ল্যাবরেটরি ঘরের এক কোনায় কিছু একটা কাপড় দিয়ে ঢাকা। ফারা সেখানে উঁকি দিয়ে ভয়ে চিৎকার করতে করতে ছুটে এল। ঝুম্পা জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”
ফারা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “ভূত।”
ঝুম্পার পিছু পিছু আমরাও ভূত দেখতে গেলাম, কাছে গিয়ে কাপড়টা তুলে দেখা গেল এটা নর কংকাল ঝুলছে। দেখে আমরাও ভয় পেয়ে চিৎকার করতে যাচ্ছিলাম। ভূত না হোক কাউকে নিশ্চয়ই মার্ডার করে এখনে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। তখন মিঠুন বলল, “এইটা বায়োলজি ক্লাশের জন্যে।”
ফারা জানতে চাইল, “ভূত না?”
“না।”
বগা বলল, “আসল কংকাল। তাই এইটার ভূত তো আসতেও পারে।”
মিঠুন বলল, “আসলে ভালো, আমরা বোতলে ভরে ফেলব।”
মিঠুন কংকালটাকে দেখে টেখে বলল, “এইটা মেয়ের কংকাল।”
ঝুম্পা ভুরু কুঁচকে বলল, “তুই কেমন করে জানিস?”
অক্সব্রীজ স্কুলে একটা ছিল তখন স্যার আমাদের শিখিয়েছিলেন। “এই যে দেখ” বলে মিঠুন কংকাল দেখে কেমন করে ছেলে আর মেয়ে বোঝা যায় সেটা বোঝানো শুরু করল।
আমরা কিছুক্ষণ ধূলায় টাকা ল্যাবরেটরিতে ঘুরে বেড়ালাম। ভেতরে অনেক ইদুর আছে সেগুলো আমাদের দেখে মনে হয় খুব বিরক্ত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করল। ইঁদুর ছাড়াও ড্রয়ারের ভেতর রয়েছে তেলাপোকা আর পুরো ল্যাবরেটরিতে মাকড়শার জাল।
আমি মিঠুনকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুই কালাপাহাড় স্যারকে কেমন করে দেখাবি ভারী জিনিষ আর হালকা জিনিষ এক সাথে পড়ে? এক্সপেরিমেন্ট কীভাবে করবি? এই ল্যাবরেটরিতে তো খালি ধূলা আর ইঁদুর!”
মিঠুন হাসল, বলল “এক্সপেরিমেন্ট করার জন্যে কিছু লাগবে না। আমি ইচ্ছে করলে ক্লাশেই দেখাতে পারতাম।”
“তাহলে?”
“মার থেকে বাঁচার জন্যে বলছিলাম। তাছাড়া—”
“তাছাড়া কী?”
“আস্ত একটা ল্যাবরেটরি এখানে পড়ে আছে। এইখানে নিশ্চয়ই অনৈক কিছু আছে। ব্ল্যাকহোলের বাচ্চা পরীক্ষা করার সময় কাজে লাগবে।”
ধূলায় ঢাকা এই ঘরটা পরিষ্কার করার আমাদের কোনো ইচ্ছা ছিল না, কি মিঠুনের উৎসাহের কারণে স্কুলের ঝাড়ুদারকে ডাকিয়ে আমরা সত্যি সত্যি এটাকে পরিষ্কার করে ফেললাম। মিঠুনের কথা সত্যি, ল্যাবরেটরির ভেতরে অনেক কিছু আছে, মহব্বতজান স্কুলের স্যার ম্যাড়মেরা কেন কোনোদিন আমাদের সেগুলো ব্যবহার করতে দেন নাই কে জানে! ল্যাবরেটরির জিনিষগুলো দেখে আমাদের সেরকম কিছু হল না কিন্তু মিঠুন উৎসাহে টগবগ করতে লাগল। আমাকে গলা নামিয়ে বলল, “অক্সব্রীজ স্কুলে তো আমি খালি ব্ল্যাক হোলের বাচ্চা বানিয়েছিলাম, এখানে দেখিস আমি সত্যি সত্যি ব্ল্যাক হোল বানিয়ে ফেলব।”
ঠিক এরকম সময় কালাপাহাড় স্যার ল্যাবরেটরিতে ঢুকলেন, পরিষ্কার ল্যাবরেটরিটা দেখে স্যার নিশ্চয়ই অবাক হয়ে গেলেন কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করলেন না। ভুরু কুঁচকে এদিক সেদিক তাকালেন তারপর মিঠুনের দিকে তাকালেন। বললেন, “দেখি তোর এক্সপেরিমেন্ট, ভারী জিনিষ আর হালকা জিনিষ নাকী একসাথে পড়ে। দেখা-”
মিঠুন মাথা চুলকে বলল, “স্যার সত্যি সত্যি দেখাতে হলে একটা পাম্প লাগবে এখানে তো পাম্প নাই
“আমি আগেই বলেছিলাম, কেউ এটা দেখাতে পারবে না।”
“অন্যভাবে দেখাব স্যার?”
