Site icon BnBoi.Com

চাই বিষ অমরতা – মহাদেব সাহা

চাই বিষ অমরতা - মহাদেব সাহা

আমার হাতে দুঃখ পাচ্ছো

আমার কাউকে আঘাত দেওয়ার কথা ছিলো না, আঘাত দেওয়ার
কথা ছিলো না, কথা ছিলো না, কথা ছিলো না,
তোমাকে আমার আঘাত দেওয়ার কথা ছিলো না, গোলাপ তোমার
খুনখারাবি, হত্যাকাণ্ড এসব আমার একটু সয় না
গোলাপ তোমায় আঘাত দেওয়ার নিষ্ঠুরতা ঠিকই আমি করতে
চাইনি
আমি বড়ো কোমল ছিলাম, গোলাপ তোমার মতোই
আমি কোমল ছিলাম
আমার কাউকে আঘাত দেওয়ার কথা ছিলো না, আমি কবি, আমি
কোনো নিষ্ঠুরতা দেখতে চাইনি, করতে চাইনি
নারী তুমি কাঁদবে আমার সহ্য হয় না, গোলাপ তুমি কাঁদবে আমার
সহ্য হয় না, মানুষ তুমি দুঃখ পাবে সহ্য হয় না
আমি কবি বাল্যে আমি যীশুর মতোই কোমল ছিলাম, শুদ্ধ ছিলাম
আমার কাউকে আঘাত দেওয়ার কথা ছিলো না, মানুষ তোমাদের
আঘাত দেওয়ার কথা ছিলো না
গোলাপ তোমায় ভ্রষ্ট করার, নারী তোমায় নির্যাতনের
মানুষ তোমায় দুঃখ দেওয়ার আমার মোটেই কথা ছিলো না
তবুও তোমরা আমার হাতে, নারী তুমি আমার হাতে
গোলাপ তুমি আমার হাতে
সবচেয়ে কঠিন আঘাত পাচ্ছো, দুঃখ পাচ্ছো।

ইচ্ছা করে, কেন ইচ্ছা করে

ইচ্ছা করে, কেন ইচ্ছা করে, একদিন উড়ে যাবো
ফিরেও আসবো না
শুধু পড়ে রবে খাঁচা, খাঁচাতেই সম্ভব করেছি বাঁচা
এই উড়ে যাওয়া, আর ফিরেও আসবো না।
তবু ইচ্ছা করে, কেন ইচ্ছে করে, একদিন
উড়ো যাবো, ফিরেও আসবো না,
পাবে না জলের তৃষ্ণা প্রত্যক্ষ রোগের ক্লানি-, গাঢ় নিদ্রা
উড়ে যেতে যেতে এই পাখিত্বেই মেলাবো অধিক, হবে প্রেম গভীর প্রণয়
আমি আর কতোটুকু এই নামমাত্র ছায়া, কায়াটা তো মেকি
একদিন যেতে হবে ঠিকই অতি এক ক্ষুদ্র পাখি হয়ে
তাকে চোখেও দেখিনি
তবু স্বভাবে বুঝেছি পাখি উড়ে যাওয়াটাই তার ধ্যেয়,
সহজ বৃষ্টির মধ্যে অধিকন’ যায় তারা মেঘের প্রতীক
উড়ে যায়, কিন্তু কেন উড়েও যায় না, একদিন
উড়েও যায় না
তাদের আকাশ ছোট্ট খাঁচা তাও পড়ে থাকে, আর
উড়েও যায় না,
কিন্তু আমি উড়ে যাবো কিংবা উড়ে উড়ে ফিরেও
আসবো না
ইচ্ছে করে, শুধু ইচ্ছে করে আমি উড়ে যাই তবু তুচ্ছ এই
খাঁচাখানা থাক।

ইচ্ছাবৃষ্টি

আমার ভেতর কেমন পাতা থর থর হাওয়া কাঁপছে
কাউকে বলবো না আমি কিছুকে বলবো না
আমার এখন ইচ্ছে জাগছে!

নিজের দিকে চাইলে আমি ধরতে পারি এই রহস্য
কোথাও ওলটপালট হচ্ছে কোথাও কোমল মাটি কাঁপছে
বুকে কঠিন হাওয়া লাগছে, হাওয়া লাগছে
কী রহস্যে জড়িয়ে এমন মেঘ করেছে
বৃষ্টি হবে, আমার ধানী জমি জুড়ে রহস্য মেঘ বৃষ্টি হবে

আমার এখন ইচ্ছে জাগছে!

