Site icon BnBoi.Com

ডাঃ মুনসীর ডায়রি – সত্যজিৎ রায়

ডাঃ মুনসীর ডায়রি - সত্যজিৎ রায়

 ০১. চানাচুরের বদলে শিঙাড়া

আজ চায়ের সঙ্গে চানাচুরের বদলে শিঙাড়া। লালমোহনবাবু কিছুদিন থেকেই বলছেন, খাই-খাই বলে একটা দোকান হয়েছে মশাই, আমার বাড়ি থেকে হাফ-এ মাইল, সেখানে দুৰ্দান্ত শিঙাড়া করে। একদিন নিয়ে আসব।

আজ সেই শিঙাড়া এসেছে, আর লালমোহনবাবুর কথা যে সত্যি, সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে।

সামনের বৈশাখে আপনার যে বইটা বেরোঝে তার ছক কাটা হয়ে গেছে? জিজ্ঞেস করল। ফেলুদা।

ইয়েস স্যার! কাম্পপুচিয়ায় কম্পমান। এবার দেখবেন প্রখর রুদ্রের হাবভাব কায়দাকানুন অনেকটা ফেলুমিত্তিরের মতো হয়ে আসছে।

অর্থাৎ সে আরও প্রখর হয়ে উঠেছে এই তো?

তা তো বটেই।

গোয়েন্দার ইমপুভমেন্টের সঙ্গে সঙ্গে তার সৃষ্টিকর্তা ও ইমপ্রুভ করেছেন নিশ্চয়ই।

এই কবছর সমানে যে আপনার আশেপাশে ঘুরঘুর করেছি, তাতে অনেকটা বেনিফিট যে পাওয়া যাবে সেটা তো আপনি অস্বীকার করবেন না?

সেটা মানব যদি আপনি পরীক্ষায় উৰ্ত্তীর্ণ হতে পারেন।

কী পরীক্ষা?

পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার পরীক্ষা। বলুন তো আমার মধ্যে কোনও পরিবর্তন দেখছেন। কিনা। আপনি তো গতকালও সকলে এসেছিলেন; আজকের আমি আর গতকালের আমির মধ্যে কোনও তফাত দেখছেন কি?

লালমোহনবাবু উঠে দাঁড়িয়ে দুপা পিছিয়ে গিয়ে মিনিটখানেক ফেলুদাকে আপাদমস্তক স্টাডি করে বললেন, কই, না তো! উঁহু। নো ডিফারেন্স। কোনও তফাত নেই।

হল না। ফেল। অতএব প্রখর রুদ্রও ফেলে। আপনি আসার দশ মিনিট আগে আমি প্রায় এক মাস পরে হাত আর পায়ের নখ কেটেছি। কিছু ঈদের চাঁদের মতো হাতের নখ এখনও মেঝেতে পড়ে আছে। ওই দেখুন!

তাই তো!

লালমোহনবাবু কিছুক্ষণের জন্য খানিকটা নিম্প্রভ হয়ে হঠাৎ ফেলুদার দিকে চেয়ে বললেন, ভেরি ওয়েল; এবার আপনি বলুন তো দেখি আমার মধ্যে কী চেঞ্জ লক্ষ করছেন।

বলব?

বলুন!

ফেলুদা চায়ের খালি কাপটি টেবিলে রেখে চারমিনারের প্যাকেটটা তুলে নিয়ে বলল, নাম্বার ওয়ান, আপনি কাল অবধি লাক্স টয়লেট সোপ ব্যবহার করেছেন; আজ সিন্থলের গন্ধ পাচ্ছি। খুব সম্ভবত টি ভি-র বিজ্ঞাপনের চটকের ফলে।

ঠিক বলেছেন মশাই। এনিথিং এলস?

আপনি পাঞ্জাবির বোতাম সব কটাই লাগিয়ে থাকেন; আজ অনেকদিন পর দেখছি ওপরেরটা খোলা। নতুন পাঞ্জাবিতে বোতাম লাগাতে অনেক সময় বেশ কসরত করতে হয়। ওপরেরটায় সেই কসরতে কোনও ফল হয়নি বলে মনে হচ্ছে।

মোক্ষম ধরেছেন।

আরও আছে।

কী?

আপনি রোজ সকালে একটি করে রসুনের কোয়া চিবিয়ে খান; সেটা আপনি ঘরে এলেই বুঝতে পারি। আজ পারছি না।

আর বলবেন না। ভরদ্বাজটা এমন কেয়ারলেস। দিয়েছি কড়া করে ধমক। এইট্টিসিক্স থেকে রসুন ধরেছি মশাই, সকালে ডেইলি এক কোয়া। আমার সিসটেমটাই-

জটায়ুর রসূনের গুণকীর্তন কমাতে হল, কারণ কলিং বেল বেজে উঠেছে। দরজা খুলে দেখি ফেলুদারই বয়সী এক ভদ্রলোক।

ফেলুদা উঠে দাঁড়াল।

আসুন–

আপনিই তো?

ভদ্ৰলোক সোফায় বসে বললেন, আমার নাম শঙ্কর মুনসী।

সাইকায়াট্রিস্ট?

আমি জানতাম যারা মনের ব্যারামের চিকিৎসা করে তাদের বলে সাইকায়াট্রিস্ট।

সেদিনই খবরের কাগজে ওঁর বিষয়ে একটা খবর পড়লাম না? একটা ছবিও তো বেরিয়েছিল।

হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন, বললেন শঙ্কর মুনসী! গত চল্লিশ বছর ধরে উনি একটা ডায়রি লিখেছেন, সেটা পেঙ্গুইন ছাপছে। আপনি হয়তো জানেন না। বাবার মনোবিজ্ঞানী হিসাবে সুনাম আছে ঠিকই, কিন্তু আরেকটা ব্যাপারেও তিনি ছিলেন অসাধারণ। সেটা হল শিকার। পাঁচিশ বছর আগে শিকার ছাড়লেও, এই ডায়েরিতে তাঁর শিকারের অভিজ্ঞতার বর্ণনাও আছে। পেঙ্গুইন এখনও লেখাটা পড়েনি; সাইকায়াট্রিস্ট শিকারির ডায়রি শুনেই ছাপার প্রস্তাব দেয়। তবে লেখক হিসেবে যে বাবার সুনাম আছে সেটা তারা জানে। মনোবিজ্ঞান সম্বন্ধে চমৎকার ইংরিজিতে লেখা বাবার অনেক প্ৰবন্ধ নানান পত্র-পত্রিকায় বেরিয়েছে।

খবরটা কি আপনারাই কাগজে দেন?