কালাপাহাড় স্যার নাক দিয়ে ঘেঁৎ করে খানিকটা বাতাস বের করলেন, বললেন, “দেখা, ঠিক করে না দেখালে পিটিয়ে তোর ছাল তুলে ফেলব।”
মিঠুন পকেট থেকে একটা এক টাকার কয়েন বের করল তারপর খাতা থেকে কয়েনের সাইজের ছোট একটা কাগজ ছিড়ে বলল, “স্যার, এমনি যদি ছাড়ি তাহলে কয়েনটা আগে পড়বে কাগজটা পরে। এই যে স্যার”
মিঠুন একসাথে কয়েন আর কাগজটা ছেড়ে দিল। কয়েনটা টুং শব্দ করে নিচে পড়ল কাগজটা ভাসতে ভাসতে নিচে পড়ল। মিঠুন তখন কয়েন আর কাগজটা হাতে তুলে নিয়ে বলল, “এইবার আবার ফেলব। কিন্তু স্যার কাগজটাকে মুচড়ে ছোট করে নেব” বলে মিঠুন কাগজের টুকরাটাকে কুঁচকে মুচকে পিষে ছোট একটা গুটলি করে নিল। বলল, “আগের কাগজটাই আছে কিন্তু এখন সাইজ খুব ছোট। এখন স্যরি কয়েন আর কাগজের গুটলিটা ফেলি, দেখবেন এক সাথে পড়বে।”
মিঠুন কয়েন আর কাগজের গুটলিটা একসাথে ফেলল আর সত্যি সত্যি এক সাথে দুটো নিচে পড়ল। মিঠুন বলল, “দেখলেন স্যার?”
কালাপাহাড় স্যার চোখ পাকিয়ে বললেন, “আমার সাথে রংবাজি? এইট: প্রমাণ হল? কাগজটাকে গুটলি করবি কেন? কাগজটাকে কাগজের মত করে আমাকে দেখা—”।
মিঠুন মাথা চুলকালো তারপর বলল, “ঠিক আছে স্যার। তারপর খাত। থেকে ছোট একটা কাগজ ছিড়ে কয়েনটার ওপরে রাখল। বলল, “স্যার এই যে কাগজটা কয়েনের ওপর রেখেছি। আঠা দিয়ে লাগানো নাই স্যার শুধু উপরে রাখা আছে।”
কালাপাহাড় স্যার ভুরু কুঁচকে তাকালেন, বললেন, “তাতে কী হল?”
“এখন স্যার এই কয়েনটা ছেড়ে দিব। যদি ভারী জিনিষ আগে পড়ার কথা তাহলে কয়েনটা আগে পড়বে কাগজটা পরে। কিন্তু দেখেন”।
মিঠুন কয়েনটা ছাড়ল সেটা নিচে পড়ল, কয়েনটার ঘাড়ে চেপে কাগজের টুকরাটা একই সাথে নিচে পড়ল। দেখে মনে হল কাগজটা বুঝি আঠা দিয়ে কয়েনের গায়ে লাগানো। মিঠুন বলল, “কাগজটা কয়েনের সাথে পড়েছে তার কারণ কয়েন এটাকে বাতাসের ঘর্ষণ দেখতে দেয়নি কয়েনটা বাতাসের পুরো ঘর্ষণটুকু সহ্য করেছে।”
কালাপাহাড় স্যার হুংকার দিলেন, “তোর মুণ্ডু। খালি দুই নম্বুরী কাজ কাম। আলাদা করে ফেলে দেখা। যদি না পারিস তাহলে তোর একদিন কী আমার একদিন অক্সব্রীজ স্কুলের যত অপদার্থ সব এই স্কুলে জায়গা নিবি? ফাজলেমী পেয়েছিস?”