এই সারাদিন

এই সারাদিন আমি গাছের মধ্যে ডুবে ছিলাম, সারাদিন
আমি নারীর মধ্যে ডুবেছিলাম, তোমার মধ্যে
এই সারাদিন আমার শরীর ফেটে বেরিয়েছে ঘ্রাণ,
ঘাসের মতোই গভীর ও কোমল ভালোবাসা
আমার সারা শরীর ছেয়ে গেছে ঘ্রাণে ঘাসপাতার ঘ্রাণে
এই সারাদিন আমি গাছের মধ্যে ডুবেছিলাম, সারাদিন
সারাদিন আমি নারীর মধ্যে ডুবেছিলাম, তোমার মধ্যে
এই সূর্যাস্ত, এই পৃথিবী, দুয়ার খোলা ঘর
একজন দরবেশ এসে আমাদের অধঃপতনের কথা বলে ফিরে
গেলো
একজন আগন্তুক, একজন প্রেমিক, একজন বাউল
গেলো পথ বেয়ে,
এই সারাদিন আমি গাছের মধ্যে ডুবেছিলাম
সারাদিন আমি নারীর মধ্যে ডুবেছিলাম, তোমার মধ্যে।

 কিছুদিন শোকে ছিলাম, মোহে ছিলাম

কিছুদিন শেকে ছিলাম, মোহে ছিলাম, কিছুদিন নারীতে
শোকাচ্ছন্ন ছিলাম
আরো কিছুদিন, আরো কিছুদিন
কিছুদিন এদিক সেদিক কিছুদিন ঘোরাফেরায় কিছুদিন
চাঁদ দেখতে দেখতে গোল মাঠের মধ্যে বুনো শিকারী
শসন্য তোলার কথা যেমন ভুলে গিয়েছি, ঘরে ফেরার কথা যেমন
তোমাদের মহুয়া মধুর স্মৃতির সঙ্গী হতে হতে নেমে গিয়েছি
বেশ করেছি, বেশ করেছি, বেশ করেছি। কিছু করিনি।
আজ নাহয় দু’চারদিন এদক সেদিক, কিছুদিন এমন তেমন,
কিছুদিন
চলতে ফিরতে চলতে ফিরতে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় কোনো
মায়াভরা মেয় ধুলোরমধ্যে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছি, বসে পড়েছি
পড়তে পড়তে ধরে উঠেছি একটা করুণ লতার মতো প্রসন্নতা
একটা কোনো কিছুর মতো কিছুদিন জড়িয়ে ছিলাম
কিছুদিন সুষে ছিলাম, স্নেহে ছিলাম,
সুখে দুঃখে সম্পন্ন ছিলাম
চলতে চলতে বসে পড়েছি এইখানে এই জলের ধারে
তোমাদের গোলাপ তোলার এই উৎসবে আমি পিছন ফিরে দেখিনি
কিছুদিন নারী কেমন,
লুটিয়ে ছিলাম, কিছুদিন
কাম ও কান্তি চঞ্চলতা অধীর তাকেই অঙ্গে রাখি, কিছুদিন
নারীত্বকে
কিছুদিন শিশুর গন্ধ, কিভছুদিন দীর্ঘ দাহ, কিছুদিন
অধীনতা
কিছুদিন এই কিছুদিন
চলতে চলতে চলতে চলতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছি
লোকে বলে এইখানে এই মায়াদিঘি, বসন্তকাল,
আমি কোনো মূর্তি চাই না
আরো কিছুদিন চন্দ্রাসক্ত, আরো কিছুদিন ঘুমিয়ে পড়বো,
আরো কিছুদিন।

গোলাপের বংশে জন্ম

আমরা কেউ সঙ্ঘসেবকের দলে নেই, আমরা চিরদহনদাহনপ্রিয়
মানুষের জন্ম সহোদর
আমরা কবি ও কামুক আমরা পূণ্যাত্মা সন্ন্যাসী
আমরা সামাজিক স্বাস্ত্যসুখবঞ্চিত স্বাধীন
আমাদের হাতে শুদ্ধ-সংরক্ত গোলাপ তবু কাঁটার আঘাতে
ক্ষত আহত অস্থির
এই শোকে সুখে বড়ো ভালো আছি, বড়ো ভালো আছি যেন
এই ছায়াতে মায়াতে।

মধ্যরাতে আমাদের দাম্পত্যবিবাহ, সবুজ শরীর সেই
মেয়েদের সঙ্গে সমারোহ
কিন্তু পুনর্জন্ম নাই; একবার জন্মাই মরে যাই।
গোলাপ ও কবির মধ্যে এটুকু সৌহার্দ, এইটুকু মিল
এইভাবে হাওয়ায় হারাবে।
এই ভাঙা ইট, পাথরের ধুলো, পরিপার্শ্ব এই মলিন মধুর
তারা কতো অদম্য উড্ডীন, কতো পূর্ণতার দিকে যাত্রা
কতো সিংহবাহী
সেসবে চাঞ্চল্যহীন আরো সহজ ও গভীর উদাসীন
আমরা চিরগহনগাহনপ্রিয় তোমাদেরই জন্ম সহোদর!
আমরা বন্দী কোথঅও নিশ্চিত বন্দী তবু ঠিক কারো কাছে নয়

ফেরার সময় কিছু জন্মমৃত্যু খেলা, কিছু প্রাকৃত তন্ময়
পথের উপরে সেই লাটবন্দী দাম্পত্যবিবাহ
সেইখানে পাথর কুপিয়ে কিছু নদী খাল বন্দর বানানো,
তা ছাড়া তেমন কোনো সপষ্ট বাসা নেই, যা আছে তা
উশকো খুশকো গলির ভিতর
তেমন গরিব নই ভাঙা বাসা রেখেছি অম্লান
আমাদের অসীম অনন্ত অপচয় মধ্যরাতে দাম্পত্য বিবাহ
আর প্রাকৃত তন্ময়
জমিসুদ্ধ কেঁপে ওঠে কোনো কোনো রাতে এই বিবাহবাসর
কিন্তু কোনো প্রাপ্তির অধিক কাম্য গচ্ছিত রাখিনি
বিদায়ে কাঁদাবে!

