না সুসান। ওরা ওদের কাজ চালিয়ে যায়।

অ্যান্ট কোরার ব্যাপারে কাউকে অনুমান করতে পেরেছ?

তা বলতে পারি না।

একটা মারাত্মক লোক হবে, কোনো ডিসচার্জড সৈনিক বা জেল থেকে পালানো লোক হতে পারে, আমি কুড়ুলের কথায় অনুমান করছি।

খুনী যদি অল্পবুদ্ধি না হয় তবে খুনের একটা মোটিভ থাকা উচিত, সুসান বলল।

অ্যান্টহুইসল বললেন যদি উদ্দেশ্যমূলক খুন হয় তাহলে খুনী হতে পার একমাত্র তুমি!

কেন? পেছন থেকে গ্রেগরী এগিয়ে এল, তার চোখে একটা নোংরা দৃষ্টি। কি করেছে সুসান, আপনি এমন কথা বলছেন কেন?

সুসান বলল, চুপ কর গ্রেস, মিঃ অ্যান্টহুইসল সত্যি সত্যি বলেননি।

একটু ঠাট্টা করছিলাম, কোরা তার সম্পত্তি তোমাকে দিয়ে গেছে। তবে কয়েকশ পাউণ্ড কোনো খুনের মোটিভ হতে পারে না।

সুসান বলল, উনি আমার জন্য টাকা রেখে গেছেন কিন্তু উনি তো আমাকে চিনতেন না।

আমার মনে হয় তোমার বিয়ের ব্যাপারে সমস্যাটির কথা ও শুনেছিল, গ্রেগ বলল, উনার বিয়ের ব্যাপারে সমস্যা হয়েছিল তাই।

সুসান বলল : ও একজন শিল্পীকে বিয়ে করেছিলেন। ভালো ছবি আঁকতেন।

আমি ওখানে যাব। কেউ আছে ওখানে?

আমি মিস গিলক্রিস্টকে থাকতে বলেছি। জর্জ বলল, ঐ খুনের বাড়িতে থাকছেন? ভদ্রমহিলার সাহস আছে তো?

ওর সাথে অ্যান্ট কোরার ভালো সম্পর্ক ছিল?

ভালোই ছিল মনে হয়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মিঃ অ্যান্টহুইসল বললেন, কোরা টিমোথিকে উইলের একজিঊিটার করে গেছে। আজ আমি টিমোথির কাছে যাচ্ছি। আমি ওকে তোমার কোরার বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়ে দেব। তিনি দেখে বুঝতে পারলেন ওরা অর্থ কষ্টে আছে।

কি করবে ভেবেছ?

আমি কাণ্ডিগান স্ট্রীটে একটা বাড়ি দেখে রেখেছি। আপনি আগাম কিছু টাকা দিতে পারেন?

নিশ্চয়ই।

সুসান হঠাৎ বলল, আচ্ছা কোরা আমাদের বিয়ের কথা জানলেন কি করে, আমরা তো কাউকে জানাইনি?

রিচার্ডের কাছ থেকে বোধহয় শুনেছে। রিচার্ড তিন সপ্তাহ আগে ওখানে গেছিল।

তাহলে রিচার্ড মামা ওখানে যেতেন, আমি জানতাম না তো।

আমিও জানতাম না।

তাহলে তখনই।

তখন কি?

কিছু না, সুসান বলল।

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

০১.

মিঃ অ্যান্টহুইসলকে মড স্টেশনে অভ্যর্থনা জানাল। স্টেশনের বাইরের দিকে যেতে বলল, টিমোথি রিচার্ডের মৃত্যুতে খুব আঘাত পেয়েছে। ও বংশের শেষ প্রতিনিধি বলে মৃত্যু ভয় ওকে পেয়ে বসেছে।

অন্ত্যেষ্টির পর ফেরার পথে গাড়ীটা খারাপ হয়ে যায়। টিমোথিকে ফোন করে জানিয়ে দিলাম পরের সকালের আগে আমি বাড়ি পৌঁছতে পারবো না। কখন যে কি ঘটে যায়। কোরার খুনটা যেমন হল। টিমোথিকে সামলোনো দায়।

মড বলছিলো, আমি বিয়ের পর থেকে কোরাকে দেখেছিলাম না। বেচারা মনে হল। আচ্ছা ওর কাছে ছোট্ট কেউ আশ্রিত ছিল?

কি বলতে চাইছ বলত?

আমি বললাম, এমন কাউকে রেখেছিল যে ওকে খুন করে টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে গেছে। বাইরের লোক হলে রাত্রে ঢুকত। কিন্তু এই দুপুর বেলায় বাইরের লোকের পক্ষে জানলা ভেঙে ঢোকা অস্বাভাবিক।

ওখানে দুজন ভদ্রমহিলা ছিলেন।

কিন্তু কোরার টাকা পয়সায় যদি কারুর লোভ থাকত তবে দুজনেই যখন বেরিয়ে যেত তখন নিশ্চিন্তে চুরি করতে পারত।

তাহলে তুমি ভাবছ, কোরাকে খুন করার প্রয়োজন ছিল না।

ব্যাপারটা অসম্ভব মনে হয়।

মনে মনে ভাবতে লাগলো মিঃ অ্যান্টহুইসল পৃথিবীতে অনেক অকারণ খুনের রেকর্ড আছে। তার নিজের ধারণায় খুন অনেক রকম হতে পারে, কেউ হিংসা থেকে, আত্ম গর্ব থেকে, ক্ষমতার লোভে, কেউ নারীর প্রতি মোহে খুন করে। কারুর খুনের নেশাও থাকতে পারে।

মড বলল, আচ্ছা টিমোথিকে তদন্তের সময় উপস্থিত থাকতেই হবে? ডাক্তারের সার্টিফিকেট দেখালে চলবে না?

ও নিয়ে চিন্তা কোর না। তারা এবার একটা সুন্দর জর্জিয়ান বাড়ির সামনে এল।

কোনো চাকর নেই মড বলল, একটা ছিল, সে একমাস আগে চলে গেছে। ওর কাছে ফোনটা রেখে যাই, যাতে দরকার হলে ডাক্তার ডাকতে পারে।

মড বসার ঘরে ঢুকে মিঃ অ্যান্টহুইসলকে রেখে চলে গেল বাড়িতে। কয়েক মিনিট পরে ফিরে এল।

অ্যান্টহুইসল জিজ্ঞেস করলো, টিমোথির কি হল?

ও চা খেয়ে বিশ্রাম করছে, ওকে বেশি উত্তেজিত করবেন না।

.

০২.

অ্যান্টহুইসল তুমি এসে ভালো করেছ। আমি বেশি কথা বলতে পারব না, ডাক্তার বারণ করেছে। চিন্তা করতে বারণ করেছে। রিচার্ড মারা গেল, ঐরকম একটা উইল করে গেল। তারপর কোরা মরল, উঃ কি ভীষণ! কুড়ুল নিয়ে যুদ্ধের পর কিছু বদমাস লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে আর অসহায় মেয়েদের খুন করছে, কেউ ওদের দমন করার কথাও ভাববে না।

মড ঘর থেকে চলে গেল।

চেয়ারে শুয়ে টিমোথি বলল, মহিলা গেছে ভালো হয়েছে, এবারে আমরা ঠিকমত কথাবার্তা বলতে পারব।

কোরার সম্পত্তি পাঁচজনের মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে। বিরক্তি দেখা গেল টিমোথির মুখে।

কিন্তু আমিই তো এই বংশের শেষ বংশধর।

তাকে উইলের শর্তগুলো বুঝিয়ে দিলেন মিঃ অ্যান্টহুইসল। আমি তোমাকে উইলের এক কপি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।

সবচেয়ে আমাকে বেশি আঘাত করেছে রিচার্ডের উইলের শর্তগুলো।

হা, তোমার আমার মত হয়নি।

স্বাভাবিক মার্টিমারের মৃত্যুর পর আমিই সম্পত্তি পাব আশা করেছিলাম।

রিচার্ড কোনোদিন তা বলেছিল?

তেমন কোনো কথা বলেনি। তবে সম্পত্তির ব্যাপারে আমার সাথে আলোচনা করত। তবে শেষ এবারেনথীর বংশধর হিসাবে সম্পত্তির দেখাশোনার দায়িত্ব আমিই পাব আশা করেছিলাম।

অ্যান্টহুইসল বুঝতে পারলো টিমোথি আশা করেছিল রিচার্ডের পরে সেই সমস্ত সম্পত্তির মালিক হবে।

তাকে রিচার্ড তা করে যায়নি। কি এরকম কথা রিচার্ড প্রথমে ভেবেছিল তারপরে মত পরিবর্তন করেছিল?

বেড়ালের মারামারির একটা শব্দ হল বাইরে। উত্তেজিত টিমোথি জানলায় উঠে গিয়ে একটা বই নিয়ে ছুঁড়ে মারল।

যত সব ফুলের কেয়ারী নষ্ট করে দিচ্ছে।

বসে আবার বদল : অ্যান্টহুইসল একটু মদ খাও।

না-না, আমি এইমাত্র চা খেলাম।

আমি শুনলাম, অন্ত্যেষ্টি থেকে ফেরার পথে ওর গাড়ী নাকি ব্রেকডাউন হয়ে গেছিল।

হা হয়েছিল। এসে টেবিলে একটা কাগজ দেখলাম, ঠিক মেয়েটা লিখে গেছে ম্যাডাম রাত্রে ফিরবেন না।

টিমোথি ভাবতে লাগল দুঃখিতভাবে।

কোরা অন্ত্যেষ্টির দিন একটা কাণ্ড করে গেছে। সে বলেছে রিচার্ডকে খুন করা হয়েছে, তাই না। বোধহয় মড তোমাকে বলেছে। অ্যান্টহুইসল বললেন।

হ্যাঁ, আমি শুনেছি। ও বাচ্চা অবস্থায় কি রকম কথাবার্তা বলত তুমি জান তো? আমাকে ফোন করে আমার খবর নিল, আর উইলের কথাটা জানাল। আমি খুব আঘাত পেয়েছিলাম, জানো। এটা রিচার্ডের আমার প্রতি ঘৃণার ফল। যদিও মৃত সম্বন্ধে কিছু বলা ঠিক নয়।

তারপর ফিরে এসে মড বলল, ডিয়ার, অ্যান্টহুইসল অনেকক্ষণ কথা বলেছেন। এবার তোমার বিশ্রাম দরকার।

হা হয়ে গেছে। যদিও পুলিশের উপর আমার বিশেষ বিশ্বাস নেই। আমাকে নিয়ে যেন টানাটানি না করে। কোরার সমাধির বন্দোবস্ত কর।

আচ্ছা তা আমি দেখব।

অ্যান্টহুইসল পরদিন সকালের ট্রেনে লণ্ডনে ফিরে এলো।

বাড়িতে এসে তিনি তার এক বন্ধুকে ফোন করলেন।

.

সপ্তম পরিচ্ছেদ

০১.

আমি তোমার নিমন্ত্রণ পেয়ে খুব খুশী হয়েছি। বন্ধুর হাতে চাপ দিলেন অ্যান্টহুইসল।

আমি আজ গ্রাম থেকে ফিরলাম, চেয়ারে বসে অ্যান্টহুইসল বললেন।

তোমার কথা ডিনার খাওয়ার পর শুনব।

খাবার নিয়ে এল জর্জের।

মিঃ অ্যান্টহুইসল সামান্য চিন্তা করে আরম্ভ করলেন। জানি না ব্যাপারটা কিরকম দাঁড়াবে। তবে আমি একটা সমাধান চাই। আমি তোমার কাছে সব বলছি? তারপরে তুমি তোমার মতামত জানিও।

বলা শেষ হলে এরকুল বলল : খুব পরিষ্কার মনে হচ্ছে, তুমি বলছ রিচার্ড খুন হয়েছে। এটার ভিত্তি হচ্ছে কোরার কথাটা। অন্ত্যেষ্টির পরের দিনই কোরার মৃত্যু অস্বাভাবিক নাও হতে পারে। রিচার্ড হঠাৎ মারা গেছেন ঠিক। তবে বড় একটা ফ্যামিলি ডাক্তার ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছে। রিচার্ডকে পোড়ানো হয়েছে না সমাধি দেওয়া হয়েছে?

পোড়ানো হয়েছে।

আর এখানে প্রধান ব্যাপার হল, তুমি বিশ্বাস করেছ কোরা সত্যি কথা বলেছে।

হ্যাঁ, আমি করেছি।

কেন?

কেন? অ্যান্টহুইসল যেন একটু হতভম্ব হলো। কারণ হচ্ছে তুমি রিচার্ডের মৃত্যুর ধরনে একটু সন্দেহ করেছিলে।

না না, বিন্দুমাত্র না।

তাহলে কোরার কথায়?

হা কোরা সব সময় অস্বস্তিকর সত্যি কথা বলত। যা সাধারণত কেউ বলতে চায় না।

মিঃ অ্যান্টহুইসল কেঁপে উঠলেন।

এখন বল কোরা যখন কথাটা বলল তখন সবাই কি প্রতিবাদ করেছিল?

হা করেছিল।

তখন একটু ঘাবড়ে গিয়ে মেয়েটা বলল, না না, আমি ঠিক বলিনি। তবে ও যা বলেছিল সে থেকে ধারণা হয়েছিল।

আচ্ছা তুমি কারুর মুখে অস্বাভাবিক কিছু দেখেছিলে?

না। পরদিন কোরা আবার খুন হল, বল দেখি এটা কি কার্য কারণ সম্পর্ক?

আবার অ্যান্টহুইসল শিহরিত হলেন।

তাহলে তুমি মনে করছ এটা একটা খুন।

গম্ভীরভাবে পোয়ারো বলল : হ্যাঁ এটা তদন্তের ব্যাপার, তুমি কিছু করেছ? পুলিশকে জানিয়েছ?

না, যদি রিচার্ডকে খুন করা হয়ে থাকে, তবে আমি সংসারের প্রতিনিধি হিসাবে এগোতে পারি।

ওর মৃত্যুর সময় এখানে কে ছিলো?

একজন পুরোন বৃদ্ধ বাটলার, একজন রাধুনী, আর একটা কাজের মেয়ে।

আবার পোয়ারো বলে চলল, বিষ দিয়ে যদি হয় তাহলে অনেক ধরনের বিষ হতে পারে। বোধহয় নার্কোটিকই হবে। সে যাতে ঘুমের মধ্যেই মারা যায় এবং কারুর সন্দেহ না হয়।

যাই হোক না কেন তা প্রমাণ করা মুশকিল।

হা রিচার্ডের ক্ষেত্রে অসম্ভব হলেও, কোরার ক্ষেত্রে অসম্ভব নয়। কোরার হত্যাকারীকে জানতে পারলে অনেক প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। তারপর অ্যান্টহুইসল কে বলল, তুমি ইতিমধ্যেই কিছুটা এগিয়েছ মনে হয়?

হা খুব সামান্য, আমি আমার সন্দেহের গণ্ডীটা কমিয়ে আনতে চেষ্টা করেছিলাম। আমি অনুসন্ধান করেছিলাম কোরার মৃত্যুর দিন বিকেলে এবারেনথী আত্মীয়দের মধ্যে বাড়িতে কেউ ছিল না।

কি করছিল?

জর্জ ক্রসফিল্ড হাপার্কের রেসে গেছিল। রোজামণ্ড গেছিল বাজার করতে। সুসান আর গ্রেগরী সারাদিন তাদের বাড়িতে ছিল। টিমোথি পঙ্গু, সে তার ইয়র্ক শায়ারের বাড়িতে ছিল। তার স্ত্রী মড এণ্ডারবি থেকে গাড়ী করে ফিরছিল।

ওদের কথাগুলো সত্যি?

কথাগুলো সত্যি কিনা তা আমি তলিয়ে বুঝিনি। তবে আমার ধারণা হল, জর্জ বোধহয় সেদিন রেস খেলতে যায়নি। আমি জানি, অনেক অপরাধী বেশি কথা বলে তাদের অবস্থা খারাপ করে ফেলে।

আচ্ছা ওর মামার মৃত্যুর সময় জর্জের কি টাকার জরুরী ছিল?

আমার ধারণা ওর টাকার জরুরী দরকার ছিল। যদিও কোনো প্রমাণ নেই। তবে বেশ সন্দেহ হয় যে ও তার মক্কেলের টাকা খরচ করে ফেলেছিল এবং কাঠগোড়ায় যাওয়ার অবস্থায় পৌঁছে গেছিল, আমার ধারণা রিচার্ড খুব ভালো মনুষ্য চরিত্র বুঝত এবং সে জর্জের উপর আস্থা রাখতে পারেনি।

তার মা ল ইয়ার বলতে লাগলেন, একজন সন্দেহজনক চরিত্রের লোককে বিয়ে করেছিল।

সে থামল, আবার আরম্ভ করল।

রোজমণ্ড মেয়েটা ভালো, যে কুড়ুল দিয়ে কাউকে খুন করতে পারে না। তার রহস্যজনক উচ্চাকাঙ্খী, কম কথা বলে। ওর সম্বন্ধে খুব কম কথা বলে, যদিও সন্দেহ করা যায় না।

ওর স্ত্রী সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই। না না, ও কুড়ুল দিয়ে খুন করতে পারে না।

অন্য মেয়েটা?

সুসান? সুসান একেবারে প্রথম মেয়ে। আমি ওকে বিরাট ক্ষমতাশালী বলব।

স্বামী কেমন?

স্বামীর ব্যক্তিত্ব খুব মধুর নয়। আর সুসান

হ্যাঁ বল।

সুসান তার মামার মতই, বুদ্ধিমান তৎপর ও চটপটে। তবে তার মামার মত হৃদয়গুণ নেই মনে হয়।

ও তার স্বামীকে ভালোবাসে?

খুব ভালোবাসে, তবেপোয়ারে আমার যেন মনে হয় না সুসান

তুমি জর্জকে প্রেসার কর, পোয়ারো বলল।

মিসেস এবারেনথী একজন ভালো মেকানিক। আর মিঃ টিমোথি ঠিক চালু নন। তিনি চলাফেরা করতে পারেন এবং তাড়াতাড়ি গায়ের জোর দিয়ে কোনো কাজও করতে পারেন। সে তার ভাইয়ের সাফল্যে একটু হিংসা করত।

হ্যাঁ, তবে অন্ত্যেষ্টির পরে কোরার কথাটা নিয়ে ঠাট্টাও করেছে। ষষ্ঠ জন সম্বন্ধে বল।

হেলেন? মিসেস লিও? আমি তাকে সন্দেহ করি না। সে এণ্ডারবিতে তিন চাকরের সাথে ছিল।

পোয়ারো বলল, আমাকে কি করতে বলছ?

পোয়ারো আমি সত্যটা জানতে চাই।

পোয়ারো হাসল।

ঠিক আছে ব্যাপারটা আমাকেও উৎসাহিত করেছে।

তুমি রিচার্ডের ডাক্তারের সাথে দেখা কর, ওকে চেন?

কম চিনি।

কেমন লোক?

মধ্যবয়সী দক্ষ। বেশ ভালো লোক।

তাহলে ওর সাথে দেখা কর। জিজ্ঞেস করবে রিচার্ড মৃত্যুর সময়ের আগে কি ওষুধ খাচ্ছিল। আর গিলফ্রিস্ট বিয়ের ব্যাপারটা ঠিক শুনেছে তো? আচ্ছা এটা কি তোমার মনে হয় মিস্ গিলফ্রিস্টের জীবনের উপর কোনো ভয় আছে?

না তা বোধহয় নেই।

শোন, গিলফ্রিস্টের একা ঐ কটেজে থাকা আমি ঠিক নিরাপদ মনে করছি না।

সুসান ওখানে যাচ্ছে মনে হয়।

তাহলে মিসেস্ ব্যাঙ্ক যাচ্ছেন?

হা, সে কোরার জিনিপত্রগুলো দেখতে চায়।

ঠিক আছে। তোমাকে যা বললাম করবে। এখন থেকে কেসটার ভার আমি নিলাম।

.

অষ্টম পরিচ্ছেদ

০১.

মিঃ অ্যান্টহুইসল ডঃ ল্যারবির দিকে তাকিয়েছিলেন।

যাইহোক মিঃ অ্যান্টহুইসল আরম্ভ করলো : আমরা একটা গোলমেলে ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করব। প্রশ্নটা হল রিচার্ডের কি স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে?

ডঃ ল্যারবি বলল, হ্যাঁ কেন? আমি তো সার্টিফিকেট দিয়েছি।

এবারেনথী খুব অসুস্থ ছিলেন, আমি বলেছিলাম তিনি আরও দুবছর বাঁচবেন, ও হঠাৎই মারা গেছে নিশ্চয়ই। কিন্তু সেটা তো অস্বাভাবিক নয়।

তা তো আমি মানছি। একজন মানুষ তার দিন শেষ হয়ে গেছে ভেবে তার মৃত্যুকে কি এগিয়ে আনতে পারে, অথবা অন্য কেউ তার হয়ে তার মৃত্যুকে এগিয়ে দিতে পারে?

আত্মহত্যা, রিচার্ড আত্মহত্যা করার মত লোক ছিল না।

তাহলে তুমি আমাকে বলছ এরকম ব্যাপার অসম্ভব।

রিচার্ড অনেকের মতে ঘুমের মধ্যে মারা গেছিল। আত্মহত্যা সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই। কেউ যদি অটোন্সি করাতে চায়–

ডাক্তারের মুখ আস্তে আস্তে লাল হয়ে যাচ্ছিল। অ্যান্টহুইসল বললেন : নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, তবে এমন কোনো প্রমাণ থাকতে পারে, ধর তিনি এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলেছেন

আত্মহত্যার কথা বলেছেন? এরকম কথা আমাকে অবাক করবে।

যদি তাই হয়, তবে তুমি কি এটাকে অসম্ভব বলতে পারবে?