না, ওটা প্রকাশকের তরফ থেকে বেরোয়।

আই সি।

যাই হোক, এবার আসল ব্যাপারটায় আসি। বাবার গর্ব হচ্ছে যে এ ডায়রিতে তিনি একটিও মিথ্যা কথা লেখেননি। তিনজন লোককে নিয়ে তিনটি ঘটনার উল্লেখ আছে ডায়রিতে। যাদের পুরো নামটা ব্যবহার না করে বাবা নামের প্রথম অক্ষরটা ব্যবহার করেছেন। এই অক্ষর তিনটি হল এ, জি, আর আর। এরা তিনজনেই আজ সমাজে সম্মানিত, সাক্সেসফুল ব্যক্তি। কিন্তু তিনজনেই, বেশ অনেককাল আগে, তিনটি অত্যন্ত গৰ্হিত কাজ করেন, এবং তিনজনেই নানান ফিকিরে আইনের হাত থেকে রেহাই পান। যদিও পুরো নাম ব্যবহার না করার দরুন বাবা আইনের হাত থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ। তবুও প্রকাশকের কাছ থেকে অফারটা পাবার পর বাবা তিনজনকেই ব্যাপারটা বলেন। এ আর জি প্রথমে আপত্তি তোলে, তারপর বাবা বুঝিয়ে বলার পর খানিকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হয়। আর নাকি কোনওরকম আপত্তি তোলেনি।

গতকাল দুপুরে খেতে বসেছি, এমন সময় চাকর এসে বাবাকে একটা চিঠি দেয়। সেটা পড়ে বাবার মুখ গম্ভীর হয়ে যায়। কারণ জিজ্ঞেস করাতে বাবার মুখে প্রথম এ, জি আর আর-এর বিষয় শুনি, আগে কিছুই জানতাম না।

কোন?

বাবা লোকটা একটু পিকিউলিয়ার। উনি পেশা আর পেশেন্ট ছাড়া আর কিছুই জানেন না। আমি, মা, সংসার—এসব সম্পর্কেই বাবা সম্পূর্ণ উদাসীন। মা মানে আমার বিমাতা, স্টেপমাদার। আমার যখন তিন বছর বয়স তখন আমার মা মারা যান। তার দু বছর পরে বাবা আবার বিয়ে করেন। এই নতুন মা যে আমাকে খুব কাছে টেনে নিয়েছিলেন তা বলতে পারি না। আমাদের বাড়ির এক অনেক দিনের পুরনা চাকর আমার দেখাশুনা করত। সেই ব্যবধান এখনও রয়ে গেছে। যদিও এটা বলব যে বাবার স্নেহ যেমন পাইনি, তেমনি তাঁর শাসনও ভোগ করিনি।

এবং তাঁর ডায়রিও পড়েননি?

না। শুধু আমি না, কেউই পড়েনি।

আসল প্রসঙ্গ থেকে আমরা একটু দূরে সরে এসেছি। ওই চিঠি কি এই তিনজনের একজন লিখেছেন?

ইয়েস, ইয়েস। এই দেখুন।

শঙ্করবাবু একটা খাম বার করে ফেলুদাকে দিলেন। তা থেকে যে চিঠিটা বেরোল সেটা ফেলুদার পিছনে দাঁড়িয়ে আমি আর লালমোহনবাবুও পড়লাম। প্রথমেই তলায় দেখলাম এ। তার উপর লেখা আই টেক ব্যাক মাই ওয়ার্ড। ডায়রি ছাপতে হলে আমার অংশ বাদ দিয়ে ছাপতে হবে। এটা অনুরোধ নয়, আদেশ। অমান্য করলে তার ফল ভোগ করতে হবে।

একটা প্রশ্ন আছে, বলল ফেলুদা। এই তিন ব্যক্তির অপরাধের কথা আপনার বাবা জানলেন। কী করে?

সেও খুব ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। কৌশলে আইনের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে এ, জি আর আর মনে শান্তি পায়নি। গভীর অনুশোচনা, শেষটায় ঘটনাচক্রে ধরা পড়ে যাবার ভয় ক্ৰমে মানসিক ব্যারামে দাঁড়ায়। বাবার তখনই বেশ নাম ডাক, এরা তিনজনেই বাবার কাছে আসে চিকিৎসার জন্য। সাইকায়াট্রিস্টের কাছে তো আর কিছু লুকোনো চলে না; সব প্রশ্নের সঠিক জবাব না দিলে চিকিৎসাই হবে না। এই ভাবে বাবা এদের ঘটনাগুলো জানতে পারেন।

হুমকি কি শুধু এ-ই দিয়েছে?

এখন পর্যন্ত তাই, তবে জি সম্বন্ধেও বাবার সংশয় আছে! এই তিনজনের অপরাধ কী তা আপনি জানেন? না। শুধু তাই না; এদের আসল নাম, এখন এরা কী করছে, এসব কিছুই বলেননি। বাবা। তবে আপনাকে নিশ্চয়ই বলবেন।

উনি কি আমার খোঁজ করছেন?

সেই জন্যেই তো এলাম। বাবা ওঁর এক পেশেন্টের কাছ থেকে আপনার নাম শুনেছেন। আমাকে জিজ্ঞেস করতে আমি বললাম গোয়েন্দা হিসেবে আপনার যথেষ্ট খ্যাতি আছে। তাতে বাবা বললেন, মানুষের মনের চাবিকাঠি হাতে না থাকলে ভাল গোয়েন্দা হওয়া যায় না। ওঁকে একটা কল দিতে পারলে ভাল হত। এইসব হুমকি-টুমকিতে শান্তিভঙ্গ হয়। ফলে কাজের ব্যাঘাত হয়। সেটা আমি একেবারেই চাই না। আমি তখনই বাবাকে জিজ্ঞেস করি মিত্তিরকে কখন আসতে বলব। বাবা বললেন, রবিবার সকাল দশটা। এখন আপনি যদি…

বেশ তো; আমার দিক থেকে আপত্তি করার তো কোনও কারণই নেই।

তা হলে এই কথা রইল। রবিবার সকাল দশটা, নাম্বার সেভ্‌ন সুইনহো স্ট্রিট।

০২. সাত নম্বর সুইনহো স্ট্রিট

সাত নম্বর সুইনহো স্ট্রিট ডাক্তারের বাড়ি বলে মনেই হয় না; তার সদর দরজা দিয়ে ঢুকে প্রথমেই চোখে পড়ে একটা দাঁড়ানো রয়েল বেঙ্গল টাইগার, আর তার পিছনে দেয়ালে উপর দিকে একটা বাইসনের মাথা।

শঙ্করবাবু নীচেই অপেক্ষা করছিলেন, আমরা তাঁর সঙ্গে দোতলায় গিয়ে বৈঠকখানায় বসলাম! এঘরেও চতুর্দিকে শিকারের চিহ্ন। ভদ্রলোক ডাক্তগরি করে এত জানোয়ার মারার সময় কী করে পেলেন। তাই ভাবছিলাম।

মিনিট খানেকের মধ্যেই ডাঃ মুনসী এসে পড়লেন। মাথার চুল সব সাদা হয়ে গেছে, তবে এখনও যে বেশ শক্ত সমর্থ সেটা দেখলেই বোঝা যায়। ভদ্রলোক ফেলুদার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে বললেন, আপনার তো ব্যায়াম করা শরীর বলে মনে হচ্ছে। ভেরি গুড। আপনার কাজ প্রধানত মাথার হলেও আপনি যে শরীরের প্রতি দৃষ্টি রেখেছেন সেটা দেখে ভাল লাগল।

