Site icon BnBoi.Com

কিচির মিচির – কমলকুমার মজুমদার

কিচির মিচির - কমলকুমার মজুমদার

আছে কিন্তু নেই

ধপাস করে মাথায় কি একটা এসে পড়ল। গড়িয়ে গায়ের কাছে। একটা কাপড় আর তুলোয় তৈরি নরম ভালুক। এটা একটা হাউসিং কমপ্লেক্স। সারসার রঙচটা ঢাঙা বাড়ি। খুপরি খুপরি ফ্ল্যাট। কোনটায় একটা বেডরুম, কানটায় দুটো। একটা সঙ্কীর্ণ রান্নাঘর। সিন্দুকের মতো বাথরুম। সামান্য একটু নড়বার চড়বার জায়গা। একটা বুলি বারান্দা। এইরকম সারি সারি। খাপে খোপে বিভিন্ন আয়ের, বিভিন্ন স্বভাবের, মেজাজের, চেহারার মানুষ। এই খাঁচায় দেহখাঁচাকে বন্দী করার জন্যে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। লটারি, মুরুব্বি, দালাল।

পুতুলটা হাতে নিয়ে ওপর দিকে তাকালুম। রোদোপোড়া তামাটে আকাশ। আকাশে হেলান দেওয়া ছোট্ট সুন্দর একটা মুখ। বালাপরা কচি একটা হাত বারান্দার রেলিং-এর ফাঁকে গলে ঝুলছে। ছোট্ট পায়ের অংশ। কচি কচি আঙুল নেড়ে পুতুলটাকে ডাকছে। তিনতলার বারান্দায় এক দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি। বুমকো ঝুমকো চুল। একটা চোখ দেখতে পাচ্ছি। খরগোশের মতো। পুতুলটার বদলে মেয়েটির পড়ে যাওয়াও আশ্চর্যের ছিল

সিঁড়ি দেখতে পাচ্ছি। পুতুলটাকে বুকে নিয়ে ওপরে উঠছি। প্রতি তলায় এপাশে একটা ফ্ল্যাট, ওপাশে একটা। সিঁড়ির ধাপ জায়গায় জায়গায় ভাঙা। কখনোই ঝাঁট পড়ে না। সিঁড়ির চওড়া হাতলে চাপ চাপ ময়লা।।ল ঝল করে বুলছে ইলেকট্রিক লাইন। হোন্ডারে বাল্ব নেই। রাত্তিরবেলা এই সিঁড়ি অন্ধকারে তলিয়ে থাকে। দরজায় রঙ নেই। কোথাও কোথাও নম প্লেট। আনজের খোসা, ডিমের খোলা, ছেড়া চটি, কি নেই আবর্জনার ঐশ্বর্যে!

তিনতলায় উঠে আন্দাজ করে নিলুম কোন ফ্ল্যাটটা হতে পারে। কলিংবেল আছে। দুচারবার টেপাটেপি করতেই ভেতর থেকে প্রশ্ন এল, কি?

মনে হল বলি, ভালুক। তা না বলে বললুম, দরজাটা খুলুন, আপনাদের বাচ্চার ভালুকটা নিচে পড়ে গিয়েছিল দিয়ে যাই।

দরজা খোলা যাবে না। বাড়িতে কেউ নেই। প্রশ্ন না বাড়িয়ে ভালুকটাকে দরজায় ঠেস দিয়ে রেখে নিচে নেমে। এলুম। ওপর দিকে তাকিয়ে দেখলুম, বাচ্চাটা বারান্দায় আর নেই।

এই হল স্যান্ডউইচ ফ্যামিলি! স্যান্ডউইচ কেন? ওই যে চলেছে। গুড়গুড়ে দুচাকায়, একটি কত্তা একটি গিন্নি। কত্তার মাথায় প্রতিরক্ষা কড়া, গিন্নির মাথায় গামলা। কত্তার নেয়াপাতি ভূড়িটি দুহাতে আঁকড়ে ধরে আছেন। কত্তার পিঠ আর গিন্নির পেটের মাঝখানে চেপ্টে আছে মাখনের মতো একটি বাচ্চা। হিউম্যান স্যান্ডউইচ। পথের চড়াই উতরাই, হোলিস অ্যান্ড পটহোলসের তোয়াক্কা না করে সোদপুরের ফ্যামিলি চলেছে। সল্টলেকে। দাদার কাছে মা থাকেন, গর্ভধারিনী, সুগার, গ্রকোমা,। আরথারাইটিস, অ্যামনিসিয়ার সমন্বয়ে এক গলগ্ৰহ। সাপের ছুঁচো গেলা। ফেলাও যায় না গেলাও যায় না। ডাক্তার দুঃসংবাদ দিয়ে গেছেন, মিস্টার বাগচী আনইউজুয়ালি স্ট্রং হার্ট, এইভাবে নাইনটি অবদি টেনে দিতে পারেন।

সে কি মশাই, যা হয় একটা কিছু ব্যবস্থা করুন, একটা রিলিফ।

ব্যবস্থা একটাই আছে, সেটা হল বড় রকমের একটা শক।

ফোর ফর্টি ভোল্ট?