শুধু ফেরার সময় মায়া মানুষের মতো, যেন সুখস্পর্শ
যেন অন্ধকারে সম্ভাব্য আলোর এক অদৃশ্য আগ্রহ
যেন সবুজ শিকারী
আমাদের এই বুকে এতোটুকু মায়া শুধু স্পর্শ করে আছে
এতোটুকু ভালোবাসায় খেয়েছে
হয়তো এইখানে কোনো এক ছায়াতে মায়াতে
আমরা বন্দী হয়ে আছি!
তা ছাড়া অন্য কোনোখানে স্বচ্ছ চিহ্ন রাখি নাই
আমাদের পা বড়ো মায়াবী হেঁটে যায় চিহ্নও রাখে না।
দেয়অলে যেটুকু পড়ে মুখ থেকে মধ্যবর্তী দুপুরের ছায়া
সে-ছায়াও অপরাহ্নে মেলাবে,
আমর জন্মাই মরে যাই আত্ময়ি আত্মজ কিছু নাই
গোলাপের বংশে জন্ম আমাদের, আমরা কবি, আমরা
সকাম সন্ন্যাসী, আমরা অসংলগ্ন গৃহস্ত মানুষ
কোনো কোনো রাতে কেঁপে ওঠেআমাদের অনন্ত বাসর
আমরা কবি আমর চিরদহনদাহনপ্রিয় তোমাদেরই জন্ম সহোদর!

তাকেই বলি প্রকৃতি

ভিতর থেকে হয়ে উঠছে তাকেই বলি প্রকৃতি। বাইরে মেঘবৃষ্টি
ঝড়ো হাওয়া
কেমন শিশুর হাতে কাদামাটিতে গড়া, তার কোনো গ্রহস্ত চেহারা সেই
তারই এক ডাকে কেন আমি এমন ঘর ছেড়ে আসবো!
আমি এখনো মাঝে মাঝেই তৃষ্ণার্ত, নদীর কাছে করুণা চাইতে যাই,
ব্যথিত আমি পাহাড়ের কাছে করুণা চাইতে যাই
হয়তো তাদেরও ভিতরে কোথাও এই মানুষের মতো একটা মন আছে,
সেই মনটাই প্রকৃতি।
না হলে এই সবুজ ঘাস কেন জাজিমের মতো মনে হবে, এই
মেঘ মনে হবে মখমলের মতো
পাখির ভিতর যা পাখিত্ব নদীর ভিতর যা শুদ্ধতা
এর একটা পরিচ্ছন্ন রূপ আছে তাকেই বলি প্রকৃতি।
প্রকৃতি এই কাদামাটিতে গড়া, আঁতুড়ঘরের আবেশ মাখানো গন্ধ
তবু এই উলুকঝুলুক নয়, কোনো কিছু নয়
আরো একটা কিছু ভিতর থেকে গড়ে উঠছে জলমাটি হাওয়া সব মিলেই
এই প্রকৃতি
কখনো এই গাছ, বিদেশী পাম ট্রী, কখনো শাদা আরো
সম্পন্ন শরীর সেইসব ভিন্ন যুবতিরা
তাদের সোনালী চুলের স্বাস্ত্যকেই বলি প্রকৃতি
তবু এশিয়া ও ইওরোপে তেমন ভিন্ন কোনো প্রকৃতি নেই
হয়তো নারীরা এখানে শীতপ্রধান, হয়তো বৃক্ষ কোথাও চিরহরিৎ
এই গাছ-পাথর প্রকৃতি নয় আমি অন্য কারো ডাকে ঘর ছেড়ে এসেছি।
বাইরে এই মেঘবৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া, এই গাছ-পাথর
বহু বছর তাদের পাশাপাশি বেঁচে আছি,
তাদের কৃতজ্ঞতা জানানোর কিছু নেই
আমার হাতে মেঘ পেয়েছে মহিমা, জল পেয়েছে অবয়ব,
পাথর পেয়েছে পূর্ণতা
এতোদিন এই কাদামাটির সংসারে এই ঝড়ো হাওয়ায়
ভিতর থেকে হয়ে উঠছে এই কাদামাটিতে এই ভালোবাসায়
তাকেই বলি প্রকৃতি, এই বেদনাবিধুর!

