Site icon BnBoi.Com

গোলাপ ফোটে খুকির হাতে – শামসুর রাহমান

গোলাপ ফোটে খুকির হাতে - শামসুর রাহমান

আয় ঘুমানি

আয় ঘুমানি আয়,
পড়িরে তোর পায়।
আয় ঘুমানি আয়,
খুকির চোখে আয়।
আয় ঘুমানি আয়,
পক্ষী উড়ে যায়,
ঝুরঝুরানি ছায়া
দিল খুকির গায়।
নদীর পানি ফুরফুরানি;
লাগছে দোলা নায়।
আয় ঘুমানি আয়,
স্বপ্ন নিয়ে আয়।

ইল্লি ইল্লি

ইল্লি ইল্লি ইল্লি-
কেমন তুমি বিল্লি?
অষ্টপ্রহর করছ কেন
এমন চেল্লাচিল্লি?
চুন-সুপুরি দিয়ে তুমি
পান খাবে তিন খিল্লি?
চুন-সুপুরি মেলে নাকো,
ইল্লি, ইল্লি,ইল্লি।
আর কটা দিন সবুর করো
হয়ে যাবে হিল্লি।

উকুনে বুড়ি

বক সাতদিন রইল উপোস,
ফেনিয়ে গেল জল কি?
হেঁই উকুনে বুড়ি তোমার
হাতে ওটা ফল কি?
ফল খেয়েছে চালতা বাদুড়
গিলছ ব’সে গুড় কি?
উকুনগুলি হচ্ছে বুঝি
উড়কি ধানের মুড়কি।
বকের উপোস ভাঙবে ব’লে
ধরলে নাকি সুর কি?

এই শহরে

এই শহরে সাতসকালে
হঠাৎ কী-যে হ’ল,
ফুটপাতেরই বুকে প’ড়ে
মাছরাঙাটা ম’ল!
কেন যে হায় মাছরাঙাটা
এত্ত দূরে এল?
নদীর মায়া ছেড়ে এসে
এখানে কী পেল!
শহর রাঙা আরেক নদী,
হয়তো ভেবেছিল।
পাথুরে এই শহর-গাঙে
এভাবে ডুব দিল।

একটি ঘোড়া

গলিতেই থাকে আমার সাধের ঘোড়া,
আছে চঞ্চল ডানা তার এক জোড়া।
লেজখানা দামি মুক্তো মানিকে মোড়া,
যেন জ্বলজ্বলে ফুলের একটি তোড়া।

আছে তার জানি খেয়াল-খুশিতে ওড়া,
চালাতে কখনো লাগে নাকো কোনো কোড়া।
যখন-তখন সেই কবেকার ঘোড়া
গলিকে বানায় রূপকথা আগাগোড়া।

কলতলাতে

কলতলাতে ভিড় জমেছে
পানি হবে আনতে।
কিউ দিয়েছে কলসিগুলো
নোংরা গলির প্রান্তে।

কলের বাঁশি

খক খক খক রোজ শোনা যায়
মোটরগাড়ির কাশি।
ভোর না হতেই বেজে ওঠে
অবুঝ কলের বাঁশি।

কাক ডাকে

ভাঙা একটা দেয়ালে
কী জানি কী খেয়ালে
বসল এসে কাক।
ক্ষুধায় কাতর ছিল সে,
হঠাৎ তাড়া দিল কে?
মৌমাছিরই ঝাঁক?
মৌমাছি তুই উড়ে যা,
ভাঙা দেয়াল ঘুরে যা,
কাকটা বসে থাক।
সারা দুপুর কাঁপিয়ে
শহরটাকে ছাপিয়ে
উঠছে কাকের ডাক।

গোলাপ ফোটে

আস্তে আস্তে রাত্রি কাটে,
খুকি ঘুমায় সোনার খাটে।
ঘুমো খুকি নিঝুম ঘুমো,
তোমার চুলে মেঘের চুমো।
হঠাৎ দেখি দুপুররাতে
গোলাপ ফোটে খুকির হাতে।

 ঘণ্টা বাজে

ঘণ্টা বাজে, ঘণ্টা বাজে,
সোনার ঘণ্টা অই।
এমন সময় আমার আপন
খোকন সোনা কই?
খোকার কথা ভেবে রাতে
জোনাকজ্বলা মাঠের দিকে
একলা চেয়ে রই।
কোথায় গেল ঘোড়ায় চ’ড়ে?
এইতো পাতে আছে প’ড়ে
বিন্নি ধানের খই।