ইলেকট্রিক শক নয়, মেন্টাল শক।

মেন্টাল শকের আর বাকি কি আছে। তিন ছেলে তিন দিকে। একজন আমেরিকায়, একজন কসবায়’। একজন সোদপুরে, আর এই সল্টলেক। প্রত্যাশা যাতে না বেড়ে যায়, তাই মিনিমাম ভোগ। মা বলে ডাকলেও পাকে প্রকারে বুঝিয়ে দিতে ছাড়ি না, তোমার স্ট্যাটাস কাজের মাসির চেয়ে বড় নয়। উঠতে বসতে দাঁত খিচুনি। সংসারের ব্যাপারে কিছু বলতে এলেই, হয় আমরা চুপ, না হয় দািবড়নি। আঁবার ইংরিজিও বলে দি, দ্যাটস নান অফ ইওর বিজনেস। পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হলেও ব্যবহারে চণ্ডাল। এর পরেও শক! আরো শক।

এর কোনোটাই শক্য নয়। এটা হ’ল কষ্ট। মাপেৰ চেয়ে ছোট জুতো পায়ে গলিয়ে হাঁটার মতো; কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু চলা বন্ধ হচ্ছে না। শক কীরকম জানেন, এই ধরুন, আপনি বড় ছেলে, হঠাৎ আজই মারা গেলেন, চেষ্টা করে। দেখতে পারেন, সেই আচমকা আঘাতে আপনার মা মরলে ও মরতে পারেন। এই একটা পথে আশfর আলো দেখা যাচ্ছে।

ধুর মশাই, নিজেই যদি মরে গেলুম, তাহলে আর হল কী!

কেন আপনার পরিবার সুখে থাকবেন। বুড়ি শাশুড়ীর উৎপাতে তিনিই তো সবচেয়ে বেশি বিব্রত!

কিন্তু, আমি মরে গেলে তার জীবনে আর রইলটা কী!

কেন ব্যাঙ্ক ব্যালেনস! বড়লোকের স্ত্রীদের তো স্বামী থাকে না।

কী থাকে?

প্ৰপাটি। বিষয় সম্পত্তি, কম্পানির কাগজ, ব্যাঙ্ক ব্যালেনস। গরিবদের স্ত্রী থাকে। দুজনে মিলে কষ্ট করে সুখ করে, টাকা জমিয়ে তীর্থে যায়, ঝগড়া করে, প্রেম করে, না খেয়ে ছেলেমেয়েদের খাওয়ায়। অন্যের দুঃখে চোখের জল ফেলে, শ্মশানে যায়। দুজনেই বুড়ো হতে হতে একদিন জুটি ভেঙে যায়। তখন যে থাকে, সে থেকেও থাকে না।

সেই গানের অর্থ এরাই বোঝে,

দো হনস কা জোড়া বিছাড় গিয়ো রে
গজব ভয়ো রামো জুলুম ভয়ো রে।

আপনাদের তো মশাই শেয়ানে শেয়ানে কোলাকুলি। আপনাদের যে হৃদয়, যেখানে অ্যাটাক হয়, বাইপাস হয়, ওটা বাংলা হৃদয় নয়, ইংরিজি হার্ট, একটা টুলুপাম্প, রক্ত তোলে, রক্ত নামায়। প্রেম প্রীতি, ভালবাসা, সহধর্মিতা, মর্মিতা; এইসব নিয়ে যে হৃদয়, সেটা আপনাদের নেই। চোখ আছে জল নেই, মন আছে মনন নেই, প্ৰাণ আছে চৈতন্য নেই, কান আছে শ্রবণ নেই, নাক আছে সুগন্ধ নেই, ত্বক আছে অনুভূতি নেই, ইন্দ্ৰিয় আছে সংযম নেই, হাত আছে সৎকর্ম নেই, পা আছে তীর্থভ্ৰমণ নেই, জিভা আছে মিষ্টি কথা নেই, শিক্ষা আছে জ্ঞান নেই, আত্মা আছে আত্মসমালোচনা নেই। জীবন আছে দর্শন নেই।

বড় বড় কথা! আপনি নিজে কী? তাহলে শুনুন। এলিয়ট সায়েবের দুচরণ কবিতা:

We are the hollow men
We are the stuffed men
Leaning together
Headpiece filled with straw. Alas!