এবার ভদ্রলোক জটায়ু ও আমার দিকে চাইতে ফেলুদা আমাদের পরিচয় করিয়ে দিল।

এঁরা ট্রাস্টওয়ার্দি কি? ডাঃ মুনসী প্রশ্ন করলেন।

সম্পূর্ণ, বলল ফেলুদা। তপেশ আমার খুড়তুতো ভাই এবং আমার সহকারী, আর মিঃ গাঙ্গুলী আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।

এই জন্যে জিজ্ঞেস করছি কারণ আজ সেই তিন ব্যক্তির আসল পরিচয় আমাকে দিতে হবে, না হলে আপনি কাজ করতে পারবেন না। এই পরিচয় শুধু আপনারা তিনজনই জানবেন, আর কেউ জানে না, আর কাউকে বলিনি।

আপনি নিৰ্ভয়ে বলতে পারেন, ডাঃ মুনসী, বললেন জটায়ু। আমি অন্তত আর কাউকে বলব না।

ভেরি ওয়েল।

তা হলে বলুন কী করতে পারি। হুমকি চিঠির কথা আপনার ছেলে বলেছেন।

শুধু হুমকি চিঠি নয়, বললেন ডাঃ মুনসী, হুমকি টেলিফোনও বটে। এটা কাল রাত্রের ঘটনা। তখন সাড়ে এগারোটা। বোঝাই যায় মত্ত অবস্থায় ফোন করছে। হিগিন্‌স। জর্জ হিগিন্‌স।

আপনার ডায়রির জি?

ইয়েস। বলে কী—সেদিন টেলিফোনে আমি অত্যন্ত বাকার মতো কথা বলেছি। যখন তোমার কাছে ট্রিটমেন্টের জন্য যাই, তখন আমার যে ব্যবসা ছিল, এখনও সেই ব্যবসাই রয়েছে। একচেটিয়া ব্যবসা আমার, সুতরাং জি থেকে অনেকেই আমার আসল পরিচয় অনুমান করতে পারবে। সে কাট মি আউট। মাতালকে তো আর যুক্তি দিয়ে কিছু বোঝানো যায় না। ফলে ফোন রেখে দিতে হল। বুঝতেই পারছেন, আমি রুগি নিয়ে এত ব্যস্ত থাকি যে এদের বাড়ি গিয়ে সামনাসামনি কথা বলে যে কিছু বোঝাব তার সময় বা সামর্থ্য আমার নেই। এ কাজের ভারটা আমি আপনাকে দিতে চাই। এ এবং জি। আর-কে নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। কারণ তার সঙ্গে কথা বলে জেনেছি যে নামের আদ্যক্ষর থেকে তাকে কেউ চিনে ফেলবে এ আশঙ্কা তার নেই।

কিন্তু এই তিনজনের আসল পরিচয়টা—!

কাগজ পেনসিল আছে? ফেলুদা পকেট থেকে নোটবুক আর ডট পেন বার করল।

লিখুন, এ হল অরুণ সেনগুপ্ত। ম্যাকনিল কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার, রোটারি ক্লাবের ভাইস প্রসিডোন্ট। বাসস্থান এগারো নম্বর রোল্যান্ড রোড। ফোন নম্বর ডিরেক্টরিতে দেখে নেবেন।

ফেলুদা চটপট ব্যাপারটা লিখে নিল।

এবার লিখুন, বলে চললেন ডাঃ মুনসী, জি হল জর্জ হিগিন্‌স। টেলিভিশনের জন্য বিদেশে জনোয়ার চালান দেবার ব্যবসা এঁর। বাড়ির নম্বর নব্ববুই রিপন স্ট্রিট। রাস্তার নাম থেকে বুঝতে পারবেন। উনি পুরো সাহেব নন, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান। তৃতীয় ব্যক্তির আসল পরিচয় প্রয়োজন হলে দেব, নচেৎ নয়।

এদের অপরাধগুলো?

শুনুন আমার পাণ্ডুলিপি আজ আপনি নিয়ে যাবেন। মন দিয়ে পড়ে আপনার বুদ্ধি বিবেচনা প্রয়োগ করে আমাকে বলবেন এতে আপত্তিকর কিছু আছে কিনা যার ফলে বইটা বাজারে বেরোলে আমার ক্ষতি হতে পারে।

ঠিক আছে তা হলে—

ফেলুদাকে থামতে হল, কারণ ঘরে তিনজন লোকের প্রবেশ ঘটেছে। ডাঃ মুনসী তাদের দিকে দেখিয়ে বললেন, আপনি আসছেন শুনে এরা সকলেই আপনাকে দেখার ইচ্ছা প্ৰকাশ করেছেন। আমার স্ত্রী ছাড়া এই কজন এবং আমার ছেলেই এখন আমার বাড়ির বাসিন্দা। আলাপ করিয়ে দিই, এ হচ্ছে সুখময় আমার সেক্রেটারি।

একজন চশমা-পরা বছর চল্লিশেকের ভদ্রলোকের দিকে দেখালেন ডাঃ মুনসী।

আর ইনি হচ্ছেন আমার শ্যালক চন্দ্রনাথ।

এর বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। দেখে কেন জানি মনে হয় ইনি বিশেষ কিছু করেন-টরেন না, এ বাড়িতে আশ্রিত হয়ে রয়েছেন।

আর ইনি আমার পেশেন্ট রাধাকান্ত মল্লিক। এর চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানেই আছেন।

এঁকে দেখে মনে হয় এর অসুখ এখনও সারেনি। হাত কচলাচ্ছেন, চোখ পিট পিট করছেন, আর একটানা সুস্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না। বয়স আন্দাজ চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ।

পরিচয়ের পরে একমাত্র সুখময়বাবু ছাড়া আর সকলেই চলে গেলেন। ডাঃ মুনসী সেক্রেটারির দিকে ফিরে বললেন, সুখময়, যাও, আমার লেখাটা এনে প্রদোষিবাবুকে দাও।

ভদ্রলোক দু মিনিটের মধ্যে একটা বড়, মোটা খাম এনে ফেলুদাকে দিলেন।

ওর কিন্তু আর কপি নেই, বললেন ড. মুনসীর পাবলিশারকে দেবার আগে ওটা সুখময় টাইপ করে দেবে।

আপনি কোনও চিন্তা করবেন না, বলল ফেলুদা, আমি এটার মূল্য খুব ভালভাবেই জানি।

আমরা উঠে পড়লাম। শঙ্করবাবু পাশের ঘরেই অপেক্ষা করছিলেন। এবার এসে আমাদের সদর দরজা অবধি পৌঁছে দিলেন। তারপর লালমোহনবাবুর সবুজ অ্যাম্বাসডরে চড়ে আমরা বাড়িমুখে রওনা দিলাম!

একটা রিকুয়েস্ট আছে, লালমোহনবাবু হঠাৎ বললেন।

কী?

আপনার পড়া হলে পরা আমি একবার দু দিনের জন্য পাণ্ডুলিপিটা নেব। এটা রিফিউজ করবেন না, প্লিজ!

আপনার না পড়লেই নয়?