না না, অসম্ভব বলতে পারি না, তবে আবার বলছি তাহলে আশ্চর্য হব।

আচ্ছা তার মৃত্যুটা যদি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে কি ধরনের ওষুধ ওর মৃত্যু ঘটাতে পারে?

অনেক ওষুধ হতে পারে, যেমন–নার্কোটিক।

ওর কাছে স্লিপিং পিল বা এই ধরনের কিছু ছিল?

হ্যাঁ, আমি ওকে স্লমবারি প্রেসক্রাইব করেছিলাম। সব সময় ও খেতো না। মাত্রার তিন চারগুণ খেলেও মৃত্যুর সম্ভবনা ছিল না।

আর কিছু প্রেসক্রাইব করেছিলে?

অনেক কিছু, যন্ত্রণার জন্য কিছু ভিটামিন ক্যাপসুল আর একটা হজমের মিক্সচার।

আচ্ছা ঐ ক্যাপসুলে আর কিছু ঢোকানো যেতে পারে?

কি বলতে চাইছ খুন?

জানি না, আমি জানতে চাই সম্ভব কিনা?

তোমার কি প্রমাণ আছে? কেন নেই, যে কথাটা বলেছিলে এবং যে শুনেছিল দুজনেই মারা গেছে, আমি শুধু জানতে চাই ওকে বিষ দিয়ে মারা সম্ভব কিনা?

ল্যারবি উঠে পায়চারি করতে লাগল।

আমি অস্বীকার করছি না। কেউ ক্যাপসুল থেকে ওষুধ বার করে নিয়ে নিকোটিন ঢুকিয়ে দিতে পারে।

আচ্ছা রিচার্ড কোনোদিন তোমাকে বলেছে তার কোনো আত্মীয় তার মৃত্যু চায়।

না, কিছু বলেনি।

এবার কোরার কথা বললেন অ্যান্টহুইসল। ল্যারবির মুখ আলোকিত হল।

তাই বল, এই মহিলার মনের কোনো ভারসাম্য নেই, সবকিছু বলতে পারে।

হতে পারে, তবে দুর্ভাগ্যবশতঃ ওকে আর পাওয়া যাচ্ছে না, ও খুন হয়েছে।

কি বললেন খুন হয়েছে?

তুমি কাগজে পড়নি?

পড়েছি তবে ও যে রিচার্ডের আত্মীয় হতে পারে তা মনে হয়নি।

.

০২.

অ্যান্টহুইসল এণ্ডারবিতে এসে ল্যান্সকম্বের সাথে কথা বলতে চাইলেন।

বৃদ্ধ বাটলারের পরিকল্পনা তিনি জিজ্ঞেস করলেন।

মিসেস লিও বাড়িটা বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত আমাকে এখানে থাকতে বলেছেন। ল্যান্সকম্ব নিশ্বাস ফেলল, ওর কতদিনের বাড়িটা বিক্রি হয়ে যাবে।

ল্যান্সকম্ব এস্টেটও বিক্রি করে দিতে হবে, কিন্তু তোমার লিগাসি?

না না আমি অভিযোগ করছি না, তবে আজকাল একটা বাড়ি পাওয়ার যা অসুবিধে। অবশ্য আমার এক ভাইঝি ওর কাছে থাকতে বলেছে।

হাঁ, আমাদের মত বৃদ্ধদের পক্ষে এই পৃথিবীটা বড় কষ্টকর। পুরোন বন্ধুদের দেখতে ইচ্ছে করে। আচ্ছা মরার আগে তাকে আর তাঁর মত দেখতে ছিল না।

হা অসুখ হলে এরকম হয়। সম্ভবত রিচার্ডও এমন কারুর কথা বলত যে তার ক্ষতি করতে পারে? অথবা ভাবত তার খাবারে বিষ মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে?

বিস্মিত হলেন ল্যান্সকম্ব।

না, আমি এ ধরনের কোনো কথা শুনিনি।

প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলেন অ্যান্টহুইসল। রিচার্ড মৃত্যুর আগে কিছু আত্মীয়দের এখানে এনে রেখেছিলেন। তাই না?

হা।

ওদের প্রতি রিচার্ড সন্তুষ্ট ছিলো তো?

আমি বলতে পারছি না স্যার।

কিছুক্ষণ ভেবে ল্যান্সকম্ব বলল : স্যার কিছু হয়েছে কি?

আমি কিছু জানি না, আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি, তুমি কি মনে কর কিছু গোলমাল আছে?

অন্ত্যেষ্টির পর থেকে কেমন যেন সব অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। মিসেস টিমোথি বা মিসেস্ লিও সেই আগের মত নেই।

হা স্যার উইলটা ভালো হয়েছে।

আচ্ছা তোমাকে যা জিজ্ঞেস করলাম তার উত্তর দেবে কি?

প্রভু জর্জের ব্যবহারে হতাশ হয়েছিলেন, তারপরে স্বামীদের সাথে মেয়েরা এলেন। সুসান ওদের মধ্যে বেশ বুদ্ধিমান। তবে আমার মতে তিনি সুসানের স্বামীকে ঠিক পছন্দ করতেন না।

খুব বেশি বলতে পারছি না, ওরা দুজনেই বেশ সুন্দর আর হাসিখুশী, প্রভু ওদের নিয়ে আনন্দও পেয়েছিলেন, তবে। ইতস্তত করল বৃদ্ধ।

বল ল্যান্সকম্ব?

প্রভু নাটকের ছেলেমেয়েদের পছন্দ করতেন না।

তারপরে রিচার্ড কি করল?

সে সম্বন্ধে আমি বিশেষ কিছু জানি না। তিনি বলেছিলেন টিমোথির কাছে থেকে ঘুরে এসে সেন্ট মেরীতে যাবেন।

ওখান থেকে ফিরে এসে কিছু বলেছিলেন?

খুব বেশি কিছু না, ফিরে এসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।

ওদের সম্বন্ধে কিছু বলেননি?

তিনি আমায় সোজাসুজি কিছু বলতেন না। আমাকে বলার চেয়ে তিনি নিজের সাথে বেশি কথা বলতেন।

তোমাকে বিশ্বাস করতেন, বলে যাও।

আমার বিশেষ মনে নেই, টিমোথি টাকা নিয়ে কি করল, এই ধরনের একটা কথা। তারপর বললেন, মেয়েরা নিরানব্বই রকমভাবে বোকা হতে পারে আবার একশ রকম ভাবে চালাক হতে পারে। আরও বলেছিলেন, কারুর জন্য ফাঁদ পাতা ঠিক না, আর কিছু করার মত রাস্তাও দেখছি না। বোধ হয় তিনি বাগানের দুনম্বর মালীর কথা বলেছিলেন।

.

০৩.

অ্যান্টহুইসল ভাবলেন তিনি কথাটা হেলেনকে বলবেন। তারপর ওকে পুরোপুরি বিশ্বাস করবেন ঠিক করলেন।

তিনি প্রথমে বাড়ির জিনিসপত্র গুছিয়ে ঠিক করে রাখার জন্য ওকে ধন্যবাদ জানালেন। বাড়িটা বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। এইবার খদ্দের আসতে আরম্ভ করবে।

ব্যক্তিগত খদ্দের।

না, ওয়াই, ডব্লিউ-সি-এ, তরুণদের ক্লাব এবং জেয়ারসন ট্রাস্ট, এরাই খদ্দের।

বাড়িটা বিক্রি হওয়া পর্যন্ত তোমার এ বাড়িতে থাকতে কি অসুবিধে হবে?

না, অসুবিধে হবে না। লিওর স্মৃতি এ বাড়ির গায়ে লেগে আছে।

আর একটা ব্যাপার এরকুল পোয়ারো নামে আমার এক বন্ধু

ব্যগ্রভাবে হেলেন বলল, এরকুল পোয়ারো? তাহলে আপনি ভাবছেন?

ওকে চেন?

হা, তবে আমি জানতাম উনি মারা গেছেন।

ও খুব ভালো ভাবেই বেঁচে আছে।

তাহলে আপনি ভাবছেন, কোরা ঠিক কথা বলেছে?

রিচার্ড খুন হয়েছে।

মিঃ অ্যান্টহুইসল ভারমুক্ত হলেন তার মন খোলসা করে।

হেলেন বলল : ওঃ অবিশ্বাস্য, কোরার ঐ কথাটা বলার পর আমিও একটু অস্বস্তিতে ভুগছিলাম। কোরার মৃত্যুর পর একটু সন্দেহ হলেও এরকম ভয়ঙ্কর কিছু ভাবিনি। সমস্যাটা নিশ্চয়ই জটিল?

হ্যাঁ জটিল, তবে এরকুলের এই ব্যাপারে একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে।

কোরার কথা ছাড়া আমি সেদিন আরও একটা ব্যাপারে অস্বস্তি বোধ করেছিলাম। তবে কেন বা কি জন্যে তা জানি না–অবাস্তব ব্যাপার।

না, না, আদৌ না, তুমি বোকা নও হেলেন। তুমি তাৎপর্যপূর্ণ কিছু হয়ত লক্ষ্য করেছ।

.

নবম পরিচ্ছেদ

০১.

সামনের দিকে টুপিটা টেনে নিয়ে মিস গিলক্রিস্ট সাদা চুলের গুচ্ছটা ঢেকে দিল। এখনো দেরী আছে তদন্তের। মিস্ গিলফ্রিস্ট দেয়ালে ছবিগুলো দেখতে লাগলেন।

এমন সময় দরজায় বেলের শব্দ হল।

গিলফ্রিস্ট বলল, এখন আবার কে?

দরজা খুলে দেখল কালো পোশাক পরা এক ভদ্রমহিলা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে। মহিলা বললেন, মিস্ গিলফ্রিস্ট, আমি ল্যান্স কোয়েনেটের বোন-ঝি সুসান ব্যাঙ্ক।

ও এসো এসো, আমি তোমায় চিনতাম না তো? এসো ভেতরে এসো, তুমি আসবে জানাওনি তো। বস কি খাবে বল চা না কফি?

না কিছু করতে হবে না, আপনাকে চমকে দিইনি তো?

একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম, আজ তদন্ত হবে তাই আমি মনে মনে একটু অস্থির হয়ে আছি। আধ ঘন্টা।

আগে আর একবার বেল বেজেছিল, আমি দরজা খুলতে ভয় পেয়েছিলাম। কেমন বোকা না আমি? খুনী কেন আবার ফিরে আসবে? একজন লন এসেছিলেন, আমি ওকে দেখে খুশী হয়েছিলাম, মিসেস।

ব্যাঙ্কস।

হা ব্যাঙ্কস, ট্রেনে এলে?

না গাড়ীতে এলাম।

তারপর ঘরের চারদিকটা দেখে বলল : বেচারা অ্যান্ট কোরা আমার জন্য ওর সব জিনিসপত্র রেখে গেছে।

হ্যাঁ, মিঃ অ্যান্টহুইসল আমাকে বলেছেন। ভালোই হয়েছে নতুন বিয়ে করে আসবাবপত্র পেয়ে গেলে।

না না, এগুলোতে আমার দরকার নেই। এগুলো আমি বিক্রি করে দেব।

বিশ্রী সবুজ টেবিলটা দেখে সুসান কেঁপে উঠল এবং তাড়াতাড়ি ওটা দান করে যেন মুক্ত হল।

অনেক ধন্যবাদ। আমি ইতিমধ্যেই কোরার সুন্দর ছবিগুলো এবং এমেথির ব্রোচ পেয়েছি। মনে হয় ওগুলো তোমাকে দিয়ে দেওয়া উচিত।

না না।

তুমি ওর জিনিসপত্র দেখবে না? তদন্তের পরে দেখবে?

ঠিক করেছি এখানে কয়েকদিন থেকে এইসব জিনিসপত্র বিক্রি করে যাব।

এখানে রাত্রে থাকবে?

হ্যাঁ।

আন্ট কোরার একটা ঘর ছিল না? ওখানে ঘুমোব।

তোমার কিছু মনে হবে না?

কেন? উনি ওঘরে খুন হয়েছেন বলে, না না। তাতে আমার কিছু হবে না। সব ঠিক করা হয়েছে?

হা কম্বল ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমি ও পেন্টার ঘরটাকে ঘসে ঘসে সব দাগ মুছে দিয়েছি। ঘরে আরও কম্বল আছে। তুমি চল উপরে নিজে গিয়ে দেখবে।

সুসান উপরে গেল, এখন কোরার ঘরটা ঝকঝকে তকতকে। এ ঘরেও নানারকম ছবি ভোলোনো। ছবিগুলো মিসেস ল্যান্স কোয়েনেটের স্বামীর আঁকা, গিলক্রিস্ট বলল।

আন্ট কোরার আঁকা ছবি কোথায়?

আমার ঘরে। তুমি দেখবে?

গর্বের সাথে মিস গিলক্রিস্ট তার সম্পত্তি দেখালো।

ছবিগুলো দেখে সুসানের মনে হচ্ছিল কোনো ছবির পোষ্টকার্ড থেকে আঁকা।

ঘড়ি দেখে সুসান বলল : তদন্তের সময় হয়েছে, গাড়ী আনবো নাকি?

না, হাঁটা পথে মাত্র পাঁচ মিনিট।

ওরা একসাথে বেরোল, রাস্তায় মিঃ অ্যান্টহুইসলের সাথে দেখা হয়ে গেল, সবাই মিলে ভিলেজ হলে ঢুকল।

শুরু হল তদন্ত। নানারকম খুঁটিনাটি ব্যাপার সম্বন্ধে আলোচনা করা হোল। শেষে জুরি বললেন, এটা কারুর দ্বারা খুন।

ওরা তদন্তের শেষে বেরিয়ে এলেন, হাফ ডজন ক্যামেরা ক্লিক করল। তারপর ওরা কিংস আর্মে লাঞ্চ খেতে ঢুকল।

অ্যান্টহুইসল খেতে বসে বললেন : সুসান তুমি আজ আসছ বললে না তো? তাহলে আমরা একসাথে আসতে পারতাম।

আমি হঠাৎ চলে এলাম।

তোমার স্বামী এল না?

গ্রেগ ব্যস্ত তার ঐ বাজে দোকান নিয়ে। সুসান বলল, আমার স্বামী কেমিস্টের দোকানে কাজ করেন।

ও কীটসের মত?

আমার স্বামী কিন্তু কবি নন।

সুসান তারপরে বলল : আমরা একটা প্ল্যান করেছি, একদিকে থাকবে ল্যাবরেটরি আর একদিকে প্রসাধন ও বিউটি পার্লার।

খুব ভালো হবে, গিলফ্রিস্ট বললেন, এলিজাবেথ আর্ডেনের মত। আবার বলল, ফার্মেসী সাধারণ দোকানের মত নয়।

আপনার একটা চায়ের দোকান ছিল না?

হ্যাঁ, উইলো টি। গিলফ্রিস্টের মুখ উজ্জ্বল।

সুসানকে সে দোকানের কথা বলতে লাগল। অ্যান্টহুইসল টিমোথির সম্বন্ধে চিন্তা করছিলেন।

সুসান বলল, আঙ্কল টিমোথি? উনি তো পঙ্গু। এ ব্যাপারের সাথে কোনো যোগাযোগ থাকতে পারে নাকি?

না না, আমি ভাবছি মিসেস টিমোথির কথা, সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে পা মচকেছে।

অ্যান্টহুইসল কিংস আর্ম থেকে বেরিয়ে দুই মহিলাকে বিদায় জানিয়ে আবার কিংস আর্মে ঢুকলেন, এখনেই তিনি একটা ঘর নিয়েছেন, কালকে অন্ত্যেষ্টি অনুষ্ঠান হবে।

আমার গাড়ীটা কেয়ারীতে আছে, সুসান বলল। আমি সেটার কথা ভুলে গেছিলাম, আমি পরে ওটাকে গ্রামের মধ্যে নিয়ে আসবো।

মিস্ গিলক্রিস্ট বললেন : দেরী করো না। অন্ধকারের পর বাইরে বেরিয়ো না।

ওর দিকে তাকিয়ে সুসান বলল : আপনি কি ভাবছেন খুনী এখনো এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে?

না না, তা নয়? গিলফ্রিস্টের অস্বস্তি হয়।

কিচেনের দিকে যেতে যেতে মিস্ গিলফ্রিস্ট বললেন, তোমার আধঘন্টার মধ্যে চা দরকার মনে হয়?

কেউ সাড়ে তিনটের সময় চা খায়। তবুও মিস গিলক্রিস্টকে খুশী রাখা দরকার ভেবে সুসান উত্তর দিল।

যখন ইচ্ছে, মিস্ গিলফ্রিস্ট।

দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল কয়েক মিনিট পরেই এবং একটা র‍্যাট-ট্যাট-ট্যাট শব্দ হল।

উঠে দাঁড়াল সুসান। বেল শুনে গিলক্রিস্ট চলে এসেছিলেন এ্যাপ্রন পরা অবস্থায়

ডাকছে কে বলতো?

সাংবাদিক মনে হয়, সুসান উত্তর দিল।

উঃ, তোমায় জ্বালাল।

না ঠিক আছে, আমি কথা বলছি।

সুসান দরজা খোলার পর একজন বৃদ্ধ ভদ্রলোক বললেন : মিসেস ব্যাঙ্ক, আমার মনে হয়।

হা।

আমার নাম আলেকজান্ডার গাথরী। আমি মিসেস ল্যান্স কোয়েনেটের পুরোন এক বন্ধু। তুমি এবারেনথী বংশের মেয়ে তো?

হ্যাঁ।

গাথরী বসার ঘরের দিকে যেতে যেতে বলছিলেন, খুব দুঃখের দিন, ল্যান্স কোয়েনেটের বিয়ের সময় থেকে আমি এদের সাথে পরিচিত ছিলাম। বেচারা কোরা খুব ভালো মেয়ে ছিল। কোরাও বেশ সমঝদার ছিল।

সবাই সেই কথা বলে। সুসান বলল।

হ্যাঁ, মেয়েটা একটু অদ্ভুত ছিল। কখন যে কি কথা বলবে তার কোনো ঠিক ছিল না। ওর স্বভাব চাল-চলন এখন পর্যন্ত বাচ্চাদের মত ছিল।

বলে চললেন তিনিঃ আমি এখন একটু বিবেকের পীড়নে ভুগছি, কয়েক সপ্তাহ আগে কোরা আমায় আসতে বলেছিল। আমি এসে ওর সাথে দেখা করতে পারিনি। কোরা কিছুদিন হল সেলে ছবি কিনত, আমায় দেখাত। শেষ চিঠিতে আমায় লিখেছিল ও আদিম ইটালীয়ান মানুষের একটা দারুণ ছবি কিনেছে।

ঐ ছবিটা বোধ হয়, সুসান দেওয়ালে ঝোলানো ছবিটার দিকে ইঙ্গিত করল।

গাথরী ছবিটা দেখে বললেন : ভালোই হয়েছে, কোরাকে হতাশ করতে হল না।

সুসান চায়ের ট্রে নিয়ে এল। গাথরীকে অভিনন্দন জানিয়ে বসলেন গিলফ্রিস্ট।

গাথরী বললেন, সত্যিই কষ্টদায়ক।

হঠাৎ প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলেন গাথরী : কোরাকে কোনো চোর ডাকাত মারেনি, আমার যা মনে হয়

সুসান বলল, বলুন।

কোরা কোনো কথা চেপে রাখতে পারত না। ও যদি না বলার প্রতিজ্ঞা করত তবুও বলে ফেলত। বোধহয় কোরা কোনো গোপন কথা জানতে পেরেছিল। তবে এইরকম বীভৎস মৃত্যু অপ্রত্যাশিত, কোনো চোর ডাকাত এইসব জিনিস নেওয়ার জন্য কাউকে খুন করবে না। সে বাড়িতে কত টাকা রাখতো?

খুব সামান্য, গিলফ্রিস্ট বলল।

ভদ্রভাবে মিঃ গাথরী বিদায় নিলেন, জানালা দিয়ে অপসৃয়মান মূর্তি দেখা যাচ্ছিল। গিলফ্রিস্ট বাইরে থেকে একটা পার্শেল নিয়ে ফিরলো, কি হতে পারে বলতো? ওয়েডিং কেক?

গিলফ্রিস্ট প্যাকেটটা খুললেন, ভেতরে একটা সাদা বাক্স, সিলভার রিবন দিয়ে বাঁধা।

রিবনটা খুলে ফেললেন মিস গিলফ্রিস্ট। বাক্সের ভেতরে সুন্দর একটা কেক। কে পাঠাল, তিনি কার্ডটা পড়লেন। জন এবং মেরী লেখা, এরা আবার কারা। পদবী লেখে না কেন?

.

দশম পরিচ্ছেদ

০১.

কেয়ারী থেকে গাড়ীটাকে বের করে সুসান আর্মে নিয়ে এল। ভেতরে বসে আছেন একজন বিদেশী ভদ্রলোক।

আনন্দিত হয়ে মিস্ গিলক্রিস্ট বললেন, ওঃ তুমি ফিরে এসেছ, চিন্তা দূর করলে। তারপরে বলল, তুমি স্পগেটী খেতে পারবে তো? আমি ভেবেছি আজ রাতে–ঠিক আছে, যা ইচ্ছে করবেন। গিলক্রিস্ট কিছুক্ষণ পরে কফি নিয়ে এলেন, সুসানকে ওয়েডিং কেকের এক টুকরো দিল। সুসান কেক খেল না।

কেকটা খুব ভালো, কেকটা খেতে খেতে গিলফ্রিস্ট বলল।

সুসান জিজ্ঞাসা করল : আঙ্কল রিচার্ড মৃত্যুর আগে এখানে এসেছিলেন তাই না?

হা এসেছিলেন।

ঠিক কখন এসেছিলেন?

ওর মৃত্যুর তিন সপ্তাহ আগে।

ওকে কি অসুস্থ দেখাচ্ছিল?