কি জ্বালা

দমকা টাকায় বিমলবাবু বেসামাল। কোথা থেকে এল, কি ভাবে এল, সে রহস্যের সন্ধান না করাই ভাল। টাকা হল সালঙ্কারা, সুন্দরী রমণীর মতো। কার হাত ধরে গলায় মালা পরাবে কেউ বলতে পারবে না। ভদ্রলোক নিজেই রহস্যময়। অর্ধসমাপ্ত একতলা একটা বাড়ি কিনে নতুন পাড়ায় সংসার সাজালেন। সবাই ভেবেছিল, নতুন পাড়ায় যখন এসেছেন, তখন সকলের সঙ্গে যেচে আলাপ পরিচয় করে পাড়াভুক্ত হবেন। সে চেষ্টা করলেন না। কচ্ছপের মতো খোলেই ঢুকে রইলেন। দরজায় দরজায় গোটাচাকের কোলাপসিবল গেট। লাগিয়ে ফেললেন। বড় বড় তালা। বাইরে থেকে কেউ ঢুকতে চাইলে কেলেঙ্কারি কাণ্ড। তিন দরজা, তিন গেট, তিন তালা খুলে, আবার লাগাতে লাগাতে ফিরে যাওয়া। বাড়িটা যেন ব্যাঙ্কের লকার। পরিবারবর্গের সেফ ডিপজিট ভল্টে বসবাস। সবাই সিদ্ধান্ত করলেন, মানুষটার চোরফোবিয়া আছে। জগতটা চোরে থিকথিক করছে, এইরকমই হয়তো ভবেন।

আমার বেলুড় মঠে একবার নতুন জুতো চুরি হয়ে গিয়েছিল সেই ছাত্রজীবনে। সেই থেকে কেবলই মনে হয়, জুতো খুললেই চুরি হয়ে যাবে। কোনো ধর্মস্থানে গেলে জুতো খুলেই একটা কাঁধ ঝোলা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিশ্চিন্ত হই। ধর্মস্থানে একদল পরোপকারী মানুষ অবশ্যই থাকরেন। তাঁদের ব্রত হল, মানুষকে ত্যাগ শেখান। খালিপদ না হলে কালীপদ লাভ করা যায় না। এত সাবধান হওয়া সত্ত্বেও আরও দুবার আমার জুতো চুরি হয়েছিল। দুবারই ট্রেনে। চালাকের চেয়েও চালাক থাকে। দাদারও দাদা।

দূরপাল্লার যাত্রী। একেবারে আপারবাঙ্কে জুতসই। শুধু নই, জুতো সই। ফু বালিশের পাশে দুপাট শায়িত। জোড়া স্ত্রীর সঙ্গে যেন ফুলশয্যা! তার আগে বাথরুম ঘুরিয়ে এনেছি। ঘেন্না ঘেন্না করছিল। সংস্কারকে শাস্ত্ৰবাক্য শোনালুম-আতুরে নিয়মনাস্তি। কোলের ওপর কাগজ ফেলে শুকতলা মার্কা লুচি আর শুকনো আলুর দাম দিয়ে ডিনার শেষ করে, আগাথা কিস্টি নিয়ে শুয়ে পড়লুম। ট্রেন জোর ছুটিছে টাল খেতে খেতে। সন্ধানী চোখে সরেজমিন করে সন্দেহজনক ছিচকে টাইপের কোনো যাত্রী খুঁজে পেলুম না। নাকের ডগায় রেলগাড়ির ছাত। ডানপাশে ঝুলকালো পাখা। ‘লফটে তুলে রাখা ট্র্যাঙ্কের মতো লাগছিল আমার।

 

হারকিউল পয়েরোর কীর্তিকাহিনী পড়তে পড়তে নিদ্রা গেলুম। ভোরে ঘুম ভাঙল। ভুলও ভাঙল। জুতো জোড়া হাওয়া। হরিদ্বারে ট্রেন থেকে নগ্নপদে অবতরণ। লোকে হোটেলে যায়, আমি গেলুম জুতোর দোকানে। শিক্ষাটা হল। জুতো যেন জীবন। যখন যাবার তখন যাবেই। কারো বাপের ক্ষমতা নেই ধরে রাখে।

 