না-পড়লেই নয়। বিশেষ করে শিকার কাহিনী পড়তে আমার দুর্দান্ত লাগে।

বেশ দেব। আর দুদিন নয়; আপনি যে সকালে নেবেন, তার পরের দিন সকালেই ফেরত দিতে হবে। তার মধ্যে শিকারের অংশ আপনার নিশ্চয়ই পড়া হয়ে যাবে। কারণ ১৯৬৫-এর পর তো আর ভদ্রলোক শিকার করেননি।

তাই সই।

০৩. ডাঃ মুনসীর হাতের লেখা

ডাঃ মুনসীর হাতের লেখা বেশ পরিষ্কার হলেও, তিনশো পচাত্তর পাতার পাণ্ডুলিপিটা পড়তে ফেলুদার লাগল। তিন দিন! এত সময় লাগার একটা কারণ অবিশ্যি এই যে ফেলুদা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে অনেক কিছু নিজের খাতায় নোট করে নিচ্ছিল।

তিন দিনের পরের দিন রবিবার সকালে যথারীতি জটায়ু এসে হাজির। প্ৰথম প্রশ্নই হল,কী স্যার, হল?

হয়েছে।

আপনি কী সিদ্ধান্তে এলেন শুনি! এ ডায়রি নির্ভয়ে ছাপার যোগ্য?

সম্পূর্ণ। তবে তাতে হুমকি বন্ধ করা যায় না। এই তিনজনের একজনও যদি ধরে বসে থাকে যে নামের আদ্যক্ষর থেকেই লোকে বুঝে ফেলবে কার কথা বলা হচ্ছে তা হলে সে এ বই ছাপা বন্ধ করার জন্য কী যে না করতে পারে তার ঠিক নেই!

ইভ্‌ন মার্ডার?

তা তো বটেই। একজনের কথাই ধরা যাক। এ। অরুণ সেনগুপ্ত। পূর্ববঙ্গের এক জমিদার বংশের ছেলে। যুবা বয়সে ছিলেন এক ব্যাঙ্কের মধ্যপদস্থ কর্মচারী। কিন্তু রক্তের মধ্যে ছিল চূড়ান্ত শৌখিনতা। ফলে প্রতি মাসেই আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। শেষে কাবুলিওয়ালার শরণাপন্ন হওয়া।

এই ফাঁকে বলে রাখি, ফেলুদা একবার বলেছিল যে আজকাল আর দেখা যায় না বটে। কিন্তু বছর কুড়ি আগেও রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখা যেত লাঠি হাতে কাবুলিওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে। এদের ব্যবসা ছিল মোটা সুদে টাকা ধার দেওয়া।

ফেলুদা বলে চলল, একটা সময় আসে যখন দেনার অঙ্কটা এমন ফুলে ফেপে ওঠে যে মরিয়া হয়ে অরুণ সেনগুপ্তকে ব্যাঙ্কের তহবিল থেকে চল্লিশ হাজার টাকা চুরি করতে হয়। কিন্তু সেটা সে এমন কৌশলে করে যে দোষটা গিয়ে পড়ে একজন নির্দোষ কর্মচারীর উপর। ফলে সে বেচারিকে জেল খাটতে হয়।

বুঝেছি, বিজ্ঞের মতো মাথা নেড়ে বললেন জটায়ু তারপর অনুশোচনা, তারপর মাথার ব্যারাম, তারপর মনোবিজ্ঞানী। ..কিন্তু ভদ্রলোক যে এখন একেবারে সমাজের উপর তলায় বাস করছেন। তার মানে মুনসীর চিকিৎসায় কাজ দিয়েছিল?

তা তো বটেই। সে কথা মুনসী তাঁর ডায়রিতে লিখেওছেন—যদিও তারপরে আর কিছু লেখেননি। কিন্তু আমরা বেশ অনুমান করতে পারি যে এই ঘটনার পর সেনগুপ্ত নিশ্চয়ই তার জীবনের ধারা পালটে ফেলে ত্রিশ বছর ধরে ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে উপরে উঠে আজকের অবস্থায় পৌঁছেছেন। বুঝতেই পারেন। সেখান থেকে আবার পিছলে পড়ার আশঙ্কা যদি দেখা দেয়, যতই অমূলক হাক, তা হলে সেনগুপ্ত সাহেব মাথা ঠিক রাখেন কী করে?

বুঝলাম, বললেন জটায়ু, আর অন্য দুজন?

আর ব্যক্তি সম্বন্ধে চিন্তার কোনও কারণ নেই সে তো সেদিন মুনসীর মুখেই শুনলেন। এর আসল নামটা উনি বলেননি, তাই আমিও বলতে পারছি না। ইনি এককালে একটা লোককে গাড়ি চাপা দিয়ে মারেন, তারপর এদিকে ওদিকে মোটা ঘুষ দিয়ে আইনের হাত থেকে নিজেকে বাঁচান। ইনিও ডাঃ মুনসীর হাতে নিজেকে সমৰ্পণ করে বিবেকযন্ত্রণা থেকে রেহাই পান!..ইন্টারেস্টিং হল জি-র ঘটনা।

কী রকম?

ইনি যে ফিরিঙ্গি সে তো জানেন। আর এর ব্যবসার কথাও জানেন। নব্ববুই নম্বর রিপন স্ট্রিটে একটা বড় দোতলা বাড়িতে থাকতেন জর্জ হিগিন্‌স। ১৯৬০-এ এক সুইডিশ ফিল্ম পরিচালক কলকাতায় আসেন ভারতবর্ষের ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা ছবি করবেন বলে। তাঁর গল্পের জন্য একটা লেপার্ডের প্রয়োজন ছিল। ইনি হিগিনসের খবর পেয়ে তার সঙ্গে গিয়ে দেখা করেন। হিগিনসের একটা লেপার্ড ছিল বটে, কিন্তু সেটা রপ্তানির জন্য নয়; সেটা তার পোষা! অনেক টাকা দিয়ে সুইডিশ পরিচালক একমাসের জন্য লেপার্ডটাকে ভাড়া করেন। কথা ছিল একমাস পরে তিনি অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেবেন! আসলে ফিল্ম পরিচালক মিথ্যা কথা বলেন, কারণ তাঁর গল্পে ছিল গ্রামবাসীরা সবাই মিলে লেপাড়ীটাকে মেরে ফেলে। এক মাস পরে পরিচালক এসে হিগিন্‌সকে আসল ঘটনা বলে। হিগিন্‌স প্রচণ্ড রেগে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে তখনই পরিচালকের টুটি টিপে তাকে মেরে ফেলে। পরমুহূর্তে রাগ চলে গিয়ে তার জায়গায় আসে আতঙ্ক! কিন্তু সেই অবস্থাতেও পুলিশের চোখে ধুলো দেবার ফন্দি হিগিন বার করে। সে প্রথমে ছুরি দিয়ে মৃত পরিচালকের সর্বাঙ্গ ক্ষতচিহ্নে ভরিয়ে দেয়। তারপর তার কালেকশনের একটা হিংস্র। বনবেড়ালকে খাঁচার দরজা খুলে বার করে সেটাকে গুলি করে মারে। ফলে ব্যাপারটা দাঁড়ায়, খাঁচা ছাড়া বনবেড়াল পরিচালককে হত্যা করে এবং বনবেড়ালকে হত্যা করে হিগিন্‌স। ফিকিরাটা কাজে দেয়, হিগিন্‌স, আইনের হাত থেকে বঁচে। কিন্তু তারপর একমাস ধরে ক্রমাগত স্বপ্নে নিজেকে ফাঁসিকাঠে ঝুলতে দেখে অগত্যা মুনসীর চেম্বারে গিয়ে হাজির হয়।

হুঁ.. বললেন জটায়ু। তা হলে এখন কিং কর্তব্য?