 তিনি এক স্বপ্নচারী লোক

আমার বাবার এখন দ্রুত পাল্টাচ্ছে চোখ তাকে ততো ব্যথিত লাগে না
তিনি অনায়াসে ঘাসের ভিতর আরো পতঙ্গের উৎসাহ দেখেন,
মানুষের নব জাগরণ,
অতিশয় ব্যগ্র তিনি পৃথিবীর ভালো দেখতে চান,
তাকে আর ব্যথিত লাগে না।
সহজে এখন তিনি পাপীকেও তীর্থধূলির মতো বুকে তুলে নেন।
একদিন যেমন তিনি শস্যের সম্ভাব্য ক্ষতি নিশ্চিত জেনেও তবু বলেছেন,
বর্ষণ থামার বেশি বাকি নাই, এবারের শস্য রক্ষা হবে
উথালপাতাল সেই ভাঙনের স্রোতে আমাদের দক্ষিণের দুটি ঘর
ভাসমান দেখে
তবু তিনি কীভাবে যে বলেছেন আমারেদ বাড়ি আর বিশেষ ভাঙবে না,
ভাঙনপবণ এই নদীকেও কোনোদিন এতোটা বিশ্বাস কেউ করে
যেন তিনি এইভাবে বিশ্বাসের বলে ঠেকাবেন যতো সর্বনাশ। এখনো
তেমনি তার অথই বিশ্বাস
সুখী হবে দুর্গত-দুঃখিত এই দেশ, দুর্দিনের দাহ লেশ মুছেযাবে
এই অনশন, অন্নাভাব, অগ্নিমূল্যে বেঁচে থেকে তিনি
অকাতরে এখনো বলেন, আর চাল দুর্মূল্য হবে না, দেখো এইবার
ঠিকই পাওয়অ যাবে অপর্যাপ্ত শিশুখাদ্র দেশে
লোকে তার কথা শুনে হাসে। আমি ভাবি স্বপ্ন আর কোথাও নেই
শুধু তার এই দুটি চোখে
না হলে সবুজ তণ্ডুলে এতো কাঁকরের বিষ কেন তার চোখেই পড়ে না!
বাবার চোখের দিকে আমি ভয়ে তাকাতে পারি না। কী করে যে
তার প্রায় অবলুপ্ত এই দুটি চোখে এতো ভরসা রাখেন
এখন তো তার এই চোখ দ্রুত পাল্টাচ্ছে প্রত্যহ এখন হয়তো সবুজকে
তিনি আর তেমন সবুজ দেখেন না
চশমার পয়েন্ট তার দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে তা হলে কী হবে
আমি জানি তবু এই গভীর কুয়াশাচ্ছন্ন চোখে তিনি
আমাদের ভবিষ্যৎ বড়ো বেশি উজ্জ্বল দেখেন। আমার বাবার মতো
বিশ্বাসী লোক আমি কখনো দেখিনি
তার এখন বয়স বেড়েছে বেশ বোঝা যায় আর ততো তাকে মনে হচ্ছে
তিনি এই পৃথিবীর প্রকৃত প্রেমিক শুধু ভালো দেখতে চান
জেনে যেতে চান বুঝি ব্যথিত বৃক্ষের অব্যাহতি মানুষের কুশলকল্লোল
না হলে কী নিয়ে যাবেন তিনি অতো দূরে নিতান্ত একাকী শেষবেলা,
তাও বুঝি!
আমি জানি আজীবন আমার বাবার এই সামান্য বিশ্বাস ছাড়া তেমন
আর কিছুই ছিলো না
শুধু এইটুকু নিয়ে তিনি দুঃসময়ে আমাদের আদিগন্ত দিয়েছেন দোলা
নিজে তিনি পুড়েছেন ব্যর্থতার রোদে বিপর্যয়ে এই একাকী মানুষ,
তবু চিরদিন তিনি বড়ো স্বপ্নচারী লোক
সেই স্বপ্ন আজো তার চোখে, তাকে ততো ব্যথিত লাগে না।

