Site icon BnBoi.Com

ফুল কই, শুধু অস্ত্রের উল্লাস – মহাদেব সাহা

ফুল কই, শুধু অস্ত্রের উল্লাস - মহাদেব সাহা

আফ্রিকা, তোমার দুঃখ বুঝি

আফ্রিকার বুকের ভেতর আমি শুনতে পাই এই
বাংলাদেশের হাহাকার
বাংলাদেশের বুকের ভেতর আফ্রিকার কান্না;
এশিয়া-আফ্রিকা দুইবোন, দুই গরিব ঘরের মেয়ে!
আফ্রিকার কালো মানচিত্র
যেন বাংলাদেশেরই দারিদ্রপীড়িত গ্রাম,
আফ্রিকার দিকে তাকালে তাই আমার
এই নিপীড়িত বাংলার কথাই মনে পড়ে
হয়তো আফ্রিকার কোনো কবিও বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে
তার আর্ত স্বদেশের কথাই ভাবে,
ঔপনিবেশিক সভ্যতা যাকে নাম দিয়েছিলো অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ;
কিন্তু আফ্রিকার মানুষের বুকে আজ আলোর মশাল,
আফ্রিকার চোখে স্বপ্ন!
আমি দেখতে পাই এঙ্গোলার কৃষকের মতোই
বাংলাদেশের ভূমিহীন চাষীও
মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলেছে আকাশে
সে-হাত শোষণের বিরুদ্ধে দুর্জয় হাতিয়ার;
আজ এশিয়া তাকিয়ে আছে আফ্রিকার দিকে
এশিয়ার দিকে আফ্রিকা,
এই কালো মানুষের ধারা এসে মিশেছে এশিয়া-আফ্রিকার গ্রামে;
জানি দারিদ্র্য আমাদের উভয়ের সাধারণ পোশাক
বহু যুগের বিদেশী শাসনের ক্ষতচিহ্ন আমাদের উভয়ের কপালে
তাই আফ্যিকার বুকে যখন রক্ত ঝরে
তখন এই বাংলাদেশের মাটিতেও শিশির-ভেজা ঘাস
মনে হয় রক্তমাখা,
ইথিওপিয়া কিংবা নামিবিয়ার পল্লীতে যখন জেগে ওঠে
সাহসী মানুষ
তখন এই বাংলায়ও প্রাণের জোয়ার জাগে পদ্মা-মেঘনায়;
আফ্রিকা, তোমার দুঃখ বুঝি
আমি জানি বর্ণবাদি শাসনের হাত
একদিন ভেঙে দেবে এই মানুষেরই মহৎ সংগ্রাম
আমি জানি এশিয়া ও আফ্রিকার ঘরে ঘরে একদিন উড়বেই
বিপ্লবের লাল পতাকা,
বাংলার স্বপ্নভ্রষ্ট ফুল তাই তো তাকিয়ে আছে
আফ্রিকার অরণ্যের দিকে-
সেদিন একটি পাখির মতো উড়ে যাবো মেঘমুক্ত আফ্রিকার
সুনীল আকাশে
পদ্মার পাড় তেকে আফ্রিকার স্বচ্ছতোয়া নদীটির পাশে
দেখবো মাথার উপরে দ্বিতীয় আকাশ নেই , আছে শুধু
এশিয়া ও আফ্রিকার অভিন্ন আকাশ!