দুটো কর্তব্য, বলল ফেলুদা। এক হল পাণ্ডুলিপিটা আপনাকে দেওয়া, আর দুই—এ-কে একটা টেলিফোন করা।

জটায়ু হাসিমুখে ফেলুদার হাত থেকে পাণ্ডুলিপি ভরা মোটা খামটা নিয়ে বললেন, ফোন করবেন কি অ্যাপায়েন্টমেন্ট করার জন্য?

ন্যাচারেলি, বলল ফেলুদা। আর দেরি করার কোনও মানে হয় না। তোপ্‌সে-এ, সেনগুপ্ত, ১১ রোল্যান্ড রোড, নম্বরটা বার করা তো।

আমি ডাইরেক্টরিটা হাতে নিতেই ফোনটা বেজে উঠল। আমিই ধরলাম। ডাঃ মুনসী। ফেলুদাকে বলতেই ও আমার হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিল।

ব্যাপার আর কিছুই নয়-সেনগুপ্ত আরেকটা হুমকি চিঠি দিয়েছেন। তাতে কী বলা হয়েছে। সেটা ফেলুদা তার খাতায় লিখে নিল। তারপর ফেলুদা তার শেষ কথাটা বলে ফোনটা রেখে দিল।

সেনগুপ্তর দ্বিতীয় হুমকিটা হচ্ছে এই—সাতদিন সময়। তার মধ্যে কলকাতার প্রত্যেক বাংলা ও ইংরিজি কাগজে বিজ্ঞপ্তি দেখতে চাই যে অনিবাৰ্য কারণে ডায়ারি ছাপা সম্ভব হচ্ছে না। সাতদিন। তারপরে আর হুমকি নয়–কাজ, এবং কাজটা আপনার পক্ষে প্রীতিকর হবে না বলাই বাহুল্য!

আমি সেনগুপ্তর ফোন নম্বর বার করে ডায়াল করে একবারেই লাইন পেয়ে গেলাম। ফেলুদার হাতে ফোনটা চালান দিয়ে আমি আর জটায়ু কেবল ফেলুদার কথাটাই শুনলুম। সেটা শুনে যা দাঁড়াল তা এই—

হ্যালো-মিঃ সেনগুপ্তর সঙ্গে একটু কথা বলতে পারি কি। –অরুণ সেনগুপ্ত?

মিঃ সেনগুপ্ত? আমার নাম প্রদোষ মিত্র।

হ্যাঁ, ঠিকই রেছেন। ইয়ে-আমায় একদিন পাঁচ মিনিট সময় দিতে পারেন?

তাই বুঝি? আশ্চর্য তো! কী ব্যাপার?

তা পারি বইকী। কটায় গেলে আপনার সুবিধে?

ঠিক আছে। তাই কথা রইল।

ভাবতে পারিস? ফোনটা রেখে বলল ফেলুদা, ভদ্রলোক নাকি আর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই

কেন, কেন? প্রশ্ন করলেন জটায়ু।

সেটা ফোনে বললেন না, সামনে বলবেন।

কখন অ্যাপায়ন্টমেন্ট?

আধা ঘণ্টা বাদে।

০৪. এগারো নম্বর রোল্যান্ড রোড

এগারো নম্বর রোল্যান্ড রোড সাহেবি আমলের দোতলা বাড়ি। দরজার বেল টিপতে একজন উর্দিপরা বেয়ারার আবিৰ্ভাব হল। সে কার্পেট ঢাকা কাঠের সিঁড়ি দিয়ে আমাদের দোতলায় নিয় গিয়ে বৈঠকখানায় বসাল। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই মিঃ সেনগুপ্ত প্রবেশ করলেন। বাড়ির সঙ্গে মানানসই সাহেবি মেজাজ, পরনে ড্রেসিং গাউন, পায়ে বেডরুম স্লিপার, হাতে চুরুট।

পরিচয় পর্ব শেষ হলে পার ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা ড্রিঙ্ক করেন?

আজ্ঞে না, বলল ফেলুদা।

আমি যদি বিয়ার খাই আশা করি আপনারা মাইন্ড করবেন না?

মোটেই না।

ভদ্রলোক বেয়ারাকে ডেকে নিজের জন্য বিয়ার আর আমাদের তিনজনের জন্য চায়ের অর্ডার দিয়ে ফেলুদার দিকে দৃষ্টি দিলেন। ফেলুদা বলল, আপনি আমাকে কেন ফোন করতে যাচ্ছিলেন সেটা আগে বলতে আপনার কোনও আপত্তি আছে? তারপর আমার দিকটা বলব।

বেশ তো। জে. পি. চাওলার নাম শুনেছেন?

ব্যবসাদার? গুরুপ্ৰসাদ চাওলা? যার নামে চাওলা ম্যানসনস?

হ্যাঁ।

তাঁর এক নাতি তো–?

হ্যাঁ। মিসিং। সম্ভবত কিডন্যাপড।

কাগজে দেখছিলাম ধটে।

গুরুপ্ৰসাদ আমার অনেকদিনের বন্ধু! পুলিশ তদন্ত করছে বটে, কিন্তু আমি ওকে আপনার নাম সাজেস্ট করি। ভুলু সেহানবিশের কাছে আপনার খুব সুখ্যাতি শুনেছি।

হ্যাঁ, একটা ব্যাপারে ওঁকে আমি হেলপ করি।

তা হলে চাওলাকে কী বলব?

মিঃ সেনগুপ্ত, দুঃখের বিষয় আমি অলরেডি একটা কেস হাতে নিয়ে ফেলেছি।

আই সি।

আর সেই ব্যাপারেই আমি আপনার কাছে এসেছি।

কী ব্যাপারে শুনি?

আমি ডাঃ মুনসীর কাছ থেকে আসছি।

হোয়াট!

ভদ্রলোক সোফা থেকে প্রায় লাফিয়ে উঠলেন–মুনসী আপনাকে আমার পরিচয় দিয়ে দিয়েছে? তার মানে তো আর ক’দিনে রাজ্যিসুদ্ধ লোক জেনে যাবে মুনসীর ডায়েরির এ ব্যক্তিটি আসলে কে।

মিঃ সেনগুপ্ত, আমি অত্যন্ত সাবধানী লোক। গোপন ব্যাপার কী করে গোপন রাখতে হয় তা আমি জানি। আমার উপর আপনি সম্পূর্ণ ভরসা রাখতে পারেন। তবে আপনি যদি ঘন ঘন ডাঃ মুনসীকে হুমকি চিঠি দেন, তার ফল কী হবে সেটা আমি জানি।

আমি হুমকি চিঠি দেব না কেন? আপনি ডায়রিটা পড়েছেন?