তুমি

তোমাকেই আজো মনে মনে করি উপাসনা ভাবি স্মরণযোগ্য
বহু বেদনায় বহু ব্যবধানে তোমাকেই আজো অসময়ে খুঁজি,
তুমি ছাড়া কোনো স্মরণযোগ্য নারী নেই আর নাম নেই আর
তোমার প্রতিভা এই শতাব্দী তারও বেশিকাল পাবে প্রাধান্য
আমাদের ঢের বয়সের বেশি তবু আমাদের বয়সের চেয়ে তারুণ্যময়
তোমারই রূপের দুরন্ত খ্যাতি এ শহরে আজো প্রবাদতূল্য!
আমাদের যুগে তুমিই মাত্র স্মরণযোগ্য রমনীর নাম তুমিই মাত্র গূঢ় স্মরণীয়
তুমিই মাত্র বান্ধবী নারী অসামান্য আর সকলেই বধূ বা কন্যা এভাবে ধন্য
তোমাকেই আজো মনে মনে করি উপাসনা ভাবি স্মরণযোগ্য
এই শহরের বিরুদ্ধ পথ একাকী যখন পাড়ি দিই বড়ো প্রবাসীর মতো
অতি সাবধান হাত রাখি কোনো গোলাপের গায়ে গাঢ় প্রেরণায়
তোমাকেই করি উপাসনা করি বহু প্রশস্তি আপনার প্রিয় প্রাচীন ভাষায়,
ফুল তুলি আর ফসলের কোনো ঋতুতে যখন আমি উৎসাহী
স্বপ্ন জাগাই, সেই উৎসবে মনে মনে ভাবি তোমাকেই শুধু স্মরণযোগ্য
বহু বেদনার বিসতৃত পথ পাড়ি দিই একা বিক্ষত পায়ে, কখনো একাকী
এইখানে এই সামান্য ছায়া তার নিচে বসে দীর্ঘজীবন দৃঢ় অবসান
তবু তোমাকেই মনে মনে করি স্ততি-বন্দনা তোমাকেই ভাবি স্মরণযোগ্য
আমাদের যুগে তুমিই মাত্র স্মরণীয় নারী স্মরণীয় নাম
তোমারই রূপের খ্যাতি ও প্রতিভা এ শহরে আজো প্রবাদতূল্য!

তোমরা কেমন আছো

তোমরা কেমন আছো হে আমার গভীর রাতের আহত করিয়া
তোমরা কেমন আছো
কেমন আছো আমার ফেলে আসা কবিতা তুমি কেমন আছো, কেমন
আছো তোমরা সুখ দুঃখ, তোমরা তোমরা?
আমি বহুদিন তোমাদের ফেলে এসেছি, মধ্যরাতের চাঁদ তোমাদের
তোমরা কেমন আছো, সবাই কেমন আছো, তোমরা সব্বাই?
আমি বেশ কিছুকাল তোমাদের সঙ্গছাড়া, বেশ কিছুকাল
অলস নিদ্রায়, অসুখে, আচ্ছন্নতায় শুয়ে আছি, শুয়ে আছি
তোমাদের সকলের স্নান, সন্ধ্যালাপ, প্রত্যুষের উপাসনা মন্ত্র
আমার মনে পড়ে, হে পাখি, বসন্তরাত্রির একলা কোকিল
তোমাদের
শহরের সব নার্সারীর প্রত্যহ দর্শক তোমরা, পানশালার
নিমগ্ন প্রেমিক
ভবঘুরে, ছন্নছাড়া, ভাই, তোমরা কেমন আছো
নারী তুমি কেমন আছো, বৃক্ষ তুমি কেমন আছো, কেমন,
শস্য তুমি আছো, নদী তুমি আছা,
তোমাদের নিজস্ব স্বাভাবে আজো তোমরা কবি।
তবু একবার বলো, তুমি বলো, তোমরা বলো, বলো
নারী তোমরা কেমন আছো, বৃক্ষ তোমরা কেমন আছো,
তোমরা কেমন আছো, মানুষ?

পা কাঁপে আমি দ্বিধাগ্রস্ত

হয়তো কোথাও কোনোভাবে এখন বাঁধা পড়ে গেছি, বাঁধা পড়ে গেছি
তাই পা কাঁপে তাই দ্বিধাগ্রস্ত এমন সহজে পারি না।
তিন ফুট বাই দেড় ফুট একটা ছো‌ট্ট মশারির ভিতর
আমার এখন সামান্য দুর্বলতা, আমি বুঝতে পারি
খুব দূর থেকেও সেদিকে তাকিয়ে থাকি। এমন মাইল-
মাইল ব্যবধান, এমন দুরত্ব সেই ছোট্ট হাল্কা হলুদ একটা
মশারির ভিতর
আমার এই চোখ আমার এই ইন্দ্রিয় বড়ো আবদ্ধ রয়েছে
হয়াে আমি এখন কিছুটা স্নেহপ্রবল, কিছুটা পিতৃতূল্য
এতোদিন বুঝতে পারিনি একটা হাল্কা হলুদ
এতোটুকু মশারির ভিতর এতোটা রহস্য ছিলো আমার জন্য
এই সামান্য বুকের ভিতর কোথায় ছিলো এই পিতৃত্ব,
কোথায় ছিলো এই জলগড়ানো কান্না, এই ব্যাপ্তি, বুঝতে পারিনি
মাত্র একটা মশারির জন্য এখন আমি অনেক বেশি ক্ষমাপ্রবণ,
অনেক স্নেহকাতর
এমনটি কাঁটার ভয়ে ফুল তুলতে পারি না
আঙুল কেমন গুটিয়ে আসে
কোথাও আমার তেমন কিচুই নেই, এই তিন ফুট বাই দেড় ফুট একটা
মশারির ভিতর
একটা পাখির বাসা হচ্ছে, ফুল ফুটছে, পাথর ভেঙে একটা নদী হচ্ছে
তার ঘ্রাণ, তার শব্দ, আমি আভাস পাচ্ছি
এইখানে এই লোহার শিকের অস্থায়ী একটা মশারির ভিতর
আমি বাঁধা পড়েছি
যাকে কোনো মায়া, কোনো মৃত্যু কোনোদিন
স্পর্শ করেনি, স্পর্শ করেনি
সেই হাওয়ার মতো স্বাধীন
আমি হয়তো কোথাও কোনোভাবে
এখন বাঁধা পড়ে গেছি, বাঁধা পড়ে গেছি
তাই পা কাঁপে তাই দ্বিধাগ্রস্ত, সহজে পারি না
এতোটা আসক্তি ছিলো, এতোটা পিতৃত্ব ছিলো
বুঝতে পারিনি, এতোটা বন্ধন ছিলো এই বুকে!