এর পরের বারে আরো একটু বুদ্ধিমান হয়ে, চোদ্দ ফুটো জুতোর ফিতে বেঁধে শুয়ে পড়লুম। সেই অপার বার্থ। চোদ্দ ফুটো মানে নয়া জমানার জুতো। খুলতে পরতে পা ঢোকাতে পাক্কা আধঘণ্টা। বুদ্ধি করে মাথাটাকে ফেলেছি প্যাসেঞ্জার দিকে আর পা দুটো জানলার দিকে। ট্রেন চলেছে। সিডনি শেলডন পড়ছি। মাথার সামনে দিয়ে লোক যাচ্ছে আসছে। কত রকমের ক্যারিকেচার। ট্রেন মানেই শক, তুন দল, পাঠান, মোগল, এক দেহে হল। লীন। কেউ খায়, মুডুকু তো কেউ বাটাটা পুরি। কেউ পূব বঙাইল বলে তো কেউ ইল্লে কুঁড়। মাঝ ব্যাঙ্কে সটান ছফুট সর্দারাজি লোয়ার বার্থে ফ্ল্যাট সাড়ে ছফুট সর্দারনীকে তাল ঠুকছে আরে তোড় দেন। ট্রেনের দৃকপাত নেই। দমকল, বোমকল করতে করতে স্টেশানে ঠেক খেতে খেতে চলছে তো চলছেই। সাড়ে সাত পকেট অলা টিটির কষে ব্যবসা করছে। গবা মার্কা লোকদের উৎপাটিত করে হাওলামার্কাদের সুখশয্যার ব্যবস্থা। পকেট পুরুষ্ট হচ্ছে। আহা! ওদের ছেলেরা যেন থাকে দুদে ভাতে। বোতল বোতল যেন পড়ে মোর পেটে। পেট নয় তো ধামা ওদিকে বন্দুকধারী মামা। রাত যত বাড়ে পাপ ও তত বাড়ে।

সকালে উঠে দেখি রাত ফর্সা, পায়ের জুতো জোড়াও ফর্সা।

আমার সহযাত্রী ছিলেন একালের এক বিখ্যাত গায়ক। অফুরন্ত পুরাতনী গানের বিস্ময়কর ভাণ্ডারী। এক ডাকে চিনবেন সবাই। দিলদার রসিকজন ৷ প্ৰকৃত এক বাঙালি। তিনি গান ধরলেন, আর ঘুমাও না মন। মায়া-ঘোরে কতদিন রবে অচেতন।| কে তুমি কি হেতু এলে, আপনারে ভুলে গেলে, চাহরে নয়ন মেলে, ত্যাগ কুস্বপন। রয়েছে অনিত্য ধ্যানে। নিত্যানন্দ হের প্রাণে তম পরিহরি হের তরুণ-তপন। জুতোর শোক ভুলে প্রকৃতই তরুণ-তপন হেরিলাম। পুব আকাশে। পাহাড়ের মাথায়। একটা নীল জঙ্গল উলটো দিকে পালাচ্ছে। ট্রেনের ভ্ৰমণ-ক্লান্ত, রাতিজাগা মানুষগুলোকে মনে হচ্ছে বাসী আলুর দম। চোর, সাধু, উদার, কৃতদার, বৃকোদর সবাই সেই উদ্ভাসিত আলোয় গতিতে গতিহীন। শুয়ে বসে ছুটছে।

সাত্ত্বিক চেহারার এক প্ৰবীণা পাশের খাঁচা থেকে পাগলপারা হয়ে ছুটে এলেন। আবেগ চাপিতে পারছেন না। ঠেলোঁঠুলে বসে পড়ে বললেন, ‘গোপাল আমার, এতদিন কোন বৃন্দাবনে লুকিয়ে ছিলে?’ হেভিওয়েট বক্সারের মতো হেভিওয়েট গোপাল। গোপালের অবশ্য অনেক রূপ, নাড়গোপাল থেকে বুড়োগোপাল। প্ৰবীণা পরম বৈষ্ণব। ফার্স গলায় গোটা গোটা তুলসীর মালা। শরীরের লালিত্য দেখলেই মনে হয় স্রেফ মালপো, ক্ষীরপো আর পুস্প্যান্নের ওপর আছেন। মনে হয় বৃন্দাবনেই চলেছেন।

প্ৰবীণা একটি পঞ্চাশ টাকার নোট কোলে ফেলে দিয়ে বললেন, ‘গোপাল আমার লজেঞ্চুস খেয়ো। আর একটি ধরে দিকি। এই মুখপোড়া ট্রেনে একটাও কি ভাল কথা আছে।’

প্ৰবীণা অতি সরল। জানেন না, কার সঙ্গে কথা কইছেন, যাঁর এক আসরের প্রণামী দশ, বারো হাজার। তবে ট্রেনে তো কিছুই করার নেই। তাই বোধহয় গান ধরলেন,

আমি প্রেমের ভিখারি।
কে প্ৰেম বিলায় এ নদীয়ায় ৷

প্ৰবীণা আবেগে ফেঁসে ফোঁস করছেন, আর আমি করছি রাগ। সাড়ে পাঁচশো পা থেকে খুলে নিয়ে গেছে। পথিবী কি টেরিফিক জায়গা!

