উঠে গিয়ে রাস্তার দিকের জানালার সামনে দাঁড়াল রবিন। টেনে পর্দা সরিয়ে দিল। গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ কানে আসছে। ধূসর সিডান গাড়িটাকে দেখতে পেল সে।
আশ্চর্য! হপ্তায় মাত্র একবার গাড়িটা চালায়! জানালার কাছ থেকেই বলল রবিন। ব্যাটারি ডাউন হয়ে যায় না?
প্রায়ই দেখি গ্যারেজে খবর দেয়, বললেন অলিভার। মেকানিকস আসে।
এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ি। সামনেই মোড়। ঠিক এই সময় বুমম করে শব্দ হল। শোনা গেল তীক্ষ্ণ চিৎকার।
লাফ দিয়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালেন অলিভার।
কিশোর আগেই উঠে পড়েছে। ছুটে যাচ্ছে জানালার দিকে।
পাগলের মত ডানে-বাঁয়ে কাটছে সিডানের নাক। হুডের নিচ থেকে ধোয়া বেরোচ্ছে।
আবার চেঁচিয়ে উঠল মিসেস ডেনভার। পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে গাড়ি, দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সামনের একপাশ দিয়ে গুতো মারল রাস্তার পাশের দেয়ালে। ঘষে এগোল। বাম্পারের ধাক্কা লাগাল মোটা একটা পানির পাইপে। ভোঁতা শব্দ তুলে মাটির কয়েক ইঞ্চি ওপর থেকে ছিঁড়ে গেল পাইপ। ওটার ওপরে এসে গাড়ি থামল। চারপাশ থেকে ফোয়ারার মত ছিটকে বেরোচ্ছে পানি। আবার শোনা গেল মিসেস ডেনভারের চিত্তার।
দমকল ডাকতে হবে! ফোন করতে ছুটল মুসা।
দরজার দিকে ছুট লাগিয়েছে রবিন। আগে বের করে আনা দরকার মহিলাকে!
কিশোরও ছুটল রবিনের পেছনে।
হুড়মুড় করে চত্বরে নেমে এল দুজনে। বেরিয়ে এসেছে জ্যাকবস, গায়ে ঘুমানর পোশাক। টমি গিলবার্টও বেরিয়েছে। পাজামা পরনে, গায়ে তাড়াহুড়ো করে একটা কোট চাপিয়েছে। গেটের দিকে ছুটেছে।
সবার আগে ছুটছে জ্যাকবস। মিসেস ডেনভার! চেঁচিয়ে উঠল সে সিডান টাকে দেখেই।
টমির পাশ কাটিয়ে এল ছেলেরা, জ্যাকবসকে পেছনে ফেলে এল। ছুটে এসে দাঁড়াল গাড়িটার পাশে। বরফ-শীতল পানি ভিজিয়ে দিচ্ছে সারা শরীর, গ্রাহ্যই করছে না।
স্টিয়ারিঙের পেছনে অদ্ভুত ভঙ্গিতে বসে চেঁচাচ্ছে মিসেস ডেনভার। তার এ চিৎকার যেন বন্ধ হবে না আর কোনদিন।
মিসেস ডেনভার! হাতল ধরে হ্যাঁচকা টান লাগাল কিশোর। খুলল না দরজা। বোধহয় তালা আটকানো।
কিশোরের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে জ্যাকবস। জানালায় থাবা দিচ্ছে জোরে জোরে।
খুব ধীরে ধীরে মুখ ফেরাল মিসেস ডেনভার। শূন্য দৃষ্টি। চেঁচানো থামেনি।
দরজা খুলুন! চেঁচিয়ে উঠল জ্যাকবস। তালা লাগিয়েছেন কেন?