না তো, ওকে বেশ সুস্থ সবল ও হাসিখুসি মনে হয়েছিল।

একটু থেমে সুসান বলল : যখন উনি মারা গেলেন আন্ট কোরা কি অবাক হয়েছিলেন?

হা মৃত্যুটা বড় আকস্মিক ছিল তো?

আঙ্কল রিচার্ড কি আন্টকে এমন কোনো কথা বলেছিলেন যাতে বোঝায় তিনি দুর্বল ও বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

হা মিসেস ল্যান্স কোয়েনেট বলেছিলেন উনি খুব বৃদ্ধ হয়ে গেছেন এবং অথর্ব হয়ে পড়েছেন।

সুসান বলল, আপনি ওদের কথাবার্তা শুনেছিলেন?

না মিসেস ব্যাঙ্কস, দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কথা শোনা আমার অভ্যেস নয়।

হা ঐ চাকরদের তিনি সন্দেহ করতেন, মানে ওরাই ওকে বিষ দিয়ে দিচ্ছে–

সুসান বলল, চাকর না হলে কোনো একজন লোক?

আমি জানি না মিসেস ব্যাঙ্ক, আমি সত্যি জানি না। ওর চোখের দিকে লক্ষ্য করে সুসান বুঝতে পারল মিস গিলফ্রিস্ট ওর চেয়ে বেশি জানেন।

সুসান একটু সহজ হয়ে বলল : আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?

আমি অ্যান্টহুইসলকে বলেছি সবকিছু বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানে থাকবো।

সুসান বলল, একটা কথা বলছি, আপনাকে তিন মাসের বেতন নিতে হবে।

আপনার খুব দয়া, আপনাকে একটা প্রশংসা দিতে হবে যে আমি আপনার এক আত্মীয়ের কাছে সন্তোষজনক ভাবে কাজ করেছি।

আমি বুঝতে পারছি না।

কাগজে এই খুনের কথাটা বেরিয়েছিল। সবাই সেটা পড়েছে। লোকে ভাববে আমি মৃত মেয়ের সাথে ছিলাম। আমিই বোধহয় খুনী। তাতে আমাকে কেউ কাজ দেবে না। আমি এ ব্যাপারে খুব চিন্তিত। রাতে আমার ঘুম হয় না। মনে হয় আমি আর কোনোদিন কাজ পাব না।

সুসান বলল, যদি ওরা খুনী ধরতে পারে, তাহলে কোনো সমস্যা থাকে না।

হঠাৎ টেলিফোন বেজে উঠল।

ফোন ধরল সুসান।

হা হা আমি সুসান বলছি।

হ্যালো ডার্লিং…..হা ঠিক আছে….অচেনা কারুর দ্বারা হয়েছে….স্বাভাবিক ব্যাপার…শুধু অ্যান্টহুইসল। কি? বলা কঠিন তবে আমার সে রকমই হয়..হ্যাঁ যেমন আমরা ভেবেছিলাম …হ্যাঁ একেবারে প্ল্যানমত…আমি স্টাফের সাথে দেখা করব….আমাদের দরকারে কিছুই নেই। গুড নাইট ডার্লিং।

হঠাৎ সুসানের মাথায় একটা চিন্তা এল। নিশ্চয়ই, বিড়বিড় করে বলল, সেই জিনিসটাই। ফোন তুলে সে ট্রাঙ্ক এনকোয়ারী চাইল। পনের মিনিট পরে এক্সচেঞ্জ থেকে একটা অবসন্ন গলা বলল

কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।

ওদের রিং করে যান।

দূরের একটা রিং শুনতে পেল সুসান, তারপর শব্দটা হঠাৎ থেমে গিয়ে একটা বিরক্ত পুরুষ কণ্ঠ শোনা গেল।

কে বলছেন?

আমি সুসান বলছি।

ওহ সুসান তুমি, কি হয়েছে? এত রাতে ফোন করছ কেন?

মড আন্টি কেমন আছে?

এই জন্য ফোন করলে? মড খুব কষ্ট পাচ্ছে। আমরা বড় বিপদে পড়েছি।

সেই জন্যই ফোন করলাম, তুমি কি মিস গিলফ্রিস্টকে রাখবে?

কে সে?

আন্ট কোরার সঙ্গী, খুব ভালো মহিলা।

ভালো কথা, কিন্তু সে কখন আসবে?

ধন্যবাদ, সুসান।

ফোন রেখে সুসান রান্না ঘরে গেল।

তুমি কি ইয়র্কশায়ারে আমার আন্টকে দেখাশোনা করতে পারবে। আন্ট পা ভেঙে ফেলেছেন। আঙ্কেল পঙ্গু। তুমি একটু রান্না-বান্না করতে সাহায্য করবে?

ওহ মিসেস্ ব্যাঙ্ক আপনি খুব ভালো। আপনাকে ধন্যবাদ।

৩. সুসান শুয়ে পড়ল

একাদশ পরিচ্ছেদ

০১.

সুসান শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা শুয়েও সুসানের আজ ঘুম এলো না।

যেখানে কেউ খুন হয়, লোকে সেই বাড়িকে ভয় পায়। এটাও হয়ত ভৌতিক বাড়ি হয়ে যাবে।

এখানে আসার পর থেকে তার মনে হচ্ছে আন্ট কোরা তার কাছাকাছি আছে।

একটা আসবাবপত্রের শব্দ হল। চুপি চুপি কেউ পা ফেলে আসছে নাকি? সুসান আলো জ্বালাল…. কিছু না…নার্ভাস হচ্ছে ….ভেবো না …চোখ বোজ…।

ওটা কি? …কেউ গোঙাচ্ছে….মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে….

সুসান বলল, আমি আর এসব নিয়ে ভাবব না… ভাবব না।

আবার …আবার গোঙানি …আরও জোরে কেউ মরতে চলেছে…

এবার আর কল্পনা হয়। সুসান আলো জ্বালিয়ে শুনতে লাগল। গোঙানিটা সত্যি, পাশের ঘর থেকে আসছে।

হঠাৎ সুসান লাফিয়ে উঠে গিলফ্রিস্টের দরজায় কড়া নাড়ল। অপেক্ষা না করে ঢুকে পড়ল। আলো জ্বলছে ঘরে, গিলক্রিস্ট বিছানায় বসে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় মুখটা বিকৃত।

কি হয়েছে?

বলতে পারছি না, বিছানা থেকে নামতে গিয়ে একটা বমির দমক এল। ডাক্তারকে একবার ফোন করে দাও। কিছু একটা পেটে গেছে।

ফোনের নম্বরটা দাও।

কে? গিলক্রিস্ট? লিড়স লেনের? ঠিক আছে আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।

দশ মিনিট পর ডাক্তার এল। সুসান দরজা খুলল।

রুগী দেখার পর ডাক্তার বলল, এ্যাম্বুলেন্স আনতে বল, ওকে হসপিটাল নিয়ে যেতে হবে।

তাহলে ওর অবস্থা ভালো নয়?

হ্যাঁ আমি মরফিয়া দিয়েছি। যন্ত্রণা কমার জন্য। কি খেয়েছিল?

ম্যাকারনি, কাস্টার্ড, পুডিং আর কফি।

তুমিও একই জিনিস খেয়েছ?

হা।

ও আর কিছু খায়নি তো?

না, আমরা কিংস আর্মে লাঞ্চ খেয়েছি।

তুমি মিসেস ল্যান্স কোয়েনেটের বোনঝি।

হা।

বীভৎস খুন। আশা করি ওরা অপরাধীকে ধরতে পারবে।

হ্যাঁ।

এ্যাম্বুলেন্স এলে ডাক্তার গিলফ্রিস্টকে নিয়ে চলে গেলেন। উপরে গিয়ে সুসান ঘুমিয়ে পড়ল।

.

০২.

সকাল বেলায় হাসপাতাল থেকে ফোন এল। ডাক্তার বলল, কয়েক দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে। ভাগ্যি তাড়াতাড়ি ফোন করেছিলে, প্রায় মৃত্যুর দরজায় পৌঁছে গেছিল। তিনি আবার বললেন।

সুসান ঠিক মনে করে দেখত ও এমন কিছু খেয়েছে যা তুমি খাওনি?

আমার তেমন কিছু মনে পড়ছে না তো!

সত্যি কি ফুড পয়েজনিং হয়েছে?

ডাক্তার বললেন, আর্সেনিক।

আর্সেনিক? হতভম্ব হল সুসান, কেউ ওকে আর্সেনিক খাইয়েছে?

ব্যাপারটা সেইরকম দাঁড়াচ্ছে।

আচ্ছা সে কি নিজে আর্সেনিক খেয়েছিল।

আত্মহত্যা? না না একথা সে স্বীকার করেনি।

অজান্তে আর্সেনিক খেয়ে ফেলেনি তো?

সেই কথাই ভাবছি।

হঠাৎ মনে পড়ে যেতে সুসান বলল, ওতো ওয়েডিং কেক খেয়েছিল। আমি সে কেক খাইনি।

ওয়েডিং কেক? তিনি বললেন–অস্বাভাবিক, কে পাঠিয়েছে ও জানে না? যে বাক্সটাতে কেকটা ছিল, সেটা আছে?

বলতে পারছি না, আমি দেখছি।

আচ্ছা পার্শেলের প্যাকেটটা কোথায় আছে জান?

সেটা পাওয়া গেল না।

তুমি এখানে থাকবে?

হা।

ভালো, পুলিশ তোমায় কিছু প্রশ্ন করতে পারে। এটা কে পাঠাল তুমি জান না।

মাথা নাড়ল সুসান।

আমি ওর সম্বন্ধে কিছু জানি না।

মেয়েটা বেশ শান্তশিষ্ট ছিল। পোষ্টের মাধ্যমে ওয়েডিং কেক, মনে হয় কোনো হিংসুটে মেয়ে। কিন্তু কে ওকে হিংসা করবে?

জানি না।

কি জানি এই লীচেট সেন্ট মেরীর কি হল। প্রথমে বীভৎস খুন, তারপরে বিষ দিয়ে মারার চেষ্টা।

ডাক্তার চলে গেলে সুসান দরজাটা খোলা রেখে ওপরে তার কাছে গেল।

সুসান একটা ড্রয়ারে ছবি পেল। কোরার চেহারা বেশ রোগা, একজন লম্বা লোককে জড়িয়ে ছবি তুলেছে। বোধহয় ইনিই পীরে ল্যান্স কোয়েনেট। তারপর সুসান একটা চিঠি নিয়ে পড়তে লাগল। পেছন থেকে হঠাৎ এটা গলার স্বর শুনে চমকে উঠল।

সুসান কি ব্যাপার?

জর্জ তুমি কি করে এলে?

নিচের দরজা খোলো ছিল।

একটু থেমে আবার বলল : আমি ফোন করেছিলাম, গ্রেগ বলল, তুমি বাড়ির দেখা শোনার জন্য এখানে এসেছো। ভাবলাম আমি তোমায় সাহায্য করতে পারব।

তুমি সত্যি করে বল এখানে কেন এলে?

ছোটখাটো ডিটেকটিভের কাজ করতে।

আন্ট কোরা অন্ত্যেষ্টির দিন যে কথাগুলো বলেছিল, সেগুলো কি অর্থহীন বা তার পেছনে কিছু ছিল। আমি যখন এলাম তখন তুমি একটা চিঠি পড়েছিল, চিঠিতে কি লেখা আছে? কিছু দরকারী কথা আছে ওটাতে?

না না ঠিক –

আমি দেখতে পারি?

বিড়বিড় করে জর্জ চিঠিটা পড়ছিল।

এতদিন তোমাকে দেখে আনন্দ পেলাম…. ভালো মনে হচ্ছে…বাড়িতে সুস্থ শরীরে পৌঁছেছে…একটু অবসন্ন….

এর যে কোনো মানে হতে পারে, তার স্বাস্থ্য সম্বন্ধেও হতে পারে, অথবা কোনো বন্ধু সম্বন্ধেও কোনো গল্পও হতে পারে।

হ্যাঁ অনেক কিছুই হতে পারে। তিনি কোরাকে কি বলেছিলেন। কেউ কি জানে?

তারপর সুসান বলল, আপনি মনে হয় জানেন গিলফ্রিস্ট আর্সেনিক বিষ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

জর্জ চমকে উঠল।

কেউ ওকে বিষ দেওয়া ওয়েডিং কেক পাঠিয়েছিল।

জর্জ একটা চেয়ারে বসে বলল : তাহলে দেখা যাচ্ছে রিচার্ড ভুল করেনি।

.

০৩.

পরে ইনসপেক্টর মর্টন কটেজে এলেন। চোখে বুদ্ধির ছাপ।

আপনি কিছু জানেন মিসেস ব্যাঙ্ক গিলফ্রিস্ট সম্বন্ধে?

যে কাডবোর্ড বাক্সটা নিয়ে গেছিলেন ডঃ গ্রোকটর তাতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে।

মাথা নাড়ল সুসান।

আমি অবাক হয়ে গেছি। আচ্ছা পোষ্টাফিসের ছাপ কিছু বোঝা গেল না?

ভুলে গেছেন পার্সেলের প্যাকেটটা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ওটা বোধহয় পোষ্টেই আসেনি; এখানকার পিয়ন এখানে ঐরকম কিছু দিয়েছে বলে মনে করতে পারছে না।

আচ্ছা গিলক্রিস্ট পুরো কেকটা খেয়েছিলে কি? বলতে পারছি না, আমাকে একটুকরো দিতে চেয়েছিলো আমি খাইনি।

আমি একটু উপরে যেতে পারি?

নিশ্চয়ই।

সুসান উপরে এসে বলল : কাগজপত্রগুলো একটু ওলট-পালট করেছি আন্ট কোরার জিনিসপত্র দেখার সময়। তবে ডাক্তার আসার পর আমি আর গিলফ্রিস্টের ঘরে ঢুকিনি।

কিন্তু কে ওকে মারতে চাইবে? তার চোখ সুসানের চোখে, সুসান অস্বস্তিবোধ করল।

তুমি জান না? জিজ্ঞেস করল।

না, আমি জানি না।

তাহলে আমাদের খুঁজে দেখতে হবে।

.

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

০১.

একটা আধুনিকভাবে সাজানো ক্যাফেতে বসেছিলেন দুজন বৃদ্ধ।

সিরাফে চুমুক দিতে দিতে পোয়ারো মিঃ গোবির দিকে দেখছিলেন।

মিঃ গোবির গুণ হল তিনি ভালো তথ্য সংগ্রহ করেন। গোবির মত কেউ তাড়াতাড়ি খবর সংগ্রহ করতে পারে না।

তোমার জন্য যতখানি সম্ভব যোগাড় করে দিয়েছি, মিঃ গোবি পাশের ফায়ার প্লেসের দিকে চেয়ে বললেন, আজকালকার ছেলেগুলো ঠিকমত কাজ করতে চায় না।

একটা নোটবুক বার করে মিঃ গোবি বলতে লাগলেন–প্রথমে জর্জ ক্রসফিল্ড। রেস আর জুয়া খেলে, মাঝে মাঝেই ফ্রান্সে আর মস্কোতে যায়। কেসিনোতে অনেক সময় কাটায়। তার ভ্রমণের খরচের চেয়ে অনেক বেশি টাকা তোলে। সম্প্রতি স্টক এক্সচেঞ্জে ঢুকেছিল, কিন্তু ভাগ্য খারাপ, কিছু করতে পারেনি। তারপর থেকে ওর মেজাজ ভালো ছিল না, রিচার্ড মারা যাওয়ার পর বেশ ভালো মেজাজে আছে।

তুমি যে বলেছিলে ঐ বিশেষ দিনটার কথা জিজ্ঞেস করতে। সেদিনও রেস খেলতে হাস্ট পার্কে যায়নি। বোধহয় গেডিংটন থেকে কোথাও চলে গেছিল ট্রেনে করে। লীচেট সেন্ট মেরীর কাছের স্টেশনে নেমে বাসে করে লীচেট সেন্ট মেরীতে যাওয়া যায়। বাসে বেশ ভীড় থাকে। লীচেট সেন্ট মেরীতে ওকে কেউ দেখেনি, দেখা সম্ভব নয়।

গোবি নোটবুকের পাতা ওল্টালেন, মিঃ মাইকেল গ্রেগ, টাকা চেনে, টাকা উপার্জনও করছে। মাইকেলের স্ত্রী ছোটখাটো অভিনয় করে স্বামীকে খুব ভালোবাসে। ওদের নিয়ে একটা রটনা চলছিল, মিঃ রিচার্ড এবারেনথীর মৃত্যুর পর রটনাটা ছড়িয়ে পড়েছে। শেষ ব্যাপারটার উপর মিঃ গোবি জোর দিলেন।

এই বিশেষ দিনটিতে মিঃ শেন বলেছিলেন নাটক সম্বন্ধে কথা বলতে তিনি রোজেনহেম ও মিঃ অস্কার লুইসের সাথে কথা বলতে যাচ্ছেন কিন্তু সে দেখা করেনি। হাঁটা পথে কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনটে বাজার আছে, সেখানে গাড়ী পাকু মারে রাখলে কেউ নজর দেবে না, আমরা মিঃ শেনকে তালিকার ভেতরে রাখছি।

নিশ্চয়ই।

পোয়ারো বলল, এখনও বোঝা যাচ্ছে না, ঠিক কারুর উপর সন্দেহটা কেন্দ্রীভূত করা যাচ্ছে না, তুমি বলে যাও।

মিঃ গোবি আবার বললেন, মিঃ এবং মিসেস ব্যাঙ্কস, ওরা বলেছে ওরা সারাদিন বাড়িতে ছিল। কিন্তু মিসেস ব্যাঙ্কস একটার দিকে গ্যারেজ থেকে গাড়ী বের করে কোথাও গেছিল, পাঁচটা নাগাদ ফিরেছিল।

মিঃ ব্যাঙ্কস সেদিন কি করেছিল জানা যায়নি। অফিস থেকে বলেছে ও একটু উত্তেজিত অবস্থায় ছিল, যেদিন শেষবার কাজে যায়।

ওহ গোবি তুমি কি করে এতসব খবর জোগাড় কর। পোয়ারো বলল।

এবার আমরা মিঃ এবং মিসেস টিমোথি সম্বন্ধে বলব, গোবি আরম্ভ করলেন।

ওদের প্রচণ্ড টাকার অভাব, বেশ ভালো খাবার খেতে চায়। টিমোথি পঙ্গু। মিঃ টিমোথি কাউকে বেল বাজিয়ে না ডাকলে কেউ ঘরে ঢোকে না, অন্ত্যেষ্টির পরের দিন ওর মেজাজটা ভীষণ খারাপ ছিল। সেদিন সাড়ে নটা থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত ওকে কেউ দেখেনি।

আর মিসেস্ এবারেনথী?

সে গাড়ীতে করে এণ্ডারবি থেকে বেরিয়েছিল। ক্যালস্টোন নামে একটা গ্যারাজে পায়ে হেঁটে এসে বলেছিল কয়েক মাইল দূরে তার গাড়ীটা খারাপ হয়ে গেছে।

ও এগারটার সময় সরাইখানায় গেছিল। সেখান থেকে মাইল খানেক গিয়ে কারুর গাড়ীতে করে স্টেশনে যেতে পারে–যা হোল এসব ভাবনা তোমার।

গাড়ীটা কী খারাপ হয়েছিল?

তুমি ঠিক বিবরণটা চাও?

ঠিক বলা যায় না, দক্ষ মিস্ত্রি তাড়াতাড়ি সারিয়ে দিতে পারে, আবার নতুন লোকের অনেক সময় লাগতে পারে। পোয়ারো বলল, ওদিন এণ্ডারবি থেকে চাকরদের দৃষ্টি এড়িয়ে বেরিয়েও থাকতে পারেন।

মিঃ গোবি বললেন, বোধহয় না, মিসেস্ এবারেনথী অ্যান্টহুইসলকে কথা দিয়েছিল এণ্ডারবি দেখাশোনা করার জন্য।

.

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

০১.

এরকুল পোয়ারো ভুরু কোঁচকাল বার্কশায়ার কাউন্টির ইনস্পেক্টর মর্টনের কার্ড দেখে।

জর্জ ওকে ভেতরে নিয়ে এস, আর ঐ পুলিশ ভদ্রলোক যা পছন্দ করে নিয়ে এসো।

মর্টন সোজাসুজি কাজের কথা পাড়লেন।

আমি লণ্ডনে এসেছিলাম, আপনার ঠিকানা পেয়ে ভাবলাম বৃহস্পতিবারের তদন্ত সম্বন্ধে আলোচনা করে যাই।

হা আমার তদন্ত করলাম, যাদের জিজ্ঞেস করলাম, সবাই সন্তোষজনকভাবে তাদের সেদিনের সেই সময়ের অবস্থান বলল। না এটা ঠিক সাধারণ খুন নয় মিঃ পোয়ারো। এটা যে করেছে সে এটাকে সাধারণ হিসেবে দেখাতে চেয়েছে। গিলফ্রিস্ট খুন করতে পারে। কিন্তু মোটিভ পাওয়া যাচ্ছে না। ওদের দুজনের বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল।

সে থামল।

সে জন্যই আপনার সাহায্যের জন্য এসেছি। কোনো কারণে নিশ্চয়ই ওখানে গেছিলেন?

মর্টন বিস্তৃতভাবে ওয়েডিং কেকের ঘটনাটা বলল।

পোয়ারো দীর্ঘশ্বাস টানলো।

আমি গিলক্রিস্টের ব্যাপারে অ্যান্টহুইসলকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম। তবে বিয়ের কথা ভাবিনি। আমি আবার কুড়ুলের আশা করেছিলাম।

আপনি আর একটা খুনের আশা করেছিলেন কেন?