শ্রীচৈতন্য, শ্ৰীঅচৈতন্য, সব এক ঠাঁয়ে কেলাকুলি। পকেট আর পকেটমার পাশাপাশি।

গানান্তে দুভাঁড় প্লাটফর্ম চা পান করে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে সঙ্গীতগুরু জুতো প্রসঙ্গে ফিরলেন। জানলার ধারে গম্ভীর চেহারার এক ভদ্রলোক বেপরোয়া কলা খেয়ে চলেছেন। আর একটা হলেই ডজন কমপ্লিট। গতিশীল হলে অনেকের ক্ষিদে বাড়ে।

সঙ্গীতগুরু বললেন, ‘ওই জন্যেই চটি পরাই ভালো। এই যে আমার পায়ে চটি, এটা আমার কি না, বুকঠুকে বলতে পারব না। অনেক আসরই আমাকে মারতে হয়। ডায়াস থেকে নেমে এসে যেটা সামনে পাই সেইটাই গলিয়ে চলে আসি। সেই কারণে আজ আমার পায়ে নতুন জুতো, তো কাল পুরনো। কোনোদিন আধা ইঞ্চি বড়, তো কোনদিন আধা ইঞ্চি ছোট। আমার ধারণা, প্রায় সবাই অন্যের জুতোয় পা গলাবার চেষ্টা করছে।’

শেষ কলাটি সাঙ্গ করে জানলার ধারের গম্ভীর ভদ্রলোক বললেন, দার্শনিকের কথাই বললেন, ‘অন্যের জুতোয় পা ফিট করতে করতেই জীবন ফোত হয়ে গেল। আপনি কি গায়ক?’

—’সেই রকম একটা পরিচিতি কলকাতায় আমার আছে। আপনার?’

—’উত্তর ভারতে আমাকে সবাই তবলিয়াই জানে। রোজ সকালে আড়াই ঘণ্টা কুস্তি করি। আর সারারাত তবলা পিটি। পৃথিবীর সব তালই আমার জানা। এখন সব ঝাঁপতালে চলছে। আড়াঠেকা খুব পপুলার। আর সংসারে আধাধা। সব কিছুই আধ্‌ধা। যাক, জুতোটা ছাড়ুন, টয়লেটে যাব।’

শিল্পী অবাক-’তার মানে?’

—মানে এই, যে জোড়ায় পা চালিয়ে বসে আছেন সেটা আমার, আর আপনারটা আমার পায়ে। আপনারটা পাঞ্জায় ছোট, আমারটা বড়।

 

জুতোর যন্ত্রণা শেষ হল। জুতাতঙ্কের মতো বিমলবাবুর ডাকাতাতঙ্ক। যথেষ্ট থাকার এই বিপদ। একতলা তিনতলা হয়ে টাওয়ার হাউস। এক কাঠায় পাশে বাড়া যাবে না বলেই আকাশে ফলাও। গ্রিল আর কোলাপসিবলের খাঁচা।। ঘরে ঘরে দামী আসবাবের গতৌগতি। বেশ খোলা মনে উদার হয়ে হাঁটতে গেলে পায়ের বুড়ো আঙুলের নখের মাথা উলটে যাবে। যেন গাড়ির বনেট খুলে গেল। যেটুকু আলো আসার উপায় ছিল দামী পর্দার দাপটে বাইরেই পড়ে রইল। জিভ দিয়ে পর্দা, চোটে পশ্চিমে ফিরে যায়।

পয়সার সঙ্গে আর যা যা আসা উচিত সবই এসে গেছে। দামড়া” এক অ্যালসেশিয়ান। ছেড়ে রাখার উপায় নেই। সে একবার পাশ ফিরলে সব উলটে পড়ে যায়! লেজ নেড়ে আহ্বাদ প্রকাশ করার খরচ, চার, পাঁচ, হাজার। গণেশ গেল গেল, ভি সি আর চিৎপাত, কালার টিভি খিল খুলে ভূপতিত।

বাইরে চল্লিশ। দগ্ধ দীপ্ৰ দিন। অন্দরে একই সঙ্গে চেনে বাঁধা কুকুরের চিৎকার, পাম্পের গর্জন আর চারশো আশির পাওয়ার হাউসে বিটের শব্দ, ধাম ধাম, রান্নাঘরে শুকনো লঙ্কার ফোড়ন, কোণের ঘরে টিভির। উদ্বেগ, অটল অটলই থাকবেন, না। টলে যাবেন।

আর পরিবারের নিঃসঙ্গ বদ্ধটি ছাতে সামান্য একটু ছায়ার আশ্রয়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছেন। পাওয়ার হাউসের শব্দে বাড়ি কাঁপছে। গৃহাশ্ৰিত বেড়ালটির তিনটি বাচ্চা হয়েছে। চোখ ফোটেনি, চুকুর চুকুর স্তন চুষছে।

ফালি ফালি তালি তালি

বড় ম্যানেজ করা গেল না বলে, কেটে ছেটে মাপে নিয়ে আসা হল। থিঙ্ক বিগ, বইয়ের উপদেশে মজুত থাক, যেমন আছে, যেমন থাকবে চিরকাল। মানবের বৃহৎভাবনা সমূহ। বাস্তবের কথা হল, থিঙ্ক ম্যানেজেবল স্মল। ছোট করে নাও। ভেতরে অন্তত বাইরে ডোবা সেই ডোবায় কোলা ব্যাঙ, গ্যাঙের গ্যাং।