যাও সঙ্গমে সৎকারে, প্রেমে

সঙ্গমে সৎকারে নেমে মানুষের দূরে আরো এক অতিদূরে
চলে যেতে হয়
আরো এক বিশুদ্ধ জল তুলে নিয়ে আপাদমস্তক সিক্ত
করে নিতে হয়। অতৃপ্ত তৃষ্ণা ক্লান্ত, সুখী, শোকমগ্ন
কিংবা শিহরনস্নাত মুখ শিশুদের মতন নিরীহ
তোমরা মানুষ, এই মায়া তোমাকে সম্ভব। এই প্রেমে, এই তৃষ্ণা, এই
সফলতা, এইভাবে একে একে সংজ্ঞাহীন অবগাহনে গমন।
কোনো একদিন এই মায়াময় পথের সীমায় হবে দুজনের মুখোমুখি দেখা
কেউ কাকে শুধাবে না, তবু সেখানে জন্মাবে আবার এই আত্মঘাতী
মানুষের মেধা, মনুষ্যতা
না হলে তোমরা নারী শুধু ঊরুসর্বস্ব অশ্লীল মেয়ে, শুধু স্থূল
সঙ্গমের স্পৃহা
জন্মহনি জন্ম দিয়ে যাবে। মনে হয় তোমাদের একদিন ক্রমান্বয়ে
নেমে যেতে হবে
দূরে, আরো অদি দূরে যেতে যেতে সঙ্গমে সৎকারে নেমে
আরো এক বিশুদ্ধ মাটির মর্ম জেনে নিতে হবে। কী সে প্রতিমা
কী সে প্রতীক, তোমরা তাহারও বেশি উদ্দামতা পাবে।
না হলে এ নারী হবে ঊরুর অশ্লীল, কোনো মর্মগ্রাহী নয়
মাত্র গ্রীসের গণিকা, মেয়ে অধর্ম অশ্লীল!
কোনো একদিন, একদিন সঙ্গমে সৎকারে নেমে মানুষের আরো
দূরে, আরো অতি দূরে চলে যেতে হয়।
আরো এক শস্যের সম্মুখে এসে ক্লান্ত করতল মেলে ধরো
আরো এক শস্যের সম্মুখে এসে নতজানু হও আরো এক শস্যের
সম্মুখে এসে
নগ্ন হও তোমরা এখন
তোমরা প্রার্থনা করো হে মানুষ, নগ্ন নতজানু সঙ্গমের সহিষ্ণু মানুষ
সৎকারের সন্তপ্ত মানুষ, তোমরা প্রার্থনা করো
আসন্ন মানুষ যারা তোমাদের সঙ্গমে সৎকারে জন্ম নেবে
তারা যেন জয়ী হয়, তারা যেন না হয় এমন আর বারবার
তোমাদের মতো ব্যর্থ পরাজিত, ব্যর্থ পরাজয়ে নত।
যতোদূর যেতে পারে
নেমে যাও সঙ্গমে সৎকারে প্রেমে সহিষ্ণু মানুষ
সেই এক জলোদ্ভব হোক, শুদ্ধ সনাতন মাটি সেই
মহিমামন্ডিত মর্তোদ্ধার। ক্ষেতময় অপেক্ষায় আছে
তোমাদের শুষ্ক পক্ব পরিণত ধান
নেমে যাও সঙ্গমে-সৎকারে-প্রেমে সহিষ্ণু মানুষ
দূরে, আরো এক অতিদূরে, কাছে।