 এই কবিতাটি কোথায় পেয়েছি

এই কবিতাটি ছিলো যে নিঝুম ঘুমের পুরীতে অলস নিদ্রা
ছিলো কারো চোখে সুদূর স্বপ্ন রোমাঞ্চকর গাঢ় শিহরন,
দূর নীলিমায় এই কবিতাটি ছিলো ভাসমান উদাসীন মেঘ
স্বর্ণচাঁপার বুকে থরো থরো হয়তোবা কোনো শুভ্র শিশির;
এই কবিতাটি ছিলো পাহাড়ের মৌনতাভরা গূঢ় উদ্ধৃতি
ছিলো গোলাপের হার্দ্য আলাপ অনুভূতিময় পাখিদের শিস
আকাশের ছিলো মন্ময় ভাষা এই কবিতাটি নদীর ভাষ্য,
এই কবিতাটি ছিলো কোনো এক শিশুর হুদয়ে মৃদু স্পন্দন
মধ্যরাতের ঘুমহীন চোখে এই কবিতাটি জেগে ছিলো একা
এই কবিতাটি ছিলো কৃষকের মাটির শানকি-ভরা শাদা ভাত;
এই কবিতাটি ছিলো মিছিলেতে উদ্দীপনার গনগনে ভাষা
বস্তিতে ছিলো এই কবিতাটি মাথা গুঁজে-থাকা কাতর দুঃখ!
এই কবিতাটি ব্যথিত মায়ের কতো যে গভীর করুন অশ্রু
উবু হয়ে পথে জলপানরত এই কবিতাটি দারুণ তৃষ্ণা,
এই কবিতাটি মারীমড়কের মাঝখানে ছিলো ক্ষীণতম আশা
হানাহানি আর রক্তপাতের বিরুদ্ধে ছিলো এই কবিতাটি;
এই কবিতাটি ছিলো একখানি সবুজ গ্রামের স্বচ্ছ ইমেজ
এই কবিতাটি মানবিকতার একটিমাত্র সহজ উৎস,
অনাহারী সব শিশুর মুখে তো এই কবিতাটি দুমুঠো অন্ন
এই কবিতাটি ছিলো বা কখনো দূরে ভাসমান মেঘের রাজ্যে
কখনোবা ছিলো খুব কাছাকাছি আমাদের এই মাটির উঠোনে,
এই কবিতাটি কখনোবা ছিলো চাঁদের কিরণে অধিক সিক্ত
কখনোবা ছিলো এই কবিতাটি খর দুপুরের তাপে কী দগ্ধ
এই কবিতাটি কোথায় যে ছিলো উধও স্বপ্নে দূর কল্পনা,
এই কবিতাটি পেয়েছি এখানে ধুলো ও মাটিতে রূঢ় বাস্তবে।

একটা কোনো সুসংবাদ চাই

হয়তো আজই ঠিক পেয়ে যাবো একটা লুফে নেয়ার মতো
সুসংবাদ
একটা কিছু অনবদ্য নীল খামে;
অনেকদিন পর আজ হয়তো ঠিকই পেয়ে যাবো সেই চিঠিখানি
সেই পাখির শিস, ফুলের হৃদ্যতা, সেই আঙুলের ছাপ
আজ ঠিকইপেয়ে যাবো একটা কিছু চমৎকার প্রাঞ্জল সংবাদ!
কতোকাল কোথাও পাইনে কোনো সুখবর,
ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নব্‌ ইথারের রাজ্যে শুধু শুনি দুর্ভিক্ষ, দুর্যোগ
মহামারী-
পোর্ট স্ট্যানলীতে যুদ্ধ থামতে না থামতেই দেখি
আক্রান্ত বৈরুত ;
দেখি মারণাস্ত্র, নিউট্রন বোমার হুঙ্কার
আজ তাই মআমাকে পেতেই হবে একটা কোনো রম্য সুসংবাদ।
কারো কাছ থেকে পাইনে একটাও কোনো আনন্দ-সংবাদ,
একটিও হার্দ্য টেলিফোন, রোমাঞ্চকর বার্তা কোনো
এমন সংবাদ আর পাইনে কখনো যা কিনা মুহূর্তে ঠিক
করে তোলে আরক্তিম গাঢ় উচ্ছসিত ;
পৃথিবীর সবকিছু পাওয়াও যার কাছে তুচ্ছ মনে হয়।
কতোকাল কোথঅও আমার জন্য একটিও সুসংবাদ নেই
খাম খুলে দেখি কালো বিষণ্ন অক্ষরগুলো
একটা না একটা কিছু দুঃসংবাদ নিয়ে বসে আছে
ঘরে এসে দুঃসংবাদ ছাড়া আর কিছুই মুনি না
এমনকি রেডিওর উত্তেজিত নবে আঙুল রাখতেই শুনি
বেজে ওঠে খাঁখাঁ দুঃসংবাদ,
আবার কলিংবেল বাজিয়েও দুঃসংবাদ ঢুকে পড়ে ঘরে
আজ তাই যেভাবেই হোক একটা কোনো সুসংবাদ চাই,
তুমুল, গভীর একটা কোনো উষ্ণ সুসংবাদ।

Exit mobile version