বড় পরিবার ইতিহাস। একান্নবর্তী চকমেলান বাড়ি। হাওদা হাওদা ঘর, দালান, উঠোন, বড়, মেজ, সেজ, ছোট, ন, রাঙা, ফুল, কত্তায় কত্তায় ক্ল্যাশ, বউদের খিল খিল গুলতানি, ডজনখানেক বাচ্চার কিচির মিচির। ছাতের আলসেতে সপাটে ঝুলন্ত গোটা চোদ্দ রংবাহারি শাড়ি, যেন ইন্টারন্যাশানাল অলিম্পিক ভিলেজ। লিঙ্গরখানার মতো রান্নাঘরে সার সার গনগনে হাওদা উনুন, মন মন কয়লা, পাহাড়ের মতো ছাইগাদা, তার ওপর ল্যাজমোটা থুপসি তুলো মৎস্যচিন্তায় ধ্যানস্থ। পরিবারের প্রিয়। আদুরে নাম জর্দা, কারণ মেজকত্তা তাকে কিলাপাতি জর্দার মৌজ ধরিয়েছেন। একটা রামপুরিয়া কুকুর আছে ছানাপোনা-সহ। সে ভিজে আলোচাল মশ মশ করে খায়।

পাকা পেয়ারার মতো ঠাকুরদা সাদা। ফতুয়া পরে বাইরের ঘরে ঢালাও ফরাসে বসে বয়স্যদের সঙ্গে শিয়াখালার আমবাগানে ল্যাংড়া আমের গল্প করছেন। অ্যাটি কেমন পাতলা, না তাঁর গিন্নির যৌবনকালের নাকের মতো যেখানে তিলফুলের মতো জ্বলজ্বল করত হীরের নাকছবি। গাত্রবর্ণ দুধে আলতা বললে সবটা বলা হল না, তার সঙ্গে আর একটি বিশেষণ যোগ করতে হবে, সে-রেসেন্ট। বিশাল ময়ুরপঙ্খী খাটের ঠিক কোন জায়গাটায় আছেন তিনি, রাতের অন্ধকারে কী ভাবে লোকেট করা যাবে?

বয়স্যদের সঙ্গে বৃদ্ধিকালে রসের কথা আসতেই পারে। আমি অতি রসাল, গৃহিণী ততোধিক। নাবিক লাইট হাউসের আলোর নিশানায় জাহাজ কুলে ভেড়ায়, ঠিক সেইরকম। নাকছবির হীরে ঝিলিক মারছে, গোড়ালির দ্যুতি, আঙুলের বিজলি, ওই তো আমার বন্দর।।

সন্ধের সামান্য পরে মটরদানার মতো এক গুলি আফিং, এক গেলাস মালাই, দত্তবাগানের কাঁঠাল, শেওড়াফুলির হিমসাগর, ফুসকো লুচি, অঢেল কম্পানির কাগজ, কচি কচি শেয়ার, জোড়া দীঘি, কালবৌশ মৎস্য, প্রতিষ্ঠিত, সুভদ্র সব ছেলেরা, দুৰ্গা ও লক্ষ্মী প্রতিমার মতো সব বউরা, সম্পন্ন সব জামাতারা, সবুজ সবুজ চারাগাছের মতো সব নাতি নাতনিরা। ধানের ক্ষেতে সবুজ ঢেউ,গাছের ডালে দোয়েলের শিস, দালানে জোড়া জোড়া আলতা, রাঙা পা, সুগঠিত নিতম্বে ডুরে শাড়ির সৌভাগ্য বাহার। বৈষ্ণবের খঞ্জনি, গোয়ালে তৃপ্ত গরুর হাম্বারব। দেয়ালে পূর্বপুরুষের সাত্ত্বিক ছবি। আসনে বসে জপের মালা ঘোরাচ্ছেন। স্লাইড ক্যামেরায় সেকালের ফটোগ্রাফার কালো কাপড়ে মাথা ঢেকে সিদ্ধ হস্তে সিদ্ধ মানবের ছবিটি উচিত মুহুর্তে ধরেছেন। ভগবান শ্ৰীরামকৃষ্ণের বয়ানে, এঁরা সব জনক রাজা, এদিক ওদিক দুদিক রেখে খেয়েছিলেন দুধের বাটি।