যেতে যেতে অরণ্যকে বলি

এমনও অরণ্য তাকে উদ্দাম মর্মর মূর্তি ধরে নেয়া যায়,
বাতাসের অতি দম্ভ বৃক্ষের সমান উঁচু মেঘ, আরো উঁচু
অরণ্যের সীমা
এও শুধু অরণ্যেরই শোভা পায় এতো উঁচু এমন বিশাল
তাই তো মর্মরমূর্তি অরণ্যকে নিঃশব্দ প্রস্তর বলে ভ্রম হয়, মনে হয়
এ নৈঃশব্দ্য প্রস্তরেরই প্রাণ।
অরণ্যও অনেকাংশে জলেরই মতন আস্থাবান অথবা এ জঙ্গমতা
মানুষেরই মতো জন্মগত
মানুষেরই মতো এই স্থিতিগ্রাহ্য পার্থিবতা অরণ্যকে দেখে
মনে হয়
চতুদিকে হাত তুলে আমাদেরই আদি কোনো পিতা কোনো
আদিম পুরুষ
রয়েছেন সম্পূর্ণ স্বাধীন সমাসীন, তারই কায়া
এজন্যই অরণ্যকে অনেকাংশে পার্থিব মানুষ যেন লগে
কখনো কখনো
তাহার ভিতরে বসে দুঃখের গভীর চলাফেরা দীর্ঘ করুণ নিঃশ্বাস
টের পাই
এমন নিশ্চিত ব্যস্ত এতো শব্দহীন এমন নির্জন কোলাহল, ঘুমিয়ে
পড়ার শব্দ
পাথরেরও ঘুম পায়, অরণ্যেরও অবসাদ লাগে,
বৃক্ষের উলঙ্গ মূর্তি আরো গূঢ় অধিক সংযম
আরো খাদ্য পানীয়ের টান এই অবিচ্ছিন্ন বিশুদ্ধ যৌনতা
যা কিনা স্বভাবে বদ্ধ অতি গূঢ় সুদৃঢ় যৌবন, মনে হয়
অরণ্যেতে আছে,
অরণ্যের অধিক অরণ্য সেও হয়তোবা একদিন সৃষ্টি হয়ে যাবে
কিংবা তাও নির্মাণ হয়েই আছে মানুষের সভ্যতার
স্বপ্নের ভিতর
সেই তো প্রস্তর, সেই তাম্র, প্রস্তর যুগের অস্ত্র,
অরণ্য প্রস্তরময়, অরণ্যও আমাদের লোক, তাকেও এভাবে চিনি
মাথায় জড়ানো সাপ পাগড়ির মতোই শাদামাঠা
কখনো পশ্চাৎ থেকে দেখে একান্তই ভিন্ন কেউ এসেছেন
তাও মনে হতে পারে,
আমি জানি আমি এই অরণ্যের খুব বেশি কিছুই জানি না
যতোখানি মানুষেরও জানি নিশ্চিতই অরণ্যেরও ততোটুকু
মাত্র জানা যায়
প্রকৃতই অরণ্য কি অধিক হৃদয়গম্য, পারি, ততোটুকু পারি
অধিক পারি না, ইহার অধিক কোনো কিছুই পারি না।
অরণ্য কি একদিন মানুষেরই মূর্তি ফিরে পারেব, এমন
শোকার্ত হবে, দুঃখশীল হবে তার মন
অরণ্যের মনুষ্য স্বভাব মানুষের অরণ্য প্রকৃতি এও কি সম্ভব
অর্থাৎ যা অরণ্য ও আমাদের উভয়েরই সমান অংশে ভাগ!
এই দেখে অরণ্যের নিকট আত্মীয় কেউ অথবা প্রস্তর
আরো মৌন ম্লান হয়ে যাবে
যেতে যেতে ইচ্ছে করে অরণ্যকে একদিন একথা শুধাই,
চলে যেতে যেতে।

শব্দ

শব্দ আমার ভালোবাসার পাত্র
মাত্র তাকে দিয়েছি এই শান্তি কোমল শান্তি
আরো অনেক দিনের দাহ, রাতের মেহকানি-
তবেই হবে শব্দ আমার গভীর প্রিয় পাত্রী!
শব্দ আমার ভালোবাসার বাগানবাড়ির বৃক্ষ
একখানি ডাল আকাশমুখী, একখানি তার পরম দুঃখী
আর একখানি ছুঁয়েছে কোনো গোপন দুর্নিরীক্ষ্য!
এতোদিন তো শব্দ কেবল শব্দ কেবল শব্দ
বুকের গভীর জলের ধারা তবেই তো সে স্বচ্ছ,
শব্দ তখন অধিক প্রিয় শস্য শালীন স্মরনীয়
শব্দ তোমায় শান্তি শান্তি! শব্দ তোমায় হৈমকানি-!
শব্দ তখন ভালোবাসার চিরকালীন পাত্রী!
এই শব্দে করেছি তোমায় শিল্প আমি শুদ্ধ
শব্দ তোমায় শান্তি শান্তি! শব্দ তোমায় হৈমকান্তি!
শব্দ তোমায় শব্দ!