আস্তে আস্তে মাথা নাড়লেন পোয়ারো।

ব্যাপারটা অন্ত্যেষ্টির পর থেকে আরম্ভ হয়। অ্যান্টহুইসলের কথাগুলো পোয়ারো বললেন।

মর্টন বুদ্ধিমান, যে ঠিক পয়েন্টগুলো নিল বেছে। তাহলে মিঃ এবারেনথীকে বিষ দেওয়া হয়েছিল?

সম্ভাবনা আছে।

আর দেহটা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনো প্রমাণ নেই।

ঠিক বলেছ।

তবে কিছু লোক আছে যারা কোরাকে ঐ কথাটা বলতে শুনেছে। এবং বিশেষ একজন কেউ ভেবেছে কোরা পরে কথাটাকে আরও বিস্মৃতভাবে বলবে।

এবার তাহলে বুঝতে পারছো, তদন্তের সময় কেন আমি উপস্থিত ছিলাম।

তারপরেই মিস গিলফ্রিস্টের উপর আক্রমণ

একটা কাজ করা যেতে পারে, যে প্যাকেটে কেকটা এসেছিল তার উপর হাতের লেখাটা পরীক্ষা করা যেতে পারে।

পার্শেলটা পোস্টে এসেছিল কিনা বোঝা যাচ্ছে না। পোষ্টম্যান নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না। যদি পার্শেলটা দিয়েও থাকে তবে সেটা কারুর চোখে পড়ল না যতক্ষণ না গাথরী।

মর্টন বলল, হ্যাঁ, আমি ভাবছি মিঃ গাথরী ল্যান্স কোয়েনেটের বন্ধু ছিল। সে সহজেই প্যাকেট ফেলে দিয়ে যেতে পারে প্যাকেটের উপরে ভুয়ো পোস্টাল ছাপ দিয়ে। একটু থেমে বলল, আরও একটা সম্ভাবনা আছে।

মিঃ জর্জ ওখানে গেছিল। উদ্দেশ্য অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দেওয়া, রাস্তায় গাড়ী খারাপ হয়েছিল। ওর সম্বন্ধে কিছু জানেন মিঃ পোয়ারো?

আমি সামান্য কয়েকটা তথ্য জোগাড় করেছি। আমি একটু ছদ্মবেশ নিয়ে উত্তরে গেছিলাম বাড়ি কেনার আছিলায়। উই-এন-এ-অব-সি-ওর প্রতিনিধি হয়ে।

ইউনাইটেড নেশনস-এইড-এর রিফিউজি সেন্টার অর্গানাইজেশান।

মর্টন হাসল।

.

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ

০১.

এরকুল পোয়ারো লক্ষ্য করলেন, প্রধান দরজাটা তালাবন্ধ। তবে বাগানের দিকে আর একটা ছোট দরজা আছে। সন্ধ্যের আগে সেটা বন্ধ করা হয় না। প্রায় একটার সময় যখন মালী ও বাড়ির লোক খেতে গেছিল তখন পোয়ারো ঐ দরজাটা দিয়ে সবার অজান্তে রিচার্ডের শোবার ঘরে চলে এলেন।

হ্যাঁ এটা করা হয়ে থাকতে পারে, তবে সত্যি করা হয়েছে কি? তিনি একটা প্ল্যান করেছেন। তবে তার আগে বৃদ্ধ ল্যান্সকম্বের সাথে একটু কথা বলা দরকার।

জ্যানেটের মত উদ্ধত নয় ল্যান্সকম্ব, হাতের পালিশের চামড়াটা রেখে বলল : বলুন।

পোয়ারো বললেন : তুমি মিসেস এবারনথীকে বলেছ যে তুমি অবসর নেওয়ার পর বাইরের লজটাতে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেছ?

হা।

তোমার প্রভুর মৃত্যুতে নিশ্চয়ই খুব আঘাত পেয়েছো?

হা। ওরকম প্রভু আর হবে না।

ওভার কোটটা নিয়ে পোয়ারো বাইরে বেরিয়ে হেলেনের সাথে দেখা করলেন।

গোলাপ গাছে জল দিচ্ছিল হেলেন।

আর কিছু পেলেন? সে জিজ্ঞেস করল।

না, পাব আশাও করিনি।

হেলেন বলল : এটা বোধহয় একটা অলীক ব্যাপার।

কুড়ুল দিয়ে আক্রমণ?

কোরার সম্বন্ধে বলছি না।

আমি কিন্তু কোরা সম্বন্ধে ভাবছি। ওকে খুন করার দরকার পড়ল কেন? মিঃ অ্যান্টহুইসল বলেছেন যে কোরা অন্ত্যেষ্টির সময় একটা অস্বাভাবিক কথা বলেছিল তাই না?

হা, কিন্তু আমি জানি না।

পোয়ারো কথাটা চেপে ধরলেন।

কিভাবে অস্বাভাবিক? অপ্রত্যাশিত? বিস্ময়কর?

আমার কিছু মনে পড়ছে না।

তুমি কিছু শুনে থাকতে পার, কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ বা কিছু ভাঙার শব্দ।

ভুরু কুঁচকে হেলেন মনে করার চেষ্টা করল।

না, আমার তা মনে হয় না…।

এখন আমায় বল, কোরাকে ভালোভাবে চিনত কে?

মনে হয় ল্যান্সকম্ব।

হেলেন বলল, ল্যান্সকম্বের পরে আমিই ওকে ভালো করে চিনতাম।

তাহলে তোমাকে পরিচিত ধরে নিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারি তুমি কেন ভাবলে ও যেমন প্রশ্ন করতে সেইরকম করেছিল?

এটা কোরার বৈশিষ্ট্য।

পোয়ারো বললেন, ধর কোরা ভেবেছিল সেই অপ্রত্যাশিত কথাটা বললে সবাই চমকে যাবে এবং সে মজা পাবে। এটা কি তার পক্ষে সম্ভব?

হতে পারে, বাচ্চাদের মত আর এইরকম একটা প্রবৃত্তি ছিল। কিন্তু তাতে কি হবে?

প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলেন পোয়ারো।

মিসেস টিমোথি এবারেনথী অন্ত্যেষ্টির পরে এখানে রাত কটিয়েছিলেন?

হা।

ও কি তোমার কাছে কোরার কথাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছিল?

হ্যাঁ সে বলেছিল এরকম কথা বলা ঠিক হয়নি।

তুমি কি কথাটার গুরুত্ব দিয়েছিলে?

হ্যাঁ, মিঃ পোয়ারো, আমি গুরুত্ব দিয়েছিলাম।

পোয়ারো বললেন, অনেকদিন ধরে মিসেস ল্যান্স কোয়েনেট এবং তার ফেমিলির সাথে একটা বিচ্ছেদ চলছিল।

হা। আমাদের কেউ ওর স্বামীকে পছন্দ করতাম না। তাই বিচ্ছেদটা হয়েছিল।

তারপর হঠাৎ রিচার্ড ওর সাথে দেখা করতে গেল কেন?

আমি জানি না। বোধহয় ভেবেছিলেন আর বেশিদিন বাঁচবেন না তাই ঝগড়াটা মিটিয়ে দিতে গেছিলেন। ঠিক কিছু জানি না।

উনি তোমায় বলেননি?

উনি আমায় ওঁর টিমোথির কাছে যাওয়ার কথা বলেছিলেন, কোরার কাছে যাওয়ার কথা কিছু বলেননি।

হেলেন বলল, আপনি পুলিশের মত প্রশ্ন করে যাচ্ছেন।

আমি এককালে পুলিশ ছিলাম।

আচ্ছা তুমি শুনেছ সুসানের স্বামী একবার তার এক রুগীকে বিষ দিয়েছিল?

হেলেনের মুখে রাগের ভাব।

হেলেন তার কাছে এগিয়ে এসে হাত ধরল। মিঃ পোয়ারো এমন কেউ কি আছে যার জীবন সম্বন্ধে তদন্ত করা দরকার? লোকেদের এর মধ্যে টেনে আনা কি ঠিক যখন তাদের কোনো হাত নেই…

ল্যান্স কোয়েনেটের মৃত্যুতে, হা কারণ সবই পরীক্ষা করে দেখতে হয়। কোনো কিছুই অবজ্ঞা করা যায় না। আমি সবার সাথে দেখা করে কথা বলতে চাই যারা অন্ত্যেষ্টির দিন উপস্থিত ছিল। সবাইর সাথে যদি এখানে কথা বলা যায় তাহলে আমার খুব সুবিধে হয়।

কিন্তু মিঃ টিমোথি আসবেন না। উনি তো বাড়ি থেকে বেরোন না। আমার মনে হয় ও ব্যাপারেও আপনি ভাগ্যবান। আমাকে লর্ড বলছিল, বাড়িটা রঙ করা হচ্ছে। টিমোথি রঙের গন্ধে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন, ওরা এখানে এসে দুসপ্তাহ থাকবে। মডের ভাঙা পা এখনও ঠিক মত সারেনি।

হেলেন বলল : ওদের সবাইকে এখানে আনুন, সত্য বের করুন। আর খুন হতে দেবেন না।

তাহলে তুমি সহযোগিতা করবে?

হ্যাঁ, আমি করব।

.

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ

০১.

ঐ লিনোলিয়াস খুব সুন্দর লাগছে মিসেস জোনার। আপনার লিনে কি হাত? কীচেন টেবিলে চা আছে। যান গিয়ে খেয়ে নিন, আমি যাচ্ছি।

এক কাপ চা নিয়ে গিলফ্রিস্ট টিমোথির ঘরের দরজায় শব্দ করল। ভেতর থেকে একটা শব্দ হতে ঘরে ঢুকল।

সকালে চা আর বিস্কুট, মিঃ এরেনথী আজ নিশ্চয় ভালো বোধ করছেন। আজ দিনটা বেশ উজ্জ্বল। পদগুলো ওরকম থাক।

আমি ভেবেছিলাম আপনার রোদ ভালো লাগবে। আজ রোদ ঝলমলে দিন।

না, আমার ঘর অন্ধকার থাক। ঐ রঙের গন্ধ আমার সহ্য হয় না। আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।

মড কোথায়? ঘন্টখানেক হল দেখছি না।

তিনি বিশ্রাম করছেন।

ওকে এখানে এসে বিশ্রাম নিতে বলবে। নিচে নেমে গিলফ্রিস্ট চুপিচুপি ঘরে ঢুকে দেখল মড একটা নভেল পড়ছেন।

আপনাকে মিঃ এবারেনথী ডাকছেন। মড নভেলটা রেখে সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়ল।

ওহ আমি ভুলে গেছিলাম, এক্ষুনি যাচ্ছি। স্ত্রী ঘরে ঢোকার সাথে সাথে টিমোথি ফেটে পড়লেন।

এতক্ষণে আসা হল?

আমি দুঃখিত ডিয়ার, আমি জানতাম না তুমি আমায় ডাকছ।

তুমি যে মেয়েটাকে বাড়িতে ঢুকিয়েছ, আমায় পাগল করে ছাড়বে।

ও তোমায় বিরক্ত করেছে, ও কিন্তু সেবা করতে চায়। তারপর বলল, কেমন আছ?

না ভালো নেই, তুমি কটনকে একবার ডেকে পাঠাও। এই রক্তের গন্ধ আমার হার্টে আঘাত করছে।

কিচেন গিলক্রিস্ট চা খেতে খেতে মিসেস হেলেনের সাথে গল্প করছিল।

আমি সব সময় চেষ্টা করছি মিসেস এবারেনথীর কষ্ট কমাতে। ওই সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা ওর পক্ষে ভীষণ কষ্টকর।

ওর পিছনে লেগে থাকতে হয়, চায়ের কাপে চামচ নাড়তে নাড়তে জোনস বলল।

ওর পঙ্গু অবস্থা ভীষণ দুঃখকর।

হঠাৎ টেলিফোন বেজে উঠল। গিলক্রিস্ট তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল ফোনটা ধরার জন্য।

মিঃ টিমোথি গিলফ্রিস্টের দিকে রাগতমুখে তাকালেন। সে যখন ট্রে তুলছিল বললেন : কে ফোন করছে?

মিসেস লিও এবারেনথী।

তাহলে ঘন্টা খানেক গল্প চলবে। ফোনে কথা বলার সময় মেয়েদের জ্ঞান থাকে না। বোঝে না ওরা তো টাকা নষ্ট করছে।

তারপর বললেন : পর্দাটা একটু সরিয়ে দাও, ওটা নয় এটা। চোখে আলো পড়লে ভালো লাগে না। তুমি ঐ বইকেস থেকে একটা বই দাও তো। কী হল।

কোনো বইটা আপনি চাইছিলেন?

তোমার জন্য ভুলে গেলাম, যেতে পার।

মড উল গোটাচ্ছিল গিলক্রিস্ট আর কাছে গেল। তারপর মড় কষ্টের সাথে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলেন।

হেলেন ফোন করছিল বাড়িটা কোনো বিদেশী রিফিউজি প্রতিষ্ঠানকে বিক্রি করা হবে?

টিমোথি কথটা শুনে ক্ষেপে গেলেন।

আর কিছু থাকল না, আমাদের পুরনো বাড়ি, যেখানে জন্মেছি? ওঃ আমি আর চিন্তা করতে পারছি না।

মড বলল : হেলেনও এই কথা বলছিল, বাড়িটা বিক্রি হয়ে যাবার আগে ওখানে যেতে বলল। ও তোমার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন। হোটেলে না গিয়ে এণ্ডারবিতে গিয়ে থাকতে বলল। এখনও চাকররা আছে, তোমার কষ্ট হবে না।

দেখি চিন্তা করে। আমি শুনেছি রঙে আর্সেনিক থাকে। আবার কোথাও যাওয়া আমার পক্ষে কষ্টকর। ভেবে পাচ্ছি না কি করলে ভালো হবে।

হোটেলেই ভালো হবে মনে হয় মড বললেন, টাকা খরচ হবে সত্যি কিন্তু সেখানে তোমার স্বাস্থ্যের প্রশ্ন।

বাধা দিল টিমোথি।

ওহ মড তুমি কি বোঝ না আমরা মিলিওনিয়ার নই। হেলেন যখন বলেছে আমরা তো ওখানে গিয়ে থাকতে পারি। যা হোক মরার আগে বাড়িটা একবার দেখার ইচ্ছে আছে।

মড এবার শেষ কৌশলটা প্রয়োগ করল, আমি শুনলাম মিঃ অ্যান্টহুইসল বাড়িটা বিক্রি হয়ে যাওয়ার আগে সমস্ত আত্মীয়দের ডেকে পাঠিয়েছেন, নীলামে যাওয়ার আগে আত্মীয়রা যদি কোনো আসবাব চায়।

আমাকে যেতেই হবে, বাড়ির একমাত্র লোক বংশধর হিসেবে আমার সেখানে উপস্থিত থাকা দরকার। আমরা ওখানে থাকার সময় বাড়ির রঙ করা শেষ হয়ে যাবে। ঐ মহিলা এখানে থেকে বাড়ির দেখাশুনা করবে।

.

০২.

আমি পারব না। বলল গিলক্রিস্ট।

ওর কথায় মড অবাক হলেন। মিস গিলক্রিস্ট কাঁপছিল।

আমিও বাড়িতে একা থাকতে পারব না। যদি কেউ এখানে শুত তাহলেও হত।

মড এবারেনথী বললেন যে এখানে কেউ এমন নেই যে এখানে ঘুমোতে আসবে। গিলফ্রিস্ট বলল : আপনি হয়ত ভাবছেন আমি ভীতু। কিন্তু আমি কোনোদিন ভয় পেতাম না কিন্তু এখন অন্যরকম, একা থাকলে ভয়ে মরে যাব।

স্বীকার করলেন মড :

হা যদিও এর মধ্যে কোনো যুক্তি নেই, এই ঘটনার পরেও আমি এরকম ভয় পেতাম না। ভয়টা আস্তে আস্তে গজিয়েছে। এখানে আসার পর আমার ভয়টা আরও বেড়ে গেছে–কোনো বিশেষ কারণে নয়। সব সময় মনে হয় একটা সাংঘাতিক কিছু ঘটবে…. এই যে নান এসেছিল তাতেও আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম।

তাই নাকি? আমি জানতাম না, ওঃ আমার এত খারাপ লাগছে। আপনারা কি ভাববেন

সত্ত্বনা দিল মড : আমরা অন্য ব্যবস্থার কথা চিন্তা করছি।

৪. জর্জ ক্রসফিল্ড

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

০১.

একটা মেয়ের পিঠ দরজা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যেতে জর্জ ক্রসফিল্ড এক মুহূর্ত থামল। তারপর অনুসরণ করতে আরম্ভ করল জর্জ।

একটা দরজার কাছে এল। দরজাটা একটা দোকান ঘরের। অনেকদিন আগে থেকে দোকানটা বন্ধ হয়ে গেছে। কাঁচের জানালা দিয়ে ভেতরটা খালি মনে হয়। দরজাটা বন্ধ। কিন্তু দরজায় জর্জ শব্দ করল। একজন তরুণ, চোখে চশমা। দরজা খুলল।

ক্ষমা করবেন, জর্জ বলল। আমার মনে হল আমার পিসতুতো বোন এক্ষুনি এখানে ঢুকল।

ঢুকে পড়ল জর্জ।

সে বলল, হ্যালো সুসান।

একটা প্যাকিং বাক্সের উপর সুসান দাঁড়িয়েছিল।

হ্যালো জর্জ, তুমি কোত্থেকে এলে?

আমি তোমার পেছনটা দেখে চিনে ফেলেছি।

তাহলে পেছন দিকের একটা বৈশিষ্ট্য থাকে।

জর্জ বলল, এই খালি দোকানটাতে খুন হলে কেমন হত। রাস্তার লোকেরা ভেতর দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখত একটা সুন্দরী লাশকে।

আমাকে খুন করার তোমার কোনো প্রয়োজন নেই। মামার এস্টেটের চতুর্থ অংশ আমি পেয়ে যাব। কারুর খুব টাকার আকাঙ্খা থাকলে এই কারণেই খুন করতে পারে।

বসে পড়ে একটা সিগারেট ধরাল সুসান।

মামার সম্পত্তির টাকার ভাগ তোমার খুব দরকার তাই না?

আজকাল কেউ বলতে পারবে না ওর টাকার দরকার নেই।

জর্জ বলল, তুমি দোকানটা ব্যবসার জন্য নিচ্ছ নাকি?

আমি পুরো বাড়িটা কিনব। উপরের ফ্ল্যাট দুটো সহ।

টাকা থাকলে ভালো লাগে, তাই না?

হ্যাঁ, আমার পক্ষে ভালো, আমার প্রার্থনায় দয়া করেছেন।

প্রার্থনায় কি বৃদ্ধ আত্মীয়কে মারা যায়?

সুসান কথাটাই গুরুত্ব দিল না।

জর্জ বলল, এখানে বেশ ভালো ব্যবসা করতে পারবে। হা, সুসান তুমি সফল হবে, ব্যবসাটার কথাটা কি অনেকদিন ধরে মাথায় ঘুরছিল?

হা এক বছরের বেশি।

রিচার্ড মামাকে বলনি কেন? তিনি সাহায্য করতেন।

আমি বলেছিলাম।

তিনি ব্যবসাটার ভবিষ্যৎ বুঝতে পারেননি।

সুসান কিছু বলল না।

জিজ্ঞেস করল জর্জ, গ্রেগ তার এখনকার কাজ ছেড়ে দেবে?

হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। আমরা নিজেরাই পেছনের দিকে একটা ল্যাবরেটরি করব এবং ফেস ক্রিমের ফরমূলা নিজেরাই তৈরি করব।

জর্জ বলল, তোমার মধ্যেই এবারেনথীদের গুণের সমাবেশ ঘটেছে। তুমি মেয়ে হয়ে গেলে। যদি ছেলে হতে তাহলে সব সম্পত্তিটাই বাগাতে পারতে।

সুসান বলল, তা বোধহয় হত। একটু থেমে আবার বলতে লাগল : উনি গ্রেগকে পছন্দ করেননি।

ওহ জর্জ ভুরু তুলে বলল, তার ভুল হয়েছে।

হ্যাঁ।

যা হোক তোমার সময় ভালোই যাচ্ছে, সবই প্ল্যানমত হয়ে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বলল : আচ্ছা তুমি হেলেনের কাছ থেকে কোনো চিঠি পেয়েছ নাকি? এণ্ডারবি সম্বন্ধে?

হ্যাঁ, আজ সকালে, তুমি পেয়েছ?

হ্যাঁ, কি করছ এ ব্যাপারে।

আমি ভেবেছি পরের উইকএণ্ডে যাব। যদি সবার সুবিধে হয়। হেলেন সবাইকে ডেকেছে।

জর্জ হাসল।

অথবা একজন অন্যজনের চেয়ে দামী কোনো আসবাব নিয়ে নেবে।

সুসানও হাসল।

আমি ওখান থেকে কিছু আসবাব আনব। আমাদের বংশের কিছু স্মৃতি। তুমি ওখানে যাবে তো?

আমি সেখানে গিয়ে ভাগাভাগি দেখব, আর কিছু না?

জর্জ বলল, তুমি যে সবুজ স্যালাটীট টেবিলটা নেবে বলেছিলে। রোজামণ্ড ওটা চাইতে পারে স্টেজ সেটের জন্য।

সুসান বিরক্ত হল।

তুমি এর মধ্যে রোজামণ্ডকে দেখছ?

অন্ত্যেষ্টির পর আমি আর সেই সুন্দরী পিসতুতো বোনকে দেখিনি।

আমি ওকে দুএকবার দেখেছি–কেমন অস্বাভাবিক।

কেন কি ব্যাপার?

না, ওকে একটু কেমন হতাশ মনে হয়।

বেচারা সুন্দরী রোজামণ্ড।

তবে সবাই যতটা ভাবে রোজামণ্ড ততটা বোকা নয়। কোনো কোনো সময় তুমি যা লক্ষ্য করবে না, ও তা লক্ষ্য করবে।

আমাদের আন্ট কোরার মত

হা….

