Site icon BnBoi.Com

কালের কলস – আল মাহমুদ

কালের কলস - আল মাহমুদ

কালের কলস

অনিচ্ছায কতকাল মেলে রাখি দৃশ্যপাযী তৃষ্ণার লোচন
ক্লান্ত হযে আসে সব, নিসর্গও ঝরে যায বহুদূর অতল আঁধারে
আর কী থাকলো তবে হে নীলিমা, হে অবগুণ্ঠন
আমার কাফন আমি চাদরের মতো পরে কতদিন আন্দোলিত হবো
কতকাল কতযুগ ধরে
দেখবো, দেখার ভারে বৃষের স্কন্ধের মতো নুযে আসে রাত্রির আকাশ?
কে ধারালো বর্শা হেনে অসংখ্য ক্ষতের সৃষ্টি করে সেই কৃষ্ণকায
ষাঁডের শরীরে
আর সে আঘাত থেকে কী-যে ঝরে পডে ঠিক এখনো বুঝি না
একি রক্ত, মেদ, অগ্নি কিম্বা শ্বেত আলো ঝরে যায
অবিরাম অহোরাত্র প্রাণ আর কিমাকার ভূগোলে কেবলই–
ঝরে যায ঝরে যেতে থাকে।

ক্রমে তাও শেষ হলে সে বন্য বৃষভ যেন গলে যায় নিসর্গশোভায।
তুমি কি সোনার কুম্ভ ঠেলে দিযে দৃশ্যের আডালে দাঁডাও
হে নীলিমা, হে অবগুণ্ঠন?
আকাশে উবুড হযে ভেসে যেতে থাকে এক আলোর কলস
অথচ দেখে না কেউ, ভাবে না কনককুম্ভ পান করে কালের জঠর;
ভাবে না, কারণ তারা প্রতিটি প্রভাতে দেখে ভেসে ওঠে আরেক আধার
ছলকায, ভেসে যায, অবিশ্রাম ভেসে যেতে থাকে।

কেমন নিবদ্ধ হযে থাকে তারা মৃত্তিকা, সন্তান আর শস্যের ওপরে
পুরুষের কটিবন্ধ ধরে থাকে কত কোটি ভযার্ত যুবতী
ঢাউস উদরে তারা কেবলই কি পেতে চায অনির্বাণ জন্মের আঘাত।
মাংসের খোডল থেকে একে একে উডে আসে আত্মার চডুই
সমস্ত ভূগোল দ্যাখো কী বিপন্ন শব্দে ভরে যায
ভরে যায, পূর্ণ হতে থাকে।

এ বিষণ্ণ বর্ণনায আমি কি অন্তত একটি পংক্তিও হবো না
হে নীলিমা, হে অবগুণ্ঠন?
লোকালয থেকে দূরে, ধোঁযা অগ্নি মশলার গন্ধ থেকে দূরে
এই দলকলসের ঝোপে আমার কাফন পরে আমি কতকাল
কাত হযে শুযে থেকে দেখে যাবো সোনার কলস আর বৃষের বিবাদ?

Exit mobile version