শস্যযাত্রা

তোমাকে ধরবে না এই কালো পাটকেলে কামিজে
খুলে এই অস্থায়ী পোশাক পঁচিশ-বছর-ভেজা জরাজীর্ণ পাখা
আঁধারে রোদ্দুরে জমা শ্লেষ্মা-বসা বুকের ভিতরে
অন্য বুক তুলে নিয়ে
অন্য স্তব্ধ বিস্মিত হৃদয়, হৃদয়হরণ ভালোবাসা ও প্রত্যয়ে
তোমাকে ধরবো এই মেদমজ্জা মাংসের ভিতরে, অন্য পারে।
এই হাত হবে না তখন আর স্তুল মাংসের প্রতীক
পাবে স্বতন্ত্র আকৃতি
তারও অধিক ব্যঞ্জনা, কোনো শুভার্থী সন্নসী, কোনো
কামমুক্ত স্বতন্ত্র পুরুষ
কোনো সৃষ্টিস্পর্শ মর্মমুখরতা, কোনো আদিম সন্ন্যাস!
ততো দিন শুধু ভ্রমণের কাল অর্থাৎ ততোদিন তোমার অপেক্ষা।
এই অপেক্ষায় অপেক্ষায় পাখা আরো জীর্ণ হবে
চোখ আরো হবে অন্ধ অনুজ্জ্বল
আরো ক্ষীণ অবসন্ন হবে প্রাণ হবে অধিক বিবর্ণ
ওষ্ঠাগত,
শৈশব থেকে এ যৌবন অর্থাৎ বন্দী থেকে এ বাউল
এক স্বপ্ন থেকে জাগরণ
চালাক চতুর ভিন্ন এক দেশের বাসিন্দা ;
সেও কালো পাটকেলে কামিজ এই যৌবনের ঘামমাখা কাঁথা
এও বদলাতে হবে, এই পঁচিশ-বছর-ভেজা জরাজীর্ণ পাখা
যৌবনের ছেঁড়া এই বেশবাস ফেলে পুনরায় শৈশবের দিকে যাত্রা,
শস্যারম্ভ
তুমুল সন্ন্যসী তবু শুভার্থী স্বাধীন,
তখন তোমার চুলে সমস্ত শরীরে এই সোনালি শস্যের
স্পর্শ এঁকে দেবো আর
দেখো নারী বাঘ ঈশ্বর ও স্বর্গীয় বিষ নিঃসঙ্কোচে মানুষের
মতন খেয়েছি।

সামান্য জল

অষ্টপ্রহর নদীর ধারা গভরি বহনীয়
বুকের মধ্যে সামান্য জল সহজ স্মরণীয়;
সাগর জোড়া নোনা জলের গহীন গহনতা
বুকের ভিতর শান্ত জলে অশান্ত তীব্রতা।
চোখের ধারা বুকের ধারা উষ্ণ অধীর জল
তাহার চেয়ে সাগর নদী সরল সমতল;
নদীল ধারা নদরি বুকে সহজ বহে যায়
বুকের গোপন জলের ধারা কোথায় রাখি হায়!
সাগর ভরা জলের চেয়েও আমার বুকে জল
তোমার গভীর সংবেদনায় নিবিড় টলমল।

সুখীমৃত্যু

মুখ দখে তোমাকে চিনেছি, দুঃখে নয়
আনন্দে আমার মৃত্যু হবে আমি সন্দেহ করি না
তবু স্লেহে জেনেছি তুমি সেই প্রিয় মৃত্যুসখা
তুমি সেই প্রিয়তম মানুষের প্রত্যাশিত মুখ
শীতগ্রীষ্মে তোমাকেই স্মরণ করেছি। একদিন গ্রাম ছেড়ে
গৃহস্থালি ছেড়ে নদীর ভাঙন ছেড়ে এসেছি এখানে
এই শহরের আলোকিত উৎসবের নিচে, ব্যবধানে
মনে হয় তোমরা সবাই আজ আমার মৃত্যু চাও
নিকটে তাকালে তার নিদর্শন দেখি, বড়ো ভীত হই,
এমন কবিত্ব কিছু নয়, প্রকৃতই মরিতে চাহি না।
শুনেছি শীতের শেষে এইখানে সমারোহ হবে
হাওয়ায় উদ্ভিদে ঘাসে ফুলেজলে নতুন পাতায়
সমস্ত বোধের উৎস খুলে যাবে আর মানুষের
উৎসাহ জাগাবে, সে-রকম সুখী হবে লোকে।
আমি তাই আয়ত্তের অধিক চলেছি যেন এইভাবে
উড়িয়ে পুড়িয়ে আমি ঝরে খসে যাই। শুধু মনে মনে ভয়
পাছে তৃপ্তি পাই পাশে সুখী হই পাশে মৃত্যু হয়,
বিবাহিত সুখ তাই স্পর্শও করেনি, কামে প্রেমে আরো
হয়েছি সন্ন্যাসী, সুখী আমি একথা বুঝেছি আজ ভিতরে বাহিরে
তাই ঘরছড়া তাই অন্যমুখী তাই এভাবে উড্ডীন
একদিন ভালোবাসা ছাড়া আর অন্য খেলা আমার ছিলো না
আজ বড়ো ভয় পাই ভালোবেসে যদি বন্দী হই
তাই জড়ত্বে সঁপেছি, অন্ধকারে হাওয়া এসে লাগে
এই মূক বন্দী প্রাণে আমি টের পাই। তোমাকে চিনেছি
আমি মুখ দেখে ব্যবহার দেখে, তুমি দুঃখ নও
তুমি শারীরিকভাবে সহনীয়, তুমি সুখ,
এইখানে এই সুখে আমার মৃত্যু হবে।

Exit mobile version