কোরা ল্যান্স কোয়েনেটের প্রসঙ্গ ওঠার পর সাময়িক অস্বস্তির মধ্যে দুজনে পড়ল।

তারপর জর্জ বলল : কোরা ল্যান্স কোয়েনেটের সেই সঙ্গীর খবর কি? ওর জন্য কিছু একটা করা দরকার।

কি বলতে চাইছ?

আমি বলছিলাম কোরার সঙ্গীর পক্ষে আর কোনো কাজ খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।

এ ভাবনা তোমার মাথায় এসেছে?

হ্যাঁ, লোকে ভীষণ কুসংস্কারে বিশ্বাস করে। সবাই জানে এই মহিলা একটা কুড়ুল দিয়ে কাউকে খুন করতে পারে না। তবুও এটা শোনার পর ওকে কেউ কাজ দিতে চাইবে না।

তোমার মাথায় এসব চিন্তা এল কেন? তুমি এসব জানলে কি করে?

জর্জ বলল, তুমি ভুলে যাচ্ছ আমি একজন ল-ইয়ার। আমি লোকের অনেক অযৌক্তিক দিক জানি। ভদ্রমহিলাকে কিছু ভাতা দেওয়া দরকার। অথবা উনি যদি পারেন কোনো অফিসে কাজ জুটিয়ে দেওয়া উচিত। আমার মনে হয় মহিলার সাথে সম্পর্ক রাখা দরকার।

ভেবো না জর্জ, সুসানের গলাও শুকনো। আমিও এইরকম কথা ভেবে ওকে টিমোথির বাড়িতে কাজে লাগিয়ে দিয়েছি।

অবাক হল জর্জ।

সুসান এটা কি ঠিক হল?

এই মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে ভালো কাজ মনে হয়। ওর দিকে উৎসুক্যের দৃষ্টিতে তাকান জর্জ।

তুমি নিজের সম্পর্কে খুব আত্মবিশ্বাসী, তাই না সুসান? তুমি জান তুমি কি করছ, এবং কখনো নিজের কাজের অনুশোচনা কর না।

হাল্কাভাবে সুসান বলল : অনুশোচনা মানে সময় নষ্ট।

.

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ

০১.

রোজামণ্ডের দিকে চিঠিটা মাইকেল ফেলে দিল।

কি সম্বন্ধে?

আমরা যাবো, তাই তো?

আস্তে আস্তে মাইকেল বলল।

যাওয়া যেতে পারে।

গয়না-টয়না থাকতে পারে–অবশ্য ও বাড়ির সব কিছুই অনেক পুরনো।

হ্যাঁ, মিউজিয়ামের জিনিসপত্র, আমি বসার ঘরের দু-একটা স্কেচ নেব, আমাদের নাটকের কাজে লাগতে পারে।

উঠে দাঁড়িয়ে সে ঘড়ি দেখল।

আমাকে এখন রোজনহেমের সাথে দেখা করতে হবে। আমার ফিরতে দেরি হবে। অস্কারের সাথে ডিনার খেয়ে নেব, আমেরিকার অফারের কথা আমাদের আলোচনা করে দেখতে হবে।

অস্কারকে আমার শুভেচ্ছা জানিও, সে এতদিন পরে তোমায় দেখে নিশ্চয়ই খুশী হবে?

এতদিন পরে মানে। সবাই ভাববে আমাকে যেন মাসখানেক ধরে দেখা যায়নি।

হা, তোমায় দেখা যায়নি তো? রোজামণ্ড বলল : আমাকে দেখা গেছে। আমরা সপ্তাখানেক আগে একসাথে লাঞ্চ খেয়েছি।

ও হয়ত সেকথা ভুলে গেছে। সে পরশুদিন ফোন করে বলল যে তোমাকে টিলি লুকস ওয়েস্ট প্রথম রাত থেকে সে তোমায় দেখেনি।

এই পাগলটা নিশ্চয়ই তার মাথা হারিয়েছে। মাইকেল হাসল। তার বড় বড় নীল চোখে তাকিয়েছিল রোজামণ্ড। কোনো অবেগ ছিল না চোখে।

তুমি ভাব আমি একটা পাগল?

প্রতিবাদ করল মাইকেল।

না না, তা কেন ভাবব!

হ্যাঁ, তুমি ভাব, আমি একেবারে বন্ধু নই।

আমি বলছি আমি জানি তুমি কোথায় ছিলে….।

মাইকেল রোজামণ্ডের দিকে তাকাল।

মাইকেল বলল : আমি জানি না তুমি কি বলতে চাইছ।

আমাকে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে কথা বলে বোকামো কর।

দেখ রোজামণ্ড।

মাইকেল স্ত্রীর কথায় হতভম্ব হয়ে গেল।

আমরা এই নাটকটা করতে চাই তাই তো?

হ্যাঁ, এইরকম একটা পার্ট আমি সবসময় চেয়েছি।

হা, তাই আমি বলছি।

তাহলে তুমি কি বলছ?

এতে অনেক টাকা খরচ হবে, এত ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না।

সে স্ত্রীকে বলল : টাকাটা তোমার আমি তা জানি। যদি তুমি ঝুঁকি নিতে না চাও।

ডার্লিং টাকাটা আমাদের।

শোন ডার্লিং, ইলিন পার্টটায় ভালো অভিনয় করতে হবে।

রোজামণ্ড হাসল।

আমি পার্টটা করতে চাই।

হতভম্ব হল মাইকেল। তোমার মাথায় কি ভর করল?

কিছুই ভর করেনি।

না না, তুমি এখন পাল্টে গেছ, মেজাজী নার্ভাস, কিন্তু কেন?

কিছু না, আমি একটু সাবধানী হতে চাই মাইক।

কিসে সাবধান হবে। আমি সবসময় সাবধানে থাকি।

না তুমি থাক না। তুমি সেদিন অস্কারের কাছে বোকামো করেছ।

রেগে গেল মাইকেল।

আর তোমার ব্যাপার কি? তুমি যেদিন বললে জেনের সাথে কেনাকাটা করতে যাচ্ছ। তুমি যাওনি।

হ্যাঁ, ওটাও বোকামো হয়েছে আমি একটু রিজেন্ট পার্কে গেছিলাম।

রিজেন্ট পার্ক? তুমি কোনো দিন রিজেন্ট পার্কে বেড়াতে যাও না। কেন গেছিলে? তোমার কি কোনো বয়ফ্রেণ্ড হয়েছে। তুমি এখন সবকিছু করতে পার। তুমি এখন অনেক পাল্টে গেছ। কিন্তু কেন?

আমি ভাবছি কি করা যায়…।

টেবিলটা অতিক্রম করে মাইকেল রোজামণ্ডের কাছে এসে আবেগের গলায় বলল : ডার্লিং তুমি জান আমি তোমায় পাগলের মত ভালোবাসি। জড়িয়ে ধরল মাইকেল।

আমি যাই করি না, তুমি সবসময় আমায় ক্ষমা করেছ, করনি; মাইকেল জিজ্ঞেস করল।

হ্যাঁ, করেছি কিন্তু সেদিন আর নেই। এখন আমাকে ভাবতে হবে, প্ল্যান করতে হবে।

কি ভাববে কি প্ল্যান করবে?

বিরক্ত হয়ে বলল রোজামণ্ড : তুমি যা করে ফেলছ তার এখনো শেষ হয়নি। আমরা শুরু করতে যাচ্ছি, পরবর্তী কথা আমাদের ভাবতে হবে না। কোনোটা গুরুত্বপূর্ণ আর কোনোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

রোজামণ্ড…।

সে বলল, তার দৃষ্টি চলে গেছে দূরে যার মধ্যে মাইকেল নেই।

তুমি কি ভাবছিলে?

ভাবছিলাম লীচেট সেন্ট মেরীতে যাবো কিনা? গিয়ে আন্ট কোরার সঙ্গী সেই মহিলার সাথে দেখা করতাম।

কিন্তু কেন?

সে ইতিমধ্যেই কোথাও চলে যাবে। কোনো আত্মীয়-টাত্মীয়ের কাছে। একটা কথা জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত ওকে যেতে দেবো না।

কি জিজ্ঞেস করবে?

জিজ্ঞেস করব কে কোরাকে মারল?

মাইকেল তাকাল।

তুমি বলছ সে খুনীকে জানে?

রোজমণ্ড বলল : আমি তাই আশা করি, সে ওখানে থাকত।

জানলে পুলিশের কাছেই বলত।

আহা সে এভাবে জানে তা বলছি না, সে বোধহয় নিশ্চিত কারুর সম্বন্ধে। কারণ আঙ্কল রিচার্ড ওখানে গিয়ে কিছু বলে এসেছে। তুমি জান তিনি ওখানে গেছিলেন, সুসান আমাকে বলল।

কিন্তু তিনি কি বলেছিলেন সে হয়ত শোনেইনি।

না না শুনেছে, তার কথা শুনে মনে হচ্ছিল।

হতে পারে না, রিচার্ড এবারেনথী কোনোদিন বাইরের লোকের সামনে ফেমিলির কারুর উপরে সন্দেহের কথা বলবেন না।

সে হয়ত দরজার বাইরে থেকে শুনেছে।

আড়িপাতার কথা বলছ।

হা তাই, এবং সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

ওর দিকে মাইকেল হতাশার দৃষ্টিতে তাকাল।

তুমি করবে?

না না, আমি কোনোদিন গ্রামে গিয়ে কারুর সঙ্গী হতে পারব না। তার চেয়ে আমি মরে যাব।

আমি বলছি তুমি চিঠি পড়তে আর ঐসব। শান্তভাবে রোজামণ্ড বলল : যদি আমি কিছু জানতে চাইতাম তাহলে পড়তাম। সবাই পড়ে, পড়ে না?

স্বামীর দিকে রোজামণ্ড তাকাল।

আমি জানি গিলফ্রিস্ট কৌতূহলের বশে চিঠি পড়ত ও কথা শুনত। আমি নিশ্চিত, সে জানে।

ধরা গলায় মাইকেল বলল : কোরাকে কে খুন করেছে বলে তোমার মনে হয়? আর বৃদ্ধ রিচার্ডকে?

আবার রোজামণ্ড তার দিকে তাকাল।

ডার্লিং অবান্তর কথা বোল না- আমি যতটা জানি, তুমিও জান, তবে সেটা উল্লেখ করার জন্য শক্ত নার্ভের দরকার। তাই আমরা করি না।

.

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ

০১.

এরকুল পোয়ারো লাইব্রেরীর ঘরে আগুনের পাশে বসে সমবেত আত্মীয়দের দেখছিলেন।

সুসানের ওপর তার চোখ। তারপর তিনি তাকালেন জর্জ ক্রসফিল্ডের দিকে, নিজেকে নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট রোজামণ্ডের সাথে কথা বলছিল। তারপর মাইকেলের দিকে, চেহারায় সেই একই আকর্ষণ মাইকেলের। তারপর হেলেনের দিকে–একটু অন্যমনস্ক। তারপর টিমোথির দিকে, তার পাশে মড শক্ত চেহারা, স্বামীর চিরসঙ্গী। এর বাইরে গিলফ্রিস্ট বসে আছে মুখে অপরাধী অপরাধী ভাব।

তিনি একসাথে চেয়েছিলেন ওদের, একসাথে এক জায়গায় পেয়েছেন। তিনি এবার কি করবেন?

তিনি এবার এই কাজ নেওয়ার জন্য একটু অসন্তুষ্টি অনুভব করলেন, কি জন্য? এটা কি হেলেন এবারেনথীর প্রভাব? হেলেন রিচার্ডের মৃত্যুর ব্যাপারে ঠিক জল ঘোলা করতে ইচ্ছুক নয়। এ ব্যাপারটা চাপা পড়ে থাক হেলেন চাইছিল। এই চাওয়ার একটা মানে আছে। কিন্তু তার নিজের মন যেন একমত হচ্ছে তার মনোভাবের সাথে?

আত্মীয়দের সম্বন্ধে মিঃ অ্যান্টহুইসল বেশ প্রশংসনীয় বর্ণনা দিয়েছেন।

পোয়ারো চেয়েছিলেন তার সামনে এদের এনে বুঝতে পারবেন কে এই কাজটা করেছে। যেমন শিল্পীরা কোনো শিল্পী দেখে বুঝতে পারে এ শিল্পী। তেমনি তিনিও ভেবেছিলেন এদের মধ্যে অপরাধীকে চিনতে পারবেন।

ব্যাপরটা কিন্তু অত সহজ নয়।

কারণ তিনি খুনীর তালিকা থেকে এদের সবাইকে বাদ দিতে পারবেন না। যেমন আটকে পড়া ইঁদুর হিংস্র হয়ে ওঠে, সেই ভাবে জর্জ খুন করতে পারে। শান্তভাবে দক্ষ হাতে খুন করতে পারে সুসান তার ভবিষ্যতের প্ল্যান সফল করার জন্য। গ্রেগরি শান্তি চায়, শান্তি পাওয়ার জন্য খুন করতে পারে। মাইকেলের ভবিষ্যত কল্পনার জন্য। রোজামণ্ড কারণ তার জীবন দর্শন ভীষণভাবে সোজা। টিমোথি তার ভাইকে হিংসে করত। এবং তার ভাইয়ের অর্থ ও ক্ষমতার লোভের জন্য, মড? কারণ তার ছেলে হচ্ছে টিমোথি। সে ছেলের জন্য সবকিছু করতে পারে। এমনকি গিলফ্রিস্ট পর্যন্ত খুন করতে পারে যদি চায়ের দোকান আবার ফিরে পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে।

খুনী ভাবা যায় না হেলেনকে। ভদ্র, শান্ত এবং তার স্বামী রিচার্ডকে খুব ভালোবাসত।

নিঃশ্বাস ফেলল পোয়ারো। সত্যে পৌঁছবার কোনো সোজা রাস্তা নেই।

পোয়ারো বলল, আমি একটা গাড়ীর জানলা থেকে দেখছি তুমি গ্যারেজের একটা মেকানিকের সাথে কথা বলছিলে। তুমি আমায় দেখনি।

গারেজে কখন? কোথায়?

ঠিক এক সপ্তাহ আগে, পোয়ারো ভালোভাবেই কিংস আর্মের গ্যারেজের কথা মনে ছিল তবুও বলল : ঠিক কোথায় বলতে পারছি না।

আপনার রিফিউজিদের জন্য বাড়ি খুঁজেছিলেন?

হা, রিফিউজি বাড়ির জন্য অনেক জায়গা ঘুরতে হয়েছে।

একজন বিদেশীর কাছে বাড়িটা চলে যাচ্ছে তোমার খারাপ লাগছে না ম্যাডাম।

না না, সুসান বলল, আমার মনে হয় না এখানে কেউ থাকতে পারবে। এ বাড়িটা আমার কোনোদিনই পছন্দ হয়নি।

ম্যাডাম। তুমি নিজের একটা বাড়ির কথা ভাবছ, তাই না?

সুসান হাসল।

পোয়ারো বললেন : তুমি সফল হবে, তুমি এগিয়ে যাবে। তোমার ভাগ্য ভালো, তোমার টাকার চিন্তা নেই। অনেকের কাজ করার ক্ষমতা থাকলেও টাকার অভাবে কিছু করতে পারে না।

আমি তাতেও পিছিয়ে যেতাম না, আমার প্ল্যান সফল করায় ঠিক কাউকে যোগাড় করে নিতাম।

তোমার মামা রিচার্ড যার বাড়ি এটা, তিনি বেঁচে থাকলেও তোমায় সাহায্য করতেন।

না না করতেন না।

আচ্ছা তাই নাকি?

তরুণদের পথে বুড়োদের দাঁড়ানো উচিত না, ও করবেন।

পোয়ারো হেসে বলল, আমি বুড়ো তবে আমি তরুণের পথে দাঁড়াই না, আমরা মৃত্যুর জন্য কেউ বসে থাকেনি।

উঃ, কি মারাত্মক কথা।

কিন্তু ম্যাডাম তুমি তো বাস্তববাদী। ওরা বসে আছে বৃদ্ধদের মৃত্যুর আশায়, সে মৃত্যু তাদের বড়লোক করবে না, কিন্তু সুযোগ করে দেবে।

হা সুযোগ, সুযোগই দরকার হয়, সুসান বলল।

পোয়ারো বলল : হা, সুযোগকে দুহাত দিয়ে কাজে লাগাতে হয়।

পোয়ারো গ্রেগরী ব্যাঙ্কের সাথে কথা বললেন, রঙের গন্ধ থেকে এখানে চলে এসেছেন, তাতে খুব ভালো হয়েছে বললেন। মড গিলফ্রিস্টের কথা বললেন, একটা বাড়িতে থাকতে ও নার্ভ পেল না বললেন।

আমার মনে হয় এটা দেরী করে আসা আঘাত।

সম্ভবতঃ।

যুদ্ধের সময় একটা বোমা আমাদের বাড়ি থেকে মাইলখানেক দূরে পড়েছিল, আমার মনে পড়ে টিমোথি।

টিমোথি থেকে পোয়ারো প্রসঙ্গ পরিবর্তন করল।

ঐ দিনে বিশেষ কিছু ঘটেছিল? জিজ্ঞাসা করলেন তিনি।

ঐ দিনে? কোনো দিনে?

যেদিন মিসেস গিলফ্রিস্ট ভয় পেয়েছিলেন।

না, বোধহয় লীচেট সেন্ট মেরী থেকে আসার পর থেকেই ভয় পেতে আরম্ভ করেছে। লীচেট সেন্ট মেরীতেও ভয় পেত না।

বিষাক্ত ওয়েডিং কেক, তারপরে যে ভয় পাবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

ও ঐ বাড়িতে কিছুতে ভয় পেয়েছে? ও কি নিজে জানে কিসে ভয় পেয়েছে?

পোয়ারো গিলফ্রিস্ট কে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

ঐ বীভৎস খুনের সময় তুমি ও বাড়িতে ছিলে?

হ্যাঁ ছিলাম, মাপ করবেন, ও ব্যাপারে কথা বলতে আমার ইচ্ছে করে না।

বুঝতে পারছি।

মন দিয়ে পোয়ারো তার কথা শুনতে লাগলেন, তার কথা শেষ হতে সাবধানে পোয়ারো বললেন : তুমি কটেজে একা না থেকে ভালো করেছ।

আমি তা করতে পারতাম না মিঃ পনটার্লিয়ার।

না, আমি শুনলাম তুমি মিঃ টিমোথির বাড়িতে একা থাকতেও চাওনি?

অপরাধী দেখাল গিলফ্রিস্টকে।

আমি ভীষণ লজ্জিত। কিন্তু কেন জানি না আমি ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।

কিন্তু কেন? জানা দরকার–তুমি সবেমাত্র বিষ দিয়ে খুনের চেষ্টা থেকে বেঁচে গেছ।

গিলফ্রিস্ট বললেন, জানি না কে আমায় বিষ দিতে চেয়েছিল।

নিশ্চয়ই ঐ খুনীটা ভেবেছে তুমি এমন কিছু জান যা পুলিশ জানতে পারলে ওর বিপদ হবে।

কিন্তু আমি কি জানি? কোনো নৃশংস ভবঘুরে অথবা কোনো অর্ধোস্পদ।

যদি ভবঘুরে হয়, তাহলে আমার মনে হয় না।

প্লীজ মিঃ পনটার্লিয়ার, হঠাৎ অস্বাভাবিক হল গিলক্রিস্ট, ওরকম কথা বলবেন না। আমি বিশ্বাস করি না।

কি বিশ্বাস কর না?

আমি বিশ্বাস করি না যে এটা—

কথা থামিয়ে ইতস্ততঃ করল।

তুমি কিছু একটা বিশ্বাস কর।

না না, আমি করি না, করি না।

আমার বিশ্বাস তুমি কর, তাই তুমি ভয় পাও, এখনও ভয় পাচ্ছ।

না না এখানে ভয়ের কিছু নেই। এত লোজন এবং সবাই বেশ ভালো।

আমার কৌতূহলকে ক্ষমা করবেন। আমি বুড়ো লোক আমার কৌতূহল একটু বেশি। আমার মনে হয় স্ট্যানসফিল্ড গ্রেঞ্জে তুমি এমন কিছু দেখেছ যা তোমায় ভয় পাইয়ে দিয়েছে, ডাক্তাররা আজকাল অর্ধচেতন মনকে খুব গুরুত্ব দেন।

হ্যাঁ, হ্যাঁ, তা বোধহয় দেন।

আমার ধারণা তোমার অন্তনিহিত ভয় কোনো একটা ছোট ঘটনা দেখার পর বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

গিলফ্রিস্ট কথাটা লুফে নিল।

আপনি ঠিক কথা বলেছেন, সে বলল।

তাহলে তোমার মতে এই ব্যাপারটা কি?

এক মুহূর্ত ভাবল মিস গিলফ্রিস্ট তারপর বলল : আমার মনে হয় মিঃ পনটার্লিয়ার এটা সেই নান।

পোয়ারো কথাটা বোঝার আগেই সুসান তার স্বামী এবং হেলেন এল।

নান ভাবতে লাগলো পোয়ারো।

সে সন্ধ্যের দিকে নানের কথাটা নিয়ে আলোচনা করবে ভাবল।

.

ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ

০১.