পড়েছি।

আপনার কী মনে হয়েছে?

ত্রিশ বছরের পুরনো ঘটনা। এর মধ্যে অন্তত শ পাঁচেক ব্যাঙ্কে তহবিল তছরুপ হয়েছে। যারা এ কাজ করেছে। হয়তো তাদের অনেকেরই নামের প্রথম অক্ষর এ। সুতরাং আপনার ভয় সম্পূর্ণ অমূলক।

মুনসী কি ব্যাংকের নাম করেছে?

না।

আমার ব্যাঙ্কে দুজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিল যারা চুরির ব্যাপারে আমাকে সন্দেহ করে, কারণ ঠেকায় পড়ে আমি দুজনের কাছে টাকা ধার চেয়েছিলাম। দুজনেই অবিশ্যি রিফিউজ করে।

মিঃ সেনগুপ্ত, আমি আবার বলছি—আপনার ভয়ের কোনও কারণ নেই। আর এই ধরনের চিঠি দিয়ে আপনার লাভটা কী হচ্ছে? ডাঃ মুনসী আইনের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ নিরাপদ। অর্থাৎ আপনি কোনও লিগ্যাল স্টেপ নিতে পারছেন না। তা হলে কি আপনি আইনের বাইরে কোনও রাস্তা ভাবছেন?

আমার বিপদের আশঙ্কা দেখলে আমি আইন-টাইন মানব না। মিঃ মিত্তির। আমার অতীতের ইতিহাস থেকেই আপনি বুঝছেন যে প্রয়োজনে বেপরোয়া কাজ করতে আমি দ্বিধা করি না।

আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, মি সেনগুপ্ত। তখনকার আপনি আর এখনকার আপনি কি এক? আজ আপনি সমাজে সম্মানিত ব্যক্তি। এই অবস্থায় আপনি এমন একটা ঝুঁকি নেবেন?

মিঃ সেনগুপ্ত মিনিট খানেক কিছু না বলে চুক চুক করে বিয়ার খেলেন। তারপর তাঁর চাউনির সামান্য পরিবর্তন দেখা গেল। তারপর তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এক চুমুকে বাকি বিয়ারটা শেষ করে গেলাসটা টেবিলে রেখে বললেন, ঠিক আছে—ড্যাম ইট! লেট হিম গো অ্যাহেড।

আপনি তা হলে হুমকির ব্যাপারে ইতি দিচ্ছেন?

ইয়েস ইয়েস ইয়েস!—তবে বিপদের বিন্দুমাত্র আশঙ্কা দেখলেই কিন্তু—

আর বলতে হবে না, বলল ফেলুদা, বুঝেছি।

 ০৫. পাণ্ডুলিপিটা ফেরত নিয়ে এলেন

লালমোহনবাবু কথামতো পরদিন সকালেই পাণ্ডুলিপিটা ফেরত নিয়ে এলেন। ফেলুদা বলল, এখন আর চা খাওয়া হবে না। কারণ আধা ঘণ্টার মধ্যেই জি-র সঙ্গে অ্যাপায়েন্টমেন্ট।

নব্বই নম্বর রিপন স্ট্রিটের দরজায় বেল টিপতে যাঁর আবির্ভাব হল তাঁর মাথায় টাক, কনের পাশের চুল সাদা, আর এক জোড়া বেশ তাগড়াই গোঁফ, তাও সাদা।

মিঃ মিটার, আই অ্যাম জর্জ হিগিন্‌স।

তিনজনের সঙ্গেই করমর্দনের পর হিগিন্‌স। আমাদের নিয়ে দোতলায় চলল। গেট দিয়ে বাড়িতে ঢুকেই দুটো বেশ বড় খাঁচা দেখেছি, তার একটায় বাঘ, অন্যটায় হয়না। দোতলায় উঠে বাঁয়ে একটা ঘরের পাশ দিয়ে যাবার সময় দেখলাম তাতে গোটা পাঁচেক কোয়ালা ভালুক বসে। আছে মেঝেতে।

বসবার ঘরে পৌঁছে সোফায় বসে হিগিন্‌স ফেলুদাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করল, ইউ আর এ ডিটেকটিভ?

এ প্রাইভেট ওয়ান, বলল ফেলুদা।

বাকি কথাও ইংরেজিতেই হল, যদিও হিগিন্‌স মাঝে মাঝে হিন্দিও বলে ফেলছিলেন, বিশেষ করে কারুর উদ্দেশে গালি দেবার সময়। অনেকের উপরেই ভদ্রলোকের রাগ। যদিও কারণটা বোঝা গেল না। অবশেষে বললেন, মানসি তা হলে এখনও প্র্যাকটিস করে? আই মাস্ট সে, সে আমার বিপদের সময় অনেক উপকার করেছিল।

তা হলে আর আপনি তাকে শাসচ্ছেন কেন? প্রশ্ন করল ফেলুদা।

হিগিন্‌স। একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, সেটার একটা কারণ হচ্ছে সেদিন রাত্রে নেশার মাত্রাটা একটু বেশি হয়েছিল। তবে মানুষের কি ভয় করে না? আমার বাবা কী ছিলেন জান? স্টেশন মাস্টার। আর আমি নিজের চেষ্টায় আজ কোথায় এসে পৌঁছেছি। দেখ। এ আমার একচেটিয়া ব্যবসা। মানসির ডায়ারি ছাপা হলে যদি আমাকে কেউ চিনে ফেলে তা হলে আমার আর আমার ব্যবসার কী দশা হবে ভাবতে পার?

ফেলুদাকে আবার বাঝাতে হল যে হিগিন্‌স আইন বাঁচিয়ে কিছুই করতে পারবেন না। তাঁকে আরার বেঁকা রাস্তায় যেতে হবে। সেটাই কি তুমি চাইছ? বেশ জোরের সঙ্গে জিজ্ঞেস করল ফেলুদা। তাতে কি তোমার প্রেসটিজ আরও বেশি বিপন্ন হবে না?

হিগিন্‌স কিছুক্ষণ চুপ করে বিড়বিড় করে বললেন, একবার কেন, শতিকার খুন করতে পারতাম ও পাজি সুইডিশটাকে। বাহাদুর, আমার সাধের লেপার্ড, মাত্র চার বছর বয়স, তাকে কিনা লোকটা মেরে ফেলল!…

আবার দশ সেকেন্ডের জন্য কথা বন্ধ; তারপর হঠাৎ সোফার হাতল চাপড়ে গলা তুলে হিগিন্‌স বললেন, ঠিক আছে; মানসিকে বলে আমি কোনও পরোয়া করি না। ও যা করছে করুক, বই বেরোলে লোকে আমাকে চিনে ফেললেও আই ডোন্ট কেয়ার। আমার ব্যবসা কেউ টলাতে পারবে না।

থ্যাঙ্ক ইউ মিঃ হিগিন্‌স, থ্যাঙ্ক ইউ।

 

অরুণ সেনগুপ্তর খবরটা ফেলুদা আগেই ফোনে ডাঃ মুনসীকে জানিয়ে দিয়েছিল। হিগিনসের খবরটা দিতে আমরা মুনসির বাড়িতে গোলাম, কারণ পাণ্ডুলিপিটা ফেরত দেবার একটা ব্যাপার ছিল। ভদ্রলোক ফেলুদাকে একটা বড় ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, তা হলে তো আপনার কর্তব্য সারা হয়ে গেল! এবারে আপনার ছুটি!