ঘোড়ার গাড়ি

ঘরের কাছে ঘোড়ার গাড়ি
কোথায় যাবে কে?
মেঘের পাড়ায় ধুম লেগেছে,
আজকে চাঁদের বে’।
বাজনা বাজায় হুতোম প্যাঁচা
লোহা-লক্কড় দে’,
টোপর নিয়ে ঘোড়ার গাড়ি
মেঘে উড়েছে।

তামার চাঁদ

কলের কালোয় ময়লা-আকাশ
কালো ধোঁয়ার ফাঁদ।
ধোঁয়ার ফাঁকে ঝলসে ওঠে
হঠাৎ তামার চাঁদ।

 থামরে বৃষ্টি

থামরে বৃষ্টি থাম,
দোহাই তোদের থাম।
টুকটুকে লাল লংকা দেব,
দেব চিড়ের দাম।
থামরে বৃষ্টি থাম,
দোহাই তোদের থাম।
শোনরে বৃষ্টি শোন
কান্না তোদের বোন।
ঘর ভাসালি, দোর ভাসালি,
আনলি দেশে বান,
চাষির চোখে জল নামালি,
নিলি সোনার ধান।
শোনরে বৃষ্টি শোন,
কান্না তোদের বোন!

দুই বীর

দু’জন লোকের সঙ্গে হঠাৎ
দেখা হ’ল কাল।
মস্ত বীরের মতোই ওহো
ওদের চলার তাল।
একজন খুব মশা মেরে
যশ কিনেছেন, যশ।
তাঁর দাপটে পাড়ার সবাই
বশ মেনেছেন, বশ।
এবার শোনো, অন্যজনা
তার চেয়ে কী কম?
মশার শক্র উনি, ইনি
ছারপোকারই যম!

ফুল

পোড়াবাড়ির দেয়াল ফুঁড়ে
ফুটল হলুদ ফুল।
হঠাৎ ভাবি, ফুল তো ওটা,
নাকি চোখের ভুল!

বাঘ

এক যে ছিল মস্ত বড় বাঘ,
তার শরীরে চাকা চাকা দাগ।
বলল হেঁকে, “ভাগরে তোরা ভাগ,
জানিস নাকি আমার ভীষণ রাগ”।

হাঁক শুনে তার পাড়ার সবাই ডরে
জলদি ক’রে খিল তুলে দেয় ঘরে।
ভয়ে গা’টা কাঁপছে যেন জ্বরে,
বাঘের ডাকে উঠছে শহর ন’ড়ে।

কিন্তু খোকন ভয় পায় না মোটে,
তাই বুঝি সে পথের মোড়ে ছোটে,
বাঘকে দেখে খোকন বলে, “দাঁড়া
দেখাচ্ছিরে মজা হতচ্ছাড়া”।

শব্দ শুনে ভড়কে গেল বাঘ,
এক নিমেষে উধাও হ’ল রাগ
ওমা একী, নেইকো নড়াচড়া,
বাঘ যে দেখি কাগজ দিয়ে গড়া!

বাদুড় বাদুড়

বাদুড় বাদুড় চৈতা,
কোন ডালেতে বইতা?
আদুর আদুর গায়ে
কারে কিতা কইতা?
বনবাদাড়ে তুমি
চক্ষু মুইদ্যা রইতা
অইলে বিহান তাজা
পরতা রইদের পৈতা।

ময়লা গলি

ময়লা গলির পয়লা বাড়ির
আজব বটে ছাদ।
সেখানে এক বুড়ো থাকেন
বাঁকা যে তার কাঁধ।
ডাকলে কুঁকড়ো বুড়োর ঠোঁটে
ভাঙে হাসির বাঁধ,
ডিগবাজি খান উঠলে হঠাৎ
গলির মাথায় চাঁদ।

স্বপ্ন-কুড়ানি

রাতবিরেতে একলা হাঁটে,
ঘোরে সে বন-বাদাড়ে।
কী-যে কুড়োয় যখন-তখন
কুচকুকে ঘোর আঁধারে।
আজগুবি তার কথা, কাঁথা,
দেখতে যেন তুরানি।
রাতবিরেতে স্বপ্ন কুড়ায়,
সে যে স্বপ্ন-কুড়ানি!

হাত

মস্ত বড় থাবার মতো
বাস্‌রে সে কী হাত!
হাতের তলায় চাপা প’ড়ে
হাজার পাখি কাত।
হাতের নিচে পড়ল ঢাকা
সাত শো বাড়ির ছাত।
গাছগাছালি, মানুষ ঢেকে
হাতটা দেখায় দাঁত।

Exit mobile version