খুব পরিচিত হয়ে গেলেন মিঃ পনটার্লিয়ার। পনটার্লিয়ারকে সবাই মেনে নিয়েছে। সাধারণের ধারণা হল এই বিদেশীকে–এই উইকএণ্ডে আসতে বলেনি। কিন্তু যখন এসেই গেছে ওর সাথে মানিয়ে নিতে হবে। কফি খেতে খেতে পোয়ারো ওদের কথাবার্তা শুনছিল।

টিমোথি বলছিল, আমাদের কোনো বাচ্চা নেই। সুতরাং আর বেশি জিনিসপত্র দিয়ে বোঝা বাড়ানো ঠিক না। তবে পারিবারিক কারণে আমি পুরোনো ডেসার্ট সারভিসটা নিয়ে যাব।

আপনি দেরী করে ফেলেছেন মামা, জর্জ বলল। আমি ওটা আজ সকালেই হেলেনকে আমাদের জন্য রেখে দিতে বলেছি।

না তা হবে না, টিমোথি গজরালেন। মড এবার অংশ নিলেন।

প্লীজ জর্জ, তোমার মামার সাথে কথা কাটাকাটি কোর না। ওর হার্ট খুব দুর্বল। ও যদি স্পোডঠা চায় তাহলে ওটা ওই পাবে। ও বংশের সবার চেয়ে বয়সে বড়। বেছে বেছে নেওয়ার অধিকার ও আগে পাবে।

ও জিনিসটা কিন্তু বাজে দেখতে, সুসান বলল।

চুপ কর সুসান, টিমোথি বলল।

হেলেন বলল, তুমি ওটা তোমার মামাকে দিয়ে দাও জর্জ।

এটা তোমার পক্ষে সম্মানের হবে।

জর্জ মাথা নিচু করে বলল, তোমার ইচ্ছেই আইন। আন্ট হেলেন, আমি আমার দাবী তুলে নিচ্ছি।

তাহলে তুমি চাও না। হেলেন বলল।

জর্জ হেলেনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাসল। তোমাকে যতটা চালাক মনে হয় তুমি তার চেয়েও বেশি চালাক। টিমোথি আঙ্কল ডেটা আপনার। আমি একটু মজা করছিলাম।

শরীর খারাপের জন্য আমি অন্ত্যেষ্টিতে আসতে পারিনি। আস্তে আস্তে টিমোথি বলছিলেন, তবে মড আমাকে বলেছে কোরা কি বলেছে। কোরা সবসময় বোকার মত কথা বলে। তবে এই কথাটার অর্থ ছিল মনে হয় এবং যদি কথাটা সত্যি হয়, তবে আমি জানি কাকে আমি সন্দেহ করব।

টিমোথি ঝড়ের গলায় কঠিন কর্তৃত্বের সুর। আজকে তুমি খুব বাড়াবাড়ি করছ। তোমার স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা কর।

সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে মড় ঘরে টিমোথির হাত ধরে বেরিয়ে গেল।

জর্জ নীরবতা ভাঙল ওরা চলে যাওয়ার পর।

গিলফ্রিস্ট এসে আবার অস্থিরতার সাথে বলল, মিসেস এবারেনথী খুব দয়ালু।

ব্যর্থ হল মন্তব্যটা।

হঠাৎ মাইকেল শেন বলল, আমি বেশ উপভোগ করছিলাম। এবার আমাদের দাবীটা পেশ করি। রোজামণ্ড এবং আমি বসার ঘরের স্যালাটীট টেবিলটা চাই।

না না, সুসান চেঁচিয়ে উঠল, আমি ওটা নেব।

এদিকে আবার আরম্ভ হয়েছে। জর্জ সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে বলল।

না আমরা রাগারাগি করব না, সুসান বলল।

আমার এটা দরকার কারণ এটা আমার বিউটি সপে লাগবে। স্যালাটীট টেবিল সাধারণতঃ পাওয়া যায় না।

এই জন্যই ওটা আমাদের দরকার, রোজামণ্ড বলল।

বুঝলাম, সুসান বলল, আমার মত তোমাদের দরকার নেই।

গ্রেগ নার্ভাস গলায় বলল : সুসান ঐ টেবিলটা চায়।

একটা অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে এল।

তাড়াতাড়ি হেলেনে বলল : জর্জ তুমি স্পেড় ছাড়া কি চাও?

জর্জ হাসল।

আমার কোনো জিনিসে লোভ নেই। যাক টেবিলের যুদ্ধ আজকের মত থাক। আমি সুন্দরী সুসানের পক্ষ নিলাম।

ইচ্ছাকৃতভাবে হেলেন প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বিদেশী অতিথির দিকে ঘুরল।

মিঃ পনটার্লিয়ার এসব নিশ্চয়ই আমার ভালো লাগছে না। আদৌ না এই সাংবাদিক অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পেয়ে আমি সম্মানিত। পোয়ারো মাথা নিচু করলেন। তবে বাড়িটা আপনাদের হাত থেকে একজন বিদেশীর কাছে চলে যাচ্ছে তাতে আমি দুঃখিত।

না আমাদের বিশেষ দুঃখ নেই, সুসান বলল। পোয়ারো বললেন, বাড়িটাকে ধর্মশালা করলে কেমন হয়? মিস্ গিলফ্রিস্ট তুমি তো নানদের পছন্দ করো না?

না না, তা ঠিক নয়। ওরা স্বার্থহীন মহিলা। ওদের এত একরকম দেখতে হয়, গিলফ্রিস্ট বলল। মিঃ এবারেনথীর বাড়িতে একজন নান চাঁদা নিতে এসেছিল, আমি ওকে দেখে চমকে উঠেছিলাম। লীচেট সেন্ট মেরীতে মিসেস ল্যান্স-কোয়েনেটর মৃত্যুর যেদিন তদন্ত হল সেদিন এক নান এসেছিল ঠিক তার মত। কেন সে আমাকে অনুসরণ করে বেড়াচ্ছে।

আমি ভাবতাম দুজন নান একসাথে চাদা তোলে, জর্জ বলল।

না না, একজন মাত্র নান এসেছিলেন, গিলফ্রিস্ট বলল।

আবার বলল : নিশ্চয়ই ইনি সেই একই নান নন, কিন্তু দুজনেরই একই রকম চেহারা? পোয়ারোর গলায় কৌতূহল।

পোয়ারোর দিকে গিলক্রিস্ট তাকাল।

হ্যাঁ প্রায়, উপরের ঠোঁটে দুজনেরই গোঁফের মত ছিল। আমি সত্যি ভয় পেয়ে গেছিলাম। তবে এরকম ভাবনা সম্পূর্ণ বোকামীর লক্ষণ আমি পরে বুঝতে পেরেছিলাম।

সত্যি ব্যাপারটা হল; জর্জ বলল, কেউ কারুর দিকে মনযোগ দিয়ে তাকায় না। তাই কোর্টে সাক্ষীরা একই লোকের বিভিন্ন বর্ণনা দেয়। ঐ ঠিক বর্ণনাকারী লোককে বেছে নেওয়া মুশকিল।

ম্যাডাম গুডনাইট, কাল সকালের ট্রেনেই চলে যাব। আপনার আদর আপ্যায়নের জন্য অনেক ধন্যবাদ। বাড়ি হস্তান্তরের দিন মিঃ অ্যান্টহুইসলের সাথে ঠিক করে নেওয়া যাবে। অবশ্য আমাদের সুবিধে অনুযায়ী।

আপনি ইচ্ছে করলে ওটা যে কোনো মুহূর্তে করে দেওয়া হবে মিঃ পনটার্লিয়ার। আমি যেজন্য এখানে এসেছিলাম সব হয়ে গেছে।

আপনি এবার আপনার সাইপ্রেসের ভিলায় ফিরে যাবেন?

হা, হেলেনের মুখে একটা মৃদু হাসি ফুটল।

পোয়ারো বললেন : আপনি খুশী তো? কোনো অনুশোচনা নেই?

হা হা, অতীতের সাথে জড়িয়ে থেকে কোনো লাভ নেই। অতীতকে পেছনে ফেলে যেতেই হয়।

অনিশ্চিতভাবে সুসান হাসল। পোয়ারো বললেন : আমি আন্তরিক ভাবেই বলছি।

তাহলে আপনি বলতে চাইছেন মাইকেল, আপনার রিফিউজিরা যখন এখানে বসবাস করবে তখনও তাদের অতীত দুঃখ কষ্টকে সারাতে পারবে না?

আমি রিফিউজিদের কথা বলিনি।

রোজামণ্ড বলল, তিনি আঙ্কল রিচার্ড, আন্ট কোরা, কুড়ুল খুন এসব বলতে চাইছেন।

পোয়ারোর দিকে ঘুরে সে জিজ্ঞেস করল : ঠিক বলিনি?

পোয়ারো বললেন, তোমার একথা মনে হল কেন?

কারণ আপনি একজন রহস্য সন্ধানী, তাই না? সেইজন্যই আপনি এখানে এসেছেন, আপনি ঐসব রিফিউজিদের কথা বলেছেন, ওসব ভুয়ো ব্যাপার।

.

বিংশ পরিচ্ছেদ

০১.

পোয়ারো রোজামণ্ডের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন। পোয়ারো বললেন, ম্যাডাম তোমার অনুমানশক্তির প্রশংসা করছি।

রোজামণ্ড বলল, একবার এক রেস্তোঁরার একজন আপনাকে চিনিয়ে দিয়েছিল।

কিন্তু তুমি এখনও তা বলনি! পোয়ারো তার চোখটা মাইকেলের উপর রাখলেন।

সবার মুখের ভাব এই পরিস্থিতিতে অস্বাভাবিক নয়। তার মনে হচ্ছিল যে মুহূর্তে রোজামণ্ডের মুখ থেকে রহস্যসন্ধানী কথাটা বেরিয়েছিল, সেই মুহূর্তে মুখের ভাবগুলো দেখলে ভালো হত।

তিনি ওদের উদ্দেশ্যে বোকার কথা বললেন। আর বিদেশী টান ছিল না তার কথায়।

হ্যাঁ, উনি বললেন, আমি একজন রহস্যসন্ধানী।

জর্জ জিজ্ঞেস করল, আপনাকে কে পাঠিয়েছে?

আমাকে রিচার্ড এবারেনথীর মৃত্যু সংক্রান্ত বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে।

কে নিযুক্ত করেছে?

এই মুহূর্তে সেটা কোনো ব্যাপার নয়। যদি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করা যায় যে, রিচার্ড এবারেনথীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তাহলে সেটা আপনাদের পক্ষে স্বস্তির কারণ হবে না কি?

তিনি স্বাভাবিক ভাবেই মারা গেছেন। অন্যরকম কে বলে?

কোরা ল্যান্স কোয়েনেট এইরকম কথা বলেছিলেন, এবং উনি নিজেই মারা গেছেন।

সে সেই কথাটা এই ঘরে বলেছিল, সুসান বলল, তবে আমার মনে হয়নি।

তোমার মনে হয়নি নাকি? জর্জ ক্রসফিল্ড তার শ্লেষাত্মক দৃষ্টি ঘোরালো সুসানের দিকে। আর কেন ভান করছ? মিঃ পনটার্লিয়ারের সামনে?

ওঁর নাম পনটার্লিয়ার নয়, হারকিউলিস না কি যেন, রোজামণ্ড বলল।

এরকুল পোয়ারো।

আপনি কোনো সিদ্ধান্তে এলেন জানতে পারি কি? জিজ্ঞেস করল জর্জ।

উনি তোমায় বলবেন না ডার্লিং, রোজামণ্ড বলল, বললেও তা সত্যি হবে না।

.

০২.

পোয়ারো ঐ রাতে ঘুমাতে পারলেন না। কোনো কোনো সময় তন্দ্রার মত আসছিল, হঠাৎ কোনো চিন্তা এসে আবার ঘুম ভেঙে যাচ্ছিল। কোরার তেল রঙ-রঙ আর কোরা। তেল রঙের গন্ধ। কিছু একটা বলেছিলেন না অ্যান্টহুইসল। গোঁফওয়ালা নান। স্ট্যান্সফিল্ড গ্রেঞ্জ আর লীচেট সেন্ট মেরীতে। স্টেজের মধ্যে নানের সাথে রোজামণ্ড। ঐ কথাটা কোরা বলার সময় হেলেন কি অস্বাভাবিক অনুভব করেছিল? যখন তিনি ঐ কথাটা বলেছিলেন হেলেনের হাত থেকে ফুলদানীটা পড়ে গেল কেন?

তবে এখনও অনেক পথ বাকি।

মোজাইকের কক্ষগুলো তিনি পরীক্ষা করলেন।

মিঃ অ্যান্টহুইসল, রঙের গন্ধ। টিমোথির বাড়ি….এর মধ্যে নিশ্চয়ই আছে….মোমের ফুল হেলেন….ভাঙা কাঁচ।

.

০৩.

শুতে দেরী করল হেলেন। সে চিন্তা করছিল।

পোয়ারো এ বাড়িতে নিয়ে আসতে তার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু মিঃ অ্যান্টহুইসলের অনুরোধ এড়াতে পারল না। এখন সব প্রকাশ হয়ে গেল। রিচার্ড আরও কবরে শান্তিতে শুয়ে থাকতে পারল। এই কোরা কথাটা থেকে।

.

০৪.

মিস্ অ্যান্টহুইসলের আরামের ঘুম ভেঙে গেল ফোন বাজার শব্দে।

বিরক্ত মুখে উঠে বসার ঘরের দিকে চললেন মিস অ্যান্টহুইসল।

ফেনিংস্টন ৬৭৫৪৮৯ রিসিভার তুলে বললেন, আমি লিও এবারেনথী কথা বলছি।

ওহ, সুপ্রভাত, আমি মিস অ্যান্টহুইসল, আমার ভাই এখনও ঘুমোচ্ছে।

দুঃখিত, খুব দরকার, আপনার ভায়ের সাথে এক্ষুনি কথা বলতে হবে।

তিনি ভায়ের ঘরে ঢুকলেন।

সেই এবারেনথী।

মিসেস লিও এবারেনথী, এই সাত সকালে।

মিসেস লিও নাকি? আমার ড্রেসিং গাউনটা কোথায়?

এখন তিনি বলছিলেন।

অ্যান্টহুইসল বলছি, হেলেন নাকি? তোমার মনে পড়েছে?

হেলেন বলল, হা, কিন্তু এর কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছি না।

সেটা আমায় ভাবতে দাও, তুমি কারুর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেছিলে?

হ্যাঁ।

বল।

অবাস্তব মনে হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত, গত রাতে আমি আয়নার সামনে বসে থাকার সময় মনে পড়ল…।

একটা ছোট আর্তনাদের সাথে একটা শব্দ ফোনে শোনা গেল, শব্দটা কি ঠিক বোঝা গেল না।

জোরে জোরে তিনি বলতে লাগলেন : হ্যালো, হ্যালো হেলেন, হ্যালো হেলেন কি হল….?

 ৫. কথা বলার পর

একবিংশ পরিচ্ছেদ

০১.

একঘন্টা পরে অনেকের সাথে কথা বলার পর অ্যান্টহুইসল এরকুল পোয়ারোর সাথে কথা বলছিলেন।

মিঃ অ্যান্টহুইসল বললেন : কিছু ঘটেছে?

হা, মিসেস লিও এবারেনথীকে ওদের বাড়ির কাছের লোক কুড়ি মিনিট আগে ফোনের কাছে অচেতন অবস্থায় দেখেছে। মাথায় একটা গুরুতর আঘাত।

মাথায় আঘাত?

হতে পারে পড়ে গিয়ে তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন, তবে আমার তা মনে হয় না। ও সেই মুহূর্তে আমাকে ফোন করছিল, হঠাৎ লাইনটা কেটে গেল।

তাহলে তোমাকে ও ফোন করেছিল, কি বলছিল? কিছুদিন আগে ও আমায় বলেছিল, যে অন্ত্যেষ্টির দিন কোরা যখন তার ভাইয়ের খুন হওয়ার কথা বলেছিল তখন কিছু একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার লক্ষ্য করেছিল। তখন তার মনে পড়েনি।

এখন তার হঠাৎ মনে পড়েছে?

হুঁ।

সেটা বলার জন্য তোমায় ফোন করেছিল?

হা, সে আমায় বলতে শুরু করেছিল, কিন্তু হঠাৎ বাধা পায়।

মিঃ অ্যান্টহুইসল বললেন : ওর জ্ঞান না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। গম্ভীরভাবে পোয়ারো বলল : সে আশা নাও করতে পারেন।

কিন্তু পোয়ারো, হেলেনের কি হবে? এণ্ডারবি ওর পক্ষে নিরাপদ জায়গা নয়।

না এণ্ডারবিতে সে নেই। ওকে নার্সিংহোমে পাঠানো হয়েছে, যেখানে আত্মীয় বা কোনো লোককেই ঢুকতে দেওয়া হবে না।

একটু পরে আবার পোয়ারোর গলা শোনা গেল। আমায় নিশ্চিত হতে হবে যে অন্য কেউ শুনছে না। যাক, তোমাকে কোথাও যাওয়ার জন্য তৈরি হতে হবে।

যাওয়া? অ্যান্টহুইসলের গলায় হতাশা, এণ্ডারবিতে যেতে বলছো?

না না, তোমায় লণ্ডনের বেশি দূরে যেতে হবে না। মানসিক চিকিৎসালয়ে ডাঃ পেনরিথের সাথে দেখা করে সদ্য ছাড়া পাওয়া একজন রুগীর ব্যাপারে খোঁজখবর নেবে।

রুগীটা কে?

রুগীর নাম গ্রেগরী ব্যাঙ্কস, খোঁজ করে দেখবে কি ধরনের মানসিক রোগে ও ভুগছিল।

সাবধানে থাকো পোয়ারো।

নিশ্চয়ই, আমি আমার মাথায় বাড়ি খেতে চাই না। আমি সব সাবধানতা নিচ্ছি, চলি।

অন্য প্রান্তে রিসিভার রাখার শব্দ শুনতে পেল পোয়ারো, তারপর সে একটা মৃদু আওয়াজ পেল।

সে তাড়াতাড়ি হলে গেল কাউকে দেখতে পেল না। শব্দ না করে সে সিঁড়ির পেছনে কাপবোর্ডটার কাছে গিয়ে ভেতরটা দেখল। সেই মুহূর্তে একটা ট্রেতে করে ল্যান্সকম্ব টোস্ট আর কফি নিয়ে ঘরে ঢুকল। পোয়ারোকে কাপবোর্ড থেকে বেরোতে দেখে অবাক হল।

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকল পোয়ারো। ওর পেছনের দিকটা ল্যান্সকম্ব বিরক্ত দৃষ্টিতে দেখতে লাগল।

বাড়িতে বিদেশী, ল্যান্সকম্বের মনে তিক্ত ভাবনা। মিসেস লিওর মাথায় মারাত্মক আঘাত। জানি না আর কি ঘটবে?

জ্যানেটকে পোয়ারো ঘটনাটার কথা জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল : আমি স্টাডির দরজা খুললাম এবং হুভারের সাথে ভেতরে ঢুকলাম। তারপরেই দৃশ্যটা দেখলাম। পড়ে আছেন তিনি, আমি ভেবেছিলাম মারা গেছেন। ভাবছিলাম এত সকালে ফোন করতে এলেন কেন, যা কোনোদিন করেন না।

কেউ উঠেছিল মনে হয়?

না না মিসেস্ টিমোথি উঠেছিলেন, বরাবরই খুব সকালে ওঠেন। ব্রেকফাস্টের আগে বেড়িয়ে আসেন।

মড উঠে পড়েছিল, আর তরুণ তরুণীরা তখনও ঘুমোচ্ছিল। এমনও তো হতে পারে ওদের মধ্যে কেউ কাজটা শেষ করে আবার শুয়ে পড়েছিল।

পোয়ারো ভাবল, যদি আমি ঠিক হই। তবে প্রায়ই আমার ভাবনা ঠিক হয়। তাহলে কে উঠেছিল বা শুয়েছিল ভেবে কাজ হবে না। প্রথমে আমি প্রমাণ খুঁজব। তারপরে আমি একটা ছোট্ট বক্তৃতা করে দেখব কি ঘটে।

পোয়ারো ফোন করল, শোন অ্যান্টহুইসল, আমি যে কাজটা তোমায় দিলাম সেটার কথা ভুলে যাও। কেউ শুনেছে সে কথা? এবার আসল কাজের কথা বলছি। তুমি এবার ট্রেনে করে টিমোথি এবারেনথীর বাড়ি চলে যাও।

কিন্তু টিমোথি আর মড তো এণ্ডারবিতে আছে। হ্যাঁ ঠিক বলেছ, এখনও বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য জোনস নামে একজন মেয়ে আছে। তোমাকে ঐ বাড়ি থেকে একটা জিনিস আনতে হবে।

তা হয়ত হবে। কিন্তু তুমি নিজে গিয়ে তো নিয়ে আসতে পার?

তা সম্ভব নয়, আমি একে অচেনা তারপরে বিদেশী। ওর সন্দেহ হবে।

তোমাকে সন্দেহ করবে না।

কি জিনিস?

ওকে পোয়ারো বলে দিল।

কি করব ওটা নিয়ে?

তুমি ওটা লণ্ডনের এলম গার্ডেনেসে নিয়ে যাবে। ঠিকানাটা নিয়ে নাও।

হেলেনের কি বলার ছিল জানা যেত!

পরে ব্যাখ্যা করব। তবে আমি নিশ্চিত, হেলেন আয়নায় কি দেখেছিল?

.

০২.

ব্রেকফাস্টের আবহাওয়া ভারী। টিমোথি আর রোজামণ্ড ছাড়া সবাই উপস্থিত থাকলেও কেউ খেতে পারল না।

জর্জ বলল, আশা করি আন্ট হেলেন ভালো হয়ে উঠবেন। ডাক্তাররা সব ব্যাপারেই মুখ লম্বা করে।

সুসান বলল, অত সকালে আন্ট হেলেন কাকে ফোন করছিলেন?