আপনি ঠিক বলছেন? আর সম্বন্ধে কিছু করার নেই তো?

নাথিং। …আপনি আপনার বিল পাঠিয়ে দেবেন, আমি ইমিডিয়েটলি পেমেন্ট করে দেব।

থ্যাঙ্ক ইউ, স্যার।

এটাকে কি মামলা বলা চলে? বাড়ি ফিরে এসে বলল জটায়ু।

মিনি মামলা বলতে পারেন। অথবা মামলাণু।

যা বলেছেন।

আশ্চর্য এই যে এমন গৰ্হিত কাজ করার পঁচিশ-ত্রিশ বছর পরে লোকগুলো শুধু বেঁচে নেই, দিব্যি সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে চালিয়ে যাচ্ছে।

হক্‌ কথা, বললেন জটায়ু। কালই বাড়িতে বসে ভাবছিলুম ত্রিশ বছর আগে যাদের চিনতুম তাদের কারুর সঙ্গে আজও যোগাযোগ আছে কিনা, বা তারা এখন কে কী করছে। সেটা জানি কিনা। বিশ্বাস করুন আজই আধা ঘণ্টা ভেবে শুধু একটা নাম মনে পড়ল, অপরেশ চাটুজ্যে, যার সঙ্গে একসঙ্গে বসে বায়স্কোপ দেখিচি, ফুটবল খেলা দেখিচি, সাঙ্গুভ্যালিতে বসে চা খেইচি।

এখন কী করে জানেন?

উহুঁ। আউট অফ টাচ কমপ্লিটলি। কবে কীভাবে যে ছাড়াছাড়িটা হল, সেটা অনেক ভেবেও মনে করতে পারলুম না।

 

পরদিন সকালে লালমোহনবাবু এসে ফেলুদার দিকে চেয়ে বললেন, আপনাকে একটু ডাউন বলে মনে হচ্ছে? বেকারত্ব ভাল লাগছে না বুঝি।

ফেলুদা মাথা নেড়ে বলল, নো স্যার, তা নয়, একটা ব্যাপারে কৌতুহল নিবৃত্তি হল না। বলে আসোয়াস্তি লাগছে।

কী ব্যাপার?

আর ব্যক্তিটির আসল পরিচয়। ইনি একটা হুমকি-টুমকি দিলে মন্দ হত না।

রটন, রাবিশ, রিডিকুলাস, বললেন জটায়ু। আর জাহান্নামে যাক। আপনি আপনার যা প্রাপ্য তা তো পাচ্ছেনই।

তা পাচ্ছি।

ফোনটা বেজে উঠল। আমিই ধরলাম। হ্যালো বলতে ওদিক থেকে কথা এল আমি শঙ্কর বলছি। আমি ফোনটা ফেলুদার হাতে চালান দিলাম।

বলুন স্যার!

উত্তরটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ফেলুদার কপালে গভীর খাঁজ পড়ল। তিন-চারটে হুঁ বলেই ফেলুদা ফোনটা রেখে দিয়ে বলল, সাংঘাতিক খবর। ডাঃ মুনসী খুন হয়েছেন, আর সেই সঙ্গে ডায়রিও উধাও।

বলেন কী! চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখে বললেন জটায়ু।

ভেবেছিলাম শেষ। আসলে এই সবে শুরু।

আমরা আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে লালমোহনবাবুর গাড়িতে বেরিয়ে পড়লাম। সুইনহো স্ট্রিটে পৌঁছে দেখি পুলিশ আগেই হাজির ইনস্পেক্টর সোম ফেলুদার চেনা, বললেন,মাঝ রাত্তিরে খুনটা হয়েছে, মাথার পিছন দিকে ভারী কিছু দিয়ে মেরেছে।

কে প্রথম জানাল?

ওঁর বেয়ারা। ভদ্রলোক ভোর ছটায় চা খেতেন। সেই সময়ই বেয়ারা ব্যাপারটা জানতে পারে। ডাঃ মুনসীর ছেলে বাড়ি ছিলেন না। পুলিশে খবর দেন ডাঃ মুনসীর সেক্রেটারি।

আপনাদের জেরা হয়ে গেছে?

তা হয়েছে, তবে আপনি নিজের মতো করুন না! আপনি যে আমাদের কাজে ব্যাঘাত করবেন। না সেটা আমি পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানি। আর চারটি তো প্ৰাণী, ভদ্রলোকের ছেলে, সেক্রেটারি, শ্যালক আর পেশেন্ট। অবিশ্যি মিসেস মুনসী আছেন। তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি এখনও।

আমরা তিনজন শঙ্করবাবুর সঙ্গে দোতলায় রওনা দিলাম। সিঁড়ি ওঠার সময় ভদ্রলোক একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললেন, অনেক কিছুই আশঙ্কা করছিলাম, কিন্তু এটা করিনি।

বাবার ঘরে পৌঁছে ফেলুদা বলল, আপনি যখন রয়েছেন তখন আপনাকে দিয়েই শুরু করি।

বেশ তো। কী জানতে চান বলুন।

 

আমরা সকলে বসলাম। চারিদিকে জন্তু জানোয়ারের ছাল, মাথা ইত্যাদি দেখে মনে হচ্ছিল, এতবড় শিকারি, আর এইভাবে তাঁর মৃত্যু হল!

ফেলুদা জেরা আরম্ভ করে দিল।

আপনার ঘর কি দোতলায়?

হ্যাঁ। আমারটা উত্তর প্রান্তে, বাবারটা দক্ষিণ প্রান্তে।

আপনি আজ সকালে বেরিয়েছিলেন?

হ্যাঁ।

কোথায়?

আমাদের ডাক্তারের ফোন খারাপ। উনি রোজ ভোরে লেকের ধারে হাঁটেন, তাই ওঁকে ধরতে গিয়েছিলাম। ক’দিন থেকেই মাথাটা ভার-ভার লাগছে। মনে হচ্ছিল প্রেশারটা বেড়েছে।

প্ৰেশার কি আপনার বাবা দেখে দিতে পারতেন না?

এটা বাবার আরেকটা পিকিউলারিটির উদাহরণ। উনি বলেই দিয়েছিলেন আমাদের বাড়ির সাধারণ চিকিৎসা উনি করবেন না। সেটা করেন। ডাঃ প্ৰণব কর।

আই সি.একটা কথা আপনাকে বলি শঙ্করবাবু, আপনি যে বলেছিলেন ডঃ মুনসী আপনার সম্বন্ধে উদাসীন, ডায়রি পড়ে। কিন্তু সেরকম মনে হয় না। ডায়রিতে অনেকবার আপনার উল্লেখ আছে!

ভেরি সারপ্রাইজিং!

আপনার ডায়রিটা পড়ার ইচ্ছে হয় না?