এই সংসারটিকে স্নেহের বাঁধনে ধরে রেখেছেন বৃদ্ধ শ্বশুমাতা, যেমন চিনির পাকে ধরা থাকে বোঁদের দানা। পচাত্তর বছরেও দেহের বাঁধন আলগা হয়নি। সিঁথিতে টকটকে সিঁদুর। কপালে যেন সূর্য উঠেছে। জাফরানের মতো গায়ের রঙ। চামরের মতো চুল। দুচোখে হাসির আলো। বড় ছেলে দুছেলের বাপ এখনো মায়ের কোলে মাথা রেখে ছেলেবেলার গল্প শোনে; বউরা সব বুড়ির কথায় ওঠবোস করে। গলায় আঁচল দিয়ে ঘিরে বসে জয়-মঙ্গলবারের খিলি খায়। সুবচনীর খোঁড়া হাঁসের উপাখ্যান শোনে। কখনো কখনো গায়ে পড়ে খুনসুটি করে, বলো না মা, তোমার বিয়েতে কী কী হয়েছিল। তোমার শ্বশুরমশাই কেমন করে অভিনয় করতেন বিম্বমঙ্গল পালায়। দস্যু রত্নাকর সাজলে কেমন দেখাত। ছোট বউ সন্তানসম্ভবা, তার জন্যে নিজে বসেছেন আচার তৈরি করতে। রান্নাঘরে টুলে বসে বাউদের শেখাচ্ছেন পায়েসের পাক। সকালে ছেলেরা লাইন দিয়ে প্ৰণাম করে যাচ্ছে। জনীর আশীর্বাদ। কোথাও কোনো বিদ্রোহ নেই। কোন মনেই উকি মারে না কোনোদিন ক্ষুদ্র কুচোটে মন। বড় বউ সকলের বড়দি, মেজ বউ মেজদি। মায়ের পরেই বড়দি অভিভাবিক। সকলের ফ্রেন্ড, ফিলজফার অ্যান্ড গাইড। সব ব্যাপারেই সতর্ক নজর। মেজ তোর বাচ্চাটা সকাল থেকেই আজ আমন খ্যাত খ্যাত করছে কেন রে!” ছুটলেন পরীক্ষা করতে। পেট ফোঁপেছে, ক্ৰিমি হয়েছে, নিয়ে আয় কালমেঘের বড়ি। সেজর বড় মেয়েটার গায়ে গত্তি লাগছে না কেন! খাচ্ছে-দাচ্ছে যাচ্ছে কোথায়। চলো সবাই, পাঁচু ঠাকুরের কাছে ঝাড়িয়ে আনি, নজর লেগেছে। দুর্গাপূজার মণ্ডপে দশমীর সন্ধ্যায় মা আর বউদের পরস্পর পরস্পরকে মুঠো মুঠো সিঁদুর দান। দেবীর মুখে প্ৰসন্ন হাসি, নিবুচ্চারে যেন বলছেন, মা সারদা! এইটাই ঠিক পথ। ত্যাগের ওপর দাঁড়িয়ে ভোগ করো। গ্ৰহণেই সুখ, বর্জনে নয়। জ্যান্ত উপনিষদ হয়ে থাকো মা, যেখানে বলা হয়েছে,

ঈশা বা সমিদং সৰ্ব্বং যৎ কিণাঃ জগত্যাং জগৎ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জ থা মা গৃধঃ কস্যা স্বিদ্ধনম।।

সব অনিত্য বস্তুই পরমেশ্বরের মা। ত্যাগের মনোভাব নিয়ে পালন করে। ধনের আকাঙ্ক্ষা এনে না। ঐশ্বৰ্য্য কার মা!

রাত্তিরবেলা বৃদ্ধার খাটে জ্যান্ত গোপালের দল। সবকটা নাতি নাতনি ঘিরে ধরেছে। একটা দুষ্ট পিঠে দোল খাচ্ছে, কচিকচি হাতে আম্মার গলা জড়িয়ে ধরে। আর একটা কোলে গড়াচ্ছে আলুর পুতুলের মতো। যে কথা মাথা ঝাড়া দিয়েছে, তারা বড়বড়, গোল গোল চোখে নীলকমল লালকমলের গল্প শুনছে। আম্মা দৈত্য হয়ে নাকি সুরে হাঁউমাঁউখাঁউ করছেন। অন্ধকারে রূপকথার অরণ্য যেন বাড়ির চৌহদ্দিতে চলে এসেছে। জোনকির ফুলকি গাছের ডালে দোল খাচ্ছে। আকাশে সহস্ৰ তারার নৈশ সভা। দৈত্যের শিং-এর মতো পশ্চিমে ফালি চাঁদ। প্রান্তরের মাটিতে সুখের গন্ধ। আমগাছ বোল ধরাতে ব্যস্ত। বাতাবির ফুল মসৃণ ফল হওয়ার সাধনায় মগ্ন। কটাস পাখি সিন্দুকের তালা খুলছে। জোড়া দীঘিতে বৃহৎ কালবৌশটি অকারণে উৎফুল্ল হয়ে বিশাল এক ঘাই মেরে চলে যাচ্ছে অস্ত্ৰ তলশয্যায়। তার নাকে নোলক পরান হয়েছিল ছোট বউ যেদিন শান্তিপুর থেকে বউ হয়ে এল এ বাড়িতে। লাল বেনারসির ঘোমটায় রাঙা মুখখানি। কালো চুলে ভরা মাথায় সাদা শোলার মুকুট।