মড বলল, বোধহয় অসুস্থ বোধ করে ডাক্তারকে ফোন করছিলেন।

রোজামণ্ড বিরক্ত মুখে ঘরে ঢুকল।

আমি মোমের ফুলগুলো দেখতে পাচ্ছি না। সেগুলো আঙ্কল রিচার্ডের অন্ত্যেষ্টির দিন টেবিলের উপর ছিল। সুসান বলল, তুমি মোমের ফুলের কথা ভাবছ আন্ট মারাত্মক আঘাত নিয়ে নার্সিংহোমে শুয়ে আছে।

ওগুলো সম্বন্ধে ভাবব না কেন? আমি আর মাইকেল কালই চলে যাচ্ছি।

সেই মুহূর্তে ল্যান্সকম্ব ঢুকল।

জর্জ উঠে পড়ে বলল, আমাদের হয়ে গেছে, ল্যান্সকম্ব আমাদের বিদেশী বন্ধু কোথায়?

উপরে ওর ঘরে কফি আর টোস্ট খাচ্ছেন। রোজামণ্ড জিজ্ঞেস করল, ল্যান্সকম্ব তুমি জান মোমের ফুলগুলো কোথায় গেল?

মিসেস লিও অসাবধানে ভেঙে ফেলেছেন।

ও এই ব্যাপার।

ওগুলো বোধহয় সিঁড়ির পেছনে কাপবোর্ডটাতে আছে।

আমি গিয়ে দেখছি, মাইকেল চল না। আমার অন্ধকার কোণে যেতে ভয় করছে। আন্ট হেলেনের ঐ অবস্থা হওয়ার পর থেকে….

মড গম্ভীর গলায় বলল : তুমি কি বলতে চাইছ রোজামণ্ড?

ওর মাথায় কেউ বাড়ি মেরেছে তাই না?

তীক্ষ্ণস্বরে গ্রেগরী ব্যাঙ্কস বলল : তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে গেছেন। রোজামণ্ড হাসল।

তোমাকে উনি বলেছেন? ওকে নিশ্চয়ই মারা হয়েছে। জর্জ বলল : রোজামণ্ড তুমি এমনভাবে কথা বোল না।

না না সবই চক্রান্ত, রোজামণ্ড বলল। বাড়িতে একজন রহস্যসন্ধানী সূত্র খুঁজে বেড়াতেন। রিচার্ড এবারেনথীকে বিষ দেওয়া হয়েছে, আন্ট কোরাকে কুড়ুল দিয়ে মারা হল। মিস গিলক্রিস্টকে ওয়েডিং কেকের মধ্যে বিষ দিল কেউ, আন্ট হেলেনের মাথায় কেউ বাড়ি দিয়ে মারল। সব কিছুর মধ্যে একটা সংযোগ আছে। আমরা কোনোদিন মারা পড়তে পারি।

সুন্দরী রোজামণ্ড তোমায় কেউ মারবে কেন? জর্জ জিজ্ঞেস করল।

চোখ বড় বড় করল রোজামণ্ড।

কারণ আমি অনেক কিছু জানি। সে বলল।

কি জান? মড আর গ্রেগরী জিজ্ঞেস করল।

ভাবশূন্য হাসি হাসল রোজামণ্ড। আপনারা সবাই জানতে চান না? সে বলল, চল মাইকেল।

.

দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ

০১.

পোয়ারো এগারটার সময় লাইব্রেরী ঘরে একটা মিটিং ডাকল। সবাই উপস্থিত ছিল। পোয়ারো সবার মুখে একবার করে চোখ বোলালো।

গতরাতে আরম্ভ করলেন তিনি, মিসেস্ যেন আমায় ছদ্মবেশ উন্মোচন করে দিয়েছেন। যদিও ছদ্মবেশটা আর দুএকদিন দরকার ছিল। যাই হোক দুএক দিনের মধ্যে আপনাদের আমি কয়েকটা কথা বলব। আপনারা মন দিয়ে শুনুন, আমি মিঃ অ্যান্টহুইসলের অনেক দিনের বন্ধু। তিনি তার পুরোন বন্ধু রিচার্ডের হঠাৎ মৃত্যুতে খুব আঘাত পেয়েছিলেন। তিনি রিচার্ডের বোন কোরার কয়েকটা কথার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছিল।

কোরার কথায় বিশ্বাস করে খুব বোকামো করেছেন। মড বললো।

বলতে লাগলেন পোয়ারো : মিঃ অ্যান্টহুইসল কোরার মৃত্যুতে আরও অস্থির হয়ে পড়লেন। তিনি বিশ্বাস করতে চেয়েছিলেন এটা একটা দুর্ঘটনা এবং রিচার্ডর মৃত্যুটা স্বাভাবিক। সেই জন্যই তিনি আমাকে এটা ভার দিয়েছেন অনুসন্ধান করার জন্য। আমি অনুসন্ধান করেছি।

পেছন দিকে মাথা নিয়ে পোয়ারো বললেন : আপনারা শুনে খুশী হবেন যে মিঃ রিচার্ড এবারেনথীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। খুব সন্দেহ করার মত কোনো কারণই নেই।

তবে ওদের মুখ দেখে মনে হল না এটা একটা ভালো খবর।

ব্যতিক্রম হলো টিমোথি। তিনি একমত হয়ে ঘাড় নাড়ছিলেন।

নিশ্চয়ই রিচার্ডকে মারা হয়নি। কি করে সবাই খুনের কথা ভাবছিল কে জানে? কোরা আমার বোন হলেও বলছি কোরার মাথাটা একটু খারাপ ছিল। মিঃ পোয়ারো আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি ব্যাপারটার একটা সুরাহা করেছেন।

টিমোথি বলল, আজ সকালের আন্ট হেলেনের ব্যাপারটা কি?

মড বলল, হেলেনের বয়স হয়েছিল, স্টোক হওয়া স্বাভাবিক।

কিন্তু ও ডাক্তারকে ফোন করেনি, রোজামণ্ড বলল, আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছি–

তবে কাকে ফোন করেছিল?

সুসান জিজ্ঞেস করল।

আমি জানি না। তবে আমি খুঁজে বের করব।

.

০২.

ভিক্টোরিয়ান গ্রীষ্মবাসে বসেছিলেন এরকুল পোয়ারো। প্রথমে গিলফ্রিস্ট এল। কেমন যেন বিশৃঙ্খলা। মিঃ পনটার্নিয়ার আপনার নামটা আমার মনে থাকে না, সে বলল। যাই হোক আমি না এসে পারলাম না মিসেস যেন, ঠিক বলছেন সবই পরিকল্পিত। স্টোকও হতে পারে না। মিসেস লিও এই অবস্থার পর আমি না এসে থাকতে পারলাম না।

পোয়ারোর দিকে সে অনুনয়ের দৃষ্টিতে তাকাল। বল, তুমি যেন কি বলবে বলছিলে? পোয়ারো বলল। আমার বলার ইচ্ছে ছিল না, কারণ তিনি খুব দয়ালু। টিমোথিদের বাড়িতে আমার কাজ ঠিক করে দিয়েছিল। সেইজন্যই অকৃতজ্ঞ মনে হচ্ছে। মিসেস ল্যান্স কোয়েনেট আমাকে একটা ভালো জ্যাকেটও দিয়েছিল।

তুমি মিসেস ব্যাঙ্কসের কথা বলছ?

হ্যাঁ, আমি শুনেছি।

তুমি বলছ কোনো কথাবার্তা আড়াল থেকে শুনেছ?

না না আমি আড়াল থেকে কিছু শুনি না। তবে মিঃ রিচার্ড এবারেনথী যখন ওর বোনের কাছে গেছিল তখন শুনেছি। আমি জানি না মানুষের যখন আর বেশিদিন আয়ু থাকে না তখন মানুষ কেন এসব করতে চায়।

কি শুনেছিলে?

হা, তিনি বলেছিলেন, টিমোথির সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই। সে সবকিছু উড়িয়ে দেয়। কিছুই শুনল না। আমি ভাবলাম আমি তোমার কাছে বুকটা খালি করব। আমরা তিনজন মাত্র বেঁচে আছি! তুমি বোকার ভাব করলেও তোমার সাধারণ বুদ্ধি বেশ ভালো, তুমি যদি আমার জায়গায় থাকতে কি করতে?

আমি কোরার কথা ঠিকমত শুনতে পাইনি, তবে মনে হয় পুলিশ কথাটা শুনেছিল, এরপর মিঃ এবারেনথী জোরে হেসে উঠে বললেন, আমি তা করতে পারি না। কারণ এটা আমার নিজের ভাগ্নীর ব্যাপার। তারপর আমাকে রান্না ঘরে চলে যেতে হয়। যখন ফিরলাম তখন রিচার্ড বলছিলেন, যদি আমি অস্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করি তবুও চাই না পুলিশ ডাকা হোক, বুঝতে পারলে বোন, তবে ঘাবড়িয়ো না, এবার থেকে আমি সমস্ত সাবধানতা নেব।

আবার তিনি বললেন, তিনি একটা নতুন উইল করবেন যাতে কোরাকে ভাগ দেওয়া হয়, তিনি আরও বলেছিলেন কোরার প্রতি অন্যায় করে তিনি ভুল করেছেন।

পোয়ারো বললেন, ও তাই নাকি?

আমি বলতে চাইনি, কিন্তু আজ সকালে মিসেস লিওকে কেউ আঘাত করল, আর আপনিও বললেন, এটা দুর্ঘটনা, আমি আর থাকতে পারলাম না।

.

০৩.

গিলফ্রিস্ট বিদায় নিলে গ্রেগরী ব্যাঙ্কস এল পোয়ারোর কাছে।

অবশেষে! ওঃ ভেবেছিলাম মেয়েটা আর যাবেই না। আপনি সকালে যতকিছু বলেছেন সবই ভুল। আঙ্কল রিচার্ডকে খুন করা হয়েছে।

তাহলে ওকে তুমি মেরেছ? কি করে?

গ্রেগরী হেসে বলল, আমার পক্ষে ওটা শক্ত কাজ ছিল না, আমার পনের কুড়িটা ওষুধ জানা আছে যাতে কাজ হয় এবং মৃত্যুর সময় আমাকে বাড়ির ধারে কাছেও থাকতে হয়নি।

পোয়ারো বলল, কেন ওকে মারলে? তোমার স্ত্রী কিছু টাকা পাবে বলে?

আমি টাকার পিচাশ নই। টাকার লোভে আমি সুসানকে বিয়ে করিনি।

হঠাৎ গ্রেগ তিক্ততার সাথে বলল, রিচার্ড এবারেনথী। তিনি সুসানের প্রশংসা করতেন। ওর মধ্যে এবারেনথীদের রক্ত আছে সেই বলে গর্ব করতেন। উনি মনে করতেন আমি ওর যোগ্য নই। তিনি আমার প্রতি অন্যায় আচরণ করতেন।

হতে পারে।

কেউ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে পেরোতে পারবে। আপনি জানেন একজন ভদ্রমহিলা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন বলে ওকে কি করেছিলাম?

জানি, পোয়ারো বলল।

মৃত্যুমুখে পৌঁছে দিয়েছিলাম, সন্তুষ্টির সাথে গ্রেগ বলছিল, রিচার্ড এবারেনথীও আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন আর সেই জন্যই মরেছেন।

আমার কাছে বলছ কেন?

কারণ আপনি বললেন এটা খুন নয়। প্রমাণ করতে চাই আপনি যতটা বুদ্ধিমান ভাবেন ততটা বুদ্ধিমান নন– তাছাড়া তাছাড়া।

বল বল, তাছাড়া?

আমার–আমার শাস্তি পাওয়া উচিত, আমার শাস্তির ব্যবস্থা করুন…?

.

০৪.

দৌড়তে দৌড়তে সুসান এল।

গ্রেগ কোথায় গেল? এখানেই ছিল তো?

হ্যাঁ, সে আমাকে বলতে এসেছিল যে সে-ই রিচার্ড এবারেনথীকে বিষ দিয়েছে।

পোয়ারো বলল : সব বাজে কথা! ওর কথা বিশ্বাস করবেন না।

কেন বিশ্বাস করব না?

কারণ আঙ্কলের মৃত্যুর সময় সে এখানে ছিল না।

সম্ভবতঃ ছিল না। কোরা ল্যান্স কোয়েনেটের মৃত্যুর সময় ও কোথায় ছিল?

লণ্ডনে আমরা দুজনেই ছিলাম।

পোয়ারো বললেন: তুমি সেদিন বিকেলে গাড়ী নিয়ে বেরিয়েছিলে?

তুমি লীচেট সেন্ট মেরীতে গেছিলে?

না না।

পোয়ারো বলল, ম্যাডাম তদন্তের দিন তুমি কিংস আর্মের গ্যারেজে একজন মেকানিকের সাথে কথা বলছিলে, সেখানে আর একটা গাড়ীতে এক বয়স্ক ভদ্রলোক ছিলেন। তিনি উনাকে না দেখলেও উনি তোমায় দেখলেন। সেই মেকানিক বলেছিল তোমাকে আগে কোথাও দেখেছে। সে বলেছিল তুমি কোরার বোনঝি। তাহলে সেকি তোমাকে কোরার কটেজের আশেপাশে আগে দেখেছিল। তদন্তে দেখা গেছে কোরাকে এবং তোমাকে মৃত্যুর দিন বিকেলে লীচেট সেন্ট মেরীতে দেখা গেছে। তুমি সেই কোয়ারীটাতেই তোমার গাড়ী লুকিয়েছিলে। গাড়ীর নাম্বার নেওয়া হয়েছিল।

মিঃ পোয়ারো আপনি আজে বাজে কথা বলছেন। আমি নিজেই ভুলে যাচ্ছি আমি আপনাকে এখানে পাওয়ার জন্য এসেছিলাম।

তোমার স্বামী নয় তুমি খুনটা করেছ স্বীকার করার জন্য? কোরা অন্ত্যেষ্টির দিন যে কথাটা বলেছিল তাতে আমি চিন্তিত হয়েছিলাম, তাই আমি সেদিন বিকেলে লীচেট সেন্ট মেরীতে গেছিলাম। কোরাকে জিজ্ঞেস করতে কেন সে একথা বলল, আমি ওখানে তিনটের সময় পৌঁছে কড়া নাড়ি। কোনো উত্তর না পেয়ে ভেবেছিলাম। আন্ট কোরা কোথাও বেরিয়ে গেছে। তাই আমি আবার লণ্ডনে ফিরে এলাম। খুনের কথা আমি ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।

তোমার স্বামী কেন নিজেকে খুনী বলেছে?

কারণ সে-গলা কাঁপছিল সুসানের।

আগ্রহ ভরে সুসান বলতে লাগল।

গ্রেগ টাকা আয় করতে পারত, আঙ্কল রিচার্ডের টাকা আমাদের প্রচণ্ডভাবে দরকার ছিল। আমি ভেবেছিলাম আমরা নিজেদের ল্যাবরেটোরি করতে পারলে গ্রেগের অশান্তভাব কেটে যাবে।

লোককে কিছু দিলে তার সেটা করার ক্ষমতা নাও থাকতে পারে। এতসব পরেও সে একটা জিনিস চায় না?

কি চায় না।

সুসানের স্বামী হতে।

আপনি নিষ্ঠুর, আপনি কি বলছেন এসব?

যেখানে গ্রেগরী ব্যাঙ্কসের প্রশ্ন সেখানেই তুমি বেপরোয়া, টাকা তুমি নিজের জন্য চাওনি তোমার টাকার প্রচণ্ড দরকার ছিল না।

সুসান রাগের মাথায় বেরিয়ে গেল।

আমি আপনাকে বিদায় সম্ভাষণ জানাতে এলাম, মাইকেল শেন হাসল।

ওকে পোয়ারো পর্যবেক্ষণ করছিলেন।

তোমার স্ত্রী একটু অস্বাভাবিক ধরনের, পোয়ারো বলল।

হা, সে সুন্দরী তবে বুদ্ধি-সুদ্ধি একটু কম। হ্যাঁ, চালাকীর ভান করে না। তবে ও জানে সে কি চায়। পোয়ারো বললেন : বেশির ভাগ লোকই এটা জানে না। মাইকেল হাসল, স্যালাটীট টেবিলের ব্যাপারে কী বলছেন?

সম্ভবতঃ পোয়ারো ডাকলেন, তারপরে বললেন, মোমের ফুল।

হা, মোমের ফুল।

মাইকেল হেসে বলল, আপনি একটা অস্বস্তিকর আবহাওয়া দূর করেছেন, আপনাকে ধন্যবাদ।

আচ্ছা, তুমি রিচার্ডকে কেমন বুঝেছিলে।

উনি আমাকে পছন্দ করেননি।

তুমি জানো তদন্ত করা হয়েছে।

আপনার দ্বারা?

শুধু আমার দ্বারা নয়।

আপনি বলছেন পুলিশ এর মধ্যে আছে?

পুলিশ কোরার মৃত্যুটাকে সাধারণ ভাবেনি।

ওরা আমার সম্বন্ধে তদন্ত করছে?

পোয়ারো বললেন : কোরার সমস্ত আত্মীয়দের সম্বন্ধে খোঁজ নিচ্ছে।

আমি সেদিন একজন অস্কার লুইসের সাথে ডিনার খাচ্ছিলাম। একথা রোজামণ্ডকে বলেছি।

কিন্তু বাস্তবে তা তুমি করনি।

আমি সোরেলের সাথে কেন্টে ছিলাম, আমি অনেক মাইল দূর থেকে কুড়ুল দিয়ে কোরাকে খুন করতে পারি না।

মিস ডেইনটন তা বলবেন তো?

বলবেন নিশ্চয়ই।

তুমি ওর সাথে না থাকলেও ও বলবে তুমি ছিলে।

কি বলতে চাইছেন? মাইকেলের মুখ হঠাৎ রক্তের মত লাল হয়ে উঠল।

.

এয়োবিংশ পরিচ্ছেদ

০১.

চত্বরে পায়চারী করছিলেন দুজন লোক।

ইনসপেক্টর মর্টন বললো, আপনি এখানে তদন্ত করছেন। আপনার চোখের সামনে মিসেস লিওর এই অবস্থা হল।

আমার দোষে নয় উনি লণ্ডনের ল-ইয়ার্ডে ফোন করার সময়–পোয়ারো বললেন।

ফোনে কি বলেছিলেন?

খুব সামান্য, তিনি আয়নায় নিজের মুখ দেখছিলেন।

মর্টন পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল : এ দিয়ে কিছু বুঝতে পেরেছেন?

হাঁ, কি বলতে যাচ্ছিল আমি বুঝেছি।

চমৎকার কি বলতে যাচ্ছিল?

মাপ করবেন, আপনি কি রিচার্ডের মৃত্যুর ব্যাপারে তদন্ত করছেন?

অফিসিয়ালি করছি, তবে সন্দেহ করছি মিসেস ল্যান্স কোয়েনেটের মৃত্যুর সাথে যোগ আছে

তারপরে মর্টন বললে, তুমি কাউকে গ্রেপ্তার করেছ নাকি?

না না, এখনও একজনের চলাফেরা সম্বন্ধে আমাদের একটু সন্দেহ হয়েছে।

মিসেস ব্যাঙ্কস?

হা ও সেদিন গাড়ী করে ওখানে গেছিল।

ওকে গাড়ীটা চালাতে দেখা যায়নি?

না।

তারপরে মর্টন আবার বলল, ভদ্রমহিলা খুব চালাক।

বেশি চালাকী করেই খুনীরা ধরা পড়ে। পোয়ারো বললেন, জর্জ ক্রসফিল্ড সম্বন্ধে আর কিছু জানতে পারলে।

আমার কনভেন্টের মাদার সুপিরিয়রের কাছ থেকে একটা অদ্ভুত খবর পেয়েছি। তিনি বললেন ওদের কনভেন্টের দুজন কোরার মৃত্যুর আগের দিন ওরা কটেজে চাঁদা নিতে গেছিল। ওরা কড়া নেড়ে কারুর সাড়া পায়নি। স্বাভাবিক কারণে কোরা গেছিল এণ্ডারবি আর গিলক্রিস্ট গেছিল বোর্নমাউথে বেড়াতে। ঐ নান দুজন বলেছে ওরা কটেজের মধ্যে নিশ্বাসের ও গোঙানীর শব্দ শুনেছে। আমি নিশ্বাস ও গোঙানীর শব্দ বিশ্বাস করি। খুনের বাড়িতে লোকে ওরকম কল্পনা করে নেয়। কেউ কি কটেজে কিছু খুঁজতে গেছিল। সেদিন হয়ত পায়নি, আবার পরের দিন গিয়ে এই কাণ্ডটা করেছে।

পোয়ারো প্রশ্ন করল।

ঐ নানরা কি আবার এসেছিল?

হ্যাঁ প্রায় একসপ্তাহ পরে এসেছিল, বোধহয় তদন্তের দিন।

বেশ মিলে যাচ্ছে, পোয়ারো বলল।

নানের ব্যাপারে উৎসাহিত হয়ে পড়লেন কেন?

কারণ নানেরা দ্বিতীয়বার যেদিন গেছিল সে দিন বিষাক্ত ওয়েডিং কেক গিলক্রিস্ট পেয়েছিল।

হাস্যকর অনুমান।

আমি হাস্যকর অনুমান করি না। পোয়ারো বললেন।

.

০২.

পোয়ারো দেখলেন রোজামণ্ড একটা বেঞ্চে বসে আছে। তুমি বোধহয় তোমার বোনের কথা ভাবছ, পোয়ারো ওর পাশে বসলো।

রোজামণ্ড বলল, আমি ভেবেছিলাম চলে গেছেন।

আমি ট্রেনটা মিস করলাম।

কেন?

তুমি ভাবছ কোনো কারণে আমি থেকে গেলাম?

তাই মনে হচ্ছে। ট্রেন ধরার ইচ্ছে থাকলে ধরতে পারতেন।

ম্যাডাম আপনি কি জানেন আমি গ্রীষ্মবাসে আপনার প্রত্যশায় বসে ছিলাম।

কেন আপনি সবাইর বিদায় নিয়েছিলেন, লাইব্রেরী হলে।

হ্যাঁ, আমাকে বলার মত তোমার কিছুই নেই।

না, রোজামণ্ড মাথা নাড়ল, আমাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা চিন্তা করতে হবে।

তুমি চিন্তা করছিলে?