অত বড় হাতে লেখা ম্যানুসক্রিপ্ট পড়ার ধৈর্য আমার নেই।

এটা অবশ্য আশা করা যায় যে আপনার বিষয় যেটা সত্যি সেটাই উনি লিখেছেন।

বাবার দৃষ্টিতে যেটা সত্যি বলে মনে হয়েছে উনি লিখেছেন। সে দৃষ্টির সঙ্গে আর পাঁচজনের দৃষ্টি নাও মিলতে পারে। আমার বলার ইচ্ছে এই, যে বাবা আমাকে চিনলেন কী করে? তিনি তো সৰ্বক্ষণ ক্লাগি নিয়েই পড়ে থাকতেন।

আপনার বাবার মাসিক রোজগার কত ছিল সে সম্বন্ধে আপনার কোনও ধারণা আছে?

সঠিক নেই, তবে উনি যে ভাবে খরচ করতেন তাতে মনে হয় ত্রিশ-পঁয়ত্ৰিশ হাজার হওয়া

কিছু আশ্চর্য নয়।

উনি যে উইল করে গিয়েছিলেন সেটা আপনি জানেন?

না।

গত বছর পয়লা ডিসেম্বর। ঔর সঞ্চায়ের একটা অংশ ব্যবহার হবে মনোবিজ্ঞানের ऐछेझठिदकgछ।

আই সি।

আর, আপনার প্রতি উদাসীন হওয়া সত্ত্বেও আপনিও কিন্তু বাদ পড়েননি।

শঙ্করবাবু আবার বললেন, আই সি!

এই খুনের ব্যাপারে আপনি কোনও আলোকপাত করতে পারেন?

একেবারেই না। এটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত।

আর ডায়রিটা যে লোপাট হল?

সেইেটা ওই তিনজনের একজন লোক লাগিয়ে করাতে পারে। বাবার পেশেন্ট হিসাবে এরা এ বাড়িতে এসেছে। বাবা যে ঘরে রুগি দেখেন, তার পাশেই তো আপিস ঘর। সেখানেই থাকত বাবার লেখাটা।

আপনাদের সদর দরজা রাত্রে বন্ধ থাকে নিশ্চয়ই!

হ্যাঁ, তবে বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে জমাদার ওঠার জন্য একটা ঘোরানো সিঁড়ি আছে।

ঠিক আছে। থ্যাঙ্ক ইউ। আপনি এবার যদি সুখময়বাবুকে একটু পাঠিয়ে দিতে পারেন?

মিনিট খানেকের মধ্যেই সেক্রেটারি সুখময় চক্রবর্তী এসে হাজির হলেন। ভদ্রলোক আমাদের থেকে একটু দূরে একটা চেয়ারে বসতে ফেলুদা জেরা আরম্ভ করল।

আমি প্রথমেই জানতে চাই, পাণ্ডুলিপিটা যে চুরি হল, সেটা কি বাইরে পড়ে থাকত?

না। দেরাজে, তবে দেরাজে চাবি থাকত না। তার কারণ আমি বা ডাঃ মুনসী কেউই ভাবতে পারিনি যে সেটা এই ভাবে চুরি হতে পারে।

এটা যে আর দেরাজে নেই সেটা কখন কীভাবে জানলেন?

আজ থেকে ওটা টাইপ করা শুরু করব ভেবেছিলাম। সকালে গিয়ে দেরাজ খুলে দেখি সেটা নেই।

আই সি.আপনি ক’দিন হল ডাঃ মুনসীর সেক্রেটারির কাজ করছেন?

দশ বছর।

কাজটা পেলেন কী করে?

ডাঃ মুনসী কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন।

কী ধরনের কাজ করতে হত আপনাকে?

ওঁর অ্যাপয়েন্টমেন্টগুলো নোট করে রাখতাম, আর চিঠিগুলোর জবাব টাইপ করতাম।

চিঠি কি অনেক আসত?

তা মন্দ না। বিভিন্ন দেশের মনোবিজ্ঞান সংস্থা থেকে নিয়মিত চিঠি আসত। বাইরের কনফারেন্সে যোগ দিতে উনি দুবছর অন্তর একবার বিদেশে যেতেন।

আপনি বিয়ে করেননি?

না।

আত্মীয়স্বজন আর কে আছে?

ভাইবোন নেই। বাবা মারা গেছেন। আছেন। শুধু আমার বিধবা মা আর আমার এক বিধবা খুড়িমা।

এরা এক সঙ্গেই থাকেন?

হ্যাঁ।

আপনি এদের সঙ্গে থাকেন না?

আমি তো এ বাড়িতেই থাকি। ডাঃ মুনসী আমাকে একটা ঘর দেন একতলায়। প্রথম থেকেই এখানে আছি। মাঝে মাঝে গিয়ে বাড়ির খবর নিয়ে আসি।

বাড়ি কোথায়?

বেলতলা রোড ল্যান্সডাউনের মোড়ে।

আপনি এই খুন সম্পর্কে কোনও আলোকপাত করতে পারেন?

একেবারেই না। ডায়রি বেহাত হতে পারে হুমকি চিঠি থেকেই বোঝা যায়; কিন্তু খুনটা আমার কাছে একেবারে অর্থহীন বলে মনে হচ্ছে।

ডাঃ মুনসী বস হিসাবে কেমন লোক ছিলেন?

খুব ভাল। আমাকে তিনি অত্যন্ত স্নেহ করতেন, আমার কাজে সন্তুষ্ট ছিলেন, এবং ভাল মাইনে দিতেন।

আপনি কি জানেন ডাঃ মুনসীর বই বেরোলে তাঁর অবর্তমানে বইয়ের স্বত্বাধিকারী হতেন আপনি?

জানি। ডাঃ মুনসী আমাকে বলেছিলেন।

বই ছেপে বেরোলে তার কাটতি কেমন হবে বলে আপনার মনে হয়?

প্রকাশকদের ধারণা খুব ভাল হবে।

তার মানে মোটা রয়েলটি, তাই নয় কি?

আপনি কি ইঙ্গিত করছেন এই রয়েলটির লোভে আমি ডাঃ মুনসীকে খুন করেছি?

এখানে যে একটা জোরালো মোটিভের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে সেটা কি আপনি অস্বীকার করবেন?

আমার যেখানে টাকার অভাব নেই। সেখানে শুধু রয়েলটির লোভে আমি খুন করব, এটা কি খুব বিশ্বাসযোগ্য?

এর সঠিক উত্তর দিতে যতটা চিন্তার প্রয়োজন, তার সময় এখনও পাইনি। যাই হোক এখন আপনার ছুটি।

কাউকে পাঠিয়ে দেব কি?

আমি ডাঃ মুনসীর শালার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।

সুখময়বাবু চলে যাবার পর জটায়ু বললেন, আপনার কী মনে হচ্ছে বলুন তো, ডায়রি লোপাট আর খুনটা সেপারেট ইসু, না পরস্পরের সঙ্গে জড়িত?

আগে গাছে কাঁঠাল দেখি, তারপর তো গোঁফে তেল দেব।

বোঝে!

 

Exit mobile version