এই দিদা, এই আম্মাদের মতো সুন্দর, স্নিগ্ধ টিভি আর কি হতে পারে। কথায় ছবি এঁকে শিশুমনকে যে কল্পলোকে পাঠাতেন, সেখানে অরণ্যে মানুষে, জীব ও জীবনে নিবিড় সম্পর্ক। সেখানে চাঁদের স্নিগ্ধ আলোকে চিরকালের এক বুড়ী চরকায় স্বপ্নের সুতো কাটে। কানখাড়া খরগোস সামনে বসে সেই দৃশ্য দেখে। সেখানে একটি ডালে সাতটি ফুল ফুটে থাকে সাত ভাই চম্পা হয়ে। বীর রাজপুত্র পক্ষীরাজে চড়ে দৈত্য আর রাক্ষসীদের অ্যালয় থেকে উদ্ধার করে আনে রাজকুমারীকে। সেখানে শেয়াল পণ্ডিতের সঙ্গে কথা বলে কুমির ভায়া। হাঁস পাড়ে সোনার ডিম। রাত্রির মধ্যযামে দুধসাদা পরীরা হুস হুস করে আকাশ থেকে নেমে এসে বনের প্রান্তে নাচে গায়। আকাশে আলোর ফাটল ধরা মাত্র উড়ে যায় পূর্ব দিগন্তে ৷ ঘাসের ওপর কোনো কোনো দিন পড়েও থাকতে পারে তাদের কারো একজনের সূক্ষ্ম ওড়না। সেখানে বোয়ালমাছে না টেনে নিয়ে যায়, আর ছিপ নিয়ে যায় চিলে।

এই টিভিতে রেপ ছিল না, খুন ছিল না, অঙ্গ দেখিয়ে নাচ ছিল না, স্যাডিজম ছিল না, পেডোফাইল ছিল না। ঘরভাঙা, সংসার ভাঙা, সমাজ ভাঙার নিয়ত দৃশ্য ছিল না। মানুষ মানুষের দিকে যে হাত বাড়াত সে হাত বন্ধুর হাত, খুনীর হাত নয়। প্রেমে ছিল পূর্ণতা, একালের বণ্টনা নয়। চরিত্ররা সব আদর্শের পতাকা তুলে ঘুরে বেড়াত, একালের সুবিধেবাদীর ঝাণ্ডা নয়। ছোটরা বড় হবে। বড় হয়ে ছোটদের বড় করার জন্যে আদশ সংসার রচনা করবে। সানাই বাজিয়ে বিয়ে করে, আদালতে গিয়ে তাল ঠুকবে না। বাতাবির নিটোল পরিবার, ফাটা বেল নয়। ভাঙা পরিবারের মশলায় তৈরি হবে না। হিট মেগা কমাশিয়াল।

রবীন্দ্ৰনাথ থেকে ধার করা যাক কয়েকটি লাইন :

সৃষ্টির সেই প্রথম পরম বাণী : ‘মাতা, দ্বার খোলো!’
দ্বার খুলে গেল।
মা বসে আছেন তৃণশয্যায়, কোলে তাঁর শিশু।
উষার কোলে যেন শুকতারা।
দ্বারপ্রান্তে প্রতীক্ষাপরায়ণ সূর্যরশ্মি শিশুর মাথায় এসে পড়ল।
কবি দিল আপনি বীণার তারে ঝংকার, গান উঠল আকাশে
‘জয় হোক মানুষের ওই নবজাতকের, ওই চিরজীবিতের!’

বিশ্বাসযোগ্য মানুষ, বিশ্বাসযোগ্য পিতা মাতার বড়ই অভাব। একালে সবাই কমরেড। কণ্ঠে কণ্ঠে লড়াইয়ের রণদামামা।

অতীত বিসর্জনের বাজনা বাজিয়ে চলে গেল। পড়ে রইল। খড়ের পুতুল। পদ্মপুকুরে আবর্জনা। ভরাট করে বাসা বাঁধবে তৎক্ষণিকের দল! যৌথ জীবনসাধনায় স্বার্থের দানব। পরিবার ছেড়া কাপড়ের ফালি। প্রোমেটারের মেশিন কর্কশ শব্দে অশান্তির মসলা মাখিছে।

বহুতলের খুপরিতে খুপরিতে মানুষ চড়াইয়ের বাসা। দিবস রজনী অবিরল কিচির মিচির। সুখে আছ ভাইসব? উত্তরে শব্দ নেই, গলকম্বল ঠেলে উঠল। মুখের হাসিতে বোধের নির্বোধ ভাঁজ।

Exit mobile version