হ্যাঁ, আমি একটা সিদ্ধান্ত নিতে চাই কোনো একটা ব্যাপারে।

তোমার স্বামীর ব্যাপারে।

সেই রকম।

পোয়ারো বলল : ইনসপেক্টর মর্টন এসেছেন সবার বিবৃতি নিতে কোরার মৃত্যুর দিন কে কি করছিল?

সন্তুষ্টির ছাপ রোজামণ্ডের মুখে।

মাইকেল, বেশ জব্দ হবে। ও ভেবেছে আমি জানি না, ও সেদিন সেই মেয়েটার কাছে গেছিল।

কি করে জানলে?

ও যখন মিথ্যে কথা বলে ওর নামে একটা দাগ পড়ে। ও যখন অফিসারের সাথে ডিনার খেতে যাচ্ছে, তখনই বুঝেছিলাম।

ওঃ ভগবান বাঁচিয়েছেন আমাকে, তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়নি।

তারপরে আমি অস্কারকে ফোন করেছিলাম, লোকে যে কেন এইরকম বোকার মত মিথ্যে কথা বলে।

সে খুব বিশ্বাসযোগ্য নয়, স্বামী নয় তো?

না।

তবে তুমি কিছু মনে কর না।

হা, আমি সেইরকম স্বামী পছন্দ করি যাকে সব মেয়ে ছিনিয়ে নিতে চায়।

ধর তোমার কাছ থেকে কেউ ছিনিয়ে নিল?

এখন ছিনিয়ে নিতে পারবে না, কারণ টাকা, মাইকেলের কাছে মেয়ের চেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষাটাই বড়। আমিই তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার সিঁড়ি করে দিতে পারি। তারপর বলল : আমায় একটা বড় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি সেদিন বাজারে যাইনি মাইকেল বুঝতে পেরেছে, রিজেন্ট পার্ক সম্বন্ধে খুব সন্দেহ।

রিজেন্ট পার্কের ব্যাপারটা কি?

আমি একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম সেদিন। মাইকেলের সন্দেহ আমি কোনো পুরুষ বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেছিলাম। রিজেন্ট পার্ক সম্বন্ধেও খুব সন্দিগ্ধ।

তারপরে পোয়ারো বলল : তুমি সুসানকে সবুজ স্যালাটীট টেবিলটা দিয়ে দাও।

রোজামণ্ডের চোখ বড় বড় হল।

কেন? আমার ওটা চাই।

জানি আমি, আমার কাছে তোমার স্বামী থাকবে কিন্তু বেচারা সুসানের ছাড়াছাড়ি হবে স্বামীর সঙ্গে।

আপনি বলতে চাইছেন গ্রেগ আঙ্কল রিচার্ড আর আন্ট কোরাকে খুন করেছে–তাই…।

আমি বিশ্বাস করি না।

তাহলে কে করল?

জর্জ আমি শুনেছি আমার বন্ধুর কাছ থেকে জর্জ টাকার ব্যাপারে একটা বিপদে পড়েছিল। আমি জানি জর্জই সম্পত্তির লোভে করেছে। সন্ধ্যে ছটার সময় সেদিন টেলিগ্রামটা এল।

ওটার জন্যই পোয়ারো অনেকক্ষণ থেকে সামনের দরজায় অপেক্ষা করছিলেন।

একটা বিরাট স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন পোয়ারো।

ইনসপেক্টর মর্টন কোথায়? ল্যান্সকম্বকে জিজ্ঞেস করলেন। দুজনের একজন চলে গেছেন। আর একজন বোধ হয় স্টাডিতে আছেন।

ল্যান্সকম্বের কাঁধ জড়িয়ে পোয়ারো বললেন : আমরা প্রায় শেষে এসে গেছি।

অবাক হয়ে বলল ল্যান্সকম্ব : তাহলে আপনি আর সাড়ে নটার ট্রেনে যাচ্ছেন না?

পোয়ারো মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করল : অন্ত্যেষ্টির দিন এখানে পৌঁছে মিসেস ল্যান্স কোয়ানেট প্রথম কি কথা বলেছিল মনে আছে?

হ্যাঁ, বেশ ভালো মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, তুমি কতদিন আমাদের কুটীরে সারাং নিয়ে যাওনি। ঐ বেড়ার ধারে সব ছেলেমেয়েদেরই একটা করে কুটীর ছিল। আমি সারাং নিয়ে যেতাম। কোরা এই খাবারটা খুব ভালোবাসত।

মাথা হেলাল পোয়ারো।

হ্যাঁ, আমি এইরকম কিছু ভেবেছিলাম। পোয়ারো এবারে স্টাডিতে গিয়ে মর্টনের হাতে টেলিগ্রামটা ধরিয়ে দিলেন কোনো কথা না বলে।

পড়ার পর মর্টন বলল, কিছুই বুঝছি না। তোমাকে সবকিছু বলার সময় এসেছে।

মর্টন হাসল।

একটু স্বস্তি দিন তো। আমাকে ঐ মিঃ ব্যাঙ্কস জ্বালিয়ে মারছে। বলেছে ও খুন করেছে। কি মনে হয় ও খুন করেছে? গিলফ্রিস্ট বলেছে রিচার্ড বলেছিলেন তার নিজের ভাগ্নী। ওকি স্ত্রীর হয়ে খুন করেছে? সুসানকে খুনী বলে ভাবতে ইচ্ছে করে না।

আমি তোমায় সব বলছি। এবার এরকুল পোয়ারো তার শ্রোতাদের জমায়েত করছিলেন বড় বসার ঘরটাতে।

পোয়ারো তাঁর জাঁকজমকপূর্ণ বক্তৃতা আরম্ভ করলেন।

দ্বিতীয় বার আমি আবার যাত্রা ঘোষণা করছি। বারটার ট্রেনে যাইনি, এবার ডিনার শেষ করে সাড়ে নটার ট্রেনে চলে যাবো। কারণ এখানে আর কিছু করার নেই।

খালি এইসব বকবক করছে, টিমোথি বললেন কিছু তো করতে দেখি না।

আমি রহস্যের সমাধান করতে এসেছিলাম, পোয়ারো বললেন, রহস্য উদঘাটন হয়ে গেছে। মিঃ অ্যান্টহুইসল যে কথাগুলো আমায় বলেছিলেন সেগুলো আগে বলছি।

প্রথমতঃ মিঃ রিচার্ড এবারেনথী হঠাৎ মারা গেলেন।

দ্বিতীয়তঃ অন্ত্যেষ্টির দিন কোরা ল্যান্স কোয়েনেট বললো ওকে খুন করা হয়েছে তাই না?

তৃতীয়তঃ কোরা খুন হলে প্রশ্ন হচ্ছে এই ঘটনা কি এক সূত্রে জড়িত? তারপর মিস গিলক্রিস্টকে ওয়েডিং কেকের মধ্যে বিষ দিয়ে কেউ বা কারা মেরে ফেলতে চাইছিল।

সবাই শুনেছে কোরা ঐ চাঞ্চল্যকর কথাটা বলার পরের দিনই খুন হলেন। অস্ত্র ছিল কুড়ুল, এবার চতুর্থ ব্যাপার, স্থানীয় পোস্টাপিসের পিয়ন বলেছে যে ঘটনার দিন কোরাদের কটেজে কোনো প্যাকেট দিয়েছে বলে তার মনে হয় না। তাহেল ওখানে কারা উপস্থিত ছিলেন যাদের পক্ষে প্যাকেট দেওয়া সম্ভব, তারা হলেন মিস গিলফ্রিস্ট নিজে, সুসান ব্যাঙ্কস। যিনি তদন্তের কারণে ওখানে পরে গিয়ে পৌঁছেছিলেন, মিঃ অ্যান্টহুইসল, মিঃ গাথরী যিনি কোরার বন্ধু হিসাবেই পরিচয় দিয়েছিলেন আর একজন নান সে সকালে চাঁদা চাইতে গেছিল।

মিস গিলফ্রিস্টের কোনো লাভ ছিল না রিচার্ডের মৃত্যুতে, কোরার মৃত্যুতে সামান্য লাভ। বস্তুত পক্ষে ক্ষতিই হয়েছিল কারণ আবার তার কাজটা গেছিল, বিশেষ করে বিষাক্ত কেক খেয়ে ওকে হাসপাতালের যেতে হয়েছিল।

রিচার্ডের মৃত্যুতে সুসানের লাভ। কোরা ল্যান্স কোয়েনেটের মৃত্যুতে সামান্য লাভ হয়েছিল যদিও এক্ষেত্রে তার মোটিভ টাকার নয় নিরাপত্তার। সে যুক্তিযুক্তভাবে চিন্তা করতে পারে মিস গিলক্রিস্ট। কোরা ও রিচার্ডের মধ্যে কথাবার্তা শুনেছে সুতরাং ওকেও সরিয়ে দেওয়া দরকার। যে ওয়েডিং কেকের অংশটা খান সেটা গিলক্রিস্ট ওকে দিয়েছিল, এবং পরের দিন সকাল পর্যন্ত ডাক্তার না ডাকার কথা বলেছিল।

এই দুই মৃত্যুতে মিঃ অ্যান্টহুইসলের কোনো লাভ হয়নি। কিন্তু এবারেনথীদের ব্যাপারে তার অনেক ক্ষমতা ছিল এবং খুনের কারণও থাকতে পারে।

আপনারা হয়ত বলবেন তাহলে মিঃ অ্যান্টহুইসল কেন আমার কাছে গেছিলেন, অনেক উদাহরণ আছে যেখানে খুনীরা নিজে রহস্য সন্ধানীর কাছে গেছে।

এবার দুজন বাইরের লোক মিঃ গাথরী আর নান। তারা যদি সত্যি গাথরী বা নান হন তাহলে সন্দেহ থাকবে। কিন্তু তারা যদি গাথরী বা নানের ছদ্মবেশে গিয়ে থাকেন? নানের একটা রহস্যজনক ভূমিকা আছে এই কেসে। মিস গিলফ্রিস্টের মতে লীচেট সেন্ট মেরীতে যে নান গেছিল মিঃ টিমোথির বাড়িতেও সেই একই নান এসেছিল, রিচার্ডের মৃত্যুর আগের দিনও একজন নান এণ্ডারবিতে এসেছিল।

আমি আরও কয়েকটা ব্যাপার উপস্থাপিত করব।

একজন কথা সমালোচকের (গাথরীয়) আগমন, তেল রঙের গন্ধ, গোল বন্দরের ছবির পোস্টকার্ড এবং সবশেষে মোমের ফুল। এই সব ব্যাপার নিয়ে ভাবতে আমি সত্যে উপনীত হয়েছি। তাহলে রিচার্ডের খুনের কতটা নির্ভর করছে কোরার কথার উপরে নয়, কোরার নিজের উপর।

আমি নিজেই একটা প্রশ্ন করেছিলাম। প্রশ্নটা হচ্ছে– আপনারা সবাই কোরাকে কতটা জানতেন?

তিনি একটু হাসলেন।

আবার বললেন, কেউ তো ভালো করে চেনে না–এটা হল উত্তর। বাচ্চা বয়েসে ছাড়া তিনজন মাত্র লোক ওকে দেখে চিনতে পারে। এক হচ্ছে বৃদ্ধ ল্যান্সকম্ব, চোখে কম দেখে। দুই মিসেস টিমোথি এবারেনথী: ওকে ওঁর বিয়ের সময় কয়েকবার দেখেছিলেন, তিন মিসেস লিও এবারেনথী ইনি কোরাকে ভালো করে চিনতেন। তবে কুড়ি বছর আগে।

তাই আমি ভাবলাম এমনও তো হতে পারে অন্ত্যেষ্টির দিন কোরা ল্যান্স কোয়েনেটের বদলে এখানে অন্য কেউ এসেছিল। সুসান বলল, আন্ট কোরা আসেননি, আন্ট কোরা খুন হয়নি? না না কোরা ল্যান্স কোয়েনেট আসেনি। যিনি এখানে এসেছিলেন তিনি রিচার্ডের হঠাৎ মৃত্যুটাকে কাজে লাগাতে এসেছিলেন এবং তিনি একাজে বেশ সফলও হয়েছিলেন।

তাতে লাভ? মড বললো।

লাভ আছে, অন্য একটা খুনকে অন্যভাবে দেখাতে। এখন বলল রিচার্ডের খুন সম্বন্ধে সে কিছু শুনেছিল, তারপরের দিনই কোরা খুন হল। সবাই একটা কার্যকারণ সম্পর্কে ভেবে নেবে। কিন্তু কোরা যদি খুন হয় এবং ওর কটেজের দরজা জানলা ভাঙা হয় এবং ডাকাতি যদি প্রমাণ না হয় তাহলে তদন্ত আরম্ভ হবে, সন্দেহটা গিয়ে পড়বে সেই মহিলার উপর যার সাথে কোরা থাকত। মিস গিলফ্রিস্ট প্রতিবাদ করল, আমি একটা এ্যামেথি ব্রোচ আর দু-একটা বাজে ছবির জন্য খুন করতে পারি না।

না, পোয়ারো বলল, ওগুলো থেকে একটু বেশি কারণে। গোল ফ্লেসান বন্দরের ছবি ছিল ওজনের মধ্যে। সুসান বুঝতে পেরেছিল ছবিটা একটা ছবির পোস্টকার্ড থেকে নকল করা। ছবিটাতে যুদ্ধের আগের গীয়ারটা ছিল। কিন্তু গিলফ্রিস্ট বলেছিল কোরা সবসময় প্রকৃতি থেকে ছবি আঁকে এবং মিঃ অ্যান্টহুইসল ওখানে যাওয়ার পর তেল রঙের গন্ধ পেয়েছিলেন। তুমি ছবি আঁকতে পারো গিলফ্রিস্ট? তোমার বাবা ভালো ছবি আঁকতেন এবং তুমি ছবি সম্বন্ধে অনেক কিছু বোঝ। কোরা ছবিটার দাম বুঝতে পারেনি তুমি পেরেছিলে। একটা প্ল্যান তোমার মাথায় এল। অন্ত্যেষ্টির দিন তুমি কোরার চায়ের কাপে ঘুমের ওষুধ দিয়েছিলে এবং নিজে চলে এসেছিলে এই এণ্ডারবি। তুমি যে কোরা নয় সেটা কেউ বুঝতে পারেনি। তুমি কোরার কাপড় চোপড় পরেছিলে। কোরা সামনের দিকে নকল চুল লাগাতো। তাতেও তোমার অসুবিধে না হয়ে সুবিধে হয়েছে। কুড়ি বছর পরে লোকে আলো পাল্টায় কিন্তু ধরনধারণ কথা বলার ভঙ্গী পাল্টায় না। তুমি আয়নার সামনে কোরার ভঙ্গীগুলো অভ্যেস করেছিলে।

কিন্তু ওখানেই তুমি তোমার প্রথম ভুল করলে। কোরার মাথা হেলিয়ে কথা বলাটায় তুমি ভুল নকল করেছিলে, কোরা মাথাটা ডাইনে হেলাত আর তুমি ভুল করে বাঁয়ে হেলানো অভ্যেস করলে।

এটাতেই হেলেন হতভম্ব হয়েছিল। সেদিন জর্জ মানুষের মুখের চেহারায় পার্থক্যের কথা বলছিল, তারপর হয়ত কোরার কথা মনে পড়তে তার পরিচিত মাথা ডাইনে হেলিয়ে কথা বলার ভঙ্গীটা মনে পড়েছিল, হঠাৎ তার অর্ধসচেতন মনটা থেকে সন্দেহটা উঠে আসে সে পার্থক্যটা বুঝতে পারে। যাইহোক সে কথাটা ভোরে উঠেই অ্যান্টহুইসলকে জানাতে গেছিলো, তুমি গেছিলে পেছনে পেছেনে। অত সকালে কাকে ফোন করতে শুনলে? তারপর কথাগুলো শোনার পর তার মাথায় আঘাত করলে।

আমি এসব কোনোদিন করিনি, গিলক্রিস্ট বলল, সমস্ত ব্যাপারটাই বানানো, মিথ্যে।

খুনের কথাটা বলা অবশ্য তোমার প্রথম ধাপ্পা অন্ত্যেষ্টির দিন, পোয়ারো বললেন, তোমার আরও পরিকল্পনা ছিল। যে কোনো মুহূর্তে গিলফ্রিস্ট স্বীকার করতে রাজী ছিলেন যে তিনি কোরা ও রিচার্ডের কথাবার্তা শুনেছেন। আসলে রিচার্ড যা বলেছিলেন সেটা হল, তিনি, আর বেশিদিন বাঁচবেন না এবং চিঠিতে এই কথাটা কাউকে বলতে বারণ করেছিলেন। নানের ব্যাপারটা ওর আর একটা আবিষ্কার, তুমি সবাইকে বিপথে চালাতে চেয়েছিলে এবং টিমোথিদের সাথে তুমি এখানে আসতে চেয়েছিলে। বিষ খাওয়াটা পুরোনো কৌশল এবং এতেই ইনসপেক্টর মর্টনের সন্দেহ জেগেছিল।

ছবিটার ব্যাপার বলবেন না? রোজামণ্ড বলল।

আস্তে আস্তে পোয়ারো একটা টেলিগ্রাম খুললেন। আজ সকালে আমি মিঃ অ্যান্টহুইসলকে ফোন করে বলেছিলাম, স্টানফিল্ড গ্র্যাঞ্জ থেকে মিঃ এবারেনথীর নাম করে গিলফ্রিস্টের ঘর থেকে ছবিটা নিয়ে আসতে। ওটা লণ্ডনে নিয়ে গিয়ে ওকে গাথরীকে দেখাতে বলেছিলাম, ওপরের পলফ্লেক্সান বন্দরের ছবিটা খুলে ফেলার পর আসল ছবিটা পাওয়া গেছে।

তিনি টেলিগ্রামটা পড়লেন।

এটা নিশ্চিত ভাবে একটা ভারমীয়ার –গাথরী।

হঠাৎ তড়তড়িয়ে কথা বলতে আরম্ভ করল গিলফ্রিস্ট। আমি জানতাম ওটা ভারমীয়ার। কিন্তু কোরা বুঝতে পারেনি, সবসময় আর্ট নিয়ে বকবক করতো কিন্তু আর্টের একরত্তিও বুঝতো না। সবসময় এণ্ডারটি বাচ্চা বয়েসে কি করেছে সেই নিয়ে বকবক করত। একজন যদি দিনের পর দিন একই কথা বকে যায়। আমার কোনো আশা ছিল না ভবিষ্যতের–তারপরে ভারমীয়ার। আমি কাগজে দেখেছিলাম একটা ভারমীয়ার পাঁচ হাজার পাউণ্ডেরও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।

তুমি পাঁচ হাজার পাউণ্ডের জন্য ওকে এমন নৃশংসভাবে খুন করলে–সুসান বলল।

পাঁচ হাজার পাউণ্ড দিয়ে, পোয়ারো বললে, একটা চায়ের দোকান করা যায়।

ঘুরে দাঁড়াল গিলক্রিস্ট।

তাহলে বুঝতে পেরেছেন। আমার কত টাকার দরকার ছিল। তার গলা আবেগে কাঁপছিল।

আমি একটা চায়ের দোকান করতে চেয়েছিলাম, পাম টি নাম দেব ঠিক করেছিলাম।

.

চতুর্বিংশ পরিচ্ছেদ

কিন্তু আমি মোমের ফুলটা সম্বন্ধে বুঝলাম না, রোজামণ্ড বলল। মোমের ফুলটা মিস গিলফ্রিস্টের দ্বিতীয় ফুল, সে বলেছিল মোমের ফুলগুলো ঐ টেবিলটার উপর সুন্দর মানায়। অথচ মোমের ফুলটা সেখানে ছিল না। কারণ হেলেন ওটা ভেঙে ফেলেছিল এবং টিমোথির বাড়ি থেকে গিলফ্রিস্ট এণ্ডারবিতে আসার আগেই ওটা এখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। তাহলে সে ওটা দেখেছে অন্ত্যেষ্টির দিন যখন ও কোরার ভূমিকায় অভিনয় করছিল।

খুব বোকামো করেছেন তো? রোজামণ্ড বলল।

পোয়ারো বললেন, যে যত বুদ্ধিমানই হোক তার সাথে অনেকক্ষণ ধরে কথাবার্তা বললে সে সত্যি কথাটা বলে ফেলবে।

রোজামণ্ড বলল, জানেন আমি মা হতে যাচ্ছি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি অভিনয় ছেড়ে আমি শুধু মা হয়ে যাব। এই ভূমিকায় তোমার সুন্দর মানাবে। বলল, সুসান স্যালাটীট টেবিলটা নিয়ে নিল, কিন্তু আমার একটা বাচ্চা হতে যাচ্ছে।

হেলেন বলল, সুসান তার ব্যবসায়ে সফল হবে। হঠাৎ তারপরে বললো, জানেন মিঃ পোয়ারো, রিচার্ড আমার জন্য যে টাকা রেখে গেছে সেটা আমার ভীষণ প্রয়োজন ছিল। আমাদের কোনো বাচ্চা ছিল না বলে ওতে আমরা দুঃখিত ছিলাম। কিন্তু এখন আমি মা হতে চলেছি। এবার আমি আমার ছেলের শিক্ষাদীক্ষায় খরচ করতে পারব।

ঘরে ঢুকে মিঃ অ্যান্টহুইসল বললো, তোমার খুনের আসামী এখন বেশ খোস মেজাজে আছে। জেলে পাঠানোর বদলে ওকে বোধ হয় মানসিক হাসপাতালে পাঠাতে হবে। বেশ আনন্দে আছে আর ভবিষ্যত চায়ের দোকানের পরিকল্পনা করছে সবসময়।

পোয়ারো তার আগের খুনীদের কথা ভাবতে লাগলেন…..।

Exit mobile version