হঠাৎ যেন বাস্তবে ফিরে এল মিসেস ডেনভার। থাবা মারল লক-বাটনের দিকে। এক সেকেণ্ড পরেই হাতল ধরে হ্যাঁচকা টানে দরজা খুলে ফেলল জ্যাকবস। টেনে-হিঁচড়ে মহিলাকে বের করে আনতে লাগল, রবিন সাহায্য করল তাকে।
সাইরেনের শব্দ কানে এল। কয়েক মুহূর্ত পরেই মোড়ের কাছে দেখা গেল ফায়ার ব্রিগেডের ইমার্জেন্সী ট্রাক। কাছে এসে টায়ারের তীব্র কর্কশ আর্তনাদ তুলে থেমে গেল গাড়ি। লাফিয়ে নেমে এল একদল কালো রেনকোট পরা লোক। এক পলক দেখেই পুরো অবস্থাটা যাচাই করে নিল তাদের অফিসার। চেঁচিয়ে আদেশ দিল।
আবার চলতে শুরু করল ট্রাক। গিয়ে থামল মোড়ের কাছে। কয়েক মুহূর্ত পরেই বন্ধ হয়ে গেল পানির ফোয়ারা।
মিসেস ডেনভারকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে কিশোর, রবিন, জ্যাকবস আর টমি। স্তব্ধ হয়ে গেছে মহিলা। প্রচণ্ড শক খেয়েছে।
পানি বন্ধ করলেন কি করে? একজন ফায়ারম্যানের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল। জ্যাকবস।
মোড়ের কাছে মাস্টার ভালভ আছে একটা, জানাল ফায়ারম্যান। মিসেস ডেনভারের দিকে তাকাল। কোথায় চলেছিলেন?
জবাব দিল না মিসেস ডেনভার।
ঘরে নিয়ে যাওয়া দরকার, বলল জ্যাকবস। ঠাণ্ডা লেগে যাবে। নিউমোনিয়া বাধিয়ে বসলেও অবাক হব না!
দুদিক থেকে ধরে প্রায় শূন্যে তুলে মিসেস ডেনভারকে তার ফ্ল্যাটে নিয়ে এল। কিশোর আর রবিন। গাড়িতে পড়ে থাকা হ্যাঁণ্ডব্যাগ খুলে ঘরের চাবি নিয়ে এসেছে। জ্যাকবস। সঙ্গে এসেছে একজন ফায়ারম্যান। একজন পুলিশ অফিসারও এসে হাজির হয়েছে পেছন পেছন।
কি হয়েছিল? জানতে চাইল অফিসার।
বসার ঘরে দাঁড়িয়ে কাঁপছে মিসেস ডেনভার। কেউ গুলি করেছিল আমাকে। চাঁপা গলা। ঠোঁট নড়লই না যেন কথা বলার সময়।
ভেজা কাপড় খুলে ফেলুন জলদি, শান্ত কণ্ঠে বলল অফিসার। তারপর, ভাল বোধ করলে, কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দেবেন।
মাথা ঝোকাল মিসেস ডেনভার। টলমল করে হেঁটে গিয়ে ঢুকল শোবার ঘরে।
তারও দাঁতে দাতে বাড়ি লাগছে, এতক্ষণে খেয়াল করল যেন কিশোর। আমারও কাপড় বদলানো দরকার!
কিছু দেখেছিলে? জিজ্ঞেস করল পুলিশ অফিসার।
আমি দেখেছি, বলে উঠল রবিন। দাঁতে দাঁত বাড়ি খাচ্ছে তারও। গাড়িটা এগিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ একটা শব্দ…
যাও, রবিন আর কিশোরকে বলল অফিসার। আগে কাপড় বদলে এস। তারপর শুনব।
বেরিয়ে এল দুই গোয়েন্দা। কাঁপতে কাঁপতে এসে ঢুকল অলিভারের বসার ঘরে। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে চেয়ে আছেন অলিভার আর মুসা। দরজা খোলার শব্দে ফিরে তাকাল দুজনেই।
বুড়িটার কি অবস্থা? জানতে চাইলেন অলিভার।
ভালই, বলল কিশোর। ঠাণ্ডায় কাঁপছে, আর কিছু না।
হু, আবার রাস্তার দিকে ফিরলেন অলিভার।
তাড়াতাড়ি ভেজা কাপড় ছেড়ে শুকনো কাপড় পরে নিল রবিন আর কিশোর। বেরিয়ে এল ঘর থেকে। আবার এসে ঢুকল মিসেস ডেনভারের ঘরে। পুলিশ অফিসার নেই, ঘটনাস্থলে চলে গেছে।
বেরিয়ে এল দুই গোয়েন্দা। দুর্ঘটনাস্থলে চলল।